দৃষ্টির_অগোচরে_সে পর্ব_২৫
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
হৃদয়ের সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে সত্যিই কোনো সাধারণ মেয়ে নয় সে একজন পরী। হৃদয় নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। যাকে ও এতোদিন ভালোবেসে এসেছে সে কোনো মানুষ নয় কিন্তু কেমন করে? আর বিশ্বাস করা বড় কথা নয়, কথা হচ্ছে ভালোবাসা হারানোর ভয়। একজন পরী আর একজন মানুষের প্রেম এটা তো সৃষ্টির নিয়মের বিরুদ্ধে হবে। মানুষ কোনো পরীর দেখা পেলে বা তাকে সামনে পেলে হয়তো খুশি হয়, অনেকেই কল্পনা করে ভাবে যদি কোনো পরীর দেখা পেতাম তাহলে হয়তো আমার চোখ টা সার্থক হয়ে যেতো কিন্তু হৃদয়ের তেমন কিছুই হচ্ছে না। হৃদয়ের মাথা ঘুরছে চারদিকে কেমন দুলছে।কি করবে,কি হবে কিছুই ও বুঝতে পারছে না। হৃদয় ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে আছে অন্যদিকে হৃদীতা মিটমিট করে হাসছে ও তো আনন্দ পাচ্ছে। ওর তো আর ভালোবাসা হারানোর ভয় নেই। হৃদয় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না ও বসে পড়লো থপ করে। ও বিড়বিড় করে বলে চলেছে এটা হতে পারে না আমি বিশ্বাস করিনা। হৃদীতা নিজের রুপ পরিবর্তন করে ওর পাশে গিয়ে বসলো। ও বুঝতে পারছে না হৃদয় হঠাৎ এমন করছে কেনো। হৃদীতা কৌতূহল চেপে না রাখতে পেরে বলল,
> আপনি ঠিক আছেন তো? এমন কেনো করছেন? আমি কিন্তু আপনাকে আগেই বলেছিলাম কিন্তু আপনি শুনতে চাননি।
> কিছু না। আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লীজ। আমার ভালোলাগছে না।( অনুরোধ করে)
> কিন্তু
> কোনো কিন্তু নয় প্লীজ।
> আচ্ছা।
হৃদয় চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিলো। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ভাবছে ওকি স্বপ্ন দেখছে?। হৃদয় এবার বুঝেছে ওই বইটা মিথ্যা ছিল না। আগে এই জন্য ওর সাথে ওমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটতো। হৃদয় একে একে সব কিছু মিলিয়ে নিলো। এটাই হৃদীতা এর কোনো ভুল নেই আর ও এতোদিন সত্যি বলেছিল ওর কিছুই মনে নেই। কিন্তু ওকে তো মনে করাতে হবে। হৃদয়ে ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো নয়যে স্বজাতী বা মানুষ না হলে ভালোবাসা কমে যাবে। হৃদয় কখনও ওকে ভুলতেই পারবে না। ভালোবাসার জন্য ও পৃথিবীর নিয়মের বিরুদ্ধে যাবে। আর ওদের তো বিয়েও হয়েছিল একবার নয় দুবার। হৃদয় আকাশ পাতাল ভেবে চলেছে। ওদিকে হৃদীতা ওর মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ও জানে এই মানুষ টা কে ওর চেনা লাগে কিন্তু চিনতে পারছে না ও। আর এই মানুষ টা যে মিথ্যা বলছে না এটাও ও বুঝতে পেরেছে। হৃদীতা চুপ করে ওখান থেকে উঠে আসলো। অন্যদিকে তনুজা তন্ময়ার চারদিকে ঘুরঘুর করছে। ওকে এমন করতে দেখে তন্ময়া অবাক হলো এমন করছে কেনো জানার জন্য ও তনুজাকে ডাকলো,
> আপু কিছু বলবে?
> তেমন কিছুই না। তুই কি একটা কথা জানিস?
> কি কথা না বললে জানবো কেমন করে?
