অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১

0
8050

“হ্যা,হ্যা ধর্ষিতা।কোনো ধর্ষিতা মেয়ে আমার বাড়ির পুত্রবধূ হতে পারবেনা।”

কথাগুলো বলছেন একজন ষাট উর্ধ্বো প্রোঢ়া।বিয়ে বাড়ির উজ্জ্বলতা একটু আগেও ছিল গমগম।তা এখন নিষ্প্রান।তিনি আবার বললেন–

“এই মেয়েকে আমি আমার ছেলের বউ করবোনা।ছিঃ বিয়ের আসরে যে মেয়ে ধর্ষনের শিকার হয় তাকে কি করে বাড়ির বউ করবো??

উপস্থিত সবাই থম মেরে শুনছেন তার কথা।ধর্ষিতা মেয়েটিও সেখানেই বসে আছে।একটু আগে যে লাল শাড়ি পড়ে বধূ বেশে বসে ছিলো সে এখন কলঙ্কিত।চোখের কাজল লেপ্টে জানান দিচ্ছে তার সাথে হওয়া অন্যায়ের।ঠোঁটের লাল লিপস্টিক ছড়িয়ে আছে পুরো চিবুক জুড়ে।ব্লাউজের বিভিন্ন জায়গায় ছিড়ে আছে।শাড়ির আচল কিঞ্চিৎ বুকে ঢেকে বাকি টা বিছিয়ে আছে উঠোন জুড়ে।অক্ষি থেকে ঠান্ডা অশ্রু টুপটুপ করে পড়ছে।পাথর হয়ে বসে আছে সে।নাম তার আর্শিয়াত নাজাহ প্রহর।

অবাক করা বিষয় হলো ধর্ষকও দিব্যি সেখানে বসে আছে।বিয়ে বাড়ির ঠিক মাঝখানে একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে অনবরত সিগারেট টেনে যাচ্ছে।কোনো ধরনের কোনো কথার ভ্রুক্ষেপ নেই তার।হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে ছেলেটি বলে—

“ড্রামা কমপ্লিট??এখন আপনার এই ভুড়িওয়ালা শিম্পাঞ্জি কে এই মুহূর্তেই বের হয়ে যান।”

প্রোঢ়া টি চিৎকার করে বলে–
“বেয়াদব ছেলে,,বড়দের সাথে এভাবে কথা বলে??

“শিসসসস,আরেকটা কথা বললে এই যে আপনার শিম্পাঞ্জিটাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় দিয়ে আসবো।”

প্রোঢ়া টি চোখ বড় করে তাকিয়ে রয়েছে।

সাথে থাকা তার চল্লিশ উর্ধ্বো ছেলেটি বলল—
“মানে কি এইসবের।বিয়ের আসরে এইসব কি ধরনের কর্মকান্ড??

ছেলেটি লোকটির পেটে একটা গুতো মেরে বলে—
“কি খেয়ে পেট টা এমন বানিয়েছিস শিম্পাঞ্জি??
আচ্ছা বাদ দে।যা ইচ্ছা খা।এখন বের হ আমার বাড়ি থেকে।”

পিছন থেকে ছেলেটির মা কুহেলিকা বেগম চিৎকার করে বলে–

“আজরাহান,,,এইসব কি বলছিস তুই??কেনো করলি এই সর্বনাশ?আমার ছেলে হয়ে শেষে কিনা একটা রাস্তার মেয়েকে,,,

“আর একটা কথাও বলবেনা মা।আমি যা করেছি তা নিয়ে আমি একটুও অনুতপ্ত নই।”

আজরাহান ওই দুজনের দিকে আবার তাকিয়ে বলে–
“কি হলো বের হতে ইচ্ছে করছেনা নাকি এখান থেকে??
আর দু মিনিট দেরি করলে তোদের দুজনকে এখানেই গেড়ে রেখে দিবো।আর শিম্পাঞ্জির বিয়ের শখ সারাজীবনের জন্য মিটে যাবে।”

