#তোমাতে_মাতোয়ারা ২য় পর্ব
_আরশিয়া জান্নাত
আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে,
ফাঁকে ফাঁকে নীল রঙের আকাশটা দেখতে দারুণ লাগছে।ক্লাস শেষে আমলকি গাছের নীচে বসে আছে ঐন্দ্রিলারা।আমলকি গাছটা বেশ পুরনো,ডিসেম্বরের দিকে ঝাঁকিয়ে আমলকি হয়।গাছের গুঁড়িতে শান বাঁধানো,সেখানে রোজ একবার বসাটা ঐন্দ্রিলার রোজকার রুটিন।এখানে মানুষের আনাগোনাও কম।পাখির কিচিরমিচির শব্দ ছাড়া তেমন কোনো কোলাহল এখানে নেই।ঐন্দ্রিলা রেগে গেলে একদম কথা বলেনা।ওকে এমন চুপচাপ দেখে ওদেরদের বুঝতে বাকি রইলো না চৈতির উপর সে বেশ রেগে আছে।কলেজ ফাংশনে ঐন্দ্রিলা গান গাইতো কথাটা চৈতি না বললেই কি পারতোনা! ক্যাম্পাসে সে সবসময় সুপ্ত থাকতেই পছন্দ করে।নাহয় অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়া মেয়েটা কি এতোদিনে ক্যাম্পাসে একবারও গান গাইতো না? পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুষ্পি বললো,দোস্ত তোরাও না যা তা।কি একটা বিষয় নিয়ে মুড অফ করে বসে আছিস।আমার তো ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে।বাঁধনকে কখন পাঠিয়েছি শিঙারা আনতে এখনো আসেনা।চল না বরং ক্যান্টিনে গিয়ে বসি??
ঐন্দ্রিলা:তোদের ইচ্ছে হলে যা ধরে রেখেছি আমি?
চৈতি:ঐন্দু বেবি স্যরি তো।আমি ইচ্ছে করে বলিনাই তো সত্যি।তুই এমন রেগে থাকিস না প্লিজ।
ঐন্দ্রিলা বাকি কথা না শুনে উঠে চলে গেল।
চৈতি কাঁদো কাঁদো মুখ করে পুষ্পিকে বললো,সকালে ক্লাসে নিরব ভাইয়া এসে যখন আমার সামনে দাঁড়ালো ক্লাসের বাকি মেয়েরা তো অবাক হয়ে গেছে।ওদের জেলাস দেখাতে আমিও ভাইয়ার সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলতে চাইলাম।তুই তো জানিস আমি কথা বলা শুরু করলে সব বলে দেই।প্রোগ্রামের কথা শুনে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে ঐন্দ্রিলা অনেক ভালো গান গাইতে পারে…
পুষ্পি:আচ্ছা চৈতি তুই ও না পারিস বটে তুই জানিস না কলেজে লাস্ট ইনসিডেন্ট এর পর থেকে ঐন্দ্রিলা কারো সামনে আর গান গায় না!ও জনসম্মুখে দাঁড়াতেও আনইজি ফিল করে।তুই শুধুমাত্র ভাব দেখাতে গিয়ে এই কাজ করলি।এখন নিরব ভাইয়া যে ওকে অডিশন দিতে বললো বুঝতে পারছিস কি ঘটতে যাচ্ছে?
চৈতি ভয়ার্ত চেহারা করে বললো,পুষ্পি ফরহাদ ভাইকে বলে ম্যানেজ কর না।ঐন্দ্রিলার আবার প্যানিক এট্যাক হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা।ও তো আমার সঙ্গে আর কোনোদিন কথা বলবেনা।
রাকিব:ব্যাপারটা অদ্ভুত খেয়াল করেছিস?ক্যাম্পাসে সবচেয়ে ফেমাস নিরব ভাইয়ার ব্যান্ডে অনেক ভালো ভালো সিঙ্গার আছে।আর সানিয়া আপু সবসময় তো নিরব ভাইয়ের সাথে ডুয়েটে পার্ফম করে।তবে এবার হঠাৎ মেয়ে সিঙ্গার লাগছে কেন?আর অডিশন তো আর কারো হচ্ছে না।
পুষ্পি:আমিও সেটাই ভাবছি।হতে পারে উনারা নতুন মেম্বার নিতে চাইছে?
রাকিব:যদি তাই হতো তবে সবাইকে অডিশন দিতে বলতো।শুধুমাত্র চৈতি থেকে শুনেই ঐন্দ্রিলাকে কেন প্রায়োরটি দিতে চাইবে?হ্যাঁ রে চৈতি তোর কাছে এসে ঐন্দ্রিলার খোঁজ করছিল কি বলে?
