মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:৩০
“আন্টি আর খাবো না প্লিজ…”
“না না আর একটু খা”
“ও আঙ্কেল দেখোনা,আমার পেটে একটুও জায়গা নেই।কি করে এতো গুলা খাবো!”
নাজমুল আঙ্কেল হেসে বলে, “আরে ইশা খাও তোমাকে আর কবে পাবো ঠিক নেই।আজকে ভালো করে খেয়ে নাও”
ফাতেমা আন্টি বলে, “হ্যাঁ তুই তো আজকে চলেই যাবি,আজকে আমার সব কথা শুনতে হবে”
ইশা হেসে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে”
আজকে তিনদিন হলো ইশা কুমিল্লা এসেছে।যদিও কথা ছিল দুইদিন থাকার কিন্তু ফাতেমা আন্টি ইশাকে পেয়ে আর ছাড়ছে না। অনেক কষ্টে ইশা আজকে রাজি করিয়েছে ভার্সিটির পড়াশোনার কথা বলে।ইশা বলেছে ভার্সিটি বন্ধ হলে আবার আসবে তাই উনি রাজি হয়েছে।
ইশার তিনদিন খুব ভালোই কেটেছে। আন্টির বাসায় আসার পর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেছে। এ তিন দিনে ওদের সাথে প্রতিদিন কথা হতো ভিডিও কলে। তারপর আবার ফাতেমা আন্টি আর নাজমুল আঙ্কেলের সাথে খুব ভালোই সময় কাটেছে।
রাইমার সাথেও কথা হয়েছে। রাইমা ইশাকে আরিয়ান যে ওকে খুঁজেছে সেটা বলেনি।এমনি ভার্সিটির পড়াশোনার কথা হতো।
এত খুশির মাঝেও আরিয়ানকে খুব মিস করেছে! আরিয়ানের থেকে দূরে এসে মনে হচ্ছে যেন আরিয়ানকে ছাড়া থাকতে পারবে না!ভালোবাসায় এত কষ্ট কেন?
এখন দুপুর দুইটা,,
ইশা লাঞ্চ করছে।ফাতেমা আন্টি কিছুক্ষণ পরপর ওর প্লেটে এটা ওটা দিচ্ছে। আজকে বিকেলে ইশা চলে যাবে।ফাতেমা আন্টি খাবার খেতে খেতে বলে,
“সব ঠিকভাবে নিয়েছিস তো আর আচারের বৈয়াম গুলো?”
ইশা খাবার খেতে খেতে বলে, ” হ্যাঁ সব নিয়েছি।আর আচারগুলো?আমি তো ভাবতেই পারিনি তুমি আমার জন্য আমার ফেভারিট আচার এতগুলো বানাবে,থ্যাংকু থ্যাংকু থ্যাংকু”
“থ্যাংক ইউ বলছিস কেনো আমি তোর মা না?”
ইশা হেসে বলে, “হুম তাইতো তোমাকে এতো ভালোবাসি”
তারপর হাসির মজার মধ্যে দিয়ে ওদের খাওয়া শেষ করে।
তিনটায় বাস, ইশা খাবার শেষ করে রেডি হয়ে নে।বাইরে এসে দেখে ফাতেমা আন্টি দাঁড়িয়ে আছে। ইশা আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি কান্না করছো? তুমি কান্না করলে আমি যাবো কিভাবে?
ফাতেমা আন্টি চোখ মুছতে মুছতে বলে,
” আরে না, কান্না করছি না। সাবধানে যাবি”
“হ্যাঁ আসছি,ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রাখবে”
তারপর আন্টির গালে চুমু দিয়ে ইশা নাজমুল আঙ্কেলের সাথে বেরিয়ে পড়ে।ফাতেমা আন্টি ছলছল চোখে ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।ইশাকে ওনি বড্ড বেশি ভালোবাসে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নাজমুল আঙ্কেল বলে,
“তোর আন্টি কি দিয়েছে ব্যাগে এতো ভারী কেনো?”
ইশা হেসে বলে, “আর বলো না,আন্টি তো পারলে সব খাবার দিয়ে দে। আচার দিয়েছে তারপর অনেকগুলো পিঠা দিয়েছে। তাই ভারী হয়ে আছে”
.
এদিকে আরিয়ান খুশিমনে ভার্সিটিতে আসে।দুদিন শেষ! তার মানে আজকে ইশা ভার্সিটিতে আসবে। আজকে ইশাকে দেখতে পাবে।দুদিন ইশাকে দেখতে না পেয়ে আরিয়ানের খুব কষ্ট হয়। প্রথম ভাবে ইশাকে জ্বালাতে না পেরে হয়তো ওর ভালো লাগছে না কিন্তু দুইদিনে বুঝতে পারে,ভালোবাসার নাটক করতে গিয়ে আরিয়ান হয়তো সত্যি সত্যি ইশাকে ভালোবেসে ফেলেছে!!
