সংগোপনে’ পর্ব-৪৪

0
1061

#সংগোপনে
#ধারাবাহিক_পর্ব_৪৪
#অচিন_পাখি_কলমে_ভাগ্যলক্ষ্মী_দাস

আগের পর্বের পর————

সময় নদীর স্রোতের ধারায় বয়ে গেছে একটা মাস। নভতেজ বাবু তার বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার সময় তিনি বলেই গিয়েছিলেন তার জন্য অযথা চিন্তা না করতে। তিনি এখন একটু মনের আনন্দে ঘুরে ফিরে বেড়াতে চান। রাত্রিও লন্ডন ফিরে গেছে, আগের থেকেও অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সে। রাত্রি নিজেকে দেওয়া কথা রেখেছে, ভুলেও নিশীথের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেনি। যথা সম্ভব চেষ্টা করেছে নিশীথ কে নিজের মন মস্তিষ্ক থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে, কতটা সফল হয়েছে তা জানা নেই। আর নিশীথের কথা আলাদা করে কি বলার প্রয়োজন আছে? সে তার কাজ নিয়েই আছে অন্য কিছু ভাবার তার সময়ও নেই আর ইচ্ছেও নেই। আর এখন তো ব্যস্ততা আরও তুঙ্গে, ওর আর আলেখের জয়েন্ট ভেঞ্চার টা নিয়ে দুই কোম্পানিতেই ব্যস্ততা এখন চরম পর্যায়ে। এই প্রজেক্ট টা যখন শুরু হয়েছিল তখন মনে হয়েছিল প্রায় এক বছর হয়তো লেগে যাবে কিন্তু দুই কোম্পানির নিরলস পরিশ্রমের ফলে কাজটা অর্ধেক সময়ে সম্পন্ন হতে চলেছে। আর মাস খানেকের মধ্যেই নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ হতে চলেছে, আর সেই বিষয়েই এই মুহূর্তে একটা মিটিং চলছে। সব দিক দেখে শুনে নিশীথ আর আলেখ দুজনেই নিশ্চিত আগামী এক মাসের মধ্যেই সবটা হয়ে যাবে। নিশীথ বলল,

মিস্টার শর্মা আই থিঙ্ক এবার আমাদের প্রোডাক্ট লঞ্চের ডেট টা ফাইনাল করে নেওয়া উচিৎ, আর মিডিয়া কেও ইনফর্ম করতে হবে। মার্কেটে একটা হাইপ ক্রিয়েট করতে হবে, যাতে আগামী একটা মাস কেউ আমাদের নিউ প্রোডাক্ট ছাড়া অন্য কোনও কিছুর কথা ভাবতেই না পারে।

রাইট, অলরেডি আমাদের নিউ প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং প্ল্যান স্টার্ট হয়ে গেছে। আমাদের পি আর ডিপার্টমেন্ট সমস্ত অনলাইন ফোরামে বিগত এক মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে এটা নিয়ে কাজ করছে।

হুম, আই নো দ্যাট অ্যান্ড রেসপন্সও বেশ ভালো।

ইয়েস, আসলে আমাদের লাস্ট প্রোডাক্টের হিউজ সাকসেসের জন্যই এই প্রোডাক্ট টা নিয়েও সবাই খুব আগ্রহী।

সেটা তো আমাদের জন্য খুবই ভালো, তাহলে একটা ডেট ফাইনাল করে নেওয়া উচিৎ। লাস্ট টাইম আপনি ডিসাইড করেছিলেন, এবারেও আপনিই ডিসাইড করুন।

লাস্ট টাইম আমার একটা স্পেশাল রিজন ছিল বাট এবারে তেমন কোনও কারণ নেই সো আমাকেই ডিসাইড করতে হবে এমন কোনও কথা নেই। এবারের ডেট টা বরং আপনি সিলেক্ট করুন, আফটার অল এটা আমাদের জয়েন্ট ভেঞ্চার।

কোনও হলিডে দেখে করা যায় কি?

