ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৪৩

0
8100

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৩

★দুপুর ২-৩০
সবাই লাঞ্চ শেষ করে ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আদিত্য আর নূরের বিয়ে নিয়ে নানা রকমের প্লানিং করছে।

তাসির একটু ফ্রেশ হতে ওপরে গিয়েছিল। একটু পরে ড্রয়িং এসে সোফায় বসে। তাসির এদিক ওদিক তাকিয়ে সানাকে কোথাও দেখতে পেল না। তাসির সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…সবাই তো এখানে কিন্তু সানাকে তো দেখছি না। ও কোথায়?

তানি বলে উঠলো।
….সানাতো বাইরে গেল। ওর নাকি কোনো স্পেশাল গেস্ট আসছে। তাকেই রিসিভ করতে গেল।

তাসির ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, সানার আবার কোন স্পেশাল গেস্ট আসছে, তাও আবার এখানে? তাসির বিষয়টা দেখার জন্য তাসিরও ধীরে ধীরে উঠে বাইরের দিকে গেল।

তাসির বাইরে এসে দেখলো সানা ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। তাসির সানার কাছে এগিয়ে গেল। সানার কাছে এসে, পেছন থেকে সানাকে ডাক দিলো। সানা তাসিরের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?

তাসির বললো।
….সানা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

সানা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…আমার সাথে আবার আপনার কিসের কথা? আপনি তো আমার চেহারাও দেখতে পছন্দ করেন না। তাহলে আবার আমার সাথে কিসের কথা?

তাসির বিনিত সুরে বললো।
…সানা আমার কথাটা শোন।

সানা পার্ট নিয়ে বললো।
….দেখুন আমার এখন আপনার সাথে কথা বলার সময় নেই।আমার স্পেশাল গেস্ট আসবে, তার জন্যই অপেক্ষা করছি। তাই আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।

সানার কথা শুনে তাসিরের রাগ আরো বাড়তে লাগলো। তাসির দাঁতে দাঁত চেপে বললো ।
….কে এমন আসবে? যার জন্য তুমি এতো ওয়েট করছো?

সানা বললো।
…সেটা আপনাকে কেন বলতে যাবো? আমার লাইফ আমি যা খুশী তাই করি, সেটা আপনি জিজ্ঞেস করার কে?

তাসির চোয়াল শক্ত করে সানার সামনে আঙুল তুলে বললো।
….দেখ সানা,তুমি কিন্তু বেশি বেশি কর…..

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই গেট দিয়ে একটা বাইক এসে দাড়ালো।
বাইকের শব্দে দুজনেই পেছনে তাকালো। বাইক থেকে একটা ছেলে নেমে দাঁড়িয়ে, সানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….হেই বারবিডল, চলে এসেছি আমি।

ছেলেটার কথায় সানা এক গাল হেসে দিয়ে দৌড়ে যেয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো।

এটা দেখেই তাসির রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। হাত দুটো শক্ত করে মুঠ করে অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাসির খেয়াল করলো, এটা সেই ছবির ছেলেটা। তাসির মনে মনে ভাবলো, এই ছেলেটার সাহস তো কম না, এখানেও চলে এসেছে। আবার আমার পিচ্চির সাথে কেমন চিপকে আছে। ওকেতো আমি ছাড়বো না। তার আগে আমার সানার সাথে কথা বলতে হবে। সানা এবার বেশি বারাবাড়ি করছে। ওর সাহস কি করে হলো, অন্য ছেলের সাথে এভাবে ক্লোজ হওয়ার?

সানা ছেলেটাকে বললো।
….তুমি এসে গেছ?আমি এতক্ষণ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চলো ভেতরে যাই।
কথাটা বলেই সানা ছেলেটার হাত ধরে বাসার ভেতর যেতে লাগলো। সানা একবার আরচোখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তাসির কেমন রাগে ফুসছে। এটা দেখে সানা বাঁকা হেসে তাসিরকে পাশ কাটিয়ে ছেলেটার হাত ধরে বাসার ভেতর গেল।

ওরা চলে যেতেই, তাসির পাশে থাকা একটা খালি টবে পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দিল। তারপর নিজের চুল টেনে ধরে পাশে থাকা ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে বসে পড়লো।

সানা ছেলেটাকে নিয়ে বাসার ভেতর আসতেই সবাই ওদের দিকে তাকালো। আদিত্য ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো।
……আরে সায়েম? তুই এখানে? ওয়াট এ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। কেমন আসিছ তুই?