আরিয়ান ভার্সিটিতে ইশাকে খুঁজতে থাকে কিন্তু পায় না!আরিয়ান অবাক হয় ইশা কি আজকেও আসেনি?
ক্লাসে শেষ হলে আরিয়ান রাইমাকে ডাকে।রাইমা পিছনে তাকিয়ে আরিয়ানকে দেখে আরিয়ানের কাছে যায় তারপর বলে,
“কিছু বলবেন?”
“ইশা আজকে আসেনি?”
“না..”
রাইমাকে থামিয়ে দিয়ে আরিয়ান অস্থির হয়ে বলে,
“কিন্তু কেনো?ওর তো দুই দিন থাকার কথা ছিল!”
রাইমা হাত কচলাতে কচলাতে বলে, “আসলে ভাইয়া আমিও জানিনা।ওর সাথে আজকে কথা হয়নি”
আরিয়ান আনমনে বলে, ” ওহ আচ্ছা তুমি যাও”
রাইমা চলে যায়।আরিয়ান ইশাকে বকতে থাকে।ইশা ওকে কষ্ট দিচ্ছে কেনো!ইশা তো মনে হয় ভালোই আছে।আরিয়ান নিজে নিজে বলে,
“বেয়াদব মেয়ে একটা। আমাকে না বলে কুমিল্লায় গিয়েছে এখন আসার নাম নেই।একবার আসুক ওর খবর আছে!
.
“আম্মু…..”
ইশা বাস থেকে নেমে দেখে একটু দূরে ওর মা দাঁড়িয়ে আছে। ইশা গিয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে।ইশার মা হেসে বলে,
“কুমিল্লায় কেমন কাটলো?”
ইশা হেসে বলে, “খুব ভালো আম্মু।অনেক মজা হয়েছে”
ইশার মা হেসে বলে, “আচ্ছা চল”
তারপর ইশার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে উনি ব্যাগের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।মায়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে ইশা হেসে দেয়।তারপর ফাতেমা আন্টি যে ওকে এত্ত এত্ত পিঠা,আচার দিয়েছে এগুলো বলে।
রিকশায় বসে ইশার মা বলে,
“ফাতেমা আপা কেমন আছে আর নাজমুল ভাই?”
“হ্যাঁ ওরা সবাই ভালো আছে।ফাতেমা আন্টি তো আমাকে ছাড়তেই চায়নি, অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি।বলেছি আবার যাবো”
“ফাতেমা আপা তোকে খুব ভালবাসে”
” হুমমম…আব্বু কেমন আছে?প্রতিদিন ঠিকমত ওষুধ খেয়েছে তো?”
“হ্যাঁ খেয়েছে তুই তো প্রতিদিন কল করে বলতি!”
ইশা হাসে,তারপর কুমিল্লার কথা বলতে থাকে। একসময় ওরা বাসায় পৌঁছে যায়। ইশা বাসায় গিয়ে বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে যায় ফ্রেশ হতে। অনেক ক্লান্ত লাগছে।
এখন বিকেল, দুপুর তিনটা বাজে বাসে উঠেছে। এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে!ইশা গোসল করে এসে চুলগুলো বালিশে মেলে দিয়ে,বিছানায় শুয়ে পড়ে। ওর খুব ক্লান্ত লাগছে।
সন্ধ্যাবেলায় ইশার মা ওর রুমে এসে দেখে ইশা ঘুমোচ্ছে।হয়তো ক্লান্ত তাই ওনি ইশাকে না ডেকে।দরজা ভিড়িয়ে চলে যায়।
রাত আটটার দিকে ইশার ঘুম ভাঙ্গে। ও ঘুম থেকে উঠে চারদিকে অন্ধকার দেখে অবাক হয়ে যায়।তারপর ঘড়ি দেখে বুঝতে পারে রাত আটটা বাজে। ইশা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো ভাবে কাঠি দিয়ে বেঁধে রুম থেকে বের হয়। ড্রইংরুমে ওর বাবা টিভি দেখছে আর মা স্কুলের খাতা দেখছে।ইশা গিয়ে সোফায় ওর মায়ের পাশে বসে বলে,
“এতো রাত হয়ে গিয়েছে কিন্তু আমাকে ডাক দিলে না কেনো?”
ইশার মা বলে, “তুই ক্লান্ত ছিলি, ঘুমোচ্ছিস তাই আর ডাকিনি। কিছু খাবি?”
ইশা বলে, “না,,একেবারে ডিনার করবো”
ইশার বাবা বলে, “কালকে ভার্সিটি যাবি?”
” হ্যাঁ আব্বু যাবো, তিন দিন হয়ে গিয়েছে ভার্সিটি যাই না আর বন্ধ করতে চাই না”
” হুম.. তো কুমিল্লায় কেমন লাগলো?”
