#বৃষ্টিস্নাত_ভোর(সমাপ্ত)
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি
নিজের কলিজাটা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে এসেছে আজরাহান।হসপিটাল এর করিডোর এ পৌঁছতেই স্তব্ধ হয়ে পরে সে।তারাফ আর সানোয়ার আহমেদ এর সাথে কুহেলিকা অটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে আজরাহান।
একটু আগেই তারাফ এর কল পেয়ে ছুটে আসে আজরাহান।প্রেগন্যান্সির টাইমে ছোটখাটো কমপ্লিকেশন দেখা দেয় প্রহর এর।এমনিতেও ওর বয়স কম তার উপর রক্তশূন্যতা দেখা দেয় প্রহর এর।দিন দিন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছিলো ওর চোখ মুখ।আজরাহান নিয়ম করে ডক্টর এর কাছে আনা নেওয়া করেছে প্রহর কে।কিন্তু আজ সকালেই বিছানা থেকে নামতে গিয়ে বেড সিট সাথে পা লেগে পড়ে যায় প্রহর।আর তখনই বুঝতে পারে ওর ওয়াটার ব্রেক করেছে।প্রহর এর চিৎকার এ দৌঁড়ে ঘরে আসে নন্দিতা আর কুহেলিকা।ওর অবস্থা দেখে ইমিডিয়েট হসপিটালে নিয়ে আসা হয়।
প্রায় বেশ কিছু সময় পর ডক্টর এসে জানায় প্রহর একদম সুস্থ আছে।তারা দেখতে চাইলে ডক্টর তাদের অপেক্ষা করতে বলে।
প্রহর কে বেড এ শিফট করা হয়।আধ শোয়া হয়ে বসে আছে প্রহর।নন্দিতা আসতে পারেনি সূর্যির শরীর ভালো নয়।এছাড়া বাকি সবাইর আগমনে গমগম করছে কেবিন।আজরাহান কেবিনের এক কোণ থেকে চেয়ে আছে প্রহর এর দিকে।
আজ তার প্রহরিণী তার পৌরষসত্তার পূর্নতা দিয়েছে তাকে।সে বাবা হয়েছে।তার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।প্রহর আজরাহান থেকে চোখ নামিয়ে লাজুক হাসে।
বেবিদের কাছে যেতেই আজরাহান এর পুরো শরীরে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে।তার মনে পড়ে সানায়ার কথা।সানায়াকে প্রথম যখন দেখেছিলো তখন মনে হয়েছিলো কোনো জীবন্ত পুতুল যেনো নড়াচড়া করছে।আজও আজরাহান এর তাই মনে হচ্ছে।তার একটি নয় দুটো জীবন্ত পুতুল।আজরাহান হালকা হাতে বেবির গাল ছুঁয়ে দেয়।তার মনে হচ্ছে এ যেনো তার হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন।তার ছোঁয়ায় যেনো ভেঙে না যায়।আজরাহান দেখে দুটো তুলোর বল যেনো শুয়ে আছে।তাদের আধখোলা চোখ যেনো কিছু বলছে।লাল লাল দুই ঠোঁট নেড়ে যেনো তাকে বাবা বলে ডাকছে।আজরাহান পাশে থাকা তার বাবা কে জড়িয়ে ধরে।
সানোয়ার আহমেদ প্রসন্ন গলায় বললেন—
“এইবার তুমি বুঝবে সন্তান বাবা মায়ের ওই ধন যার পরিমাপ পৃথিবীর কোনো গুপ্তধন করতে পারে না।”
সানোয়ার আহমেদ বুঝতে পারে আজরাহান এর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।তিনি ছেলেকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বললেন–
“বোকা ছেলে!আজ তো খুশির দিন।”
তারাফ দাঁত কেলিয়ে বললো—
“আরে খুশিতেও তো অশ্রুজল ঝরে বাবা!
