#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৪৩
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস
আগের পর্বের পর————
নিশীথ দাড়িয়ে আছে নিজের রুমের খোলা জানালাটার পাশে, ঠান্ডা হাওয়ার পরশ যেন নিজের শীতলতা ওর মনেও পৌঁছে দিতে চাইছে। রাত বেশ গভীর, প্রায় দেড়টা বাজতে চলেছে কিন্তু নিশীথের চোখে ঘুম নেই। এমনটা অবশ্য আজ প্রথম হচ্ছে না, মাঝে মধ্যেই হয় আর বিশেষ করে তখন হয় যখন ওর মনটা কোনও কারণে অশান্ত থাকে। নিশীথ নিজের বাইরের আবরণের আড়ালে ওর প্রকৃত সত্তা টাকে খুব যত্ন করে লুকিয়ে রেখেছে। সে চায় না ওর এই রূপটা কারোর দৃষ্টিগোচর হোক, যার সামনে নিজেকে মেলে ধরতে চেয়েছিল তাকেই যখন….. নাহ, ঘুরে ফিরে আবার সেই ভাবনা গুলোই যে কেন ফাঁক পেলেই উকি দিয়ে যায় নিশীথ বোঝে না। নিশীথ নিজের ডান হাত টা উচু করে একবার ব্রেসলেট টায় হাত বুলাল, একটা অদ্ভুত রকম শান্তি অনুভব করে যেন। কুহেলির ওকে দেওয়া প্রথম উপহার হয়তো শেষও, ওটায় কুহেলির স্পর্শ জড়িয়ে আছে তাই ভুলেও এক মুহুর্তের জন্যও নিশীথ ব্রেসলেট টাকে নিজের থেকে বিচ্ছিন্ন করে না। আপনারা আবার ভুল বুঝবেন না যেন, নাহ, নিশীথের মনে কুহেলিকে পাওয়ার কোনরকম ইচ্ছে নেই কিন্তু মনের গভীরে সবার অলক্ষ্যে ভালোবেসে যেতেই বা দোষ কোথায়? নিশীথ জানে কুহেলি আলেখকে ভালোবাসে আর আলেখও নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসে কুহেলিকে তাই ওদের মাঝে অযাচিত বাধা হয়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ওর নেই। তাছাড়াও জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না, কিন্তু মাঝে মাঝে উপরে বসে থাকা ভাগ্যবিধাতার উপর খুব রাগ হয় ওর, কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত যদি কুহেলির জীবনে আলেখের জায়গায় সে থাকতে পারত? কিন্তু নাহ, সেটাও ওই ক্ষণিকের দুঃখ প্রকাশ মাত্র, নিশীথ মন থেকেই চায় কুহেলি খুব ভালো থাকুক নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে। যেদিন থেকে কুহেলিকে পাওয়ার শেষতম আশা টুকুও মিলিয়ে গিয়েছিল তারপর থেকেই এই হঠাৎ অনিদ্রার উপদ্রব শুরু হয়েছে। আজ আবার নিদ্রাদেবী ওর ওপর রুষ্ট হয়েছেন, নিশীথ একভাবে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। আজ বোধহয় পূর্ণিমা, পূর্নাবয়ব চাঁদ টা যেন একটু বেশিই উজ্জ্বল মনে হচ্ছে। মিশকালো আকাশের প্রেক্ষাপটে উজ্জ্বল চাঁদের এমন মোহময়ী রূপ দেখে হয়তো সবার মনেই অনুরাগের সঞ্চরন জাগ্রত হয়ে ওঠে। কিন্তু নিশীথের মনে হল দূর আকাশের ওই চাঁদ টাও যেন ওর মতই বড্ড একা। একটা বিদ্রুপের হাসি নিশীথের ঠোঁটের কোণায় ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল, জানালার পাশ থেকে সরে এসে আবার নিজের নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিল। নিজের ভাবা কথা গুলো মনে করে নিজেরই হাসি পেল নিশীথের, ভাবা যায়! নিশীথ আগরওয়াল কিনা এই সব চাঁদ তারা ফুল নিয়ে ভাবছে? চোখ দুটো বন্ধ করে একটু নিদ্রাদেবীর আরাধনায় মন দিল, যদি দেবী দয়া করেন! কিন্তু বৃথা চেষ্টা দেবী যেই বিরূপ সেই বিরূপই রইলেন। নিশীথ আবার উঠে বসল, ঘুম না আসলে এভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকা যায় না। আজ আর ঘুম আসবে বলে মনে হচ্ছে না, আসলে মনটা যদি অশান্ত হয়ে থাকে তাহলে আর…. আজকে অবশ্য এই অশান্ত মনের কারণ কুহেলি নয়, রাত্রি। নিশীথ অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি, রাত্রির তার প্রতি ব্যবহারের পরিবর্তন ওর নজর এড়ায়নি। কারণে অকারণে রাত্রির মুগ্ধ চোখের চাহনির বারবার ওকে ছুয়ে যাওয়া, হঠাৎ করেই কাজে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া আর নিশীথের দিকে তাকালেই রাত্রির ঠোঁট জুড়ে খেলে যাওয়া একটা আলতো হাসি। এর কোনোটাই নিশীথের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি, এর কারণটাও আন্দাজ করা তার পক্ষে খুব একটা কষ্ট সাধ্য নয়। নিজেরই খুব অবাক লাগছিল ভেবে যে হঠাৎ রাত্রির জন্য সে এতোটা চিন্তিত কেন হয়ে পড়েছিল। নিশীথ নিজেকে একটা যুক্তি সঙ্গত কারণ বোঝাতে পারলেও রাত্রির পক্ষে সেটা হয়তো সম্ভব নয়। বিশেষ করে মেয়েরা এমনিতেই একটু বেশি আবেগপ্রবণ হয়, আর রাত্রি যে অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই ইমোশনাল সেটা নিশীথ এই কয়েকদিনেই বুঝতে পেরেছে। ওরকম একটা ঘটনার সময় যে পাশে থাকে, মানসিক ভাবে যে পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রতি একটা দুর্বলতা আপনা থেকেই জন্ম নেয়। রাত্রির মনেও ঠিক একই কারণে নিশীথের প্রতি একটা দুর্বলতা জন্ম নিয়েছে যেটা নিশীথের নজর এড়িয়ে যায়নি। কিন্তু নিশীথ এই দুর্বলতা টাকে এগোতে দিতে চায় না, কারণ নিশীথ নিজেকে খুব ভালো করে জানে। ওর মনে রাত্রির প্রতি কোনরকম দুর্বলতা বা অনুভূতি কিছুই নেই, হ্যা আগের মত ওকে দেখলে বিরক্ত হয় না ঠিকই কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু নয়। নিশীথ নিজেও সেদিনের তার ব্যবহারে একটু অবাক হয়েছিল, আসলে ওরকম একটা পরিস্থিতিতে এর আগে সে নিজেও কোনদিনও পড়েনি। হয়তো সেদিন রাত্রির জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও সে একই কাজ করত, হয়তো কেন? যেই থাকুক না কেন সে একই কাজ করত। ওরকম একটা দুর্ঘটনার পর একটা মেয়ের জন্য চিন্তা হওয়াটাও খুবই স্বাভাবিক ছিল, এগুলো নিশীথ বুঝলেও রাত্রি হয়তো বোঝেনি। তাই নিশীথের প্রতি ওর মনে একটা দুর্বলতা জন্ম নিয়েছে, হয়তো কিছু অনুভূতিও। সেটা আন্দাজ করেই নিশীথ রাত্রির সাথে যতটা সম্ভব ফর্ম্যাল কথা বলার চেষ্টা করেছে। আসলে কাউকে আশার আলো দেখিয়ে হঠাৎ একদিন তাকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার থেকে শুরুতেই সেই ক্ষীণ আলোটা নিভিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাতে কষ্টটা অনেকটা কম হয়, আর তাছাড়াও রাত্রির মনে যেটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা শুধুই একটা মোহ। কৃতজ্ঞতার আবেশে সৃষ্টি হওয়া একটা দুর্বলতা মাত্র, তাকে বাড়তে না দেওয়াই ভালো। কারণ মোহ আর ভালোবাসার অনুভূতি গুলোর মধ্যে তফাৎ অনেকটা। জীবনে এরকম অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার আলাপ হয়েছে যারা তার মোহে আবিষ্ট হয়েছিল, ক্ষণিকের মোহ। রাত্রির অনুভূতি গুলোও তার ব্যতিক্রম নয়, হয়তো রাত্রি নিজেও এখনও ভালো করে বুঝে উঠতে পারেনি। তাই নিশীথ এই ব্যাপারটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চেয়েছিল, আর তাই আজ আবার ঠিক আগের মতই ব্যবহার করেছে সে। না, আগের মত রূঢ় ব্যবহার করেনি কিন্তু কোনরকম অতিরিক্ত বন্ধুত্বপূর্ন আচরণও করেনি। নিশীথের মতে এটাই ঠিক, কিন্তু এইসবটাই শুধুমাত্র নিশীথের দৃষ্টিকোণের চিত্র। নিজের মত করেই নিশীথ সবটা ভেবে নিয়েছে, হয়তো তার ভাবনা গুলো সঠিক, কিন্তু নাও