তোমাতে মাতোয়ারা পর্ব-৫

0
1933

#তোমাতে_মাতোয়ার ৫ম পর্ব

_আরশিয়া জান্নাত

পুষ্পিদের ছাদে দাঁড়িয়ে ঐন্দ্রিলা চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে চলেছে।সবার সামনে এভাবে চলে যেতে বলা,হাত টিস্যু দিয়ে মোছা এসব মোটেও সাধারণ বিষয় না।অনুষ্ঠানে এমনিতেই সবার দৃষ্টি সিঙ্গার সাহিল ইবনানের দিকে।রাগে ঐন্দ্রিলার চোখের পানি বাঁধ মানছেনা।ছেলেদের ভালোবাসার একটুও বিশ্বাস নেই।রিজেকশনের পর সুযোগ পেলে এরা ঠিক সবার সামনে হেনস্থা করে।তা না হলে যাকে ভালোবাসে তাঁকে কখনো কষ্ট দেওয়া যায়?এভাবে অসম্মান করা যায়?
চৈতি ওয়াশরুম থেকে এসে ঐন্দ্রিলাকে না দেখে বেশ অবাক হলো।একটু খোঁজাখুঁজি করে রাকিবদের পাশে গিয়ে বসলো।
কেক খাওয়ানো আর ফটোশেসনের পর্ব শেষ হবার পরই নাচ গানের আসর বসে গেছে।পুষ্পির কাজিনরা সবাই মিলে বেশ কিছু ডান্স পারফর্ম করলো।রাকিব আর বাঁধন ও ডান্স করলো।
ঐদিকে নিরব লনে বসে একটার পর একটা সিগারেট টেনেই চলেছে।ঐন্দ্রিলার চোখের পানি ওর ভেতরটা একদম গুড়িয়ে দিয়েছে।কি দরকার ছিল এভাবে বলার।নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে তাঁর।হাতের যেদিকটায় ঐন্দ্রিলা ধরছিল সে দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ।না এমন ভরা বাড়িতে এভাবে অপমান করা ঠিক হয়নি।ঐন্দ্রিলা ওকে সেদিন ওভাবে ফেলে গেলেও অপমান তো করেনি, পরবর্তীতে কাউকে বলেও বেড়ায়নি।ও চাইলেই সকলকে বলতে পারতো সাহিল ইবনান তাঁকে প্রপোজ করেছে।
নিরব ভেতরে যাওয়ার পরই সবাই ঝেঁকে ধরলো গান গাইবার অনুরোধে।নিরব হেসে বললো,আমার ফ্রেন্ডের বোনের বিয়েতে আমি গান গাইবো না তা হয়?
গিটারটা একজন এগিয়ে দিতেই নিরব তাতে সুর তুলে গাইতে লাগলো,

