শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ২৩

0
3676

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ২৩

🌼
ঝকঝকে আকাশে উত্তপ্ত সূর্যের রোদ এসে পড়ছে বারান্দার গাঁ ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকা কালো গোলাপ গাছের উপর।কাল রাতের বৃষ্টির পর আজকের সকালটা বেশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।কালো গোলাপের পাপড়িতে জমে থাকা বৃষ্টির কণাগুলোকে মুক্তোর মত দেখাচ্ছে।হালকা বাতাসে ফুলগুলো নড়ে উঠতেই পানির কণাগুলো একতরফা ভালোবাসার মত অঝোরে ঝরে পড়ছে।গাছের পাতায় জমে থাকা ধুলো গুলো ধুয়ে মুছে গাঢ় সবুজ রঙে সেজেছে।দুরের আমগাছের ডালে একজোড়া আধভেজা কাক বসে আছে।গা ঝাড়া দিয়ে মাঝে মধ্যেই অকারনে ডেকে উঠছে।হালকা বাতাসে গাছের স্নিগ্ধ পাতাগুলো নড়ে উঠছে।গাছের আধছেড়া পাতা গুলোই বলে দিচ্ছে কাল রাতে বৃষ্টির প্রকোপের কথা।বাতাসে জানালার আধভেজা কালো পর্দাটা হালকা উড়ছে।পর্দা সরতেই পর্দার ফাঁক গেলে এক ফালি রোদ এসে পড়ছে রোশনির ঘুমন্ত মুখে।মুখে রোদ পড়তেই চোখ মুখ এলো তার।রোদের হাত থেকে বাঁচতে মুখ লুকালো অধিরের বুকে।দুহাতে শক্ত করে অধিরকে জড়িয়ে ধরলো।ততোক্ষণে ঘুম অনেকটাই হালকা হয়ে এসেছে অধিরের।তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে তার বাহুডোরে কেউ আবদ্ধ। উদম বুকে কারো গরম নিশ্বাস পড়ছে অনবরত।কারো চুলের মিষ্টি ঘ্রান এসে নাকে লাগছে।অধির দ্রুত চোখ মেলে তাকালো।ঘুমের রেশটা তার এখনো পুরোপুরি কাটে নি।চোখ খুলতেই নিজের বুকে কাউকে আবিষ্কার করলো।অধিরের পুরু ভ্রু জোড়া কুচকে এলো।মুখ উচিয়ে তাকাতেই দৃষ্টি গেলো রোশনির ঘুমন্ত মুখের দিকে।অধিরের কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হচ্ছে।যেন এখনি সবকিছু হারিয়ে যাবে।তবে স্বপ্নটা মন্দ নয়।এমন স্বপ্ন সে রোজ দেখতে চায়।অধির নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো রোশনির ঘুমন্ত মুখের দিকে।সে জানে এটা তার স্বপ্ন।কিছুক্ষন বাদেই হয়তো তার স্বপ্ন ভেঙে যাবে।তার বুক থেকে হারিয়ে যাবে ঘুমন্ত তিলোককন্যা।সে কিছুতেই ঘুমন্ত তিলোককন্যার ঘুমন্ত মুখটা দেখার সুযোগ হারাতে চায়না।অধিরের চোখ স্থীর।পলক পড়ছে না।খানিক বাদে রোশনি নড়ে উঠতেই পলক পড়লো অধিরের।এতোক্ষনে সে বুঝে গেছে এটা স্বপ্ন নয়।সত্যি সত্যিই তিলোককন্যা তার বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু প্রশ্নটা হলো রোশনি এখানে কিভাবে? তার রুমে,তার বিছানায়,এমনকি তারই বুকে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু কিভাবে?মাথা ভরা প্রশ্ন নিয়ে শূণ্য চোখে তাকালো অধির।মাথায় কিছু আসছে না তার।অধির খেয়াল করলো সে রোশনিকে দুহাতে চেপে ধরে আছে নিজের সাথে।অধিরের হাত আলগা হয়ে এলো।দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নিলো।অধিরের হাত সরানোতে চোখ মুখ কুচকে আরো কিছুটা ঘেঁষে শুঁলো রোশনি।উদম বুকে নাক ঘষতেই সারা শরির কেঁঁপে উঠলো অধিরের।মেয়েটাকি তাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছে নাকি?আজ তো মনে হচ্ছে সে মারায় যাবে।আচ্ছা সে কি সত্যিই মারা যাচ্ছে?সচেতন মষ্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ জবাব দিলো,হ্যা সে মারা যাচ্ছে।এই মেয়ের মিষ্টি যন্ত্রণায় ক্রুদ্ধ হয়ে সে মারা যাচ্ছে।অধির চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো।নিজেকে কোনো ভাবে সামলে মৃদু গলায় রোশনিকে ডেকে উঠলো।দু তিন বার ডাকতেই নড়ে চড়ে উঠলো রোশনি।অধিরের বুকে মুখ ঘষে আবারো ঘুমিয়ে পড়লো। রোশনির এমন কান্ডে হৃদপিন্ডটা মনে হচ্ছে এই বুঝি এখনি বেরিয়ে আসবে বুক চিরে।অধির আবারো আলতো ডেকে উঠলো,

