অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৫

0
3131

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৫
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

গাড়িতে বসে সে কখন থেকে হর্ণ বাজিয়ে যাচ্ছে মারশিয়াদ।সামনের গাড়ির কোনো হেলদোল নেই।সামনের গাড়িটির জন্য মারশিয়াদ এর পিছনেও অনেক গাড়ি দাড়িয়ে আছে।মারশিয়াদ বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে বের হয়।সামনের গাড়িটির দরজা নক করতেই বের হয়ে আসে লং স্লীভ ওয়ালা শার্ট, জিন্স প্যান্ট আর চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস পড়া একটি মেয়ে।মারশিয়াদ মেয়েটিকে চিনে।

“আপনি??

মেয়েটি গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দরজার উপরে বাম হাত রেখে এক পা হাটু ভেঙে গাড়ির সাথে ঘেষে দাড়ায়।চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে বলে–

“জ্বি আমি।”

“এখানে গাড়ি দাড় করানোর মানে?

“কেমন আছেন আপনি?

“এইটা আমার প্রশ্নের জবাব নয়।”

“আর এইটাও আমার প্রশ্নের জবাব নয়।”

“দেখুন মিস,,

মেয়েটা মাথা টা বাকিয়ে এক ঝাকা মেরে বলে–

“ইনশিরাহ।আপনি আমাকে শিরা বলেও ডাকতে পারেন”।

“হোয়াট রাবিশ??

ইনশিরাহ খলখলিয়ে হেসে উঠে।

“রাগলে যে আপনাকে এতো হট লাগে তাতো জানতাম না।”

“দেখুন মিস,,

“বললাম না ইনশিরাহ।”

“সে যাই হোক,,আপনার গাড়িটা সাইড করুন।পিছনে জ্যাম লেগে আছে।”

ইনশিরাহ মাথা টা অনেকখানি বাকিয়ে পিছনে তাকায়।

“তাতে আমার কি??

“আমার কি মানে!!রাস্তা টা তো পাবলিক।আপনার বংশগত সম্পত্তি নয়।”

ইনশিরাহ ঠোঁটযুগল কে হাঁসের ঠোঁটের মতো চ্যাপ্টা করে বলে–

“তা ঠিক।আসলে কি হয়েছে বলুন আমার গাড়ি টা না
বন্ধ হয়ে গেছে।
আমাকে একটু লিফ্ট দিবেন??

“লিফ্ট!!

“হুম।কেনো লিফ্ট কাকে বলে জানেন না??

“সেইটা আগে কেনো বলেন নি।শুধু শুধু সময় কেনো নষ্ট করলেন।চলুন।আপনার গাড়ি??

“আমি ড্রাইভার কে কল করেছি।সে এসে নিয়ে যাবে।”

“ওকে।”

ইনশিরাহ গাড়িতে এসে বসে।সামনের সিটে বসতেই মারশিয়াদ বলে—

“পিছনে গিয়ে বসুন।”

“মি.মারশিয়াদ আরজান,আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আপনি আমার ড্রাইভার নন।”

মারশিয়ার এক শ্বাস ছাড়ে।
গাড়ি চলতে শুরু করে।

“কোথায় যাবেন আপনি??

“আপনি যেখানে যাবেন।”

“মানে??

“মানে হলো আপনি যেখানে যাবেন সেখানে।”

তুমি যেখানে আমি সেখানে সে কি জানো না??
একই বাধনে বাধা দুজনে ছেড়ে যাবো না??

ক্যাচ করে ব্রেক কষে মারশিয়াদ।

“হোয়াট ইজ দিস??মানে কি এইসবের??

ইনশিরাহ মাথা হেলিয়ে এক হাতের উপর আরেক হাত রেখে ছোট্ট একটা আওয়াজ করে।তারপর একটা আঙুল উচু করে মারশিয়াদ এর সামনে নিয়ে বলে–

“দেখুন মি.মারশিয়াদ আরজান এখন যদি আপনি কোনো সিনক্রিয়েট করেন তাহলে আমি চিৎকার করে বলবো আপনি আমাকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়েছেন আর আপনি আমাকে রেফ করতে চান।”
মারশিয়াদ চোয়াল এর ভাজ স্পষ্ট করে বলে—-

“হোয়াট দ্যা হেল??
দেখুন মিস,,

“ইনশিরাহ।”

বলেই ইনশিরাহ হাত দিয়ে নিজের সামনের চুলগুলো ঝাড়া মেরে পিছনে সরায়।

“মিস ইনশিরাহ দেখুন আমার জরুরি কাজ আছে।আপনি কোথায় নামবেন বলুন আমি নামিয়ে দিচ্ছি।”

“আমি তো দেখতেই চাই,আপনি ই তো দিচ্ছেন না দেখতে।
আর আমি আপনার সাথেই যাবো।আপনি যেথায় আমিও সেথায়।”

বলেই এক চোখে টিপ্পনী কাটে।

“আমি আর্ট গ্যালারি তে যাবো।আপনি যাবেন??

