শেষ বিকেলের আদর❤️পর্ব : ২২

0
3762

#শেষ বিকেলের আদর❤️
#রিত্তিকা ইসলাম
পর্ব : ২২

🌼
বাগানের এক কোনায় নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে রোশনি।ওর থেকে খানিক দূরে সবাই নিজেদের মত ব্যস্ত।কেউ ড্রিংকস করছে তো কেউ মিউজিকের তালে তালে পা মেলাচ্ছে।বিভিন্ন রকমের লাইটসের আলোই ঝলমল করছে সবকিছু।কিন্তু সকাল থেকেই রোশনির মন ভালো নেই।হুটহাট মন খারাপ হওয়াটা ভিষন বিরক্তিকর।নিজেকে নানা রকম ভাবে বুঝিয়েও মন খারাপ ভাবটা কমাতে পারে নি রোশনি।যেখানে সবাই আনন্দে মত্ত সেখানে ও নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে এক কোনায়।এদিকটাই তেমন আওয়াজ নেই।আর না আছে রকমারি আলোর মেলা।মাঝে মাঝেই নাকে ভেসে আসছে রঙ বেরঙের ফুলের সুবাস। অনেক রকম ফুলের মিশ্র সুবাস।চোখ বন্ধ করে ফুলের সুবাস অনুভব করতে খুব একটা মন্দ লাগছে না।রোশনি হাত ভাজ করে দাড়িয়ে ফুলের গন্ধ নিতে লাগলো।একটু আগের ভোতা হয়ে আসা মাথাটা এখন অনেকটাই ফ্রেশ লাগছে।পিয়াকে সব দেখতে বলে অনেক আগেই সে এখানে এসে দাড়িয়েছে।সব কিছুই কেমন বিরক্ত লাগছিল।মন খারাপের কারনটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।অধিরের তখন বলা কথা গুলোই বার বার মনে পড়ছে। আকাশে চাঁদ নেই।তারও কি অভিমান হয়েছে আকাশের সাথে? আকাশের উপর অভিমান করেই কি সে লুকিয়ে আছে মেঘের পিছনে? আচ্ছা আকাশের কি মন খারাপ চাঁদ তার সাথে লুকোচুরি খেলছে দেখে? চাঁদের বিরোহে দহন হয়ে সে কি অশ্রু ঝড়াবে এবার?চাঁদের অভিমান কি ভাঙবে এতে? হয়তো ভাঙবে। আবার হয়তো না। সব কিছুতেই এই একটা হয়তো এসে সব গুলিয়ে দেয়।ভারি মাথাটা আরো কিছুটা ভারি হয়ে এলো রোশনির।আবারো সবকিছু বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো।সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।অনেক দূরে।এতোটা দূরে যতোটা দূরে গেলে অধির চৌধুরিকে পাওয়া যাবে না।রোশনি চোখ বন্ধ রেখেই ছোট ছোট পা ফেলে হাটাহাটি করতে লাগলো।মৃদু বাতাসে পাতলা একাধিক রঙে রাঙা ওড়নাটা হালকা উড়ছে।সেই সাথে উড়ছে সামনের ছোট কাটা চুলগুলো।রোশনির হাটার মাঝেই শক্ত কিছু একটাতে ধাক্কা খেলো। দ্রুত চোখ খুলতেই দেখতে পেলো কারো চওড়া বুকের সাথে ধাক্কা খেয়েছে সে।রোশনি ভ্রু কুচকে লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই বিরক্তিতে ভরে গেলো সারা শরির।সামনে দাড়ানো লোকটার সাথে কোনো রকম কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার।রোশনি কিছু না বলে পিছনে ফিরে চলে আসতে নিলেই আস্তে করে ডেকে উঠলো অধির।

_রোশনি?