-রোশনি? রোশনি উঠো।

রোশনি ভ্রূ কুচকালো।চোখ চোড়া বন্ধ রেখেই বললো,

-উফফ নকুল আমার ভিষন ঘুম পাচ্ছে।ঘুমাতে দে আমায়। বিরক্ত করিস না।

রোশনি আবারো ঘুমিয়ে পড়লো।রোশনির ঘুম জড়ানো কন্ঠে আবারো ঘোর লেগে গেলো অধিরের।কেমন মাতাল করা গলার স্বর।শুনলেই যেন নেশা হয়ে যায়।অধির জানালার দিকে তাকাতেই দেখলো বাইরে আলো ঝলমল করছে।জানালার আধভেজা পর্দাটা চোখে পড়তেই বুঝলো রাতে বৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু অদ্ভুদ বিষয় অধির কিছুই টের পায়নি।স্লিপিং পিলটা পাওয়ারফুল হওয়ায় রোশনির আসাটাও সে টের পায় নি।অধির আবারো রোশনির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালো।তার ইচ্ছে করছে না রোশনিকে জাগাতে।এভাবে বুকে নিয়েই সারা জিবন পাড় করতে ইচ্ছে করছে।অধির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

-রোশনি?রোশনি উঠো।সকাল হয়ে গেছে।তুমি এখানে কি করে এলে?রোশনি? রোশনি?

অধিরের অনবরত ডাকে চোখ পিটপিট করে তাকালো রোশনি।মাথা তুলে অধিরের মুখের দিকে এপলক তাকিয়ে আবারো চোখ বুজে ওর বুকে মাথা রাখলো।প্রায় সাথে সাথেই চোখ খুলে তাকালো রোশনি।তার মনে হচ্ছে সে অধিরকে দেখলো।কিন্তু অধিরকে সে কিভাবে দেখবে? সে তো নিজের রুমে। কারো হৃদপিন্ডের ঢিপ ঢিপ শব্দ কানে যেতেই সচেতন চোখে তাকালো রোশনি।রোশনি মাথা তুলে দেখতে নিলেই অধির রোশনিকে ঘুরিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো।কালো রঙের ব্লাঙ্কেটটা গায়ে টেনে নিয়ে রোশনিকে নিজের সাথে চেপে ধরে আড়াল করার চেষ্টা করলো।হঠাৎ এমন করায় রোশনি খানিক ভড়কে গেলো।অধিরের হাত থেকে ছাড়া পেতে নড়ে চড়ে উঠতেই কারো গলার আওয়াজ শুনে থেমে গেলো রোশনি।সাহিল বিছানার একপাশে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে আছে।সন্দিহান গলায় বলে উঠলো,

-কি রে ঠিক আছিস তুই? এই গরমে ব্লাঙ্কেট গায়ে শুয়ে আছিস কেন? রুমের দরজাও খোলা রেখেছিস।

অধির হাই তুলে ভ্রু কুচকে তাকালো।বললো,

-রাতে বৃষ্টি হলো তাই শীত শীত করছে।আর রুমের দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছি।তা তুই এতো সকালে আমার রুমে কেন?

