ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৬৬

0
6307

#ভালোবাসার_চেয়েও-বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৬

★ নূর টেবিলের উপর হাঁটু ভাজ করে রানীদের মতো মুড নিয়ে বসে আছে। কপালে একটা পেপসির মুখ নিয়ে টিপ বানিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। একটা চেয়ারের উপর এক হাত ঠেকিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে রানী শিবগামী সেজে বসে আছে। ওর সামনে দুই দিকে দুই সাড়ি হয়ে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে। আর নূরের ডান হাতের কাছে একজন মাথার উপর একটা স্টিলের বোল দিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে কাটাপ্পা সেজে দাঁড়িয়ে আছে।

নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।বেচারা একটা শকের ভেতরে আছে। বাকি ছেলেরাও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছে।

নূর সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো।
….রাণী শিবগামী আদেশ করছে আজকের দরবার শুরু করা হোক। আজকে আমি আমার প্রজাদের ফরিয়াদ শুনবো। তাদের সব সমস্যা, দুঃখ দুর্দশা দূর করবো। এ মেরা বাচ্চান(বাচান) হে, মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান(শাসান)। তাহলে দরবার শুরু করা হোক।

সৈন্য সেজে থাকা একটা মেয়ে মাথা ঝাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….প্রথম ফরিয়াদি হাজির হো,,

একটু পরে ওখানে তানি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তারপর নূরের দিকে ঝুকে হাত দিয়ে আদাব করে বললো।
…..রানী শিবগামীর জয় হোক জয় হোক।

নূর হাত উঠিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে , ঠিক আছে বালিকা। বলো কি সমস্যা তোমার?

তানি দুঃখী ভাব ধরে বলে উঠলো।
….রানী সাহেবা, কি বলবো আপনাকে। আমার অনেএএএএক বড়ো একটা রোগ হয়েছে। দুনিয়ার যত ডাক্তার, কবিরাজ, জোত্যিষি, ফকির বাবা সব দেখিয়ে ফেলেছি তবুও আমার এই রোগের কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আপনিই বলুন আমি কি করবো রানী সাহেবা? কি হবে আমার?

তানির কথা শুধু আবির মনে মনে ভাবলো, তানির এমন কি রোগ হয়েছে যা আমি জানি না? ওর কি কোনো বড়ো রোগ হয়েছে?

নূর বলে উঠলো।
…..বলো বালিকা কি এমন রোগ হয়েছে তোমার?

তানি দুঃখী ভাব ধরে বললো।
….রানী সাহেবা, আমি যখন দাঁড়ায় তখন আমি বসিনা, আমি যখন বসি তখন দাড়ায় না। আমি যখন হাঁটি তখন দাঁড়ায় না, যখন দাঁড়ায় তখন হাঁটি না। আমি যখন কথা বলি তখন চুপ থাকিনা,যখন চুপ থাকি তখন কথা বলিনা। আমি যখন ঘুমাই তখন চোখে দেখিনা, যখন চেয়ে থাকি তখন ঘুমাই না। আমি যখন খাইনা তখন ক্ষুধা লাগে , যখন খাই তখন ক্ষুধা লাগে না। এখন আপনিই বলুন আমি কি করবো? আমার এই ভয়ংকর রোগ কি কখনো সাড়বে না?

তানির রোগের বর্ননা শুনে বেচারা আবিরের এখন নিজেরই আইসিও তে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা। ও কি ভাবছিল আর কি হলো। ওতো ভুলেই গিয়েছিল যে এদের সবগুলোর স্ক্রু ঢিলা হয়ে আছে। আবির দুষ্টু হেসে আস্তে করে বললো।
….ভাই আমারতো জানাই ছিলনা যে,আমার হবু বউয়ের এতো বড়ো বড়ো রোগ আছে।
আবিরের কথায় সবগুলো মুখ টিপে হাসলো।

তানির কথা শুনে নূর হাতের উপর থুতনি ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করে বললো।
….হুমমম,,এটাতো অনেক বড়ো একটা রোগ। আসলে এটা রোগ না এটা একটা অভিশাপ তোমার ওপর। তোমার পূর্ব জনমের অভিশাপ এটা।

তানি আশ্চর্য হয়ে বললো।
….কিহহ্ আমার পূর্বজীবনের অভিশাপ? কিন্তু আমি কি এমন অন্যায় করেছি যে আমার ওপর এত বড়ো অভিশাপ দেওয়া হয়েছে রানী সাহেবা?

