#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ২৫
🌼
অতি আধুনিকতায় ছোঁয়া ফাঁকা রেস্টুরেন্টে বিরাজ করছে নিস্তব্ধ নিরবতা।সামনা সামনি দুজন মানুষ দাড়িয়ে আছে একে অপরের দিকে চেয়ে।একজনের চোখে রাগ আর অন্যজনের চোখে ক্ষোভ।রাগে শরির রিতিমত কাঁপছে।সেই সাথে কাঁপছে গোলাপি ঠোঁট জোড়া। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জলের ধারা।রাগ আর বিরক্তিতে দম নেওয়াও মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।রোশনি ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেবিল থেকে পার্স আর মোবাইল হাতে তুলে নিলো।সামনে দাড়ানো লোকটা মুখটাও আর দেখতে ইচ্ছে করছে না।প্রচন্ড ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।রোশনি বামহাতে চোখের নোনা জলটুকু মুছে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো বাকি জিবনে সে এই মানুষটার সামনে আর আসবে না।মানুষটা ভিষনই খারাপ একটা লোক।না আছে নিজের কোনো অনুভূতি আর না আছে অন্য কারো অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা। হার্টলেস। রোশনি দু’কদম যেতে না যেতেই হাতে টান পড়লো।কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচন্ড জোরে কেউ টেনে নিলো নিজের কাছে।হাত থেকে মোবাইল আর পার্স ছুটে দুরে ছিটকে পড়লো।ঝনঝন শব্দ তুলে ফোনটা কয়েক অংশে ছড়িয়ে পড়লো চারপাশে।ভাঙা ফোনের টুকরো গুলোর দিকে চেয়ে রাগটা আবারো তরতর করে বেড়ে উঠলো রোশনির।লোকটার প্রতি ঘৃণায় মনটা বিষিয়ে এলো মুহূ্র্তেই।রোশনি লোকটার কলার ধরে চেঁচিয়ে উঠলো।বললো,
-কি চাই আপনার? কেন আমার পেছনে পড়ে আছেন? কোন ভুলের শাস্তি দিচ্ছেন আমায়? প্লিজ আমার জিবন থেকে চলে যান।আমাকে আমার মত বাঁচতে দিন।প্লিজ,,,প্লিজ।
কথা গুলো বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লো রোশনি।শরিরটা বড্ড দূর্বল লাগছে।অসাঢ় হয়ে আসছে হাত পা।দাড়িয়ে থাকার নূন্যতম শক্তিটুকুও যেন হারিয়ে গেলো কোথাও।তবুও সামনে দাড়ানো লোকটার কলার ধরে আছে রোশনি।লোকটার শক্ত হাতটা রোশনির কোমরে।শক্ত করে ধরে রেখেছে সে।আস্তে আস্তে চোখের সামনে ঝাপসা হতে লাগলো।চোখ দুটো খুলে রাখার শেষ চেষ্টা চালিয়েও খোলা রাখতে পারলো না।শেষে ব্যর্থ হয়ে লুটিয়ে পড়লো সামনের মানুষটার প্রশস্ত বুকে।
বিশাল বড় রুম জুড়ে বিলাসিতার ছোঁয়া।চারপাশে উন্নত সব আসবাবপত্র। বিশাল সাইজের খাটের উপর চোখ বুজে পড়ে আছে রোশনি।এখনো জ্ঞান ফিরে নি তার।পাশেই রোশনির হাত মুঠোই নিয়ে বসে আছে অধির।মেয়েটাকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।কি করে ছেড়ে দেবে এই মেয়েকে? এই মেয়েটা যে তার অভ্যেসে পরিনত হয়ে গেছে।কি করে ছেড়ে দেবে সেই অভ্যেস।অধিরের চোখ জ্বালা করছে।চোখ কি কাঁদতে বলছে তাকে? কিন্তু সে তো কখনো কাঁদে নি।