চৈতি:এসে বলেছে ঐন্দ্রিলা কোথায়।ক্যাম্পাসের ফাংশনে ওর কাজ আছে তাই ওকে লাগবে।
পুষ্পি:আচ্ছা এসব বাদ দে আগে চল খেয়ে নি।তারপর ভাইয়াকে বলে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবো।
রাকিব:তোর আছে খালি খাওয়ার ধান্দা।বাঁধন শালা নিশ্চিত শিঙারার কথা ভুলে গেছে।চল ক্যান্টিনে যাই।
ঐন্দ্রিলা কাউকে কিছু না বলেই বাসায় চলে গেল।সে ঠিক করেছে কিছুদিন আর ক্যাম্পাসেই আসবেনা।এমনটাই তো করে ও সবসময়,পরিস্থিতি মনমতো না হলেই কাছিমের মতো খোলসের ভিতরে গুটিয়ে যায়।তখন শত চেষ্টা করেও কেউ তাঁকে বের করে আনতে পারেনা।
_________
নিরব ভেবেই পাচ্ছে না কিজন্য ঐন্দ্রিলা প্যানিক হয়ে যায়।ভাবমূর্তি রক্ষা করতে সরাসরি জিজ্ঞাসাও করতে পারেনি কাউকে,এমনিতেই সকালে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টে যাওয়ায় সবার নজর পড়ে গিয়েছিল।চৈতিদের চলে যেতে বলে নিরব আনমনে গিটারে সুর তুলতে লাগলো।
কিচ্ছু চাই নি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া
আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যাঁরা
না না কিচ্ছু চাই নি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া
আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যারা
সময়ের ঘষা লেগে শিলালিপি যায় ক্ষয়ে ক্ষয়ে
আমি একা বসে থাকি প্রেমিকের অপেক্ষা হয়ে,
বাতাসে প্রবাদ আর আকাশে আদিম ধ্রুবতারা,
কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালবাসা ছাড়া।
তারেক: আরেহ মাম্মা একদম ফাটায়া দিছো।
নায়রা:এটা তো আজ নতুন না,নিরব সবসময়ই ভালো গায়।
সানিয়া:তবে আজকের গানটায় বিষাদ আছে মনে হচ্ছে।ব্যাপার কি??
তারেক:বুঝোস নাই তোরা,দেখিস না এবার কক্সবাজার থেকে আসার পর থেকেই নিরব কেমন হয়ে গেছে।সত্যি কইরা বল তো মামা প্রেমে পড়লি নাকি??
নিরবঃ তোরাও না আজব।গান গাইলাম দুই লাইন তা নিয়েও গবেষণা শুরু।
ঐন্দ্রিলার দাদী মনোয়ারা বেগম মাত্রই গ্রাম থেকে এসেছেন।ঢাকা শহর তাঁর একদম পছন্দ না।চারদিকে গাড়ির হর্ন,কোলাহল আর দূষিত বায়ু।শহরটার পরিবেশ একদম ধ্বংস করে দিলো।মনোয়ারা গ্রামেই শান্তিতে আছেন,তবুও আদরের নাতি নাতনি দুটোর মায়ায় কিছুদিন পর পর চলে আসে এক রাতের বেশি থাকেন না।তাঁর মতে শহরে এক রাতের বেশি দূষণ সহনশীলতা তাঁর ফুসফুসের নেই।ঐন্দ্রিলার বাবা ইমরান অনেকবার বলেও তাঁর মাকে এখানে দুইদিন রাখতে পারেন নি।বছরে দুই ঈদ ছাড়া তাঁদের বাড়ি যাওয়া হয়না।
মনোয়ারা বেগম ঐন্দ্রিলার রুমে গিয়ে পানের বাটা বেশ আয়েশ করে খাটে বসলো।দাদীর পান সাজিয়ে খিলি করে মুখে দেওয়ার ভঙ্গিটা ঐন্দ্রিলার খুব পছন্দ।মনোয়ারা আরেক খিলি পান শুধু সুপারি দিয়ে বানিয়ে নাতনীর মুখে তুলে দেন।এইটা সে সবসময় করে,এই কাজটায় ঐন্দ্রিলা অনেক ভালোবাসা খুঁজে পায় বটে।পান চিবুতে চিবুতে বললেন,আমার চান্নীপহরের মুখটা এমন দেখায় ক্যান?মন খারাপ বুবু ?
