মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ২৯
বাস স্টেশনে এসে রিক্সা থেকে নেমে ইশা আর ওর মা কাউন্টারের দিকে যায়।অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিল।নির্দিষ্ট সময় বাস আসলে ইশা ওর মাৈর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে,
“আসছি আম্মু!”
ইশার মা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“সাবধানে যাস”
ইশা মিষ্টি হেসে বাসে উঠে জানালার পাশের সিটে বসে। ইশার মা বাইরে দাঁড়িয়ে বাসে বসে থাকা নিজের মেয়েকে দেখছে। কিছুক্ষণ পর বাস ছাড়ার সময় হলে ইশা ওর মাকে হাত দিয়ে টাটা দে।ইশার মাও মুচকি হেসে হাত দিয়ে বিদায় জানায়।
বাস চলতে শুরু করে, ইশার পাশে একটা ২৫/২৬ বছরের মেয়ে বসেছে, কোলে একটা ৩ বছরের বাচ্চা মেয়ে।বাচ্চাটা খুব কিউট! ইশার ইচ্ছা করছে বাচ্চাটাকে আদর করতে।কিন্তু এভাবে অচেনা একটা বাচ্চাকে ধরলে যদি মহিলাটা সন্দেহ করবে।তাই ইশা নিজের ইচ্ছাটাকে দমন করে রাখে।
ইশা বাইরের দিকে চোখ দে।ওর আরিয়ানের কথা মনে পড়ছে। এই দুইদিন আরিয়ানকে খুব মিস করবে!! আরিয়ান যতই ইশাকে অপমান করুক জ্বালাক তবু আরিয়ানকে দেখলেই ইশার শান্তি লাগে! কিন্তু দুইদিন আরিয়ানকে দেখবেনা। ইশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বাচ্চাটার দিকে তাকায়,বাচ্চাটা ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!
.
আরিয়ান সেই আগের জায়গায় বসে আছে।পাশে ওর বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু আরিয়ানের মনোযোগ গেটের দিকে।আরিয়ান প্রতিদিন সকাল ইশার জন্য অপেক্ষা করে!যদিও মনকে বুঝায় যে ইশাকে অপমান করার জন্য ইশার কাছে যায় কিন্তু আসলে কি শুধু অপমান করার জন্য!
আরিয়ান কেনো ইশার জন্য অপেক্ষা করে সেটা ও নিজেও জানেনা!আরিয়ান বসে আছে তখন জারা এসে বলে,
“বেবি চলো আজকে ঘুরতে যাবো”
আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে, “আমি যাবো না,,তুই যা”
জারা আরিয়ানের হাত ধরে বলে,
“বেবি তোমার কি হয়েছে? তুমি তো ঠিক হয়ে গিয়েছিলে এখন আবার তুই করে বলছো কেন?”
“আহ জারা বিরক্ত করিস না তো,ভাল লাগছে না”
জারা একটু রেগে বলে, ” আমি তোমাকে বিরক্ত করি ? ”
আরিয়ান জারার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলে,
“তুই যাবি?”
আরিয়ানের রাগ দেখে জারা একটু দমে যায়।ও আরিয়ানকে রাগাতে চায় না তাই একটা ভেংচি কেটে হেলতে-দুলতে চলে যায়।
আরিয়ান ঘড়ির দিকে তাকায়। দশটা বেজে গেছে! ইশা এখনো আসেনি কেন?ইশার তো 9 টায় ক্লাস। প্রতিদিন 8:40 এর মধ্যে চলে আসে।আজকে আসলো না কেন, অসুস্থ নাকি!!
আরিয়ান রিহানকে বলে, “রিহান রাইমা ভার্সিটিতে এসেছে?”
রিহান অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিহান বুঝতে পারছেনা আরিয়ান কেন রাইমার কথা জিজ্ঞেস করছে! রিহানের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে আরিয়ান বলে,
“কিরে বল”
রিহান বলে, “হ্যাঁ এসেছে,আমার সাথে দেখা হয়েছে।কেনো?”
” ইশাকে দেখেছিস?”
