সংগোপনে’ পর্ব-১৭

0
1877

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_১৭
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————-

অনেকদিন পর রবিবারের সকালটা খুব ভালোলাগছে কুহেলির। আসলে মনটা যদি খুশিতে ভরে থাকে তাহলে আশে পাশের সব কিছুই ভালোলাগে। কালকে ওঙ্কার ভিলা থেকে যেন একরাশ খুশির সম্ভার নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছে। গীতাও কীকরে যেন বুঝে গেল কুহেলি আজ কোনও কারণে খুব খুশি। গীতা কিচেনে রান্নার জোগাড়যন্ত্র করছিল আর কুহেলি একটা চেয়ার নিয়ে একটা পাশে বসে ওর সাথে নানারকম গল্প করছিল। আজ গীতা খিচুড়ি রান্না করছে, কুহেলিই বলেছে। ঘুম থেকে উঠেই দেখে আকাশে কালো মেঘের ছড়াছড়ি, সূর্যের চিহ্নমাত্র কোথাও নেই। বৃষ্টি একেবারে অবধারিত, ওয়েদার রিপোর্টও একই ইঙ্গিত করছে। ব্যাস, আর কি! হঠাৎ খিচুড়ি খাওয়ার শখ জাগল। আসলে ব্যাপারটা হল কুহেলি ছোট থেকেই খিচুড়ি ভিষন ভালবাসে। একটু বৃষ্টি পড়ল কি পড়ল না অমনি খিচুড়ির বায়না নিয়ে হাজির হয়ে যেত শৈলজা দেবীর কাছে। আর শৈলজা দেবী প্রতিবার তার আদরের কুহুর আবদার রাখতে লেগে পড়তেন। গোবিন্দভোগ চাল আর সোনা মুগের খিচুড়ি…. আহ্, অমৃত। আর তার সঙ্গে গরম গরম বেগুনি আর লাবড়ার ঘ্যাট, মানে ভালো বাংলায় যাকে বলে পাঁচ মিশেলি তরকারি। মনে করতেই কুহেলির জিভে জল চলে এসেছিল, তাই আজ সেই একই মেনু নিয়ে হাজির হয়েছিল গীতার কাছে। গীতা খিচুড়ি আর বেগুনি টা এমনিই বানাতে পারে কিন্তু লাবড়া টা জানত না, এটা আবার কুহেলি জানে। রান্নার সময় ঠায় শৈলজা দেবীর পাশে দাড়িয়ে থাকত, সেই দেখে দেখেই শিখে নিয়েছিল। এখন সেই লাবড়ার ঘ্যাট টাই রান্না হচ্ছে, কুহেলি বলে বলে দিচ্ছে আর গীতা রান্না করছে। গীতা তরকারি টা মশলা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে জল ঢেলে ঢাকা দিয়ে দিল। এবার বসল বেগুন কাটতে, বেগুন গুলো সুন্দর লম্বা করে কাটতে কাটতে একটু হেসে বলল,

আক্কা, কি ব্যাপার বলত? আজ তোমাকে একটু বেশিই খুশি মনে হচ্ছে।

হুম, বলতে পার।

হঠাৎ এত খুশি কেন গো?

কুহেলি একটু হেসে বলল,

বলব কেন?

গীতাও পাল্টা হেসে বলল,

থাক, বলতে হবে না। তোমাকে এত খুশি দেখেই ভালোলাগছে, কারণ আমার না জানলেও চলবে। কতদিন পর তোমাকে এত হাসি খুশি দেখছি, নাহলে মাঝখানে কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলে। তেমন একটা হাসতে না, কথাও তেমন একটা বলতে না, আমার একটুও ভাললাগত না। সাহস করে কিছু বলতেও পারতাম না, কিন্তু এখন দেখ কত ভালোলাগছে, সবসময় এরকম হাসি খুশি থাকতে পার না?

কুহেলি একটু অবাক হল, গীতা যে এতটা লক্ষ্য করেছে সেটা কখনও বুঝতেই পারেনি। একটু হেসে বলল,

কি করব বল, কতরকম সমস্যা এসে উদয় হয়। সবসময় কি আর হাসি খুশি থাকা যায় বলো? তবে ছাড়ো ওসব কথা, ওরকম তো চলতেই থাকে। তুমি তাড়াতাড়ি করো, নাহলে তোমারই দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।

