সেই সন্ধ্যা পর্ব-১৮

0
1717

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৮
.
এই সকালকে দেখে আজ দ্বিতীয়বারের মতো ওর হৃদস্পন্দন ওর অবাধ্য হলো। তুলনার চেয়ে অধিক দ্রুত বেগে চলতে লাগলো হৃদস্পন্দন গুলো। বুকের বাম পাশে হাত রেখে নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল স্নিগ্ধ। এত দ্রুত কেন চলছে হৃদস্পন্দন গুলো? এর কারন কি সকাল! কোনো ভাবে প্রেমে পরে যায় নি তো স্নিগ্ধ? পরক্ষণেই স্নিগ্ধ নিজের মনে মনে বললো, “আমি নীলামকে ভালোবাসি সেটা যেমন জোর দিয়ে বলতে পারি, তেমনটা আমি মিস বিকালের ক্ষেত্রে কেন বলতে পারি না? তার মানে মিস বিকালকে কি আমি শুধু পছন্দই করি? না’কি আমি নিজের মনকে বুঝতে পারছি না? যদি শুধু পছন্দই করে থাকি তাহলে আমার হৃদস্পন্দন গুলো কেন এত দ্রুত বেগে চলছে?”
স্নিগ্ধর ঘোর কাটলো সকালের কথায়।

-“আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এলেন কেন?”
-“তোমার সাথে কথা বলতে।”
-“কি কথা?”
-“আমার সাথে যে মেয়েটি ছিল, তার নাম অনন্যা। সে সম্পর্কে আমার কাজিন হয়।”
স্নিগ্ধর কথা শুনে সকাল মনে মনে বেশ খুশি হয়। কিন্তু খুশিটা আড়াল করে বললো,
-“ঠিক আছে। কিন্তু আপনি আমাকে কেন বলছেন এই কথা?”
-“কারন তুমি এইজন্যই রেগে ছিলে আর বিরক্ত ছিলে।”
-“মোটেই না। আমি কেন রেগে থাকতে যাবো? বললাম না সে হতেই পারে আপনার কোনো রিলেটিভ।”
-“অনন্যা আমাকে পছন্দ করে। ইনফ্যাক্ট ও নিজের আম্মুকে দিয়ে বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রপোজালও পাঠিয়েছে আমার বাসায়।
সকাল চমকে স্নিগ্ধের দিকে তাকালো ওর কথা শুনে। চোখে-মুখে একরাশ কালো মেঘ এসে জমা হয়ে গেল। সকালের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধ আবারও বললো,
-“কিন্তু আমি বা আমার আম্মু কেউ রাজি হই নি। কারন আমার আম্মু ওকে পছন্দ করে না। আর আমি ওকে নিজের ছোট বোন ছাড়া আর কিছু ভাবি না। কিন্তু তাও ও আমার পেছন ছাড়ে না।”
মুহূর্তেই সকালের খুশিতে নাচতে মন চাইলো। কিন্তু এখন স্নিগ্ধর সামনে তা সম্ভব নয় বলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। আর বললো,
-“ওহ আচ্ছা। কিন্তু আন্টি ওকে কেন পছন্দ করে না?”
-“কারন ও প্রচুর গায়ে পড়া স্বভাবের।”
-“ওহ!”
-“এবার কি আর কোনো অভিযোগ আছে আমার প্রতি?”