রিহান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“কেনো আজকে ওকে অপমান করিসনি বলে এখনো শান্তি হচ্ছে না, তাই না? এবার অন্তত মেয়েটাকে শান্তি দে প্লিজ.. ”
আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে, “তোকে এত কথা বলতে বলি নি, ইশা কে দেখেছিস কিনা সেটা বল”
“নাহ ইশাকে তো দেখিনি”
“রাইমাকে কল দে, জিজ্ঞেস কর ইশা কোথায়?”
রিহান এবারও অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায় তারপর বলে,
“এখন তো ওদের ক্লাস চলছে, এখন কি করে কল দেবো?”
আরিয়ান ভাবে ঠিকই তো এখন তোদের ক্লাসের টাইম।কিন্তু আজকে ইশা আসলো না কেনো?আরিয়ানের কেমন অস্থির অস্থির লাগছে!
.
রাইমা একা একা গালে হাত দিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে।ওর কান্না পাচ্ছে!ইশা যখন বলেছে ভার্সিটিতে আসবেনা তখন এত খারাপ লাগেনি কিন্তু এখন ইশাকে খুব মিস করছে।ইশা থাকলে এখন কতো গল্প করা যেত।
রাইমার ভাবনার মাঝে কেউ ওর সামনে চুটকি বাজায়। রাইমা চোখ তুলে দেখিয়ে আরিয়ান আর রিহান দাঁড়িয়ে আছে।রাইমা রিহান দেখে একটু মিষ্টি হাসে, রিহান ও রাইমাকে দেখে হাসে। আরিয়ান ওদের মিষ্টি হাসির মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশের মধ্যে দিয়েই বলে,
“ইশা কোথায়?”
রাইমা রিহান থেকে চোখ সরিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়। তারপর একটু রাগির স্বরে বলে,
“কেন আজকে ওকে অপমান করতে পারেননি বলে ভালো লাগছে না?”
আরিয়ান রেগে যায় কিন্তু নিজেকে একটু শান্ত করে বলে,
“ত্যাড়া ত্যাড়া কথা রাখো,এখন বলো ইশা কোথায়?”
রাইমা চোখমুখ শক্ত করে বলে, ” জানিনা”
“ইশা তোমার ফ্রেন্ড আর তুমি জানো না ইশা কোথায়?”
রাইমা ভাবলেশহীন ভাবে বলে, “না!”
আরিয়ান রিহানের দিকে তাকালে রিহান রাইমার পাশে বসে বলে, ” রাইমা ইশা কোথায় বলে দাও না”
রাইমা রাগি দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকালে রিহান থতমত খেয়ে বলে, “আরে বলে দাও না,,না হলে আরিয়ান আজকে আমাকে ছাড়বেনা”
রাইমা মুখ বাঁকিয়ে বলে, “ইশা আজকে আসেনি”
আরিয়ান অস্থির হয়ে বলে, ” কেনো?অসুস্থ? কি হয়েছে ইশার??”
রাইমা অবাক হয়ে আরিয়ানের অস্থিরতা দেখছে। ইশা আসেনি বলে আরিয়ান এতে কি আসে যায়?আরিয়ান তাড়া দিয়ে বলে,
“বলো না ওর কি হয়েছে?”
রাইমা বলে, ” কিছু হয়নি, ও সুস্থ আছে”
“তাহলে আসলো না কেন?”
“ইশা ঢাকায় নেই”
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে, ” ঢাকায় নেই! কোথায় গিয়েছে?”
রাইমা বিরক্তি নিয়ে বলে, “আপনার এত কিছু জেনে কি লাভ, আপনি এসব জানতে চাচ্ছেন কেনো?”
“আমার কি লাভ সেটা তোমার দেখতে হবে না। রিহান তোর গার্লফ্রেন্ডকে বল ইশা কোথায় বলতে?”
রিহান রাইমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। রিহান কোনদিকে যাবে বুঝতে পারছে না।একদিকে গার্লফ্রেন্ড আর একদিকে বন্ধু!রাইমা রিহানের দৃষ্টি বুঝতে পেরে বলে,
“ইশা কুমিল্লা গিয়েছে, দুই দিন থাকবে ভার্সিটিতে আসবেনা। আর কিছু জানার আছে?”
আরিয়ান তাড়াতাড়ি করে বলে, ” কুমিল্লা? কেনো?”