গীতা নিজের কাজে মন দিল, কুহেলি ওখানেই বসে রইল। টুকটাক কথা চলতে লাগল দুজনের মধ্যে, একসময় গীতার রান্না শেষ হল। খিচুড়ি তরকারি তৈরি, বেগুনির জন্য বেগুন কাটা কমপ্লিট, ওটা আর ভাজেনি, কুহেলিই বারন করেছে। বেগুনি টা গরম গরম না হলে খেতে ভালোলাগে না, তাই ওটা সে খাওয়ার আগে নিজেই ভেজে নেবে। গীতা চলে গেলে কুহেলি ওর নিয়ম মাফিক কাজ গুলো সেরে ল্যাপটপ টা এনে বসল। আজ বাড়িতে ভিডিও কল করার দিন, কিন্তু ল্যাপটপ টা অন করেও কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। সকাল থেকেই মনের মধ্যে যে খুশির আমেজটা ছিল সেটা যেন নিমেষে হাওয়া হয়ে গেল। আলেখের বাড়িতে সবটা আশাতীত ভাবে সম্পন্ন হয়েছে, নভতেজ শর্মা ওকে প্রথম আলাপেই নিজের মেয়ের সন্মান দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন। আর সেই কারণেই ওর মনটা খুশিতে ভরে ছিল, জীবনে প্রথমবার পিতৃস্নেহের পরশ পেয়ে একটা অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিল। ভুলেই গিয়েছিল এখনও ওর বাড়িতে সবটা জানানো বাকি, ওর প্রধান চিন্তা শৈলজা দেবীকে নিয়ে। যদি উনি রাজি না হন! কি করবে তখন! না, আর ভাবতে পারল না কুহেলি। হঠাৎ করেই ল্যাপটপের স্ক্রীনের নীলচে আলোটা বড্ড অসহ্য লাগছে, দুম করে সেটা বন্ধ করে দিল। উঠে গিয়ে ব্যালকনিতে দাড়াল, বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখনও তেমন মুষল ধারায় নামেনি, সকালে এই বৃষ্টির অবধারিত আগমনের আনন্দেই কত খুশি হয়েছিল। এখন সেই বৃষ্টির ফোঁটা গুলোকে স্পর্শ করেও খুশি হতে পারছে না। আজ আলেখের সঙ্গে ওর বাড়ি যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করার কথা, আলেখ নিজেই ফোন করবে বলেছে। কিন্তু সে তো পরের কথা এখন কি করবে! বাড়িতে চৈতালী দেবী নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন, কিন্তু ফোন করে কি বলবে? এত চিন্তা করার মত কিন্তু কিছুই নেই, বাড়িতে কেউ কিছুই জানে না। কুহেলি কিন্তু অনায়াসে অন্যদিনের মতই স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতেই পারে, তবে কুহেলির পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। ওদের দেখলেই এই কথাগুলোই মাথায় ঘুরবে, আর চৈতালী দেবী হোক অথবা শৈলজা দেবী হোক, ওদের একমুহুর্তও লাগবে না এটা বুঝতে যে কুহেলির মনে অন্য কিছু একটা চলছে। নাহ, তখন আবার আরেক সমস্যার সৃষ্টি হবে, তখন হয়তো ভিডিও কলেই সব বলতে বাধ্য হবে। কিন্তু এই বিষয় টা নিয়ে ও ফোনে কিম্বা ভিডিও কলে কথা বলতে চায় না, সরাসরি মুখোমুখি বসে সবটা ওদের জানানোটা ওর মতে সবথেকে ভালো বিকল্প। কুহেলি ঠিক করল আজ আর ভিডিও কল করবে না, যেমন ভাবা তেমন কাজ। ঘরে ফিরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে চৈতালী দেবীর নম্বরটা ডায়াল করল, দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে চৈতালী দেবীর আওয়াজ শোনা গেল।

আমি ল্যাপটপ অন করে রেখেছি, তুই কল কর।

কুহেলি একটু থেমে থেমে বলল,

মা… শোনো না… বলছি… আজ আর… ভিডিও কল করতে পারব না গো…

কেন?

আসলে.. ল্যাপটপ টা একটু ডিস্টার্ব করছে.. মনে হচ্ছে কোনও প্রবলেম হয়েছে।

ও.. সার্ভিস সেন্টারে দিয়ে দিস তাহলে।

হুম।

তবে ল্যাপটপে প্রবলেম হয়েছে ঠিক আছে, আজকে মোবাইল থেকেই কল করে নে।

হ্যা.. সে তো.. করতেই পারতাম। কিন্তু ফোনে না চার্জ নেই… কালকে রাতে চার্জ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম.. তোমাকে কল করতে গিয়েই দেখলাম।

কি যে করিস তুই, আচ্ছা ঠিক আছে ফোনটা এখন চার্জে বসা। তবে এখন তো অলরেডি সাড়ে বারোটা বাজে, তোর ফোন চার্জ হতে হতে তো মা ঘুমিয়ে পড়বে। তুই এক কাজ করিস সন্ধ্যেবেলায় কল করিস, আজ তো ছুটি।

কুহেলি ব্যস্ত হয়ে বলল,

না মা.. সন্ধ্যেবেলায় হবে না গো। আসলে আমার ফ্রেন্ড আছে না ঈশা…

কে ঈশা?

আরে তোমাকে বলেছিলাম তো, ঈশা আমার কলেজ ফ্রেন্ড, এম বি এ পড়তে এসে আলাপ, এখানকারই মেয়ে।

ও হ্যা হ্যা, বলেছিলি বটে, ভুলে গিয়েছিলাম। তা হঠাৎ ঈশার কথা উঠছে কেন?