অধিরের ডাকে থমকে দাড়িয়ে আবারো সামনের দিকে পা বাড়ালো রোশনি।লোকটার সাথে কোনো রকম কথা বলার ইচ্ছে এখন নেই।আবারো হয়তো কিছু বলে অপমান করতে এসেছে।রোশনিকে চলে যেতে দেখে আবারো ডেকে উঠলো অধির,

-রোশনি প্লিজ শোনো আমার কথা।সন্ধ্যা থেকে তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি আর তুমি আমাকে বারবার ইগনোর করে চলে যাচ্ছো।একটা বার আমার কথাটা তো শুনবে।

অধিরের কথায়ে ঘুরে দাড়ালো রোশনি।অত্যান্ত শান্ত গলায় বলে উঠলো,

-সরি স্যার।আমি আপনাকে ইগনোর করছি না।সেই ক্ষমতাও আমার নেই।কাজের বাইরে কোনো কথা আমি আপাততো বলতে চাচ্ছি না।তাই এড়িয়ে যাচ্ছি।আর তাছাড়া একজন বিসনেস টাইকুনের সাথে কথা বলার স্ট্যাটাস আমার নেই।

রোশনি চলে যেতে গিয়েও আবারো ফিরে তাকালো অধিরের দিকে।

-আমি বুঝতে পেরেছি স্যার। সকালের বিষয় নিয়েই আপনি কিছু বলতে চান। ওই ব্যাপারে এতো ভাবার কিছু নেই স্যার।আপনি ভুল কিছু বলেন নি।ব্যস আপনি শুধু আমার আর আপনার জায়গাটা দেখিয়েছেন।আমি কিছু মনে করি নি।সরি স্যার,,,আমাকে যেতে হবে।গেস্টদের কিছু লাগবে কিনা দেখতে হবে।বাই স্যার।

রোশনি টলমলে চোখ নিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলো।অধির অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার দিকে।মেয়েটাকে সে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।একটা বার সরি বলার সুযোগটাও দিলো না।অধির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচের দিকে তাকাতেই চোখ গেলো ঘাসের উপর পড়ে থাকা পায়েলের দিকে।দুর থেকে আসা লাইটসের হালকা আলোই খুব বেশি স্পষ্ট দেখা না গেলেও আবছা দেখা যাচ্ছে সব।অধির হাটু ভেঙে বসে পায়েলটা ঘাসের উপর থেকে তুলে নিলো।চোখের সামনে পায়েলটা ধরতেই চকচকে কালো পাথরগুলো চোখে পড়লো অধিরের।এটা সে রোশনির পায়ে দেখেছিল সেই প্রথম দিন থেকে।সাদা পায়ে কালো পাথরের পায়েলটা মুগ্ধ করেছিল অধিরকে।চোখ জোড়া থমকে গেছিলো সেই ফর্সা পায়ে।অধির পায়েলটা হাতে নিয়ে সামনের দিকে হেটে চলে গেলো।

পিয়া এক কোনায় চেয়ার পেতে বসে আছে।হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটা কেপে উঠতেই সামনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো।ফোন তুলে ধরতেই মোবাইলের স্ক্রিনে আরাফ নামটা চোখে পড়লো।এই সময় আরাফ কেন ফোন করছে সেটা ভেবেই কপাল কুচকালো। পিয়া উঠে দাড়িয়ে আরো কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়ালো।ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো পুরুষ কন্ঠ।

-হ্যা আরাফ বলো।

-কি করছো?

-এই তো সাকসেস পার্টিতে আছি।তোমায় বলেছিলাম তো।

-হ্যা তা অবশ্য বলেছিলে।কখন শেষ হবে পার্টি? সময়টা জানালে আমি তোমায় পিক করতে আসতাম আরকি।দেরি হবে কি?

-দেরি তো একটু হবে।বাট তোমায় আসতে হবে না।আই উইল ম্যানেজ।আমি একাই চলে যেতে পারবো।ডোন্ট ওয়ারি।আর সাথে তো রোশনি আছেই।প্রবলেম হবে না।

-এতো রাতে দুজনে একা কিভাবে যাবে? পার্টি শেষ হলে আমাকে জানিও আমি এসে পৌছে দেবো তোমাদের।

-বললাম তো আরাফ আমরা যেতে পারবো।ডোন্ট ওয়ারি।আচ্ছা আমার কথা ছাড়ো তুমি কি করছো?অফিস থেকে বেরিয়েছো নাকি এখনো কাজে ডুবে আছো?