তো হতে পারে। রাত্রির মনের অনুভূতিগুলোকে নিজের মত করে ভেবে নিলেই যে সেগুলোই সঠিক হবে তার তো কোনও মানে নেই, তাই না। কিন্তু নিশীথ যেটা মনে করতে চায়, যেটা বুঝতে চায় সেটাই বোঝে। এখন দেখা যাক, ভবিষ্যতের গর্ভে যে উত্তর গুলো নিহিত আছে তারা যখন যথা সময়ে আত্মপ্রকাশ করবে তখন নিশীথের ভাবনা গুলো সঠিক প্রমাণ হয় নাকি ভুল। প্রায় ভোররাতের দিকে নিশীথের ওপর নিদ্রাদেবীর বোধহয় দয়া হল, শেষমেশ নিশীথের চোখেও ঘুমের ছোয়া লাগল। আজ রবিবার, এই দিনটা আলেখের বড্ড প্রিয়, আগে ছিল না কিন্তু এই গত কয়েক মাস যাবৎ হয়েছে। আগে তো কাজ পাগল আলেখের কাছে সপ্তাহের অন্যদিন গুলোর সঙ্গে রবিবারের বিশেষ কোনো পার্থক্য ছিল না। শুধু অফিস টাই যা থাকে না, কিন্তু কাজ বাড়িতে বসেও পুরোদমেই চলত। সে কাজ এখনও চলে কারণ কুহেলি নিজেও সমান পরিমান কাজ পাগল মেয়ে। তবে কাজের পরিমাণটা আগের থেকে অনেক কম, বরং এখন রবিবারের গোটা দিন জুড়ে সুযোগ পেলেই চলতে থাকে ওদের প্রেমে পরিপূর্ণ খুনসুটি। যদিও তার সম্পূর্ণ উদ্যোক্তা আলেখ কিন্তু তাই বলে কুহেলি যে খুশি হয়না এমনটা ভাবার কিন্তু কোনও কারণ নেই। আলেখের থেকে থেকেই ওর কাজের মাঝে গিয়ে বিরক্ত করা, ছোট ছোট ছেলেমানুষী করা সবটাই কুহেলি ভীষন উপভোগ করে। আজকের দিনটাও তার ব্যতিক্রম নয়, কুহেলি ব্রেকফাস্ট সেরে দুপুরের খাবারের জোগাড় যন্ত্র করছে আর আলেখ বারবার এসে ওকে নানা ভাবে বিরক্ত করছে। কুহেলি এমনিতে খুব একটা রান্না করে না, আর করলেও বৃন্দা থাকে হেল্প করার জন্য কিন্তু আজ বৃন্দা আসেনি। কুহেলিই ছুটি দিয়েছে ওকে, কালকে বৃন্দা কে দেখেই মনে হচ্ছিল যেন অসুস্থ। প্রথমে তো কিছু বলছিলই না পরে কুহেলির জোরাজুরিতে শেষে বলেছিল শরীরটা নাকি সকাল থেকেই ভালোলাগছিল না। তাই কুহেলি কালকেও আগেই ছুটি দিয়ে দিয়েছিল আর দুটো দিন একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রয়োজন হলে ডাক্তার দেখানোর কথাও বলে দিয়েছিল। তাই আজ রান্নার ভার টা পুরোটাই কুহেলির কাধে, তাই দেখে আবার নভতেজ বাবুর আবদার হয়েছে একদম ঘরোয়া বাঙালি রান্না খাবেন। আর কুহেলিও তাই কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে কাজে, আর তার মধ্যেই আলেখও নিজের কাজ অব্যাহত রেখেছে। কাজ মানে ওই কুহেলিকে বিরক্ত করার কাজ আর কি, কুহেলিও বেশ প্রশ্রয়ের সুরেই মাঝে মধ্যেই একটু কপট রাগ দেখাচ্ছিল। যাই হোক এভাবে বেশ ভাল ভাবেই রান্নার পর্ব টা সম্পন্ন হয়ে গেল। তিনজনে যখন একসাথে খেতে বসল তখন যেন কুহেলির মনে হল ওর আর লাঞ্চ করার প্রয়োজন পড়বে না প্রসংশাতেই পেট ভরে যাবে। নভতেজ বাবু খাচ্ছেন কম আর প্রশংসা করছেন বেশি, আলেখ অতটা না হলেও খুব পিছিয়ে নেই। এমন সাদা মাটা রান্নাও যে এতটা সুস্বাদু হতে পারে এটা যেন ভাবতেই পারে না ওরা। ওদের দুজনকে এত তৃপ্তি করে খেতে দেখে কুহেলির সত্যিই অর্ধেক পেট এমনিই ভরে গেল। কিন্তু আজও যেন কুহেলির মনে হল নভতেজ বাবু যেন খুব পরিমিত আহার করলেন। জিজ্ঞেস করব করব করেও শেষ পর্যন্ত একথা সেকথায় ব্যাপারটা চাপা পড়ে গেল আর একসময় ভুলেও গেল। খাওয়া দাওয়ার পর্ব মিটলে ওরা তিনজনেই একসাথে ড্রয়িং রুমে বসল একটু গল্প গুজব করার জন্য আর কি। টুকটাক কথার মধ্যেই হঠাৎ নভতেজ বাবু বললেন,
আরে কথায় কথায় তো বলতেই ভুলে যাচ্ছিলাম। আমি কিন্তু নেক্সট উইকে আবার লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
আলেখ অবাক হয়ে বলল,
আবার?