আজ সন্ধ্যেবেলায় ঈশার বাড়িতে একটা গেট টুগেদার আছে, অনেকদিন আমরা বন্ধুরা এক জায়গায় হইনি তো তাই, একেবারে ডিনার সেরে ফিরব।

ও, ঠিক আছে তাহলে।

চৈতালী দেবীর গলায় হতাশার সুর। কুহেলির খুব খারাপ লাগছে, কিন্তু ওর এই মুহূর্তে এছাড়া আর উপায় নেই। চৈতালী দেবী বললেন,

আচ্ছা কুহু, আজ তো আর ভিডিও কল করা যাচ্ছে না তুই বরং তাড়াতাড়ি একটু মায়ের সাথে কথা বলে নে।

চৈতালী দেবী ফোনটা শৈলজা দেবীকে দিলেন, কুহেলি কিছুক্ষণ ওনার সাথে কথা বলার পর ফোনটা রেখে দিল। কুহেলির একটুও ভালোলাগছে না, ও জানে শৈলজা দেবী সারা সপ্তাহ এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। মিথ্যে কথা বলা কুহেলি পছন্দ করে না, অথচ আজকাল প্রায়ই বারবার ওকে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ওর মনে সেই সংশয় টা আবার উকি দিল, এইভাবে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে নিজের আপনজনদের কাছ থেকে সত্যিটা গোপন করে আদৌ ঠিক করছে তো? আর ভাবতে ভালোলাগল না, উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। অভ্যাসমত সকালেই স্নান সেরে নিয়েছে কিন্তু এখন আবার স্নান করল, হয়তো মনটাকে একটু শান্ত করতে চায়। স্নান সেরে এসে সটান শুয়ে পড়ল, এত শখ করে গীতাকে দিয়ে ওর প্রিয় খিচুড়ি রান্না করাল, কিন্তু এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না। চুপচাপ বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে থাকল, শেষে একসময় উঠে কিচেনে এল, আজকাল ইচ্ছে থাক আর না থাক খাওয়ায় অনিয়ম করে না। বেগুনির জন্য কেটে রাখা বেগুন গুলো ফ্রিজেই পড়ে রইল, এখন আর ভাজতে মন চাইল না। একটা প্লেটে একটু খিচুড়ি আর তরকারি তুলে নিয়ে টেবিলে এসে বসল। গীতার রান্নার হাত দারুন, যে কোনো রান্না খুব ভালো করে, আজকেও রান্নাগুলো দারুন হয়েছে। কিন্তু কুহেলির ভালোলাগছে না, আসলে মনটাই যদি ভালো না থাকে তাহলে রাজভোগ্য আহারও বিস্বাদ মনে হয়। খাওয়া শেষ করে আবার গিয়ে শুয়ে পড়ল, ঘুমানোর চেষ্টা করল। যতটুকু সময় ঘুমিয়ে থাকবে অন্তত সেটুকু সময় তো এই চিন্তা গুলোর হাত থেকে রেহাই পাবে। কিন্তু ঘুম এল না, এপাশ ওপাশ করেই গোটা দুপুরটা পেরিয়ে গেল। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েই চলেছে, সেই সকাল থেকেই, এক সেকেন্ডের জন্যও বোধহয় বিরাম নেয়নি। কুহেলি উঠে পড়ল, অযথা কতক্ষণই বা শুয়ে থাকা যায়, উঠে ল্যাপটপ টা নিয়ে আপকামিং প্রজেক্টের ডিটেলস নিয়ে বসে গেল। এই একটা মাত্র বিষয় যার প্রতি কোনও পরিস্থিতিতেই ওর এতটুকু অনীহা আসে না, বরং কাজের মধ্যে থাকলে বাকি সমস্ত চিন্তা যেন সহস্র যোজন দূরে চলে যায়। দেখতে দেখতে কুহেলি কাজের মধ্যে ডুবে গেল, সময় এগিয়ে চলল নিজের গতিতে। কুহেলি একমনে কাজ করছিল, হঠাৎ ফোনের রিংটোনটা ব্যাঘাত সৃষ্টি করল। পাশে রাখা ফোনটার দিকে তাকাতেই স্ক্রীনের ওপর ফুটে ওঠা আলেখের নামটা নজরে এল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপর প্রান্ত থেকে আলেখের কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

গুড ইভনিং মিস বাসু।

গুড ইভনিং স্যার।

ডিস্টার্ব করলাম না তো?

না না বলুন।

আমি আরও আগেই ফোন করতাম কিন্তু হঠাৎ একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পড়ে গেল তাই আর সময় পাইনি, সরি।

এর জন্য সরি কেন বলছেন? এটা তো হতেই পারে।

হুম, যাক সে কথা। মিস বাসু আপনার বাড়ি যাওয়ার বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। যদি আপনার প্রবলেম না হয় তাহলে সন্ধ্যা সাতটার সময় একটু সময় দিতে পারবেন?

হ্যা, কোনও অসুবিধা নেই।

তাহলে কোথায় মিট করবেন?

