শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ২৪

0
3603

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ২৪

🌼
চার চাকার দামী গাড়িটা ছুটে চলেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।গাড়ির ব্যাক সিটে বসে হাত ঘড়িতে চোখ বুলালো অধির।পকেট থেকে মোবাইল বের করে ডায়াল করলো তার বিশ্বস্ত বডিগার্ডের নাম্বারে।প্রথম বার বাজতেই রিসিভ হলো কল।ওপাশ থেকে কিছু বলার আগেই মুখ খুললো অধির।বললো,

-রোশনির টুয়েন্টি ফোর আওয়ার নিউজ চাই আমার।কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে,বাড়িতে কে কে আসছে এভরিথিং। প্রতি এক ঘন্টা পরপর আমায় আপডেট দিতে থাকবে।টুয়েন্টি ফোর আওয়ার নজর রাখবে ওর উপর।এন্ড অফকোর্স ওর দিকে যেন কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস না দেখায়।

ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না।অধির ফোন কেটে গ্যালারিতে গিয়ে রোশনির ছবিগুলো দেখতে লাগলো।বিয়ের সাজে সত্যিই যেন বউ লাগছে রোশনিকে।অধিরের আজ প্রথম এই দেশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।মনে হচ্ছে দামি কিছু রেখে যাচ্ছে।খুব বেশি দরকার না পড়লে সে কিছুতেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতো না।এক সপ্তাহের জন্যে তাকে লন্ডন যেতে হচ্ছে।এর আগে বহুবার সে নিজের দেশ ছেড়ে এদেশে ওদেশে গেছে। কিন্তু আজ কেমন ভিন্ন অনুভূতি হচ্ছে।অধিরের চিন্তার মাঝেই গাড়ি থামালো ড্রাইভার।গাড়ি থেকে নামতেই আশেপাশের মেয়েগুলো হা করে তাকাতে লাগলো অধিরের দিকে।তাকাবেই না কেন? এমন হ্যান্ডসাম, হট আর মুডি ছেলের দিকে নজর যাবে না তো কার দিকে যাবে?ফর্সা শরিরে পুরো কালো গেটআপে কিলার যে লাগছে তাকে।কয়েকজন অধিরের দিকে এগিয়ে আসতেই দ্বিতীয় গাড়ি থেকে একপ্রকার দৌড়ে এলো তিন চারজন গার্ড।অধিরের চারপাশে দাড়িয়ে লোকগুলোকে খুব প্যাশনের সাথে সরিয়ে দিলো।অধির চোখে কালো সানগ্লাসটা পড়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।

রোশনি,পিয়া আর আয়াশ মিলে লুডো খেলতে ব্যস্ত।আজ অনেক দিন পর তিনজনে খেলতে বসেছে।চাচি এখন বাড়িতে নেই।তিনজন তাই ইচ্ছেমত হৈ হুল্লোর করে চলেছে।গুটি কাটাকাটি আর চিটিং নিয়ে তিন জনের মধ্যে রিতিমত ঝগড়া চলছে।আয়াশ তো ছক্কার জন্যে আল্লাহ ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে ফেলছে।শেষ পর্যন্ত পানির গ্লাস পাশে রেখে খেলতে শুরু করেছে সে।এদিকে আয়াশের কান্ড দেখে রোশনি রিতিমত মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নতুন উদ্যোমে আল্লাহকে ডাকছে একটা ছক্কার জন্য।এদিকে প্লেনের বিজনেস ক্লাসে সামনে ল্যাপটব নিয়ে সীটে গা এলিয়ে বসে আছে অধির।ল্যাপটপের স্ক্রীনে রোশনিদের কান্ড দেখে অধিরের ঠোটের কোণেও হাসি ফুটেছে।কিছুক্ষন আগেই রোশনিদের খেলার ভিডিও ক্লিপটা পাঠিয়েছে অধিরের লোকেরা।