নূর ড্রামাটিক ভাবে বললো
….করেছ, তুমি অনেক বড়ো অন্যায় করেছ। তুমি একজোড়া নববিবাহিত স্বামী স্ত্রীকে তাদের বাসর ঘরে তাদের মিলন হওয়ার আগেই তাদের মেরে ফেলেছ তুমি।

কথাটা শোনার সাথে সাথে সবাই টিভিসিরিয়ালের মতো তিনবার করে রিয়্যাকশন দিতে লাগলো। পেছন থেকে একটা মেয়ে ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিতে লাগলো।
…..ধুম তানা না না, ধুম তানা না না

আবির আবারও দুষ্টু হেসে বললো।
…আয় হায় আমার বউতো দেখছি খুনিও। আমারে আবার পুলিশ এসে ধরে না নিয়ে গেলে হয়।

তানি অপরাধী সুরে বললো বলে উঠলো।
…..কিহহ্ আমি একজোড়া স্বামী স্ত্রীকে খুন করেছি?

নূর বলে উঠলো।
….হ্যাঁ তুমি একজোড়া মশা স্বামী স্ত্রীকে মেরে ফেলেছ। মশা স্বামী স্ত্রী যখন বাসর করতে যাচ্ছিল তখন তুমি তাদের ওপর এ্যারোসল স্প্রে করে দিয়েছ। আর সাথে সাথে সেই স্বামী স্ত্রী মৃত্যু বরণ করেছে। এবং মরার আগে তারা তোমাকে এই অভিশাপ দিয়ে গেছে। যারজন্য তোমার এই ভয়ংকর রোগ হয়েছে।

তানি দুই কানে হাত চেপে ধরে ধপ করে মাটিতে বসে পরে কান্নার ভান করে বললো।
….না না এ হতে পারে না। এতো বড়ো অন্যায় আমি কি করে করতে পারলাম? কি করে? কি করে? এখন আমি কি করবো রানী সাহেবা? কি করে আমি এই পাপের ভার থেকে মুক্ত হবো? আমি কি করেই বা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো? দয়া করে বলে দিন রানী সাহেবা?

নূর গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….হুমমম , উপায় একটা আছে। তবে অনেক কঠিন পারবে তো তুমি করতে?

….হ্যাঁ হ্যাঁ রানী সাহেবা যত কঠিনই হোক না কেন, আমি সবই করবো।আপনি বলে দিন কি করতে হবে?

…ঠিক আছে, তোমাকে একশো মশা প্রেমিক প্রেমিকার জুটিকে খুঁজে বের করে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তবেই তুমি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। এবং তোমার রোগও সেরে যাবে। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

….ঠিক আছে রানী সাহেবা আমি তাই করবো। শুকরিয়া আপনার রানী সাহেবা আপনিই অনেক মহান।
কথাটা বলে তানি আদাব জানিয়ে ওখান থেকে সরে গেল।

এদের কথাবার্তা শুনে আবিরের এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। লাইক সিরিয়াসলি, মশার বিয়ে? তাও আবার একশো মশার জুটির?

এবার আবার সেই সৈন্যটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
…পরবর্তী ফরিয়াদি হাজির হোক।

একটু পরে সানা ওখানে হেলেদুলে হাজির হলো। তারপর নূরের তাকিয়ে বললো।
…ওয়াট’স আপ শিবস ম্যাম? অল গুড?

নূর বলে উঠলো।
….ইয়া ইয়া আ্যাম কুল। ওয়াট এবাউট ইউ? টেল মি ওয়াট ইস ইউর প্রবলেম?

সানা ডানে বামে হেলেদুলে মুখে আঁচল চিবিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
…..আসলে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার একটা ইচ্ছে আছে। আপনি অনুমতি দিলে বলাতাম?

….হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই নির্ভয়ে বলো কি বলবে?

….আসলে আমি একজনকে না খুব পছন্দ করি। তাকে বিয়ে করতে চাই।

সানার কথা শুনে তাসির মনে মনে গদগদ হয়ে গেল। ও ভাবছে সানা ওর কথাই বলছে।

নূর বলে উঠলো।
…বলো কাকে বিয়ে করতে চাও তুমি?