হুম, যায় বাট ডিসেম্বর মাসে ঠিক সেরকম হলিডে কোথায়?

কুহেলি এতক্ষণ চুপচাপ শুধু শুনছিল, এখন বলল,

আমি কিছু বলতে পারি?

আলেখ আর নিশীথ দুজনেই অবাক হয়ে কুহেলির দিকে তাকাল। আলেখ বলল,

এত ফরমালিটি করছ কেন? আমরা আলোচনা করতেই বসেছি।

না, যেভাবে তোমরা দুজনেই শুধু আলোচনা করছিলে আমার মনে হল আমি এখানে উপস্থিতই নেই। তাই ভাবলাম পারমিশন নিয়ে কথা বলা উচিৎ।

এবার নিশীথ বলল,

আমি তো অন্য কিছু ভাবছিলাম, আমার তো মনে হচ্ছিল আপনি হয়তো কোনো কারণে মিস্টার শর্মার উপরে রেগে আছেন আর তাই কোনও কথা বলছেন না।

আলেখ হেসে বলল,

কুহেলি রাগ করলে চুপ করে থাকে না, বরং…….

কথাটা শেষ হলো না কারণ কুহেলি এমন ভাবে আলেখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে যে বেচারার আর কিছু বলার সাহস হল না। নিশীথ সেটা লক্ষ্য করে একটু হেসে বলল,

সো কুহেলি আপনি কি বলছিলেন?

হ্যা, আমি বলছিলাম যে ডিসেম্বরে সেইরকম হলিডে বলতে কিন্তু খুব ভালো দুটো ডেট আছে।

নিশীথ একটু আগ্রহ নিয়ে বলল,

দুটো? আর ইউ টকিং এ্যাবাউট টুয়েন্টি ফিফথ ডিসেম্বর অ্যান্ড থার্টিফার্স্ট ডিসেম্বর?

এক্সাকটলি।

আলেখ বলল,

বাট কুহেলি ওই দুটো দিনই ফেস্টিভ ডে, ওইদিন কি প্রোডাক্ট লঞ্চ করা টা ঠিক হবে? মানে চারিদিকে এত পার্টি চলে ইভেন সব জায়গায় নানা রকম ইভেন্টও হয়। আমি বলতে চাইছি ওই দিনে যদি আমাদের প্রোডাক্ট লঞ্চের ইভেন্ট টা রাখা হয় তাহলে হয়তো সেরকম অ্যাটেনশন পাওয়া যাবে না।

কুহেলি একবার নিশীথের দিকে তাকিয়ে দেখল তার মুখেও ফুটে উঠেছে কিছুটা অনিশ্চয়তার ভাব। কুহেলি বলল,

হুম, ইউ আর রাইট বাট আমি এই ফেস্টিভ সিজন টাকেই কাজে লাগাতে চাইছি।

নিশীথ আর আলেখ দুজনেই একটু কৌতূহলী হয়ে বলল,

কিভাবে?

দেখো, ওই দুটো দিনই পার্টির জন্য একদম বেস্ট, বিশেষ করে থার্টিফাস্ট ডিসেম্বর। আমরা যদি একটা গ্র্যান্ড পার্টি থ্রো করি, নট ফর ওনলি দ্য প্রোডাক্ট লঞ্চ বাট থার্টিফার্স্ট নাইটের পার্টি। অন্য আর পাঁচটা থার্টিফাস্ট নাইটের পার্টির মতই সব হবে কিন্তু সেখানে মেইন ইভেন্ট থাকবে আমাদের প্রোডাক্ট লঞ্চ। একেবারে সাদামাটা অফিসিয়াল প্রোডাক্ট লঞ্চের পার্টির থেকে আই থিঙ্ক এটা বেশি আই ক্যাচিং হবে।

আলেখ আর নিশীথ দুজনের চোখেই প্রশংসার অভিব্যক্তি ফুটে উঠল। নিশীথ ওর সেই স্বভাবসিদ্ধ হাসিটা ঠোঁটে এনে বলল,

