জীবন সাথী💜 পর্ব-৩

0
2100

#জীবন_সাথী💜
লেখিকা-জান্নাতুল ফারিয়া প্রত্যাশা
৩.
~
হসপিটালে এসে অনু রিসিভশন থেকে থেকে জেনে নিলো রিহান কত নাম্বার রুমে আছে।জানা মাত্রই অনু দ্রুত রিহানের কেবিনে যায়।কেবিনের ভেতর ঢুকতেই দেখে প্রিন্সিপাল স্যার,আরাফ সহ আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা সেখানে উপস্থিত।অনুকে দেখে আরাফের আবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।আরাফ আড় চোখে একবার অনুকে দেখে তার বাবার সাথে কোনো ব্যাপারে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে।অনু,তিহা আর রুমি কেবিনের এক কোনায় গিয়ে দাঁড়ায়।অনু বেডের উপর রিহানকে দেখে ;তার হাত পা আর মাথায় বেন্ডেজ করা।অনুর খুব কষ্ট হচ্ছে রিহানকে এই অবস্থায় দেখে ,অনু মনে মনে ভাবছে,
”একটু আগেও তো কত সুস্থ ছিল ।আর এখন হাত পা বেন্ডেজ করা।কে ওর সাথে এমন করেছে কে জানি যদি একবার পেতাম তারে তাহলে ওই খারাপ লোকটাকে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলতাম।কতটা নির্দয় হলে কেউ কাউকে এভাবে মারে।আল্লাহ তুমি ওই লোকটার বিচার করো”

কথা গুলো ভেবে অনু রিহানের কিছটা সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।তখনি পাশ থেকে একজন শিক্ষিকা অনুকে এসে বলে ,
”তোমরা নিশ্চয় ভার্সিটি থেকে এসেছো?”

অনু মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।
মেডাম বলে ,
”ওহ আচ্ছা।রিহান এখন আগের থেকে সুস্থ আছে।ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেয়ায় ও ঘুমাচ্ছে।এখন ওর জ্ঞান ফিরবে না তোমাদের সাথে কথাও বলতে পারবে না ।আর তোমরাই বা কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে বলো?তোমাদের ওতো ক্লাস আছে তাই না।তাই এখন আমরা ভার্সিটিতে ফিরছি তোমরাও চলো পরে যখন রিহানের জ্ঞান ফিরবে তখন আবার এসে দেখতে এসো.”

অনু মেডামের দিকে একবার তাকিয়ে আবার রিহানের দিকে তাকিয়ে বলে ,
”ম্যাম আমি এখন যাবো না।আমি কিছুক্ষন এখানে রিহানের কাছে থাকতে চাইছি।রিহান আমার ফ্রেন্ড ও জ্ঞান ফিরে আমাকে দেখলে খুশি হবে;তাই ম্যাম আমি এখানেই থাকবো যতক্ষণ না ওর জ্ঞান ফিরছে।তিহা আর রুমি বরং আপনাদের সাথে চলে যাক.”

অনুর কথা শুনে তিহা আর রুমি তৎক্ষণাৎ বলে উঠে ,
”না ম্যাম আমরাও অনুর সাথে থাকবো ।অনুকে একা রেখে আমরা ভার্সিটিতে ফিরে যাবো না ”

মেডাম একবার অনুর দিকে তাকায় তো একবার তিহা রুহির দিকে তাকায় ।তারপর প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বলে,
”স্যার মেয়েগুলো এখানে থাকতে চাইছে.”

প্রিন্সিপাল স্যার কিছু একটা ভেবে বলে ,
”সমস্যা নেয় থাকুক ।ওদের ফ্রেন্ড তো তাই ওদের খারাপ লাগছে।আর রিহানও চোখ খুলে ওদের দেখেলে কিছুটা আশ্বস্ত হবে.”

প্রিন্সিপালের স্যারের কথায় মেডাম বলে,
”ঠিক আছে স্যার।আর মেয়েরা চুপচাপ এই রুমেই বসে থাকবে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করবে না।বুঝতে পেরেছো?”

তিন জন একসাথে বলে ,
”জ্বি ম্যাম।”