“শিওর।হোয়াই নট??

বাধ্য হয়ে মারশিয়াদ এক্সসিলেটরে চাপ দেয়।এই মেয়েকে কোনো কিছু বলাই বৃথা।
,
,
,
গাড়ির স্টেয়ারিং এর উপর হাত রেখে তবলা বাজানোর মতো আঙুল চালাচ্ছে শিহরণ।গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ধুপ করে বসে নির্ধা।জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে।হাত নাড়ানো বন্ধ করে নির্ধার দিকে তাকায় শিহরণ।

“আপনার সময় হলো তাহলে??

“জ্বি।কেমন আছেন আপনি??

“ভালো।আটা ময়দা মাখতে এতো সময় লাগে??

“এই একদম বাজে বকবেন না।কে বলল আমি আটা ময়দা মাখি??

“মেয়ারা মাখে তাই বললাম।”

“সব দোষ মেয়েদের।এতোই যখন সমস্যা আমি যাচ্ছি।”
শিহরণ ওর হাত ধরতে গেলেই ও ঝাড়া দিয়ে ওঠে।

“এই একদম ছোবেন না।বিয়ের আগে নো ধরাধরি।”

“এই এক সমস্যা।তোমরা পিচ্চিরা রোমান্স বুঝো না।”

“ও তাই বুঝি।ধরাধরি,ঢলাঢলি,চুমাচুমি এগুলো বুঝি রোমান্স ডক্টর সাহেব??

“দিলেতো রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে??

“আপনি কি থামবেন??

“কেমন আছো তুমি??

“আমার খবর নিতে হবে না।আপনার কলিজার খবর নিন।কি যেনো নাম,,হা মারশিয়াদ আরজান।”

“কথাটা ভুল বলোনি।”

শিহরন পকেট থেকে দুটো টিকেট বের করে দেয়।

“এই নিন।”

“কি এগুলো??

“মারশিয়াদ এর এক্সিবিশনের ভি আই পি পাস।”

“সত্যি!!

“জ্বি,সত্যি।”

“ধন্যবাদ।”

“তা দুটো পাস কেনো??আশফিক ও যাবে নাকি??

“নাহ।ভাইয়ার এইসব এ ইন্টারেস্ট নাই।ওই যে আমার বেস্টু প্রহর,ওকে নিয়ে যাবো।”

“ও আচ্ছা।তা কেমন আছে মিস প্রহর??

“ভালো।
আচ্ছা আমি তাহলে আসি।”

“আসি মানে??
“আরে ভাইয়া কে বলেছি প্রহর এর সাথে লাইব্রেরিতে যাই।
প্রহর এর কাজিন আর ভাইয়া চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড।যদি একবার ভাইয়া শুনে যে আমি ওর সাথে নেই তাহলে কি হবে জানেন??

“তুমি কি বাচ্চা নাকি??গত সপ্তাহে তো আঠারো শেষ করলে।”

“তো??তাতে কি??

“ওকে যাও।”

নির্ধা গাড়ি থেকে নেমে শিহরণ এর পাশ দিকে এসে দাড়ায়। ইশারায় ওকে ডাকে।মুখটা কাছে আনতেই ওর গালে একটা চুমু খেয়ে দে ছুট।

শিহরণ হেসে উঠে।নির্ধার এইসব কর্মকান্ডেই ও বারবার মেয়েটার প্রেমে পড়ে।
,
,
,
নিজের ঘরে বসে মেয়েকে খাওয়াচ্ছে নন্দিতা।প্রহর এসে দাড়ায়।

“কিরে দাড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয়।”

সূর্যির গাল টেনে বলে–

“কেমন আছো মিষ্টি?

“ভালো।তুমি কেমন আছো প্রহরিনী??

নন্দিতা মেয়ের গালে আলতো চড় মেরে বলে–
“এই তোকে না বলেছি ওকে আনটি ডাকতে।”

“কেনো ডাকবো??চাচ্চুও তো প্রহরিনী ডাকে।”

“তুই আর তোর চাচ্চু এক??

“থাক না ভাবী।ওর যা খুশি বলুক।”

বিছানায় একটা প্যাকেট দেখে তা হাতে নেয় প্রহর।খুলে দেখে তাতে একটা থ্রি পিস।

“বাহ,,এইটা তো বেশ সুন্দর!কার ভাবী??