পিয়ার কথায় হালকা হাসলো আরাফ।

-এইতো, মাত্র বের হলাম।ড্রাইভ করছি।বাসায় পৌছাতে কয়েক মিনিট লাগবে।

-আচ্ছা তাহলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।আর একটা কথা মিষ্টার আরাফ,,ড্রাইভ করতে করতে কথা বলতে নেই। আচ্ছা এখন রাখছি।মিউজিকের শব্দে কথা ঠিক শুনতে পাচ্ছি না।পরে কথা হবে।

_ওকে বাই।সাবধানে যাবে।আর কোনো সমস্যা হলে আমায় ফোন দেবে।গুড নাইট।

-গুড নাইট।

ফোন কেটে মৃদু হাসলো আরাফ।প্রথম দেখায় মেয়েটাকে একরোখা,ক্ষেপাটে আর জিদ্দি মনে হলেও এখন সেই ধারনাটা পাল্টেছে আরাফের। বউ হিসেবে খুব বেশি খারাপ হবে না মেয়েটা।কিছুটা ধানীলঙ্কা টাইপ হবে হয়তো।ব্যাপারটা খুব একটা মন্দ হবে না।কথাগুলো নিজের মনে আওড়াতেই ঠোটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো আরাফের।অন্যদিকে আরাফের সাথে মানিয়ে নেওয়ার সর্বোত্তম চেষ্টা করে যাচ্ছে পিয়া।বিয়েটা যখন করতেই হবে তখন মানিয়ে নেওয়াটাও তো দরকার।তবে ঠিক কতোটা মানিয়ে নিতে পারবে তা জানা নেই।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিছনে ফিরতেই দেখলো আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।পিয়ার ঘন কালো ভ্রু জোড়াও কুচকে এলো খানিক।আদি সরু চোখে তাকিয়ে আছে।

-কি চাই? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আর এখানে কেন তুমি? যাও তোমার বেবিদের কাছে যাও।

-কার সাথে কথা বলছিলে?

আদির কথায় সরু চোখে তাকালো পিয়া।

-তোমায় কেন বলবো?

-কারন আমি জিজ্ঞেস করেছি তাই।

পিয়া এবার হাত ভাজ করে দাড়ালো।আদির দিকে সোজা তাকিয়ে বলে উঠলো,

-কোন ঘেটেলের রাজকুমার তুমি শুনি যে তুমি জানতে চাইলেই আমাকে বলে দিতে হবে?

-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তুমি শুধু আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।

পিয়া আদিকে অনুকরন করে বলে উঠলো,

-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।সরি।আই কান্ট।

-আচ্ছা বলতে হবে না।শুধু এটুকু বলো সেদিনের সেই ফার্মের মোরগটা কে ছিল?

-ফার্মের মোরগ? আই ডিডেন্ট আন্ডারস্যান্ড।

-সেদিনের সেই রেস্টুরেন্টের ছেলেটার কথা বলছি।

-আচ্ছা।তো তুমি জেনে কি করবে শুনি? আর আমি তোমাকে কেন আমার পার্সোনাল বিষয় সম্পর্কে বলবো?

-আচ্ছা!!তাহলে ওই মোরগটা তোমার পার্সোনাল।গুড ভেরি গুড।

-দেখো আমায় বিরক্ত করো না।যাও গিয়ে তোমার বেবিকে কোম্পানি দাও।

আদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো পিয়া।পিয়া নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতেই আদিও ছুটে এলো।পিয়া বিরক্তি নিয়ে তাকাতেই একটা চিকন পাতলা ছেলে এসে দাড়ালো ওদের সামনে।পিয়ার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো,

-হাই বিউটিফুল। উইল ইউ ডান্স উইথ মি?

পিয়ার মোটেও এখন ডান্স করার মুড নেই। তবে আদির দিকে চোখ পড়তেই দেখলো আদি চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।আদিকে জ্বালাতে পিয়া ছেলেটার হাতে হাত রাখলো।কিছুটা ন্যাকা গলায় বলে উঠলো,

_হুয়াই নট হ্যান্ডসাম।

ছেলেটা প্রশস্ত হাসি দিয়ে পিয়াকে নিয়ে চলে যেতেই চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে রইলো আদি।