আপনি এতক্ষণ চুপ করে না থাকলে আমাদের শুধু শুধু এত কথা বলতেই হত না। এত ভালো একটা আইডিয়া আপনি আগে দিতে পারলেন না? বেকার এতোটা টাইম ওয়েস্ট হত না তাহলে। আই লাইক দ্য আইডিয়া ভেরি মাচ, অ্যান্ড অ্যাম শিওর মিস্টার শর্মারও আইডিয়া টা পছন্দ হয়েছে।

অফকোর্স, এটা পছন্দ না হওয়ার কোনও কারণই নেই।

ওকে, দেন ইটস ফাইনাল। থার্টিফার্স্ট ডিসেম্বর আমাদের নিউ প্রোডাক্ট লঞ্চ হবে, উইথ এ গ্র্যান্ড পার্টি।

ইয়েস, আমি আজকেই একটা ইন্টারনাল মিটিং ডেকে পি আর ডিপার্টমেন্ট আর মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট কে সবটা বুঝিয়ে দেব। আগামী কাল থেকেই সব জায়গায় শুধু আমাদের আপকামিং প্রোডাক্ট লঞ্চের পার্টির কথা ছাড়া অন্য কোনও কথা থাকবে না।

নিশীথ উঠে দাড়িয়ে একবার নিজের রিস্ট ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলল,

অলরাইট দেন, আপনি সবটা পারফেক্টলি করে নেবেন আমি জানি। এখন আমাকে বেরোতে হবে, আজকেই মুম্বাই ফিরতে হবে।

নিশীথ আলেখ আর কুহেলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর আলেখ কুহেলির বেশ কাছে এসে বলল,

কুহেলি তুমি এত ভালো ভালো আইডিয়া পাও কোথা থেকে?

যেখান থেকে বাকি সবাই পায়, এখন এসব কথা বাদ দিয়ে মিটিং টা ডাকো আগে। আচ্ছা এবারের প্রোডাক্ট লঞ্চ কে করবে? আগের বারের মতই রেহান খান্না?

আলেখ বেচারা একটু বাড়তি রোমান্সের আশায় ছিল কিন্তু কুহেলি অফিসে যতটুকু সময় থাকে কাজের বাইরে একটা কথা বলাও পছন্দ করে না। আলেখ নিজেও প্রোফেশনাল আর পার্সোনাল লাইফ আলাদা রাখাতেই বিশ্বাসী কিন্তু নিজের বিবাহিতা স্ত্রী যদি সবসময় আশেপাশে থাকে মাঝেমধ্যে মনটা একটু বেসামাল তো হতেই পারে তাই না? কিন্তু কুহেলি একদম পাত্তাই দেয় না। আলেখ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

হুম, এই মুহূর্তে রেহান খান্না ছাড়া অন্য কেউ অত পপুলার নয়।

কিন্তু এত শর্ট টাইমে ওনার ডেট পাওয়া যাবে?

ওটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আমাদের পি আর হেড বালাকৃষ্ণা জী ঠিক ম্যানেজ করে নেবেন।

ওকে, তাহলে মিটিং টা সেরে ফেল আমিও আমার বাকি কাজ গুলো করে নিই।

ইন্টারনাল মিটিংয়ে আলেখ সবাইকে যার যার কাজ বুঝিয়ে দিল। বাকিদের মুখ দেখেও মনে হল থার্টিফার্স্ট ডিসেম্বর ডেট ফাইনাল হওয়ায় সবাই বেশ খুশি। হবে নাই বা কেন, ওই দিনটাতে যদি এরকম একটা গ্র্যান্ড পার্টির আয়োজন হয় খুশি তো হওয়ারই কথা। কুহেলি বাড়ি ফিরেও একটু ফ্রেশ হয়ে ওর ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছে, একদম সেই আগের মত। আলেখও কাজ করছে নিজের ল্যাপটপে মুখ গুজে, দুটো মানুষ যে একই ঘরে রয়েছে কে বলবে। কুহেলি আপন মনে কাজ করছিল হঠাৎ ওর মুঠোফোনটা এই নিরবতা ভঙ্গ করে সশব্দে বেজে ওঠায় কুহেলি আর আলেখ দুজনেই একটু চমকে উঠল। কুহেলি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল স্ক্রীনে ভাসছে রাত্রির নাম, একটু হেসে কলটা রিসিভ করে বলল,

হাই রাত্রি হাউ আর ইউ? এত দিনে মনে পড়ল?

