মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :০৪
ইশা ক্লাসে গিয়ে দেখে আজকে রাইমা এখনো আসেনি,ও গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে পড়ে।
কিছুক্ষণ পর রাইমা আসে। আর দুজন কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্যার চলে আসে তাই কথা বলা বন্ধ করে ক্লাসে মনোযোগ দে।
আর এদিকে, আরিয়ান ভার্সিটিতে এসে ওর বন্ধুদের কাছে যায়।তখনই জারা খুশি বলে ওঠে,
“বেবি,কালকে ওই মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে, আর কি শাস্তি দিয়েছে ? ”
আরিয়ান বিরক্তি মুখ নিয়ে বলে,
“জারা তোকে আমি বলেছিনা, আমাকে এসব বলে ডাকবি না।”
জারা একটু মন খারাপ নিয়ে বলে, “কেনো বেবি?”
এটা শুনে আরিয়ানের সব বন্ধুরা হেসে দে।আর আরিয়ান রাগি চোখে ওদের দিকে তাকায়। তারপর জারাকে বলে,
“দেখ আমি শুধু তোর বন্ধু।আর কখনো আমাকে এসব বললে আমি তোর সাথে বন্ধুত্বই রাখবো না।”
জারা কাঁদো কাঁদো মুখ দিয়ে,আরিয়ানের একটু কাছে গিয়ে বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি আরিয়ান”
আরিয়ান জারা থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে,
“কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না। আর আমার থেকে দূরে থাকবে”
তখন তিথি বলে, “আরিয়ান তো ঠিকই বলছে জারা,তুই সব সময় ওর সাথে এভাবে চিপকে থাকিস কেন?”
এটা শুনে জারা রেগে তিথিকে কিছু বলতে যাবে,ওদের কথার মাঝে,ওদের ভার্সিটির কালাম স্যার আসে আর বলে,
“এই যে,আরিয়ান তোমরা সবাই তো দেখছি একসাথেই আছো ভালোই হয়েছে। শোনো যেটা বলতে এসেছিলাম সবসময়ের মতো।এবারের নবীনবরণ উৎসবেও কিন্তু সব দায়িত্ব তোমাদের।”
আরিয়ান বলে,
“জি স্যার আর দুইদিন পর তো নবীনবরণ উৎসব অনেক কাজ”
“আমি জানি তোমরা সব ঠিকঠাক ভাবে সামলাতে পারবে, তোমাদের উপর আমাদের সবার ভরসা আছে তাইতো তোমাদেরকেই এটার দায়িত্ব দিয়েছি। কাজ শুরু করে দাও ”
এটা বলে কালাম স্যার ওখান থেকে চলে যায়।
তখন আরিয়ান তিথিকে বলে,
“তিথি তুই সব ক্লাসে গিয়ে কে কিসে অংশগ্রহণ করতে চায়,মানে নাচ গান।ওদের নাম লিখে একটা লিস্ট তৈরি কর।
আর এই যে জারা,নিশি,সাথী তোরা তিথিকে হেল্প করবি”
তারপর রিহানদের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোরা চল আমার সাথে”
এদিকে রাইমা ক্লাসে শুধু শুধু ইশাকে চিমটি দিচ্ছে,এবার ইশা বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি সমস্যা তোর,এরকম করছিস কেনো?”
“আরে কালকে কি হয়েছে বল না”
“তোকে না আমি কালকে বললাম।আবার শুনতে চাস,আমাকে দিয়ে ওই খাটাশটা কাজ করালো এইগুলো আরো শুনতে চাস?শুনবিই তো,তোকে তো আর শাস্তি দিছে না,দিলে বুঝতি।সর এখান থেকে।আমি আর তোর সাথে বসবোই না”
“আরে বইন আমি এভাবে বলতে চাই নি,আসলে কালকে তুই হাঁপাতে হাঁপাতে কি বলছিস কিছু বুঝনি।আচ্ছা আমার ক্রাশ কি তোকে বেশি শাস্তি দিছে?”
