#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩০
★ আদিত্যকে দেখে নূর যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেল। আদিত্যের দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্যের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর কলিজার ভেতর কেউ চাকু ঢুকিয়ে কলিজাটাই ছিড়ে আনছে।
নূরের কাছে থাকা ছেলেটা আদিত্যদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..এই তোরা কারা? এখানে কি করছিস? দেখছিস না এখানে ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ চলছে? নিজেদের ভালো চাসতো, এখান থেকে চলে যা।
আদিত্য নূরের দিক থেকে নজর সরিয়ে হিংস্র চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো। আদিত্যর চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে উঠেছে। চোয়াল শক্ত করে দুই হাত শক্ত করে মুঠ করে আছে। আদিত্যকে এই মূহুর্তে কোনো হিংস্র বাঘের মতো লাগছে।
আদিত্য আর এক মূহুর্তও দেরি না করে দৌড়ে যেয়ে নূরের কাছে থাকা ছেলেটার কলার চেপে ধরে টেনে তুললো। তারপর নিজের মাথা দিয়ে ছেলেটার মাথায় জোরে একটা হিট করলো। সাথে সাথে ছেলেটা ছিটকে নিচে পরে গেলো। আদিত্য আবার যেয়ে ছেলেটার বুকের ওপর বসে এলোপাতাড়ি ছেলেটার মুখে ঘুষাতে লাগলো।
এদিকে আবির আর তাসির বাকি দুজনকে ধরে আচ্ছা মতো পেটাতে লাগলো।
আদিত্য মারতে মারতে বলতে লাগলো।
….ইউ বাস্টার্ড, তোর সাহস কি করে হলো নূরের সাথে এসব করার? সাহস কি করে হলো ওকে ছোঁয়ার? তোকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না।আই উইল কিল ইউ বাস্টার্ড। আই উইল কিল ইউ।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো এদিক ওদিক কিছু খুজতে লাগলো। কিছুটা দূরে একটা রড দেখতে পেল। আদিত্য দৌড়ে যেয়ে রডটা হাতে নিল। তারপর ছেলেটার কাছে যেয়ে রড উঁচু করে মাথায় বারি দিতে নিলেই, তাসির দৌড়ে এসে ওকে পেছন থেকে আটকে ধরে বলে উঠলো।
….দেখ ছেলেটা এমনিই আধমরা হয়ে গেছে। এই রড দিয়ে মারলে ও একদম মরে যাবে।
আদিত্য ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
…. মরুক, ওর মরে যাওয়ায় উচিৎ। ও আমার প্রাণপাখির দিকে হাত বাড়িয়েছে। ওর এই দুনিয়ায় বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ওকেতো আজ মরতেই হবে। তুই ছাড় আমাকে।
নূর এসব আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
তাসির সেটা দেখে আদিত্যকে বললো।
….. দেখ নূর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তুই নূরের কাছে যা। এদের আমরা দেখছি।
তাসিরের কথা শুনে আদিত্য চমকে উঠে নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো,নূর সত্যি সত্যিই অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আদিত্য হাতের রডটা ঠাস্ করে নিচে ফেলে দিয়ে দৌড়ে নূরের কাছে গেল। নূরের মাথার কাছে হাটু গেড়ে বসে দুহাতে নূরের মাথাটা নিজের কোলের উপরে তুলে নিল। নূরের গালে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো।
…..এ এই নূর,নূরপাখি ওঠনা। দেখো আমি চলে এসেছি তোমার কাছে। আর কোনো ভয় নেই। কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না। প্রাণপাখী, ওঠনা প্লিজ।
আদিত্য আর সময় নষ্ট না করে, নূরকে কোলে তুলে নিল। তারপর তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই তিনজনকে আমার গোডাউনে নিয়ে যা। আমি পরে এদের খবর নিচ্ছি।
আদিত্যর কথায় তাসির মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
আদিত্য নূরকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
——————————–
রাত ১১টা
আদিত্যের বিছানায় শুয়ে আছে নূর। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর। আদিত্য নূরকে নিজের ফ্লাটে নিয়ে এসেছে। ফ্লাটে এসে আদিত্য ডক্টরকে ফোন করে নিয়ে আসে। ডক্টর এসে নূরকে চেক আপ করে গেছে। বলেছে শারীরিক ভাবে তেমন কোনো আঘাত পায়নি। ভয় আর মানসিক প্রেশারের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে।
নূরের মাথার কাছে টুলের ওপর বসে আছে আদিত্য। নিজের এক হাত দিয়ে নূরের এক হাত ধরে মুখের কাছে এনে নূরের হাতের তালুতে একটা চুমু দিল। তারপর নূরের মুখের ওপর ঝুঁকে আরেক হাত দিয়ে নূরের মাথায় আর গালে হাত বুলাতে লাগলো। আদিত্য মনে মনে ভাবছে, আজ কি ভেবেছিল, আর কি হয়ে গেলো? আজতো ও নূরকে নিজের মনের কথা বলতে চেয়েছিল। নূরের জন্য কতো সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। সেগুলো কিছুই নূরকে দিতে পারলো না।