এত অবাক হচ্ছিস কেন?
অবাক হব না! এই তো কদিন আগেই ঘুরে এলে লন্ডন থেকে।
তো? একবার গেছি বলে কি আর যাওয়া যাবে না?
আমি কি তাই বললাম নাকি?
তাই তো বলছিস।
কুহেলি এবার মাঝখানে বলে উঠল,
আরে বাবা তোমরা দুজনেই একটু থাম তো।
কুহেলির কথায় ওরা দুজনেই এবার একটু থামলেন। কুহেলি এবার নভতেজ বাবুকে বলল,
তুমি একবার কেন, ইচ্ছে হলে দশ বার যেতে পার। কিন্তু….
বাকি কথাটুকু শোনার আগেই নভতেজ বাবু আনন্দে উৎসাহিত হয়ে বলে উঠলেন,
আমি জানি তো, আমার মেয়েটাই আমাকে বুঝবে, তুই তো একটা অপদার্থ।
শেষের কথাটা অবশ্য আলেখকে উদ্দেশ্য করে বলা, কুহেলি একটু হেসে বলল,
তা ঠিক, তবে ড্যাড আলেখের কথা টাও তো ঠিক, না মানে তুমি এই তো মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘুরে এলে তাও আবার বেশ লম্বা একটা হলিডে। আবার এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছ তাই….
হুম, আসলে কি বলতো কুহেলি, আমার যে বন্ধুটির বাড়িতে গিয়েছিলাম, করণজিত। ওর ওখানে একটা ইন্ডিয়ান ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত আছে। এই আমার মত রিটায়ার্ড পারসন দের ক্লাব আর কি, আমিও গিয়েছিলাম বুঝলে, সবার সঙ্গে বেশ ভালই আলাপ হয়ে গেছে। তা ওরা অনেক দিন ধরেই প্ল্যান করছিল কোথাও একটু ঘুরতে যাওয়ার, ঘুরতে মানে বেশ লম্বা একটা ট্যুর আর কি। কিন্তু কোনও না কোনও কারণে ঠিক হয়ে উঠছিল না, এবার এতদিনে সব ঠিক হয়েছে। দু মাসের ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বেরোচ্ছি আমরা, বুঝলে? ওয়ার্ল্ড ট্যুর, উফ্ ভাবলেই বেশ একসাইটেড লাগছে। কাজের সুত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছি কিন্তু একদম পিওর হলিডে তো আর হয়ে ওঠেনি। এইবার আমি বেশ মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াব, এতদিন নানা রকম দায়িত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলাম কিন্তু এখন তোমরা দুজন আছ, আমার আর কোনও চিন্তা নেই।
নভতেজ বাবুর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি কতটা খুশি। কুহেলি হেসে বলল,
দারুন ব্যাপার তো, কিন্তু তুমি আগে বললে না কেন?
আরে সবে কালকে সবটা ফাইনাল হল। নেক্সট উইকে লন্ডন যাব তারপর ওখান থেকে বাকি জোগাড় যন্ত্র সেরে আমাদের ট্যুর স্টার্ট হতে হতে আরও দিন দশেক তো লাগবেই।
হুম, শুনে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে জানো তো।
যাবে তো, কিন্তু এখন নয়, যখন তোমাদের দুজনের ছেলে বা মেয়ে বড় হয়ে তোমাদের কাধ থেকে সব দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নেবে তখন যাবে।
কথা টা শুনে কুহেলির গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে গেল, আড়চোখে একবার আলেখের দিকে তাকিয়ে দেখল সেও একটু লজ্জা পেয়েছে কিন্তু তাও ওর দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্টু হাসি ছুড়ে দিতে ভুললো না। নভতেজ বাবু হাসতে হাসতে বললেন,
কথায় কথায় বেশ ভালো কথা উঠে এলো তো, সত্যি আমার এখন একটা ছোট্ট নাতি বা নাতনি হলেই জীবন টা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। সারাদিন বেশ তাকে নিয়েই কেটে যাবে, কি বলিস আলেখ?