কুহেলির আজ একদমই বাড়ি থেকে বেরোতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু সেটা তো আর আলেখকে বলা যায় না। তাই বলল,

আপনি যেখানে বলবেন।

আলেখ অনুভব করল কুহেলির প্রত্যেকটা কথায় যেন একটা বিষন্নতার সুর জড়িয়ে আছে। আলেখ বুঝল কোনও কারণে কুহেলির মনটা ভালো নেই, হঠাৎ কি ভেবে আলেখ বলল,

যদি আপনার অসুবিধা না থাকে তাহলে আমি আপনার ফ্ল্যাটে আসতে পারি।

এরকম একটা প্রস্তাব কুহেলি আশা করেনি, তাই একটু থতমত খেয়ে বলল,

হ্যা!!…

আপনার যদি প্রবলেম থাকে দেন ইটস ফাইন, আমরা অন্য কোথাও মিট করতে পারি।

কুহেলি ব্যস্ত হয়ে বলল,

না না, কোনও প্রবলেম নেই আপনি আসতে পারেন।

আর ইউ শিওর?

ইয়েস, ভেরি মাচ শিওর।

ওকে, তাহলে আমি সাতটা নাগাদ আসছি, বাকি কথা তখনই হবে।

ওকে।

ফোনটা রেখে কুহেলি ভাবল আলেখ কথা বলার জন্য হঠাৎ ওর ফ্ল্যাট টাকে কেন বেছে নিল! কিন্তু খুব বেশি ভাবল না, ভালোই হয়েছে, এমনিতেই মনটা ভালো নেই, একদম বেরোনোর ইচ্ছে ছিল না। ল্যাপটপ টা বন্ধ করে ওটা জায়গা মত রেখে পোশাক টা পাল্টে নিল। আলেখের সামনে তো আর বাড়ির পোশাকে যাওয়া যায় না। একটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট স্ট্রাইপড পালাজো আর তার সঙ্গে একটা লাইট গ্রিন কালারের লং কুর্তি পরল। প্রসাধনের ধারেও গেল না, শুধু চুলে একটু ব্রাশ চালিয়ে একটা ক্লাচার লাগিয়ে ছেড়ে দিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পৌনে সাতটা, লিভিং রুমে এসে সোফাটা একটু ঠিকঠাক করে রাখল। ঠিক সাতটার সময় কলিংবেল বাজল, কুহেলির মত আলেখও ভিষন পাংচুয়াল। দরজাটা খুলে দিতেই আলেখের হাসি মুখটা দেখতে পেল, হাতে একগোছা গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কুহেলি আলেখকে ভিতরে এনে বসাল, আলেখ ফুলের তোড়া টা ওর হাতে দিয়ে বলল,

প্রথম বার আপনার ফ্ল্যাটে এসেছি তাই খালি হাতে আসতে কেমন একটু লাগছিল। তবে কি আনা যায় সেটা বুঝতে পারছিলাম না, আসলে আপনার পছন্দ অপছন্দ গুলো তো ঠিক জানা নেই। শেষে ভাবলাম ফুলটাই বেস্ট অপশন, ফুল সবাই ভালোবাসে। আই হোপ ইউ লাইক ইট।

কুহেলি হলদে রঙের গোলাপ গুলোয় একবার হাত বুলাল, অসম্ভব মিষ্টি একটা ঘ্রাণ গোটা ঘরময় ছড়িয়ে পড়েছে। এত সুন্দর একগুচ্ছ গোলাপ কেউ উপহার পেলে খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কুহেলি খুশি হতে পারল না। একটা মেকি হাসি ফোটানোর চেষ্টা করল কিন্তু ব্যর্থ হল, কারণটা হয়তো খুব সহজেই অনুমেয়। কুহেলি ফুল ভিষন ভালোবাসে কিন্তু গাছে, এই তরতাজা ফুলগুলোকে নিষ্ঠুর ভাবে ছিড়ে নিজেদের ড্রয়িং রুমের শোভা বাড়ানো কুহেলির একেবারেই পছন্দ নয়। কুহেলি যে খুশি হয়নি সেটা আলেখ বুঝতে পারল, আর সঙ্গে সঙ্গে ওর মুখের হাসিটাও মিলিয়ে গেল।

আই গেস আপনি ফুল ভালোবাসেন না। সরি, আসলে জানতাম না তো, তাই.. আপনি কি অ্যালার্জিক? মানে ফুলে কি আপনার অ্যালার্জি আছে?

না, আমার ফুলে অ্যালার্জি নেই বরং আমি ফুল খুব ভালোবাসি।

আলেখ একটু অবাক হয়ে বলল,

তাহলে?

কুহেলি ফুলগুলো সেন্টার টেবিলের ওপর নামিয়ে রেখে বলল,

আসলে আমি ফুল ভালোবাসি কিন্তু শুধু গাছে, অকারণে ফুল ছেড়া আমার পছন্দ নয়।

আলেখ কিছুক্ষণ কুহেলির দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর একটু হেসে বলল,

আপনি সত্যিই সবার থেকে আলাদা। ঠিক আছে, জানা থাকল, আর কোনোদিন ভুলেও আপনার জন্য ফুল আনব না। তবে আজকে তো এনে ফেলেছি, এগুলো আশা করি ফিরিয়ে দেবেন না!