আদিত্য আরেকটু ঝুকে নূরের কপালে আঘাতের স্থানে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল। কিছুক্ষণ ওভাবেই ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখলো। তারপর নূরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নূরের গালে হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে বললো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখি। আমি তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনি। আমি তোমাকে একা রেখে না গেলে, তোমার সাথে এসব কিছুই হতোনা। আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। আমি তোমাকে প্রমিজ করছি। আর কখনো তোমাকে একা ছাড়বো না। তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেব না। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। বাবা গ্রাম থেকে ফিরে আসলেই, বাবাকে আমাদের বিয়ের কথা বলবো। তারপর আমার প্রাণপাখী টাকে বউ করে আমার ঘরে নিয়ে আসবো। তখন আর তোমাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও আমার চোখের আড়াল হতে দিবোনা। একদম আমার কলিজার ভেতর লুকিয়ে রাখবো। যাতে কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে না পারে।
আদিত্যের নজর গেল নূরের ঠোঁটের দিকে। ঠোটটা ফেটে ঠোঁটের কোনায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে । এটা দেখে আদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। আবারও ওই সয়তান গুলোর কথা মনে পরলো। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে সবগুলোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে।
আদিত্য একটা টিস্যু ভিজিয়ে আলতো করে নূরের ঠোঁট মুছে দিতে লাগলো।
নূর হঠাৎ একটু নড়ে উঠলো। এটা দেখে আদিত্যের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আদিত্য আস্তে করে নূরকে ডাকতে লাগলো।
নূর চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই কেমন যেন ছটফট করতে লাগলো। ওর চোখের সামনে সেই ভয়ানক দৃশ্যটা ভেসে উঠছে। হঠাৎ নূর একটা চিৎকার দিয়ে চোখ খুলে উঠে বসলো। তারপর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাটু ভাজ করে, হাটুর ভেতর মুখ লুকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে ওর। আদিত্য নূরের কাঁধে হাত দিতে গেলেই, নূর ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায়।
আদিত্য নূরকে অভয় ফিল করানোর জন্য, নিজের দুই হাত হ্যান্ডসআপ এর মতো উঁচু করে বললো।
……ওকে ওকে আমি ধরছি না। তুমি শান্ত হও। দেখো কোনো ভয় নেই। এদিকে একবার তাকাও। দেখ এটা আমি। আমি আদিত্য। তুমি এখন আমার কাছে সেফ আছো। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি প্লিজ ভয় পেয়োনা।
নূর ধীরে ধীরে একটু শান্ত হলো। আস্তে করে মাথাটা তুলে আদিত্যের দিকে তাকালো।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলো, যে নূর এখন সেফ আছে।
নূর হঠাৎ আদিত্যের কাছে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেঁদে উঠলো।
আদিত্যও নূরকে দু’হাতে জড়িয়ে বুকের মাঝে আগলে নিল। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
নূর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
….আ আ আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়? আমিতো কখনো কারোর কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে আমার সাথেই কেন এমন হয়? আমি কি এতই খারাপ?
নূরের চোখের পানিতে আদিত্যের শার্ট ভিজে পানি পানি হয়ে যাচ্ছে। নূরের কান্না যেন আদিত্যের বুকে তীরের মতো বিঁধছে। কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ওর।আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো।
…শুশশ শুশ…. কান্না থামাও প্লিজ। তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই সয়তান গুলোর। এবং তার শাস্তিও ওরা পেয়ে যাবে। তুমি এখন একটু শান্ত হও প্লিজ। এতো কান্না করলে তোমার শরীর খারাপ করবে।
১০ মিনিট ধরে কান্না করার পর নূর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। হঠাৎ ওর হুঁশ আসে যে ও কোথায়। এবং হুঁশ আসতেই নূর লজ্জায় পরে যায়। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের পিঠ থেকে হাত নামিয়ে নেয়।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ও নিজেও নূরকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে।
নূর মাথা নিচু করে বসে থাকে।
আদিত্য নূরকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো।
…..তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেও, ভালো লাগবে। আর শাড়িটাও অনেক ময়লা হয়ে গেছে। চেঞ্জ করে নেও।
নূর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।
….কি কিন্তু আমার কাছেতো কোনো জামা কাপড় নেই। চেঞ্জ করে কি পরবো?