সায়েম মুচকি হেসে বললো।
….ভালো ভাইয়া? তোমরা কেমন আছো?

….উই আর গুড।

সায়েম আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ওয়াটস্ আপ ব্রো?

আবির হেসে দিয়ে বললো।
…..এভরিথিং ইস আপ ব্রো।

সানা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাইয়া আমি ওকে আসতে বলেছি। ভালো হয়েছে না?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ পিচ্চি অনেক ভালো করেছিস।

সানা সায়েমকে তানি আর নূরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

সায়েম নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. ওয়াও ভাবি আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর। এইজন্যই তো আমাদের বাংলাদেশের ক্রাশ বয় আপনার প্রেমে পড়ে গেছে। ইশশ ভাইয়ার আগে যদি আমি আপনাকে দেখতাম, তাহলে আমিই আপনাকে পটিয়ে ফেলতাম।

সায়েমের কথায় সবাই হেসে দিল। আদিত্য এক হাত নূরের পেছেন দিয়ে নূরের কাঁধ জড়িয়ে ধরে, সায়েমের দিকে তাকিয়ে অন্য হাতের তর্জনী আঙুল নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে বললো।
…. আঁহা আঁহা , নো বয়। নো ফ্লাটিং উইথ মাই ওমেন। সী ইস অনলী মাইন ওকে?

সায়েম নিজের দুই হাত উপরে তুলে ঘাড় কাত করে আত্মসমর্পণের মতো করে বললো।
….কুল ব্রো। আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং। আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার কোনো শখ নেই। এখনো তো আমার বিয়েই হয়নি।

সায়েমের কথায় সবাই হেসে দেয়

তাসির এতক্ষণ ধরে বাইরেই বসে আছে, আর রাগে ফুঁসছে। মনে মনে ভাবলো, নাহ এভাবে বসে থাকলে চলবে না। সানার সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে। কথাটা ভেবে তাসির উঠে দাঁড়িয়ে ভেতরের দিকে গেল।

ভেতরে ঢুকে তাসির দেখলো, সানা আর সায়েম একসাথে অনেক ক্লোজ হয়ে বসে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। এসব দেখে তাসিরের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তাসির রাগে কটমট করতে করতে আর একমূহুর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে হনহন করে উপরে চলে গেলো।

সানা আরচোখে তাসিরের চলে যাওয়া দেখে মনে মনে ভাবলো, বেচারা মনে হচ্ছে একটু বেশিই রেগে আছে। এখন বুঝুক কেমন লাগে যখন ভালোবাসার মানুষ ইগনোর করে। হুহ।

কিছুক্ষণ পর সানা ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে যেতে নিলেই। হঠাৎ পাশের রুমের দরজা দিয়ে কেউ ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। দরজা বন্ধ করে সানা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় সানা একটু ঘাবড়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো তাসির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সানা মনে মনে খুশী হলেও উপরে উপরে রাগ দেখিয়ে বললো।
…..এসব কোন ধরনের ব্যবহার? আমাকে এভাবে এখানে আনার মানে কি? ছাড়ুন আমাকে।

তাসির চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…..কে ওই ছেলেটা? আর ওর সাথে তোমার এতো কিসের ঘেঁষাঘেঁষি হাহ্? তোমার সাহস কি করে হলো ওর সাথে এতো ক্লোজ হওয়ার?

সানা রাগী স্বরে বললো।
….সেটা জিজ্ঞেস করার আপনি কে? আমার পার্সোনাল ব্যাপারে আপনাকে কেন বলতে যাবো? কে হন আপনি আমার? কোন অধিকারে এসব জিজ্ঞেস করছেন?

সানার কথা শুনে তাসিরের রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাসির দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
….সানা ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্স। আমি কিন্তু সহজে রাগী না।তবে একবার রেগে গেলে তখন কিন্তু আমার ভয়ংকর রুপটা দেখতে পাবে। যেটা তোমার জন্য মোটেও ভালো হবে না। তাই আমার রাগ না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে বলো, ওই ছেলেটার সাথে এতো ক্লোজ হওয়ার মানে কি? কে হয় ও তোমার?

