ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৫২

0
8317

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৫২

★ সন্ধ্যা ৭-৩০
পুরো ফার্মহাউস জু্ড়ে জমজমাট আয়োজন করা হয়েছে। রঙবেরঙের ফেইরিলাইটে চারিদিকে ঝলমল করছে। সবার মাঝেই খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
একটু পরে তানি আর সানা মিলে বঁধুর সাজে সজ্জিত নূরকে নিয়ে এসে স্টেজে বসালো।

স্টেজে বসার পর নূর চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আদিত্য কোথাও নেই। নূর মনে মনে ভাবলো, আদিত্য এখনো আসেনি কেন?

একটু পরে হঠাৎ সামনে থেকে জোরে জোরে ঢোলের শব্দ আসলো। নূর সহ বাকি সবাই কৌতূহলি হয়ে সামনে তাকালো।

সামনে থেকে আবির, তাসির আর সায়েম নিজেদের গলায় বড়ো বড়ো এক একটা ঢোল ঝুলিয়ে, দুই হাত দিয়ে বাজাতে বাজাতে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। ঢোল বাজাতে বাজাতে ওঁরা তিনজন স্টেজের কাছে এসে৷ লাইন হয়ে দাড়ালো।

আবির ঢোলে একটা বাড়ি দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
♬ ♬ বালিকা তুমহারে সাপনো কা
♬ ♬ রাজকুমার আ রাহা হে

(এবার তাসির ঢোলে বারি দিয়ে বললো)
♬ ♬ বরমালা ডোলি বারাত সাজাকে
♬ ♬ দুলহা ছা রাহা হে

(এবার সায়েম ঢোলে বারি দিয়ে বললো)
♬ ♬ শুভমঙ্গল সাবধান

(এরপর ওঁরা তিনজন দুই দিকে সরে দাঁড়াল। আর আদিত্য সাদা ঘোড়ায় চড়ে টগবগ টগবগ করে ওখানে এন্ট্রি নিল। নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। ও স্বপ্ন দেখছে নাকি এসব বাস্তবে ঘটছে তা বুঝতে পারছে না। আদিত্যকে আজ নূরের স্বপ্নে দেখা হুবহু সেই রাজকুমারের মতো লাগছে। সাদা শেরওয়ানি, মাথায় সাদা পালক ওয়ালা পাগড়ি, পায়ে সোনালী নাগরা সু সবমিলিয়ে আদিত্যকে আজ সত্যিকারের রাজকুমার লাগছে। নূর যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সানা আর তানি নূরের হাত ধরে নূরকে স্টেজের নিচে এনে দাঁড় করালো।
আদিত্য ঘোড়া থামিয়ে ঘোড়া থেকে নেমে নূরের দিকে আসতে লাগলো।
আবির, তাসির আর সায়েম ঢোল গলা থেকে নামিয়ে, তিনজন একসাথে লাইন হয়ে নেচে উঠে গাইলো।)
♬ ♬ হে আ,

(আদিত্য দুই হাত ছড়িয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে গাইলো)
♬ ♬ হিরিয়ে সেহরা বানধ কে মে তো আয়া রে

(ওঁরা তিনজন গাইলো)
♬ ♬ হে আ,,,

(আদিত্য ওদের সাথে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ ডোলি বারাত ভি সাথ মে, মে তো লায়া রে
♬ ♬ আব তো না হোতা হে এক রোজ ইন্তেজার
♬ ♬ সোনি আজ নেহি তো কাল হে
♬ ♬ তুঝকো তো বাস মেরি হোনি রে

♬ ♬ তেনু লেকে মে জাভাঙ্গা
♬ ♬ দিল দেকে মে জাভাঙ্গা(২)

(ওঁরা তিনজন)
♬ ♬ হে আ,, হে আ

(আদিত্য নূরের দিকে হাত তুলে নেচে গাইলো)
♬ ♬ আ কেহ দে জামানে সে
♬ ♬ তু মেরি ইস্ক কি হে দাস্তা

(ওরা তিনজন)
….হে আ,হে আ

(আদিত্য)
♬ ♬ ও জানিয়া কেহ দে বাহানেসে
♬ ♬ মে তেরা জিসম হু,তু মেরি জা
♬ ♬ কুছ না ছুপা

