আমার_আদরিনী
আশুথিনী_হাওলাদার
পর্ব-১৫
_‘তিনু তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?’
মেঘালয়ের ঠোঁট কাঁটা প্রশ্নে লজ্জা উড়ে যায় তিয়ানার। মুখ কাচুমাচু করে ফেলে সে। মেঘালয় বলল,
__‘এভাবে বসে না থেকে স্বামী সেবা কর। আমার পা টিপে দে তো।
দুঃখি কন্ঠে বলল মেঘালয়,,
__‘ কোনো দিন তো বোন হিসেবে এক গ্লাস পানি গড়িয়েও দিসনি। এখন কপালে কে আছে কে জানে? এখন তো বোন থেকে সোজা বউতে চলে গেছোস। তোরা বাপ-মেয়ে মিলে আমার বাপ কে নিশ্চয়ই কোনো কালো জাদু করে আমায় ফাসাইছোস।’
তিয়ানা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে মেঘালয়ের দিকে। সে কখন ফাসালো?
মেঘালয় তিয়ানার তাঁকানো দেখে নিজের দিকে চেয়ে পাঞ্জাবি টেনেটুনে শোয়া থেকে উঠে আসন পেতে বসে সন্দেহ নিয়ে বলল,,
__‘তোর চোখ দিন দিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে তিনু। তোর দৃষ্টি আমার ঠিক ভালো ঠেকছে না। জানিস তো! এমন করে কারা চায়? যারা লচু মেয়ে। নিরহ ছেলেদের দিকে তাঁকিয়ে থেকে তাদের চোখ দিয়ে ধর্ষন করে। তোর দৃষ্টিও আমার তেমন লাগছে।’
থতমত খেয়ে যায় তিয়ানা। মেঘালয়ের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সে। পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে তার দিকে ফিরে ক্রুর হেসে বলল,,
__‘আপনি তো আমার জামাই হন। মাত্র বিয়ে হয়েছে আমাদের । তো আমি আমার জামাইর দিকে নির্লজ্জের মতো চেয়ে থাকতে’ই পারি। তাতে আপনার কি?
বলে ভ্রু নাঁচায় তিয়ানা। তিয়ানার বলা ‘জামাই’ সম্মন্ধে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে মেঘালয়ের। ডান হাত দিয়ে মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বাঁকা হাসে মেঘালয়। বলল,
__‘রাইট! ভেরি রাইট কথা। তিনুরানী অবশ্যই তার জামাইকে দেখবে। তাতে আমার কি? তাহলে, মেঘালয়ও তো তার বউ কে নির্লজের মতো দেখতে পারে।”
তিয়ানার দিকে ঝুঁকে তার দুই সাইটে হাত রেখে বলল মেঘালয়। হতবম্ব হয়ে যায় তিয়ানা ভয়ে ভয়ে মেঘালয়কে দেখে সে। মেঘালয় ক্রুর হেসে বাম ভ্রু’কুটি করে তার দিকে চেয়ে আছে। ভয়ে পিছিয়ে খাটের সাথে লেগে বসে তিয়ানা। তিয়ানাকে ভয় পেতে দেখে দুষ্ট হাসে মেঘালয়। বলল,,
__‘তাই না? আজ মেঘালয়ের নতুন বউকে লাল শাড়িতে বউ সেজে বেশ আবেদনময়ী লাগছে।’
মেঘালয়ের এহনো কথায় কেঁপে ওঠে তিয়ানা। লজ্জায় কান থেকে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। হাত দিয়ে বিছানার চাঁদর খামছে ধরে পা গুটিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে তিয়ানা। হাসে মেঘালয়! হাসি থামিয়ে তিয়ানার ভিতু মুখের দিকে তাঁকিয়ে শব্দ করে হেসে দেয় সে। বদ্ধ রুমে মেঘালয়ের হাসির ঝংকারে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় তিয়ানার। বুক কেঁপে ওঠে তার। উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে তিয়ানা। মেঘালয় অপলক চোখে দেখে তার সদ্য বিয়ে করা নববধূকে। এগিয়ে যায় তিয়ানার দিকে তার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে শ্বাস টেনে স্মল নেয়। মেঘালয় এত কাছে আসাতে শ্বাস আঁটকে যায় তিয়ানার। মুঠোয় থাকা বিছানার চাদর খামছে ধরে সে। এ কেমন অনুভুতি তার? যে অনুভূতির তাড়নায় সে শ্বাস নিতে অব্দি পারছে না। তিয়ানার থেকে সরে আসে মেঘালয়। হাত বাড়িয়ে তিয়ানার খোপা করে থাকা কোমড় অব্দি লম্বা চুল গুলো খুলে দেয় সে। লাল জর্জেট শাড়ি গায়ে জড়ানো সাথে খোলা চুলে অন্যরকম সুন্দর লাগছে তিয়ানাকে। তিয়ানার এমন রুপ দেখে বুকে তোলপাড় শুরু হয় তার। তবে চোখ সরায় না সে। বহু প্রতিক্ষার পর তার সামনে বধূবেসে বেশে বসে থাকা মেয়েটাকে নিজের নববধূ রুপে পেয়েছে সে। মেঘালয়ের সারা শব্দ না পেয়ে চোখ খোলে তিয়ানা। তার দিকে’ই অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেঘালয়। দু’জনের চোখ চোখ মিলে যায়। মেঘালয়ের তুক্ষর, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে বুক কেঁপে ওঠে তিয়ানার। আজ বড্ড অচেনা মেঘালয় কে দেখছে সে। এতদিনের চেনা মেঘায়ের সাথে আজকের মেঘালয়ের বড্ড অমীল খুজে পাচ্ছে তিয়ানা।