রাত তখন প্রায় বারোটা বাজে।লোকজন মোটামুটি চলে গেছে।বাড়ির পরিবেশ এখন অনেকটাই শান্ত।পিয়া আর রোশনি কিছু স্টাফকে পুরো জায়গাটা ক্লিন করতে বলতেই সবাই ক্লিন করতে লেগে গেলো।রোশনির ফোনে কল আসাতে কথা বলতে চলে গেলো সে।পিয়া কিছু কাচের গ্লাস নিয়ে কিচেনে রাখতে গেলো।গ্লাস গুলো যথাস্থানে রেখে পিছনে ফিরতেই দেখলো আদি সটান দাড়িয়ে আছে।আদিকে দেখে ভ্রু কুচকালো পিয়া।ছেলেটার সমস্যাটা কি সেটাই মাথায় ঢুকছে ওর।

-আবার কি? আমার পিছনে পিছনে কেন ঘুরছো? চুপ করে আছো কেন বলো? সমস্যা কি তোমার? আর এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

পিয়ার কথায় খুব একটা হেলদোল হলো না আদির।আগের মতোই তাকিয়ে রইলো।পিয়া ভ্রু কুচকে ভালো করে দেখতে লাগলো আদিকে।

-আর ইউ ড্রাংক?

পিয়ার কথায় হেসে মাথা নাড়ালো আদি।আদির এমন কান্ডে চোখ মুখ কুচকে এলো পিয়ার।

-ভেরি গুড।খুব ভালো কাজ করেছো।এখন আমার সামনে থেকে যাও।চুপচাপ গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

আদি মাথা নাড়ালো।যার অর্থ সে ঘুমাবে না।

-দেখো একদম বিরক্ত করবে না আমায়।সোজা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।নয়তো তোমার একটা হাড়ও আস্ত রাখবো না বলে দিলাম।

পিয়ার ধমকানিতে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিলো আদি।আদির এমন কান্নায় ভড়কে গেলো পিয়া।মিসেস আনোয়ারা চৌধুরি যদি দেখে আদি ড্রিংক করে মাতলামি করছে তাহলে আদির কপালে শনি আছে।পিয়া আদির মুখ চেপে ধরলো।

-চুপ একদম চুপ।ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছো কেন? দাদি শুনলে না তোমার কপালে শুধু শনি না,,, শনি, রবি,সোম,বুধ, বৃহস্পতি সব করে ছাড়বে।শুধু মঙ্গল বাদে।একদম আওয়াজ করবে না।চলো আমি তোমায় রুমে দিয়ে আসি।

পিয়া আদির হাত ধরে বাইরে আশে পাশে তাকিয়ে চলতে শুরু করলো।আদিও মুখে আঙুল দিয়ে বাচ্চাদের মত করে হাটতে লাগলো।পিয়া আদিকে ওর রুমে এনে দাড় করিয়ে বলে উঠলো,

-রুমে এসে গেছো।এবার চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ো।

বিছানার দিকে তাকিয়ে নাক কুচকালো আদি।আদিকে এমন করতে দেখে বলে উঠলো পিয়া,

-কি সমস্যা? নাক কুচকাচ্ছো কেন?

-এই বিছানা বাজে।ইট’স ডার্টি।আমি এখানে শোবো না।আমি তোমার রুমে শোবো।

-তুমি এখানেই ঘুমাবে বুঝেছো? বেশি কথা না বলে চুপ চাপ শুয়ে পড়ো যাও।

-নো নো নো।ইট’স টু মাচ ডার্টি।আমি এখানে ঘুমাবো না।ইট’স আগলি।ইয়াক….

কথাগুলো বলেই নাক কুচকালো আদি।

-আচ্ছা।আমি এখুনি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।পরিষ্কার করার পর আর আগলি দেখাবে না।তুমি একটু দাড়াও ওকে?

রোশনি বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করতে করতে বিছানাটা কোনো রকম পরিষ্কার করার চেষ্টা করলো।পরিষ্কার, পরিপাটি বিছানার আর কি পরিষ্কার করা লাগবে? তবুও আদিকে বুঝানোর জন্যে কোনো রকম পরিষ্কার করার ভান করলো।

-এই দেখো একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে।একদম ঝকঝকে তকতকে।এবার শুয়ে পড়ো।

পিয়া পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখলো আদি দাড়িয়ে আছে।পিয়া নাকমুখ কুচকে বলে উঠলো,

-আবার কি সমস্যা? এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন? কি চাই?