আলেখ আর কি বলবে! এহেন কথার কিই বা উত্তর দেওয়া যায়! আর কুহেলি…. তার দৃষ্টি এখন পারলে পাতাল লোকে পৌঁছে যায়। সুতরাং নভতেজ বাবুই আবার বললেন,
না মানে, আই নো তোরা এখনও যথেষ্ট ইয়াং, বিয়ের এখনও এক বছরও হয়নি। লাইফটা কে এনজয় করতে চাস, সবই বুঝি, আফটার অল এই ফেজ টা আমিও তো পার করে এসেছি। বাট স্টিল, এক্ষেত্রে আমি নিজের স্বার্থ টাই একটু বেশি দেখছি বুঝলি তো। একটা জুনিয়র আলেখ বা জুনিয়র কুহেলিকে দেখার লোভ সামলানো বড্ড বেশি কঠিন।
ব্যাস, কুহেলির আর ওখানে বসে থাকার মত সাহস হল না। আসলে মনে হচ্ছিল মাথাটা লজ্জার ভারে নুয়ে পড়তে পড়তে আর জায়গা নেই। সোজা উঠে এক ছুটে নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকল, আর সেটা দেখে নভতেজ বাবু হেসেই অস্থির।
বেচারি লজ্জা পেয়ে গেছে।
তারপর আলেখের দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু ধমক দিয়ে বললেন,
তুই এখানে বসে বোকার মত হাসছিস কেন? যা ঘরে।
আলেখ কিছু না বলে চুপচাপ উঠে নিজের ঘরের দিকে এগোল। নভতেজ বাবু একবার আপন মনেই হেসে উঠলেন, নন্দিনী অর্থাৎ আলেখের মায়ের মৃত্যুর পর থেকে বাড়িটা কেমন প্রাণহীন হয়ে পড়েছিল। কুহেলির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে যেন বাড়িটা আবার তার হারানো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ওনার অসম্পূর্ণ জীবনটাও যেন এখন সম্পূর্ণ মনে হয়, শুধু এখন নাতি বা নাতনির মুখ দেখে যেতে পারলেই যেন শান্তি। আপাতত এটাই ওনার এখন একমাত্র ইচ্ছে, এটা পূরণ হলে এই জীবনে আর তার কোনো কিছু চাওয়ার থাকবে না। ধীরে ধীরে ওনার মুখ থেকে হাসিটা মিলিয়ে গেল, একটা অব্যক্ত কষ্টের ছাপ যেন ফুটে উঠল ওনার মুখে। কিসের যেন একটা অসহায়ত্ব প্রকাশ পেতে লাগল তার চোখের তারায়। কি জানি, মানুষটার মনের গভীরে নাবলা কোন যন্ত্রণার আঁধার জমে রয়েছে। এদিকে আলেখ ঘরে ঢুকে দেখল কুহেলি চুপচাপ জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে, মুখটা এখনও রক্তিম আভায় ছেয়ে আছে। আলেখ ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে কুহেলির কোমরটা জড়িয়ে ধরে কাধে চিবুক টা রেখে বলল,
কি হল? এমন চুপ করে আছ কেন? লজ্জা পেয়েছ বুঝি? তবে ড্যাডের কথাটাও কিন্তু ভেবে দেখার মত, কি বল? আমাদের এবার ফ্যামিলি প্ল্যানিং করা উচিৎ, নাকি?
ধ্যাত, তুমিও না… খালি উল্টো পাল্টা কথা।
বা রে, এটা উল্টো পাল্টা কথা হল? এই শোনো না, বলছি কি আমার না একটা কিউট কিউট মিষ্টি মিষ্টি মেয়ে লাগবে, ঠিক তোমার মত।
কুহেলি লজ্জায় লাল হতে হতে আর জায়গা নেই, ধ্যাত বলে আলেখের হাত টা ছাড়িয়ে দুম করে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আলেখও হেসে ওর পাশে এসে আধশোয়া হয়ে একটা হাত কুহেলির কাধে রেখে বলল,
আরে এত লজ্জা পেলে কি করে চলবে বলো তো? তাকাও না একটু এদিকে।
কুহেলি আলেখের দিকে ফেরার কোনরকম আগ্রহই দেখাল না। কিন্তু আলেখ কি আর এত সহজে ছাড়ার পাত্র! জোর করে কুহেলিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
তোমাকে লজ্জা পেলে না দারুন দেখায়।
কুহেলি আলতো একটু হেসে বলল,
তাই বুঝি ইচ্ছে করে আমাকে এরকম সিচুয়েশনে ফেলে দাও!
বলতে পারো, এই লাজে রাঙা মুখটা দেখার লোভ সামলানো যায় নাকি?
তুমি না ভারী ইয়ে…
ইয়ে শব্দটা কুহেলি বাংলায় বলেছে ফলে আলেখ একটু অবাক হয়ে বলল,
ইয়ে? হোয়াট ইজ ইয়ে?