তাকে অল্প কাছে ডাকছি

আর আগলে আগলে রাখছি,

তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার।

তাকে ছোঁবো ছোঁবো ভাবছি

আর ছুঁয়েই পালাচ্ছি,

ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার।

অভিমান পিছু নাম

তাকে পিছু ফেরাও,

তার কানে না যায় পিছু ডাক আমার

মুখ বুজেই তাকে ডাকছি আবার।

তাকে অল্প কাছে ডাকছি

আর আগলে আগলে রাখছি,

তবু অল্পে হারাচ্ছি আবার।।

ফাঁকা বুক, চেনা সুখ

জানি ঘুম সে ভাঙাবেই,

ভেজা মন, বলি শোন

রাতভোর জাগতে নেই।

মুখচোরা ডাক তাকে ঘুম পাড়াক এবার

তাকে ছুঁয়ে স্বপ্ন বুনছি আবার।

তাকে আলতো গায়ে মাখছি

আর আঁকড়ে মুঠোয় ঢাকছি,

তবু মুঠো আলগা রাখছি আবার।

তাকে ছোঁবো ছোঁবো ভাবছি

আর ছুঁয়েই পালাচ্ছি,

ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার।

সবাই জোরে করতালি দিতে লাগলো।অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত প্রায় সাড়ে তিনটা বাজলো।সবাই বাছবিচার ছাড়া যে যাঁর মতো করে শুয়ে পড়েছে।নিরব আলগোছে সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে গেল।মানুষের ভীড়ে তাঁর অশান্তি লাগছে।হলুদে সে ফরহাদকে হেল্প করতে পারেনি,কিন্তু আজ সে পাশে থেকে সবটা সামলাবে।নীল সবুজ মরিচবাতিতে পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে।তাই ছাদটাও বেশ আলোকিত।ছাদে গিয়ে ঐন্দ্রিলাকে দেখে বেশ চমকে গেল নিরব।ও যে এতোরাতে এখানে থাকবে সে কল্পনাই করেনি।কিছুটা সামনে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে নিরবের বুঝতে বাকি রইলোনা ওর জন্যই মেয়েটা এখানে বসে কেঁদেকেটে ঘুমিয়ে গেছে।নিরব খুব সাবধানে গিয়ে ঐন্দ্রিলার পাশে গিয়ে বসলো।আবছা আলোয় ঐন্দ্রিলাকে মন ভরে দেখলো,তবুও যেন চোখের তৃষ্ণা মিটলো না।কতদিন পর সে ঐন্দ্রিলাকে দেখছে।অবশ্য যা হয় ভালোই হয় তখন যদি ওসব না হতো ঐন্দ্রিলাকে কখনো এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ মিলতো?
“তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা!কি করবো বলো আমি গান গাইতে শুরু করলে তুমি তো এমনিতেই উঠে চলে যেতে সেটা আমার মন ভেঙে টুকরো করে দিতো।তাই স্বার্থপরের মতো
নিজের মন রক্ষার্থে তোমাকে চলে যেতে বলেছি।স্যরি মায়াবিনী,বাট আই প্রমিজ অন্তত আমার জন্য তোমাকে আর কখনও কষ্ট পেতে হবেনা।প্রয়োজনে বিরহের দহনে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলবো।তাও তোমার গায়ে সেই আঁচ পড়তে দিবোনা।”
_______
মুয়াজ্জিনের সুমধুর আজানে ঘুম ভেঙে গেল ঐন্দ্রিলার।পুরো রাত সে এখানেই কাটিয়ে দিয়েছে ইয়া আল্লাহ!নীচে গিয়ে পুষ্পির রুমে ঢুকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে চৈতির পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
ভাগ্যিস ইশতিয়াক রাতেই চলে গেছিল,ও যে রাতে ছাদে ঘুমিয়েছে শুনলে বকা একটাও মাটিতে পড়তোনা।বিয়ে বাড়িতে কত মানুষের আনাগোনা,কেউ যদি ছাদে এসে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসতো।ইশ কত বড় একটা ভুল করে ফেলেছে সে।
সকালে নাস্তা খেতে বসে চৈতি বলল,কোথায় ছিলি তুই,কতকিছু মিস করেছিস জানিস?তোর এমন লুকিয়ে থাকার স্বভাবটা গেল না।বিয়ে বাড়িতেও নিশ্চয়ই কোনো এক জনমানবহীন খুপড়িতে গিয়ে বসে ছিলি তাইনা??
ঐন্দ্রিলা জবাব দিলো না।ওদের কথোপকথন কিছুটা দূর থেকেই শুনছে নিরব।ঐন্দ্রিলা নিজের ফ্রেন্ডদের ও সব শেয়ার করেনা দেখে কিছুটা অবাক হলো বটে।অন্য মেয়ে হলে গতকালের ঘটনা এতোক্ষণে ফ্রেন্ডদের বলে নিরবকে গালাগাল দেওয়া শুরু করে দিতো।
পুষ্পিকে ব্রাইডাল শাওয়ার দিয়ে মেহেদি দিতে বসে গেল পার্লারের মেয়েরা।সেখানে সব মেয়েরা গানের কলি খেলছে।ঐন্দ্রিলা পুষ্পির পাশে বসে নিরব দর্শকের মতো সব দেখছে।রাতে সবাই রেডি কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেল।বেশ সুন্দরভাবে বিয়ে সম্পন্ন হলো, পুষ্পিকে বিদায় দিয়ে এক অজানা কষ্ট নিয়ে ঐন্দ্রিলা তাঁর ভাইয়ের সাথে বাসায় ব্যাক করলো।বিদায়ের সময় পুষ্পির বাবা মা ভাইকে ধরে কান্নাটা তাঁর মনে লেগেছে খুব।বিয়েবাড়িতে সবকিছু আনন্দের হলেও এই মূহূর্তটা খুবই নির্মম।যে কারো চোখে পানি আসতে বাধ্য করবে।