সানা লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
….আমার না স্পাইডার ম্যান অনেক পছন্দ। আমি স্পাইডার ম্যানকে বিয়ে করতে চাই।

বেচারা তাসিরের মনটা বেলুনের মতো ফটাস করে ফুটে গেল। শেষমেষ এই ছিল ওর কপালে? এখন স্পাইডার ম্যান কিনা ওর সতীন হবে?
তাসিরের এমন চুপসে যাওয়া চেহারা দেখে বাকিরা মিটিমিটি হাসছে।

সানার কথা শুনে নূর বলে উঠলো।
….কিহ স্পাইডার ম্যান? কিন্তু ওতো সবসময় উড়ে বেড়ায়। সংসার কখন করবে? আর ওতো একটা স্পাইডার, জাল বুনে সেখানে থাকে। তুমি কি করে সেখানে থাকবে? আর তাছাড়া ওতো সবসময় কস্টিউম পড়ে থাকে। তুমি চিনবে কি করে যে কস্টিউমের ভেতর কে আছে?

সানা ঠোঁট উল্টে বললো।
…..তাহলে আমি কি করবো শিবস ম্যাম?

….তুমি এক কাজ করো, ওই পোকামাকড় কে ছাড়। তুমি আমাদের কাটাপ্পাকে বিয়ে করো। হি ইস অলসো এ হ্যান্ডসাম এন্ড কুল গাই।ইউ ক্যান ম্যারী হিম।

তাসির বেচারার এবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। প্রথমে স্পাইডার ম্যান, এখন আবার কাটাপ্পা,? আরো কয়জন আছে সিরিয়ালে কে জানে?

নূর কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কাট্টু বয়, ইউ লাইক হার? ইউ ওয়ান্ট টু ম্যারী হার?

কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটা কাচুমাচু করে বললো।
…..নো শিবস্ ম্যাম, আই কান্ট ম্যারী হার।

নূর ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..বাট ওয়াই কাট্টু? লুক সি ইস ভেরি সুইট গার্ল?

…..আ আসলে শিবস ম্যাম, আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না কারণ, কারণ আমি, আমি, আমি আসলে একটা গে।

সবাই আবারও টিভি সিরিয়ালের মতো রিয়্যাকশান দিতে লাগলো। সেই মেয়েটি আবারও ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিতে লাগলো।
…..ধুম তানা না না, ধুম তানা না না

নূর বলে উঠলো।
….কিহহ্? কি বলছো এসব কাট্টু?

কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে বললো
…..জ্বী শিবস ম্যাম, আই এ্যাম গে। এন্ড আই লাভ ভাল্লালদেবা।

ওদিকে ভাল্লালদেবা সেজে থাকা মেয়েটি খুশী হয়ে বললো।
….রিয়েলি কাট্টু, ইউ লাভ মি? অওওওও আই লাভ ইউ টু কাট্টু😘

এদের কথা শুনে নূর সানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….হুম তাহলে আর কি করার। মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি। যাও কাট্টু বয় জিলো আপনি জিন্দেগী।

নূর এবার সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…. কাট্টু যখন রাজি না, তুমি তাহলে স্পাইডার ম্যান কেই বিয়ে করো। তবে তোমাকে স্পাইডার ম্যান এর মতো মুখ দিয়ে জাল বের করা শিখতে হবে। তবেই তুমি ওর তালে তাল মিলিয়ে সংসার করতে পারবে। তাই তুমি তাড়াতাড়ি মুখ দিয়ে জাল বের করা শেখ। তারপর আমি তোমার বিয়ে স্পাইডার ম্যান এর সাথে করাবো। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

সানা খুশী হয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ সো মাচ শিবস ম্যাম। ইউ আর দা বেস্ট।
কথাটা বলে সানা ওখান থেকে সরে গেল।

এদের এসব কান্ডকারখানা দেখে আদিত্যদের ব্রেইন কোমায় চলে যাচ্ছে। বেচারারা কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মাথা পুরো ব্লাঙ্ক হয়ে যাচ্ছে।

একটু পরে আবার সেই সৈন্যটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….পরবর্তী ফরিয়াদি হাজির হোক,,

কিছুক্ষণ পরে ওখানে নিশি পুরাণ ছবির দুঃখীয়ারি নায়িকাদের মতো দৌড়ে এসে নূরের সামনে ঠাস করে ফ্লোরে উপর হয়ে পড়লো।

সেই মেয়েটা আবারও ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিয়ে উঠলো।
…আআ আ আ আ আ,,,,,

নিশিকে দেখে সায়েম হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিল। ও জানে যে এখন ওর পালা এসেছে পঁচার। এরতো এমনিতেই মাথার স্ক্রু ঢিলা। আজতো আরও বেশি ঢিলা হয়ে আছে।নাজানি এই নিশি আবার কি করবে।

নূর নিশিকে দেখে বলে উঠলো।
…কি হয়েছে তোমার বালিকা? কি চাই তোমার?