আজ প্রহর এর সাথে ইকরাম শিকদার এর বিয়ের কথা ছিল।ইকরাম এর আগেও দুটো বিয়ে করেছে।প্রথম স্ত্রী পাচঁ বছর পর জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।তার মৃত্যুর তিন মাস পর আবার বিয়ে করে।সে বউ একবছর পর তার ড্রাইভার এর সাথে পালিয়ে যায়।প্রথম পক্ষের স্ত্রী র থেকে তার দুটো মেয়ে আছে।এর পরেও তার মা তাকে বিয়ে করার জন্য অনেক বলেছেন।কিন্তু দু দুবার এই ঝামেলা পর তার বিয়ের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।কিন্তু প্রহর কে দেখার পর পৌরষসত্তার কামভাব চড়া হয়ে উঠেছে।যখনই ওকে দেখে দুর থেকেই যেনো গিলে খায়।ওর শরীরের প্রতিটি খাজ এমনভাবে দেখে যেনো এখনই হজম করে নেবে।

কিন্তু আজরাহান এর এই কান্ডে ওর বিয়ের আশায় গুড়ে বালি।সকল অপমান হজম করেও ইকরাম প্রহর কে হাতছাড়া করতে চায় না।কিন্তু আজরাহান এর কথায় মনে হচ্ছে ও কোনোভাবেই এ বিয়ে হতে দিবে না।তাই বাধ্য হয়ে তারা সেখান থেকে চলে যায়।

ওরা যেতেই আজরাহান দু হাতে তালি বাজিয়ে সবাইর দৃষ্টি আকর্ষন করে বলে—

“এখন এখানে যারা শিম্পাঞ্জির পক্ষ থেকে এই মজলিশে এসেছে তারা সসম্মানে যেতে পারেন।আর বেশি দেরি করলে কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে ভালো হবে না।”

বলেই হাতে রাখা সিগারেট থেকে একটান দিয়ে তার ধোয়া উড়িয়ে দেয় বাতাসে।

বিয়ে বাড়ির এক কোনো দাড়িয়ে আছেন সানোয়ার আহমেদ।নিজের ছেলের কাজে তাকে হতাশ হওয়া উচিত ছিলো।কিন্তু তাকে দেখে তা একদম ই মনে হচ্ছে না।বরং তার চেহারা নিরুত্তেজ।

পাশেই দাড়িয়েছিলো তার বড় ছেলে সামান আহমেদ।মায়ের কথা ছাড়া এক কদম আগেপিছে করেন না।তার এইসবে একদম মাথা ব্যথা নেই।তার এখন ঘুমের প্রয়োজন।বাড়ির ভিতরে গিয়ে এ রঙমঞ্চ থেকে মুক্তি নিলেন।

আজরান আবারো সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন—

“আচ্ছা,,এতো বড় ঘটনার পর পুলিশ আসবেনা তা কি করে হয়।তা এখানে কি কেউ নেই যে এ অনাথ মেয়েটার উপকার করতে পারেন??

কুহেলিকা খেকিয়ে উঠে বলে—
“এইসব কি শুরু করলি তুই??
কোনো পুলিশ আসবেনা এই বাড়িতে।
আর আপনার সবাই এখন যান।”

“আরে যাবে কেনো??বিয়ে তো এখনো বাকি।”

“বিয়ে,,,কার বিয়ে??

“কার আবার,,,আমার আর প্রহর এর।”

“চুপ কর।ওই মেয়েকে আমি কোনোদিনও আমার বাড়ির বউ করবো না।”

“মা,,তুমি ভুলে যাচ্ছো শি ইজ রেপড ভিক্টিম।আর রেপিষ্ট তোমার সামনেই দাড়িয়ে।”

“তুই চুপ কর।তুই কি ভেবেছিস এইসব তামাশা করলে ওই মেয়েকে আমি মেনে নেবো??

“না নেওয়ার কিছু নেই তো।ওকে তো এখন কেউ বিয়ে
করবে না।
আর এখানে যারা আছেন তার তা নিজের চোখে সব দেখেছেন।তাই সাক্ষীর ও অভাব হবে না।
কি বলেন আপনার??

বিয়ে বাড়ির উপস্থিত মেহমানদের মধ্য থেকে একজন বলল–
“ঠিক ই তো বলেছে আজরাহান।আপনার ছেলে মেয়েটার যে সর্বনাশ করলো এখন ওর কি হবে??