রাইমা চোখ দুটো ছোট করে বলে,
“কেন মানে?ও কি বেড়াতে যেতে পারে না? আমার তো মনে হয় ও গিয়েছ ভালোই হয়েছে। কিছুদিন আপনার এই জ্বালা সহ্য করতে হবে না,, মন ফ্রেশ থাকবে।
আরিয়ান একটু হেসে রাইমাকে বলে,
“থ্যাংকস,ইশার খবর দেওয়ার জন্য ”
তারপর আরিয়ান চলে যায়।রিহান রাইমার পাশে বসে ওরা কথা বলতে থাকে।
আর এদিকে আরিয়ান হাঁটতে হাঁটতে নিজে নিজে বলে,
“ইশা কুমিল্লা কেনো গেল?দুদিন থাকবে! দুদিন ওকে জ্বালাতে পারবো না।ওহ শিট..!!”
.
ইশা কখন থেকে উসখুস করছে বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার জন্য। এবার ও থাকতেনা পেরে বলে দে,
“আপু আমি কি একটু ওকে কোলে নিতে পারি?”
মেয়েটা সন্দেহের দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকায় এতে ইশা একটু থতমত খেয়ে যায়। ইশার অবস্থা দেখে মেয়েটা হেসে বলে,
“নাও,,কোনো সমস্যা নেই।আমি কখন থেকে দেখছি তুমি ওর দিকে তাকিয়ে আছো।বাচ্চা খুব ভালবাসো তাই না?”
ইশা উৎফুল্ল হয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিতে নিতে বলে,
“হুম খুবব…ওর নাম কি?”
“মানহা”
“মানহা?ওয়াও কি কিউট নেইম!”
মেয়েটা কিছু বলে না শুধু হাসে। আর ইশা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।গুলোমুলো গাল ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে।ইশা বাচ্চাটার সাথে একটা ছবিও তোলে। অবাক কান্ড বাচ্চাটা ইশার কোলে একটুও কান্না করে না।মনে হয় যেন ইশাকে চিনে!
কুমিল্লায় বাস থামলেই ইশা বাস থেকে নেমে পড়ে।তারপর লাস্ট বারের মতো বাচ্চাটাকে আদর করে দে।বাচ্চাটার মা ইশার গালে হাত রেখে বলে,
“তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে”
ইশা হেসে বলে, ” তুমিও অাপু আর তোমার বেবিটাও”
মেয়েটা বাচ্চাটাকে বলে, “মানহা,,আন্টিকে বাই বলো”
বাচ্চাটা ইশাকে হাত দিয়ে টা টা দে।ইশাও হেসে টা টা দে। তারপর ওই মেয়েটা বাচ্চাটা নিয়ে চলে যায়।
ইশা এদিক ওদিক তাকিয়ে নাজমুল আঙ্কেলকে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ দূরে নাজমুল আঙ্কেলের মত একটা লোক দেখতে পায়, ইশা সেদিকে এগিয়ে গেলে নাজমুল আঙ্কেল ইশাকে দেখে বলে,
“আরে এটা কি আমাদের ইশা নাকি? কত বড় হয়ে গেছিস!”
ইশা একটু হেসে বলে,
“হ্যাঁ আঙ্কেল আমি তোমাদের ইশা। কেমন আছো?”
নাজমুল আঙ্কেল ইশার হাত থেকে ব্যাগ নিতে নিতে বলে, “হুম ভালো।তোর মা-বাবা কেমন আছে?”
“সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে”
“বাসায় চল, তোর আন্টি তো তোর জন্য সকাল থেকে রান্না করছে”
” কি??আন্টি না অসুস্থ এখন এসবের কি দরকার ছিলো!”
“আরে তুই এতদিন পরে এসেছিস আর তোকে একটু আদর যত্ন করব না?”
ইশা কিছু বলেনা খিলখিল করে হেসে ওঠে।রিক্সায় উঠে ইশা চারপাশ দেখতে থাকে।কুমিল্লা শহরটা ওর চেনা।এখানে ছোট থেকে বড় হয়েছে।যদিও এখানে ইশার খুব বেশি বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন কেউ নেই। তবুও কুমিল্লায় একটা মায়া আছে আসলেই মন ভালো হয়ে যায় আর ঢাকায় সেই অচেনা শহরে গিয়ে একটা ছেলেকে বিশ্বাস করে আজকে এত কষ্ট!
ঢাকায় গিয়ে ওই জীবনটাই পাল্টে গিয়েছে..!
চলবে….