আদি কিছু না বলে টালমাটাল পায়ে সামনে এগিয়ে আসতেই পিয়াকে নিয়ে সোজা বিছানায় পড়লো।পিয়া চিৎকার করে উঠতেই পিয়ার ঠোটে আঙুল রাখলো আদি।পিয়ার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। কেন যে এই বাদরটার উপর দয়া দেখাতে গেলো।আদি পিয়ার দিকে তাকিয়ে কোনো রকম বলে উঠলো,

-হুসসসস,,,ডোন্ট শাউট।সবাই ঘুমোচ্ছে তো। জেগে যাবে।আমারও ভিষন ঘুম পাচ্ছে।আই উইল স্লিপ।তুমিও ঘুমিয়ে যাও।নয়তো বাঘ এসে খেয়ে নেবে।

কথা গুলো বলতে বলতেই পিয়ার বুকে মাথা রাখলো আদি।পিয়া বার কয়েক আদিকে ডেকেও কোনো সাড়া পেলো না।পিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিকে নিজের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু এই ছেলের যা বডি।এতো জিম করার কি দরকার কে জানে? এই বডি দেখিয়েই মেয়ে পটায় এই বাদর ছেলে।পিয়া দুহাত দিয়ে আদিকে সরানোর চেষ্টা করতেই আদি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো পিয়াকে।পিয়ার ছটফটানি আরো বেড়ে গেলো।এই ছেলে তো তাকে সাপের মত পেচিয়ে নিচ্ছে একদম।অনেক চেষ্টা করেও যখন সরানো গেলো না তখন ছটফটানি বন্ধ করে শান্ত হলো পিয়া।কয়েকবার লম্বা শ্বাস নিয়ে দুহাতে জোরে ধাক্কা দিতেই নিজের উপর থেকে আদিকে সরাতে সফল হলো সে।আদিকে সরাতে পেরে হাফ ছেড়ে বাচলো পিয়া।একটু হলে জানটায় বেরিয়ে যাচ্ছিলো।মানুষ এতো ভারি কি করে হতে পারে? পিয়া আদির দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রুমের দরজা কোনো রকম টেনে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।নিচে আসতেই দেখলো ড্রয়িংরুমে রোশনি দাড়িয়ে আছে।পিয়াকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে এলো রোশনি।

-কিরে কোথায় ছিলি?কখন থেকে তোকে খুজছি।

-আর বলিস না দোস্ত।মাইনকার চিপায় পড়ছিলাম।এখন এসব ছাড়।অনেক রাত হয়ে গেছে।চল বেরিয়ে পড়ি।আরো বেশি দেরি করলে গাড়ি পাবো না।

-সেটাই বলার জন্যে তোকে খুঁজছিলাম।দাদি বলে গেলেন আমাদের আজকের রাতটা এখানেই থাকতে।এতো রাতে উনি যেতে দিতে চাচ্ছেন না।আমি না করতে পারলাম না।সত্যিই অনেক রাত হয়ে গেছে।এখন যাওয়াটা আসলেই উচিত হবে না।

এদিকে অধির বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছে না।বারবার রোশনির ছলছল করা মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। অধির বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো।ড্রয়ার থেকে ঔষুধের বক্সটা বের করে ঘুমের ট্যাবলেট খেলো।ঘুমের ট্যাবলেট ছাড়া এখন ঘুম আসবে না তার।লাইটস অফ করে বিছানায় এসে শোয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো অধির।এদিকে প্রচন্ড পানি পিপাসায় হঠাৎই জেগে গেলো রোশনি।সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিতে গেলেই দেখলো পানি নেই।মুহূর্তেই চোখ মুখ কুচকে এলো রোশনির।এদিকে পানি পিপাসায় গলাটাও শুকিয়ে এসেছে।রোশনি পাশ ফিরে দেখলো পিয়া ঘুমিয়ে আছে।রোশনি বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।ঘুম ঘুম চোখে কিচেনে এসে পানি খুজতেই দেখলো গ্লাসে পানি রাখা।রোশনি মুকচি হেসে পানির গ্লাস তুলে নিয়ে ঢকঢক খেতে শুরু করলো।পানির স্বাদটা অন্য রকম লাগলো।রোশনি গ্লাস থেকে মুখ সরিয়ে চোখ মুখ কুচকালো।যেমন বিশ্রী এর গন্ধ তেমনই বিশ্রী এর স্বাদ। কেমন বমি বমি পাচ্ছে তার।রোশনি বার কয়েক ওয়াক ওয়াক করলেও বমি হলো না।কিছুক্ষন পরেই মনে হলো একটু আগে যেটা খেলো তার স্বাদটা ভিষন ভালো।আবারো খেতে ইচ্ছে করছে।রোশনি আবারো গ্লাসে চুমুক দিলো।এবার এর স্বাদ আর গন্ধ দুটোই ভিষন ভালো লাগছে ওর কাছে।রোশনি পুরো গ্লাস শেষ করে কিচেন থেকে হেলতে দুলতে বেরিয়ে এলো।

