তোমাতে মাতোয়ারা পর্ব-৪

0
1840

#তোমাতে_মাতোয়ার ৪র্থ পর্ব

_আরশিয়া জান্নাত

চোখের সামনে পুরনো স্মৃতিগুলো বারবার ধরা দিচ্ছে।শাওয়ারের প্রতিটি ফোঁটা যেন শরীরে তীরের মতো বিধছে।পাগলের মতো হাতের চুরি, চুলের গাজরা, ক্লিপ,খোঁপা টেন টেনে খুলছে ঐন্দ্রিলা।চোখের পানি যেন বাঁধ ভাঙতে চাইছেনা।
ক্যাম্পাস থেকে ফিরেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকেছে সে।এই উপচে ভরা যন্ত্রণার কোনো প্রতিষেধক কি আছে??
নিরব এর টকটকে লাল চোখ আর বিধ্বস্ত চেহারা দেখে সানিয়া বললো,দোস্ত কি হয়েছে তোর ?তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন??
নিরব মিথ্যে হাসি দিয়ে বললো,তেমন কিছু হয়নি,আমি যাই রে পরে কথা হবে।
সানিয়া ,নায়রা,তারেক,ফরহাদ,সবাই অবাক হয়ে নিরবের দিকে চেয়ে রইলো।
ফরহাদ:কি হলো বল তো নিরবকে তো কখনো এরকম দেখিনি!
নায়রা:কান্না করেছে মনে হচ্ছে,নাকমুখ কেমন লাল হয়ে আছে দেখলি না?
সানিয়া:দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।কি এমন ঘটেছে বলতো ওর মতো শক্ত ছেলেকে এভাবে ঘায়েল করে ফেললো।
তারেক:আই থিংক ছ্যাঁকা খাইছে,নিশ্চয়ই কাউরে প্রপোজ করছিল রিজেক্ট করছে।
সানিয়া:নিরবকে রিজেক্ট করবে এমন মেয়ে এই শহরে আছে?!
নায়রা:সেটাই তো।আজকে আরো যে লুক নিয়ে এসেছে…
“ঐন্দ্রিলার প্রেমে পড়েনিতো নিরব?ওকে প্রপোজ করেছিল নাকি…..” মনে মনে কিছুক্ষণ ভেবে ফরহাদ চলে গেল পুষ্পির কাছে।সেখানে ঐন্দ্রিলার খোঁজ না পেয়ে বুঝতে বাকি রইলোনা ওর সন্দেহটাই ঠিক।
নাহার বেশ অনেকক্ষণ ধরেই মেয়েকে ডেকে চলেছেন।কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ ই পাওয়া যাচ্ছেনা।ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বিরক্ত হয়ে দুইবার চলে গেছেন।এখনো বের হয়নি দেখে বিরক্তটা এবার টেনশনে পরিণত হয়েছে।তাড়াতাড়ি স্বামী আর ছেলেকে ডেকে দরজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিলেন।দরজা খুলে মেয়েকে ফ্লোরে দেখে চিৎকার করে উঠলেন নাহার।
দুইদিন পর ঐন্দ্রিলার জ্ঞান ফেরে।জ্বর তাঁর শরীরকে একদম কাবু করে ফেলেছে।ক্লান্ত চোখ মেলতেই মনোয়ারা বেগমের স্পর্শ টের পেলো,রুগ্ন চেহারায় এক চিলতে হাসি তুলতেই মনোয়ারা বেগম অভিমানী গলায় বললেন,আমাগোরে টেনশনে ফালাইয়া তুই এখন হাসতেছোস।ছোট বৌমা, ইমু কই তোরা তাড়াতাড়ি আয় আমার চান্নিপহরের হুশ ফিরছে।
নাহার এসেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলো,তোরা পেয়েছিস কি ? দুই ভাইবোনে মিলে আমাদের মেরে ফেলার ফন্দি করছিস?দুইদিন পরপর একেকজনের চিন্তায় আধমরা হয়ে যাচ্ছি।
ইমরান:আহা এসব বলছো কেন,মেয়েটার সবে জ্ঞান ফিরেছে,
মনোয়ারা:বৌমারে কইতে দে ইমু।মাইয়াডা কি করবো কয়দিন আগে দাদুভাইয়ের বিপদ গেল এখন আবার চান্নির।মায়ের মনের খবর তোরা বুঝবিনা।
ঐন্দ্রিলা ধীরে ধীরে উঠে বসে মায়ের গলা জড়িয়ে বললো,স্যরি মা আর কখনো এমন করবোনা।কান্না থামাও তো।কাঁদলে তোমার ভালো লাগেনা।
মনোয়ারা চোখের পানি মুছে শোকরানার নামায আদায় করতে চলে গেলেন।
____________________
দেখতে দেখতে কেটে গেল অনেকগুলো দিন।সেদিনের পর নিরব আর ঐন্দ্রিলার সামনে আসেনি।পড়াশোনার পাট চুকিয়ে মিউজিক নিয়েই ব্যস্ত সময় কাঁটে তাঁর।এরমধ্যে সে বেশ কিছু অ্যালবাম পাবলিশ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্টটা বেশ সাফল্যের সাথে পার করছে।ঐন্দ্রিলার রিজেকশন পজিটিভ এনার্জি হিসেবেই কাজ দিয়েছে তাঁর জীবনে।মনের মাঝে অদৃশ্য এক জেদ চেপে ধরেছে সাকসেস এর চূড়ান্ত শীর্ষে নিজেকে দাঁড় করানোর।মাঝেমধ্যে সব জেদ চোখের পানিতে রূপান্তরিত হয়,তাঁর মনটা ঠিকই জানে এইসব সফলতায় ঐন্দ্রিলার কিচ্ছু আসে যায়না।নাম যশ খ্যাতি দিয়ে যদি ঐন্দ্রিলাকে পাওয়া যেত তবে সেদিনই পেতো।এই যে তাঁর এতো ফ্যান ফলোয়ার্স,কতো মেয়ে রোজ তাঁকে নক করছে,সবকিছুই তো ঠুনকো।তাঁরা কি জানবে এই সাহিল ইবনানের মন ভেঙেছে এক মায়াবতী!যাঁকে ছাড়া আরো কারো দিকেই চোখ পড়েনা তাঁর।
প্রিন্সের ডায়ানার সেই বিখ্যাত ডায়লগটাই যেন চরম সত্য!
“”আমি যাকে ভালোবাসি,সে ছাড়া পুরো বিশ্ব আমাকে ভালোবেসেছিল””
হাতের সিগারেটটা ফেলে ছাদে লম্বা হয়ে শুয়ে মেঘাচ্ছন্ন রাতের আকাশে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাইতে লাগলো,