কিছু না।
আচ্ছা ছাড়ো, কুহেলি একটা কথা বলতো, তুমি ঠিক কবে রিয়েলাইজ করেছিলে দ্যাট ইউ লাভ মি?
হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করছ কেন?
উম, এমনিই হঠাৎ মনে হল তাই, তুমি বলো না।
কুহেলি একটু হেসে বলল,
এখন ভাবলে হাসি পায় জানো, এইভাবে যে রিয়েলাইজ করব আমি নিজেও কোনদিনও ভাবিনি।
কেন?
আরে, তোমাকে রাত্রির সঙ্গে দেখলে আমার খুব খারাপ লাগত, তুমি তো জানোই।
হুম, ওটা দারুন এনজয় করতাম আমি।
হ্যা, তাই তো, তা তো করবেই। ইচ্ছে করে জেনে বুঝে আমাকে খালি জ্বালাতন করতে।
আরে বাবা ওটার মজাই আলাদা, তুমি বলো না।
হুম, ওই তো আমার জন্মদিনের আগের দিন যেদিন একসাথে শপিংয়ে গেলাম না, সেদিন রাতেই ফাইনালি বুঝতে পারলাম তুমি আমার ঠিক কতটা জুড়ে আছ।
আলেখ কুহেলির চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল,
তাহলে তো রিতুর একটা থ্যাঙ্কস পাওনা, ওর জন্যই তো তুমি বুঝতে পারলে, তাই না?
হুম, তা ঠিক। কিন্তু সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে তো মিস্টার আগরওয়ালেরও একটা থ্যাঙ্কস পাওনা।
কেন?
কেন মানে? তুমিও তো ওনার জন্যই শেষ পর্যন্ত নিজের মনের কথাটা স্বীকার করলে। এতটাই জেলাস ফিল করছিলে… তার ক্রেডিট তো পুরোটাই মিস্টার আগরওয়ালের।
হুম, সেটা ঠিক বলেছ। তবে মিস্টার আগরওয়ালের জন্য আমার মনের কথাটা মুখে এনেছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার মনের কথাটা বুঝতে কে সাহায্য করেছিল জানো?
কে?
দেবার্ঘ্য।
কুহেলি খুব অবাক হয়ে বলল,
দেবার্ঘ্য!!
হুম, সেদিন জুরিখে ওর সাথে দেখা না হলে তুমি ওই ভাবে ভেঙে না পড়লে আমি হয়তো বুঝতেই পারতাম না তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি। জানো কুহেলি, সেদিন যখন বুঝতে পারলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি, মনটা আনন্দে ভরে গিয়েছিল আবার একটু খারাপও লাগছিল।
কেন? খারাপ লাগছিল কেন?
কারণ তখনও আমাদের সম্পর্ক টা শুধুই শর্তের ভিত্তিতে দাড়িয়ে ছিল। যেখানে ভালোবাসার জন্য কোনও জায়গা ছিল না, আর বিশেষ করে তোমার জীবনে তো ভালোবাসার জন্য কোনও জায়গা তুমি রাখতেই চাওনি। তাই খুব খারাপ লাগছিল, জীবনে প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি গুলো উপলব্ধি করেছিলাম আর তার সঙ্গে এটাও বুঝতে পারছিলাম যে হয়তো এই অনুভূতি গুলো শুধু আমার মনের মধ্যেই অসম্পূর্ণ হয়েই থেকে যাবে। কিন্তু ভালোবাসার কাছে সব কিছুই একসময় ঠিক তুচ্ছ হয়ে যায়, যেমন আমাদের ভালোবাসার কাছে ঐসব চাইল্ডিশ শর্ত গুলো কোথায় যে হারিয়ে গেল আমরা বুঝতেই পারিনি আর বুঝতে চাইও না।
আলেখ একটু থামল, কুহেলি কিছুক্ষণ ওর চোখের গভীরে হারিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ একসময় আলেখের বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরল, আলেখও দুহাতের মাঝে বেঁধে নিল কুহেলিকে। কুহেলি আবেগী সুরে বলল,
থ্যাঙ্ক ইউ আলেখ, থ্যাঙ্ক ইউ আমার লাইফে আসার জন্য। থ্যাঙ্ক ইউ আমাকে এতোটা ভালোবাসার জন্য, থ্যাঙ্ক ইউ।
বাবা, এত থ্যাঙ্ক ইউ বলছ কেন! এরপর তো এই থ্যাঙ্কসের তলায় চাপা পড়ে যাব। আর তোমাকে না আমি বলেছিলাম আমার থ্যাংকসে অ্যালার্জি আছে।
কুহেলি সেসবে কোনও পাত্তা না দিয়ে আলেখকে আরও একটু জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ ঐভাবেই থাকার পর কুহেলি একটু মুখ তুলে বলল,
আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, তুমি ঠিক কবে থেকে আমাকে ভালোবাসো?