এটা শুনে ইশা রাইমার দিকের চোখ ছোট ছোট করে তাকায়,তারপর রেগে কিছু বলতে যাবে।তখনই স্যার বলে ওঠে,
“এই যে,হলুদ ড্রেস দাঁড়াও”
ইশা আজকে হলুদ রঙ্গের একটা জামা পরে আসছে,তাই ও স্যার এর দিকে তাকায়।তখনই স্যার ইশাকে দেখিয়ে বলে,
“হ্যা তুমিই আর তোমার পাশের জন,দাঁড়াও”
ইশা রাইমার দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে দাঁড়ায় আর রাইমাও ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ায়।স্যার বলে,
“তোমরা তখন থেকে কি কথা বলে যাচ্ছো? ক্লাসের টাইমে কিসের এতো কথা,আজকে তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করবে।”
বলে স্যার পড়া শুরু করে।
ইশা রাইমাকে বলে,
“সব হয়েছে তোর জন্য,বেয়াদব মেয়ে”
রাইমা ইশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান,রিহান আর ওদের বন্ধুরা ইশাদের ক্লাসে আসে।
ইশা আর রাইমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরিয়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তারপর স্যারকে জিগ্যেস করাতে স্যার বলে,
“ওরা ক্লাস চলাকালীন কথা বলছিলো তাই দাঁড় করিয়ে রেখেছি”
এটা শুনে আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দে আর এদিকে ইশা লজ্জায় শেষ আর মনে মনে রাইমাকে ইচ্ছা মতো বকা দিচ্ছে।
তখন স্যার বলে, “তোমরা এখন বসতে পারো”
এটা বলার সাথে সাথে রাইমা বসে পড়ে,তারপর ইশাও বসে।
স্যার আরিয়ান দের বলে, “তোমরা কি কিছু বলবে?”
আরিয়ান বলে “জি” স্যার। তারপর সবার উদ্দ্যেশে বলে,
“তোমরা তো জানোই আর দুইদিন পর আমাদের ভার্সিটিতে নবীন বরণ উৎসব। সেখানে ফাস্ট ইয়ারের মেয়েরা সবাই লাল শাড়ি আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আসা বাধ্যতামূলক। আশা করি তোমরা সবাই নিয়ম মানবে।
আর কেউ যদি কোন কিছুতে অংশগ্রহণ করতে চাও তোমাদের সিনিয়র কয়েকজন আপু আসবে ওদের কাছে নাম দেবে।আশা করি সবাই বুঝতে পারছো”
এই বলে আরিয়ান ইশার দিকে এক নজর তাকিয়ে স্যারের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে,স্যারকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আর এদিকে রাইমা নবীন বরণ এর কথা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠে,আর ইশা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।
তারপর ক্লাস শেষে ইশা বেড়িয়ে পড়ে আর রাইমা দৌড়ে ইশার কাছে আসে আর বলে,
“ইশা,এই ইশা,বান্ধুপি আমার রাগ করিস না,দেখ আমি কানে ধরছি,সরি বইনা”
ইশা রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “কই কানে ধরসোস?”
রাইমা ইশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“এখানে কি সত্যি সত্যি কানে ধরতে হবে?”
এটা শুনে ইশা রাইমার দিকে একটা রাগি দৃষ্টি তে তাকায়।তখম রাইমা ওর ব্যাগ থেকে একটা চিপস বের করে বলে,
“এই দেখ,পিলো চিপস।এটা তো তোর ফেভারিট, নে তোর জন্য”
“আমাকে ঘুস দিচ্ছিস?”
“ছি ছি ঘুস দিবো কেনো তুই আমার বান্ধুপি,তোকে তো আমি দিতেই পারি”
“আচ্ছা হয়েছে হয়েছে, এটা যখন দিচ্ছোস তো আমার।রাগ শেষ,তুই কিন্তু আমার দুর্বলতাটা বুঝে গেছোস”
“হি হি হি…..”
“হয়েছে আর ভেটকাইতে হবে না,চল”
ওরা ভার্সিটি থেকে বের হতে যাবে তখন আরিয়ান ইশাকে ডাকে,
“এই যে মিস ইশা,কোথায় যাচ্ছেন?”
ইশা পেছনে ফিরে বলে, “বাসায়”
“বাসায় পরে যাবেন,এখন আমার সাথে চলেন”
“কোথায়?”
“আপনি কি শাস্তির কথা ভুলে গেছেন?”