আচ্ছা? তোমারও তো একবারও আমার কথা মনে পড়েনি।

ব্যাস, তাহলে আর কি শোধবোধ।

দুজনেই একটু হেসে উঠল, তারপর কুহেলি বলল,

তবে আমি আজকে তোমাকে এমনিই ফোন করতাম রাতের দিকে।

তাই? কেন, এনিথিং স্পেশ্যাল?

হুম, স্পেশ্যাল তো বটেই।

রাত্রি বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল,

কি? কি? কোনও গুড নিউজ আছে নাকি? আই মিন, আমি কি বুয়া.. ওয়েট… মাসি… নাকি বুয়া!.. উফ্ কি কনফিউজিং, যাই হোক কিছু হতে চলেছি নাকি?

কুহেলি একটু লজ্জা পেয়ে বলল,

মোটেই না, ওসব কিছুই না।

রাত্রি যেন একটু হতাশ সুরে বলল,

যাহ, কোথায় ভাবলাম যে বুয়া… না, মাসি… উফ্, আবার কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি। এই কুহেলি তোমাদের বেবি হলে আমাকে কি বলবে বলতো! বুয়া না মাসি?

জানিনা।

আরে… তুমি লজ্জা পাচ্ছ নাকি? আরে এতে এত লজ্জার কি আছে, একদিন না একদিন তো সেই দারুন দিনটা আসবেই।

তোমরা দুই বন্ধুই এক গোত্রীয় জানো তো।

মানে? আলুও বেবির কথা বলছে নাকি! ওয়াও, দ্যাটস গ্রেট, তার মানে আমি খুব তাড়াতাড়ি…. ওই দেখো তুমি বললেই না তো, তোমাদের বেবির আমি কি হব? মাসি না বুয়া?

উম, যদি তোমার আলুর দিক থেকে ধর তাহলে বুয়া আর আমার দিক থেকে ধরলে মাসি।

এতক্ষণ আলেখ ওদের কথায় বিশেষ ধ্যান দেয়নি, এখন এই মাসি বুয়া সংক্রান্ত আলোচনা শুনে একটু তাকাল কুহেলির দিকে। কুহেলির মুখে আলতো লাজুকতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে, আলেখের বুঝতে বিশেষ কষ্ট হল না যে ওরা কি নিয়ে আলোচনা করছে। একটু মুচকি হেসে আবার নিজের কাজে মন দিল। ওদিকে রাত্রি বলল,

হুম, কিন্তু আমার না এই মাসি বুয়া কোনোটাই ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। মানে এগুলো ঠিক আমার ইমেজের সঙ্গে যাচ্ছে না বুঝলে… আই মিন….

থাক থাক আর বলতে হবে না… কি কথা নিয়ে বসলে বলতো? এখন এগুলো নিয়ে কথা বলার কোনও মানে হয়!

হুমমম, বুঝতে পারছি আপনি লজ্জা পাচ্ছেন মিসেস শর্মা। ঠিক আছে, এটা নাহয় তোলা থাক, যেদিন গুড নিউজ শুনব সেদিন না হয় ভাবা যাবে। এখন বলো তুমি আমাকে কেন ফোন করতে? কি স্পেশ্যাল?

ওহ, দেখেছ তোমার এই আবোল তাবোল কথায় আসল কথাই ভুলে গেছি। আসলে তোমাকে ইনভাইট করার জন্য কল করতাম।

ইনভাইট?

হুম।

কিসের জন্য? মানে অকেশন টা কি?