ছুটির দিন সকালের ব্রেকফাস্টের পর ই ঐন্দ্রিলা রান্নাঘরে ঢুকেছে।আজ সে সবার জন্য লাঞ্চ তৈরি করবে।নাহার একটু পরপর রান্নাঘরে উঁকি দিতেই ঐন্দ্রিলা বললো,উহু হবেনা মা তুমি এদিকে আসবানা একদম।তুমি আসলে কনসেনট্রেশন নষ্ট হবে।
নাহার চিন্তিত ভঙ্গিতে গিয়ে ইমরানের পাশে বসে বলল,আল্লাহ ভালো জানে আজ দুপুরে কি খাওয়া হবে নাকি উপোস থাকবে সবাই।
ইমরান পেপার উল্টাতে উল্টাতে বললো,আমার মেয়েকে তুমি কি ভাবো?দেখবে তোমার চেয়ে ভালো রাঁধবে।
নাহার ভ্রু কুঁচকে বললো,কি বলতে চাইছো আমার রান্না খারাপ??
ইমরান জিভ কেটে বললো,ছিঃ ছিঃ তা বলবো কেন।সেই সাহস আমার আছে ।
নাহার রেগে উঠে চলে গেল।
ঐন্দ্রিলা রান্না শেষ করে ঘেমেনেয়ে গোসলে গেলো।তারপর নামায পড়ে সকলের জন্য খাবার সাজানো শুরু করলো।মেনুতে,মোরগ-পোলাও,ডিমের কোরমা আর গরুর মাংস ভুনা।ইশতিয়াক ডাইনিং এ এসে বললো,আহ কি ঘ্রাণ বেড়িয়েছে।বাহ এ দেখি এলাহি কান্ড।এতো কিছু তুই রেঁধেছিস??
ঐন্দ্রিলা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো, হু।
বাবা মা তাড়াতাড়ি এসো।
সবাইকে সার্ভ করে দিয়ে ঐন্দিলা খাবার প্যাক করতে লাগলো।লাঞ্চ সেরেই সে দৌলতপুর যাবে।এই প্রথম রান্না করেছে দাদাই আর দাদুনকে টেস্ট করাবেনা তা হয়??
নাহার সব চেখে বললো,পোলাও টা আরেকটু শক্ত রাখলে ভালো হতো,ডিমটা ভেজে নিলি না কেন?আর মাংসে লবণ কম হয়েছে।
ইমরান বিরক্ত গলায় বললো,আমার মেয়ে যে রেঁধেছে তাই অনেক।ও যে এতো ভালো রাঁধতে পারে আমি তো জানতাম না।
ইশতিয়াক,ঠিক বলেছ বাবা,ঐন্দ্রিলা সত্যিই অনেক মজা হয়েছে।প্রথম চেষ্টায় তোকে স্টার দিলাম।
নাহার,আমি কি বলেছি খারাপ হয়েছে?মিস্টেকগুলো না ধরিয়ে দিলে শিখবে কিভাবে পরের ঘরের মানুষ তো আর বাপ ভাইয়ের মতো মেনে নিবে না।
ঐন্দ্রিলা হেসে বললো,আমি কিছু মনে করিনি আম্মাজান।বাবা ড্রাইভার চাচাকে কল করে বলে দাও আমি এখন দৌলতপুর যাবো।আজ তুমি কোথাও যাবে?
ইমরান:সন্ধ্যায় একটা মিটিং আছে সমস্যা নেই অফিসের গাড়িতে চলে যাবো তুই বরং রওয়ানা দে।আজ ফিরবি নাকি থাকবি কিছুদিন?
ঐন্দ্রিলা:কিছুদিন থাকবো।চাচাকে কাল সকালে পাঠিয়ে দিবো।
