#বিবর্ণ_জলধর
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৮
_____________
তিনদিন পর শ্রাবণের সাথে বিয়ে, কথাটা শুনে মিহিক প্রচণ্ড রকমের ক্ষুব্ধ। তার অনুমতি ব্যতীত মা-বাবা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললো? আরও একদফা কথা কাটাকাটি হলো মা-বাবার সাথে মিহিকের। মা-বাবা খুব সুন্দর করে বুঝ দিয়েছে তাকে। এ বিয়ে হওয়া জরুরি, এ বিয়ে না হলে দুই পরিবারের সম্পর্ক বিনষ্ট হবে, পরিবারের খারাপ হবে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কিছু বুঝিয়েছে। মিহিক তাও মানতে নারাজ। মা-বাবার সাথে তর্কের পালা শেষ হলে রুমে এলো সে। দিশেহারা অবস্থা তার। মাথা তালগোল। সেন্টার টেবিলের পাশের আর্মচেয়ারে মাথা নুইয়ে বসে রইল সে।
সকাল এখন সাতটা বিশ। রোদের আলো উত্তাপহীন। ব্যালকনিতে উত্তাপহীন রোদ মেখে দাঁড়িয়ে আছে নোয়ানা। অন্যমনস্ক সে। মাথায় ঘুরছে আষাঢ়ের চিন্তা। চিন্তাতে ব্যাঘাত ঘটলো মিহিকের ডাকে,
“নোয়ানা!”
“জি আপু।” ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সাড়া দিলো নোয়ানা।
“এদিকে আয়।”
নোয়ানা রুমে এলো। নোয়ানাকে দেখেই মিহিক শক্ত মুখে বললো,
“ভাবছি বিয়েটা করে ফেলবো আমি।”
নোয়ানার মুখে অবাক স্ফূর্ত ভাব খেললো। তিন্নি পড়ার টেবিলে পড়ায় মনোযোগী ছিল, মিহিকের কথা মন আকর্ষণ করলো তার। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে বোনের দিকে তাকালো সে।
দু বোনের অভিব্যক্তি দেখে মিহিক বললো,
“ইয়েস, আমি বিয়ে করবো শ্রাবণকে। মা-বাবা যে কতটা ভুল করছে বোঝাতে হবে না আমাকে? বিয়ের পর যখন দেখবে মেয়ে শান্তিতে নেই, তখন আফসোসে আফসোসে শেষ হবে। মনে মনে ভাববে, মেয়ের কথাই শোনা উচিত ছিল। আমি এই ভাবনাটা উদয় করতে চাই তাদের মাঝে। বিয়ের পর শ্রাবণের সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে কোনো অসুবিধা নেই আমার। কোনো মাথা ব্যথা নেই এ নিয়ে। পিনিকটা মা-বাবার মাথায় উঠুক সেটা চাই আমি।”
তিন্নি জানে তার বোন বড্ড জেদি। বললো,
“তুমি কি প্রতিশোধ নিচ্ছ না কি?”