বাবার মৃত্যুতেও তার চোখ থেকে একফোঁটা পানি বের হয়নি।বাবার নিথর দেহটার সামনে শক্ত পাথরের মত দাড়িয়ে ছিলো শুধু।শেষ কবে কেঁদেছিল সেটাও ঠিক মনে পড়ছে না।ছোট বেলায় মায়ের মাইর খেয়ে কান্নায় ভাসিয়ে ফেলার কোনো গল্পও কখনও শোনে নি। তবে কি সে কখনো কাঁদেই নি? তাহলে মনে কেন পড়ছে না তার? আর এখনই বা সে কেন কাঁদতে পারছে না?আচ্ছা কান্না করার কি কোনো মন্ত্র আছে? যেটা পড়ে খুব সহজে কান্না করা যায়? মেয়েরা বোধ হয় সেই মন্ত্র পড়েই এতো এতো কান্না করে।এই মন্ত্র কি মা রা শেখায়? কই তার মা তো তাকে এই মন্ত্র শেখায় নি? সে কেন জানে না এই মন্ত্র?তার যে এখন কান্না করতে ইচ্ছে করছে।বুকটাকে হালকা করতে ইচ্ছে করছে।বুকের উপর যেন মস্ত বড় পাথর চাপা দিয়ে রেখেছে কেউ।অধির চোখ বুজে শ্বাস নিলো।রোশনির ক্লান্ত মুখের দিকে তাকাতেই বেরিয়ে এলো বিষাক্ত কিছু দীর্ঘশ্বাস। এই মেয়েকে সে হারাতে পারবে না।যে করেই হোক এই মেয়েকে সে নিজের কাছেই রাখবে।খুব কাছে।এতোটা কাছে যে কারো নজর পড়বে না এই মায়াবতীর উপর।এর জন্যে তাকে যতোটা নিচে নামতে হয় সে নামবে।স্বার্থপরের ট্যাগটা যদি নামের পরে বসেও যায় তবুও সে স্বার্থপর হবে।রোশনির হাতটাতে আঁলতো ঠোটের ছোঁয়া দিয়ে চলে এলো বেলকোনিতে।সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো একের পর এক।উরন্ত সাদা ধোঁয়া গুলোর সাথে উড়ে যেতে পারলে বেশ হতো।উড়ে উড়ে অনেক দূরে চলে যেত সে।একসময় মিলিয়ে যেত।এটাই কি ভালো হতো না?
একদিন আগের ঘটনা,,,,
রোশনি যখন জয়ের বলা পার্কে এসে পৌঁছালো ঘড়ির কাটা তখন পাঁচটার ঘরে।রোশনি দ্রুত সামনের দিকে হাঁটা ধরলো।ফোনে জয়ের গলাটা কেমন যেন শুনাচ্ছিল।রোশনি কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই দেখলো নির্ধারিত বেঞ্চটাতে উসকো খুসকো হয়ে বসে আছে জয়।চোখ মুখ দেখে ভেতরটা কেঁপে উঠলো রোশনির।দ্রুত হেটে জয়ের পাশে বসতেই ক্লান্ত চোখে তাকালো জয়।জয়ের মুখ দেখে কান্না পাচ্ছে রোশনির।ছেলেটার কি কিছু হয়েছে? এমন কেন দেখাচ্ছে চোখ মুখ?জয়কে এভাবে দেখতে যে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে।রোশনির চোখদুটো ছলছল করে উঠলো।মুখে এক টুকরো হাসি ফুটিয়ে বললো,
-কি ব্যাপার হিরো সাহেব? চেহারার এমন করুন পরিনতি কেন? দেবদাস হওয়ার চেষ্টা করছো নাকি?করতেই পারো।আমার পিছনে পড়ে থাকলে তো তোমার এমন দেবদাসের মতো অবস্থায় হবে।সেই কবে থেকে বলছি আমার আশা ছেড়ে অন্য জায়গায় ট্রাই করো।অনন্ত দেবদাস হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবে।কিন্তু তুমি কথায় শুনছো না।এখন বলো আমায় এখানে কেন ডেকেছো? জানো আমি কিভাবে ম্যানেজ করে এসেছি? চুপ করে আছো কেন ইয়ার? তোমার এই দেবদাস মার্কা চেহারা দেখতে আমি ইন্টারেস্টেড নই।কিছু বলবে নাকি চলে যাবো?