-এতো সকাল মানে? সকাল অন্য কাছে হলেও এখন তো তোর সকাল হওয়ার কথা নয়।তোর সকাল তো আরো এক ঘন্টা আগে হয়ে গেছে।

অধির আবারো হাই তুলে তাকালো।বললো,

-কয়টা বাজে?

সাহিল হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললো,

-সাতটা পঁয়ত্রিশ।

-আচ্ছা তুই যা।আমি আসছি।

-ওকে।জলদি আয়।

সাহিল চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো অধির।রোশনিও ছাড়া পাবার জন্যে নড়ে উঠলো।অধিরের বুকের তলায় পিষে যাচ্ছে সে।তারউপর অসভ্যটা গাঁয়ে কিছু পড়েও নি।কোনো ছেলের এতো কাছে এভাবে থাকতে তার ভিষন অস্বস্তি হচ্ছে।সে কোথায় আছে সেটাও বুঝা যাচ্ছে না।অধির কিভাবে তার কাছে এলো? মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে।সাহিল আবারো পিছনে ফিরে তাকালো।সাহিলকে তাকাতে দেখে ঘাবড়ে গেলো অধির।সাহিল কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে ব্লাঙ্কেটের দিকে তাকিয়ে রইলো।কেন জানি মনে হচ্ছে ব্লাঙ্কেটের মধ্যে আরো একজন আছে।নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হলো সাহিল।অধিরের কম্বলের ভেতর আবার কে থাকবে?সাহিল আর কিছু না ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সাহিল বেরিয়ে যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাচলো অধির। রোশনি অধিরকে ধাক্কা দিয়ে ব্লাঙ্কেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো।ততোক্ষণে অধিরও উঠে বসেছে বিছানার উপর।রোশনি লম্বা লম্বা শ্বাস টেনে চোখ রাঙিয়ে তাকালো অধিরের দিকে।বললো,

-একটু হলে তো দম বন্ধ হয়ে মরে যেতাম।পাগল নাকি আপনি? এভাবে কেউ চেপে ধরে? আর আপনি আমার রুমে কি করছেন? আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে? তারউপর যখন মেয়েটা রুমে একা ঘুমিয়ে থাকে?

রোশনির কথায় সরু চোখে তাকালো অধির।

-এই যে মিস বাঘিনী। এতো তেজ দেখানোর আগে রুমটা ভালো করে দেখে নাও।আমি তোমার রুমে যায় নি, তুমি আমার রুমে এসেছো।তো লজ্জা তো তোমার পাওয়া উচিত।

-বললেই হলো।আমি আপনার রুমে কেন আসতে যাবো?

কথাটা বলতে বলতেই রুমের দিকে খেয়াল করলো রোশনি।রুমটা চিনতে পেরেই মুখ বন্ধ হয়ে গেলো।চোখ মুখ কুচকে মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো।অধিরের দিকে অসহায় চোখে তাকাতেই অধির বাকা হাসলো।

-তো…?এবার বলুন আমার রুমে কি করে এলেন? আমি নিশ্চয় আপনাকে তুলে আনি নি।

অধিরের কথায় সরু চোখে তাকালো রোশনি।এটা হতেও পারে।এই অসভ্য লোকটা সবই করতে পারে।ওই হয়তো তাকে তুলে এনেছে এখানে।এখন এমন ভাব দেখাচ্ছে।কিন্তু রোশনির স্পষ্ট মনে আছে সে পিয়ার সাথে গেস্ট রুমে শুয়েছিল।রুমের দরজা সে নিজে বন্ধ করেছিল।তাহলে বাইরে থেকে অধির রুমে ঢুকবে কি করে? পরোক্ষনেই মনে পড়লো সেদিন রাতের কথা।সেদিন তো রোশনির নিজের বাড়িতে বন্ধ রুমে ঢুকে পড়েছিল অধির।আর এটা তো ওর নিজের বাড়ি।ঢুকতেই পারে।রোশনি সরু চোখে তাকালো,