সানা বলে উঠলো।
…..আমার লাইফ আমার ইচ্ছে। যার সাথে খুশি তার সাথে ক্লোজ হবো। এসব জেনে আপনি কি করবেন? শুনুন আমি এই যুগের মেয়ে। আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। তাই বলে কি আমি আপনার জন্য সারাজীবন বসে বসে কাঁদব নাকি? আপনি ভালো না বাসলেও অনেক ছেলে লাইন ধরে আছে আমাকে পাওয়ার জন্য। আমিও তাদের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নিব। তাঁর সাথে ঘুরবো ফিরবো মজা করবো যা খুশী তাই করবো। দরকার হলে তাকে বিয়ে করে তার সাথে ফুলসজ্জাও কর….

আর বলতে পারলো না সানা। তার আগেই তাসির রাগে সানার ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
হঠাৎ তাসিরের এমন এ্যাকশনে সানা ফ্রীজড হয়ে গেলো।
তাসির সানার ঠোঁট কামড়াতে লাগলো। নিজের যত রাগ সানার ঠোঁটের ওপর ঝাড়তে লাগলো। সানা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। কিন্তু তাসিরের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। ঠোঁটে ব্যাথা পেয়ে সানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। সানার চোখের পানি তাসিরের ঠোঁটে লাগতেই তাসিরের হুঁশ আসে। তবে ও সানার ঠোঁট ছাড়ে না।কারণ তাসিরের এখন সানার ঠোঁটের নেশা ধরে গেছে। তাসির কামড়ানো বন্ধ করে সফটলি ভাবে সানার ঠোঁট চুষে নিতে লাগে। তাসিরের ভালোবাসার ছোঁয়ায় সানা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। সানার শান্ত হয়ে আসা দেখে তাসির সানার হাত ছেড়ে দিয়ে, এক হাত সানার কোমড়ে রেখে, আরেক হাত সানার কানের নিচে চুলের ভেতর দিয়ে, সানাকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে, আরো গভীর ভাবে সানার ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকে।
ভালোবাসার মানুষের এমন পাগল করা স্পর্শে সানাও আর চুপ থাকতে পারে না। তাসিরের গলা জড়িয়ে ধরে হাত দিয়ে তাসিরের চুল শক্ত করে ধরে, সানা নিজেও তাসিরের ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। সানার রেসপন্স পেয়ে তাসির আরো পাগলের মতো সানার ঠোঁটে চুমু লাগলো। প্রায় দশ মিনিট ধরে এভাবে চুমু খাওয়ার পর, তাসির সানার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সানার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দুজনেই হাঁপাতে লাগলো।

তাসির হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
……এখনো বলতে হবে কোন অধিকারে জিজ্ঞেস করছি আমি? তাহলে শোন ভালোবাসার অধিকারে। হ্যাঁ তুমি সেদিন ঠিকই বলেছিলে। ভালোবাসি আমি তোমাকে। আর শুধু আজ থেকে না, সেই ছোট্ট বেলা থেকে। ছোট বেলা থেকেই তোমার প্রতি একটা অনূভুতি কাজ করতো। যেটা ছোটবেলায় না বুঝলেও, বড়ো হওয়ার পর ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম। যে আমি আমার এই পিচ্চিটাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।

সানা অভিমানী সুরে বললো।
….মিথ্যুক। ভালোবাসলে তাহলে এতোদিন বলেননি কেন? আর এতো কষ্ট দিলেন কেন আমাকে? ভালোবাসলে কেউ কাওকে এভাবে কষ্ট দেয়? আপনি একটা পচা লোক। এত্তো এত্তো এত্তো গুলা পঁচা আপনি। একদম ভালো না।হুহ্।
কথাগুলো বলে সানা অভিমানে মুখটা আরেক দিকে ঘুরিয়ে নিল।

তাসির সানার গালে হাত দিয়ে সামনের দিকে ঘুরিয়ে অপরাধীর সুরে আদুরে গলায় বললো।
…….আই এ্যাম সরি বাবু। আসলে তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। তাই তোমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে সবসময় আমার বিবেকে বাঁধা দিতো । আর তাছাড়া তুমি আদিত্যর বোন। তোমার সাথে সম্পর্কে জড়ালে আদিত্য যদি আমাকে ভুলবুঝে? সে ভয়ও হতো। তাই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, তোমাকে কখনো আমার মনের কথা বলবো না। সারাজীবন দূর থেকেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো। তবে কাল তোমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার ধারণা ভুল। আমি তোমাকে না পেলে, সেটা তবুও সহ্য করতে পারবো। তবে তোমাকে অন্য কারোর সাথে আমি সহ্য করতে পারবো না। কখনো না। বুঝতে পেরেছ?