তোমরা কেউ কি দিতে পার প্রেমিকার ভালোবাসা?
দেবে কি কেউ জীবনে উষ্ণতার সত্য আশা?

ভালোবাসার আগে নিজেকে নিও বাজিয়ে
আমার মনের মত নিও সাজিয়ে
আমি বড় অসহায় অন্য পথে
একটি নাটক-ই দেখি মহাকালের মঞ্চে

ও আমায় ভালোবাসেনি
অসীম এ ভালোবাসা ও বোঝেনি
ও আমায় ভালোবাসেনি
অতল এ ভালোবাসা তলিয়ে দেখেনি

তোমরা কেউ কি করবে আমার জন্য অপেক্ষা?
ভালোবাসবে শুধুই আমায়, করবে প্রতিজ্ঞা
তোমরা কেউ কি করবে আমার জন্য অপেক্ষা?
ভালোবাসবে শুধুই আমায়, করবে প্রতিজ্ঞা

ভালোবাসার আগে নিজেকে নিও বাজিয়ে
আমার মনের মত নিও সাজিয়ে
আমি বড় অসহায় অন্য পথে
একটি নাটক-ই দেখি মহাকালের মঞ্চে

ও আমায় ভালোবাসেনি
অসীম এ ভালোবাসা ও বোঝেনি
ও আমায় ভালোবাসেনি
অতল এ ভালোবাসা তলিয়ে দেখেনি

এত ভিড়েও আজও আমি একা
মনে শুধু-ই যে শূন্যতা
এত ভিড়েও আজও আমি একা
মনে শুধু-ই যে শূন্যতা
আঁধারে যত ছড়াই আলো
সবই আঁধারে মিলায়
ও যে কোথায় হারালো
ব্যথা কাকে যে শুধাই…