রোশনির কথার মাঝেই হুট করে জড়িয়ে ধরলো জয়।ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে বসে রইলো রোশনি।যেই ছেলে কোনো দিন তার হাতটা অবধি ধরতে চায়নি আজ সে তাকে জড়িয়ে ধরছে?তারউপর আবার ফুঁপিয়ে কাঁদছে?রোশনির ভয় করছে।বুকের মধ্যে কোথাও একটা ভিষন ব্যথা করছে।
-প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।আমি মরে যাবো। আমাকে এভাবে মেরে দিও না রোশনি।আমি বাঁচতে চায়।প্লিজ আমাকে বাঁচতে দাও।
কথা গুলো বলতেই গলা ধরে এলো জয়ের।কান্নারা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে বারবার।জয়ের কথায় চমকে উঠলো রোশনি।কি হয়েছে ওর? এমন অদ্ভুদ বিহেভ কেন করছে ও?রোশনির ভয় করছে। গলা কাপছে।দুহাত তুলে জয়ের পিঠে রাখতেই জয় আরো শক্ত করে চেপে ধরলো রোশনিকে।বললো,
-আমায় কেন ভালবাসো না রোশনি? আমি কি তোমার ভালবাসার একটুও যোগ্য নই?আমাকে দেখে কি একটুও মায়া হয় না তোমার? আমি মারা যাচ্ছি রোশনি।তোমার ভালোবাসার অভাবে আমি মারা যাচ্ছি।তোমার ভালোবাসার একটু উত্তাপই পারে আমাকে বাঁচিয়ে নিতে।প্লিজ আমায় বাঁচিয়ে নাও।একটু উত্তাপ দাও আমায়।
কথা গুলো বলেই ঢলে পড়লো জয়।শক্ত করে জড়িয়ে থাকা হাত দু’টোও ঢলে পড়লো।শরিরের ভর ছেড়ে দিতেই দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো রোশনি।কোনো রকমে বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসিয়ে দু হাতে জয়ের মুখে হালকা চাপড় দিয়ে ডাকতে লাগলো।এতোক্ষনে বুঝতে পারলো জয়ের শরির জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।রোশনির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।কিছুক্ষন ধরে তার সাথে কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না সে।রোশনি জয়ের গালে হাত রেখে ফুঁপিয়ে উঠলো।
-জয়? এই জয়? ওঠোনা প্লিজ।আমার ভয় করছে। আমি ভয় পাচ্ছি জয় প্লিজ উঠে পড়ো।তাকাও না জয়।তুমি এভাবে চুপ করে থাকতে পারো না।কথা বলো আমার সাথে। দেখো আমায়।আমি তোমার কাছেই আছি।কোথাও যায় নি।আমি তোমায় ছেড়ে কোথায় যাবো বলো? আমি তোমার কাছেই থাকতে চায় জয়।শুনতে পাচ্ছো তুমি? আমি তোমার কাছে থাকতে চায়।প্লিজ তাকাও জয়।প্লিজ।তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি তোমায় ভালবাসি কি না? এই দেখো আমি বলছি আজ।আমি তোমায় ভিষন ভালোবাসি জয়।আই লাভ ইউ।এবার তো ওঠো। আমি আই লাভ ইউ বললাম তো জয় তবুও কেন তাকাচ্ছো না তুমি? জয় ওঠোনা,,, ওঠো।
জয়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো রোশনি।মনে হচ্ছে তার পৃথিবীটাই যেন থমকে গেছে।রোশনির হঠাৎ পিয়ার কথা মনে হলো।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে পিয়ার নাম্বারে ডায়াল করলো।দ্বিতীয় বারের মাথায় ফোন তুললো পিয়া।
– হ্যা রোশু বল।
-পিয়া,,,,,,জয়
-রোশু,,কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? শান্ত হ আগে।কি হয়েছে জয়ের? তোরা ঠিক আছিস তো?
-জয় অজ্ঞান হয়ে গেছে পিয়া।আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি এখন কি করবো।
-চিন্তা করিস না।আমি এখনি আসছি ।তোরা কোথায় আছিস বল?
পনেরো মিনিটের মাথায় দৌড়ে এলো পিয়া।পেছনেই দেখা গেলো আরাফকে।পিয়াকে দেখেই কান্নাটা বেড়ে গেলো রোশনির।জয়কে একহাতে জড়িয়ে কান্না করছে সে।পিয়া রোশনিকে শান্ত হতে বলে আরাফকে ডাকলো।আরাফ, রোশনি আর পিয়া মিলে জয়কে ধরে পার্কের গেট অবধি নিয়ে এলো।ওরা যেই রিক্সাতে এসেছিল সেই রিক্সাতেই রোশনি আর জয়কে তুলে দিলো।রোশনি দুহাতে জয়কে শক্ত করে চেপে ধরে অসহায় চোখে পিয়ার দিকে তাকালো।পিয়া রোশনির বাহুতে হাত রেখে আশ্বাস দিলো।বললো,
-চিন্তা করিস না রোশু।জ্বরের কারনে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছে।সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই জয়ের ফ্ল্যাটে চলে যা।আমি আর আরাফ অন্য রিক্সায় আসছি।চিন্তা করিস না।
কিছুক্ষন আগেই ডাক্তার এসে দেখে গেছে জয়কে।বিছানায় নির্বিকার চোখ বুজে পড়ে আছে সে।কোনো চিন্তা নেই।কারো প্রতি খেয়াল নেই।নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।জয়ের মায়ের কাঁদতে কাঁদতে প্রেশার লো হয়ে গেছে।ছেলের এমন অবস্থা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।পিয়া ওনাকে সোফায় বসিয়ে পাখা দিয়ে হাওয়া করছে।ওদের সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে আরাফ।কিছুক্ষনের মাঝেই ঔষুধের প্যাকেট হাতে প্রবেশ করলো রোশনি।ডায়নিং টেবিল থেকে গ্লাসে পানি নিয়ে জয়ের মায়ের পাশে বসলো।ঔষুধের পাতা থেকে ট্যাবলেট বের করে এগিয়ে দিলো ওনার দিকে।জয়ের মা ছলছল চোখে তাকালেন।ধরে আসা গলায় বললেন,
-আমার ছেলেটার কি হলো রে মা? ওর তো সহজে জ্বর আসে না। আর জ্বর আসলেও কখনো অজ্ঞান তো হয়নি।তাহলে আজ এমন হলো কেন? আমার ছেলেটা ঠিক হবে তো?