-হতেই পারে।হতেই পারে আপনি আমায় এখানে তুলে এনেছেন।এখন যদি বলেন রুমের দরজা তো বন্ধ ছিল তাহলে আমি কিভাবে রুমে ঢুকবো।তাহলে বলি,,সেদিন আমার বাড়িতে আপনি আমার রুমে ঢুকেছিলেন।সেদিন আমার রুমের দরজাও বন্ধ ছিল।তারপরও আপনি ঢুকেছিলেন।আর এটা তো আপনার বাড়ি।ঢুকতেই পারেন।

-ওয়াও,,, কি সুন্দর যুক্তি!!বাহ।আচ্ছা মানলাম আমিই তোমায় এখানে তুলে এনেছি।এখন এটা বলো এতে আমার লাভ?

অধিরের কথায় ঠোট উল্টালো রোশনি।সত্যিই তো এতে অধিরের কি লাভ?রোশনি নিজের মাথায় আরো কিছুটা চাপ দিতেই রাতের কিছুটা মনে এলো।

-রাতে আমি আর পিয়া ঘুমিয়ে ছিলাম।মাঝ রাতে আমার পানি পিপাসা পায় আর আমি কিচেনে আসি পানি খেতে।তারপর ওখানে গ্লাসে রাখা পানি খায়।যদিও পানির স্বাদটা অদ্ভুদ আর বিশ্রী ছিল।এরপর আর কিছু মনে পড়ছে না।এরপর কি হয়েছিল আমার সাথে?আর আমার মাথাটা এমন ঝিমঝিম করছে কেন?

রোশনির কথায় সরু চোখে তাকালো অধির।ওটা যে পানি ছিলো না সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত।

-ওটা পানি ছিলো না স্টুপিড।ড্রিংকস ছিলো।

অধিরের কথায় চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার অবস্থা রোশনির।শেষ পর্যন্ত সে কিনা ওই বিশ্রী জিনিসটা খেলো।রোশনির গা গুলিয়ে আসতে লাগলো।অধিরের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-আমি না হয় হুশে ছিলাম না তাই এখানে এসে শুয়েছিলাম।আপনার তো হুশ ছিলো নাকি? তাহলে আপনি কেন আমাকে এখানে এলাও করলেন? মরার মত ঘুমোচ্ছিলেন নাকি?

-স্টপ ইট।রাতে আমি স্লিপিং পিল খেয়েছিলাম তাই বুঝতে পারি নি।আর তোমাকে দেখে দেখে আমার রুমেই আসতে হলো?

-আমি নাহয় ভুলে এসেছি।কিন্তু আপনি কেন রুমের দরজা খুলে রেখেছিলেন? এখন তো মনে হচ্ছে সবটাই আপনার প্ল্যান।

-একদম বাজে কথা বলবে না।আমি ভুলে গেছিলাম দরজা লক করতে।আর তোমার সাথে শোয়ার জন্যে আমি নিশ্চয় মরে যাচ্ছি না?যেভাবে ঝাপটে ধরেছিলে বাপরে,,,,,

কথাটা বলেই থামলো অধির।অধিরের কথায় লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে রোশনির।অধির তাকে নিশ্চয় নির্লজ্জ মেয়ে ভাবছে।লজ্জা আর অস্বস্তিতে কান্না পাচ্ছে রোশনির।সারা রাত সে অধিরের ওই নগ্ন বুকে ছিলো ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।রোশনিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে প্রসঙ্গ পাল্টালো অধির।

-আচ্ছা যা হয়েছে হয়েছে।এখন ওঠো আমি কফি করে দিচ্ছি।এক কাপ কফি খেলে ভালো লাগবে।ততোক্ষণে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।