ইশতিয়াক এখন নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে এনেছে।শিলার স্মৃতি ভুলে পরিবারের জন্য ভালো থাকার অভিনয় করে চলেছে দিনের পর দিন।কিছুদিন আগে শিলার কোলে মেয়ে দেখে কিছুক্ষণের জন্য পৃথিবী উলোপালোট হয়ে গিয়েছিল,শিলার অভিযোগভরা করুণ চাহনী এড়িয়ে উল্টো পথেই হাঁটা ধরেছিল সে।আনমনে হাঁটতে হাঁটতে সামনের একজনের সঙ্গে জোরেসোরে ধাক্কা খায়।মেয়েটার হাতে থাকা সবকয়টা শপিং ব্যাগ নীচে পড়ে যায়।ইশতিয়াক স্যরি বলে সবকিছু তুলে দেয়।মেয়েটি প্রথমে রাগী গলায় কিছু বলতেও গিয়ে ইশতিয়াকের দিকে তাকিয়ে অজানা মোহে হারিয়ে যায়।এ কাকে দেখছে সে?তুর্কি হিরোর বাঙালি ভার্সন!!
ব্রাউন চোখের উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের ছেলেটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো।
ইশতিয়াক ব্যাগগুলি নিয়ে কখন থেকে ডেকে চলছে মেয়েটির কোনো হুঁশ ই নেই
:ও হ্যালো মেডাম।এই দুনিয়াতে আছেন?
(হাত নাড়িয়ে বললো ইশতিয়াক)
ধ্যান ভাঙতেই মেয়েটি হকচকিয়ে বলে,হুম বলুন।
ব্যাগগুলি মেয়েটির হাতে ধরিয়ে দিয়ে ইশতিয়াক স্যরি বলে চলে গেলো। তাইয়্যেবা গাড়ি থেকে নেমে এসে বললো,কিরে কি করছিস এতোক্ষণ,ভেতরে তো খুব তাড়া দিচ্ছিলি বাসায় ফেরার জন্য এখন এখানে দাঁড়িয়ে কার জন্য অপেক্ষা করছিস??
দিয়া কিছু না বলে চটজলদি গাড়িতে উঠে পানি খেতে লাগলো।