আদিত্য একটু ভাবনায় পরে গেলো। এটাতো ও চিন্তাই করেনি। এ বাসায়তো কোনো মেয়ে মানুষও নেই যে তার জামা কাপড় এনে দিবে নূরকে।
আদিত্য কিছু একটা ভেবে, উঠে গিয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা টিশার্ট আর টাওজার বের করে নূরের সামনে ধরে বললো।
…..এই নেও , আপাতত এগুলই পরে নেও।
নূর চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
….এ এ এগুলো?
…..হ্যাঁ, তাছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। এই বাসায় কোনো মেয়ে মানুষ নেই যে তার জামা কাপড় তোমাকে দিবো। আর এতরাতে কোনো দোকানপাটও খোলা নেই। তুমি এভাবে ময়লা কাপড়ে থাকলে, ইনফেকশন হতে পারে। তাই বলছি আপাতত এটা পরে নেও।
নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যর হাত থেকে শুধু টিশার্ট টা নিয়ে বললো।
….. আ আমার পেটিকটের নিচে প্লাজু পরা আছ। তাই শুধু টিশার্ট হলেই চলবে।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।
তারপর নূরের হাতে একটা তোয়ালে দিয়ে ওয়াসরুমে পাঠিয়ে দিল।
আদিত্য ততক্ষণে কিচেনে এসে নূরের জন্য সুপ রান্না করতে লাগলো।
রান্না শেষ হলে একটা বোলে সুপ ঢেলে ট্রের ওপর রেখে নূরের কাছে গেল।
রুমের ভেতরে ঢুকে সামনে তাকাতেই আদিত্য থ হয়ে গেলো।
নূর মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছে। পরনে ওর দেওয়া টিশার্ট। চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে আছে। এই প্রথম আদিত্য নূরের চুল দেখলো।কি সুন্দর লম্বা লম্বা দীঘল কালো চুল। মনে হচ্ছে কোনো রুপকথার রাজকন্য। আদিত্য নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য। মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা বোধহয় আমাকে চরিত্রহীন করেই ছাড়বে।
নূর আদিত্যকে দেখে প্রচুর লজ্জায় পরে যায়। তাড়াতাড়ি করে হাতের তোয়ালেটা বুকের ওপর দিয়ে ওড়নার মতো করে নেয়।
আদিত্য নিজের মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তারপর আবার নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
…..গরম গরম সুপটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও।
নূর বলে উঠলো।
….আমার ক্ষিদে নেই। এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
আদিত্য ট্রেটা টি টেবিলের ওপর রেখে নূরের হাত ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসালো। তারপর বলে উঠলো।
….তা বললে তো হচ্ছে না। খাবার না খেলে ডক্টর যে পেইন কিলার দিয়ে গেছে, সেগুলো কিভাবে নিবে? তাই লক্ষী মেয়ের মতো সুপটা খেয়ে নেও। তারপর মেডিসিন নিতে হবে।
নূর অসহায় মুখ করে বললো।
…..সত্যিই বলছি, আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।
আদিত্য সুপের বোলটা হাতে নিয়ে, এক চামচ সুপ নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে বললো।
….কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। চুপচাপ এখুনি খেয়ে নেও।
নূর আর উপায় না পেয়ে হা করে সুপটা মুখে নেয়।
খাওয়া শেষে আদিত্য নূরকে মেডিসিন দিয়ে দেই।
একটু পরে নূর আমতা আমতা করে বললো।
…বা বাসায় কখন যাবো?
আদিত্য বললো।
….রাত অনেক হয়েছে। সকালে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবো। তুমি চিন্তা করোনা।
নূর মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তাহলে এখন যাও বেডে যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
নূর একটু ইতস্তত ভাবে বললো।
…আ আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
…..আমি অন্য রুমে ঘুমাবো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে উঠে যেয়ে বেডে কাত হয়ে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই নূরের চোখের সামনে আবারও সেই ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে উঠলো। নূর ঝট করে চোখ খুলে উঠে বসলো।
আদিত্য দেখতে পেয়ে দৌড়ে নূরের কাছে এসে বেডের ওপর বসে চিন্তিত স্বরে বললো।
….কি হয়েছে? আবার ভয় পেয়েছ?