অধিরের কথায় দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়ালো রোশনি।এক প্রকার দৌড়েই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।অধির সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে কফি বানাতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষন পর রোশনি ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কফির মগ এগিয়ে দিলো অধির।রোশনি অধিরের দিকে না তাকিয়েই মগ হাতে নিলো।হাত উঠিয়ে এক চুমুক দিতেই কুলি করে বের করে দিল রোশনি।আর সেটা গিয়ে পড়লো সোজা অধিরের নগ্ন বুকে।অধির একবার নিজের বুকের দিকে আর একবার রোশনির কুচকানো মুখের দিকে তাকাচ্ছে।এই মুহূর্তে ঠিক কেমন রিয়্যাকশন দেওয়া উচিত বুঝতে পারছে না সে।রোশনি চোখ মুখ কুচকে অধিরের দিকে তাকাতেই ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।

-সরি সরি।আমি ইচ্ছে করে করি নি।কফিটা এতো বিশ্রী যে বেরিয়ে এলো।আই এম সো সরি।প্লিজ আমাকে বকবেন না।আই সয়ার আমি ইচ্ছে করে করি নি।এমন বিদঘুটে কফি কিভাবে খান আপনি? আমার তো গাঁ গুলিয়ে আসছে।ইয়াক…

অধির হতাশ চোখে তাকালো।বললো,

-আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না আমার দোষটা আসলে কোথায়?

-সরি বললাম তো।আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি? আর আপনি এমন খালি গায়ে দাড়িয়ে আছেন কেন? আপনার না হয় লজ্জা নেই তাই বলে কি পৃথিবীর কারোই লজ্জা নেই?

রোশনি অন্য দিকে তাকিয়েই বললো কথাটা।এই প্রথম অধিরকে এই অবস্থায় দেখছে সে।ভিষন লজ্জা লাগছে আর সেই সাথে অস্বস্তি। রোশনির কথায় ফিচেল হাসলো অধির।বললো,

-ইন্টারেস্টিং। ভেরি ইন্টারেস্টিং।এখন হঠাৎ তোমার লজ্জা করছে? সারা রাত যখন এই বুকে চিপকে লেগে ছিলে তখন কোথায় ছিলো এই লজ্জা?

অধিরের কথায় প্রায় হিচকি উঠার মত অবস্থা রোশনির।লোকটার কি সত্যিই লজ্জা নেই? কি সব বাজে কথা বলে চলেছে।

-আপনি ইচ্ছে করে আমায় লজ্জা দিচ্ছেন তাই না?

রোশনির কথায় বাকা হাসলো অধির।শিষ বাজাতে বাজাতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।অধির যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো ততোক্ষণে রোশনি রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।অধির বাকা হেসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়াতেই চোখ পড়লো ফ্লাওয়ারভাজ এর নিচে ছোট্ট চিরকুটের দিকে।অধির ভ্রু কুচকে চিরকুটটা হাতে তুলে নিল।গুটি গুটি অক্ষরে লেখা কিছু শব্দ পড়তেই বাঁকা হেসে উঠলো অধির।চিরকুটে লেখা,

“আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে আপনার উপর মিষ্টার চৌধুরি।সবকিছু হয়তো আপনার পূর্বপরিকল্পিত। সবটাই আপনার প্ল্যান।এতে আপনার কি লাভ হতে পারে তা আমার জানা নেই।আপাততো জানতে চাইছিও না।তবে এটুকু বুঝে গেছি আপনি ভিষনই অসভ্য লোক।আর একটা কথা,,,আমি মোটেই চিপকু টাইপ মেয়ে নই।তবে আপনি যে বেশ চিপটু টাইপ ছেলে সে ব্যাপারে আমি যথেষ্ট নিশ্চিত।আপনিই আমার সাথে চিপকে ছিলেন মিষ্টার চিপকু চৌধুরি।”

রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছে পিয়া আর রোশনি।মাথার উপরে উত্তপ্ত সূর্যের তপ্ত রোদ।লাল টকটকে হয়ে আসা মুখে ঘামের বিন্দু।রোশনির সেদিকে তেমন খেয়াল নেই।উড়ন্ত চুলগুলোকে কানের পাশে গুজে দিয়ে পিয়ার দিকে বেকে বসলো সে।

-পিয়ু রে,,,,আমার সাথে আজ কি কি হয়েছে তুই ভাবতেও পারবি না।আজ আমার সাথে কি কি হয়েছে শুনলে তোর হুশ উড়ে যাবে।তুই শুনছিস আমার কথা..?