আলেখের কথায় কুহেলি হেসে ফেলল।

কেউ উপহার দিলে যে সেটা ফিরিয়ে দিতে নেই, সেটা আমি জানি।

তারপর ফুলগুলো যত্ন করে তুলে নিয়ে সামনের ফুলদানিতে সাজিয়ে রেখে বলল,

আপনি একটু বসুন, আমি কফি করে আনছি।

আলেখ বাধা দিল না, কুহেলি কিছুক্ষণ পরেই দু কাপ কফি নিয়ে এল। আলেখের হাতে একটা কাপ দিয়ে সোফার একটা পাশে বসল। আলেখ গরম ধোয়া ওঠা কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলল,

তাহলে, কবে বাড়ি যাবেন ঠিক করলেন?

কুহেলি একটা চুমুক দিয়ে আলেখের দিকে তাকাল, ওর মনটা আবারও একটা খারাপলাগায় ছেয়ে গেল। আলেখ ফোনে কথা বলার সময়ই বুঝতে পেরেছিল কোনও কারণে কুহেলির মন ভালো নেই, সেই কারণেই অন্য কোনও জায়গার পরিবর্তে আজ নিজে কুহেলির ফ্ল্যাটে এসেছে সে। এখন কারনটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছে। জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে শেষে জিজ্ঞেস করেই ফেলল।

আপনি কি আপনার বাড়ির লোকের কথা ভেবে টেনশন করছেন? মানে এটা শোনার পর ওনাদের রিয়্যাকশন কেমন হবে সেটা নিয়ে চিন্তা করছেন?

কুহেলি দুদিকে মাথা নেড়ে বলল,

না, আমি ওটা নিয়ে ভাবছি না। আসলে আমি যে খুব বেশি চিন্তিত তাও নয়, আমার… আমার মনে অন্য একটা প্রশ্ন ঘুরছে।

যদি আপনার প্রবলেম না থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন, হয়তো কোনও হেল্প করতে পারি।

কুহেলি একবার আলেখের দিকে তাকিয়ে একটু থেমে নিজের মনে চলতে থাকা দ্বন্দ্বের কথাটা খুলে বলল। ওর বারবার মনে হচ্ছে এভাবে নিজের প্রিয় মানুষগুলোকে এভাবে মিথ্যে কথা বলাটা হয়তো ঠিক হচ্ছে না। আলেখ সবটা শুনল, কুহেলি সবটা বলে যখন থামল তখন আলেখ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,

আপনার কথাটা যে একেবারে ভুল সেটা আমি বলব না। নিজের সবথেকে প্রিয় মানুষগুলোকে মিথ্যে কথা বলাটা সত্যিই হয়তো উচিৎ নয়। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো, আমরা যেটা করছি, সেটা কি আমরা শুধুই নিজেদের স্বার্থে করছি? আমাদের সিদ্ধান্তের পিছনে আসল কারনটা কিন্তু সেই মানুষগুলোই। তাদের খুশির জন্যই আমরা এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, আর আপনি মিথ্যের কথা বলছেন। এখানে আমি একটা কথা বলতে চাই মিস বাসু, আমাদের বিয়েটা কিছুটা শর্ত সাপেক্ষ হলেও এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। এটা কোনরকম চুক্তি নয়, কোনও ডিল নয় যে সময় পেরিয়ে গেলে সম্পর্কটাও শেষ হয়ে যাবে। আমরা দুজনেই শুধু বর্তমান পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া করে নিয়েছি। তাহলে এবার আপনিই বলুন, আমরা কি কোনও অন্যায় করছি? হ্যা, এখন হয়তো কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যের আশ্রয় নিতে হচ্ছে কিন্তু সেটাও কিন্তু ওই মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটানোর জন্যই, ওদের খুশির জন্যই কিন্তু সবটা।

কুহেলি চুপচাপ আলেখের কথা গুলো শুনছিল। সত্যিই তো, বিয়েটা তো আর মিথ্যে নয়, শুধু ওদের পরষ্পরের আভ্যন্তরীণ সম্পর্কটা তথাকথিত স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মত হবে না। সত্যিই হয়তো কুহেলি একটু বেশিই ভেবে ফেলছে। কুহেলি একটু সময় চুপ করে থেকে বলল,

আপনি ঠিকই বলেছেন, আমিই একটু বেশি ভাবছিলাম। এই সম্পর্ক টা হলে আমার সবথেকে প্রিয় মানুষ দুটো খুব খুশি হবে, ওদের মুখের হাসি ছাড়া আমি আর কিছু চাই না। ওদের খুশি আমার কাছে সবচেয়ে আগে।

কুহেলির মনটা একটু হালকা হয়েছে দেখে আলেখের বেশ ভালোলাগল। ঠোঁটে আবার সেই হাসিটা এনে বলল,