ঐন্দ্রিলা চলে যেতেই ইমরান হেসে বললো,আমাদের মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে তাইনা নাহার!
নাহার:এতোদিনে চোখে পড়লো তোমার?কবে থেকে বলছি ছেলে খোঁজো, বয়স তো কম হলো না।
ইমরান:তুমিও না সবকথার মাঝে খালি বিয়ের প্রসঙ্গ টানো।আমি তো পারলে আমার মেয়েকে আমৃত্যু আমার কাছে রেখে দিতাম।
নাহার মুচকি হেসে বললো,সব বাবারা ই এটা ভাবে।
____
ইরফাজ সাহেব নাতনিকে দেখে আনন্দে আটখানা হয়ে এগিয়ে গেলেন,
:আস্সালামু আলাইকুম দাদাসাহেব।
:ওয়ালাইকুম আস্সালাম।কেমন আছিস দাদুভাই?পথে কোনো সমস্যা হয়নিতো?
:ভালো আছি তুমি কেমন আছ?দাদুন কোথায়?
:আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,এখন আরো বেশি ভালো হয়ে গেছি।কই রে কে কোথায় আছিস এদিকে আয়।মনুরাণী দেখো তোমার চান্নিপহর আসছে।
মনোয়ারা বেগম এসে নাতনির কপালে চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলেন।আয় ভেতরে আয়।ভালো আছো তো শফিক(ড্রাইভার)?
শফিক:আস্সালামু আলাইকুম আম্মা ।ভালো আছি আছি আপনারা ভালো তো?
:রাখছে আল্লাহ ভালোই।আসো ভেতরে আসো।ফ্যানের নীচে বসো।
ঐন্দ্রিলা ভেতরে না গিয়ে বকুল গাছের নীচের দোলনায় চড়তে চলে গেল।এই জায়গাটা তাঁর ভীষণ প্রিয়।ছোটবেলা থেকেই এখানে দোলনায় চড়ে বড় হয়েছে।তাঁর দাদাই এখানে আর কাউকে এলাউ করেনা।এটা শুধুমাত্র তাঁর ঐন্দ্রিলার দোলনা।রোজ একবার এসে সে এদিকটা দেখে যায় আর নাতনির স্মৃতিচারণ করে।
ঐন্দ্রিলার কিছু একটা মনে পড়তেই সে দাদাইয়ের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেল।বক্স থেকে খাবার বের করে গরম করলো।তারপর পরিবেশন করে দাদা দাদীকে চেয়ারে বসিয়ে বললো,খেয়ে দেখো তো কেমন হয়েছে।আমি নিজে রান্না করেছি।
দাদাই:মাশাআল্লাহ অনেক মজা হইছে মনেই হয়না আনাড়ি হাতের রান্না।
মনোয়ারা:আসলেই অনেক মজা হইছে।আমার নাতনি না! রান্ধন ভালা না হইয়া যাইবো কই।
খাবার খেয়ে ইরফাজ সাহেব এক হাজার টাকা দিলেন ঐন্দ্রিলাকে।ঐন্দ্রিলা খুশিমনেই তা নিলো,সে জানে তার দাদাই এটা কতোটা খুশি হয়ে দিয়েছে,আর এই ভালোবাসা কখনো ফিরিয়ে দিতে নেই।

