তোমাতে মাতোয়ারা পর্ব-৩

0
2029

#তোমাতে_মাতোয়ারা ৩য় পর্ব

_আরশিয়া জান্নাত

এলার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ঐন্দ্রিলার,ঘুম ঘুম চোখে চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ ঝিমিয়ে রইলো।পাঁচ মিনিট সেভাবে ঘুমিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফজর নামায পড়ে ছাদে গিয়ে সূর্যোদয় দেখা তাঁর রোজকার রুটিন।ভোরের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে তাঁর ভীষণ ভালো লাগে।ছাদের সবকটা গাছে পানি দিয়ে,নীচে নামতে নামতে আট টা বেজে যায়।ঐন্দ্রিলার মা নাহার ব্রেকফাস্ট রেডি করতে করতে স্বামীকে আর ছেলেকে ডাকতে লাগলেন।ঐন্দ্রিলা মুচকি হেসে বললো,গুড মর্নিং মা।এই নাও তোমার জন্য এক মুঠো কামিনী ফুল।
নাহার হেসে বললো,গুড মর্নিং।বাহ বেশ ফুল এসেছে দেখছি, দারুণ সুভাষ।
ঐন্দ্রিলা ব্রেডে বাটার লাগাতে লাগাতে বললো,গন্ধরাজের বেশ কিছু কলি এসেছে।মা দেখেছ বড় টগর গাছটায় শালিক পাখি বাসা বানাচ্ছে?
:না খেয়াল করিনি।
:দাদাই বকুল গাছের নীচে এবার পুরনো দোলনা খুলে নতুন দোলনা বসিয়েছে।একটু আগে দাদাই ফোন করে বললো।আমি তো খুব এক্সাইটেড।এবার উইকেন্ডে আমি কিন্তু দৌলতপুর যাবো।
:সে নাহয় যাবি।হ্যাঁ রে ইশতিয়াক এর কি হয়েছে কিছু জানিস?
:কি হয়েছে??
:কি জানি!কয়েকরাত ধরে দেখি ঘুমায় না ।অস্থিরভাবে পায়চারি করে।কি হয়েছে কে জানে!
:এরকম মাঝেমধ্যে সবারই হয় ।টেনশনের কিছু নেই।
:তারপরো কথা বলে দেখিস তো।ছেলেটা সারাদিন এতো পরিশ্রম করে রাতে ঠিকঠাক না ঘুমালে চলে!নিশ্চয়ই বড় কোনো টেনশন আছে।
:আচ্ছা কথা বলে দেখবো।
ঐন্দ্রিলা খাওয়া শেষ করে রেডি হয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।ক্লাসে গিয়ে দেখে বাঁধন, রাকিব,চৈতি পুষ্পিকে ঘিরে বসে আছে।ঐন্দ্রিলাকে দেখে বাঁধন বললো,ঐন্দ্রিলা আমাদের পুষ্পি হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেছে।
ঐন্দ্রিলা:মানে?
চৈতি:মানে বুঝিস নি ?এই দেখ ওর 50th Confession letter..
ঐন্দ্রিলা:বাহ!
চৈতি:I feel jealous ..আজ পর্যন্ত একটা কনফেশন তো দূর কেউ একটু ঘুরেও তাকাইলো না।আর পুষ্পিকে হাহ!!
পুষ্পি:শোন কনফেশন দেখে এতো জেলাস হবার কিছু নাই।আমার মনে হয় না এতোজন এসব দিচ্ছে।হতে পারে চেনাজানারাই ফান করতে লিখছে।আমি এসব উড়োচিঠিতে বিশ্বাস করিনা।যে ভালোবাসবে সে সামনে এসে বলতে হবে।
ঐন্দ্রিলা:সহমত।
চৈতি:যাই বলিস না কেন ব্যাপারটা খুব রোমাঞ্চকর।
বাঁধন:বুঝিতো এসব বলিস ট্রিট দেওয়ার ভয়ে।এতো কথা জানিনা অর্ধসেঞ্চুরি উপলক্ষে আমাদেরকে পিৎজা হাটে ট্রিট দিতে হবে।
পুষ্পি:অ্যাহ বললেই হলো ট্রিট।তাও আবার পিৎজা হাটে।আমার বেনিফিট কি এখানে যে আমি তোদের খাওয়াবো।ফকিরকে খাওয়ালে তাও একটু সওয়াব হবে।তোদের খাওয়ালে সেটাও হবেনা।
রাকিব:এতো বড় অপমান করলি!আরেহ আমরা তো ফকিরের চেয়ে কম না,আমাদের খাওয়ালে আরো দ্বিগুণ সওয়াব পাবি।
বাঁধন:শালা তুই তো আরেক,,
সবাই হাসতে শুরু করলো।
ক্যাম্পাসে বেশ তোড়জোড় করেই প্রিপারেশন নেওয়া শুরু হয়ে গেছে।ডেকোরেশনের দায়িত্ব পড়েছে সেকেন্ড ইয়ারে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের উপর।রোজ ক্লাসের পর ঘটা করে নাচ গানের রেহার্সেল হচ্ছে।ঐন্দ্রিলা এ কদিনে ভুলেও নিরবের সামনে পড়েনি,নিরব ও ব্যস্ততায় সেদিকে যাওয়ার সময় পায়নি,তবে রোজ ঐন্দ্রিলাকে এক পলক দেখতে ভোলেনি।