কথাগুলো বলতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো ওনার।রোশনি ওনার চোখের পানিটুকু মুছে দিলো আলতো হাতে।
-কাঁদবেন না আন্টি।এমনিতেই আপনার প্রেশার নেমে গেছে।জয়ের কিছুই হয় নি।সকালেই দেখবেন ও ঠিক হয়ে গেছে।এখন আপনিও যদি কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে যান তাহলে জয়কে দেখবে কে? এখন আপনাকে শক্ত হতে হবে।এই ট্যাবলেট গুলো খেয়ে নিন তো এবার।
দুর থেকে আজানের মিষ্টি সুর ভেসে আসছে।জয় এখনো ঘুমিয়ে আছে।ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছে বলেই হয়তো এখনো ঘুমোচ্ছে ও।রোশনি জয়ের হাতদুটো মুঠোই নিয়ে কিছুক্ষন এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলো জয়ের ঘমন্ত মুখের দিকে।কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বরটা আগের থেকে কম।রোশনি মাথাটা ঝুকিয়ে জয়ের কপালে ঠোট ছোঁয়ালো।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার।রোশনি উঠে পিছনে ফিরতেই দেখলো পিয়া দাড়িয়ে আছে।রোশনি ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়লো পিয়ার বুকে।এতোক্ষনে দমিয়ে রাখা কান্নাটা এবার বুক ফেটে বেরিয়ে এলো।ফুঁপিয়ে কেদে উঠতেই মুখ খুললো পিয়া,
-কাদিস না রোশু।ঠিক হয়ে যাবে ও।সামান্য জ্বরই তো চিন্তা করিস না।
-শুধু জ্বর না পিয়া।ওর নিশ্চয় কিছু হয়েছে।কেমন অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব কথা বলছিল।
রোশনি সবটা পিয়াকে বলতেই পিয়া রোশনির মাথায় হাত রাখলো।বললো,
-ছেলেটা তোকে নিয়ে চিন্তায় আছে রোশু।তোকে নিয়ে ইনসিকিউর ফীল করছে।করারই কথা।ছেলেটা তোকে পাগলের মত ভালোবাসে।আর কত অপেক্ষায় রাখবি ছেলেটাকে? এবার তো মনের কথা বলে দে।পরে না আবার অনেক দেরি হয়ে যায়।তখন হয়তো বলতে চেয়েও পারবি না।বলে দে ওকে সবটা।
-বলবো।এবার আমার মনের সব অনুভূতির কথা আমি ওকে জানাবো।ওর জ্ঞান ফিরলে কালকেই সব বলে দেবো।
রোশনির কথায় হাসলো পিয়া।ওর চোখের পানিটুকু মুছে দিয়ে বললো,
-এতোটা ভালোবেসে ফেললি কবে রোশু? কেঁদে কেটে একদম ভাসিয়ে ফেলছিস?জয় তোর এই অবস্থা দেখলে তো আবারো অজ্ঞান হয়ে যেত রে।
পরেরদিন বেলা এগারোটার দিকে অধির জয়ের ফ্ল্যাটে যায়।জয়ের মা আর অধির ড্রয়িংরুমের সোফায় মুখোমুখি বসে আছে।যদিও তিনি অধিরকে চিনতে পারছেন না।তবে এ্যাটিটিউড আর গেটআপ দেখে বেশ পাওয়ারফুলই মনে হচ্ছে।নিস্তব্ধতা কাটিয়ে মুখ খুললো অধির।বললো,
-আপনি হয়তো আমাকে চেনেন নি।আমি অধির চৌধুরি।নামটা নিশ্চয় শুনেছেন? না শুনলেও কোনো ব্যাপার না।এটা অতোটা ইমপর্টেন্টও নয়।আসল কথায় আসি।আপনার ছেলে একটা মেয়ের পেছনে পড়ে আছে।সরে আসতে বলুন ওকে।আমি ওকে ভালো করে বুঝিয়েছি কিন্তু আপনার ছেলে মানতে নারাজ।এখন আমার স্টাইলে ওকে মানাতে গেলে তার জন্যে খুব একটা মঙ্গলময় হবে না ব্যাপারটা।তাই আপনাকে বলতে এসেছি।ছেলেকে বোঝান।আমার মাথা এখনো অবধি ঠান্ডা আছে।কতোক্ষন ঠান্ডা রাখতে পারবো তার গ্যারান্টি দিতে পারছি না।একটা কথা মাথায় রাখবেন।আমার পথে কেউ বাধা হয়ে দাড়ালে তাকে পথ থেকে উপড়ে ফেলতে আমার খুব বেশি সময় লাগে না।আমার মায়ের তিন ছেলে মেয়ে।চাচাতো দুটো ভাই ধরে মোট পাঁচটা। একটা যদি মরেও যায় তো তেমন যায় আসবে না।কিন্তু আপনার একটাই ছেলে।আশা করছি বুঝতে পেরেছেন কি বলতে চাইছি।