নিশি ফ্লোরে পরে থেকেই মাথা উপরে তুলে অতি নিরীহ দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…..মিলড ইনসাফ চাই আমার ইনসাফ। তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ মিলেছে, কিন্তু ইনসাফ পাইনি মিলড। ইনসাফ চাই আমার ইনসাফ।

নূর পাশের সৈন্য সেজে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..শোন এখানে আজকে কি কোনো ইনসাফ নামের ডিস তৈরি হয়েছে?

মেয়েটি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…না রানী সাহেবা, আমাদের এখানে কোনো ইনসাফ নামের ডিস রান্না হয় নি। তবে বাবুর্চি দের বললে নিশ্চয় ইনসাফ রান্না করে দেবে।

নূর এবার নিশির দিকে তাকিয়ে বললো।
…সরি ডিয়ার আমাদের এখানে কোনো ইনসাফ নামের ডিস রান্না হয়নি। তুমি চাইলে আরও অনেক কিছু আছে সেগুলো ট্রাই করতে পারো। যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, মাংসের রেজালা আরও অনেক কিছু আছে। তুমি সেগুলো খাও। ইনসাফই যে খেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।

নিশি উঠে দাঁড়িয়ে বললো

…না না মিলড আপনি বুঝতে পারেন নি। ইনসাফ কোনো খাবার না।ইনসাফ মিনস জাস্টিস। আই ওয়ান্ট জাস্টিস।

নূর বলে উঠলো।
…..এইমাত্রই তো ইনসাফ চাইছিলে।এখন আবার জাস্টিন বিবারকে চাচ্ছ। একজন স্পাইডার ম্যান চায়,একজন জাস্টিন বিবার চায়।আমি কি এখানে ম্যারেজ বিরো খুলেছি নাকি?

…..না না মিলড আপনি আবারও ভুল বুচ্ছেন। আমি বলতে চাচ্ছি আমার ন্যায় চাই।ন্যায় বিচার চাই। আমার জীবনে অনেক দুঃখ মিলড, আপনি এর বিচার করুন।

….ওহ আচ্ছা, বলো বালিকা কি এমন দুঃখ তোমার? আমি তা দূর করার চেষ্টা করবো।

নিশি মাত্রাতিরিক্ত জনম দুঃখীনি ভাব ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
……মিলড আমার জীবনে এতো দুঃখ যে সেটা বলতে গেলে আমার এক জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও আমার দুঃখের কথা শেষ হবে না। আমার দুঃখের কথা বললে আসমান জমিন কেঁদে ওঠে। এতো দুঃখ আমার মিলড।

…..কি এতো দুঃখ তোমার? আমাদেরও বলো শুনি আমরা।

….মিলড কি বলবো আমার দুঃখের কথা , আমি যখন ফেসবুকে কিছু পোস্ট করতে যাই, আমার নেট থাকেনা। নেট থাকলে ফোনই হ্যাং হয়ে যায়।যদি কিছু পোস্ট করি সবাই হা হা রিয়্যাক্ট দেয়। কখনো আশা অনুযায়ি কমেন্ট পাই না। আমার কামিনী বান্ধবী গুলো উল্টো পাল্টা কমেন্ট করে আমাকে পচায়। আবাল মার্কা ফ্রেন্ড গুলো আমাকে আবাল মার্কা পোস্টে ট্যাগ করে। সবাই আলতু ফালতু গ্রুপে আর পেজে ইনভাইট করে করে বিরক্ত করে ফেলে। ম্যাসেঞ্জারে নক করে করে আমার লাইফ টা ঝালাপালা করে দেয়। আপনিই বলুন মিলড এতো দুঃখ আমি কোথায় রাখবো মিলড কোথায় রাখবো?