রাতে পানির বোতল নিতে ডাইনিং এসে ঐন্দ্রিলা দেখলো ইশতিয়াক এর ঘরে এখনো লাইট জ্বলছে।ইশতিয়াক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে।সে এতোটাই ঘুমকাতুরে যে পরীক্ষার আগের রাতও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।তবে ইদানীং কি এমন হলো যে তাঁর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে!
ঐন্দ্রিলা দরজা নক করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইশতিয়াক দরজা খুলে দিলো।কিছুটা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হেসে বললো,কি রে কিছু বলবি?
ঐন্দ্রিলা রুমে ঢুকে চেয়ারে বসে বললো,ভাইয়া তোর কি হয়েছে বল তো?
ঐন্দ্রিলাকে অবাক করে দিয়ে ইশতিয়াক হু হু করে কেঁদে দিলো।জীবনে এই প্রথম ইশতিয়াক এভাবে কাঁদছে।ভাইয়ের কান্না দেখে পৃথিবীর কোনো বোনের চোখে পানি না এসে পারেনা,ঐন্দ্রিলাও তাঁর ব্যতিক্রম নয়।সে ব্যস্ত গলায় বললো,কি হয়েছে ভাইয়া এমন করছিস কেন?বল না আমায় কোনো সিরিয়াস সমস্যা?
ইশতিয়াক কান্না সামলে বললো,আমার সব শেষ হয়ে গেছে,সব বরবাদ হয়ে গেছে।এই জীবনটাই ঠুনকো লাগছে এখন।আমি বোধহয় আর বেশিদিন বাঁচবোনারে বোন।আমার সব শেষ।
:ভাইয়া এভাবে বলিস না।জীবনে উত্থান পতন আছেই,এভাবে ভেঙে পড়লে চলে?
:ঐন্দ্রিলা শিলার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,,ওর বাবা বিসিএস ক্যাডার পাত্র ঠিক করেছে।ঐ ছেলেকে বাদ দিয়ে উনি আমাকে কখনওই মেনে নিবেনা ,এদিকে শিলা বলছে ও চলে আসবে।আমি কি করবো?এতো অসহায় আর কখনো লাগেনিরে বোন,চোখের সামনে ভালোবাসাকে অন্যের হতে দেখার ক্ষমতা আমার নেই।তুই তো জানিস আমরা একে অপরকে কতটা ভালোবাসি।কিন্তু পালিয়ে বিয়ে করাকে আমি একদম সাপোর্ট করিনা,দাদাই জানলে আমাকে ত্যাজ্য করে দিবেন শিওর।আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।।
ঐন্দ্রিলা তাঁর ভাইয়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে চেয়ে রইলো।সে খুব ভালো করেই জানে ইশতিয়াক শিলাকে কতোটা ভালোবাসে।কিন্তু পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করা কিংবা বাবা মায়ের মুখে চুনকালি মাখা মোটেও ঠিক নয়।এখনকার বাবা মা কেবল অর্থবিত্ত আর ক্যাডার ছেলে খোঁজে,ছেলেটা ভালো কি না সেটা অতোটা গুরুত্ব পায়না।লোকে বাহবা দিয়ে বলবে ভালো পাত্র পেয়েছেন মশাই,ওটাই যেন সব!