অধিরের কথায় ধক করে উঠলো বুকের ভেতর।তার সামনে বসে তারই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এই ছেলে? রিতিমত হাতপা কাঁপতে শুরু করেছে ওনার।তখনই রুম থেকে ক্লান্ত পায়ে বেরিয়ে এলো জয়।অধিরের সব কথায় তার কানে গেছে।জয় অধিরের সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো,
-মিষ্টার অধির চৌধুরি? আপনি আমার বাসা পর্যন্তও চলে এসেছেন? এমনকি আমার মাকে হুমকিও দিচ্ছেন? হাউ ডেয়ার ইউ মিষ্টার অধির চৌধুরি?আপনার সাহস কি করে হয় এসব বলার?আপনাকে চিনতে ভুল হয়েছে আমার। আপনার প্রতি এতো দিনের সব সম্মান আজ আপনি হারালেন।আপনি ভিষনই খারাপ একটা মানুষ।আপনার সাথে কোনো প্রকার কথা বলতে চায় না আমি।বেরিয়ে যান আমার বাসা থেকে।
অধির আগের মতোই বসে রইলো।পাশ থেকে শাহিন বলে উঠলো,
-স্যার একবার শুধু অর্ডার দিন একে এখানেই পুতে রেখে দেবো।
শাহিনের কথায় কেপে উঠলেন ভদ্র মহিলা।হাত বাড়িয়ে ছেলের জামাটা শক্ত করে খামচে ধরলেন।জয় আগের মতোই দাড়িয়ে রইলো।অধির হাতের ইশারায় শাহিনকে থামালো।বললো,
-যখন হিরো আর ভিলেন কথা বলে তখন সাইড আর্টিস্টের কি কাজ?
অধির সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।বাম হাতে ভ্রু চুলকে বলে উঠলো,
-এই গল্পে আমি হিরো নই ভিলেন।তাই আমার প্রতি কারো সম্মান থাকলো কি থাকলো না তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।আমি হিরো নই ভিলেন হতে এসেছি।আর না আমার ভালো হওয়ার কোনো শখ আছে।শুনেছি উপরওয়ালা ভালো মানুষকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের কাছে তুলে নেন।হিরো মরার পরে জান্নাত পায় আর ভিলেন দুনিয়াতেই জিততে জিততে জান্নাতের সুখ খুজে নেয়।তাহলে ভালো হয়ে কি ফাইদা?আর আমি যদি ভালো হতে চাই তাহলে আমার ক্যারেক্টার আমার উপর নারাজ হয়ে যাবে।আমি যেমন আছি তাতেই ঠিক আছি।আমি দেখতে স্টাইলিশ এটা ভেবে যদি মনে হয় আমি ভদ্র অার ভালো তাহলে পস্তাবে।ভিষন পস্তাবে।আগুন নিয়ে খেলবে তো পুরে ছাই হয়ে যাবে।নিজের ক্ষতি না চাইলে রোশনির জিবন থেকে সরে যাও।নয়তো তোমাকে সরাতে আমার খুব বেশি সময় লাগবে না।মাইন্ড ইট।
একটার দিকে রোশনি জয়ের ফ্ল্যাটে যায়।জয় তখন বাসায় ছিলো না।রোশনি জয়ের খোঁজ করতেই জয়ের মা তাকে জয়ের থেকে দূরে থাকতে বলেন।অধিরের সব কথা খুলে বলতেই রোশনি রাগে ফেটে পড়লো।ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় হাটতে শুরু করলো রোশনি।মাথাটা ফেটে যাচ্ছে রাগে।লোকটার সাহস কি করে হয় ওদের হুমকি দেওয়ার? না আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।এখনি কথা বলতে হবে লোকটার সাথে।রোশনি ফোন বের করে অধিরের নাম্বারে ডায়াল করলো।প্রায় সাথে সাথেই রিসিভ হলো ফোন।অধিরকে কিছু বলতে না দিয়েই দাতে দাত চেপে বলে উঠলো রোশনি,
-আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছি মিষ্টার চৌধুরি।আর সেটাও এক্ষুনি।
ওপাশ থেকে শান্ত গলায় বলে উঠলো অধির,
-ওকে।আমি লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি। গাড়ি পাঠাচ্ছি চলে এসো।
রোশনি তেতে উঠলো।বললো,
-সেটার প্রয়োজন নেই মিষ্টার চৌধুরি।আমি একাই আসতে পারবো।ভালো হয় যদি আমাকে আমার মত চলতে দেন।আমার ব্যাপারে আপনার নাক গলানোটা বন্ধ করে দেন।
ওপাশ থেকে শান্ত জবাব।অধির যেন আগে থেকেই জানতো রোশনি তাকে ফোন দেবে আর এভাবে রিয়্যাক্ট করবে।
-সেটা সম্ভব নয়।রোদের মধ্যে এভাবে না হেটে পেছনে দেখো রিক্সা আসছে উঠে পড়ো।
রোশনি পেছনে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই একটা রিক্সা আসছে।
-মানে কি? আপনি কি আমায় ফলো করছেন? নাকি আমার পেছনে লোক লাগিয়েছেন?
