মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:৩৯
এখন সন্ধ্যাবেলা,,
ইশা আর ওর মা ইশার বাবার কেবিনে বসে আছে।রাইমা একটু আগে বাসায় চলে গিয়েছে। সেই দুপুরে ভার্সিটি থেকে ইশার সাথে হসপিটালে এসেছিল।ইশার বাবা এখন সুস্থ আছে তাই ইশা রাইমাকে চলে যেতে বলে নাহলে রাইমার পরিবারের লোকজন আবার চিন্তা করবে।ইশার মা ইশার বাবার কাছে একটা টুলে বসে আছে। আর ইশা একটু দূরে সোফায় বসে আছে।
তখনই কেবিনে আরিয়ান আর ওর মা-বাবা প্রবেশ করে।ইশার মা-বাবা ওদেরকে প্রথমে খেয়াল করে নি। ইশা অবাক হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।আরিয়ান ইশাকে দেখছে।ইশা ভাবছে ওরা খবর পেলে কিভাবে!আরিয়ানের বাবা ইশার বাবার কাছে গিয়ে বলে,
“ভাই তোর কি হয়েছে? হসপিটালে কেন!”
এবার ইশার মা,বাবা আরিয়ানদের দেখে। ইশার মা বসা থেকে উঠে টুল ছেড়ে একটু দূরে দাঁড়ায়।আরিয়ানের বাবা এসে ইশার বাবার পাশে বসে।
ইশার বাবা বলে,
“আপনার এখানে কেন এসেছেন? ”
“ভাই তুই এই অবস্থাও আমাদের উপর রাগ করে থাকবি?তুই জানিস আমি খবর পেয়ে কিভাবে ছুটে এসেছি এতগুলো বছর পর তোকে পেয়ে আর হারাতে পারবো না রে”
আরিয়ানের মা ইশার মাকে বলে, “হাসি ওর কি হয়েছে?”
ইশার মার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তবু আরিয়ানের মায়ের প্রশ্নের জবাবে ডাক্তারের কথা বলে।
ইশা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে।আরিয়ান এসে ইশার পাশে দাঁড়ায়। ইশা একবার চোখ ঘুরিয়ে আরিয়ানকল দেখে আবার সামনের দিকে তাকায়।তখন কেবিনে ডাক্তার প্রবেশ করে বলে,
“একি!আপনার এতজন একসাথে কেন এসেছেন?আরে মিস্টার চৌধুরী আপনি এখানে?”
আরিয়ানের বাবা ডাক্তারের সাথে হ্যান্ডশেক করে ইশার বাবাকে দেখিয়ে বলে, ” আমার ভাই”
ডাক্তার একটু অবাক হয়ে বলে, “উনি আপনার ভাই? জানতাম নাতো!”
” ও এখন কেমন আছে?সুস্থ হবে কবে?”
“উনার শরীরের কন্ডিশন এর ব্যাপারে আমি ওনার ওয়াইফ আর মেয়েকে তো সব বললাম তবে আমি এটা শুনে অবাক ওনি আপনার ভাই হয়ে ওনার অপারেশনের টাকা…”
ডাক্তার আর কিছু বলতে যাবে তখন ইশার মা তড়িঘড়ি করে বলে, “ডাক্তার ওকে কবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবো? ”
“হ্যাঁ সেটা তো দু,একদিনের মধ্যেই নিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু উনার একেবারে সুস্থতার জন্য পায়ের অপারেশন টা জরুরী”
আরিয়ানের বাবা বলে, “আমিও ভেবেছিলাম ওর পায়ের চিকিৎসা করাবো।আপনি কি অপারেশনের কথা বলছেন?আমাকে একটু খুলে বলুন তো..”
ইসার মা ডাক্তার কে বলে, “ওনাদের কিছু বলতে হবেনা। আমরা ব্যবস্থা করবো”
আরিয়ানের বাবা ইশার মাকে বলে, “হাসি আমার ভাই সম্পর্কে জানা আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তাই প্লিজ তুমি বাধা দিও না।
ডাক্তার আপনি কি বলবেন বলুন?”