তাহলে, এবার বলুন কবে বাড়ি যাচ্ছেন। ড্যাড আজকেও জিজ্ঞেস করছিল, আপনি কবে আপনার বাড়িতে কথা বলবেন।

নভতেজ শর্মার কথা শুনে কুহেলির মনটা ভালো হয়ে গেল, একদিনেই মানুষটাকে বড্ড আপন মনে হয়েছে। আলেখ আবার বলল,

আসলে ড্যাড যে এতটা তাড়াহুড়ো করবে আমিও বুঝতে পারিনি। হি রিয়েলি লাইকস ইউ। আমার এখানে কিছু করার নেই, আমি কিছু বললেও ড্যাড শুনবে না। তাই আমার মনে হয় শুধু শুধু দেরী করে লাভ নেই, আপনি কালকেই কোলকাতা চলে যান।

কালকেই!

হ্যা, কালকেই। আজ হোক কাল হোক কথা তো বলতেই হবে, সো যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভাল। নাহলে আমার ড্যাডের কথা কিছুই বলা যায় না, আপনি দেরী করছেন দেখে হয়তো একদিন নিজেই চলে যাবে কথা বলতে।

হুম, তাহলে কালকে সকালের ফ্লাইটেই আমি কোলকাতা চলে যাব। কিন্তু অফিসে বেশ কিছু কাজ রয়েছে, সেগুলো….

কুহেলিকে কথা শেষ করতে না দিয়েই আলেখ বলল,

ওটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, অফিস আমি সামলে নেব। আপনি আগে কাল কলকাতা যান, দেখুন কি হয়। রাইট নাও দিস ম্যাটার ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান ওয়ার্ক।

কুহেলি সম্মতি সূচক মাথা নাড়ল। আলেখ রিস্ট ওয়াচে টাইম দেখে উঠে দাড়াল, ওকে উঠতে দেখে কুহেলিও উঠে দাড়াল।

ইটস ডান দেন, কোনরকম প্রবলেম হলে আমাকে কল করবেন। আর হ্যা, আপনার যদি মনে হয় একদিনের বেশি সময় লাগবে তাহলে তাই করবেন। অফিসের চিন্তা করবেন না, আপনার যতটা সময় প্রয়োজন ততটাই নেবেন।

একদিনের বেশি সময় হয়তো লাগবে না, দেখি।

টেক ইওর টাইম। ওকে ইটস অলরেডি এইট থার্টি, আমি এবার আসি।

বলে আলেখ দরজার দিকে পা বাড়াল, কুহেলির হঠাৎ কি মনে হতে পিছন থেকে আলেখকে ডেকে উঠল,

স্যার।

আলেখ থেমে পিছন ঘুরে বলল,

কিছু বলবেন?

কুহেলি একটু ইতস্তত করে বলল,

বলছিলাম, ডিনারের টাইম তো প্রায় হয়েই গেছে। যদি আপনার খুব অসুবিধা না হয় তাহলে ডিনার টা এখানে করলে আমার ভাললাগত।

আলেখ একটু হেসে বলল,

মিস বাসু, আগের বার বেঙ্গলি কুইজিনের যে দুর্দান্ত স্বাদ আপনি আমায় পাইয়ে দিয়েছেন তাতে এই অফারটা রিফিউজ করাটা খুবই কঠিন। কিন্তু আমি শুধু শুধু আপনাকে কষ্ট দিতে চাই না, মানে আপনি তো আর জানতেন না আমি আসব। তাই এখন আবার আপনাকে কষ্ট করে আমার জন্য ডিনার রেডি করতে হবে এটা আমার ভালোলাগবে না।

কুহেলি হেসে বলল,

সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, যা খাবার আছে তাতে দুজনের অনায়াসে হয়ে যাবে।

রিয়েলি!

হুম, তবে আজকের মেনুতে কিন্তু বেশি কিছু নেই। ওনলি খিচুড়ি আর একটা পিওর বেঙ্গলি তরকারি।

খিচুড়ি! এটা আমি আগেও খেয়েছি দু একবার, বেশ ভালই লেগেছিল। বাট এটা বেঙ্গলি ডিশ?

উম, খিচুড়ি টা অনেকেই খায়, তবে সবার রান্নার পদ্ধতি কিছুটা আলাদা হয়।

ওহ, ওকে তাহলে আপনার অফারটা অ্যাকসেপ্ট করলাম।

থ্যাঙ্ক ইউ। তবে একটু ওয়েট করতে হবে, একটা আইটেম একদম রেডি করা আছে শুধু ফ্রাই করতে হবে।