“এটাকে প্রতিশোধ না, এটাকে শিক্ষা বলে। দুই পরিবারকেই শিক্ষা দেবো আমি। তারা বুঝতে পারবে তারা কত বড়ো ভুল করছে।”
মিহিকের কথা উন্মাদের মতো ঠেকলো নোয়ানার কাছে। সে বললো,
“শিক্ষা দেওয়ার জন্য তুমি বিয়েটা করো না আপু। যদি করো মন থেকে করো।”
“ওই শ্রাবণকে বিয়ে করবো সেটাই বেশি, আবার মন? হুহ্! ওসব পারলে তুই পারিস। তুই মন উজাড় করে ভালোবাসিস তাকে।”
নোয়ানা আর কোনো কথা বললো না, চুপ হয়ে গেল। ধীর পা ফেলে আবারও চলে এলো ব্যালকনিতে। কে কী করছে, কী করবে, না করবে এসবে কথা বলার তার কোনো অধিকার নেই। এমনকি নিজের ব্যাপারেও সে স্বাধীনতাহীন। তার জীবন বাকি সবার মতো নয়। তার জীবন ঠুনকো। খুব একটা শক্তপোক্ত নয়। হয়তো ঠুনকো জীবনটা আগের থেকে কিছুটা শক্ত হয়েছে। তবে পুরোটা নয়। আর হবেও না কোনোদিন। আল্লাহ তার জীবনকে এমনই রেখেছে! বাস্তবতা মেনে নিতে হবে তার।
________________
দুটো কক্ষকে ওলট-পালট করে ফেলছে আষাঢ়। মানে তার বেড রুমের যাবতীয় সব কিছু সে লাইব্রেরি রুমে স্থানান্তর করছে। আর লাইব্রেরি রুমের যাবতীয় সবকিছু নিজের রুমে। সকাল থেকে এ কাজ করছে সে। কারিব এবং বাইরে থেকে দুজন সাহায্যকারী নিয়ে এ কাজ করছে। এটা কোনো সহজ কাজ নয়। লাইব্রেরি রুমটাকে নিজের রুম, আর নিজের রুমটাকে লাইব্রেরি রুম তৈরি করা বেশ কষ্ট সাাধ্য। অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে আষাঢ়কে। ক্লান্তি লাগছে তার, শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। তবুও ক্ষান্ত নয় সে। কবির সাহেব ছেলের এ কাজ প্রত্যক্ষ করলেও কিছু বললেন না। যা করছে করুক। ছেলে তার কতদিনই বা বাড়িতে থাকে! ইচ্ছা খুশি মতো চলুক না।
আষাঢ় যেন একটু বেশিই প্রিয় কবির সাহেবের। আষাঢ়কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন তিনি। ছেলে দূরে চলে যাওয়ার পর ভালোবাসা যেন আরও বেশি করে অনুভব করছেন। লায়লা খানমও তাই! আষাঢ়ের প্রতি সে খুব আবেগ প্রবণ। এইতো তার ছেলে সেই থেকে কাজ করে যাচ্ছে, সে একটু বিশ্রাম নিতে বলছে, অথচ আষাঢ় কোনো বিরতি নিচ্ছে না। তার পুরো কাজ শেষ না করে সে থামবে না। লায়লা খানম লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে এসেছে ছেলে, কারিব এবং সহকারী দুই ব্যক্তির জন্য। কিন্তু শরবত পান করার তাগিদ কারো মাঝে লক্ষ্যণীয় নয়। আষাঢ় কাজ করে যাচ্ছে, তাদের কি আর শরবত পান করা চলে?
“এত কাজ করো না আব্বাজান, দেখো তো কেমন ঘেমে যাচ্ছ! একটু বিরতি নাও।”
আষাঢ় নিজের রুম থেকে একটা আর্মচেয়ার বয়ে এনে লাইব্রেরি রুমে ঢুকতেই কথাটা বললেন লায়লা খানম।
আষাঢ় ঘেমে একাকার। আজকে গরমও পড়েছে খুব। গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জি ঘামে চুপচুপ তার। সে আর্ম চেয়ারটা যথা স্থানে রাখতে রাখতে বললো,
“আমি কাজের মানুষ আম্মু, কাজ ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে পারি না। কাজ না করতে পারলে মনে হয়, ‘শেষ হয়ে যাব’।”
কথাটা বলার সময় ঘন শ্বাস পড়ছিল আষাঢ়ের।
বেডরুম থেকে আরও কিছু নিয়ে আসার জন্য যাওয়া দিলে লায়লা খানম ছেলের হাত টেনে ধরলেন। জোর করে ছেলেকে চেয়ারে বসিয়ে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দিতে লাগলেন।
কারিব এ সময় একটা টি টেবিল নিয়ে প্রবেশ করলো। তার অবস্থাও করুণ! টি শার্ট ঘামে ভেজা। জানে না আষাঢ় কেন নিজের বেডরুম এখানে ট্রান্সফার করছে। জিজ্ঞেস করলে কিছুই বলেনি আষাঢ়। সে এ বিষয়ে অজ্ঞ থেকেই তার দায়িত্ব পালন করছে। আষাঢ় ভাইয়ের সব কিছু দেখা শোনার দায়িত্ব তো তার। আষাঢ়ের প্রতি লায়লা খানমের দরদ প্রত্যক্ষ করে সে বললো,
“আষাঢ় ভাইয়ের ঘাম তো মুছে দিচ্ছেন মামি, আমার কী হবে? আমার যত্ন কে নেবে?”