সমাজের এই অলিখিত নিয়মগুলোকে ঐন্দ্রিলা খুব ঘৃণা করে।ইশ তাঁর ভাইটা কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে!একটা জাদুর কাঠি থাকতো যদি ঐন্দ্রিলা ঠিকই তাঁর ভাইয়ের সমস্যা ভ্যানিশ করে দিতো।
ঐন্দ্রিলা ইশতিয়াককে সান্ত্বনা দিয়ে রুমে চলে এলো।কিছুদিন পর ইশতিয়াক বেশ কিছু ঘুমের ঔষুধ খেয়ে সুইসাইড এটেম্প করার চেষ্টা করে,ছেলের এহেন কান্ডে বাড়ির সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।ঐন্দ্রিলার দাদাই ইরফাজ সরওয়ার আর দাদুন দৌলতপুর থেকে ছুটে আসে হসপিটালে।ভাগ্য ভালো মেডিসিন গুলো ভেতরে যাওয়া মাত্রই বমি হয়ে গেছে,নাহয় কি যে হতো ভাবতেই আত্মা কেঁপে উঠে সবার।
ইশতিয়াকের অবস্থা আশংকামুক্ত হতেই ঐন্দ্রিলার দাদা থমথমে গলায় বললেন,ও এই কাজ কেন করেছে কেউ জানো?
নাহার:বেশ কিছুদিন ধরেই ছেলেটা রাতে ঘুমায় না।আমার ভোজনরসিক ছেলেটা নাওয়া খাওয়া ভুলে রাত জেগে কিসব যে ভাবতো জানিনা।কতবার জিজ্ঞাসা করেছি কিছুই বলেনা।
ইরফাজ:দাদুভাই তুই কিছু জানিস?
ঐন্দ্রিলা কাঁদতে কাঁদতে বললো,ভাইয়া যে মেয়েকে ভালোবাসতো তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে গতকাল,
নাহার:আমাকে আগে বলিস নি কেন?
ঐন্দ্রিলা:বললেও কাজ হতোনা মা।শিলা আপুর বাবা কখনওই রাজী হতোনা।
ইরফাজ সাহেব কিছু না বলে উপরে চলে গেলেন।ইশতিয়াক এর খবর শুনে কিসের উপর দিয়ে এই বয়স্ক দম্পতি ঢাকায় এসেছেন তা তাঁরা জানেন না।পরিবারের সবার ভালোবাসার উপেক্ষা করে তাঁর নাতি অন্য একটা মেয়ের জন্য মরতে বসেছিল ভাবতেই ভেতরটা কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।এতো স্নেহ মমতার কোনোই কি মূল্য নেই,সে তাঁকে বলে দেখতো প্রয়োজনে হাতেপায়ে ধরে রাজী করাতো মেয়ের বাবাকে! আচ্ছা ওরা কি কখনো বুঝবেনা বুড়ো দাদা দাদীর কাছে নাতি-নাতনির গুরুত্ব কতোটা বেশি??
_______
নিরবের মা নাঈমা রশিদ সপ্তাহে একদিন পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে লাঞ্চ করেন।তাঁর বেশিরভাগ সময় কাঁটে হসপিটালে,দেশের নামকরা হার্ট সার্জন হিসেবেই তিনি পরিচিত।পরিবারকে ঠিকঠাক সময় দিতে না পারলেও দায়িত্ব কোনোটাই অপূর্ণ রাখেননি।নিরবকে নিয়ে তিনি কিছুটা হতাশ বটে।বড় মেয়েটা ভালোবেসে বিয়ে করে ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে,তবে জামাই ভালো বলে সে সেই দুঃখ মাটিচাপা দিয়েছে।কিন্তু ছেলেটার প্রতি থাকা আক্ষেপ কিভাবে মেটাবে?