সকাল মাথা নিচু করে লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ‘না’। হাসলো স্নিগ্ধ নিজেও। আজ বেশ ভালো লাগছে সকালের সাথে সময় কাটাতে। বিশেষ করে পছন্দের মানুষটার সাথে এরকম লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করে কথা বলার মজাই আলাদা। স্নিগ্ধ একহাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো,
-“তাহলে মিস বিকাল! আপনার মনের ভাবটা যদি একটু প্রকাশ করিতেন আমার কাছে, তবে বড়ই উপকৃত হইতাম। না মানে, অন্তত এটা জানতে পারতাম যে আপনার মনে আমাকে নিয়ে ঠিক কি চলছে।”
সকাল মুচকি হেসে বললো,
-“আপনার মনের ভাবটা আগে প্রকাশ করেন। তারপর নাহয় আমারটা আমি বলবো! আর তাছাড়া আমার মনের ভাবটা আপনার অজানা থাকার কথা নয়। আমার তো উল্টো মনে হয় আমার থেকেও ভালো আপনি আমাকে চিনেন।”
-“তা একটু-আধটু চিনি অবশ্য। কিন্তু আমি আগে তোমার মনের কথাটা জানতে চাই। তুমি বলার পরেই আমি জানাবো। নাউ চয়েজ ইজ ইয়র্স।”
-“এটা তো ঠিক না ডাক্তার সাহেব! মনের কথা আগে ছেলেরা বলে, তারপর মেয়েরা বলে।”
-“কোনো বইতে তো এই নিয়মটা লেখা নেই। আমি যতদূর জানি মনের কথা সবারই বলার অধিকার আছে। সে হোক ছেলে অথবা মেয়ে।”
-“তাও আপনি আগে বললে আমার সুবিধা হতো। ওয়েট এ মিনিট! আপনি বারবার আমার মনের কথা জানতে চাইছেন, তার মানে আপনার মনেও আমাকে নিয়ে কিছুর চাইতেও বেশি ভাবনা আছে; অ্যাম আই রাইট ডাক্তার সাহেব?”
-“উমম… হুম।”
-“তো বলে ফেলুন!”
-“বললাম তো আগে তোমাকে বলতে হবে।”

স্নিগ্ধর কথায় সকাল গাল ফুলিয়ে ফেললো। সেসময় স্নিগ্ধ তার মন মাতানো মুচকি হাসিটা দিল, যা সকালকে সম্মোহিত করে তুলতে যথেষ্ট। এই মুহূর্তে বেশ লজ্জা লাগছে সকালের। মেয়ে হয়ে প্রথমে কাউকে প্রপোজ করাটা কোনো লজ্জার বিষয় না, তবে ওর কাছে বিষয়টা লজ্জার লাগছে। মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে নখ কামড়িয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-“ডাক্তার সাহেব, আমি একদম সোজাসাপ্টা ভাবে বলে দিব।”
-“ঠিক আছে।”

লম্বা এক শ্বাস নিয়ে নিলো সকাল। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়েও কারও পায়ের আওয়াজ শুনে চুপ হয়ে গেল সে। স্নিগ্ধ টের পেয়ে বললো,
-“ওহ নো! এদিকেই আসছে কেউ। এখানে তোমাকে আর আমাকে এই সময়ে কেউ দেখলে খুব বাজে একটা ঘটনা ঘটে যাবে।”
-“তাহলে এখন?”
-“তুমি; তুমি আলমারিতে লুকিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি।”
-“কিহ! সকাল এখন আলমারিতে লুকাবে?”
-“হ্যা, তাড়াতাড়ি। নাহলে এসে যাবে কেউ। কোনো শব্দ করবে না ভেতরে যেয়ে। আগন্তুক ব্যক্তি চলে যেতেই আমি তোমাকে বাইরে বের করে নিবো। ওকে!”
-“ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি তালা খুলুন আলমারির।”

স্নিগ্ধ আলমারির তালা খুলে দিতেই সকাল চট করে আলমারির ভেতরে ঢুকে পরলো। বাইরে থেকে স্নিগ্ধ আলমারি লাগাতেই ওর কেবিনে দারোয়ান প্রবেশ করলো। স্নিগ্ধ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“আপনি এখানে! কোনো দরকার ছিল কি?”
-“জ্বি স্যার। আপনাকে এক আপা খুঁজছে।”
-“কে?”
-“নাম তো বললেন অনন্যা। আপনার না-কি রিলেটিভ হয় সে।”
-“ওহ আচ্ছা। আপনি যান, আমি আসছি।”
অনন্যা হুট করে কেবিনে প্রবেশ করে বললো,
-“কোনো আসছি-টাসছি না। চলো এখান থেকে। আমাকে ওখানে একা রেখে তুমি এই জায়গায় কি করছো?”
-“তোমাকে বলেছিলাম না আমার একটু কাজ আছে!”
-“বাকি কাজ পরে হবে। এখন চলো তাড়াতাড়ি।”
-“আচ্ছা তুমি সামনে এগোও না!”
-“প্লিজ স্নিগ্ধ চলো।”

স্নিগ্ধ আড়চোখে একবার আলমারির দিকে তাকিয়ে অনন্যাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। সকাল আলমারির ভেতরে বসে বসে নিজের নখ কামড়াচ্ছে। শ্বাস নিতে অবশ্য একটু সমস্যা হচ্ছে কিন্তু তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে, কারন ও জানে স্নিগ্ধ ওর কিছু হতে দিবে না। অনন্যা স্নিগ্ধকে নিয়ে পুরো মেডিকেল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। স্নিগ্ধ বারবার নিজের হাতঘড়ি দেখছে। সকালের জন্য চিন্তায় ও সমানে ঘামছে। যে আলমারিতে সকালকে বন্ধ করে এসেছে, সেখানে খুব হলে পনেরো থেকে বিশ মিনিট শ্বাস নিতে পারবে। অলরেডি দশ মিনিট হয়ে গিয়েছে। অনন্যার এমন ননস্টপ বকবক শুনে এবার রাগ লাগছে স্নিগ্ধর। সে রাগী গলায় অনন্যাকে বললো,
-“অনন্যা, এবার তুমি বাসায় চলে যাও। আমার অনেক জরুরি কাজ আছে। এমনিতেই অনেক্ক্ষণ সময় নষ্ট করে ফেলেছি। কিন্তু এখন যেতেই হবে।”
-“কিন্তু এখনো তো পুরোটা ঘুরতে পারলাম না।”
-“অন্য একদিন এসে ঘুরে যেও। এখন আমাকে যেতেই হবে। সো আই অ্যাম স্যরি।”
-“আচ্ছা তাহলে আমি আজকে যাই।”
-“হুম ঠিক আছে, বায়।”

স্নিগ্ধ আর বিলম্ব না করে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। অনন্যা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধর যাওয়ার দিকে। স্নিগ্ধ তাড়াতাড়ি নিজের কেবিনে এসে চাবি দিয়ে আলমারি খুলে দেখে সকাল অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। সকালকে ধরে আলমারি থেকে বের করে নিচে বসে নিজের কোলে মাথা রাখলো সকালের। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট স্নিগ্ধর। আজ ওর জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা। বেশ কয়েকবার সকালকে ডাকলো। কিন্তু সকালের কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। মুহূর্তেই চোখে জল জমে গেল। সকালের গালে হাত রেখে অশ্রু সজ্জিত নয়নে আবারও ডাকতে লাগলো সকালকে। আপনজনকে হারানোর ভয় গ্রাস করছে স্নিগ্ধকে। ও যে একজন ডক্টর কথাটা হয়তো ওর মনেই নেই সকালের অবস্থা দেখে। স্নিগ্ধ চোখের জল মুছে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো টেবিলের ওপরে পানির বোতল রাখা। সকালের মাথাটা আস্তে করে নামিয়ে রেখে পানির বোতলটা নিয়ে এসে সকালের চোখে-মুখে পানির ছিটা দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই সকালের জ্ঞান ফিরতে দেখে স্নিগ্ধ সকালকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। চোখ থেকে পানি পরার আগেই তা অতি সাবধানতার সাথে সকালের চোখের আড়ালে মুছে ফেললো। সকাল জ্ঞান ফেরার পর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলো। চোখ খুলতেই নিজেকে স্নিগ্ধর বুকে দেখে চমকে উঠলো। স্নিগ্ধর কাঁধে হাত রেখে আস্তে করে স্নিগ্ধকে ডাকলো সকাল।
-“ডাক্তার সাহেব!”
-“হু!”
-“ডাক্তার সাহেব কি হয়েছে আপনার?”