এবার ইশা একটু ভয় পেয়ে যায়।তখন আরিয়ান বলে, “চলো”
রাইমাও ইশার সাথে আসতে নিলে কোথা থেকে রিহান চলে আসে আর রাইমাকে বলে,
“আপনি কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম?আপনার ও কি শাস্তি পেতে ইচ্ছা করে নাকি? আপনি আমার সাথে চলেন”
এর মধ্যেই আরিয়ান ইশাকে নিয়ে চলে যায়।রাইমা সেদিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনার সাথে কেনো যাবো?আজব,এমনিতেই আপনার বন্ধুর জালায় আমার বান্ধবীর জীবনটা তেজপাতা হয়ে গিয়েছে। আবার আপনি এসে জুটেছেন”
বলেই রাইমা চলে যায় আর রিহান অসহায় দৃষ্টি তে রাইমার চলে যাওয়ার দিকে তাকায়।
.
আর এদিকে আরিয়ান যেখানে স্টেজ সাজানোর কাজ চলছে ওখানে ইশাকে আনে আর বলে,
“তোমার কাজ হলো এই ফুল গুলা সুন্দর করে লাগানো”
ইশা অবাক হয়ে বলে,
“মানে কি,আমি এগুলো করবো?”
“তো এখানে কি আর কেউ আছে নাকি,তোমাকেই বলছি। কাজ যতো দেরিতে শেষ করবে বাসায় যেতে তত লেট হবে। সো,শুরু করো”
এটা বলে,আরিয়ান একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে।আর ইশাও কোন উপায় না পেয়ে কাজ শুরু করে দেয়।আর আরিয়ান বসে বসে ইশার কাজ দেখে,কাজ দেখে বললে ভুল হবে ও আসলে ইশাকে দেখছে।ইশা গায়ের রঙ ধবধবে সাদা না,উজ্জ্বল শ্যামলা,চুলগুলো কোমর পর্যন্ত বেনি করা।চোখে কাজল,এই কাজল এর জন্য বোধায় ওকে আরো সুন্দর লাগছে।
আরিয়ান যখন ইশাকে স্ক্যান করছিল তখনই ওর বন্ধুরা এসে হাজির হয়।জারা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
“ঠিক হয়েছে”
তিথি বিরক্তি নিয়ে বলে,
“আরিয়ান এটা কি ঠিক করছি?মেয়েটাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস কেন ?”
“এটা তো কিছুই না তুই দেখ ওর সাথে আমি আর কি কি করি,ও আমাকে চড় মেরেছে,এর শাস্তি তো ওকে পেতেই হবে”
তিথি অসহায় দৃষ্টিতে আরিয়ান এর দিকে তাকায়,ও জানে আরিয়ানকে কিছু বলে লাভ নেই।
কিছু ফুল অনেক উপরে লাগাতে হবে ইশা চেয়ারে উঠেছে কিন্তু তবুও নাগাল পাচ্ছে না তাই চেয়ার এর উপর আর একটা ছোট্টু টেবিল রেখে ওটার উপরে উঠে ফুল লাগাচ্ছিল হঠাৎ চেয়ারটা নড়ে ওঠে। ইশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আরিয়ান ওর বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো,তখন হঠাৎ দেখে ইশা পড়ে যাচ্ছে ও দৌড়ে গিয়ে ইশা কে ধরে।
আর এদিকে ইশা তো ভয়ে,আজকে ও শেষ কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগে কেউ একজন ওকে ধরে ফেলে,ও ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ইশা এখন আরিয়ানের কোলে আর আরিয়ান ইশার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকে।আর এইদিকে ইশা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আরিয়ানের গলা জরিয়ে ধরে।
আরিয়ান এর বন্ধুরা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে আর জারা তো রেগে শেষ।রিহান আর দেরি না করে পকেট থেকে ফোন বের করে ওদের একটা ছবি তুলে নে।
ইশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে ও আরিয়ান এর কোলে,ও তাড়াতাড়ি কোল থেকে নেমে পড়ে এদিক ওদিক তাকায় আর আরিয়ান এবার স্বাভাবিক হয়ে ইশাকে বলে,
“তোমার আর কাজ করতে হবে না।তুমি এবার আসতে পারো”
ইশা আর দেরি না করে,তাড়াতাড়ি ওখান থেকে বেড়িয়ে পরে,ছি কি লজ্জা!ওকে কিনা আরিয়ানের কোলে পরতে হলো।ইশশশশ..
আর আরিয়ানও কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসে।তিথি আর রিহানরা দুইজন এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কি থেকে কি হয়ে গেলো ওর বুঝতে পারছে না…!
চলবে…