স্টাডির ব্যাকগ্রাউন্ড এতো ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে ক্যারিয়ার হিসেবে মিউজিকে কনসেনট্রেট করেছে,আর ছোট মেয়ে দিয়া দিন-দুনিয়া ভুলে সারাদিন কোরিয়ান সিরিজে ডুবে থাকে।তাঁর স্বামী তাহজীব ও পারে বটে,ছেলেমেয়েদের পূর্ণ স্বাধীনতার নামে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছে।মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় এই বাপ বেটাদের শাস্তিস্বরূপ হঠাৎ করে কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।কিন্তু ডিউটির জন্য সেই প্ল্যান সবসময় প্ল্যান ই থেকে যায়,বাস্তবে রূপান্তরিত হয়না।
আজ ক্যাম্পাসের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান।মেয়েরা সবাই শাড়ি পড়েছে,আর ছেলেরা পাঞ্জাবি।ক্যাম্পাস পুরোটা ফুল আর বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ফাস্ট ইয়ারের বেশ কিছু স্টুডেন্ট সকলকে সাদরে বরণ করে নিচ্ছে।শিক্ষামন্ত্রী,উপচার্য,কমিশনারসহ বেশ কিছু গন্যমান্য ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত আছেন।ঐন্দ্রিলা বেগুনি সাদার কম্বিনেশনের একটা জামদানি পড়েছে।চুলগুলো খোঁপা করে তাতে গোলাপ আর রজনীগন্ধার গাজরা বেঁধেছে,দু’হাত ভর্তি বেগুনি রঙের খাঁজকাটা কাঁচের চুরি। বেশ সুন্দর করে চোখ সাজিয়ে আর ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে সে একদম তৈরি।
পুষ্পি আর চৈতিও বেশ সেজেগুজে এসেছে।তিনজন একসঙ্গে ক্যাম্পাসে ঢুকলো।
নিরব হোয়াইট পাঞ্জাবির উপর ব্লু মুজিবকোর্ট পড়ছে,চুলগুলো বেশ সুন্দর করে সাজানো,ফর্সা চেহারা যেন আরো ঝকঝক করছে,পাঞ্জাবির হাতা কনুই অবধি ফোল্ড করা রোমশ হাতে সিলভার রঙের ব্যান্ডেড ঘড়িটা বেশ মানিয়েছে।নিরবকে দেখে ফাস্ট ইয়ারের মেয়েরা আরেকদফা ক্র্যাশ নামক অখাদ্য গিলেছে বলা বাহুল্য।এতোগুলো মুগ্ধ নয়ন উপেক্ষা করে নিরবের চোখ খুঁজে যাচ্ছিল কেবল তাঁর মায়াবিনীকে।শাড়িতে তাঁকে কেমন লাগছে তা দেখার তর সইছেনা তাঁর।অনুষ্ঠানে শুরু হবার পর মান্যগণ্য ব্যাক্তিবর্গ শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন।তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হলো।একে একে সবাই তাঁদের এতোদিনের পরিশ্রমের সর্বোচ্চটা দিয়ে পারফর্ম করলো।
নিরবের গান শুরু হবার কিছুক্ষণ আগে ঐন্দ্রিলা উঠে চলে গেল।সকলের মাঝে এমন উঠে যাওয়া নজরে পড়তে দেরি হলোনা নিরবের।সে কিছুটা মনোকষ্ট নিয়েই গাইতে শুরু করলো,
ও যে মানে না মানা।