দেখতে দেখতেই কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটা দিন।ঘড়িতে এখন সাতটা বেজে ত্রিশ মিনিট।বাংলাদেশে এখন গভীর রাত।ওখানে মোটামুটি সাড়ে বারোটা বাজে।লন্ডনের আকাশে মাত্রই সূর্য অস্ত গেছে। লন্ডনের মোস্ট এক্সপেন্সিভ হোটেল,,,রোজউড লন্ডন এর ফোর্থ ফ্লোরের বেলকোনিতে দাড়িয়ে আছে অধির।গাঁয়ে সাদা রঙের পাতলা টি-শার্টটা লন্ডনের ঠান্ডা বাতাসে উড়ছে।ঠান্ডায় শরিরের লোপকূপ দাড়িয়ে গেলেও খুব একটা খেয়াল নেই সেদিকে।আলো ঝলমল শহরের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে সে।এতো আলোকসজ্জা, ঝলমলে বিল্ডিংস আর ব্যস্ত মানুষের চলাচল কোনো কিছুই ভালো লাগছে না আজ।নিজের দেশটাকেই ভিষন ভাবে মনে পড়ছে।দেশের মাটির গন্ধ নিতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে বৃষ্টির পানিতে শরির ভেজাতে।পাশে অবহেলায় পড়ে থাকা কফিটাও ঠান্ডা হয়ে এসেছে ততোক্ষণে।আরো দু’টো দিন থাকতে হবে তাকে।দিনগুলো কাজের ব্যস্ততাই কেটে গেলেও নিষ্ঠুর রাতটা কিছুতেই কাটতে চায় না।এই কয় দিনে অধিরের একটা বাজে অভ্যাস তৈরি হয়েছে।তিলোককন্যার নিশ্বাসের শব্দ না শুনলে তার ঘুম আসে না।বিষয়টা একটু ফিল্মি টাইপ লাগলেও কিছু করার নেই অধিরের।তাইতো প্রতি রাতে সে রোশনিকে ফোন দেয়।ঘুমের মাঝেই দু’তিন বার হ্যালো বলেই ঘুমে তলিয়ে যায় রোশনি।এরপর সারা রাত রোশনির নিশ্বাসের শব্দ শুনে পার করে অধির।ভোরের দিকে কিছুক্ষন ঘুমিয়ে সারাদিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।ব্যস এসে থেকে এমনই চলছে।ঘড়ির কাটা আটটার ঘরে পৌছাতেই বেলকোনি থেকে নিজের রুমে এলো অধির।বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে ফোন লাগালো রোশনির নাম্বারে।ফোন বেজে কেটে গেলো রিসিভ হলো না।দ্বিতীয় বারও রিসিভ হলো না।অধিরের ভ্রু জোড়া এবার কুচকে এলো খানিক।আরো কয়েক বার ফোন দিয়েও লাভ বিশেষ হলো না।সময়ের সাথে সাথে অধিরের টেনশন বাড়তে লাগলো।অধির দেরি না করে দ্রুত শাহিনের নাম্বারে ফোন লাগালো।কল কাটার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে রিসিভ হলো।রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই ধমকে উঠলো অধির।

-ফোন রিসিভ করতে এতো দেরি কেন হয়? ফোন যখন রিসিভ করার মুড থাকে না তখন ফোন রাখার কি দরকার?

অধিরের ধমকে খানিক কপাল কুচকে এলো শাহিনের।অধির রাগি সেটা সে জানে।কিন্তু অকারনে কখনো এভাবে সে কথা বলে না।তাহলে আজ কি এমন হলো? লন্ডনে এখন রাত হলেও বিডিতে এখন গভীর রাত।সে তো ঘুমিয়ে কাঁদা ছিলো।তবুও সে প্রথম বারেই রিসিভ করেছে ফোন।শাহিন খুব সাবধানে হাই তুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো।ঘড়ির কাটা দেড়টার ঘরে।

-সরি স্যার।আসলে ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই একটু দেরি হলো রিসিভ করতে।

ওপাশ থেকে ভিষন চিন্তিত গলায় প্রশ্ন ছুড়লো অধির,

-রোশনি ফোন রিসিভ কেন করছে না শাহিন? রোশনি ঠিক আছে তো? গার্ড আছে না ওর বাড়ির সামনে?