নূর ভীতু ভাবে মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।
আদিত্য নূরের দুই হাত নিজের হাতের ভেতর নিয়ে বললো।
…..ভয় কিসের? আমি আছিতো তোমার পাশে। তুমি চিন্তা করোনা। তোমার ঘুম না আসা পর্যন্ত আমি এখানেই বসে আছি। তুমি শুয়ে পরো।
নূর আবার শুয়ে পরলো। আদিত্য বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে নূরের পাশে বসে, নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
ধীরে ধীরে নূর একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল। আদিত্যও নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হেলান দেওয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পরলো।
———————————-
সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে মুখে এসে পরতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তাকালো। নিজেকে অন্য কোনো জায়গায় দেখে নূর একটু চমকে গেল। তারপর কালকের কথা সব মনে পরলো ওর। হঠাৎ নূরের নাকে সেই মাতাল করা ঘ্রাণটা এসে লাগলো। নূর বুঝতে পারছে না ঘ্রাণ টা কোথা থেকে আসছে? নূর নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর গায়ে আদিত্যের টিশার্ট। নূর নিজের হাত দিয়ে টিশার্টের কলারটা একটু টেনে নাকের কাছে আনলো।নূর বুঝতে পারলো ঘ্রাণটা এই টিশার্ট থেকেই আসছে । এটাতে উনার শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। নাক টেনে কতক্ষণ ঘ্রাণ নিতে থাকলো নূর।তারপর পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখলো আদিত্য বেডের সাথে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমের ভেতরে মাথাটা একটু নিচের দিকে হেলে পড়েছে।
নূর আস্তে করে উঠে বসলো। মায়া ভরা চোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো, উনি আমার জন্য কতো কিছু করছে। আমার কতো কেয়ার করে। সবসময় আমার চিন্তা করে। মানুষটা বোধ হয় সত্যি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে। আমিও যে মনে মনে উনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। কথাগুলো ভেবে নূর নিজে নিজেই লাজুক হাসলো।
হঠাৎ আদিত্য নড়েচড়ে উঠলো।
নূর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
আদিত্য চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো নূর বসে আছে। আদিত্য সোজা হয়ে বসে বললো।
….তুমি উঠে পরেছো? আ্যাম সরি আসলে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছি টের পায়নি। তুমি কিছু মনে করোনা।
নূর মুচকি হেসে বললো।
…..আপনাকে সরি বলতে হবে না। ইটস ওকে। আপনিতো আমার জন্যই বসে ছিলেন।
আদিত্যও মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
একটু পরে নূর ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে দেখলো আদিত্য টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। নূর এগিয়ে এসে বললো।
….আপনি একা কেন এসব করছেন? আমাকে ডাকলেই তো আমি হেল্প করতাম।
আদিত্য নূরের দিকে বললো।
…এটা কোনো ব্যাপার না। এগুলো আমার রোজকার কাজ। আমি এসব রোজ নিজের হাতেই করি। এখন এসব কথা বাদ দিয়ে এখানে বসে ব্রেকফাস্টটা করে নেও।
নূর মাথা ঝাকিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। ব্রেকফাস্ট করতে করতে নূর জিজ্ঞেস করলো।
…আপনি কি এই বাসায় একাই থাকেন?
…হ্যাঁ
…আপনার পরিবার কোথায় থাকে?
…ওরা সাভারের বাড়িতে থাকে। এখানে আমি একাই থাকি।
এভাবে টুকটাক কথার ভেতর ওরা ব্রেকফাস্ট শেষ করলো। হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। আদিত্য যেয়ে দরজা খুলে একটা প্যাকেট নিয়ে আসলো। তারপর নূরের কাছে এসে প্যাকেট টা নূরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
….এখানে একটা ড্রেস আছে। তুমি পরে নেও। তারপর তোমাকে বাসায় দিয়ে আসছি।
নূর বললো।
…কিন্তু ড্রেস কোথাথেকে আসলো?
…আমি অর্ডার করেছিলাম। মাত্রই দিয়ে গেল। এখন যাও চেঞ্জ করে আসো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে রুমের ভেতর গেল চেঞ্জ করতে।
আদিত্যও অন্য রুমে যেয়ে রেডি হয়ে নিল। একটু পরেই দুজন বেড়িয়ে পরলো।
নূরের বাসার সামনে এসে আদিত্য গাড়ি থামিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…আজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার দরকার নেই। বাসায় রেস্ট নেও। কাল সকালে এসে আমি নিয়ে যাবো। আর হ্যাঁ একদম ভয় পাবেনা। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবে কেমন?
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে গেল।
আদিত্য ফোন বের করে নূরের দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলাকে রেখেছিল তাকে ফোন করে বললো।
….নূরের বাসার লোক না ফেরা পর্যন্ত আপনি সবসময় ওর সাথেই থাকবেন। এমনকি রাতেও ওর সাথেই থাকবেন। বুঝতে পেরেছেন?
মহিলাটি বললো।
…জ্বি সার।আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই করবো।
আদিত্য ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
চলবে……