এতক্ষণে স্নিগ্ধর হুঁশ ফিরলো। একহাতে নিজের চোখ-মুখ মুছে সকালকে বুক থেকে সরিয়ে ওকে ধরে উঠিয়ে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে পানির বোতল এগিয়ে দিল খাওয়ার জন্য। পানি খেয়ে সকাল স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখে স্নিগ্ধর চেহারা অনেকটা গম্ভীর হয়ে আছে। সকাল বললো,
-“কি হয়েছে আপনার? চেহারার এই অবস্থা কেন? আর তখন আপনি কাঁপছিলেন মনে হলো আমার। কিন্তু কেন?
-“জ্ঞান ফিরতে না ফিরতেই এতগুলো প্রশ্ন একসাথে?”
-“আহা বলুন না!”
-“ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে অজ্ঞান দেখে। তোমার জ্ঞান ফিরছিল না বলে চিন্তা হচ্ছিল।”
-“বাহ দারুণ তো! একজন ডক্টর হয়ে এত চিন্তা? কেন আপনি বুঝেন নি আপনার পেশেন্টের কি অবস্থা?”

এতক্ষণে স্নিগ্ধর মনে পরলো যে ও একজন ডক্টর। সকাল না বললে হয়তো ওর মাথায়ই আসতো না কথাটা। নিজের ওপরেই এখন বেশ রাগ হচ্ছে স্নিগ্ধর। কিন্তু সকালের দিকে তাকাতেই ওর সমস্ত রাগ গলে পানি হয়ে গেল। এত মিষ্টি চেহারা দেখলে কি আর রাগ বা চিন্তা করা যায়? সকাল ফ্যালফ্যাল করে বোকার মতো তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ মুচকি হেসে আলতো করে সকালের গাল টেনে বললো,
-“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
-“আপনি কি তখন কাঁদছিলেন?”
সকালের কথায় চমকে উঠলো স্নিগ্ধ। মেয়েটা কি করে বুঝলো সেটাই তার মাথায় আসছে না। আমতা আমতা করে স্নিগ্ধ বললো,
-“ধুর পাগলি! আমি কেন কাঁদতে যাবো? তাছাড়া ছেলেদের কাঁদতে নেই জানো না?”
-“কেন কাঁদতে নেই ছেলেদের? তারা কি মানুষ নয়! তাদের কি অনুভূতি বলতে কিছু নেই?”
স্নিগ্ধ মুচকি হাসলো সকালের কথায়। বললো,
-“পিচ্চিটা তো দেখি হুট করে বড় হয়ে গেল অনেক।”
-“কে পিচ্চি?”
-“তুমি।”
-“মোটেই না। আমি বড় হয়ে গিয়েছি হুহ। এখন মেডিকেলে পড়ি না! আর কয়েকবছর পর ডাক্তার হবো হুম।”
-“সেটাই তো বললাম যে তুমি এখন বড় হয়ে গিয়েছো।”
-“আমি জানি তো।”