সবাইর মুখে খুশির ফোয়ারা বইতে থাকে।
,
,
,
৫বছর পর,
কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে আটা মাখছে প্রহর।তার কোমর,গলা, নাকের অংশে জমেছে ঘাম।ভ্যাবসা গরম পড়েছে।আকাশ থম মেরে আছে।ধীরে ধীরে নিলাভ আকাশ কালো মেঘের ছায়াতলে আচ্ছাদিত হচ্ছে।
প্রহর তার কাজে ব্যস্ত।তার কোমরের উন্মুক্ত অংশে উষ্ণ স্পর্শে চকিতে আটা মাখা হাত দিয়ে কপালের সামনে পড়ে থাকা ছোট্ট চুলগুলো সরিয়ে তাকাতেই এক টানে তাকে বুকে নিয়ে নেয় আজরাহান।প্রহর এর ঘামার্ত শরীরের মিষ্টি গন্ধে নেশা ধরে যায় আজরাহান এর।সে তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় গুঁজে দেয় প্রহর এর গলায়।বাম হাতে আজরাহান এর বুকের কাছের পাঞ্জাবী খামচে ধরে প্রহর।আজরাহান এর বেপরোয়া ছোঁয়ায় শিরশির করে উঠে প্রহর এর দেহপিঞ্জর।অস্ফুটভাবে প্রহর বললো—
“রাহান ভাইয়া,ছাড়েন।কী করছেন!কেউ এসে পড়বে।”
“আসলে আসুক।আমার বউকে আমি একটু আদরও করতে পারবো না!তোকে এই অবস্থায় দেখলে একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।”
আজরাহান অনুভব করে ওর পাঞ্জাবীর পেছনের কারো হাতের টান পড়েছে।প্রহর কে ছেড়ে ধাতস্থ হয়ে পেছন ফিরে দেখে রিনী দাঁড়িয়ে।আজরাহান আর প্রহর এর মেয়ে প্রহরিনী যাকে সবাই ছোট্ট করে রিনী বলেই ডাকে।
রিনী কে কোলে তুলে নেয় আজরাহান।কোলে নিতে আজরাহান এর গলা জড়িয়ে ধরে ওর বুকের সাথে মিশে যায় রিনী।আজরাহান এর শরীরে ঘ্রাণ নিতে থাকে।
একমাস বয়স থেকেই অদ্ভুতভাবে আজরাহান এর গায়ের গন্ধ চিনে রিনী।এতো এতো কান্নার সময় কেউ থামাতে না পারলেও আজরাহান এর কোলে এসেই শান্ত হয় রিনী।অফিস ছুটির দিন সারাদিন রিনী আজরাহান এর কোলে উঠেই বসে থাকে।এমনকি ওয়াশরুমে পর্যন্ত যেতে পারে না সে রিনীর জন্য।সে কি কান্না রিনীর।রিনীর ঘুমের মধ্যেই আজরাহান কে অফিস যেতে হয়।কখনো কখনো তো সবাই মজা করে বলে রিনী কে প্রহর নয় আজরাহান জন্ম দিয়েছে।
আজরাহান অাহ্লাদী গলায় বললো—
“কী হয়েছে মামুনি?
রিনী আজরাহান এর বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ওর গালে চুমু খায়।আধো আধো গলায় বললো–
“তুমি মাম্মাই কে চুমু খেয়েছো!
আজরাহান রিনীর চোখে মুখে অসংখ্য চুমু খেয়ে গদগদ হয়ে বললো—
“এই যে আমার রিনী মামুনিকেও চুমু খেয়ে নিলাম।”
রিনী আবারো আজরাহান কে জড়িয়ে ওর বুকের উপর শুয়ে পড়ে।প্রহর ঠোঁট বাকিয়ে বললো—
“হিংসুটে মেয়ে কোথাকার!
আজরাহান একগাল হেসে বললো–
“থ্যাংকস।”
প্রহর ভ্রু কুঁচকে বললো–
“কেন?
” এই যে আমার কলিজাকে আমায় দিলি তাই।”
প্রহর ভেঙচি কাটে।ওদের সামনে বেলুন নিয়ে এসে দাঁড়ায় আবরাহান।রাহান এর হাতে বেলুন দেখে কপাল কুঁচকে নিচু হয়ে বসে আজরাহান।মৃদু গলায় জিঙ্গেস করলো—
“রাহান,বেলুন দিলো কে তোমাকে?
