মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:৩৩
“আন্টি,আই’ম সরি।ঐদিন যা হয়েছে তাতে ইশার কোনো দোষ ছিলনা,সব আমার দোষ।আমি…”
আরিয়ান কে থামিয়ে দিয়ে ইশার মা বলে,
“আমি সব জানি।যদিও প্রথমে আমি ইশাকে বিশ্বাস করিনি, কিন্তু পরে মনে হয়েছে ইশাই ঠিক বলেছে।আর আজকে সিউর হয়ে গেলাম”
আরিয়ান মাথা নীচু করে বলে,
“আমি জানি আমি ভুল করেছি। আসলে কেউ কখনো আমার গায়ে হাত তোলেনি।এমনকি আমার বাবা-মা ও না।ইশা ভার্সিটিতে সবার সামনে আমাকে চড় মেরেছিল। হ্যাঁ আমি জানি আমি ভুল করেছিলাম তাই ও মেরেছে, তবু আমি এটা মানতে পারিনি। তাই ওর সাথে এরকম একটা কাজ করেছি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমি কত বড় ভুল করেছি।আমি ইশার কাছে ক্ষমা চেয়েছি কিন্তু ইশা আমাকে ক্ষমা করেনি!”
“তুমি কি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য? ”
আরিয়ান মাথা তুলে অসহায় চোখে ইশার মার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না আন্টি?”
“তুমি ইশার সাথে অন্যায় করেছো, ইশা যদি তোমাকে ক্ষমা করে এখানে আমার কিছু বলার নেই”
“কিন্তু আন্টি ইশা আমাকে ক্ষমা করতে চাইছে না। আপনি বললে ও ঠিক শুনবে প্লিজ…”
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরিয়ান আবার বলে,
“আন্টি আমি ইশাকে বিয়ে করতে চাই ”
ইশার মা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।আরিয়ান বলে,
“জি আন্টি,,আমি তো এখন ফাইনাল ইয়ারে।অনার্স শেষ হলেই মাস্টার্সের পাশাপাশি বাবার অফিসে জয়েন করবো।ইশাকে খাওয়া,পরার যোগ্যতা আমার আছে”
ইশার মা ভাবছে এই ছেলে বিয়ে পর্যন্ত চলে গিয়েছে! উনি অবাক হয়ে বলে,
“তুমি কি বলছো নিজে বুঝতে পারছো?”
“জি আন্টি আমি সব বুঝতে পারছি।আমি ইশার সাথে আর প্রেম করতে চাই না, একেবারে ওকে বিয়ে করবো”
“কিন্তু আমার মনে হয় ইশা তোমাকে মেনে নেবে না!”
” আন্টি আপনি বললে…”
আরিয়ান কে থামিয়ে দিয়ে ইশার মা বলে,
“আরিয়ান তুমি ইশার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছো।একটা মেয়ের কাছে তার সম্মান কতটা মূল্যবান সেটা শুধু একটা মেয়েই বোঝে আর তুমি ইশাকে এত অপমান করেছো!আমার মনে হয় ইশা তোমাকে ক্ষমা করবে না।আর আমিও চাইনা ইশা তোমাকে ক্ষমা করুক”
আরিয়ান কাঁদো কাঁদো হয়ে কিছু বলতে যাবে তখন উনি আবার বলে,
” তবে হ্যাঁ ইশা যদি তোমাকে ক্ষমা করে এতে আমার কোন আপত্তি নেই।আমরা কি এবার যেতে পারি?আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে”
আরিয়ান কিছু বলে না।একটু হেসে গাড়ি স্টার্ট দে।পথে আর কোন কথা হয়না।আরিয়ান বুঝতে পারে ইশা ওকে ক্ষমা না করলে ওদের সম্পর্কটা ঠিক হবে না। তবে এটা ভেবে খুশি হয়ে যে ইশার মা ওকে বুঝতে পেরেছে।ইশা যদি ক্ষমা করে দে তাহলে ইশার মাও সম্পর্কটা মেনে নেবে।
ইশাদের বাসার সামনে গাড়ি থামলে ইশার মা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি আমাদের বাসা চিনো?”