কুহেলিকা বলে–
“আমাদের বাড়ির মেয়ে আমরা দেখবো তা নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না।”

আজরাহান আবারও বলে—
“আরে তা কি করে হয়?হয় এখানে আজ বিয়ে হবে না হয় তোমার ছেলে জেলে যাবে।
হ্যালো গাইস,,আপনাদের কারো মোবাইলে কি ব্যালেন্স নেই?যদি না থাকে আমারটা নিন।আর জলদি পুলিশ কে কল করুন।”

কুহলিকা নিজের স্বামির কাছে গিয়ে বললেন–
“দেখলে,দেখলে তুমি ।তোমার ছেলে কি বলছে এইসব।ওই রাস্তার মেয়েটাকে নাকি ও বিয়ে করবে??

সানোয়ার ঠান্ডা কন্ঠে বললেন—
“ভুল কিছুতো বলেনি।যে অপরাধ সে করেছে তার জন্য তাকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে।”

কুহেলিকা বেগম শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে বিয়েতে রাজি হলেন।তার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে আজরাহান কে তিনি চোখে হারান।তাই ছেলেকে জেলে যাওয়ার হাত থেকে বাচাতে বিয়েতে সম্মতি দিলন।কিন্তু প্রহর কে তিনি ছাড়বেন না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন।

আজরাহান গিয়ে প্রহরের পাশে গিয়ে বসলো আসন পেতে।ওর আচলটা মাটি থেকে উঠিয়ে মাথায় দিয়ে দিলো।প্রহর এর চোখের পানি বন্ধ হওয়ার নাম নেই।আজরাহান ওর কানের কাছ গিয়ে বলল–

“চোখের পানি জমিয়ে রাখ,এরপর তো তোকে অনেক কাদঁতে হবে।ওয়েলকাম টু হেল,সুইটহার্ট।
আমাকে ছেড়ে ওই শিম্পাঞ্জি কে বিয়ে করতে চেয়েছিলি না।এবার দেখ আমি কি করি।”

কাজি সাহেব সেখানেই উপস্থিত ছিলো।বিয়ে বাড়ির হট্টগোলে বেশামাল প্রায়।এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেন নি।বিয়ের কনেকে তারই আপন চাচাতো ভাইয়ের হাতে ধর্ষিত হওয়া বিয়ের আসরে তারপর আবার বিয়ে!!!
সবার সম্মতি ক্রমে দ্রুতহাতে আজরাহান আর প্রহর এর বিয়ে হয়ে গেলো।
,
,
বিছানায় ঘুটিসুটি মেরে বসে আছে প্রহর।ভয় করছে প্রচুর।আজরাহান আজ ভীষন ক্ষেপে আছে।কি করবে ওর সাথে!!
দরজা খুলে ভিতরে আসে আজরাহান।প্রহর কে দেখে বলে–

“এখনো বসে আছিস কেনো?
এই হুতুম পেচার মতো মুখ টা ঠিক করে আয়।”

“কেনো করলেন আপনি এইরকম?
কেনো সবার সামনে আমাকে ছোট করলেন?
আমি তো ধর্ষিতা নই।”

“সে কৈফিয়ত আমি তোকে দিবো না।মুখের এই রঙ চোঙ ধুয়ে আয়।”

আজরাহান এর কোনো কথাই ওর কর্নগহ্বরে সাড়া দিলো না।

ও চিৎকার করে বলল–
“কি রে কথা কানে যায় না তোর,যা বলছি।
আর আজকের পর এইসব আটা ময়দা একদম মাখবি না মুখে।”

“কি করবেন মাখলে??
“এক চড় মেরে তোর বর্তমান দাঁতসহ ভবিষ্যৎ দাঁতগুলোও ফেলে দিবো।”

প্রহর একটা জামা নিয়ে ওয়াশরুমে যায়।শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখে আজরাহান বিছানায় বসে আছে।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে দেখছে প্রহর করে।এইরকম ভাবে ও আগেও প্রহর কে দেখেছে।
“বস এখানে।”