ঐন্দ্রিলা দাদীর গলা জড়িয়ে বলে,দাদুন তুমি আমাকে এতো বুঝো কিভাবে?আর কেউ তো চেহারা দেখে বুঝেনা আমার মন খারাপ,,,
মনোয়ারা হেসে বললো,তুই সবসময় চুপচাপ থাকিস তো তাই কেউ বুঝেনা কখন তোর মন খারাপ থাকে আর কখন মন ভালো থাকে।শান্তশিষ্ট মানুষের এই এক সুবিধা কেউ ওদের মনের খবর সহজে ঠাওর করতে পারেনা।
:এটা সুবিধা?
:অবশ্যই সুবিধা।মনের খবর জানলেই তো অসুবিধা।মনের খবর লোকে যতো কম জানবো ততোই নিরাপদ থাকবি।
:হুহ!এরপর বলো দাদাই কেমন আছে?বুড়ো বরটাকে একা ফেলে চলে আসো কষ্ট হয়না তোমার?
:কষ্ট হয় বইলাই তো এক রাতের বেশি থাকিনা বুবু। কি করমু বল দুই দিকেই যন্ত্রণা।একদিকে পোলা আর নাতি নাতনির মায়া আরেকদিকে স্বামীর মায়া।দুইদিকে ছুটতে ছুটতে আমি শেষ।
:দাদাইসহ চলে আসলেই পারো।ওখানে থাকার কি দরকার।চাচীআম্মুরা তো আছেই সব দেখেশুনে রাখবে।
:না গো বুবু আমরা গ্রামের মানুষ গ্রামে থাইকাই শান্তি।তোগোরে দেখতে তোগো দাদাই কতবার আইতে চায়।কিন্তু বেশিক্ষণ গাড়িতে বইতে পারেনা দেইখা আসেনা।জীবনে একবার শুধু ঢাকায় আসছিল তাও যখন তুই হইছিলি,বংশের প্রথম নাতনি হইছে শুইনা পারেনাই বিমানে চইড়া আইতো।তোর জন্য পরাণ পড়ে বেশি।সবসময় তোর কথা কয়,আমারে সেদিন কি কইছে জানোস?
:কি বলে?
:হিহিহি শুনে আবার চেতিস না।উনি কয় তোরে আমাগো গ্রামে বিয়া দিবো।যাতে ডেইলি একবার নাতনিরে গিয়া চাইতে পারে।হিহিহি
ঐন্দ্রিলা তাঁর দাদীর হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে।তাঁর দাদা-দাদীর ভালোবাসা সবসময় তাঁকে অভিভূত করে।ছুটি পেলেই সে দাদার কাছে গিয়ে ঘুরে আসে।তাঁর কাছে এই পৃথিবীর এক টুকরো জান্নাত হলো তাঁর দাদুবাড়ি।এই দুটো মানুষের জন্য ঐন্দ্রিলা সব করতে রাজী,যদি বলে জীবনটা দিতে সে তাঁতেও পিছপা হবেনা।
নিরবের বড় বোন তাইয়্যেবা একগাদা শপিং ব্যাগ হাতে ওর রুমে এসেছে।নিরব হেসে বললো,আপু তুই আবার শপিং করেছিস?তুই পারিস ও বটে!!
তাইয়্যেবা ব্যাগ থেকে সব নামাতে নামাতে বললো,তোর দুলাভাইয়ের টাকা খাবে কে আর?জীবনে শুধু আয় করতে শিখেছে ব্যয় করতে শিখেনাই।কিপ্টার কিপ্টা একটা! ওর কিপ্টামি ছুটাতেই আমি বেশি বেশি শপিং করি।দেখি তো টিশার্ট গুলো পড়ে দেখ।
:এতোগুলো পড়ে পড়ে দেখাতে পারবোনা।
তাইয়্যেবা রেগে বললো,ক্যান পারবিনা?আমি চারঘন্টা ঘুরে ঘুরে এসব কিনতে পারবো আর তুই দুই মিনিট খরচ করে পড়ে দেখাতে পারবিনা?আচ্ছা যা তোর সব পড়তে হবেনা।দেখ তো ঘড়িটা কেমন হয়েছে?
:দুলাভাইয়ের জন্য নিলে?অনেক সুন্দর হয়েছে।কিন্তু সে পড়বে কিনা সন্দেহ।
:পড়বেনা মানে।না পড়লে ওর একদিন কি আমার একদিন।কত শখ করে করে ওর জন্য শপিং করি সে এসব ধরেও দেখেনা।ঘুরেফিরে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট!অসহ্যকর।
:দুলাভাই তোমার জন্যই সাদা শার্ট পড়ে আপু।কলেজে থাকতে সাদা শার্টে দেখে প্রেমে পড়েছিলে কি না!!