আঁখি ফিরাইলে বলে, ‘না, না, না।’

যত বলি ‘নাই রাতি– মলিন হয়েছে বাতি’

মুখপানে চেয়ে বলে, ‘না, না, না।’

বিধুর বিকল হয়ে খেপা পবনে

ফাগুন করিছে হাহা ফুলের বনে।

আমি যত বলি ‘তবে এবার যে যেতে হবে’

দুয়ারে দাঁড়ায়ে বলে, ‘না, না, না।’

সকলের করতালিতেও মন ভরলো না নিরবের,খুব গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্টেজ থেকে নেমে গেল সে।
ক্যাম্পাসের পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টেনে যাচ্ছে নিরব। তাঁর প্রতি ঐন্দ্রিলার এমন অবহেলা মোটেও হজম করতে পারছেনা সে।রাগ কমানোর মিথ্যে ভরসায় নিকোটিনে ধোঁয়া উড়িয়ে চলেছে ,মনের ভেতরটা এমন খাঁ খাঁ করেনি তো আগে।এতো উপেক্ষার মানে কি?কি বুঝাতে চায় ঐন্দ্রিলা তাঁকে একটুও পছন্দ নয়?নাকি এ নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার?
মনের মাঝে এমন হাজারো প্রশ্নের উদয় হচ্ছে।যাঁর কাছে সব উত্তর পাবে সে তো তাঁর থেকে পালিয়ে বাঁচে।না এই অবহেলা আর সহ্য করা যায়না অনেক হয়েছে।আজ সে ঐন্দ্রিলাকে মনের কথা বলেই ছাড়বে,ফলাফল যাই আসুক সাহিল ইবনান নিরব ফলাফলকে তোয়াক্কা করেনা।
।।
ঐন্দ্রিলার শাড়ির আঁচলে টান খেয়ে পিন ভেঙে কাঁধের কিছুটা অংশ কেটে গেছে।আঁচলের ভাঁজ পুনরায় ঠিক করতে সে ওয়াশরুমে গিয়েছিল।সব ঠিকঠাক করে করিডর পেরোতেই কেউ একজন তাঁর মুখ চেপে ধরে খালি রুম একটায় নিয়ে গেল।ঐন্দ্রিলা ভয়ে চোখমুখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো,এই ভরা ক্যাম্পাসে আজ বুঝি তাঁর সর্বনাশ হয়ে যাবে!!!!
নিরব তুড়ি বাজাতেই ঐন্দ্রিলা ধীরে ধীরে চোখ মেলে চাইলো।নিরবকে দেখে ভয়ে তাঁর আত্মরত্মা কেঁপে উঠলো।সে নিশ্চয়ই সেদিনের জন্য তাঁকে এমন করে ধরে এনেছে,কে জানে শাস্তি দিবে নাকি!
নিরব কিছুক্ষণ ঐন্দ্রিলার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো।তারপর হাঁটুগেড়ে বসে বললো,তোমাকে প্রথম দেখেছি রক্তিম সূর্যস্নানে।
সেইদিন প্রথম কোনো মেয়ের জন্য আমার হার্টবিট মিস হয়েছে।আমি চাতকের মতো বারবার প্রার্থনা করেছি মেয়েটি চোখ মেলে দেখুক,এই নীলাভ জলরাশির সম্মুখে চোখ বুজে থাকা মায়াবিনীর প্রেমে পড়েছি বুঝতে সময় লেগেছে চারদিন!সেখান থেকে ফিরে বুঝেছি তাঁকে ছাড়া আমার কিছুতেই চলবেনা।খেতে বসতে ঘুমাতে সবখানে শুধু তাঁকেই দেখি।আমার প্রতিটি হৃদস্পন্দন যেন তাঁর নামেই স্পন্দিত হয়।আমার প্রতিটি গানের শব্দে সেই থাকে।তাঁর অস্তিত্ব কতোটা জায়গা দখল করেছে আমি বলে প্রকাশ করতে পারবোনা।পৃথিবীর সবার অবহেলা উপেক্ষা করতে পারলেও তাঁর অবহেলা সইবার বিন্দুমাত্র শক্তি আমার নেই।
আমি সেই মায়বিনীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে গেছি।আমি তোমাতে মাতোয়ারা হয়ে গেছি ঐন্দ্রিলা।তোমাকে আমি ভালোবাসি ঐন্দ্রিলা।I need you because I Love you..and I expect your love in my life.
ঐন্দ্রিলা বেশকিছুক্ষণ ঘোরে ছিল।ঘোর কাটতেই সে তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে গেল।কাউকে কিছু না বলে বরাবরের মতো বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
নিরব ওখানে বসেই চোখের পানি বিসর্জন দিতে লাগলো,বুকের ভেতর দলাপাকানো কষ্টগুলো যেন চোখ গড়িয়ে বয়ে চলছে।এতো কষ্ট কেন হচ্ছে তাঁর?

আজকেও ঐন্দ্রিলা কিভাবে চলে গেল!!!

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here