আরিয়ান মাথা চুলকে বলে, “না মানে…”
ইশার মা হেসে বলে, “বুঝতে পেরেছি,,আসছি আমি”
তারপর গাড়ি থেকে নেমে যায়।আরিয়ান গাড়ি থেকে একবার তিন তলার দিকে তাকায়।ইশার রুমের ব্যালকনির দরজা বন্ধ।আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দে।
ইশা ওর বাবার সাথে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে মাকে দেখে মিষ্টি হেসে বলে,
“আজকে এতো দেরি হলো কেন?”
ইশার মা হাতের খাতাগুলো দেখিয়ে বলে,
“এগুলো আনতেই দেরি হল”
“ওহ তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি কফি বানিয়ে আনছি”
“হুম যা..”
ইশা ড্রইংরুমে বসেছিল।তাই ওর মা যে আরিয়ানের সাথে এসেছে সেটা দেখেনি।ইশার মা ও আরিয়ানের কথাটা বলতে চায় না তাই মিথ্যে বলেছে।
ইশার মা ফ্রেশ হয়ে আসলে তিনজন একসাথে কফি খেতে বসে। কফি খেতে খেতে ইশা ভাবে আরিয়ানের কথাটা বলে দেবে।গতকাল রাতে বাসায় এসেছিল আবার আজকে ভার্সিটিতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছে।ইশা চাইলেও আরিয়ানকে আটকাতে পারবেনা, তাই কিছু হওয়ার আগে মা বাবাকে জানানো উচিত। না হলে পরে বাবা-মা ওকে ভুল বুঝবে।ইশা কফিট মগে চুমক দিতে দিতে বলে,
“তোমাদের কিছু বলার ছিল”
ইশার মা-বাবা দুজনেই ইশার দিকে তাকায়।ইশার বাবা বলে,
“হ্যাঁ কি বলবি বল”
ইশা ইতস্ত করে বলে, “আসল ব্যাপারটা আরিয়ান ভাইয়াকে নিয়ে!”
ইশার বাবা বলে, “আরিয়ান?ওই ছেলেটা অাবার কি করেছে? তোকে আবার জ্বালাতন করছে?এবার আমি ভার্সিটিতে যাবো, ওর নামে কমপ্লেইন না করলে হবে না”
ইশা তাড়াতাড়ি করে বলে, ” না না সেরকম কিছু নয়”
“তাহলে কি..???”
ইশার মা আন্দাজ করতে পারছে যে ইশা কি বলবে!ইশা মাথা নিচু করে সব বলতে শুরু করে,কুমিল্লা থেকে এস ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আরিয়ানের ক্ষমা চাওয়া। রাতে বাসার নিচে আসা।আজকে আবার সকালে ভার্সিটিতে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলা।ইশা কোনো কিছু লুকায় না, সব বলে।ইশার বাবা রেগে বলে,
“ওই ছেলেটা কি চাইছে টা কি?তোকে অপমান করে শান্তি হয়নি এখন আবার ক্ষমা চাইতে এসেছে! খবরদার তুই ওর নরম কথা গলবি না।আমিতো এখনো ছেলেটাকে দেখি নি কিন্তু কথা শুনে মনে হচ্ছে ডেঞ্জারাস ছেলে একটা”
ইশার মা বলে, “তুমি এত উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?আর আরিয়ানকে যত খারাপ ভাবছো ততটা খারাপ ও নয়”
ইশার বাবা অবাক হয়ে বলে, “যে ছেলেটা তোমার মেয়েকে এতো প্রমাণ করল তুমি ওর হয়ে কথা বলছো?”
“আরিয়ান তো তার ভুল বুঝতে পেরেছে”
ইশা ওর মার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আম্মু তুমি কি বলছো?আমি আরিয়ানকে ভাইয়াকে ক্ষমা করে দি?”
“না আমিও চাইনা তুই ছেলেটাকে এতো তাড়াতাড়ি ক্ষমা কর, তবে আমার মনে হয় একটা সুযোগ দেওয়া উচিত।সেটা তোর ইচ্ছা”
“আমার ইচ্ছা? তোমরা আমাকে কিছু বলবেনা?”