পিয়া গলা আর কপালের ঘামটুকু হাত দিয়ে মুছে বিরক্ত চোখে তাকালো।বললো,

-আজকে ভিষন গরম পড়েছে তাইনা রে রোশু? কাল বৃষ্টি হলো তবুও গরমটা এতোটুকুও কমলো না।ভ্যাপসা গরমে পুরো সিদ্ধ হওয়ার যোগাড়।তুই কি যেন বলছিলি? কি যেন হয়েছে তোর সাথে? কি হয়েছে? আর সকালে কোথায় ছিলি? ঘুম থেকে উঠে দেখি তুই নেই।

-আর জিজ্ঞাসা করিস না দোস্ত।আজকের দিনটা আমার জন্যে ভালো না বুঝলি।নয়তো এমন বিশ্রী একটা ঘটনা ঘটে আমার সাথে?

পিয়া বিরক্ত চোখে তাকালো।এমনিতেই গরমে সে বিরক্ত তারউপর এই মেয়ে আসল কথা না বলে কথা পেচিয়ে চলেছে ক্রমাগত।

-এতো গোল গোল কথা না ঘুরিয়ে কি হইছে তাই ক।

রোশনি সবটা বলতেই পিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো।ভিষন উত্তেজিত হয়ে বললো,

-কি…? সত্যিই এসব হয়েছে? আল্লাহ আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।তুই সারা রাত অধির চৌধুরির বুকে আই মিন ওনার সাথে ছিলি? আই কান্ট বিলিভ দিস ইয়ার।

-আমার না মনে হয় সব ওই ব্যাটায় করছে।আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে ব্যাটার উপর।আমার ভিষন কান্না পাচ্ছে রে পিয়ু।শোন না,,,,? এই কথাটা যেন জয়কে বলিস না প্লিজ।জানতে পারলে ভিষন কষ্ট পাবে।

রোশনির কথায় ফিচেল হেসে গেয়ে উঠলো পিয়া,

“দো দিল মিল রাহে হে, মাগার চুপকে চুপকে
(দু’টো মন এক হচ্ছে চুপি চুপি)”

-তুই তো জয়কে ভালোবাসিস না।তাহলে ও জানলেই বা তোর কি?

কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারো গানের কলি গেয়ে উঠলো পিয়া,

“বোল দো না জারা,দিল মে জো হে ছিপা
(বলো না একটু,তোমার মনে কি লুকিয়ে আছে)

ম্যা কিছি ছে কাহুঙ্গী নেহি
(আমি কাউকে বলবো না)”

পিয়ার গানের প্রত্ত্যুরে লাজুক হাসলো রোশনি।রোশনিকে হালকা গুতা দিয়ে দুষ্টু হাসলো পিয়া।বললো,

-আরে বাহ।শেষ পর্যন্ত তাহলে স্বীকার করলি যে তুই জয়কে ভালোবাসিস? কথাটা শুনলে না জানি কেমন রিয়্যাকশন করবে জয়? হার্ট অ্যাটাক করে না বসে।

– আমি কখন বললাম আমি ওই গবেটটাকে ভালবাসি? আমি ওকে মোটেও ভালবাসি না।

-হুম বুঝতে পেরেছি।

-কি?

-এটাই যে তুই ওকে ভালোবাসিস না।

কথাটা বলেই ফিচেল হাসলো পিয়া।রোশনি চোখ মুখ কুচকে তাকালো।চাপা রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,

-এতদম হাসবি না বলে দিলাম।দিন দিন আস্ত ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস তুই।আরাফ আবার বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে না যায়।

-দোয়া কর দোস্ত।এমনটাই যেন হয়।

পিয়ার কথায় ওর পিঠে দু চারটে কিল বসালো রোশনি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here