মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:০২
পরদিন সকালে,,
“ইশা,এই ইশা উঠ।কিরে আজকে কি ভার্সিটি যাবি না?”
“উফ,আম্মু আর একটু ঘুমাতে দাও না..”
“না,অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে।উঠ না মা আমার।পরে তোর ভার্সিটি যেতে দেরি হয়ে গেলে তো আমাকে বলবি আম্মু কেন ডেকে দিলেনা, তাড়াতাড়ি উঠ। ”
“উফ,উঠছি তো।তোমার জালায় একটু শান্তিতে ঘুমাইতেও পারি না..”
এই বলে ইশা ঘুমো ঘুমো চোখে ঢুলতে ঢুলতে ওয়াশ রুমে চলে যায়। আর ইশার আম্মু রান্নাঘর এর দিকে যায়।
তারপর ইশা ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলে এসে বসে। ওখানে ইশার আব্বু ছিলো।ইশা ওর আব্বুকে বলে,
“গুড মর্নিং আব্বু”
ইশার আব্বু বলে,
“গুড মর্নিং সোনা,আয় বস”
ওদের কথার মধ্যেই ইশার মা রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে সাজায়, ইশা ওর আম্মুকে একটু সাহায্য করে।
তারপর ইশা আর ওর আব্বু আম্মু খেতে খেতে কিছুক্ষন গল্প করে তারপর খাবার শেষে ইশা উঠে পড়ে।তখন ওর বাবা বলে,
“সাবধানে যাবি”
“হমম..তুমি চিন্তা করো না আমি সাবধানেই যাবো”
বলেই ইশা বেড়িয়ে পড়ে ভার্সিটির জন্য।
.
ভার্সিটিতে…
ইশা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে খুশি মনে সামনের দিকে যায়।ও হাঁটছে ,তখনই কেউ বলে ওঠে,
“এই যে,নীল ড্রেস”
ইশা তখন পেছনে তাকায়,ওখানে কিছু ছেলে মেয়ে ছিলো, ইশা বুঝতে পারে যে সবাই ওর সিনিয়র। কয়েকটা মেয়ের ড্রেস এ অশালীনতার ছাপ।ইশা যখন এগুলো ভাবছিল তখন ওখান থেকে একটা ছেলে বলে ওঠে,
“হেই ইউ,কাম হেয়ার”
ইশা এক পা এক পা করে সামনে এগোয়।ওদের সামনে যাওয়ার পর ওই ছেলেটা বলে,
“নিউ স্টুডেন্ট?”
ইশা ভয়ে ভয়ে বলে, “জি”
“সিনিয়রদের সম্মান করতে জানো না?”
ইশা অবাক হয়ে বলে,
“সরি ভাইয়া,আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না।”
এটা বলার পর ওই ছেলে মেয়ে গুলা জোরে হেসে দেয়।ইশা এবার খেয়াল করে যে ওখানে ও একা না আরেকটা মেয়ে আছে,গতকাল ক্লাসে যে মেয়েটা ওর পাশে বসেছিল ও আছে।কি জেনো নাম মেয়েটার,হ্যাঁ রাইমা।মেয়েটা খুব ভয় পেয়ে আছে।
ইশা এবার বুঝতে পারে যে এখানে কি হচ্ছে আর এটা বুঝতে পেরেও ভয় পেয়ে যায়।তবুও মনে সাহস সঞ্চয় করে বলে,
“ভাইয়া আমাকে কেন ডেকেছেন জানতে পারি?”
“নাম কি?”
ওই ছেলে মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একটা ছেলে বলে ওঠে,কিন্তু এই ছেলেটাকে দেখা যাচ্ছে না।তখন সামনে থেকে একটা ছেলে সরে যায় আর ইশা ওই ছেলেটাকে দেখতে পায়।
বাইকের উপর পায়ের উপর পা তুলে একটা ছেলে শুয়ে আছে,এক হাতে সিগারেট।দেখতে একদম হিরোদের মত।
গায়ের রঙ ধবধবে সাদা,,সাদা টি-শার্ট এর উপর কালো শার্ট।শার্টের বোতামগুলো খোলা,অনেক সিল্কি চুল। কিছু চুল কপালের উপর এসে পড়েছে।
ছেলেটা বাইক থেকে নেমে ইশার সামনে এসে দাঁড়ায়,হাতে এখনো সিগারেট।তা দেখে ইশা মুখ কুঁচকিয়ে ফেলে কারণ ছোট বেলা থেকেই ও সিগারেটের গন্ধ সয্য করতে পারে না।
ইশার মুখ কুচকিয়ে ফেলা দেখে ছেলেটা একটা বাঁকা।হাসি দে।আর বলে,
“নাম কি?”
ইশা স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
“সিদ্রাতুল ইশা”
তখন ছেলেটা বলে, “তুমি জানো না সিনিয়রদের সম্মান দিতে হয়?আমাদের সামনে দিয়ে এভাবে চলে যাচ্ছো কেনো।নিউ স্টুডেন্ট দের সিনিয়রদের কথা মানতে হয় জানো না?”
“সরি,আমাকে কেনো ডেকেছেন?”
“এটা খাও”
ইশা অবাক চোখে ছেলেটার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা ওকে সিগারেট খেতে বলছে।ও এটা দেখে রেগে যায়।আর বলে,
“দেখুন ভাইয়া আপনারা রেগিং করছেন ঠিক আছে কিন্ত এইসব কি।আমি এটা খেতে পারবো না।”
এটা শুনে আরিয়ান খুব রেগে যায়।আজ পর্যন্ত ওর মুখের ওপর কেউ কথা বলছে না আর এই পুচকে মেয়ে কিনা ওর সাথে এইভাবে কথা বলছে?