♬ ♬ মুশকিলো সে মিলতা হে
♬ ♬ এইসা সোনা পিয়ার
♬ ♬ সোনি চিজ তেরি জেইছি
♬ ♬ না মুঝকো,না মুঝকো খোনি রে

♬ ♬ তেনু লেকে মে জাভাঙ্গা
♬ ♬ দিল দেকে মে জাভাঙ্গা (২)

♬ ♬ জা এইসে না তাড়পা কে
♬ ♬ দেখলে মাদভাড়ী আন্দাজ ছে

(ওরা তিনজন)
♬ ♬ হে আ, হে আ

( আদিত্য নূরের কাছে এসে নূরের চারিদিকে ঘুরে গাইলো)
♬ ♬ ও জাঁ তু আওয়াজ কো আপনি
♬ ♬ আ মিলা আব মেরে আওয়াজ ছে

(আদিত্য এবার নূরের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে, এক হাত নূরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে গাইলো)
♬ ♬ আরে হা কেহ দে হা

(নূর বুঝতে পারছে আদিত্য ওর উত্তর চাইছে। নূর ছলছল চোখে প্রাপ্তির হাসি দিয়ে আদিত্যের হাতের ওপর নিজের এক হাত দিয়ে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ কার দিয়া তুনে মুঝকো ইউ বেকারার
♬ ♬ মাহি কেহ দিয়া দুনিয়া সে
♬ ♬ মে তেরি,মে তেরি হো গায়ি রে

♬ ♬ তেরে নাল মে আভাঙ্গি
♬ ♬ শাশুরাল মে জাভাঙ্গি

(আদিত্য প্রাপ্তির হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। বাকিরা সবাই হইহই করে উঠে আদিত্য আর নূরের চারিদিকে ঘুরে নাচতে লাগলো।

——————-

রাত ৮-৩০
শেষমেশ সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টা এসেই গেল। যার জন্য আদিত্য আর নূর দুজনেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। আদিত্য আর নূরের মাঝখানে একটা সাদা পর্দা ঝুলিয়ে দিল।

কাজী সাহেব প্রথমে আদিত্যের কাছে আসলো। আদিত্যকে কবুল বলতে বললে,আদিত্য এক মুহূর্তও দেরি না করে তড়িৎ গতিতে তিনবার কবুল বলে ফেললো। যা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসলো।
কাজী সাহেব এবার নূরের কাছে এসে নূরকে কবুল বলতে বললো। কিন্তু নূর সহজে কবুল বলছে না। এটা দেখে আদিত্য একটু ঘাবড়ে গেল। নূর কবুল বলছে না কেন? টেনশনে আদিত্যের ঘাম ছুটে যাচ্ছে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর নূর কবুল বললো। আর আদিত্যের জানে পানি এলো। এই মেয়েটা একদিন আমাকে হার্ট অ্যাটাক দিয়েই ছাড়বে। কথাটা ভেবে আদিত্য মুচকি হাসলো।
কাজী বললেন।
….আলহামদুলিল্লাহ, এখন থেকে তোমরা দুজন স্বামী স্ত্রী হলে।

কথাটা শোনার সাথেই আদিত্য আর নূরের ভেতর এক ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে গেলো। ওরা সত্যি সত্যিই আজ থেকে স্বামী স্ত্রী হয়ে গেলো।

সায়েম, নিশি আর সানা লাইন হয়ে আবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওরা কোনো সিরিয়াস মিশনে এসেছে, আর আবির ওদের ক্যাপটেন। আবিরের হাতে একটা বক্স। আর বক্সের ভেতর আছে আদিত্যের জুতো। আবির ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কঠিন করে বললো।
….এই বক্স, আজকের দিনে এটা শুধু জুতার বক্স না। এটা হলো মহামূল্যবান খাজানা। মনে রাখবে যাই হয়ে যাক না কেন। যত বড়ো ঝড়, তুফান, টর্নেডো, সিডর, বুলবুলি বা বুলবুলির মা বাবা চৌদ্দ গুষ্টি যেই আসুক না কেন। দুনিয়া উল্টে গেলেও এই বক্স যেন মেয়েপক্ষের হাতে কিছুতেই না যায়। বিশেষ করে তানি আর তাসিরের হাতে যেন না যায়। আমরা ওদের কাছে কিছুতেই হারবো না। তাই “প্রাণ যায় পার বক্স না যায়”। মনে থাকবে সবার?