নিশির দুঃখে দরবারের সবাই দুঃখিত হয়ে পড়েছে।
নূর এক হাত উঁচু করে ব্যাথিত কন্ঠে বললো।
…বাচ্ বালিকা বাচ্, আমি আর শুনতে পারবো না তোমার এতো দুঃখের কাহিনী। তুমি এতো দুঃখ নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছ বালিকা? এতো দুঃখ কারোর জীবনে কিভাবে হতে পারে? আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

নূর একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে বললো।….তুমি চিন্তা করোনা বালিকা, আমি বেচে থাকতে আমার প্রজারা কেউ দুঃখ কষ্টে থাকবে না। আমি তোমার জন্য একটা ফেসবুক এক্সপার্ট সেকরেটারি রেখে দেব।যে তোমার ফেসবুক চালাতে সাহায্য করবে। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

নিশি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললো।
…..ধন্যবাদ মিলড,আপনি সত্যিই মহান।
কথাটা বলে নিশি ওখান থেকে সরে গেল।

এভাবে আরও কিছুক্ষণ ওদের দরবার চলতে লাগলো। তারপর নূর বলে উঠলো।
…..বাচ্ আজকের দরবার এখানেই শেষ হলো। এখন রানী সাহেবার মনোরঞ্জনের পালা। আমরা সবাই মিলে এখন আনন্দ করবো।
সাউন্ড বক্সের কাছে থাকা মেয়েটার দিকে হাত উঠিয়ে বললো।
….ডিজে ওয়ালে বাবু যারা গানা চালাদ।

মেয়েটা মাথা ঝাকিয়ে গান প্লে করলো।

♬ ♬ ইটস বিন লং
♬ ♬ তেরে বিন সুনে হে পারদেসি
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়

♬ ♬ সাজনা বিন তেরে
♬ ♬ লাগে আঙ্গান টেঢ়ে
♬ ♬ মে নাচ না জানু
♬ ♬ এক রাত্তি এনি মোর
♬ ♬ লেহরানা না ভুলি
♬ ♬ ইঠলানা না ভুলি
♬ ♬ ঘার আ জানা
♬ ♬ ডোন্ট ইউ লাভ মি এনি মোর

♬ ♬ ইটস বিন লং
♬ ♬ তেরে বিন সুনেহে পারদেশি
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
(সংক্ষিপ্ত)

গানটাতে সবাই পাগলের মতো উড়াধুড়া নাচছে। নূর দুই হাত দিয়ে বিন বানিয়ে মুখের সামনে নিয়ে নাচছে। আর নূরের নিচে তানি শুয়ে থেকে দুহাত দিয়ে সাপের ফনা বানিয়ে নাচছে।

আদিত্য নূরের এমন অবস্থা দেখে আর থাকতে নিয়ে না পেরে নূরের যেতে নিলেই আবির ওর হাত টেনে ধরে বললো।
…..ভাই কি করছিস?

…কি করছি মানে? নূরের কাছে যাচ্ছি। দেখছিস না কি অবস্থা হয়েছে ওর?

….ভাই পাগল হয়ে গেছি? এখন ওদের কাছে যাওয়া মানে বাঘের গুহায় যাওয়া। দেখছিস না সবগুলো কেমন কালিমাতা সেজে আছে। আমরা ওখানে গেলে আমাদেরও বারোটা বাজিয়ে দিবে।

…শাট আপ, তাই বলে কি আমি নূরকে এই অবস্থায় ছেড়ে দিবো নাকি? এখন ওর হুঁশ নেই। কি করছে ওরা নিজেও জানেনা। যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে তখন? আমি নূরের কাছে যাচ্ছি। সি নিডস মি। আর তোরাও তোদের পার্টনারের কাছে যা। ভুলে যাসনা কাল তোদের বিয়ে। তানি যদি ঠিক না হয় তখন তুই বিয়ে কার সাথে করবি, আর বাসর কার সাথে করবি?
কথাগুলো বলে আদিত্য নূরের কাছে গেল।

অন্য ছেলেরাও ভয়ে ভয়ে আদিত্য পিছনে গেল।

নূররা তো নাচাইতে ব্যাস্ত। আদিত্য এসে ডাকছে কিন্তু শুনতে পাচ্ছে না। আদিত্য রেগে গিয়ে সাউন্ড বক্সটা যেয়ে বন্ধ করে দিল। গান বন্ধ হতেই সবাই হইচই করে উঠলো।
…কি হলো কি হলো,গান কে বন্ধ করলো।