আরিয়ান চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুপ ওফ ইন্ডাস্ট্রির ওনার কবির চৌধুরীর একমাত্র ছেলে।আরিয়ানের কোনো ভাই-বোন নেই।মা বাবার খুব আদরের,এই আদরে আদরে এখন বাদর হয়ে গেছে।ভার্সিটির সব মেয়ের ক্রাশ।অনার্স ফাইনাল ইয়ার এর স্টুডেন্ট।
আরিয়ান ইশাকে ধমক দিয়ে বলে,
“তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছো?”
ধমক শুনে ইশা একটু ভয় পেয়ে যায়,আর বলে,
“সরি ভাইয়া আপনার সাথে এইভাবে কথা বলার জন্য।আপনি অন্য কিছু করতে বলেন কিন্ত আমি এটা খেতে পারবো না”
“তোমাকে তো এটা খেতেই হবে”
এবার রাইমা বলে উঠে,
“ওরা যা করতে বলছে তা মেনে নাও,না হলে এই ভার্সিটিতে টিকতে পারবেনা”
ইশা এবার রেগে যায় আর বলে,
“ওরা বললেই হবে নাকি,আমি নিজের যোগ্যতায় এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।তুমি চলো এখান থেকে”
বলেই রাইমার হাত ধরে চলে যেতে নে কিন্ত হাতে টান পড়ায় ইশা থেমে যায়।পেছনে ফিরে দেখে আরিয়ান ওর হাত ধরে আছে।ইশা খুব রেগে বলে,
“কি সমস্যা অসভ্যের মতো আমার হাত ধরেছেন কেনো?”
এটা শুনে আরিয়ান রেগে এক টান দিয়ে ইশাকে ওর কাছে নিয়ে আসে আর বলে,
“এতো তেজ!কাকে তেজ দেখাও তুমি?আমাকে?এ আরিয়ান চৌধুরিকে?”
বলেই জোর করে ইশার মুখে সিগারেট ঢুকানোর চেষ্টা করে।আর ইশা ছাড়া পাবার চেষ্টা করে।এর মধ্যেই এখানে অনেক স্টুডেন্ট এসে ভীর করেছে।সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।যাকে বলে বিনা টিকিটে মুভি দেখা।
ইশা এবার সয্য করতে না পেরে ঠাস করে আরিয়ান কে একটা চড় মারে।চড় মেরে ও নিজেই অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে ফেলে।পুরো ভার্সিটি যেনো স্তব্ধ।মেয়েরা তো রেগে,ইশাকে যেনো এখানেই মেরে দে ওদের ক্রাশকে চড় মারা!আর আরিয়ান রক্তচক্ষু নিয়ে ইশার দিকে তাকায়।আরিয়ানের বন্ধু রা ওকে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু আরিয়ান হাত দিয়ে ওদের বাধা দেয়।
রাইমা এসে ইশাকে বলে,
“কি করলা তুমি এটা?তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলো”
বলেই ইশাকে টেনে নিয়ে যায়।ইশা একবার পেছনে ফিরে আরিয়ান কে দেখে ও নিজেই ভয় পেয়ে যায়। আরিয়ানের চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে।
ক্লাসে এসে রাইমা বলে,
“ইশা,তুমি এটা কি করলা?জানো উনি কে?ওনার বাবার কতো পাওয়ার।উনি যদি চায় এখনই তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারে”
“তো আমি কি করতাম উনি আমার সাথে কেমন করলো তুমি দেখলে না?”
“হম..আচ্ছা এইসব বাদ দাও,যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে”
ইশা মাথানিচু করে বলে,, “হুম”
রাইমা ইশার মন ঠিক করার জন্য একটু হেসে বলে,
“বাই দা ওয়ে আমি রাইমা নুজাইফা।তুমি ইশা,রাইট?”
“হুম,সিদ্রাতুল ইশা”
রাইমা এক হাত বাড়িয়ে বলে,”ফ্রেন্ড?”
ইশাও হেসে হাত বাড়িয়ে বলে,”ওকে”
তারপর ক্লাসে টিচার আসলে ওরা ক্লাসে মনোযোগ দে।
.
আর এইদিকে আরিয়ান জোরে গাড়ি চালাচ্ছে।ও খুব রেগে আছে।আজ পর্যন্ত ওর মা বাবা ওর গায়ে কখনো হাত তুলেনি আর এ মেয়ে কিনা! আরিয়ান কখনো মেয়েদের সাথে এরকম করেনা,কিন্ত ইশা ওর মুখের উপর কথা বলছে আবার ওকে অসভ্য বলায় আরিয়ান খুব রেগে গিয়েছিল। আরিয়ান ড্রাইভ করে আর বলে,
“কাজটা তুমি ঠিক করলে না মিস সিদ্রাতুল ইশা”
ক্লাস শেষ হওয়ার পর ইশা বাহিরে এসে দেখে আরিয়ান বা ওর বন্ধুরা কেউ নেই,ও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তাড়াতাড়ি রিকশায় উঠে বাড়ির জন্য রওনা দে।বাড়িতে গিয়ে আর এইসব ঝামেলার কথা মা বাবাকে বলে না।ওরা শুধু শুধু টেনশন করবে তাই।
চলবে..