সায়েম, নিশি আর সানা একসাথে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
….ইয়েস স্যার।

আবির আর্মির ক্যাপ্টেন দের মতো চেচিয়ে বলে উঠলো।
….সো গাইস, হাউ ওয়াজ দ্যা জোষ?

সবাই একসাথে চেচিয়ে উঠে বললো ,
….. হায় স্যার।

….হাউ ওয়াজ দ্যা জোষ?

….হায় স্যার।

…হুম গুড।

আবির নিজের এক হাত সামনে নিয়ে বললো।
….তাহলে শুরু করা যাক? মিশন,,,,

আবিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়েম বলে উঠলো।
….মিশন কাশ্মীর?

আবির বললো,
…আরে না।

সানা বলে উঠলো।
….মিশন ইস্তাম্বুল?

….আরে না।

এবার নিশি বলে উঠলো।
….মিশন ইম্পসিবল?

আবির এবার ধমক দিয়ে।
….চুপ করবি তোরা? আমি বলতে চাচ্ছি মিশন জুতা রক্ষা শুরু করা যাক?

….ওঁকে বস।

আবির বললো,
…আপাতত এটা আমার কাছেই থাক। আমার কোনো কাজ পড়লে তোদের কাছে দিয়ে যাবো ঠিক আছে?

….ঠিক আছে।

দূর থেকে এসব দেখে তানি বাঁকা হেসে মনে মনে বললো।
….মাত্র পাঁচ মিনিটেই তোমার এই মিশন যদি আমি ভঙ্গ না করে দিয়েছি তো আমার নামও তানি না হুহ্।
——-

সানা হেঁটে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল, হঠাৎ কেও ওর হাত টান দিয়ে বাসার পিছন সাইটের দিকে নিয়ে গেল। সানা সামনে তাকিয়ে দেখলো এটা আর কেউ না স্বয়ং তাসির। তাসির সানাকে বাসার পেছনে নিয়ে এসে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। নিজের দুই হাত সানার দুই পাশে দেয়ালে রেখে নেশা ভরা চোখে সানার দিকে তাকিয়ে রইলো।

সানা মুচকি হেসে বললো।
….বাব্বাহ্ আজকে মিঃ বোরিং এতো রোমান্টিক হলো কিভাবে?সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে আজ?

তাসির সানার গালে আঙ্গুলের উল্টো দিক দিয়ে স্লাইড করে নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
….সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে সেটা জানিনা । তবে চাঁদ তো আজ আমার সামনেই আছে। তোমাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে যে নিজেকে কিছুতেই তোমার কাছে আসা থেকে আটকাতে পারছিলাম না।

তাসিরের কথায় সানা নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো। তারপর আবার একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
……দেখুন আপনি যদি এসব ভাইয়ার জুতা নেওয়ার ধান্দায় করে থাকেন, তাহলে আগেই বলে দেই জুতা আমার কাছে নেই। আর থাকলেও আপনাকে কখনোই দিতাম না।

তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি বলছ এসব? জুতো কেন নিতে যাবো আমি?
তারপর সানার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে বললো।
….আমার কাছে এতো দামী জিনিস থাকতে ওই সস্তা জুতোর পেছনে কেন ছুটবো আমি?