প্রহর আজরাহান এর পাশ ঘেষে বসে।ভেজা চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।শাওয়ার নেওয়াতে ওর শরীরের সেই অদ্ভুত ঘ্রাণ আজরাহান এর দম বন্ধ করে দিচ্ছে।ওকে একবার ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে আজরাহান এর।কিন্তু তা সে করবে না।
খাবারের প্লেট সামনে নিয়ে বলে–

“হা কর।খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বি।একদম রাত জাগবি না।”

“কেনো?আমার যখন ইচ্ছে তখন ঘুমাবো।”

“আরেক টা কথা বললে একদম সার্কাসে দিয়ে আসবো।তখন রাতদিন জেগে খেলা দেখাবি।”

আজরাহান প্রহর কে খাইয়ে দিচ্ছে।এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে প্রহর এর।খাওয়া শেষ হলে আজরাহান বলে–

শুয়ে পড়।আর চুল গুলো ছড়িয় দিস,তাহলে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে যাবে।চুল ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে তোর।”
প্রহর এই মানুষটাকে চেনে।খুব চেনে।কিন্তু আজও সে অজানা তার কাছে।
,
,
অন্ধকার ছাদের কার্নিশে দাড়িয়ে অনবরত সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে যাচ্ছে আজরাহান।অশান্ত মন কে শান্ত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে তাকায় আজরাহান।হাতে থাকা সিগারেটের বাকি অংশ নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দেয়।

“ভাবি,তুমি এতো রাতে এখানে??

“এই প্রশ্নটা যদি আমি তোমাকে করি??

“তুমিও ভাবি।”

“আজ তো তোমাদের ফুলসজ্জা।এখানে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করছো কেনো??

“ওর মতো একটা ফুল কে আমি অপবিত্র করতে পারবো না ভাবি।এমনে তেও মেয়েটা অনেক সহ্য করেছে।”

“ভুল বললে।তুমি ওর স্বামি।এইটা তোমার অধিকার।”

“আর একটু আগে বাহিরে যা হলো??

“আজরাহান,আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো কেনো করেছো এইসব।আর প্রহর তোমাকে ভালোবাসে।ও এতোটাও বাচ্চা নয় যে বুঝবে না কিছু।”
আজরাহান এক লম্বা নিঃশ্বাস নেয়।

“আচ্ছা,,যাও এখন।অনেক রাত হয়েছে।ভাইয়া তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।”

“তোমার ভাই করবে আমার জন্য অপেক্ষা??
সে তো আরো অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।”

“ভাইয়াটা কেমন যেনো বদলে গেলো।”

“তুমি বদলে যেও না।প্রহর কে সারাজীবন এভাবেই ভালোবেসে।মেয়েটার যে তুমি ছাড়া কেউ নেই।”

“আমি চেষ্টা করবো।ওকে আগলে রাখবো আমি।”

“ঘরে যাও।সবে তো বিয়ে হলো।ওকে সময় দাও।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নন্দিতা আজরাহান এর বড় ভাইয়ের স্ত্রী।কিন্তু তার সাথে সম্পর্কটা ভাই বোন এর থেকেও বেশি।আজরাহান কে ওর নিজের থেকেও বেশি জানে নন্দিতা।
,
,
,
ঘরে এসে দেখে প্রহর ঘুমে আচ্ছন্ন।মেয়টাকে ঘুমের ভিতর এতো মায়াবি লাগে।নরম পায়ে ওর পাশে এসে বসে আজরাহান।অবাধ্য চুলগুলো প্রহর এর গোলাপের মতো ঠোঁটের উপরে এলে রয়েছে।আজরাহান আস্তে করে তা সরিয়ে দেয়।

এই মেয়েটাকে ও কতো ভালোবাসে ও নিজেও জানেনা।আজ সে তার বিবাহিত স্ত্রী।তার উপর ওর সব অধিকার আছে।তাহলে কেনো এ দূরত্ব?
আজরাহান ধীরে ধীরে প্রহরের অধরের দিকে ঝুকে যায়।ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আচড়ে পরছে প্রহর এর চাঁদবদনে।পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় প্রহর।

“রাহান ভাইয়া আপনি??