ইশার মা ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে, “আমরা তোর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি,আমার বিশ্বাস তুই আমাদেরকে কষ্ট দিবি না”
ইশা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, “তোমরা আমাকে এতো বিশ্বাস করো?আমি কোনদিন তোমাদের বিশ্বাস ভাঙবো না, কথা দিলাম”
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে ইশা ড্রয়িংরুমে এসে অবাক হয়ে যায়। ড্রয়িংরুমের সোফায় আরিয়ান বসে আছে। আরিয়ান এত সকালে এখানে কি করছে?ইশা আর একটু এগিয়ে অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে হঠাৎ ইশার দিকে চোখ যায়।
ইশার চুলগুলো এলোমেলো,গালগুলো ফোলা ফোলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে।আরিয়ান মুগ্ধ হয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।ঘুম থেকে উঠলে কাউকে এত ভালো লাগে?
ইশা আরিয়ানকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে আসে।তারপর কোনোরকমে চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার ড্রয়িংরুমে যায়।আরিয়ানের কাছে গিয়ে কোমড়ে হাত রেখে আঙ্গুল তুলে বলে,
“এই আপনি এখানে কি করছেন?”
আরিয়ান হেসে বলে, “তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম”
ইশা আশেপাশে তাকিয়ে জোরে জোরে ওর মাকে ডাকতে থাকে।ইশার মা কিচেন থেকে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বলে,
“কি হয়েছে?সকাল সকাল এভাবে ডাকছিস কেনো?”
ইশা আরিয়ানকে দেখিয়ে বলে, ” উনি এখানে কি করছে?”
“জানিনা.. বললো তোর বাবার সাথে কথা আছে”
“তুমি ওনাকে ঢুকতে দিলে কেনো?”
“ইশা তুই এত অভদ্র হলি কবে থেকে?বাসায় মেহমান আসলে তাকে ঢুকতে দেবো না?”
ইশা ওর মার কাছে গিয়ে বলে,
“মেহমান?এত মেহমানের খাতির করতে ইচ্ছা হলে তোমাকে আমি মেহমান এনে দেব কিন্তু ওনাকে বের করো”
ইশার কথা শুনে আরিয়ান হেসে বলে, “আমি তো যাবো না”
ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আচ্ছা বেহায়া তো আপনি..
তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “আম্মু তুমি কিছু বলো”
“আমি আর কি বলবো! দাঁড়া তোর বাবাকে ডেকে আনছি”
ইশার মা চলে গেলে ইশা আরিয়ানের সামনে এসে কোমরে হাত রেখে বলে,
“আপনি এখনো এখানে বসে আছেন?”
“ইশা আজকে প্রথম তোমাদের বাসায় আসলাম, কোথায় নাস্তা করতে বলবে আর তুমি চলে যেতে বলছো!”
“আমাদের বাসায় নাস্তা নেই, কোন খাবারই নেই।তাই চলে যান”
“খাবার নেই?তা তোমরা কি খাও?”
ইশা ঝটপট করে বলে, “আমরা..আমরা খাইনা”
ইশার কথা শুনে আরিয়ান ঠোঁট টিপে হাসে।ইশা কিছু বলতে যাবে তখনি ইশার মা ইশার বাবাকে নিয়ে আসে।আরিয়ান উঠে ইশার বাবাকে সালাম করে। ইশার বাবা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
” তুমি সেই ছেলে? আরিয়ান??”
আরিয়ান মাথা নীচু করে বলে, “জ্বী আঙ্কেল”
“তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিলো যার কারণে আমার মেয়েটা এতো পাল্টে গেলো, আমাদের থেকে কথা লুকানো শিখল। আবার যে আমার মেয়েটাকে এতো বড় ধোঁকা দিলো তাকে দেখতে পেয়ে আমি ধন্য”
ইশার বাবার এরোকম কথা শুনে আরিয়ান মাথা নিচু করে ফেলে। আরিয়ান বুঝতে পারে ওকে হয়তো আরো অনেক কিছু শুনতে হবে,আরিয়ান নিজেকে শক্ত করে।ইশাকে পেতে হলে এইটুকু কষ্ট তো সহ্য করতে হবেই।
চলবে….