আলেখ একটু ভেবে বলল,
এটা বলা খুবই ডিফিকাল্ট, কারণ ঠিক কবে যে তুমি আমার মনে জায়গা করে নিয়েছ আমি সত্যি জানি না। তবে আমি বরাবরই তোমার প্রতি একটু অন্যরকম কিছু ফিল করতাম। প্রথমে আমিও বুঝিনি, এখন ভাবলে মনে হয় সেগুলো ছোট ছোট সংকেত ছিল।
তাই? যেমন?
যেমন…. তোমার মনে আছে একদিন তুমি অফিসে সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে।
হুম, সে কি আর ভোলা যায়!
হুম, সেদিন তোমাকে ওভাবে দেখে আমার যে কি অবস্থা হয়েছিল আমি বলে বোঝাতে পারব না, আমি রীতিমত টেন্সড হয়ে পড়েছিলাম। আই থিঙ্ক তোমার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই ছিল, হয়তো তখনও সেটা ভালোবাসার রূপ নেয়নি। আর হয়তো কিছুটা সেই কারণেই ড্যাড যখন বিয়ের জন্য আমাকে রীতিমত ফোর্স করতে শুরু করল আমার মনে সবার আগে তোমার নামটাই এসেছিল।
কুহেলি কিছু বলল না, চুপচাপ শুনছে। খুব ভালোলাগছে ওর আলেখের কথা গুলো শুনতে। আলেখ আবার বলল,
জানো কুহেলি, তুমি এখন বললে বলে মনে পড়ল মিস্টার আগরওয়ালের তোমার প্রতি বেশি ইন্টারেস্ট দেখানো টাও না আমার কোনোদিনই তেমন পছন্দ ছিল না। উনি আসলেই তোমাকে বলতেন গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে, আমার ভাললাগত না। তখন কারনটা আমিও জানতাম না আর তেমন একটা গুরুত্বও দিইনি। আসলে আমার মনেও যে ভালোবাসার ছোয়া লাগতে পারে সেই ধারণা টাই তো আমার ছিল না। বাট তাও আমার ভাললাগত না, আবার কিছু বলতেও পারতাম না।
কুহেলি একটু দুষ্টু হাসি হেসে বলল,
তার মানে সেই তবে থেকেই তুমি মিস্টার আগরওয়ালের প্রতি জেলাস।
মজা হচ্ছে তাই না?
তা একটু হচ্ছে বটে।
তুমিও তো রিতুর প্রতি জেলাস ফিল করতে।
করতাম, এখন আর করিনা। এখন রাত্রি তোমার থেকেও আমার বেশি ভালো বন্ধু।
হ্যা, হ্যা, সে তো দেখতেই পাই। আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটাকেও দিব্যি নিজের দিকে নিয়ে নিয়েছ।
তুমি আর আমি কি আলাদা নাকি?
আলেখ কুহেলিকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
ওহ হো, মিসেস কুহেলি আলেখ শর্মা মনে হচ্ছে বেশ রোম্যান্টিক মুডে আছেন।
কেন? থাকতে পারি না বুঝি?
আলেখ কুহেলির কানের কাছে মুখটা নিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
অফকোর্স পার, আর আমি তো সেটাই চাই। তুমি যখন আজ এত রোম্যান্টিক মুডে রয়েইছ দেন লেটস স্টার্ট আওয়ার ফ্যামিলি প্ল্যানিং, কি বল?
কুহেলি আলেখকে মৃদু একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
তোমার শুধু ওই এক কথা… যাও তো।
দুষ্টু মিষ্টি কথা আর কিছু সুমধুর স্মৃতি চারণের মধ্যে দিয়ে ওদের দুপুরটা বেশ ভালই কাটল কিন্তু অন্যদিকে রাত্রির কাছে আজ গোটা দিনটাই কেমন যেন বেরঙিন মনে হচ্ছিল। সকাল থেকে উঠে কোনও কাজেই যেন মন বসছে না, ওয়ার্কআউট টাও করেনি। চুপচাপ সেই সকাল থেকে নিজের বেডরুমে বসে আছে। বারবার মনের মধ্যে নিশীথের কথা গুলোই ঘুরে ফিরে আসছে। নিশীথের দুটো সত্তার মধ্যে কোনটা যে আসল আর কোনটা যে নকল যেন বোঝার চেষ্টা করছে, নিজের মনের মধ্যেই অদ্ভুত এক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
এত কেন ভাবছিস রাত্রি? তুই তো চিনিস নিশীথ আগরওয়াল কে, এটাই তো স্বাভাবিক তাই না?
কিন্তু, সেদিন যে নিশীথ কে দেখেছিলাম তবে সেটা কি ভুল ছিল?