তাসিরের ছোঁয়ায় সানা এবার কেপে উঠলো। তাসির মুখটা এগিয়ে সানার কপালে একটা চুমু খেল। তারপর দুই গালে চুমু খেল। সানার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতেই সানা তাসিরের ঠোঁটের উপর নিজের তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে তাসিরকে আটকে দিল। তাসির দুই ভ্রু উঁচু করে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? সানা বলে উঠলো।
…..এখন চুমু খেলে আমার লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে। তাই এখন নো লিপ কিস।

তাসির সানার হাতটা সরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। তারপর সানার ঠোটের কাছে যেয়ে বললো।
….হলে হোক, তোমার সব সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধু আমার। তাই অন্য কাউকে লিপস্টিক দেখানোর দরকার নেই। এখন ভালো মেয়ের মতো আমাকে চুমু খেতে দেও।
কথাটা বলে তাসির সানার ঠোঁটে ডুব দিল। সানাও আর মানা না করে তাসিরের তালে তাল মেলালো। দুজন দুজনকে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে লাগলো।
——–

সায়েম এদিক ওদিক তাকিয়ে নিশিকে খুঁজছে। একটু দূরে তাকাতে দেখলো নিশি নানান পোজে সেলফি নিতে ব্যাস্ত। সায়েম মুচকি হেসে নিশির কাছে এসে বললো।
……বাচ করেন এবার, নাহলে কিন্তু ফোন ওভারলোড হয়ে যাবে।

নিশি সেলফি তোলা বন্ধ করে সায়েমের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..আপনি আবারও বকবক শুরু করে দিয়েছেন? আপনাকে না বলেছি আমার মতো কম কথা বলা শিখবেন। দেখুন আমি কতো চুপচাপ শান্ত থাকি। এখনো কি একটা কথাও বলেছি আমি? বলুন বলেছি?

সায়েম মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নিশি বলে উঠলো।
….না না আপনি বলুন আমি বলেছি কিছু? এইযে আপনি কখন থেকে বলেই যাচ্ছেন, আমি বলেছি কিছু? আমার মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে দেখে কি বলেই যাবেন আপনি? একটু চুপ থাকতে পারেন না?

সায়েম বুঝতে পারছে এই মেয়েটার মাথার তার সবগুলোই ছেড়া। সায়েম মনে মনে একটা বুদ্ধি এটে নিশির দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো।
…..কি করবো বলুন, আমাকে তো কেউ আপনার মতো এতো কম কথা বলা শেখাইনি। তাইতো আমি এতো কথা বলি। আপনি যদি আমাকে একটু আপনার মতো এত সুন্দর করে কম কথা বলা শিখিয়ে দিতেন তাহলে উপকৃত হতাম।

সায়েমের কথা শুনে নিশির নিজের ওপর খুব গর্ব গর্ব ভাব হলো। নিশি এটিটিউডের সাথে বললো।
….ঠিক আছে, ঠিক আছে এত করে যখন বলছেন তখন মানা করি কি করে? শিখিয়ে দেব আপনাকে।

….সত্যি আপনি কতো উদার মনের মানুষ। কিন্তু কিভাবে শিখাবেন? আজকের অনুষ্ঠান শেষ হলেতো সবাই চলে যাবে। আপনার সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে?

নিশি একটু ভেবে বললো।
….এক কাজ করুন, আপনার ফেসবুক আইডি বলুন। আমরা দুজন ফেসবুকে এড হয়ে যোগাযোগ রাখবো।

এটাই তো শুনতে চাচ্ছিল সায়েম। মনে মনে খুশি হয়ে সায়েম সাথে সাথে নিজের ফেসবুক আইডি বলে দিল। নিশি রিকুয়েষ্ট দিলে সায়েম এড করে নিল। সায়েম নিশির দিকে তাকিয়ে বললো।
….একটা কথা বলবো?

….হ্যাঁ হ্যাঁ আপনিই তো বলবেন। আমার মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে তো আর এতো কথা বলতে পারে না। যাইহোক বলুন কি বলবেন।

…..বলছিলাম যে আমাদের তো এখন যোগাযোগ রাখতে হবে। মাঝে মাঝে দেখাও করতে হবে। তাই আমরা যদি বন্ধু হয়ে যাই তাহলে ব্যাপার টা অনেক ইজি হয়ে যায় তাইনা? সো ক্যান উই ফ্রেন্ডস?

….হুম ওঁকে, উই আর ফ্রেন্ডস নাও।

সায়েম বাঁকা হেসে মনে মনে বললো। তারছেড়া মেয়েদের পটানো আরো সহজ। তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বললো।
….এখন আমারা যেহেতু বন্ধু হয়ে গেলাম, তাহলে আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি? ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড?