তারপর সেখান থেকে সব স্যার ম্যাম চলে যায়।শুধু দু জন বাদে এক রিহানের বড় ভাই আরেকজন হলো আরাফ।আরাফ রিহানের বড় ভাইকে কি যেন বলছিলো সেদিকে অনুর খেয়াল নেয় ।অনু এক দৃষ্টিতে রিহানকে দেখছে।ছেলেটার জন্য অনুর ভীষণ মায়া হচ্ছে।বড় একটা ভাই ছাড়া রিহানের এই পৃথিবীতে আর কেউ নেয়।প্রানোচ্ছল একটা ছেলে সারাক্ষন সবাইকে মাতিয়ে রাখে।অনুকে প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে দেখে তখনি ওর প্রেমে পরে গিয়েছিলো।তাই প্রথম অনুর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো রিহান।অনু ওকে সবসময় বন্ধু হিসেবেই ভেবে এসেছে।কিন্তু ওদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা যত গভীর হচ্ছিলো রিহান ও অনুর প্রতি ততো দুর্বল হচ্ছিলো।তাই একদিন না পেরে বলেই দিয়েছিলো যে সে অনুকে ভালোবাসে।সেদিন অনু মজার ছলে কথাটা নিয়ে থাকলেও আস্তে আস্তে যত দিন যাচ্ছিলো অনু খেয়াল করছিলো রিহান কেমন যেন বদলে যাচ্ছে সে অনুর সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করছে না বরং অনুর উপর নিজের অধিকার ফোলানোর চেষ্টা করছে।এই নিয়ে একবার ওদের মাঝে ভীষণ কথা কাটাকাটি হয়;তখন থেকে ওদের সম্পর্কের মাঝেও অনেকটা দুরত্ব তৈরী হয়ে যায়।তবে অনু রিহানকে বন্ধু হিসেবে খুব ভালোবাসে সে কখনো রিহানের কোনো ক্ষতি চাইনি।আজ রিহানকে এই অবস্থায় দেখে কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে ওর।অনু বুঝতে পারলো তার চোখের কোনায় পানি জমেছে।সে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে সেটা মুছে রিহানের ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,
”ভাইয়া আপনি কি পুলিশ কমপ্লেইন করেছেন?”

অনুর প্রশ্নে রিহানের ভাই রুহান আর আরাফ দুজনেই অনুর দিকে তাকায়। তারপর রুহান বলে ,
”হুম.পুলিশ কমপ্লেইন করা হয়েছে ।উনারা বলেছেন রিহানের জ্ঞান ফিরলে ওর থেকে স্টেটমেন্ট নিয়ে তদন্ত করবে.”

রুহানের কথায় অনু ছোট্ট করে বলে ,
”ওহ”
.
কেবিনের ভেতরের পরিবেশটা নীরব।অনু তিহা আর রুমি বেডের পাশে রাখা একটা সোফায় বসে আছে।তিন জনই চুপচাপ।রুহানকে ডাক্তার কিছু ওষুধ আনতে পাঠিয়েছে।তবে এই শান্ত পরিবেশে মাঝেও অনুর বেশ বিরক্ত লাগছে আর অনুর বিরক্ত লাগার কারণটা হলো তার ঠিক সামনে একটা চেয়ারে আরাফ বসে আছে।অনু বুঝতেই পারছে না যে এই সাদা বিলাইয়ের এখানে কি কাজ?সব টিচাররা চলে গিয়েছে তো উনি এখানে বসে আছেন কেন?অনু বেশ বিরক্ত নিয়ে ব্রু কুঁচকে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আরাফ আরামসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তার ফোন গুতাচ্ছে।কেউ যে তার উপর ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেয়।কিছুক্ষন বসে থেকে আরাফ কাকে একটা কল দিয়ে ফোনটা কানে লাগিয়ে বাইরে চলে যায়।আরাফ বাইরে যেতেই রুমি বলে উঠে ,
”দোস্ত আমার না কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে ।বলছিলাম যে একটা কফি হলে ভালো হতো না?”

রুমির কথায় অনু ব্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
”যেখানে যাবি সেখানেই খাওয়ার চিন্তা করতে হবে তাই না?”

রুমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে ,
”একটু তো কফিই খেতে চেয়েছিলাম”

অনু বিরক্তি নিয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে ,
”ঠিক আছে বস তোরা ।আমি কফি নিয়ে আসছি”

অনু উঠে দাঁড়াতেই তিহা বলে উঠলো ,
”দোস্ত চল আমিও যাই তোর সাথে”

”না তুই এখানে থাক আমি একাই যেতে পারবো ।আর কেবিনের বাইরেই দেখলাম একটা কফি মেশিন আছে সেখান থেকেই কফি নিয়ে আসব।”
,
কথাটা বলে অনু বাইরে চলে যায়।বাইরে যেতেই দেখে আরাফ উল্টো পাশে ঘুরে কার সাথে যেনো কথা বলছে।অনু কিছু না ভেবে কফি মেশিন থেকে দু কাফ কফি নেয় ।তিহা কফি খায় না বিধায় ওদের দুজনের জন্যেই কফি নিয়েছে অনু।কফি নিয়ে যেয় না ফিরে আসতে যাবে তখনি সে আরাফের একটা কথা শুনে সেখানেই থমকে যায়।আরাফ ফোনে কাকে যেন বলছে,
”এই তোদেরকে কি আমি মারতে বলেছিলাম.বলেছি জাস্ট একটু ভয় দেখবি আর তোরা কি করেছিস ছেলেটাকে মেরে এক্কেবারে যাচ্ছে তাই অবস্থা করে ফেলেছিস.”