আমাদের নিউ প্রোডাক্ট লঞ্চ।

কুহেলি, তোমাদের প্রোডাক্ট লঞ্চে আমি গিয়ে কি করব? এমনিতেও আমার এই অফিসিয়াল পার্টি গুলো একদম পছন্দ নয়। কি বোরিং… উফ্, আই জাস্ট হেট দ্যাট.. সরি কুহেলি বাট আমি যেতে পারব না।

আরে আগে পুরো কথাটা তো শোনো।

কি?

ইটস নট জাস্ট এ অফিসিয়াল প্রোডাক্ট লঞ্চ পার্টি।

মানে?

মানে মেইন ইভেন্ট প্রোডাক্ট লঞ্চ হলেও ইটস আ থার্টিফাস্ট নাইট পার্টি।

রাত্রি একটু অবাক হয়ে বলল,

ইউ মিন টু সে… থার্টিফাস্ট ডিসেম্বর?

ইয়েস।

সিরিয়াসলি?

আরে হ্যা।

ওয়াও, দ্যাটজ গ্রেট!

এবার বলো, আসবে তো?

অফকোর্স, কতদিন থার্টিফাস্টের পার্টি ইন্ডিয়া তে সেলিব্রেট করিনি, আই উইল ডেফিনেটলি কাম।

গ্রেট।

আরও কিছুক্ষন কথা বলার রাত্রি ফোনটা রেখে অ্যামিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

হেই অ্যামি, বুক এ টিকিট টু ইন্ডিয়া।

রাত্রিকে এত খুশি দেখে অ্যামি বলল,

শিওর ম্যাম, কোনও ফ্যামিলি ফাংশান আছে?

না তো, ফ্যামিলি ফাংশান কীকরে হবে? আমার ফ্যামিলি তো এখানে।

না, আপনি এত খুশি তো তাই ভাবলাম কোনও ফ্যামিলি ফাংশান অ্যাটেন্ড করতে যাবেন।

অ্যাকচুয়ালি দে আর অলসো লাইক মাই ফ্যামিলি। বাট কোনও ফাংশান নয়, ইটস আ পার্টি ডার্লিং, থার্টিফাস্ট নাইট পার্টি। ওহ, আই অ্যাম সো একসাইটেড।

রাত্রির উত্তেজনা আর খুশি দেখে মনে হচ্ছে পার্টি যেন কালকেই, অ্যামিকে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু শট রেডি তাই আর বলা হল না। এদিকে কুহেলি কলটা ডিসকানেক্ট করার পর আলেখ ওর ল্যাপটপ টা সরিয়ে রেখে বলল,

তো, ম্যাডাম কি বললেন? আসছেন?

হুম, শুধু আসছেই না, রীতিমত একসাইটেড।

হুম, আর কি বলছিল রিতু?

কি আবার বলবে! নরম্যাল কথা।

তাই?

কুহেলি আলেখের দিকে তাকিয়ে বলল,

কি ব্যাপার? আমার আর রাত্রির কনভারসেশন জানার জন্য এত আগ্রহ কেন তোমার?

উম, আগ্রহ ঠিক না কৌতূহল বলতে পার।

কিসের কৌতূহল?

ওই যে মাসি বুয়া… কি সব বলছিলে না তোমরা, ওটাই একটু বিস্তারিত ভাবে জানতে ইচ্ছে করছে আর কি।

আলেখের ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসিটা দেখে কুহেলির বুঝতে কোনও অসুবিধাই হল না যে আলেখ সবটাই বুঝতে পেরেছে তাও ইচ্ছে করে দুষ্টুমি করছে। কুহেলি যেন কিছু জানেই না এমন ভাব করে নিজের ল্যাপটপ টা টেনে নিয়ে সেদিকে মন দিয়ে বলল,

কি বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না।

আলেখও কি আর কোনও অংশে কম যায়! সেও উঠে এসে কুহেলির গা ঘেঁষে বসে বলল,

তাই! বুঝতে পারছ না?