নিরবের মা নাঈমা রশিদ ছেলের রুমে সচরাচর আসেন না।আজ কি মনে করে রুমে এসে বললেন,কি করছো তোজো?
অনেকদিন পর মায়ের মুখে নিজের নিকনেইম শুনে হেসে তাকালো নিরব।গিটার ফেলে মায়ের সামনে গিয়ে বসে বললো,রেওয়াজ করছিলাম।তোমার আজ ডিউটি নেই?এই সময় তো বাড়ি থাকোনা সচরাচর,
নাঈমা ছেলের চুল ঠিক করতে করতে বললেন,মিউজিশিয়ানদের এসব কম্পোলসারি?আজ সেলুনে গিয়ে এসব ক্লিন করে আসবে।এমন বন জঙ্গল নিয়ে ঘুরো কিভাবে?
নিরব:আচ্ছা।
নাঈমা প্রসন্ন মনে পুরো ঘর হেঁটে দেওয়ালে সাজানো সার্টিফিকেট আর মিউজিক কম্পিটিশনে পাওয়া ক্রেসগুলো দেখতে লাগলেন।মনের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এলো বটে,যাক ছেলেটা অন্তত সফল হচ্ছে।এখন ক্যাটাগরি যাই হোক,সেটা ফ্যাক্ট না।
পুষ্পির বিয়েতে ঐন্দ্রিলাকে দেখার পর নিরবের জমিয়ে রাখা অভিমান গলে পানি হয়ে গেছে।এতোদিন নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছেনা।ফোনের গ্যালারি ভর্তি ঐন্দ্রিলার ছবি,মেয়েটাকে ভোলার ইচ্ছে নেই তাঁর।
সৃষ্টিকর্তা কারো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখেন না নিশ্চয়ই এই ইচ্ছেটাও পূরণ হবে,এই বিশ্বাসেই দিন কাটছে নিরবের।
“সত্যিকারের ভালোবাসা হচ্ছে চেইন রিয়েকশনের মতো।একবার শুরু হয়ে গেলে থামবেনা কখনোই।বরং সময়ের সাথে বাড়তে থাকবে।মানুষটা জীবনে থাকুক বা না থাকুক ভালোবাসার রেশটা থাকবে আজীবন।”
।।
বেশকিছু দোকান ঘুরে অবশেষে ঘড়ি পছন্দ হলো ঐন্দ্রিলার।ঘড়িটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই সামনে থাকা ছোট গিটার ঘড়ির দিকে নজর গেল তাঁর।গিটার দেখে নিরবের কথা মনে পড়ে গেল।কি মনে করে সেই গিটার ঘড়িটাও কিনে নিল সে।কেনাকাটা শেষ করে বেরোতেই এক ছেলেকে দেখে ঘাম ছুটে গেল ঐন্দ্রিলার।দ্রুত পথ পাল্টানোর চেষ্টা করে বুঝলো তাঁর হাত পা অবস হয়ে আসছে,এক কদম ফেলবারও জো নেই যেন।হাতজোড়া থরথর করে কাঁপছে,নিঃশ্বাস নিতেও বেশ কষ্ট হচ্ছে যেন।নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা করে মনে মনে শুধু দোআ করতে লাগলো ছেলেটা তাঁকে না দেখুক কেউ একজন চলে আসুক তাঁদের মাঝে।ঠিক তখনই নিরব ওর সামনে এসে তুড়ি বাজিয়ে বললো,আরেহ ঐন্দ্রিলা আপু যে!
ঐন্দ্রিলা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,কিছুটা সময় নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো।উড়নার কার্নিশে কপালের ঘাম মুছলো।
নিরব কিছুটা অবাকের স্বরে বললো,ব্যাপার কি বলো তো এই এয়ারকন্ডিশনড মার্কেটে এভাবে ঘামছো কেন?ভুত দেখেছিলে নাকি!
নিরবের উপর প্রচুর রাগ থাকলেও ঐন্দ্রিলার এই মুহূর্তে নিরবকে একটুও বিরক্ত লাগছেনা,বরং অনেকটা স্বস্তি লাগছে।
:আমিও না কাকে প্রশ্ন করছি।উনিতো আবার কথা বলেন না,বোবানী একটা!
ঐন্দ্রিলা এই প্রথম হেসে নিরবের দিকে তাকিয়ে বললো,থ্যাংকস নিরব ভাইয়া।আপনার ওনারে একটা ছোট্ট গিফট করতে চাই।
তারপর ব্যাগ থেকে সদ্য কেনা গিটার ঘড়িটা নিরবকে দিয়ে বললো,এটা গ্রহণ করলে আমি খুব খুশি হবো।Thanks again.
ঘটনার আগাগোড়া কিছু না বুঝে বিস্ময়ে নিরব হা করে চেয়ে রইলো।ঐন্দ্রিলা তাঁকে গিফট করলো?দিনে জেগে স্বপ্ন দেখছে নাতো!
ঐন্দ্রিলা তাঁকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চটজলদি বেরিয়ে গেল।সেই ছেলেটার মুখোমুখি হতে চায়না সে।
গিফটের বক্স খুলে নিরব আরেকদফা অবাক হলো।তবে কি ঐন্দ্রিলা ওকে ভেবেই এটা কিনেছে!!
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর,মানুষের মন অতি ক্ষুদ্র আশায় ও ঘর বাঁধতে পারে।আর এটাতো অতল সাগরে এক টুকরো কাঠ।তবে কি ঐন্দ্রিলার মনেও ওর জন্য কিছু আছে??
কিছুক্ষণ কল্পনায় ডুবে থাকতে ক্ষতি কি?হোকনা না সেটা মিথ্যে সান্ত্বনা!!
কিন্তু ঐন্দ্রিলা তখন এরকম stuck হয়ে গিয়েছিল কেন! একটা রহস্য তো আছেই,মেয়েটার কোনোকিছুই বুঝতে পারিনা।

ঐন্দ্রিলা গাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে না চাইতেই ভাবতে লাগলো বিভীষিকাময় সেই দুঃস্বপ্নের কথা,,,,,,

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here