পুষ্পির বিয়ের কার্ড হাতে পেয়ে ঐন্দ্রিলা বেশ খুশি হলো।পুষ্পি সকলকে কার্ড দিয়ে বললো,তোরা হলুদের দিন সকালে মাস্ট চলে আসবি।ঐন্দ্রিলা আমি জানি তুই বিয়ে এভোয়েড করিস আশা করি ফ্রেন্ডের বিয়ে মিস করবিনা।নাহয় আমি কিন্তু প্রচুর রাগ করবো।
চৈতি:কিরে দুলাবাবুর ছবি দেখাবি না??দেখি কার কপাল পুড়লো।
পুষ্পি রেগে বললো,কি বললি তুই আমাকে পেয়ে তাঁর কপাল পুড়েছে???
রাকিব:ধুর চৈতি ভুল বলোস ক্যান,তাঁর তো কপাল পুড়েনাই জীবনটাই পুড়ে গেছে।হাহাহা
পুষ্পি গাল ফুলিয়ে বললো,তোরা আমার বন্ধু না শত্রু।
বাঁধন:তোর সুন্দরী কোনো ননদ আছে নাকি দেখিস তো।পারলে সেটিং করিয়ে দিস।আর কতোকাল সিঙ্গেল থাকবো….
রাকিব পাঞ্চ মেরে বললো,শালা।
বাঁধন:আমার কোনো বোন নাই দুলাভাই।
পুষ্পির হলুদের দিন সন্ধ্যায় ইশতিয়াক এর সাথে ঐন্দ্রিলা আসে।পড়নে ব্ল্যাক কালারের হাফ সিল্ক শাড়ি,কানে হোয়াইট স্টোনের গর্জিয়াস ইয়াররিং,এক হাতে সিলভার কালারের স্টিলের চুড়ি,আরেক হাতে ডায়মন্ডের ব্রেসলাইট।বা পাশে কিছু চুল হেয়ার পিন দিয়ে সেট করে ডানপাশে কয়েকগাছি চুল সামনে এনে পেছনে পুরোটা ছেড়ে রেখেছে,চোখে ব্ল্যাক স্মোকি সাজ,ঠোঁটে রেড লিপস্টিক।হাই হিল পড়ে কটকট শব্দে যখন ঐন্দ্রিলা এন্ট্রি নিলো সকলে হা করে তাকিয়ে ছিল তাঁর দিকে।চৈতি দূর থেকে হাত নাড়িয়ে ইশারা করতেই ঐন্দ্রিলা মুচকি হেসে সেখানে যায়।অনুষ্ঠান এখনো শুরু হয়নি পুষ্পিকে সাজানো প্রায় শেষের দিকে।
চৈতি:তোকে যা সুন্দর লাগছে রে দোস্ত এখানের সব ছেলে তো তোর উপর ক্র্যাশড।
বাঁধন:এদের কথা বলিস না তো।তুই ঢোকার সময় ও এরা এভাবে হা করেছিল।ছেলেদের কাজই হচ্ছে সুন্দরী মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা।
রাকিব:তুই তো এসব ভালো করেই জানবি।
বাঁধন:সবসময় আমারে এসব বলবিনা।তুই কোন সাধুসন্ন্যাসী?
চৈতি:তোরা ঝগড়া থামা।দেখি আমাদের ছবি তোল সুন্দর করে।চল স্টেজের ওদিকটায় গিয়ে দাঁড়াই।
বেশ কিছু ছবি তুলে তাঁরা সবাই পুষ্পির কাছে গেল।পুষ্পি ঐন্দ্রিলাকে জড়িয়ে ধরে বললো,তুই এসেছিস আমি অনেক খুশি হয়েছি।
রাকিব:ওহ আমরা তো বানের জলে ভাইসা আইছি।আমাগোরে দেইখা কেউ খুশি হয়না।
পুষ্পি:ঐন্দ্রিলার ব্যাপারটাই আলাদা
তোরা তো সুযোগ পেলেই খেতে চলে আসছোস, ও তো সহজে আসেনাই।
রাকিব:দেখ পুষ্পি খাওয়ার খোঁটা দিবি না।আমরা খেয়ে দোয়া করছি বলেই এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে পারতেছোস।
বাঁধন:দেখি সবাই পোজ দে গ্রুপ সেলফি তুলি।
তারপর বেশ সুন্দর করে শামিয়ানা ধরে পুষ্পিকে স্টেজে নেওয়া হলো।একে একে সবাই স্টেজে উঠে কেক খাওয়াচ্ছে আর ছবি তুলছে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ শোরগোল শোনা গেল “সাহিল এসেছে”,সব মেয়েরা সেখানে গিয়ে ভীড় জমালো।চৈতি আর ঐন্দ্রিলা বাদে।যদিও চৈতির খুব ইচ্ছে হলো গিয়ে দেখতে কিন্তু ঐন্দ্রিলার ভয়ে সেই ইচ্ছে মাটিচাপা দিয়ে বসে রইলো।নিরব ঐন্দ্রিলার দিকে এক পলক চেয়ে স্টেজে উঠে গেল।সানিয়া,নায়রা,তারেক ফরহাদ সবাই একসঙ্গে উঠলো।
চৈতি:দেখ ঐন্দ্রিলা নিরব ভাইকে কেমন রকস্টারের মতো লাগছেনা?চুল, দাঁড়ি-গোঁফ রেখে কি অবস্থা বানিয়েছে!তবে জিম করে করে বডিটা সেই বানিয়েছে,,
ঐন্দ্রিলা:তুই মেয়ে হয়ে একটা ছেলেকে এতো খুটিয়ে কিভাবে দেখিস চৈতি?তোর চোখের পাওয়ার এতো বেশি কেন??
চৈতি গাল ফুলিয়ে বললো,নিরব ভাইকে দেখলেই সবসময় রেগে থাকিস কেন?ছেলেটা কতো কিউট,,
ঐন্দ্রিলার রাগী লুক দেখে চৈতি আর কিছুই বললো না।