__‘আমার বউকে আমি একবার ছুয়ে দিতে পারি?’
ভাবনায় ব্যাস্ত তিয়ানার কানে শব্দগুলো পৌঁছানো মাত্র চমকে ওঠে মেঘালয় কে দেখে সে। তিয়ানকে ভিতূ চোখে তাঁকাতে দেখে সস্মিত ফিরে পায় মেঘালয়। কি হচ্ছে বুঝতে পেরে চোখ সরিয়ে নেয় তিয়ানার থেকে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। তিয়ানাকে একান্ত্র নিজের করে পেতে ইচ্ছে করছে তার। কই? আগে তো কখনো এমন অনুভব হয়নি তার। তাহলে আজ কেন? সম্পর্কটা পবিত্র বলে কী? হবে হয়তো! তিয়ানাকে লুকিয়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেঘালয়। তিয়ানার থেকে সরে গিয়ে ধম করে বিছানায় শুরে পরে। মেঘালয় সরে যাওয়া তে আঁটকে থাকা শ্বাসটা ফেলে তিয়ানা। এতক্ষন শ্বাস আঁটকে থম মেরে বসে ছিল সে। মেঘালয় তার কাছে আসাতে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার তবে খারাপ না। ভালো লাগার! মিষ্ট অনুভূতি! মেঘালয়ের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। কেন এমন অনুভব হচ্ছে? মেঘালয় আজ তার স্বামী বলে কি? স্বামী! মেঘালয় তার স্বামী! তার বর ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তিয়ানার। বুকের ভিতর খুব খুব খুশি খুশি অনুভুত হয় তার। হঠাৎ ধমকে বলল মেঘালয়,,
__‘থম মেরে বসে না থেকে পা টিপে দে আহমক।’
মেঘালয়ের ধমকে লাড্ডু ফুটে ওঠা মন চুপশে যায় তিয়ানার। এতক্ষন যে খুশি অনুভব হচ্ছিল তা এখন তেঁতো লাগছে তিয়ানার। খারুচটা নিজের রুপে ফিরে আসছে। চোখ পাকিয়ে তাঁকায় তিয়ানা। তা দেখে ‘হাই’ তুলে বলল মেঘালয়,,
__‘চোখ তাঁকাবি তো স্বামী নির্যাতনের আমলা ঠুকে দেব তোর বিরুদ্ধে। বউ হইছিস আর জামাই সেবা করবি না। তা হওয়ার নয়।’
মুখ বাঁকিয়ে বলে তিয়ানা,,
__‘আপনার বউ হতে আমার বয়ে’ই গেছে। নেহাত পাপা আমায় জোড় করে বিয়ে দিয়েছে নয়তো আপনার মতো খারুচকে না তিয়ানা রহমান বিয়ে করতো না ‘
কপাল কুচকে তাঁকায় মেঘলয়। ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘ওরে আমার মহারানী ক্লিওপেট্রা আপনাকে বিয়ে করার জন্য হেদিয়ে মরেছি যেন। তোরা বাপ-মেয়ে কালো জাদু করেছিস আমার উপর। সাথে যোগ দিয়েছে আমার বাপ আর বন্ধু নামক শালাটা।’
ফুসে ওঠে তিয়ানা। আঙ্গুল নাচিয়ে বলল,
__‘আমার পাপ্পি আর পাপা কিছু বললে তো খবর আছে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে আপনি আর আমার ভাইয়া নামক শত্রুটা মিলে আমায় এই চিপায় ফেলাইছেন।’
মুখে তা বললেও তিয়ানা খুব ভালো করে জানে। এটা তার পাপ্পা আর পাপ্পির কাজ। কিন্তু নিজের ইমেজ তো এই খারুচটার সামনে নষ্ট করা যাবে না।
__‘ওরে আমার সুন্দরী রানী ক্লিওপেট্রা আসছে যে তাকে ফাসাতে হবে আমায়। শোন তোর মতো হাজারটার মেয়ে আমার পিছনে ঘোরে। নেহাত তোর বাপ আমার পাপ আমাকে এতো করে রিকুয়েষ্ট করে বলল,
__‘আমাদের মেয়ে দেখতে মাশাল্লাহ পেত্নী। বাইরে তো আর দেয়া যাবে না দেখা যাবে তোর এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে বাসর রাতে’ই তোর বর হার্টফেল করে মরবে। কিন্তু আমি বিয়ে করলে সেটা হবে না কারন তোর এই পেত্নী চেহারাটা আমি তোর জন্ম থেকে দেখে আসছি। তাই আমি’ই করলাম ঘরের মেয়ে তো ফালাইয়া দেয়া যায় না। কি আর করার আমার গলাতেই ঝুঁলাই।
ফোস করে ওঠে তিয়ানা। রেগে দাতেদাত চেপে বলল,,
__‘আমি পেত্নী? আমায় দেখলে আমার বর হার্টফেল করবে? শুনন আমি যদি একবার হ্যা বলি না আমার পিছনে ছেলেদের লাইন পরে যাবে।’
মেঘালয় হেসে ব্যাঙ্গ করে বলল,,
__‘হ্যা তা তো প্রমান দেখতে’ই পাআচ্ছি ‘লিইইটনদায়ায়া’ কি যেন কবিতা লিখছিল? ইহা মনে পরেছে।
‘ও তিনু ও তিনু ‘
‘তুমি কেন বোঝো না ‘
‘তোমার বিরহে মরছি তিনু’
‘তুমি কেন দেখছো না’
‘কেন ভালবাসছো না’
‘ও তিনু রে ও তিনু রে ‘
‘কেন বোঝা না’
‘আমার তিনুরে’
চলবে?
(গঠন মূলক মন্তব্য আশা করছি)