ওপাশ থেকে বলে ,
”সরি স্যার .আমরা বুঝতে পারিনি ”

আরাফ রেগে গিয়ে বলে ,
”ইডিউটের দল।একটা কাজও তোদের দিয়ে হয় না ।আমি একজন স্যার হয়ে আমার স্টুডেন্টের এমন অবস্থা কখনো চাইবো না।আমি জাস্ট চেয়েছিলাম তোরা শুধু ওকে একটু ভয় দেখাবি যাতে ও দ্বিতীয়বার আর এমন কাজ না করে তা না করে তোরা ছেলেটাকে এত মেরেছিস যে এখন বেচারা আধ মরা হয়ে হসপিটালে পরে আছে ।আর সব চেয়ে বড় কথা হলো পুলিশ কেইস হয়েছে ।এখন কি করবি শুনি?”

ওপাশের লোকটা ভীত কণ্ঠে বলে ,
”স্যার আমাদের এইবারের মতো বাঁচিয়ে দিন প্লিজ।আর ওই ছেলেটাকে আমরা ভয়ই দেখাচ্ছিলাম কিন্তু ওইতো ক্ষেপে গিয়ে উল্টো আমাদেরই মারতে শুরু করে তাই না পেরে আমারাও ওকে মেরেছি।স্যার ভুল হয়ে গেছে আমাদের।প্লিজ আমাদের পুলিশের থেকে বাঁচান.প্লিজ স্যার!”

আরাফ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে ,
”আচ্ছা দেখছি কি করা যায়.”

কথাটা বলে আরাফ কল কেটে পেছনে ফিরে অনুকে দেখে পুরো ভুত দেখার মতো চমকে উঠে.আরাফ ভীত কন্ঠে বলে ,
”অনু তু তু তুমি এখানে ?”

অনু আরাফের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে .
”কেন করলেন এমন?কি করেছিলো রিহান যে আপনি ওর এই অবস্থা করেছেন?”

অনুর কথায় আরাফ বুঝতে পারে যে অনু এতক্ষন আরাফের সব কোথায় শুনেছে।আরাফ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ,
”অনু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো ।আমি রিহানকে আঘাত করতে বলেনি।আসলে আমি শুধু বলেছিলাম রিহানকে একটু ভয় দেখতে কিন্তু ওরা না পেরে রিহানকে আঘাত করে বসে”

আরাফের কথা শুনে অনু ধীর পায়ে আরাফের সামনে এসে দাঁড়ায়.তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,
”ভয়ই বা কেন দেখাতে চেয়েছিলেন?কি করেছিল ও যার জন্য আপনার ওকে ভয় দেখাতে হবে।আর আপনার ভয় দেখানোর চক্করে পরে ছেলেটার আজ এই অবস্থা।কেন করেছেন এমন?কি ক্ষতি করেছে রিহান আপনার?বলুন কেন?কেন?”

লাস্টের কথা গুলো অনু কিছুটা চিৎকার করেই বলে।তবে অনুর কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না আরাফ ।কি বলবে ও?অনুকে তো আর সত্যিটা বলতে পারবে না।বলতে পারবে না যে আজ সকালে ওদের দুজনকে ঐভাবে একসাথে দেখে আরাফের খুব রাগ হয়েছিলো সাথে অজানা কষ্ট গুলো ও মনে এসে ভিড়ছিলো।আরাফ যে চায় না অনুর হাত অন্য কেউ ধরুক।কেন ধরবে আরাফের #জীবন_সাথীর হাত ধরার অধিকার শুধু তারই আছে আর কারো নেয় কারো না।কথা গুলো ভেবে আরাফ চোখ মুখ শক্ত করে অনুর দিকে তাকিয়ে বলে ,
”রিহান অন্যায় করেছিল।তাই রিহানকে আমি ভয় দেখতে চেয়েছিলাম যাতে করে সে দ্বিতীয় বার আর একই অন্যায় না করে”.

আরাফের কথায় অনু রেগে গিয়ে বলে ,
”কি অন্যায় করেছিল রিহান?”

অনুর প্রশ্নে আরাফ দায়সাড়া ভাব নিয়ে বলে ,
”সেটা জানার সময় এখনো তোমার হয়নি ।যখন সময় হবে তখনি জানতে পারবে.”

কথাটা বলে আরাফ হসপিটাল থেকে বেরিয়ে যায়।আর অনু রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,
”আমি আপনাকে ছাড়বো না মি. আরাফ মোহাম্মদ।আমি পুলিশের কাছে সব কিছু বলবো যা আমি এতক্ষন শুনেছি।রিহানের এই অবস্থার জন্য শুধু মাত্র আপনি দায়।আপনাকেও এর শাস্তি ভোগ করতে হবে.”

চলবে..

(আল্লাহকে ভয় করো.পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়)
{নাইস নেক্সট না লিখে গঠনমূলক কমনর করুন😊}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here