তাসিরের কথা শুনে সানা খুশী হয়ে ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো।
তাসির আবার বলে উঠলো ।
….ও ছেলেটাকে তো কিছুতেই ছাড়বো না। ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে ছোঁয়ার? ওকেতো আমি….

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই সানা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
…..ও সায়েম ভাইয়া। আমার খালার ছেলে। আমরা আপন ভাইবোনের মতই। আসলে আমরা সমবয়সী তো,তাই আমদের ভেতর বন্ধুদের মতো সম্পর্ক। তাছাড়া আর কিছুই না। সত্যিই বলছি।

তাসির কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।
…..এক মিনিট তারমানে তুমি ইচ্ছে করে এসব করেছ তাইনা? যাতে আমি এসব দেখে রেগে গিয়ে তোমাকে আমার মনের কথা বলে দেই তাইনা?

তাসিরের কথায় সানা থতমত খেয়ে গেল। এইরে ধরা খেয়ে গেলাম বুঝি। সানা একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….না না ছিঃ ছিঃ কি কি ব বলছেন এসব? আমার মতো মাছুম ইনোসেন্ট বাচ্চার মাথায় এসব কুবুদ্ধি আসতে পারে নাকি? ক কখনই না। তওবা তওবা।

তাসির এক ভ্রু উঁচিয়ে সন্দেহর নজরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সানার দিকে।

অবস্থা বেগতিক দেখে সানা ওখান থেকে বাঁচার জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো।
….আরে ভাইয়া তুমি?

সানার কথা শুনে তাসির ঘাবড়ে যেয়ে তড়িঘড়ি করে সানাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। সেই সুযোগে সানা ওখান থেকে দৌড়ে দরজার কাছে যেয়ে তাসিরের দিকে তাকিয়ে জিব দেখিয়ে হেসে হেসে বললো।
…..উল্লু বানায়া, বারা মাজা আয়া।

তাসির সানার দিকে ধেয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো।
….তবেড়ে,দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। আমাকে বোকা বানানো? আজ তোমার খবর আছে।

সানাকে আর পায় কে?একছুটে ফুড়ুৎ ওখান থেকে।
তাসির দরজা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। এক হাত কমোড়ে রেখে, আরেক হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে ঠোঁট কামড়ে হেসে মাথা নেড়ে নেড়ে বললো।
….পাগলি একটা। আসলেই পিচ্চি।
——————————————

বিকাল ৫-৩০
আবির তানির হাত ধরে ছাঁদে নিয়ে এলো। ছাঁদে এসে তানি আবিরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি ব্যাপার আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন? সবাই কতসুন্দর পুলের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমিও ওদের কাছে যাবো। ছাড়ো আমাকে।
কথাটা বলেই তানি চলে যেতে নিলেই আবির তানির হাত টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো।
…..আরে ওদের আড্ডায় কি মজা আছে? আসল মজা পেতে চাইলে, আমার সাথে আড্ডা দেও। দেখবে মজাই মজা।
কথাটা বলে দুষ্টু হেসে একটা চোখ মারলো আবির।

তানি মুখ কুচকে বললো।
….ছিহ্ তোমার মাথায় শুধু এগুলোই ঘোরে তাইনা? যতসব ঢং।ছাড়তো আমাকে।যেতে দেও।

আবির তানির মুখের দিকে ঝুঁকে দুষ্টু হেসে বললো।
…. আগে আমাকে চুমু খেতে দেও,তাহলে যেতে দেবো। অনেক দিন হলো তুমি আমাকে চুমু দেওনা।

তানি বললো।
….কি মিথ্যুক? অনেক দিন কোথায় হলো? পরশু দিনই চুমু দিলাম।

…..তোহ? সেইইইই পরশু দিন চুমু দিয়েছো। এরমাঝে কত ঘন্টা, কত মিনিট, কত সেকেন্ড পার হয়ে গেছে তুমি জানো? আজতো আমার চুমু চাইই চাই। চুমু না দেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই ছারছি না।