-ইয়েস স্যার।দুজন গার্ড চব্বিশ ঘন্টা ম্যামের উপর নজর রাখছে।আই মিন ওনার বাড়ির আশে পাশেই থাকছে।আর স্যার আপনি চিন্তা করবেন না।বিডিতে তো এখন অনেক রাত।ম্যাম বোধ হয় ঘুমিয়ে আছেন।হতে পারে ওনার ফোনটাও সাইলেন্ট মুডে আছে।

শাহিনের কথায় কিছুটা স্বস্তি পেলো অধির।কিছু না বলেই ফোন কাটলো সে।মনটা কেমন অস্থির লাগছে তার।মনে হচ্ছে রোশনি ঠিক নেই।অধির আরো দু’বার ফোন লাগালো রোশনির নাম্বারে।প্রতিবারের মতো এবারো রিসিভ হলো না।অধিরের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।যে করেই হোক এখানের কাজটা দ্রুত শেষ করে তাকে দেশে ফিরতে হবে।

আজ দেশে ফেরার পালা।মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে অধিরের।দুদিনের কাজ এক দিনেই সেড়ে ফেলেছে সে।গাড়িতে বসে রোশনির ছবিগুলোই ঘাটছিলো অধির।হঠাৎ গাড়ি থামায় বাইরে তাকালো।হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌছে গেছে সে।ব্যস আর মাত্র দশ ঘন্টা ত্রিশ মিনিটের অপেক্ষা।এরপরই সে দেশের মাটিতে পা রাখবে।

ঢাকার দামি রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে অধির আর জয়।জয় জানে না তাকে কেন এখানে আসতে বলা হয়েছে।তবে অধির নিজে থেকে তাকে ডেকে পাঠিয়ে ভেবে বেশ ভালো লাগছে জয়ের।অধিরের মুখ গম্ভির।গম্ভীর চোখ জোড়ায় কি চলছে ঠিক বুঝা যাচ্ছে না।অধিরের ঠিক পাশেই শিড়দাড়া সোজা করে দাড়িয়ে আছে শাহিন।কালো সানগ্লাসে ঢাকা চোখদুটো কোন দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক বুঝা গেলো না।পুরো রেস্টুরেন্ট ফাঁকা।জয় আশে পাশে তাকাতেই টেবিলের উপর হাত রেখে সোজা হয়ে বসলো অধির।নিরবতা কাটিয়ে মুখ খুললো।মেনুকার্ডটা জয়ের দিকে ঠেলে দিয়ে বললো,

-কি খাবে বলো?

জয় মৃদু হাসার চেষ্টা করলো।মেনুকার্ডটা পাশে রেখে বললো,

-থ্যাংস স্যার।এখন আর কিছু খাবো না।অলরেডি অফিস থেকে লাঞ্চ সেড়ে এসেছি।

-এক কাপ কফি তো খেতেই পারো? কোল্ড অর হট?

-হট স্যার।

-আই থিংক তোমার কোল্ড কফি খাওয়া উচিত।শুধু তোমার নয় সাথে আমারও।যাতে দুজনেরই মাথা ঠান্ডা থাকে।

অধিরের কথায় ভ্রু কুচকে এলো জয়ের।তাকে এখানে কেন ডেকেছেন উনি? আর এই কথারই বা মানে কি?তবে নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু।নয়তো যার সাথে মাত্র একদিনের পরিচয় তাকে এতো ঘটা করে ডেকে আনবে কেন? পরিচয় বলতেও শুধু মিনিট খানিকের কথা।সে অধিরের সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও অধির তো আর তার সম্পর্কে কিছুই জানে না।জয়ের ভাবনার মাঝেই অধির বললো,

-এতো কি ভাবছো? এখনো তো কথায় হলো না।এখনি এতো ভাবনা? ইন্টারেস্টিং ভেরি ইন্টারেস্টিং। যাই হোক কফিটা শেষ করো।

জয় বিষ্ময় নিয়েই টেবিলের দিকে তাকালো।সামনেই ডিজাইনার কফি মগে কফি রাখা।ভাবনায় এতোটা বিভোর ছিলো যে বুঝতেই পারে নি ওয়েটার কখন এটা রেখে গেছে।জয় খানিক হাসার চেষ্টা করলো।কফি মগে বার কয়েক চুমুক দিতেই অধিরের কথায় থেমে গেলো।সেই সাথে বেড়ে গেলো অবাকতা।হঠাৎ এসব কেন বলছেন উনি?