কুহেলি তেমনই নির্বিকার ভাবে উত্তর দিল,

না।

ঠিক আছে, আমিই বুঝিয়ে দিচ্ছি তাহলে।

কুহেলি একটু সরে বসে বলল,

এই সর তো, অনেক কাজ বাকি।

কিন্তু আলেখ এখন মোটেই কাজ করার মুডে নেই, আর না কুহেলিকে কাজ করতে দেওয়ার কোনও ইচ্ছে আছে। কুহেলির কোলের উপর থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে বন্ধ করে এক পাশে সরিয়ে রাখল। কুহেলি সেটা দেখে বলল,

আরে কি করছ কি? আমার কিন্তু সত্যিই অনেক কাজ বাকি।

থাকুক, কাজ পরে হবে, আগে বলো রিতু কি ঠিক করল? আমাদের বেবি ওকে বুয়া ডাকবে না মাসি?

কুহেলির গাল দুটো আবার লাজে রাঙা উঠল, চোখ দুটো একটু নামিয়ে বলল,

তুমি না….

আলেখ কুহেলির একদম কাছে এসে বলল,

আমি কি?

জানি না।

বলে কুহেলি উঠতে গেলেই আলেখ ওর একটা হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দুহাতে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

এই, এত পালাই পালাই কর কেন তুমি? আজ এত সহজে ছাড়ছি না।

কি হচ্ছে কি? ছাড়ো না।

উহু, একদম না। আগে বলো রিতু কি বলল?

সত্যি কিছু বলেনি।

সত্যি?

আরে সত্যি, ও বলছিল ওর বুয়া বা মাসি কোনোটাই ঠিক পছন্দ না।

তাই? তা ওর কি পছন্দ?

জানিনা, আর বলতে দিইনি।

হুম, তুমি তো আবার আমাদের বেবির কথা শুনলেই লজ্জায় লাল হয়ে যাও। আচ্ছা, এত লজ্জা পাও কেন বলতো? একদিন না একদিন তো আমাদের বেবি হবেই।

হুম, জানি কিন্তু তাও… ও তুমি বুঝবে না।

আমার বুঝে কাজও নেই, আচ্ছা তোমার কি চাই? ছেলে না মেয়ে?

কুহেলি একটু লজ্জা মেশানো হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

জানিনা।

আবার জানিনা? আজ তুমি এই জানিনা বলে আর ছাড়া পাবে না। আমার যেমন তোমার মত একটা সুইট লিটিল বেবি গার্ল চাই, তোমার কি চাই সেটা না শুনে আমি আজ তোমাকে ছাড়ছি না।

বলে আলেখ কুহেলির কোমরটা আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কুহেলি নিজেকে ছাড়ানোর কোনও চেষ্টা করল না, কারণ জানে কোনও লাভ নেই। কুহেলিকে চুপ করে থাকতে দেখে আলেখ আবার বলল,

কি হল বলো?

কুহেলি একটু থেমে থেমে বলল,

আমার… আমার একটা ছেলে চাই….ঠিক তোমার মত।

আলেখ কুহেলির লজ্জায় নিচু হয়ে আসা মুখটা একটু তুলে বলল,

তাই?

হুম।

কিন্তু আমার যে তোমার মত একটা মেয়ে চাই, তাহলে কি হবে?

কুহেলি কিছু না বলে শুধু হাসল, আলেখ নিজেই আবার বলল,

আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাবে আমাদের মধ্যে কার চাওয়া টা আগে পূরণ হয়।

কুহেলি একটু অবাক হয়ে বলল,

মানে?

মানে আগে আমাদের ঘরে একটা ছোট্ট দুষ্টু ছেলে আসে নাকি মিষ্টি একটা মেয়ে আসে।

আবার আগে পরে আসছে কোথা থেকে? যার আসার সে একবারেই আসবে, পরের কোনও সিন নেই।

বা রে, তা বললে কি করে হবে? তাহলে তো যে কোনো একজনের ইচ্ছে টা অপূর্ণই থেকে যাবে।

যাক।

না, সেটা হবে না।

এই তুমি এবার থামো তো, পরের টা পরে ভাবলেও চলবে। এখন আমাকে ছাড়ো দেখি অনেক কাজ পড়ে আছে।