হঠাৎ ছেলেদের আসতে দেখে নূর বলে উঠলো।
….আরে দুশমনেরা আমাদের রাজ্যে হামলা করে দিয়েছে। সৈন্যরা আক্রমণ করো।

নূরের আদেশ মতো সব মেয়েরা ছেলেদের ওপর হামলা করলো। সব মেয়েরা মিলে ছেলেদের ঘিরে ধরে টানাটানি করতে লাগলো। ছেলেরা পড়ে গেছে এক গ্যারাকলে। না এদের সাথে লড়াই করতে পারছে, না এখান থেকে পলাতে পারছে। আদিত্যকে আসতে দেখে আবির বলে উঠলো।
….দেখেছিস ভাই বলেছিলাম না এখানে আসার দরকার নেই। এখন হলোতো। নিজেও মরলি সাথে আমাদেরও মারলি।

আদিত্যকে দেখে নূর আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠলো।
…..আরেএএ,এটাতো আমার আদু বেবি।

নূরের কথা শুনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আদু বেবি? লাইক সিরিয়াসলি?
বাকি ছেলেরা নূরের কথা শুনে হেসে উঠলো। আদিত্য ওদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ওদের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

নূর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই এই ছাড় তোমারা আমার আদু বেবিকে। লজ্জা করে না নিজেদের রাজাকে আটকে রাখতে। ছাড় বলছি, একদম ছোঁবে না আমার আদু বেবিকে।
কথাটা বলে নূর মেয়েদের কাছ থেকে আদিত্যকে ছাড়িয়ে নিল।

তারপর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….আদু বেবি, আমি জানি তুমি কেন এখানে এসেছ। তোমার কিচ্ছি চাই তাইনা? নটি বয়, একটুও সবুর নেই না তোমার? এখানেও চলে এসেছ কিচ্ছি নিতে?

নূর কথায় আদিত্য যেন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। আর বাকি ছেলেরা আবার হাসা শুরু করে দিল।আবির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
….আদু বেবিইইই,,ইউ ওয়ান্ট কিচ্ছি? নিয়ে নেও কিচ্ছি।

নূর বলে উঠলো।
…আসো আদু বেবি, আমি তোমাকে কিচ্ছি দিচ্ছি।
কথাটা বলে নূর ঠোঁট চোখা করে আদিত্যের দিকে এগুচ্ছে চুমু দেওয়ার জন্য।

আদিত্য চোখ বড়ো বড়ো করে নূরকে আটকে দিয়ে বললো।
…..কি করছো নূর? সবাই দেখছে তো? চল এখান থেকে।

নূর আহ্লাদি কন্ঠে বললো।
….অওওওও আদু বেবির লজ্জা করছে? ঠিক আছে আমি এখুনি সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বলছি।
নূর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই সবাই চোখ বন্ধ করো। তোমাদের রানী সাহেবা তার রাজাকে কিচ্ছি করবে। সবাই চোখ বন্ধ করো।

সব মেয়েরা নূরের কথামতো চোখ বন্ধ করে নিল। তবে ছেলেরা করলো না। ওরা নূরের কান্ড দেখে মজা নিচ্ছে।

নূর আবার ঠোঁট চোখা করে আদিত্যের দিকে এগুতে লাগলো। আদিত্য আর উপায় না পেয়ে নূরকে কাঁধে তুলে নিল। নূরকে কাঁধে নিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে লাগলো। নূর চমকে উঠে বললো।
….আরে আরে তোমাদের রানীকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও আমাকে।

মেয়েদের এগিয়ে আসতে দেখে আদিত্য বলে উঠলো।
….রানী সাহেবার এখন আরামের সময় হয়েছে। তাই আমি ওনাকে আরাম কক্ষে নিয়ে যাচ্ছি। বুজেছ।

মেয়েরা আরকিছু বললো না। আদিত্য হাফ ছেড়ে নূরকে নিয়ে গেল।

বাকি ছেলেরাও অনেক কষ্টে তাদের পার্টনারদের নিয়ে গেল।

চলবে….
(মাতালদের পাগলামি আরও বাদ আছে। একপর্বে এতো লিখে শেষ করতে পারালাম না। বাকি পরের পর্বে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here