লায়লা খানম কিছু উত্তর দেওয়ার আগে আষাঢ় বললো,
“একটা বিয়ে করে নাও কারিব। যখন কাজ করে ঘেমে যাবে, বউ আদর করে ঘাম মুছে দেবে তোমার।”
আষাঢ়ের কথা শুনে বেশ লজ্জায় পড়লো কারিব। তার মনে পড়লো গতকালও আষাঢ় তার বিয়ের কথা বলেছিল। লজ্জাটা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে নিয়ে বললো,
“আমি বিয়ে করলে আপনার পর করবো আষাঢ় ভাই। আগে আপনার বিয়েটা খাই, তারপর নিজের বিয়ে।”
“তাহলে তোমার চিরকুমার থাকতে হবে কারিব। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করবো না। বুঝে শুনে ডিসিশন নিয়ো, আমার পথে হাঁটবে? কি হাঁটবে না?”
লায়লা খানম গম্ভীর স্বরে বললেন,
“বিয়ে করবে না মানে? আমার কত শখ আহ্লাদ তোমার জন্য আমি পুতুলের মতো একটা বউ আনবো! তুমি…”
“ওটা তো মজা করে বলেছি আম্মু। বিয়ে তো অবশ্যই করবো। তবে তোমার শখ আহ্লাদে একটু পরিবর্তন আনতে হবে। আমি পুতুলের মতো না, ফুল-চাঁদ সংমিশ্রিত বউমা আনবো তোমার জন্য। পুতুলের মতো বউ কারিবের জন্য এনে শখ পূরণ করো। কী কারিব, পুতুলের মতো বউ চাই তোমার?”
ছেলেটা কী সহজ ভাবে মায়ের সামনে বিয়ে নিয়ে কত কথা বলে ফেললো, একটু লজ্জার ছিঁটে ফোঁটা দেখা গেল না। লাজ লজ্জা যা ছিল তা সব দেখা গেল কারিবের মাঝে। সে কিছু না বলে লজ্জা মুখ নিয়ে বেরিয়ে গেল। আষাঢ়ও মায়ের সান্নিধ্য হতে কাজে ছুটলো আবার। লায়লা খানম পড়লেন শঙ্কায়, ফুল-চাঁদ মিশ্রিত বউ আবার কী জিনিস?