তাইয়্যেবা লজ্জায় কথা ঘুরিয়ে বললো,শোন অরফানেজ এর জন্য টাকাটা রেখে যাচ্ছি তোর দুলাভাই দিনাজপুর যাবে।তাই তুই গিয়ে দিয়ে আসিস,আর ভালো করে দেখবি কোনো সমস্যা আছে কিনা।এই শুক্রবার ওদের জন্য আমি রান্না করে পাঠাবো দিদার সাহবেকে বলে দিস।
নিরব ওর বোনের চলে যাওয়া দেখে।তাইয়্যেবাকে দেখলে বোঝার সাধ্য নেই সে মানুষকে কত গভীরভাবে ভালোবাসতে পারে।আরমানের মতো অনাথ ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল দশ বছর আগে।তাঁদের বাবা তাহজীব খন্দকার এই সম্পর্কে প্রথমে রাজী না হলেও আরমানের সাথে কথা বলে দ্বিমত করেন নি,ছেলেটা বেশ ভালো আর মেধাবী।ভবিষ্যতে ঠিক দাঁড়িয়ে যাবে এই ভরসাতেই অতি আদরের বড় মেয়ের হাত তুলে দিয়েছিলেন।তাঁর ভাবনা ভুল প্রমাণ হয়নি,আরমান ঠিকই নিজ পায়ে বেশ সাফল্যের সঙ্গেই দাঁড়িয়েছে।কিন্তু চলাফেরায় পরিবর্তন হয়নি।সে এখনো আগের মতোই অনাড়ম্বর জীবনযাপন করে।তাঁর মতে টাকা পয়সা অযথা নষ্ট করে লোক দেখিয়ে লাভ কি।আল্লাহ ধন দিয়ে মন পরীক্ষা করে।সে তাঁর আয়ের 30% দান করেন।বেশ কিছু লোককে পুঁজি দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছে।আরমান তাইয়্যেবাকে তাঁর সফলতার চাবিকাঠি ভাবে।তাইয়্যেবা ভালোবেসে ওর পাশে না থাকলে কখনওই হয়তো এতোদূর আসতে পারতোনা।বিয়ের পর ছোট্ট দু’রুমের বাসায় যে মেয়ে অনায়াসে সুখের সংসার সাজাতে পারে সেই মেয়ে কতটা অসাধারণ নিরবের ঠিক জানা।সে মনে মনে তাঁদের দুজনকে অনেক সম্মান করে।পৃথিবীতে যে এখনো ভালোবাসা বেঁচে আছে,সকল অভাব উপেক্ষা করে প্রিয় মানুষটার সঙ্গে জীবনটা যে হেসে কাটিয়ে দেওয়া যায় ,তা ওদের দেখেই শিখেছে নিরব।
“ভালোবাসা ব্যাপারটাই অন্যরকম।এটা কারো জন্য উদ্যম শক্তি আর কারো জন্য দূর্বলতা।যাঁরা সঠিক মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছে তাঁরাই জানে জীবনটা কত সুন্দর!”
নিরব শপিং ব্যাগগুলো গুছিয়ে রেখে ফোন নিয়ে বসলো।
গত কয়েকদিন ঐন্দ্রিলা ক্যাম্পাসে আসেনি।মেয়েটা কি অদ্ভুত ভীতু!এরকম পালিয়ে বেড়ানো খুবই খারাপ অভ্যাস।জীবনে যাই ঘটুক সেটা সামনে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে হবে।সে কিনা সামান্য অডিশনের কথা শুনেই পালিয়ে বাঁচলো।হাহ!!
।।
আজ সাতদিন পর ঐন্দ্রিলা ক্লাসে এসেছে।চুপচাপ ক্লাস করে ক্যান্টিনে বসে বাঁধনের থেকে এই সাতদিনের নোট নিয়ে লিখতে বসলো।পুষ্পি আর চৈতি ফুচকা খাওয়ায় ব্যস্ত।এমন সময় নিরব তার দলবল নিয়ে ক্যান্টিনে হাজির।ঐন্দ্রিলা ওদের শোরগোল শুনে ব্যাগ কাঁধে তুলে বেরিয়ে গেল।এজন্য সে ক্যান্টিনে বসেনা,চৈতিদের জন্যই ক্যান্টিনে এসে বসেছিল।নিরব ঐন্দ্রিলাকে গেইট দিয়ে ঢোকার সময় ই দেখেছে।এতোদিন পর এসেছে ভেবেই ওর শান্তি লাগছিল।ঐন্দ্রিলাকে উঠে যেতে দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল তাঁর।”মেয়েটা আমায় দেখলেই এমন পালাই পালাই করে কেন?এই ক্যাম্পাসে ও ই একমাত্র মেয়ে যে আজ পর্যন্ত আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায় নি!”