ইশা উৎফুল্ল হয়ে ওর বাবার সাথে কুমিল্লার গল্প করতে থাকে। কুমিল্লা থেকে আসার পর একটু কথা বলে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,তাই কোন গল্প করা হয়নি। এখন ইশা গল্পের আসর পেতে বসে।কথা বলতে বলতে ওর মায়ের সাথে কিছু খাতা দেখছে।
অনেকক্ষণ কথা বলে রাত দশটায় ওরা ডিনার করে। সন্ধ্যাবেলা ঘুমানোর কারণে ইশার আর ঘুম আসছে না।এত রাতে মা ছাদে যেতে দিবে না তাই ইশা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।কালকে আরিয়ানকে দেখতে পাবে!ইশা ভাবে, আচ্ছা আরিয়ান কি ওকে মিস করেছে?তারপর আবার তাচ্ছিল্য হেসে ভাবে, আরিয়ান কেন ওকে মিস করবে!আরিয়ান তো ওকে ভালোই বাসে না।
ইশা ঢাকায় এসেছে রাইমা কে এখনো জানানো হয়নি। ইশা রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে রাইমার অনেকগুলো মিসকল।আজকে সকালে রাইমা সাথে কথা হয়নি তারপর দুপুরে আসার জন্য রওনা দিলো আর ফোন ধরা হয়নি।ইশা একবার রাইমাকে কল দিতে গিয়ে আবার কি যেন ভেবে রেখে দে। কালকে একবারে ভার্সিটিতে কথা হবে।
ইশা শুয়ে শুয়ে ওর ফোনের গ্যালারি দেখছে। আরিয়ানের কয়েকটা ছবি!ইশার ফোনে আরিয়ানের আর ওর অনেক ছবি ছিলো কিন্তু ইশা সব ডিলিট করে দিয়েছে।এগুলো হয়তো ভুলে থেকে গিয়েছিল! ইশা ছবিগুলো ডিলিট করতে গিয়ে আবার কি যেন ভেবে রেখে দে।আজকে ঘুম আসছে না, ছবিগুলো দেখেই ইশা রাত কাটিয়ে দিতে পারবে!
আরিয়ান রুমে পায়চারি করছে। তিনদিন! আজকে তিনদিন ইশাকে দেখতে পায় না!আরিয়ানের ভেতরটা কেমন অস্থির লাগছে।সেটা শুধু ও বুঝতে পারছে।ফোন হাত নে একবারে ইশাকে কল দেবে বলে কিন্তু ইশাকে কল দিতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে।এতকিছুর পরও কিভাবে..?
অনেক ভেবেচিন্তে ইশার নাম্বারে কল দে কিন্তু নাম্বার বারবার বিজি আছে বলছে!আচ্ছা ইশা কি ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছে?হবে হয়তো..!!
আরিয়ান নিজে নিজে বলে,
“ইশা কোথায় তুমি? আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেনো? প্লিজ ফিরে এসো তাড়াতাড়ি!”
আরিয়ান খাটে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপটা অন করে। প্রথমেই ইশার একটা হাস্যোজ্জ্বল মুখের ছবি ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠে! ওদের যখন রিলেশন ছিলো তখন আরিয়ান ল্যাপটপ,মোবাইলের ওয়ালপেপারে ইশার ছবি দিয়েছিল।ইশাকে দেখানোর জন্য যে ও ইশাকে কতো ভালোবাসে! কিন্তু পরে আর ছবিগুলো চেঞ্জ করা হয়নি।এখনো রয়ে গিয়েছে!
আরিয়ান একে একে ওদের আগের ছবিগুলো দেখতে থাকে।আরিয়ান ইশাকে খুব মিস করছে।খুব মানে খুববব..!
.
আজকে ইশা খুব খুশি, তিনদিন পর ভার্সিটি যাবে।মনে হচ্ছে কত দিন যায় না! ইশা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে কোনরকমে নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়।
ভার্সিটিতে এসে আগে আরিয়ান ও ওর বন্ধুরা যেখানে আড্ডা দে সেখানে চোখ যায়। কিন্তু কেউ নেই! ইশার একটু মন খারাপ হয়। তারপরও ক্লাসের দিয়ে যায়।
ক্লাসে গিয়ে দেখে রাইমা বসে আছে।ইশা পেছন থেকে গিয়ে রাইমার চোখ ধরে।রাইমা ইশার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
“ইশা..!!”
ইশা রাইমার চোখ ছেড়ে রাইমার সামনে বসতে বসতে বলে,
“কি করে বুঝলি?”
“কেন জানি মনে হল তুই!এতদিনে আসার সময় হলো? আর আসলি কেন কুমিল্লায় থাকতি!”
ইশা একটু হাসি দিয়ে বলে,
“আর বলিস না দুদিন থাকার কথা ছিল কিন্তু ফাতেমা আন্টি ছাড়তে চাইলো না।একদিনে তো বেশি থেকেছি,তাতে কি এমন ক্ষতি হয়েছে?”
রাইমা মনে মনে বলে,
“তোর তো কিছু হয়নি আর এদিকে আরিয়ান ভাইয়া তো তোর কথা জিগ্যেস করতে করতে আমাকে জ্বালিয়ে ফেলেছে!”
চলবে…