-রোশনিকে ভালোবাসো তুমি?

-আমি ঠিক বুঝলাম না স্যার।

অধির আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো,

-রোশনিকে ভালোবাসো?

-সরি স্যার।আমি বুঝতে পারছি না আপনি কেন এসব জানতে চাইছেন? আমাকে এখানে ডাকার কারনকি এই প্রশ্নটা? এসব জেনেই বা আপনি কি করবেন?অামি যদি ভুল না হই তবে আপনি আমাকে বা রোশনি কাউকেই ঠিক মত চেনেন না।সেখানে এসব প্রশ্ন করার মানে কি?

অধির চেয়ারে গাঁ এলিয়ে বসলো।কফি মগে চুমুক দিয়ে বললো,

-রোশনিকে এই কয়দিনে ওর থেকেও বেশি চিনে গেছি আমি।আর বাকি রইলো তোমার কথা? তোমাকে আমি কিছুক্ষন আগে অবধি চিনতাম না।কিন্তু এখন যতোটা চেনার প্রয়োজন সেটুকু চিনে নিয়েছি।

-এতোকিছু যখন জেনে নিয়েছেন তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরটাও নিশ্চয় জানা আছে?তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করার কি মানে স্যার?

অধিরের ভালো লাগলো জয়ের এ্যাটিটিউড। বাঁকা হেসে বললো,

-অবশ্যই আমি জানি।আর আমি এটাও জানি রোশনি তোমাকে ভালোবাসে না।ও তোমাকে শুধু নিজের একজন ভালো বন্ধু মনে করে।এর বেশি কিছু নয়।

অধিরের কথা শেষ হতেই হালকা হাসলো জয়।বললো,

-এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না।তবে কোথাও একটা শুনেছিলাম একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বন্ধু হয়ে থাকতে পারে না।আই থিংক আপনিও শুনেছেন নিশ্চয়? আর সবচেয়ে বড় কথা ওর মনে আমার জন্যে শুধু বন্ধুত্ব নয় ভালবাসাও আছে।যেটা ওর চোখে আমি দেখেছি।কিন্তু আপনার এতে ইন্টারেস্ট কি সেটাই বুঝছি না।

-ভুলে যাও ওকে জয়।ওর জিবন থেকে সরে এসো।ওকে তুমি ভালোবাসতে পারো না।সেই অধিকার তোমার নেই।

-আপনি আমাকে এসব বলার কে?সরি স্যার।আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি। আপনার সাথে কোনো রকম খারাপ আচরন করতে চাচ্ছি না আমি।আপনাকে আমি নিজের আদর্শ বলেই মেনে এসেছি।সব সময় আপনাকে ফলো করার চেষ্টা করেছি লাইফে। আপনাকে আমি এটুকুই বলবো, আপনারও কোনো অধিকার নেই আমাকে এসব বলার।যেখানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।তবে একটা কথা স্যার।আমি এখনো বুঝতে পারছি না আপনি কেন এসব বলছেন? আপনি কি রোশনিকে..

জয়কে কথা শেষ করতে না দিয়ে অধির বললো,

-তোমাকে এতো কিছু জানতে হবে না।তুমি শুধু ওর লাইফ থেকে সরে যাও।দেখো তুমি ছেলে হিসেবে খারাপ নও।তাই তোমার জিবনটাকে নষ্ট করতে চাচ্ছি না আমি।আমার কথা চুপচাপ মেনে নাও।আর নিজের মত সামনে এগিয়ে যাও।

-থ্যাংক ইউ স্যার আপনার উপদেশের জন্যে।তবে আপনার উপদেশটা আমার পছন্দ হয়নি।তাই মানতে পারছি না।আমার মনে হয় এখানে আমার আর থাকা উচিত নয়।এবার আমি আসি স্যার।তবে একটা কথা স্যার।রোশনির হাত আমি কখনও ছাড়ছি না।থ্যাংকস ফর কফি।