__________________
বিকেলের আলো পড়ে গেলে বাড়ি ফিরলো শ্রাবণ। হাতে তার একটি গোলাপ। এটা রুমকি দিয়েছে। রুমকির সাথে দেখা করেছে আজকে। খুব শীঘ্র বোধহয় আর দেখা হবে না তাদের মাঝে। এই বিয়ের চক্করে তার জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে করা ছাড়া কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছে না সে। বাবা বাড়ি থেকে বের করে দিলে, তেজ্যপুত্র করলে কোথায় যাবে সে? যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই। তাছাড়া মা, বাবা, বোনকে ছেড়ে থাকাও সম্ভব নয়। বিয়েটা করাও তার পক্ষে এক প্রকার অসম্ভব। আজ রাতে মা-বাবার সাথে শেষবার কথা বলবে সে। যদি কোনো কাজ হয়! রুমকির সাথেও মন খুলে কথা বলতে পারে না। রুমকির কাছে প্রাণ খুলে যে বলবে তার জীবন দুর্বিষহের কথা, তাও পারছে না। কদিনই বা লুকিয়ে রাখতে পারবে এই বিয়ের কথা রুমকির কাছ থেকে? রুমকি জানলে যে কী করবে কে জানে! ভাগ্য ভালো যে এই বিয়ে বিয়ে ব্যাপারটা শুধু দুই ফ্যামিলির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আশেপাশের মানুষদের যদি জানিয়ে দেওয়া হতো তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যেত! রুমকি জানলে নিশ্চয়ই হটিস্টিক দিয়ে মারধর করবে। না জানানো যাবে না রুমকিকে। রুমকি জানার আগে বিয়েটা ভাঙতে হবে। শেষ চেষ্টা করতেই হবে একবার। ঘরে ঢুকে লিভিং রুমে সোফায় জুনের সাথে আষাঢ় আর কারিবকে বসা দেখে বেজায় রাগ হলো শ্রাবণের। কত ভরসা করেছিল সে আষাঢ়কে, অথচ আষাঢ় তাকে এভাবে ধোঁকা দিলো!
ভাইয়ের হাতে ফুল লক্ষ্য করে আষাঢ় বললো,
“ওয়াও ব্রো! তুমি তো দেখছি বেশ রোমান্টিক মুডে আছো। বিয়ের রং লেগেছে না কি মনে?”
আষাঢ়ের সাথে কারিব ও জুনও একসঙ্গে হেসে উঠলো। রাগান্বিত শ্রাবণ আরও রেগে গেলে। কটমট করে বললো,
“এই ফুল পিষে শরবত বানিয়ে খাওয়াবো তোকে!”
বলে সিঁড়ির দিকে দ্রুতগামী পা বাড়ালো।
_______________
তমসা ঘেরা শহরের বুকে চন্দ্র তার রোশনাই বিছিয়ে দিয়েছে। খোলা জানালা দিয়ে অনেকখানি চন্দ্র রোশনাই প্রবেশ করে রুম দখল করেছে আষাঢ়ের। লাইব্রেরি রুমকে পুরো দমে নিজ বেডরুম বানিয়ে ফেলেছে আষাঢ়। তার রুমে যা ছিল সব এনে পরিপূর্ণ করেছে এই রুম। কারিব এখনও অবধি জানতে পারেনি আষাঢ়ের নিজ রুম ছেড়ে এ রুমে স্থানান্তর হওয়ার কারণ। প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি আষাঢ়ের কাছ থেকে। সে শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করবে ঠিক করলো। আষাঢ় এই মুহূর্তে আয়নার সামনে অবস্থান রত। কারিব চেয়ারে বসা। সে শেষ বার প্রশ্ন করে ফেললো,
“আপনার এখানে শিফট করার কারণ কী আষাঢ় ভাই? আমাকে কি বলবেন না কারণটা?”