….দেখ আমাকে একদম বিরক্ত করবে না। আজ কোনো চুমু টুমু হবে না। সরো যেতে দেও আমাকে।
কথাটা বলেই তানি আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই আবির পেছন থেকে হাত টেনে ধরে গেয়ে উঠলো।
……চুমু দিয়েছিলে পরশু
আর কেন দেওনি?
দেখ চুমু না দিলে কিন্তু, এখানেই এক দফা দাবিতে অবরোধ ঘোষণা করবো বলে দিলাম।

তানি বললো।
….তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। আমি যখন বলেছি চুমু দেবনা মানে দেবনা।

…..আমিও বলেছি আজ আমি চুমু নিয়েই ছাড়বো। চুমু না দিলে এখনি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করবো আমি। তখন কিন্তু বসে বসে আপসোস করবে। আহারে আমার এত সুন্দর বয়ফ্রেন্ডটা, সামান্য একটা চুমুর জন্য মরে গেল। তখন বুঝবে আমার কদর। এখনো সময় আছে কিন্তু?

তানি ভাবলেশহীন ভাবে বললো
…….তোমার এসব ড্রামা আমার সামনে চলবে না বুজেছ।তাই এসব নাটক করে কোন লাভ হবে না।

তাসির মিছেমিছি ব্যার্থ প্রেমিকের ভাব ধরে বললো।
….কিহ?এতো বড়ো কথা? আমার মতো মহান প্রেমিকের উপর প্রশ্ন উঠানো? ঠিক আছে আজ তোমাকে দেখিয়ে দেবো যে আমি কতো বড়ো মহান প্রেমিক। আজকের পর থেকে আমার নামও ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এক মহান প্রেমিক চুমু না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এসব বলে আবির ছাদের কিনারায় রেলিংয়ের কাছে এসে বললো।
…..এখনো সময় আছে কিন্তু, আমাকে আটকাও।

তানি মুখের ওপর হাত দিয়ে হাই তোলার মতো করে বললো।
….তোমার ড্রামা দেখে আমার ঘুম ধরে যাচ্ছে।

….কিহ্?এতো বড়ো ইনসালাত? এখন তো তুমি বাঁধা দিলেও আমি আর মানবো না হুহ্।হে দুনিয়া বিদায়। দুয়াওমে ইয়াদ রাখনা।

কথাটা বলে আবির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকালো। ভেতরে ভেতরে ভয়ে হাঁটু কাপছে। কিন্তু তানির সামনে কিছুতেই নত হবে না।

নিচে পুলের পাশে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। কথা বলতে বলতে হঠাৎ সায়েমের নজর গেল ওপরে ছাঁদে থাকা আবিরের দিকে।
সায়েম আবিরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললো।
….আবির ব্রো ওখানে কি করছো?

সায়েমের কথায় সবাই ওপরের দিকে তাকায়। আদিত্যও বললো।
….আবির ছাঁদে কি করছিস একা একা?

আবির ওদের দিকে তাকিয়ে দুঃখী গলায় বললো।
…..সুইসাইড গাও ওয়ালো সুইসাইড।
তানির দিকে আঙুল তুলে বললো।
……এই বাসান্তি আমাকে চুমু দেয়না। তাই আমি সুইসাইড করছি। বিদায় গাও ওয়ালো বিদায়।

আবিরের কথায় সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সায়েম নিজের ফোন বের করে বললো।
….দাঁড়াও ব্রো আগে ভিডিও অন করি। তারপর সুইসাইড করো। এই প্রথম চুমুর জন্য কেউ সুইসাইড করছে। এই ভিডিওতো একদম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ভাইরাল হয়ে যাবে। মরার পরে তুমি একদম সেলিব্রিটি হয়ে যাবে। হা হা হা…

তানি এদিকে আবিরের কান্ড দেখে রাগে কটমট করছে। সবার সামনে কিভাবে চুমুর কথা বলছে?বেশরম কোথাকার। তানি দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..তুমি যদি এখুনি এই ড্রামা বন্ধ না করো,তাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।

আবির ভয় পেয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..না না তার কি দরকার আছে? তুমি যখন এতো ইনসিস্ট করছো, তাহলে কি আর আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি বলো?

আবির তানির কাছে এসে বললো।
….চলো আমার কিউটিপাই নিচে যাই।

তানি আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ভেংচি কেটে চলে গেলো।
আবিরও ওর পেছন পেছন গেল। মনে মনে ভাবলো, বাল বাল বাচ গেয়া।

একটু পরে সবাই বাসায় চলে গেলো।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here