জয় চলে যেতেই বাকা হাসলো অধির।এদিকে রিক্সায় বসে থরথর করে কাপছে জয়।এটা রাগের জন্যে হচ্ছে নাকি কোথাও রোশনিকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না সে।গলা শুকিয়ে আসছে তার।মনের মধ্যে চাপা ভয় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।আজ কেন জানি মনে হচ্ছে সে রোশনিকে হারিয়ে ফেলবে।তাহলে ও কিভাবে বাঁচবে? রোশনিকে ছাড়া সে কিছুতেই বাঁচতে পারবে না।না সে কিছুতেই তার মায়াবিনীকে হারাতে পারবে না।দরকার পড়লে জোর করে তুলে এনে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখবে সে।তবুও সে হারাতে দেবে না তার মায়াবিনীকে।

এদিকে অফিসের মিটিংরুমে দাড়িয়ে আছে রোশনি।কাচের দেয়ালে লাগানো একটা ছবির দিকে তার নজর।ছবিটার অর্থ সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।সেই কখন থেকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকেও ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না সে।রোশনিকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নাতাশা এগিয়ে এলো ওর দিকে।

-কি দেখছো এতে?

রোশনি ছবির দিকে দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন করলো,

-এই ছবিটার অর্থ কি আপু।ছবিতে তো শুধু একটা ব্লাক শ্যাডোর মানুষের মাথা আর মাথার উপরের দিকটা কেটে তার উপরে লাভ শেডের হার্ট আঁকা।এর মানে কি? ছবিটাকে দেখতে দেখতে আমার চোখ বোধ হয় ট্যারা হয়ে গেলো।কিন্তু কিছুই বুঝলাম না।

রোশনির কথায় হাসলো নাতাশা।টেবিলের উপর থেকে ফাইল গুলো গুছাতে গুছাতে বললো,

-এই ছবির সঠিক অর্থ কি সেটা আমরা কেউই ঠিক মত জানি না গুড়িয়া।এটা তিন বছর আগে অধির লাগিয়েছিল।অফিসে একদিন একটা ছেলে ইমপ্লোয়ি একটা মেয়ে ইমপ্লোয়িকে প্রপোজ করে।মেয়েটা হ্যা বলাতে সেদিন বাকি ইমপ্লোয়ি গুলোও খুশিতে হাত তালি, নাচানাচি শুরু করে দেয়।তখন অধির অফিসে ছিলো না।এরপর হঠাৎ অধির অফিসে ঢুকে এসব দেখে।এরপর সেদিনই পুরনো রুলসের সাথে নতুন কিছু রুলস এড করে।

-কেমন রুলস?

-এই যেমন,,,,,কোম্পানিতে ঢোকার পর পার্সোনাল লাইফ কোম্পানির বাইরেই রেখে আসতে হবে।অফিসে শুধু অফিসিয়াল কথা হবে।পার্সোনাল কিছু এলাউড নয়।পার্সোনাল লাইফ গেটের বাইরে।দ্বিতীয় রুলস ছিলো,,,বার্থডে আর স্পেশাল সেলিব্রেশনস এই সব ইভেন্টস অফিসের বাইরে হবে।অফিসকে অফিসের মতই রাখতে হবে।তারপরই এই ছবিটা এখানে লাগায় অধির।তবে আমার মনে হয় ছবিটা দিয়ে বুঝানো হয়েছে এখানে প্রেম,হাসি আনন্দ এসব করা যাবে না।অফিস ইজ অফিস।প্রেম ভালোবাসা সব অফিসের বাইরে।দেখো নাই আমি আর সাহিল অধিরের সামনে তেমন কথায় বলি না অফিস টাইমে।

নাতাশা ফাইলগুলো গুছিয়ে রোশনিকে আসতে বলে মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রোশনি ছবিটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

-ব্যাটা এই ছবির মতোই অনুভূতিশূণ্য।এই ছবির মত যদি সত্যিই ওই অসভ্যটার মাথা ফেটে যেত।সবাই কি আর তোর মত অনুভূতিশূণ্য নাকি ফাজিল লোক?

রোশনির ভাবনার মাঝেই ফোন বাজলো।রিসিভ করে কানে ধরতেই অপাশ থেকে ক্লান্ত গলায় বলে উঠলো জয়,

-একটু দেখা করবে প্লিজ? আমি পার্কে পাঁচটার সময় অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।প্লিজ চলে এসো।অপেক্ষায় থাকবো আমি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here