আষাঢ়ের চুলে চালিত হাতটা থেমে গেল। পিছন ফিরে কারিবের দিকে চাইলো একবার। মুহূর্তে কেমন অন্যরকম হয়ে গেল সে। অন্যমনা, কেমন একটু খুশি খুশি। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো বিশালাকার খোলা জানলার দিকে। জানালার কাছে এসে থামলো। জোৎস্না স্নান করিয়ে দিচ্ছে আষাঢ়কে। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে। ব্যালকনিটা এখান থেকে খুব ভালো করে দেখা যায় দিনের বেলা। রাত থাকায় অবশ্য ব্যালকনিতে যে একজন মেয়ে মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে সেটা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হলো না আষাঢ়ের। চাঁদের আলো পড়ায় ওখানে যে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা পরিলক্ষিত। মেয়েটা কে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। হতে পারে ওটা মিহিক, আবার হতে পারে নোয়ানা, আবার ওটা তিন্নিও হতে পারে। আষাঢ়ের মনে হলো ওখানে তার প্রিয়তমাই দাঁড়িয়ে আছে। সে চন্দ্র জ্যোতিতে তার প্রিয়তমার অবয়বের দিকে তাকিয়ে অবশেষে কারিবের প্রশ্নের উত্তর দিলো,
“আমার রুম থেকে আকাশের চাঁদটা ভালো করে দেখা যায় না কারিব। সেজন্য এখানে শিফট হয়েছি।”
কারিব মনে করার চেষ্টা করলো। বললো,
“কিন্তু কাল যখন আমি আপনার রুমে ছিলাম তখন তো বেশ ভালোই চাঁদের আলো ছিল আপনার রুমে। চাঁদটাকে তো দেখা যায় আপনার রুম থেকে। আমি তো দেখলাম কালকে।”
আষাঢ় প্রিয়তমার উপর দৃষ্টি স্থির রেখে জবাব দিলো,
“না কারিব, দেখা যেত না ভালো করে। চাঁদের আলো আমার কক্ষে এসে পৌঁছতো না ঠিকঠাক ভাবে। এখন দেখতে পাচ্ছি আমি। ভালো করেই চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে এখন। কিন্তু এই দেখায় যে আমার মন ভরবে না। এতদূর থেকে দেখে শান্তি পাচ্ছি না। কাল একটা বাইনোকুলার কিনে আনবে আমার জন্য। ওটা খুব প্রয়োজন আমার।”
কারিব কিঞ্চিৎ বিরক্ত বোধ করলো। যদিও তা প্রকাশ করলো না বাইরে। নরম কণ্ঠে বললো,
“আষাঢ় ভাই চাঁদ দেখা কি এতটাই জরুরি?”
“যে একবার চাঁদে’তে মজে সেই বোঝে, চাঁদ দেখা কতটা জরুরি তার। বাইনোকুলার দরকার আমার। কালকে সকাল সাতটার ভিতরই বাইনোকুলারের ব্যবস্থা করবে।”
“এত সকালে বাইনোকুলার পাবো কোথায় আমি?”
“দরকার হলে এখন গিয়ে কিনে আনো।”
“এখন?”
“হুহ, যাও। বিরক্ত করো না আর। আমার গার্লফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলবো আমি।”
“কোন গার্লফ্রেন্ড? সিলেটের?”
আষাঢ় বিরক্ত বোধ করে। সাধারণত সে তার পাঁচ স্থায়ী গার্লফ্রেন্ডদের সাথে নিজ থেকে কথা বলে। এটা কারিব জানে, তারপরও অহেতুক প্রশ্ন করছে। সে উত্তর দিলো,
“নো কারিব বেবি! আমি ক্যারি, ভেরোনিকা, সুরাইয়া, লিন্ডা এবং জেনির কথা বলছি। সিলেটিকে তো কালকেই ভ্যানিশ করেছি লিস্ট থেকে। তাকে আর লিস্টে রাখার প্রয়োজন মনে হয়নি।”
কারিব কথা বাড়ালো না, মৌনতা বিরাজ করলো তার মাঝে। নীরব রুমে হঠাৎ নিচ থেকে কবির সাহেবের উচ্চ কণ্ঠ ভেসে এলো। আষাঢ় চকিতে পিছন ঘুরে বললো,
“আব্বুর কী হলো?”
“আপনার ভাই বোধহয় আবার শুরু করছে।”
কথাটা বলে ব্যস্ত পা ফেললো কারিব। কারিবের পিছন পিছন আষাঢ়ও ছুটে এলো নিচে।
যা ভেবেছিল তাই। শ্রাবণ বিয়ে করবে না বলে আবার জেদ ধরেছে। আষাঢ়ের এসবে আগ্রহ বাড়লো না। সে নিস্তেজ। কারিবের অবশ্য উৎকণ্ঠা ছিল। কিন্তু সে থাকতে পারলো না। আষাঢ় তাকে বাইনোকুলারের ব্যবস্থা করতে পাঠিয়ে দিলো বাইরে।
(চলবে)