রোশনি আশে পাশে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলো।ওপাশ থেকে অধির বললো,
-এদিক ওদিক তাকিয়ে লাভ নেই। খুঁজে পাবে না।চুপচাপ রিক্সায় উঠে বসো।আমি অপেক্ষা করছি।
রোশনিকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কাটলো অধির।রোশনি ফোনের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়েই কারো কথায় চোখ তুলে তাকালো।রিক্সাওয়ালা তাকে বলছেন,
-আপা উইঠা আসেন।স্যার আমারে পাঠাইছে।
রোশনি কটমট করে তাকালো ওনার দিকে।
-স্যার পাঠালেই আমাকে রিক্সায় চড়ে বসতে হবে? কেন? আমি কি ওনার সম্পত্তি উনি যা বলবেন তাই করতে হবে আমার? উঠবো না আমি।স্যার পাঠিয়েছে না? যান গিয়ে ওনাকে রিক্সায় বসিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ান।আমার সামনে থেকে যান এবার।
রোশনির কথায় ভীত চোখে তাকালেন উনি।বললেন,
-আপনে না গেলে স্যার আমারে মাইরা ফেলবো আপা।আপনে দয়া কইরা আমার গাড়িতে আইয়া বহেন।আমি আপনের পায়ে ধরি।
রোশনি চোখ বুজে শ্বাস নিলো।লোকটাকে এই মুহূর্তে খুন করতে ইচ্ছে করছে।এই রিক্সাওয়ালাকেও হুমকি দিয়েছে? কতোটা খারাপ মানুষ উনি।রোশনি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে রিক্সায় চড়ে বসলো।
রেস্টুরেন্টে ঢুকেই দেখলো কোনার একটা টেবিলে বসে আছে অধির।পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা।শুধু তারা দু’জনই আছে।এমনকি রেস্টুরেন্টের স্টাফদেরও চোখে পড়লো না রোশনির।শুধু কাউন্টারে দুুজকে দেখতে পেয়েছে।তাতে কিছু যায় আসে না।এখানে লোক থাকুক না থাকুক তাতে কি যায় আসে।যার সাথে বোঝাপড়া আছে সে থাকলেই হলো।রোশনি বড় বড় পা ফেলে অধিরের দিকে এগিয়ে গেলো।টেবিলের উপর দুহাত রেখে ঝুকে দাড়ালো।দাতে দাত চেপে বললো,
-আপনার সমস্যা কি? পাগল হয়ে গেছেন? জয় আর ওর মাকে হুমকি দেওয়ার সাহস কোথায় পেলেন আপনি? খুন করাটা কি আপনার প্যাশনে দাঁড়িয়েছে? আর আপনি জয়কে কি বলেছেন? এসব বলার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? বলুন কেন বলেছেন এসব?