….হুম বলতে পারেন।এমনিতেও আমি আপনার থেকে ছোট। তাই তুমি করে বললে কোনো সমস্যা নেই।

….থ্যাংক ইউ। বায়দা ওয়ে তোমাকে কিন্তু আজ সেই সুন্দর লাগছে।

নিশি এটিটিউড নিয়ে বললো।
…আই নো দ্যাট। টেল মি সামথিং নিউ।

…. তো নিউ হলো, আমি কিন্তু অনেক ভালো ফটোগ্রাফার। ফ্রেন্ড সার্কেলে আমার ফটোগ্রাফির অনেক চর্চা আছে। তুমি চাইলে আমি তোমার সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিতে পারবো। দেখবে তোমার ছবিতে লাইকস আর কমেন্টের বর্ষণ হয়ে যাবে।

নিশি অত্যন্ত এক্সাইটেড হয়ে বললো।
….সত্যিই?
আবার নিজের এক্সাইটিং দমিয়ে ভাব নিয়ে বললো।
…. আই মিন, এতো কথা বলার অভ্যাস তো আর আমার নেই। আপনি যখন এতো রিকুয়েষ্ট করছেন, তাহলে আপনাকে একটা চান্স দেওয়া উচিৎ। ঠিক আছে তুলুন ছবি।

সায়েম মুচকি হেসে বললো।
…..সো কাইন্ড অফ ইউ।

—————

আবির আদিত্যর জুতোর বক্স হাতে নিয়ে এক কোণায় একটা চেয়ারে বসে আছে। দূর থেকে তানি সেটা দেখে বাকা হেসে কোমড় দুলিয়ে হেঁটে আবিরের দিকে এগিয়ে গেল। আবিরের সামনে এসে হঠাৎ করে আবিরকে দেখার ভান করে বলে উঠলো।
…..আরে তুমি এখানে? সবাইকে ছেড়ে এখানে কোণায় বসে কি করছো?

আবির তানিকে দেখে সাথে সাথে হাতের বক্সটা পেছনে লুকালো। তারপর তানির দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
…..হ্যাঁ তো, আমি দেশের একজন সচেতন নাগরিক। তাইতো সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন করছি। তোমারও করা উচিৎ?

তানি ফট করে আবিরের পাশে বসে আবিরের দিকে ঝুকে বললো।
…..কি?

তানি আবিরের দিকে ঝুকে যাওয়ায় আবির পেছনের দিকে হেলে গেল। তারপর আবারও জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেইন।

তানি আবিরের দিকে আরো একটু ঝুঁকে বললো।
….আর ইউ সিওর?

তানির এতো কাছে আসায় আবিরের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে। আবির একটা ঢোক চিপে বললো।
….অ অফকোর্স।

তানি মিছে অভিমান দেখিয়ে বললো।
…..তুমি এটা বলতে পারলে আমাকে? যাও তোমার সাথে কোনো কথা নেই। আমি আজ কতো সুন্দর করে তোমার জন্য এতো সুন্দর করে সেজেগুজে আসলাম। আর তুমি কিনা একটা বারও আমার প্রসংশা করলে না। একবারও বললে না আমাকে কেমন লাগছে দেখতে।

আবির বেচারা পরে গেছে মহা মুশকিলে। তানিকে এতো কাছে পেয়েও রোমাঞ্চ করতে পারছে না। নাহলে যদি আবার ওদের মিশন ফেল হয়ে যায় সেই ভয়ে। আবির কোনরকমে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….সু সুন্দর লাগছে।

….শুধু সুন্দর?