আলেখ কুহেলির কপালে একটা আলতো ভালোবাসার পরশ ছুঁইয়ে দিয়ে বলল,

ঠিক আছে, তবে এই কনভারসেশন টা কিন্তু ডিউ রইল।

কুহেলি একটু হেসে আলেখের হাত দুটো ছাড়িয়ে উঠে বলল,

কোনও কিছু ডিউ নেই, নিজের কাজ কর।

বলে কুহেলি একটু হেসে সোজা এক ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, আলেখ সেদিকে তাকিয়ে একটু হেসে আবার নিজের কাজে মন দিল। চরম কর্মব্যস্ততার মধ্যে দিয়েও দিন গুলো বেশ ভালই কাটছিল, নিউ প্রোডাক্ট লঞ্চের দিনও প্রায় চলেই এসেছে আর মাত্র দুটো দিন বাকি, এখন শুধু শেষমুহূর্তের চেকিং চলছে। ব্যস্ততাও তাই এখন তুঙ্গে, কারোর যেন দম ফেলার সুযোগ নেই, নিশীথও বেশ কয়েকদিন ধরেই ব্যাঙ্গালোরেই আছে। কুহেলি এই কিছুদিন আগেই নভতেজ বাবুর সঙ্গে কথা বলেছে ওনার ফিরতে এখনও সপ্তাহ খানেক দেরী হবে। নতুন বছরের শুরুতে উনি থাকবেন না এটা ঠিক ভালো লাগছিল না কুহেলির তাও আবার এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা দিনে, কিন্তু কি আর করা যাবে। ওদিকে রাত্রিও নিজের শিডিউল একদম সেট করে নিয়েছে, আগের দিন দুপুরের মধ্যেই সে পৌঁছে যাবে, মানে আগামীকাল। সে সবিশেষ উত্তেজিত এবং উৎসাহিতও বটে, সেদিন কুহেলি ওকে আমন্ত্রণ জানানোর পর এতটাই আনন্দিত হয়ে পড়েছিল যে মূল ইভেন্ট টা যে কি সেটাও ঠিক করে খেয়াল করেনি। পরে একদিন যখন নিজের শিডিউল গুলো চেক করছিল তখন হঠাৎই একটা অনলাইন ফোরামে আলেখ আর নিশীথের নিউ প্রোডাক্ট অ্যাড টা চোখে পড়েছিল। আর তখনই মনে হয়েছিল, পার্টিতে নিশীথ অবশ্যই থাকবে, মানে সেটাই স্বাভাবিক। প্রথমে রাত্রি একবার ভেবেছিল আসবে না, নিশীথের মুখোমুখি সে হতে চায় না। কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার মনে হয়েছিল, নিশীথ এতোটা গুরুত্বপূর্ণ কখনোই হতে পারে না যে ওর জন্য রাত্রি নিজের প্ল্যান পরিবর্তন করবে। শেষমেশ রাত্রি আর নিজের প্ল্যানটা পরিবর্তন করেনি আর নিশীথের কথা ভেবে অযথা নিজের মুড টাও খারাপ করেনি। বরং সে পুরোদমে পার্টি টা উপভোগ করার প্ল্যান করছে, এতদিন পরে আবার নতুন বছরের সূচনা সে ইন্ডিয়ায় থেকে উপভোগ করতে চলেছে বলে কথা। যাই হোক, মোটামুটি সবদিকেই সবার সমস্ত প্রস্তুতিই প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে এসেছে, এখন অপেক্ষা শুধু থার্টিফাস্ট নাইটের।

ক্রমশ_________

© স্বত সংরক্ষিত

কেমন লাগল আজকের পর্বটা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। প্রতিবারের মতো আজকেও অপেক্ষায় থাকব। আজ আর কিছু বলছি না, শুধু অপেক্ষা থার্টিফাস্ট নাইটের। আজ তবে আসি, দেখা হবে আগামী পর্বে ততদিন পর্যন্ত পড়তে থাকুন ভালো থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here