ইশতিয়াককে এখানে দেখে দিয়ার মনটাই ভালো হয়ে গেল।সে মিররে নিজেকে দেখে ইশতিয়াকের সামনে গিয়ে বললো,হেই কেমন আছেন?
ইশতিয়াক ভ্রু কুঁচকে বললত,আমি আপনাকে চিনি?
দিয়া কিছুটা হার্ট হলেও মুখে প্রকাশ না করে বললো,সেদিন যে ধাক্কা দিয়ে সব ফেলে দিয়েছিলেন আমি সেই।
:ওহ আচ্ছা আচ্ছা মনে পড়েছে।
:আপনি কনের কি হন?আই মিন রিলেটিভ?
:না,পুষ্পি আমার ছোট বোনের বান্ধবী।
:অহ আচ্ছা।আপনি ম্যারিড?
ইশতিয়াক দিয়ার প্রশ্নে কিছুটা বিব্রতবোধ করে বলল,
না।আচ্ছা আমি যাই আমার ওদিকে একটু কাজ করে।Enjoy Yourself.
মেয়েটার মতিগতি ভালো ঠেকছেনা।এই বয়সের মেয়েরা এমনিতেই রিস্কি,একটু ভালো করে কথা কখন টুপ করে বলে বসবে ভালোবাসি গ্যারান্টি নেই।তাছাড়া সেদিন যেভাবে তাকিয়ে দেখছিল ইশতিয়াক খুব ভালো করেই জানে এই চাহনির অর্থ।কিন্তু সে শিলার জায়গা কাউকে দিতে পারবেনা।তাঁর জীবনে প্রেম একবারই এসেছিল।
ঐন্দ্রিলাকে এতোদিন পর দেখে নিরবের অন্যরকম ভালো লাগছে।মনের মাঝে পুষে রাখা ময়নাটাকে চোখের সামনে দেখতেই দুজনের মাঝখানের তারকাটার দেওয়ালটা যেন নমনীয় হয়ে ভেঙে আসছে।ফরহাদ বেশ কিছুক্ষণ নিরবের দৃষ্টি অনুসরণ করে বুঝলো সে আর কারো দিকে না ঐন্দ্রিলার দিকেই এক ধ্যানে চেয়ে আছে,ব্যাপারটা সানিয়াদের নজর ও এড়ায়নি।কিন্তু নিরবকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সাহস তাঁদের কারোই নেই,সেদিনের পর থেকে নিরব একদম বদলে গেছে।আগের মতো হাসে না,বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠেনা,সবসময় সিগারেট আর গিটার নিয়েই পড়ে থাকে।
ফরহাদ ভেবেছিল নিরবকে এ বিষয়ে কিছু বলা দরকার,নিরবের নির্লিপ্ততা দেখে আর কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি।এখন তাঁর চোখের ভাষা স্পষ্ট বলে দিচ্ছে সে এখনো ঐন্দ্রিলাকেই ভালোবাসে।তবে কি ওর জানানো উচিত ঐন্দ্রিলার সেই ইনসিডেন্ট এর ব্যাপারে?জানালে কি ভালো হবে নাকি হিতের বিপরীত হবে বুঝতে পারছেনা ফরহাদ।একদিকে বন্ধুর বিষণ্নতা আরেকদিকে ছোট বোনের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর দূর্বলতা।এরকমই শত চিন্তার মাঝে নিরব উঠে গেল ঐন্দ্রিলার দিকে,গ্রুপের সবার দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ।
নিরবকে আসতে দেখে ঐন্দ্রিলা হাঁটু কাঁপা শুরু করলো।নিরব এসে বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,হেই মিস ঐন্দ্রিলা কেমন আছ?
ঐন্দ্রিলা শান্ত গলায় বললো,ভালো আছি আপনি?
নিরব উত্তর না দিয়ে বললো,Can u do me a favour?কিছুক্ষণের জন্য এখান থেকে চলে যাও, আমি এখন গান গাইবো।
ঐন্দ্রিলার অপমানে কানদুটো গরম হয়ে গেল ,গা জ্বলুনি দিয়ে মাথায় রক্ত উঠে গেল।রাগের চোটে উঠতে গিয়ে শাড়ির কুঁচি পেঁচিয়ে পড়তে গিয়ে সামনে থাকা নিরবের হাত শক্ত করে ধরে ফেললো।তাল সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগেই নিরব ঐন্দ্রিলার হাত ঝাড়া দিয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে লাগলো।চরম অপমানবোধে ঐন্দ্রিলার চোখ ভরে আসলো,যেন পলক ফেললেই টুপ করে পানি বেরিয়ে যাবে।নিরব ঐন্দ্রিলার চোখের দিকে তাকাতেই সে প্রস্থান করলো।

নিরব এই প্রথম তাঁর প্রেয়সীর চোখে জল দেখে কেমন ফীল করছে তা আপনারাই বুঝে নিন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here