“তোর পছন্দ হয়েছে??

“না মানে,,

“এতো মানে মানে করার কি।ভালো লাগলে নিয়ে যা।”

“সত্যি??

হঠাৎ করে নুরাইসা এসে খপ করে প্যাকেট টা ছিনিয়ে নেয়।

“আমার সবকিছু তেই তোর এতো নজর কেনো??

“নুরাইসা,এভাবে বলছিস কেনো তুই??

“তুমি চুপ থাকো আপু। এই তোর সমস্যা কি আমার সবকিছুতেই কেনো তুই হাত দিস??

প্রহর ছলছল চোখে তাকিয়ে রয়।

“আমি বুঝতে পারি নি আপু এইটা তোমার।”

“তা বুঝবি কেনো?আমার সবকিছুই তো তোর চাই।আমার আজরাহান কেও কেড়ে নিয়েছিস আমার কাছ থেকে।”

প্রহর ওর অধর প্রসারিত করে বলে–
“ভুল বললে।রাহান ভাইয়া কখনই তোমার ছিল না।তুমি শুধু শুধু তার পিছনে ঘুরঘুর করেছো।”

প্রহর এর কথায় নুরাইসা রেগে চড় মারতে গেলে হাত
ধরে আজরাহান।

“তোমার সাহস কি করে হলো প্রহর এর গায়ে হাত তোলার??

“তোমার এই পাতানো বউ এর সাহস কি করে হয় আমাকে এইসব বলার??

“প্রহর ভুল কিছু বলেনি।”

“আজরাহান,,,

“আর আজকের পর আর কখনো ওর দিকে হাত উঠলে আমি ভুলে যাবো তুমি ভাবির বোন।”

আজরাহান প্রহর এর হাত টেনে নিয়ে যায়।

নুরাইসা রাগে কাপতে থাকে।ইচ্ছে হচ্ছে এখনি প্রহর কে খুন করে ফেলে।হাতের প্যাকেটা নিয়ে রান্না ঘরে যায়।নন্দিতা মেয়েকে রেখে ওর পিছনে যায়।
দেখে নুরাইসা জামাটাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।

“এইটা তুই কি করলি??

“এইটাতে ওই প্রহর এর স্পর্শ লেগে আছে।আমি এইটা কখনই পরবো না।”

“ও এই কথা।তাহলে আজরাহান কেও ভুলে যা।”

“মানে??

“আজরাহান প্রহর এর স্বামী।ওদের বিয়ে হয়েছে আজ কতোদিন হলো।এক ঘরে এক বিছানায় ই তো থাকে দুজন।”

“কি বলতে চাও তুমি?

“তুই এতোটা বোকা না যে আমি কি বলছি বুঝতে
পারছিস না। ভালো চাস তো আজরাহান কে ভুলে যা।”
,
,
,
এক পা উচু করে দাড়িয়ে আছে প্রহর।তার রাহান ভাইয়ার দেওয়া শাস্তি।

“রাহান ভাইয়া,,আর কখনো করবো না।”

“তুই আমার কথা শুনিস না।”

“আমি কি জানি নাকি যে ওইটা নুরাইসা আপুর।”

“এই এই তোর এতো লোভ কেনো রে??

“আমার পা ব্যথা করছে।”

“নামা পা।কেনো ধরলি ওর জামা?কেনো ও তোকে এতোগুলো কথা বলল??

“আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি।”

“তুই কেনো বুঝিস না তোকে কেউ কিছু বললে আমার সহ্য হয় না।আর এই বাড়ির সবাই তো তোর শুভাকাঙ্ক্ষী নয়।আজকের পর কারো কিছুতে হাত দিবি না।কিছু লাগলে আমাকে বলবি।”

“হুম।”

আজরাহান বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

“রাহান ভাইয়া একটা কথা বলি??

“বল।”

“আপনি আমাকে ভালোবাসেন না??

“নাহ।”

প্রহর এইবার ঝরঝর করে কেদে দেয়।
“তাহলে কেনো বিয়ে করলেন আমাকে??

“কেনো ওই শিম্পাঞ্জি কে মনে ধরেছে তোর??

“কেনো করেন আপনি এমন??
কি হয় একটু ভালোবাসলে আমাকে?

আজরাহান উঠে বসে।প্রহর এর হাত টেনে ওকে ওর সামনে বসায় আর বলে—

“কখনো কি বুঝবে তুমি,ভালোবাসি কতোটা??
কতটা বাসলে ভালো,চিনবে তুমি আমায় ততটা।

প্রহর এর মুখচ্ছবি এক অজানা ঔজ্জ্বল্যে ভরে উঠে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here