_আমার রুম কোন দিকে? এই দিকে? নাকি ওই দিকে? উফফ বুঝতেই তো পারছি না।এতো বড় বাড়ি কেন বানাতে হবে হ্যা?ছোট্ট একটা বাড়ি বানালেই তো হয় নাকি?

রোশনি ভালো করে কথাও বলতে পারছে না।পুরো নেশা হয়ে গেছে।রোশনি টালমাটাল পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে গান গাইতে শুরু করে।

“আজ ম্যা উপার,আসমা নিচে
(আজ আমি উপরে,আকাশ আমার নিচে)
আজ ম্যা আগে,জামানা হে পিছে
(আা আমি আগে,পৃথিবী আমার পিছে)

টেল মি ও খুদা
(আমাকে তুমিই বলো খোদা)
আব ম্যা কিয়া কারু
(এখন আমি কি করবো?)
চালু সিধি কি উল্টি চালু
(সোজা চলবো নাকি উল্টো?)

আজ ম্যা উপার,আসমা নিচে
(আজ আমি উপরে,আকাশ আমার নিচে)
আজ ম্যা আগে,জামানা হে পিছে
(আজ আমি আগে,পৃথিবী আমার পিছে)

বেসুরে গাইতে গাইতেই রুমের সামনে এসে দাড়ালো রোশনি।একগাল হেসে বলে উঠলো,

-এইতো আমার রুম।আমার ভিষন ঘুম পাচ্ছে।আমি এখন গুড গার্লের মত ঘুমাবো।

রোশনি রুমের দরজা খুলে এসে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়ে।পাশেই অধির গভির ঘুমে মগ্ন।স্লিপিং ট্যাবলেট খাওয়ায় কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।এদিকে রোশনির চিন্তায় রুমের দরজাটাও লক করতে ভুলে গেছে সে।রোশনি অধিরের দিকে সরে গিয়ে অধিরের হাতের উপর মাথা রাখলো।অধিরও ঘুমের মাঝে রোশনিকে নিচের বুকে টেনে নিলো।রোশনি দুহাতে অধিরকে চেপে ধরে বুকে মাথা রাখলো।বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

_তুমি এসে গেছো? তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম আমি।তুমি আমায় ছেড়ে যাবে না তো? প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।একটা সিক্রেট শুনবে?আমি না তোমায় ভিষন ভালবাসি।আই লাভ ইউ জয়।কিন্তু আমি তোমায় এখনই বলবো না।তোমাকে আরো ঘুরাবো আমার পিছে।ঘুরবে তো না বলো আমার পিছে? আমি জানি এটা আমার স্বপ্ন।চোখ খুললেই তুমি হারিয়ে যাবে।আমি চোখ খুলবো না।তোমাকে হারিয়ে যেতে দেবো না।এভাবেই তোমার বুকে শুয়ে থাকবো জয়।

কথাগুলো বলতে বলতেই ঘুমিয়ে গেলো রোশনি।অধিরও ঘুমের মাঝে মুচকি হাসলো।রোশনিকে আরো একটু শক্ত করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।হঠাৎই ঝনঝনিয়ে বৃষ্টি নামলো।খোলা জানালার কালো পর্দাগুলো বাতাসে উড়তে শুরু করলো।রোশনি শীতে কেপে উঠতেই চাদরের মত জড়িয়ে নিলো অধির।রোশনি অধিরের উদম বুকে নাক ঘষে মুচকি হাসলো।ঘুমের মাঝেও রোশনির স্পর্শে হালকা কেপে উঠলো অধির।দুহাতে রোশনিকে আকড়ে ধরে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here