ভুল কেন হতে যাবে? নিশীথ নিজেই তো বললেন, উনি মনে করেন ওনার কিছুটা হলেও দায় ছিল তাই উনি তোর প্রতি এতোটা কনসার্ন দেখিয়েছেন। অ্যাস সিম্পল অ্যাস দ্যাট।
উনি কিন্তু একবারও সরাসরি একথা বলেননি।
সবকথা কি ডাইরেক্টলি বলার প্রয়োজন হয়? তুই বুঝতে পারিসনি নিশীথ ঠিক কি বলতে চেয়েছেন?
কিন্তু, এটার কথা না হয় বাদ দিলাম, পুজোতে কলকাতায়ও উনি আমার হয়ে কথা বলেছিলেন। তাহলে সেটা কি ছিল?
রাত্রি, তুই কি মনে করছিস? নিশীথ তো সেদিনই বলে দিয়েছিলেন, ওটা উনি তোর জন্য করেননি। কোনও অন্যায় দেখলে উনি প্রতিবাদ করাটা নিজের কর্তব্য মনে করেন তাই করেছিলেন।
কিন্তু….
স্টপ ইট রাত্রি, যেটা হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই সেটা নিয়ে কেন এত ভাবছিস? নিশীথ কি ভাবলেন, কিভাবে তোর সাথে কথা বললেন, এগুলো তোর জন্য এত ইম্পর্ট্যান্ট কেন? উনি একজন বিজনেস ম্যান, একটা ডীল ছিল তোর সাথে ওনার একটা পিওর প্রফেসনাল রিলেশন। ডিল শেষ, রিলেশনও শেষ, এটাই তো নিয়ম, তুই কেন তাহলে এখনও ওনার কথা ভাবছিস?
জানিনা, আমি কিছু জানিনা।
বাই এনি চান্স তুই কি……..
নাহ, পরের কথাগুলো মনের মধ্যেও শুনতে চায় না রাত্রি। আপনমনেই বলে উঠল,
এটা হতে পারে না, ইম্পসিবল। হ্যা, আমি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম, উনি আমার জন্য যা করেছেন তার জন্য আমি দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু তার বেশি কিছু হতে পারে না, উনি যদি সবটা এত ক্যাজুয়ালি নিতে পারেন তাহলে আমি কেন পারব না? উনি নিশীথ আগরওয়াল হতে পারেন কিন্তু আমিও রাত্রি অহুজা। ওনার জন্য আমি নিজের মন কেন খারাপ করব? কখনোই না, রাত্রি অহুজার লাইফে যে কেউ হঠাৎ এসে এতোটা ইম্পর্ট্যান্ট হতে পারে না। আমারই ভুল, কাজের ক্ষেত্রে নিজের ইমোশনকে ইনভলব করা আমার উচিৎ হয়নি। নো প্রবলেম, ভুল করেছিলাম কিন্তু সেটা শুধরে নিতেও জানি, আর কোনদিনও ভুল করেও এত কেয়ারলেসলি নিজের ইমোশন কে ইনভলব করব না। আজ থেকে নিশীথ আগরওয়ালের আর কোনও উল্লেখ আমার লাইফে থাকবে না।
কথা গুলো বলতে বলতে রাত্রির চোখ দুটো কখন যেন ভিজে উঠেছিল। রাত্রি মুখে কথা গুলো বললেও মনের ভিতরে কোনও একটা কোনায় যেন একটা অব্যক্ত কষ্টের বিষাক্ত তীর গভীর থেকে আরও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছিল। হয়তো কিছু অনুভূতি নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছিল কিন্তু সব অনুভূতিরা হয়তো পরিণতি পাওয়ার জন্য সৃষ্টি হয় না। রাত্রিও ওর অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলোকে দূরে অনেক দূরে সরিয়ে দিল। কিন্তু এভাবে চাইলেই কি অনুভূতি গুলোকে নিজের ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রিত করা যায়?
ক্রমশ__________
© স্বত্ব সংরক্ষিত
রাত্রি আর নিশীথের কি এটাই শেষ পরিণতি? আর নভতেজ বাবুর অন্তরেও বা কোন না বলা দুঃখের বীজ নিহিত রয়েছে? আলেখ কুহেলির মিষ্টি মধুর সম্পর্কটাও চিরদিন এমনই থাকবে তো? উত্তর গুলো এখনও অজানা, আগামীর গর্ভে নিহিত আছে যে উত্তর গুলো তাদের প্রকাশকালের অপেক্ষায় আছি আমরা সবাই। কেমন লাগল আজকের পর্ব জানাতে ভুলবেন না। অপেক্ষা করব কিন্তু। আর এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাদের জানা থাকলে বলে ফেলুন, দেখি কতটা মেলে আগামীর উত্তর গুলোর সঙ্গে। আজ তবে আসি দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।