ওকে, নো প্রবলেম। টেস্টি খাবারের জন্য ওয়েট করতে আমার কোনও আপত্তি নেই।

কুহেলি হেসে বলল,

আপনি একটু বসুন, আপনি ঝটপট ডিনার রেডি করছি।

বলে কুহেলি কিচেনে চলে গেল আর আলেখ সোফায় বসে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে পাতা উল্টাতে লাগল। কিচেনে এসে কুহেলি ফ্রিজ থেকে কেটে রাখা বেগুন গুলো বের করল, একটা পাত্রে বেসন নিয়ে পেষ্ট বানাতে লেগে গেল। আলেখের সঙ্গে কথা বলার পর থেকে মনটা আবার বেশ ভালোলাগছে। বেসনের পেষ্ট টা তৈরি করে কড়াইতে তেল গরম করতে বসিয়ে খিচুড়ি আর তরকারি টা ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে নিল। কিচেনের জানালাটা দিয়ে বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া আসছে, বাইরে তাকিয়ে দেখল আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ মোটামুটি সারাটা দিনই বৃষ্টি হয়েছে, মাঝখানে একটু থেমেছিল এখন আবার শুরু হয়েছে। বৃষ্টি দেখে মনের মধ্যে আবার সেই খিচুড়ি প্রেম টা জেগে উঠল, ওই যে, মন ভালো থাকলে সব ভালোলাগে। চটপট বেগুনি গুলো ভেজে সব খাবার গুলো একে একে ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে আলেখকে ডেকে এনে বসাল। একটা প্লেটে খিচুড়ি, তরকারি আর তার পাশে একটা বেগুনি দিয়ে সাজিয়ে আলেখের সামনে রাখল। আলেখ প্রথমেই একটা লম্বা ঘ্রাণ নিয়ে বলল,

ইটস স্মেলস রিয়েলি নাইস।

কুহেলি নিজের জন্যও খাবার বেড়ে নিয়ে বসে পড়ল। আলেখকে একটা চামচ দিয়েছিল কুহেলি কিন্তু নিজে নেয়নি। চামচ দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে মজা হয় না, আলেখ কিন্তু কুহেলিকে হাত দিয়ে খেতে দেখে নিজের চামচ টা সরিয়ে রেখে হাত দিয়েই খাওয়া শুরু করল। কুহেলি সেটা দেখে ব্যস্ত হয়ে বলল,

আপনি হাত দিয়ে খাচ্ছেন কেন? অসুবিধা হবে তো, আপনি স্পুন দিয়েই খান।

রিল্যাক্স মিস বাসু, এত ব্যস্ত হওয়ার কিছু হয়নি। আর আমার হাত দিয়ে খেতে কোনও অসুবিধা হবে না, আপনি বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন আমি কিন্তু পিওর পাঞ্জাবি পরিবারের ছেলে। আমাদের প্রধান খাদ্যই হল পরাঠা, ওটা নিশ্চয়ই স্পুন দিয়ে খাওয়া যায় না।

কুহেলি আর কিছু বলল না, একটু হেসে আবার খাওয়া শুরু করল। বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা ওয়েদারে গরম গরম খিচুড়ি আর লাবড়ার তরকারি মুখে চালান দিতে দিতে মনে একটা পরম তৃপ্তি অনুভব করল। তার সঙ্গে গরম গরম বেগুনি, একেবারে ষোলকলা পূর্ণ। আলেখ খিচুড়ি আগে খেলেও এই তরকারি আর বেগুনি তার সম্পূর্ণ অচেনা। কিন্তু প্রথমবার মুখে দিয়েই ভিষন ভালোলাগল, খেতে খেতে কুহেলির দিকে তাকিয়ে দেখছিল। কুহেলির মুখে একটা দারুন তৃপ্তি মেশানো খুশির আভা ছড়িয়ে পড়েছে, আলেখ খেতে খেতেই বলল,

এটা বুঝি আপনার ফেভারিট ডিশ?

কুহেলিও খাওয়া বন্ধ না করেই উত্তর দিল,

হ্যা, সবথেকে প্রিয় ডিশ। বিশেষ করে এই আজকের মত বৃষ্টির ওয়েদারে এর থেকে ভালো আর কিছু হতেই পারে না।

হুম।

কিন্তু আপনি কীকরে বুঝলেন?

আলেখ একটু হেসে বেগুনিতে একটা কামড় বসিয়ে বলল,

জাস্ট গেস করলাম।

ও, তবে আপনার মনে হয় একটু কষ্ট হয়ে গেল তাই না?

নট অ্যাট অল, আই লাভ দিস। ইনফ্যাক্ট এটা লাস্ট টাইমের থেকেও বেশি ভালোলাগছে।

কুহেলি হাসল, হঠাৎ ওর কিছু একটা মনে পড়ায় বলল,

আপনার হিসেবে কিন্তু একটু ভুল আছে।

আলেখ হঠাৎ এমন একটা কথায় অবাক হয়ে বলল,

মানে?