“ওনার পায়ের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা লাগবে।আমি ওনাদের বলেছি।উনারা নাকি কিছু টাকা জোগাড় করতে পেরেছে”
আরিয়ানের বাবা একটু জোরেই বলে,
“মাত্র চার লক্ষ টাকার জন্য আমার ভাইয়ের অপারেশন বন্ধ হয়ে আছে?চৌধুরী গ্রুপে অফ ইন্ডাস্ট্রির অর্ধেক মালিক আমার ভাই।আর ওর অপারেশন মাত্র 4 লাখ টাকার জন্য হচ্ছে না!হাসি তুমি কি করে এটা আমার থেকে লুকিয়ে যেতে পারলে?”
তখন ইশার বাবা বলে, ” আমার কারো টাকা লাগবে না”
“তুই আর কোন কথা বলবিনা ভাই।তোর অপারেশন হবে আর আমার টাকায় না তোর অপারেশন হবে তোর টাকায় কারণ চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক তুইও”
ইশার বাবা মুখ ফিরিয়ে বলে, “আমার ওই কোম্পানির মালিকানা চাইনা। আমি যেভাবে আছি ঠিক আছি”
আরিয়ানের বাবা কেবিনে থাকা সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“আমি আমার ভাইয়ের সাথে একটু পার্সোনাল কথা বলতে চাই”
আরিয়ানের মা কিছু বলতে গেলে আরিয়ানের বাবা ইশারায় বারণ করে।আরিয়ানের মা মাইশার মাকে নিয়ে বাইরে চলে যায়। ডাক্তারও চলে যায়।আরিয়ান ইশার কাছে এসে বলে, ” ইশা বাইরে চলো”
ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে “হু” বলে একবার ওর বাবার দিকে তাকিয়ে দরজার দিকে এগোয়।ইশার পিছু পিছু আরিয়ানেরও বাহিরে চলে যায়।
সবাই চলে গেলে আরিয়ানের বাবা ইশার বাবার পাশে বসে হাত ধরে বলে,
“আমাকে কবে ক্ষমা করবি ভাই?”
“আমি তো আপনাদের কবেই ক্ষমা করে দিয়েছি।সবাইকে চলে যেতে বললেন কেনো?”
আরিয়ানের বাবা ইশার বাবার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কান্না করে দে।তারপর কান্না করতে করতে বলে,
“অনেক হয়েছে ভাই। আমি আর তোকে ভাবে দেখতে পারছি না। তোর নিচের টাকায় অপারেশন হবে”
ইসার বাবা কিছু বলে না অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে। আরিয়ানের বাবা বলে,
“আল্লাহ না করুক তোর যদি কিছু হয়ে যায় হাসির আর ইশার কি হবে? ওদের জন্য তো তোর সুস্থ হতে হবে নাকি?”
ইশার বাবা একবারে চুপ হয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর আরিনের বাবা বলে, ” বাবা মারা যাওয়ার পর মা আমাকে তোর দায়িত্ব দিয়েছিলো।বলেছিল সব সময় তোকে দেখে রাখতে,আগলে রাখতে। কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি।এতো বছর তুই আমার থেকে দূরে ছিলি আজকে যখন সুযোগ পেয়েছি আমাকে সেটা পালন করতে দে ভাই।কিরে কিছু বল..
তুই কও কাঁদছিস? ”
ইশার বাবা আরিয়ানের বাবাকে জড়িয়ে ধরে।ওনিও যে বড় ভাইকে খুব মিস করছিলো।ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছে,কত স্মৃতি একসাথে।এভাবে কিভাবে দূরে ঠেলে দিবে!
আরিয়ানের বাবা হাসিমুখে কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।ইশার মা আর আরিয়ানের মা বসেছিল।ইশা পায়চারি করছে, আরিয়ান ইশা দেখছে। আরিয়ানের বাবার হাসিমুখ দেখে সবাই অবাক হয়। আরিয়ানের বাবা সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলে,
“আমার ভাই অপারেশনে রাজি হয়েছে”
ইশার মায়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।উনিও চেয়েছিলেন উনার স্বামী যেন সুস্থ হয়ে যায়।ইশার বাবা কিভাবে রাজি হয়েছে সেসব না শুনে ইশার মা কেবিনে ঢুকে যায়।
এদিকে ইশা খুশি হয় বাবা অপারেশনের জন্য রাজি হয়েছে। তার মানে বাবা সুস্থ হয়ে যাবে।আরিয়ান ইশার হাসি মুখ দেখছে। আরিয়ানের বাবা বলে,
” আমি গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি”
আরিয়ান ইশার কাছে দাঁড়িয়ে বলে, ” ভার্সিটি থেকে সোজা এখানে চলে এসেছো। কিছু খেয়েছো?”
ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” না মানে..”
আরিয়ান অবাক হয়ে বলে, “সেই দুপুরে ভার্সিটি থেকে এসেছো।এখন সন্ধ্যে, এখনো কিছু খাওনি?”
“বাবার এ অবস্থায় আমি খাই কি করে?”
“এখন তো চাচ্চু সুস্থ আছে। চলো কিছু খাবে চলো”
” না আমি..”
ইশা কিছু বলতে যাচ্ছিল তখন আরিয়ানের মা বলে,
“ইশা আরিয়ান তো ঠিকই বলেছে। যা ওর সাথে গিয়ে কিছু খেয়ে আয়”
“আন্টি আম্মুও তো কিছু খাইনি”
তখন আরিয়ান বলে, “আচ্ছা আমরা আসার সময় চাচীর জন্য খাবার প্যাক করে করে আনবো। তুমি চলো”
আরিয়ান ইশার হাত ধরে হাসপাতালের ক্যান্টিনের দিকে যায়।
ক্যান্টিনে গিয়ে একটা টেবিলে বসে আরিয়ান ইশার জন্য বিরিয়ানি অর্ডার দে।ইশা বলে,
“সন্ধাবেলা বিরিয়ানি কেনো? কিছু হালকা নাস্তা অর্ডার করলেই তো হতো”
“হালকা নাস্তা? তুমি দুপুর থেকে কিছু খাওনি সে খেয়াল আছে?এই তোমার কি খিদে পায় না?”
ইশা ইনোসেন্ট মুখ করে বলে, ” পায় তো”
ইশার মুখ দেখে আরিয়ান হেসে দেয়।খাবার আসলেই ইশা খেতে খেতে বলে,
“আব্বু যে হসপিটালে আপনারা কিভাবে জানলেন?”
“রাইমা রিহানকে কে বলেছিলো, রিহান আমাকে বললো। তারপর আমি মম ড্যাড কে বলে সবাই আসলাম”
“ওহ..”
“হুম,তোমাকে দেখে ক্লান্ত লাগছে।বাসায় যাবে না?”
” না, আজকে আব্বুর কাছে থাকবো।আচ্ছা আপনারা কি থাকবেন?”
” আমি তো অবশ্যই থাকবো।তোমাকে ছেড়ে যাই কিভাবে বলো তো!”
আরিয়ানের কথা শুনল ইশা মুখ বাকিয়ে বলে, “আপনার থাকতে হবে না।আমি আর আম্মু সব সামলাতে পারবো”
” আমার ইচ্ছা আমি থাকবো আর কিছু?”
ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে, “উফ আপনি এত ঘাড় ত্যাড়া কেনো?”
আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ” জানিনা।আমার মমকে জিজ্ঞেস করো, যে ওনার ছেলে এতো ঘাড় ত্যাড়া কেনো!”
ইশা ভেবেছিলো আরিয়ান রেগে যাবে। কিন্তু আরিয়ানের ডোন্ট কেয়ার ভাব ইশা একটু অবাক হয়!
কিছুক্ষণ পর ইশা খেতে খেতে বলে, “আপনি খাবেন না?”
“না ম্যাডাম। এটা শুধু আপনার জন্য।আপনি তো দুপুর থেকে কিছুই খাননি এখন ভালো করে খান”
“খাচ্ছি তো”
ইশা খাচ্ছে আর আরিয়ান গালে হাত দিয়ে ইশাকে দেখছে। ইশা খেয়াল করেছে আরিয়ান কখন থেকে ওকে দেখে যাচ্ছে।এবার ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে,
“আপনি ভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি খাবো কিভাবে?”
“তোমার খাওয়া তুমি খাও,আমার দেখার আমি দেখছি”
ইশা আরিয়ানের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বলে,
“আপনি না অসহ্য একটা”
আরিয়ান ইশার কথা শুনে শুধু হাসে, কিছু বলে না। ইশার খাওয়া শেষে আরিয়ান বিল দিয়ে ইশার মায়ের জন্য খাবার প্যাক করে নে।
চলবে…