অধির আগের মতোই শান্ত হয়ে বসে রইলো।বললো,
-রিলেক্স রোশনি।এতো হাইপার কেনো হচ্ছো? আমরা হাইপার না হয়েও কথা বলতে পারি।
-ইউ নো হোয়াট? আপনার সাথে কথা বলায় উচিত না।আপনাকে শুধু সাবধান করতে এসেছি।এরপর জয়, ওর মা এমনকি আমার কারো সামনে আপনার মুখটা যেন দেখা না যায়।আমার জিবন আমি কার সাথে কাটাবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।সেটা আপনি ঠিক করার কে? আপনি আমার পিছনে লোক লাগিয়েছেন।রিক্সাওয়ালাকে অবধি ভয় দেখিয়েছেন।আপনি একটা জঘন্য মানুষ।দ্বিতীয় বার যেন আপনার মুখ দেখতে না হয়।
-সেটা সম্ভব নয়।তুমি না চাইলেও তোমাকে আমার জঘন্য মুখটাই দেখতে হবে।সরি,,তোমার কথাটা রাখতে পারবো না।আর না তোমাকে জয়ের সাথে দেখতে পারবো।
-কেন..? আপনাকে বলেছি আমাদের দেখতে? দেখতে না পারলে দেখবেন না।আর আপনি আমাদের একসাথে দেখতে পারবেন না তাই বলে কি আমরা আলাদা হয়ে যাবো? আপনি জয়কে প্রশ্ন করেছিলেন না জয় আমাকে ভালোবাসে কি না? তবে শুনে রাখুন মিষ্টার চৌধুরি আমি জয়কে ভালোবাসি।আর আমি থাকতে জয়ের ক্ষতি করার চিন্তাও করবেন না।
এতোক্ষন শান্ত থাকলেও এবার রেগে গেলো অধির।কপালের রগ ফুলে উঠলো।চোখ দুটো হিংস্র হয়ে উঠলো।চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে রোশনির বাহু চেপে ধরলো।চোয়াল শক্ত করে বললো,
-এই কথাটা আমি দ্বিতীয় বার যেন তোমার মুখে না শুনি।
-কেন কি করবেন তাহলে? আমি একবার কেন? হাজার বার বলবো।ভালোবাসি আমি জয়কে।ভালবাসি।
-আমাকে রাগিও না রোশনি।এর ফল ভালো হবে না।তুমি চাও বা না চাও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।অভ্যেস হয়ে গেছো তুমি আমার।কি করে ছেড়ে দেই বলো? জয়ের কথা ভুলে যাও।এখন থেকে তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আর এটাই ফাইনাল।
-মগের মুল্লুক পেয়েছেন? আপনি যা বলবেন তাই মেনে নেবো আমি? এমনটা ভেবে থাকলে ভুল ভাবছেন মিষ্টার চৌধুরি।আমি আপনাকে ভয় পায় না।আপনার মত মানুষকে ঘৃণা করি আমি।আপনি প্রচন্ড খারাপ আর জঘন্য একজন মানুষ।
-হ্যা আমি খারাপ জঘন্য মানুষ।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আমার এই ক্যারেক্টার নিয়েই খুশি আছি।ভালো হতে চাই না আমি।এই দুনিয়াটা ভালো মানুষের না।এখানে নিজের অধিকারের জন্যে লড়াই করতে হয়।নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হয়।ছিনিয়ে নিতে হয়।তোমার চোখে আজ আমি দুনিয়ার সবথেকে খারাপ মানুষ।ট্রাস্ট মি, এতেও আমার কিছু যায় আসে না।তবে একটা কথা শুনে রাখো।যখন কোনো ছেলে সব কিছু ছেড়ে একটা মেয়ের পেছনে ঘোরে তার মানে এই নয় ওর জিবনে আর কিছু নেই।এর মানে এই যে সেই ছেলেটার জিবনে ওই মেয়েটার থেকে জরুরি আর কিছু নেই।
-আপনার এসব ফিল্মি ডায়লোগ অন্য কোথাও বলুন।সব কিছু সব সময় আপনার ইচ্ছেমত হবে না মিষ্টার চৌধুরি।আমাকে আর জয়কে আলাদা করতে পারবেন না আপনি।আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা বিয়ে করছি।আপনি আমাদের বিয়ের স্পেশাল গেস্ট।আসবেন কিন্তু।
রোশনির কথায় রোশনিকে ছেড়ে টেবিলের উপর থেকে গ্লাসটা ছুঁড়ে মারলো অধির।প্রচন্ড শব্দ তুলে পরপারে পাড়ি জমালো সে।রোশনি যেন এতেও ভয় পেলো না।অধির রোশনির মুখোমুখি দাড়িয়ে চোয়াল শক্ত করে তাকালো।বললো,