মানে, আপনি তখন বললেন না, আজ প্রথমবার আমার বাড়িতে এলেন। ওটা কিন্তু ভুল বলেছেন, এর আগেও একবার এসেছিলেন কিন্তু।

আলেখ হেসে বলল,

হুম, টেকনিক্যালি দেখতে গেলে আপনি ঠিকই বলেছেন, আমি আগে একবার আপনার ফ্ল্যাটে এসেছিলাম কিন্তু যদি একটু ভেবে দেখা যায় তাহলে প্রপারলি আজকেই প্রথম কিন্তু। সেদিন তো আমি জোর করে এসেছিলাম বলা চলে, তাই ওটা কাউন্ট করার মত নয়।

এভাবেই টুকটাক কথা চালাচালির মধ্যে দিয়েই দুজনের ডিনার কমপ্লিট হয়ে গেল। খাওয়া শেষে আলেখ এবার ফেরার জন্য এগোল, কুহেলি আলেখকে ওর গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিল। আলেখ গাড়িতে ওঠার আগে কুহেলিকে বলল,

থ্যাঙ্কস ফর দ্য ডিনার, আমার খুব ভালোলেগেছে। বেঙ্গলি কুইজিনের প্রতি লোভ টা আরও বেড়ে গেল কিন্তু। যাই হোক, আপনি কালকের ফ্লাইটে কলকাতা চলে যান, বাড়িতে কথা বলুন। আবারও বলছি কোনরকম প্রবলেম হলেই আমাকে নির্দ্বিধায় কল করবেন কিন্তু। আর কি হয় সেটা আমাকে একটু জানাবেন, আসলে বুঝতেই পারছেন…..

আপনি চিন্তা করবেন না, আমি কালকেই বাড়িতে কথা বলব, আর যাই হোক আপনাকে জানাব।

ফাইন, ওকে তাহলে আমি আসছি।

আলেখ গাড়িতে উঠে আবারও কুহেলির দিকে তাকিয়ে বলল,

গুড নাইট মিস বাসু, অ্যান্ড এগেইন, থ্যাঙ্কস ফর দ্য ডিলিসিয়াস ডিনার।

কুহেলি হেসে গুডনাইট জানালে আলেখ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। কুহেলিও ফ্ল্যাটে এসে বাকি কাজ গুছিয়ে বেডরুমে এসে আগে একটা ফ্লাইটের টিকিট বুক করল। প্রথম ফ্লাইট টাই বুক করল, আগেরবারের মতই সকাল সকাল পৌঁছে যাবে। এবারও আগে থেকে ওর যাওয়ার খবরটা বাড়িতে জানাল না, সবকথা একেবারে কোলকাতা পৌঁছেই হবে। ভোরবেলা উঠতে হবে তাই দেরি না করে শুয়ে পড়ল, ঘুম আসতেও খুব একটা দেরী হল না। অ্যালার্ম সেট করেই ঘুমিয়েছিল, ঠিক সময়মত উঠে তৈরি হয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল, লাগেজ নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই, শুধু একটা হ্যান্ডব্যাগ। গীতাকে খবর দেওয়ার উপায় নেই, তাই একটা ছোট্ট নোট লিখে দরজায় সেটে দিয়ে এসেছে। ফ্লাইট তার নির্ধারিত সময়েই টেক অফ করল, আড়াই ঘণ্টা পর যখন দমদম এয়ারপোর্টে ফ্লাইটটা ল্যান্ড করল তখন মাত্র আটটা বাজে। ক্যাবে করে বাড়ি পৌঁছাতে লাগল ঠিক বাইশ মিনিট, মেইন গেট খুলে দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেলের কাছে হাতটা নিয়ে গিয়েও থেমে গেল। এই প্রথম তার নিজের বাড়িতে এসেও কেমন অন্যরকম একটা অনুভুতি হচ্ছে। হৃদযন্ত্র টা যেন তার চলার গতি হঠাৎ করেই বাড়িয়ে নিয়েছে, চোখদুটো বন্ধ করে নিজেকে একটু শান্ত করল কুহেলি। নার্ভাস হলে চলবে না, যেটা ভেবেছে সেটা করতেই হবে, দরজার ওপারের মানুষ দুটো তার আপনজন, তার সবথেকে কাছের মানুষ, ওরা ঠিক বুঝবে। মুখে একটা মিষ্টি হাসি এনে কলিংবেলের সুইচটা চাপল কুহেলি।

ক্রমশ_____________

© স্বত্ব সংরক্ষিত

আশা করি আজকের পর্বটা আপনাদের ভালোলেগেছে। নিজেদের মতামত জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। প্রতিবারের মত এবারও অপেক্ষা করব আপনাদের কমেন্টের। আজ আর বেশি কথা বলব না, কুহেলির বাড়িতে কি হল সেটা দেখতে হবে তো, আমি জানতে পারলে তবেই না আগামী পর্বে আপনাদের জানাতে পারব। দেখা হবে আগামী পর্বে, ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

পুনঃ কুহেলির মত কিন্তু আমিও খিচুড়ি প্রেমী। বৃষ্টি পড়লেই মায়ের পিছন পিছন ঘুরতে থাকি খিচুড়ির বায়না নিয়ে। আপনাদের মধ্যে এরকম খিচুড়ি প্রেমী.. মূলত বর্ষাকালীন খিচুড়ি প্রেমী কে কে আছেন বলুন তো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here