“জান আঙ্কেল।”
“জান!
“কেমন আছিস আজরাহান?
মারশিয়াদ এর গলার আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায় আজরাহান।রিনীকে নামাতে চাইলেও সে কোনোভাবেই নামবে না।মারশিয়াদ কিচেন রুমে ঢুকে সেভাবেই আলিঙ্গন করে আজরাহান এর সাথে।প্রহর উচ্ছ্বসিত গলায় বললো—
“জান ভাইয়া আপনি!
“কেমন আছেন রেড চিলি?
“ভালো।কখন এলেন আপনি?
“এইতো এখন।হ্যাপি অ্যানিভার্সিরি!
“থ্যাংকস।”
আজরাহান অবাক গলায় বললো—
“তুই এই সময় এইখানে?
মারশিয়াদ নম্র গলায় বললো—
“তোকে সারপ্রাইজ দিতে এলাম।”
কিচেন রুম থেকে বেরিয়ে দেখে হুলস্থুল কান্ড।মারশিয়াদ আর নুরাইসার মেয়ে নুরাজান,ইনশিরাহ আর আশফিক এর ছেলে আশফিন,সূর্যিতা আর আবরাহান সবগুলো মিলে পুরো বাড়ি তুলে ফেলছে।তাদের সাথে যোগ দিয়েছে সানায় আর তারাফ এর দুই বছরের ছেলে সারাফ।সেও তার ছোট ছোট হাত পা নাড়িয়ে নাচছে।কিন্তু এই সব থেকে আলাদা রিনী।রিনীর শুধু তার বাবাই কে প্রয়োজন।আজরাহান এর কোল থেকেই সে সব দেখে চলছে।শিহরণ আর নির্ধার ছেলে নিরণ এখন প্রায় এগারো প্লাস বয়স।তাই সে চুপ করে তা মায়ের পাশে বসে আছে।
আজ আজরাহান আর প্রহর এর বিয়ের নয় বছর পূর্ন হয়েছে।তাই ওদের না জানিয়েই ওদের জন্য সারপ্রাইজ এর আয়োজন করেছে মারশিয়াদ।মারশিয়াদ তার মাকেও সাথে করে নিয়ে এসেছে।তারা আর আমেরিকা ফিরে যাবে না।সবাই এখানেই থাকবে।
হৈ হুল্লোড়ে ভরে উঠে আজরাহান দের বাড়ি।
(বিঃদ্রঃ
অবশেষে শেষ হলো রাহান ভাইয়া আর তার প্রহরিণীর ভালোবাসার অধ্যায়।জানি না কেমন হয়েছে।আচ্ছা সে যাক।
কথা হলো মন সায়রের মাঝি নিয়ে।এই গল্পে আপনাদের প্রিয় দুটি চরিত্র আসবে।হয়তো কারো ভালো লাগবে কারো না।এই নিয়ে আর কথা হবে না।যার ইচ্ছে হয় পড়বেন নাহলে পড়বেন না।আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা পাঠকের পছন্দের চরিত্র ফিরিয়ে এনে বারবার কথা শুনেছি।আজকের পর যদি আমি লেখালেখিতে থাকি আর কখনো কোনো গল্পের চরিত্র দ্বিতীয় বার আসবে না আমার কোনো গল্পে।এক আপু বলেছে নিজের খুশি মতো লিখতে শান্তি পাবো।হ্যাঁ ধন্যবাদ।এখন থেকে তাই করবো।
মন সায়রের মাঝি পাঠকদের জন্য আমার শেষ চেষ্টা।তো এর দুই পার্ট লিখবো।যদি ভালো রেসপন্স তাই তাহলেই আগাবো নাহলে স্টপ।কারণ এইটা নিয়ে তেমন কোনো আশা নাই।আপনাদের ভালো লাগায় চলবে।যখনই মনে হবে ভালো লাগছে তখনই স্টপ করে দিবো।
হ্যাপি রিডিং )