-আবারো বলছি রোশনি আমাকে রাগিও না।কেটে রেখে দেবো ওকে।ভালোই ভালোই ওর থেকে সরে এসো।নয়তো ওকে সরাতে আমার জাস্ট এক মিনিট লাগবে।
অধিরের কথা শেষ হতেই প্রচন্ড জোরে চড় লাগালো রোশনি।অধিরের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো,
-আপনার সাহস কি করে হলো আমাকে এসব বলার? আমি বেঁচে থাকতে আমার জয়ের কোনো ক্ষতি আমি করতে দেবো না আপনাকে।কথাটা মনে রাখবেন মিষ্টার অধির চৌধুরি।জয়কে ছোঁয়ার আগে আপনাকে আমার মোকাবেলা করতে হবে।আমার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।
বর্তমান……
কারো পা ফেলার আওয়াজে সামনে থেকে দৃষ্টি ফেরালো অধির।ভ্রু কুচকে রুমে আসতেই দেখলো রোশনি বিছানায় নেই।দরজার দিকে চোখ যেতেই দেখলো রোশনি দরজা খোলার চেষ্টা করছে।অধির নিঃশব্দে হাসলো।ডানদিকে মাথাটা হেলিয়ে বলে উঠলো,
-দরজা খুলবে না যতোক্ষন না আমি চাইবো।অযথা এনার্জি ওয়েস্ট করো না।এমনিতেই শরিরের যা অবস্থা।
অধিরের কথায় চমকে উঠলো রোশনি।পালানোটা বোধ হয় আর হলো না।তবে অধিরের শেষের কথাটা গাঁয়ে লাগলো রোশনির।তেড়ে এলো ওর দিকে।
-একদম বাজে কথা বলবেন না বলে দিলাম।একে তো আমাকে তুলে এনেছেন তার উপর আমাকে আপনি অপমান করছেন।কোথায় এনেছেন আপনি আমাকে? এই রুমটাই বা কার?
-আমি নিশ্চয় অন্য কারো রুমে নিয়ে আসবো না তোমায়?অবিয়েসলি এটা আমার রুম।
-মানে? আপনার রুম? আগে তো এমন ছিলো না।এটা ওই রুমটা নয় এটা আমি নিশ্চিত।
-এটা অন্য রুম।এটা চৌধুরি ম্যানশন নয়।এটা অন্য বাড়ি।পার্সোনাল কিছু টাইম স্পেন্ড করি এখানে আমি।এখানে অন্য কারো আসার পার্মিশন নেই।
রোশনির তাতে কিছু যায় আসলো না।সে শুধু এখান থেকে যেতে চায়।এই লোকটাকে তার বিন্দুমাত্র সহ্য হচ্ছে না।
-আমি বাড়ি যাবো।দরজাটা খুলে দিন।আপনার মুখ দেখলেও আমার ঘৃণা লাগছে।আমি আপনার মুখও দেখতে চাই না।
অদির বাকা হাসলো।বললো,
-সরি সুইটহার্ট।আগেও বলেছি এখনো বলছি এটা সম্ভব নয়।তোমাকে এখন থেকে আমার মুখটাই টুয়েন্টি ফোর আওয়ার দেখতে হবে।ইউ হেভ নো চয়েজ।
-মানে?
-মানেটা খুবই সিম্পল।তুমি আমাকে বিয়ে করবে।তোমাকে আমার সব সময় চাই।সো বিয়েটাই আমার কাছে বেস্ট অপশন মনে হয়েছে তোমাকে সব সময় কাছে রাখার।
অদিরের কথায় তেতে উঠলো রোশনি।দু’কদম এগিয়ে এসে বললো,
-আপনি চাইলেই আমি বিয়ে করে নেবো আপনাকে? এটা কি করে ভাবছেন আপনি? আমি মরে যাবো তবুও আপনার মত জঘন্য হার্টলেস মানুষকে বিয়ে করবো না।
রোশনির কোমর ধরে টেনে আনলো নিজের কাছে।রোশনি ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছটফট করতেই আরো কিছুটা কাছে টেনে আনলো অধির।রোশনির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-বিয়েটা আমাকেই করতে হবে সুইটহার্ট। তোমার কাছে দ্বিতীয় কোনো অপশন নেই।তুমি চাইলেও বিয়েটা হবে আর না চাইলেও।
-আপনি এমনটা করতে পারেন না।আপনার মত মানুষকে আমি কখনোই বিয়ে করবো না।ভুল করছেন আপনি।
-সরি সুইটহার্ট। আমি একবার যা ভেবে নেই সেটাই করি।তোমাকে পেতে আমি সব করতে পারি।আমি জানি না আমি ভুল না ঠিক।তবে আমি এমনই।এটাই আমার আসল রুপ আর এটাই আমার ক্যারেক্টার। বিলিভ মি, এই ক্যারেক্টার নিয়ে আমি অনেক খুশি।যদি মরেও যাই না তবুও এই ক্যারেক্টারের সাথেই মরবো।আর আমাকে তোমার এভাবেই একসেপ্ট করে নিতে হবে।সন্ধ্যায় তোমার আর আমার বিয়ে।তৈরি করো নিজেকে।
চলবে…..