নিরব বুঝে পায়না মন খারাপটা ঐন্দ্রিলার প্রতি ওর অভিমান নাকি অবহেলাটা ওর ইগোতে হার্ট করছে বলে!
ঐন্দ্রিলার পিছু পিছু গিয়ে তাঁকে ডাক দিয়ে বললো,হেই লিসেন।
ঐন্দ্রিলা দাঁড়িয়ে ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে রইলো।
নিরব কিছুটা গম্ভীর গলায় বললো,সিনিয়রের সাথে বেয়াদবি করার সাহস পেলে কোত্থেকে?সেদিন আমাকে না বলে চলে গিয়েছিলে কেন??
ঐন্দ্রিলা কোনো কথা বললোনা,কি বলবে সে!এখানে উত্তর দেওয়ার কোনো বাহানা তো ওর নেই।
ঐন্দ্রিলার মনে মনে বললো,ভার্সিটি টা কি আপনার পার্সোনেল প্রপার্টি নাকি আপনি এখানকার রাজা, এখান থেকে যাওয়ার আগে আপনাকে কুর্নিশ জানিয়ে যেতে হবে।
:কি ব্যাপার কথা কানে যাচ্ছে না??
:না মানে এমনি।
:What এমনি?How dare you ?কোনো সমস্যা থাকলে বলতে পারতে এমন চোরের মতো পালিয়ে গেলে কেন ইডিয়ট?
ঐন্দ্রিলার নির্লিপ্ত চাহনী দেখে নিরবের মেজাজটাই বিগড়ে গেল।সে তো জানেনা ঐন্দ্রিলা মনে মনে অন্য কথা ভাবছে।ঐন্দ্রিলা মুখে যতো কথা বলে তাঁর চেয়ে বেশি বলে মনে মনে।এই খেলাটা ও ছোটবেলা থেকে খেলে আসছে।বেশ মজার এটা,না কেউ শুনবে না কোনো সমস্যা হবে।ছোট থাকতে ঐন্দ্রিলার মা নাহার যতো বার ওকে বকা দিতো ও মনে মনে অন্য কথা ভেবে হাসতো।এতে বকাটাও কানে ঢুকেনা মন ও খারাপ হয়না।বলা যায় এটা বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়ানোর বেশ ভালো এক উপায়!
:ভাইয়া আমার অনেক লেখা বাকি।আমি এখন যাই।
বলেই ঐন্দ্রিলা চলে গেল।ঐন্দ্রিলার কথায় নিরব কিছুই বুঝলোনা।সে ভাবলো ও বোধহয় কি উত্তর দিবে তা ভাবছিল,কিন্তু সে তো কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেল।তাহলে কি ভাবছিল এতক্ষণ?
উফ মেয়েটা আজকেও ফাঁকি দিয়ে চলে গেল!!!
ঐন্দ্রিলা আর কিছুক্ষণ থাকলে হেসে ফেলতো।সে মনে মনে ভাবছিল নিরবকে সে মাথার উপর তুলে আছাড় মেরেছে,তারপর সাজিয়ে রাখা চুলগুলো এলোমেলো করে বলছে,খুব ভাব তোর তাই না?সবাই একদম মাথায় তুলে রাখে।সিনিয়র বলে জুনিয়রদের মাথা কিনে নিয়েছিস তাইনা।নে এবার ঐন্দ্রিলার পাঞ্চ সামলা।নিরবের ভোঁতা চেহারা কল্পনা করেই ওর হাসি চলে আসছিল।
“এহ আসছে উনি ম্যানারস শেখাতে,How dare you ,Idiot ব্লাহ ব্লাহ।ভাবে কি নিজেকে?সিনিয়র বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি।হুহ”
ঐন্দ্রিলার যাওয়ার পথে চেয়ে নিরব বললো,
“”তোমার এই পালানো স্বভাবটা যদি আমি না পাল্টেছি!আমার থেকে কয়দিন পালিয়ে বেড়াবেন মিস ঐন্দ্রিলা??””
চলবে,,,