….না না খুব সুন্দর লাগছে। একদম আউট অফ দা ওয়ার্ল্ড।

তানি খুশিতে গদগদ হওয়ার ভান ধরে লাজুক হেসে আবিরের বুকে আলতো করে কিল মেরে বললো।
….যাহ্ কিযে বলোনা? দুষ্টু একটা।

তানি এবার আবিরের মুখের কাছে ঝুকে এক হাত আবিরের কাঁধে রেখে আরেক হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে আবিরের কপাল থেকে স্লাইড করে নিচের দিকে আসতে আসতে, দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বললো ।
…. সুন্দর তো তোমাকে লাগছে। চোখই ফেরাতে পারছি না। আজকের এই লুকে তোমাকে একদম হ…..ট লাগছে। ইচ্ছে করছে কামড়ে খেয়ে ফেলি।

ব্যাচ্ আবিরের সব সংকল্প, পরিকল্পনা এখানেই শেষ। সবকিছু ভুলে গলে একদম ফালুদা হয়ে গেছে। তানির দিকে অধীর আকাঙ্খার নজরে তাকিয়ে বললো।
….তো খাওনা কে মানা করেছে? আম অল ইউরস বেবি।

তানি লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বললো।
…তাহলে চোখ বন্ধ করো। আমার লজ্জা করে।

আবির যেন হাতে চাঁদ পেয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে ঠোঁট চোখা করে তানিকে আমন্ত্রণ জানালো।
তানি বাঁকা হেসে আবিরের হাতের ওপর স্লাইড করতে করতে পেছনে হাত বাড়িয়ে আস্তে করে জুতার বক্সটা নিয়ে নিল। তারপর ওখান থেকে ফুড়ুৎ হয়ে গেলো। কিছু দূর যেয়ে আবার আবিরের দিকে তাকালো। আবির এখনো ঠোঁট চোখা করে চুমুর আশায় বসে আছে। তানি সেটা দেখে মুখে হাত চেপে হাসলো। তারপর বিড়বিড় করে আপসোসের সুরে বললো।
…..চুঃ চুঃ সো সরি বেবি। বেটার লাক নেক্সট টাইম।

আবির অনেকক্ষণ ধরে ঠোঁট চোখা করে চুমুর আশায় বসে আছে। কিন্তু সামনে থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আবির চোখ বন্ধ করেই বলে উঠলো।
….কাম অন কিউটি কখন দিবা? এত লজ্জা কিসের?

নাহ তবুও কোনো রেসপন্স নেই। আবির না পেরে এবার চোখ খুলে সামনে তাকালো। আর সামনে তাকাতেই আবির বেকুব হয়ে গেল। কারণ সামনে তানি নেই। বরং সামনে সায়েম, নিশি,আর সানা কোমড়ে দুই হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আবির ওদের দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কিরে তোরা এখানে কি করছিস? আর তানি কোথায় ওতো এখানেই ছিল?

সানা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
….এখুনি বুঝতে পারবা, আগে হাত দুটো তো সামনে আনো।

….কেন হাতে আবার কি হয়ে,,,,
আর বলতে পারলো না আবির।কারণ হাত সামনে এনে দেখলো ওর হাতে জুতার বক্সটা নেই। আবিরের বুঝতে বাকি রইল না যে এটা তানির কাজ। তাহলে এইজন্যই হঠাৎ এতো প্রেম উৎলে পরছিল।

সানা রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…..কি বলেছিলে তখন? জান যায় পার বক্স বা যায়? তো এখন কই গেল তোমার জান?

সায়েম বলে উঠলো।
….ব্রো তোমার কাছে এটা আশা করেছিলাম না। শত্রুপক্ষের কাছে এভাবে পরাজিত হয়ে গেলে? ভেরি শেইমফুল।

আবির বুঝতে পারছে জুতো তো গেছেই, এখন পাবলিক ধোলাই না হয়ে যায়। তাই ওদের হাত থেকে বাঁচার জন্য, ওর অলটাইম ফেবারিট মেলোড্রামা শুরু করে দিল। দুঃখী ভাব ধরে ব্যাথীত কন্ঠে বলে উঠলো।
….এতো বড় ধোঁকা? কিভাবে করতে পারলে আমার সাথে এতো বড়ো ধোঁকা কিউটি? রোমাঞ্চের নামে বাম্বু দিয়ে চলে গেলে? এটা তুমি ঠিক করোনি কিউটিপাই। একদম ঠিক করোনি। এখন জীবন নিয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ?
সানাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
….বিদায় তোদের, দুয়াও মে ইয়াদ রাখ না।
কথাটা বলে আবির ওখান থেকে চলে যেতে যেতে ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকদের মতো গাইলো।
♬ ♬ এ দুনিয়া, এ মেহফিল
♬ ♬ মেরে কাম কা নেহি
♬ ♬ মেরে কাম কা নেহি

ওরা তিনজন হা হয়ে আবিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। আবির চলে যেতেই সায়েম বলে উঠলো।
….এটা কি হলো?

সানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
…কি আর হবে, দ্যা গ্রেট আবিরের ফালতু ওভার অ্যাক্টিং।
কথাটা বলে সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
————–

অনুষ্ঠান শেষে এখন রওনা দেওয়ার পালা। সবাই বাইরে এসে যার গাড়িতে উঠে বসলো। আদিত্য নূরের হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে এলো। নূরের বাবা আর চাচারা নূর আর আদিত্যের কাছে আসলো বিদায় বলতে। নূরের চাচা বলে উঠলো।
….আমরা তাহলে আসি এখন।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে। আর কালকের রিসিভশন পার্টিতে অবশ্যই আসবেন কিন্তু।

…হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই আসবো।

নূরের বাবা নূরের আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আমি অন্য সব মেয়ের বাবার মতো বলবো না যে, আমার মেয়েটাকে ভালো রেখ। কারণ আমি জানি এই পৃথিবীতে তোমার থেকে বেশি কেউই নূরকে ভালো রাখতে পারবে না। আমার দোয়া তোমাদের সাথে রইলো। সুখি হও তোমরা।

আদিত্য সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে বললো।
….ধন্যবাদ।

নূরের বাবা এবার নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বললো।
…এখন থেকে তোর নতুন জীবনের শুরু হলো। সেখানে তুই অনেক সুখে থাকিস মা। যে সুখটা আমি কখনো তোকে দিতে পারিনি। ভালো থাকিস মা। আমরা আসি এখন।

নূর ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নূরের বাবাও নীরবে চোখের পানি ফেললো। কতক্ষণ পর নূর ওর বাবাকে ছেড়ে দিল। তারপর আবার রবিকে ধরে কাঁদতে লাগলো।
কিছুক্ষণ নূরের বাবা পর নূরকে ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল।
আদিত্য নূরের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..এখন তাহলে আসি। কালকে রিসিপশনে দেখা হচ্ছে।

নূরের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।

তারপর নূরের বাবারাও তাদের গাড়িতে যেয়ে বসলো। একটু পরেই সবাই ফার্মহাইস থেকে বেড়িয়ে পড়লো।

আদিত্য এক হাত দিয়ে নূরের এক হাত ধরে রেখেছে । আর এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। মাঝে মাঝে আবার নূরের ধরে থাকা হাতের ওপর চুমু দিচ্ছে। নূর লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তো রেডিতো প্রাণপাখী আমাদের ছোট্ট নীড়ে যাওয়ার জন্য?

নূর কিছু না বলে শুধু লাজুক হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

অনেকক্ষণ পর নূর দেখলো গাড়ি সাভার ছেড়ে চলে যাচ্ছে। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..তুমি তো বলেছিলে তোমাদের বাসা সাভারে,তাহলে সাভার তো পেছনে ফেলে আসলাম?

…..আমরা সাভারের বাসায় যাচ্ছি না।

….তাহলে কি তোমার ফ্লাটে যাচ্ছি?

….প্রথমত ওটা আমার না বলো আমাদের ফ্লাট। এখন থেকে আমার আর তোমার বলতে কিছু নেই। যা আমার এখন থেকে সটা তোমারও। বরং আমার সবকিছুর ওপর আমার থেকে বেশি তোমার অধিকার বুঝেছ বউ? আর হ্যাঁ আমরা ফ্লাটেও যাচ্ছি না।

…..তাহলে কোথায় যাচ্ছি?

আদিত্য নূরের হাতে আবার চুমু দিয়ে বললো।
…..দ্যাটস্ সারপ্রাইজ প্রাণপাখী। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, তারপর দেখতে পাবে।

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকালো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here