সকাল খিলখিল করে হাসতে লাগলো। হাসলো স্নিগ্ধ নিজেও। এই পিচ্চি মেয়েটার মাঝে ও নীলামকে দেখতে পায়। নীলামও ঠিক সকালের মতোই দুষ্টু ছিল। তবে সকালের মতো বোকা ছিল না কখনোই। নীলাম বরাবরই অনেক চালাক ছিল। সকালের ডাকে নীলামের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো স্নিগ্ধ। সকাল বললো,
-“আমরা তো অনেক্ক্ষণ ধরে এখানে আছি। আফি আর আপনার সেই রিলেটিভ হয়তো আমাদের খুঁজছে। আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ।”
-“অনন্যা চলে গিয়েছে। আর আফি তোমাকে খুঁজছে না। তাই এখানে চুপচাপ বসে একটু বিশ্রাম নাও। কিছুক্ষণ আগেই অজ্ঞান হয়ে পরে ছিলে।”
-“সকাল ঠিক আছে তো এখন।”
-“হ্যা জানি ঠিক আছো। তাও একটু বিশ্রাম নাও। অ্যান্ড আই অ্যাম স্যরি মিস বিকাল। আমার জন্যই আজ তোমার এই অবস্থা হলো।”
-“আরে ডাক্তার সাহেব চিল! বাড়ে বাড়ে শেহেরো মে এ্যাইছি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রেহতি হে স্যারজি।”
-“থাক! এত পাকামি করতে হবে না আর।”
সকাল দাঁত কেলিয়ে হেসে দিল। স্নিগ্ধ বেশ কিছুক্ষণ সকালের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“তুমি তখনকার কথাটা সম্পূর্ণ করো নি কিন্তু!”
-“কোন কথা?”
-“ওই যে তুমি আমাকে নিয়ে কি ভাবো, আই মিন আমার প্রতি তোমার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে চেয়েছিলে কিন্তু করো নি।”
সকাল অসহায় চেহারা বানিয়ে বললো,
-“এখনো ভুলেন নি আপনি কথাগুলো?”
-“না তো! ভুলবো কেন?”
-“মানে আমাকে বলতেই হবে?”
-“হ্যা।”
-“আর যদি না বলি!”
-“তাহলে আমার মনের ভাবটাও ততদিন লুকায়িত থাকবে।”
-“এটা তো ঠিক না।”
-“কিন্তু এটাই হবে।”
সকাল আবারও অসহায় চেহারা বানিয়ে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। স্নিগ্ধ মুচকি হেসে বললো,
-“থাক আজকে আর এত প্রেশার নিতে হবে না। চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।”

সকাল কথা বাড়ালো না। চুপচাপ উঠে স্নিগ্ধর সাথে যেতে লাগলো। স্নিগ্ধ সকালকে গাড়িতে বসিয়ে আবারও মেডিকেলের ভেতরে গেল। আফিকে খুঁজে বের করে সাথে আফিকেও নিয়ে চললো। গাড়িতে আফি আর সকাল বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলছে আর হাসাহাসি করছে। স্নিগ্ধ ভাবলো হয়তো সকালের মাথা থেকে একটু আগের কথাগুলো বেরিয়ে গিয়েছে। তাই ও নিজেও আর বেশি মাথা ঘামালো না। প্রথমে আফিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তারপর চললো সকালের বাড়ির দিকে। সকালকে খুব গভীরভাবে কি যেন চিন্তা করতে দেখে স্নিগ্ধ জিজ্ঞেস করলো,
-“কি ভাবছো মিস বিকাল?”
-“ভাবছি, অজ্ঞান হওয়ার পর মানুষের কিছু মনে থাকে না কেন?”
-“থাক! তুমি যা চিন্তা করছিলে করো। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমার মাথায় যতসব উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা দিয়ে ভরা।”
সকাল ঠোঁট উল্টে বললো,
-“আপনি এভাবে বলতে পারলেন আমাকে?”
-“আমি কি কিছু বলেছি?”
-“ধ্যাত! আপনি একটা পঁচা লোক।”

স্নিগ্ধ হেসে উঠলো সকালের কথায়। সকাল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধর সেই মারাত্মক হাসির দিকে। যা একবার কেউ দেখলে পাগল হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এত সুন্দর হাসি কোনো পুরুষ মানুষের হয় বলে জানা ছিল না। না জানি দিনে কতজন মেয়ে তার এই হাসির প্রেমে পরে। গাড়িটা সকালের বাসার সামনে থামিয়ে স্নিগ্ধ সকালের দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে স্নিগ্ধ বললো,
-“এই যে ম্যাডাম!”
স্নিগ্ধর ডাকে ঘোর কাটলো সকালের। বললো,
-“কি হয়েছে?”
-“তোমার বাড়ি এসে গিয়েছে। যাবে না?”
-“ওহ হ্যা। ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।”

স্নিগ্ধ কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলো। সকাল গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে গিয়েও আবার ফিরে এলো স্নিগ্ধর কাছে। স্নিগ্ধ গাড়ির কাঁচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কিছু বলবে?”
-“আই লাভ ইউ।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here