আজরাহান সরে বসে।
“কেনো??তুই কি ভেবেছিলি ওই শিম্পাঞ্জি আসবে??
প্রহর ঘুম কাতুরে কন্ঠে বলে–

“আপনি ওনাকে শিম্পাঞ্জি কেনো বলেন??

“কেনো,,তোর গায়ে জ্বালা ধরে বুঝি??

“এইসব কি বলছেন??

“ওরনাটা গায়ে দে।”

“আপনি এদিকে তাকাবেন না।”

“তোর কি আমাকে অন্ধ মনে হয়??

প্রহর বিছানার ওপর থেকে ওরনা টা নিয়ে গায়ে জড়ায়।অদ্ভুত পুরুষ।নিজের স্ত্রী দিকে তাকাতেও তার দ্বিধা।

“পেট দেখেছিস ওর।আর দাঁত,ছিঃ।”

আজরাহান পিছনের দিকে হাত দিয়ে একটু ঝুকে আবার বলে–
“কি করে রাজি হলি ওই শিম্পাঞ্জি কে বিয়ে করতে??আমার কথা একবার ও ভাবলি না?

“আমি কি করবো,,ছোট মা ই তো,,,

“শুধু ছোট মার কথাই ভাবলি,আমার কথা ভাবলি না।তোকে ছাড়া আমি কি করে থাকতাম।”

প্রহর এর নেত্র ছলছল করে উঠে।এ কেমন অনভূতি।কি করতো প্রহর?আজরাহান এর মা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে শুধু প্রহর কে এ বাড়ি থেকে বিদায় করতে চান।তাই যত ধরনের অত্যাচার করা যায় করেছেন।শেষ পর্যন্ত অর্ধবুড়োর সাথে বিয়ে দিয়ে এ বাড়ি থেকে চিরতরে বিদায় করতে চেয়েছে।কিন্তু তার সে আশায় গুড়ে বালি দিলো আজরাহান।

প্রহর এর ভাবনার সুতো কাটে আজরাহান আচমকা কথায়—
“প্রহরিনী তুই আমারে পাগল করে দিলি রেএএএ।”

প্রহর হালকা হেসে উঠে।এই লোকটার কথায় অদ্ভুত মায়া আছে যা শত চেষ্টায়ও কাটাতে পারেনা।
ছোটবেলায় একবার আজরাহান ওকে প্রহরিনী বলেছিলো বলে ওর ছোট মা খুব মেরেছিলো প্রহর কে।কিন্তু কেনো মেরেছিলো তা সেদিন বুঝতে না পারলেও আজ বুঝতে পারছে।

আজরাহান ধীর কন্ঠে বলে–

“ঘুমা অনেক রাত হয়েছে।”

“আপনি ঘুমাবেন না??

“আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।”

আজরাহান উঠে বিছানার অপর পাশে গিয়ে প্রহর এর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।আজ ও শান্তি তে ঘুমাবে।কারন আজ ওর প্রহরিনী যে ওর পাশে।যাকে হারানোর ভয় এতো বছর ওকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে।

প্রহর পাশ ফিরে আজরাহান এর দিকে মুখ করে শোয়।আজ প্রথম সে তার রাহান ভাইয়া কে এতো কাছ থেকে দেখছে।ঠিক তার পাশে শুয়ে আছে।এই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য প্রতি রাতের তাহাজ্জুদের নামাযে ও শুধু উপর ওয়ালার কাছে কেদেছে।আজ সে তার ইচ্ছে পূরন করেছে।কিন্তু তবুও কেনো এ দূরত্ব?আজরাহান এর নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এসেছে।মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে।

প্রহর এখনো তার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটাকে দেখছে।আজরাহান এর শরীর থেকে সুগন্ধ ভেসে আসছে।গন্ধরাজ এর ঘ্রান।যা সিগারেটের গন্ধকেও হার মানিয়ে দেয়।যখন থেকে আজরাহান এর গায়ের গন্ধ ও বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই ওর সবচেয়ে প্রিয় ফুল গন্ধরাজ।
তার পাশের এই মানুষটাকেই আনমনেই প্রহর বলে উঠে–
“সত্যিই আপনি আমার ‘অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি’।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় প্রহর।

চলবে,,,
#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here