> হৃদীতাকে তোর ভাইয়া ফিরিয়ে এনেছে।। জানিনা কোথায় ছিল এতদিন আজ সকালে হঠাৎ তোর ভাইয়া জোর করে ওকে বাড়িতে এনেছে। (বিরক্ত হয়ে)
> আপু এই কথাটা আগে কেনো বলোনি তুমি? আমি এখুনি যাচ্ছি। আরে ও ফিরে এসেছে এতো খুশির কথা অথচ আমি জানিনা ভাইয়াকে খুব বকবো।( খুশি হয়ে)
> তন্ময়া ও কিন্তু পালিয়ে গিয়েছিল আবার এসেছে কি না কি ঘটাবে তার তো ঠিক নেই। এতো খুশী হবার কারণ দেখছি না আমি।( রাগ করে)
> তুমি বুঝবে না। তুমি তো ওকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবো তাই ওকে পছন্দ করো না কিন্তু আমি তো ওকে বোন ভেবেছি তাই ওকে আমার ভালোলাগে। গেলাম আমি।
তন্ময়া তনুজার উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে আসলো বাইরে,হৃদীতাকে দেখার উদ্দেশ্যে। তন্ময়া বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডাকছে কিন্তু হৃদয় নির্বাক হয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। হৃদীতা উপায় না পেয়ে নিজেই দরজা টা খুলে দিলো। তন্ময়া ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে বলল,
> কেমন আছো তুমি? কতদিন পরে দেখা হলো। কতটা সুন্দর হয়ে গেছো তুমি ভাবতেই পারছি না।
হৃদীতা ও সৌজন্যতা দেখিয়ে ওকে দুহাতে আকড়ে ধরলো। এতো আপন ভেবে কেউ কাছে নিলে তাকে ও কেমন করে খারাপ ব্যবহার করে বলবে তোমাকে আমি চিনি না, তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। হৃদীতা এমন কিছুই করলো না বরং চেনার ভান করে ওর সাথে মিষ্টি করে উত্তর করলো,
> আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
> আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমাকে খুব মনে পড়তো জানো? আর ভাইয়া তো তোমার জন্য দেবদাস হয়ে ঘুরতো। যাইহোক তুমি চলে এসেছো এখন সব ঠিক হয়ে যাবে। (হাসি মুখে)
> হুম। ভেতরে এসো, এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?
> আমি না তুমি আমার সাথে চলো। অনেক অনেক কথা জমে আছে তোমাকে বলবো সেসব। না বললে শান্তি পাচ্ছি না।
> আচ্ছা চলো কিন্তু একটু অপেক্ষা করো তোমার ভাইয়াকে বলে আসছি।
হৃদীতা ওকে দাঁড়াতে বলে হৃদয়ের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল ওর সত্যি টা যেনো কাউকে না বলে। ও দুদিন পরেই ফিরে যাবে।হৃদয় ওর কথায় কোনো কর্ণপাত করলোনা। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। দুদিন তো চোখের নিমিষে পার হয়ে যাবে ওকে আটকাবে কেমন করে। কথাটা ভেবেই ওর মনের মধ্যে ভয় হচ্ছে। হৃদীতা তন্ময়ার সাথে চলে আসলো বাইরে। ও বাইরে যেতেই হৃদয় সেই বই টা আবার নিয়ে বসলো। এই বইটা ও আবারও খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছে।মনে হচ্ছে এর মধ্যেই ওর সব প্রশ্নের উত্তর আছে।সেদিন তো পুরো বইটা না পড়েই রেখে দিয়েছিল ভেবেছিল আজগুবি রূপকথার গল্প এটা। কিন্তু এখন সব বিশ্বাস হচ্ছে। হৃদয় আবার পড়তে শুরু করেছে প্রথম থেকে। হৃদীতার জন্ম মানুষের মতো সাধারণ ভাবেই হয়েছিল কোনো পরীর শক্তি ছাড়াই কথাটা ওকে ভাবাচ্ছে। ও মানুষের মাঝে থেকেছে মানুষের মতো সুখ দুঃখের অংশীদার হয়েছে এমনকি একজন মানুষ কে বিয়ে পযর্ন্ত করেছে তাহলে বাকী জীবন ও একজন মানুষ কে ভালোবেসে থাকতে পারবে। আর পারবে না কেনো অবশ্যই পারবে। ভালোবাসা জন্য মানুষ কতকি করে আর এতো সামান্য। কিন্তু হৃদীতার মনে যে এখন ওর জন্য কোনো ভালোবাসা নেই। ওকে আগে সব মনে করাতে হবে। ওর জন্য প্রয়োজনে হৃদয় ওকে নিয়ে রিয়াদের বাড়িতে যাবে। হৃদয় ভাবলো সকাল হলেই ও বের হবে। কথাটা ভেবে ও বইটা বন্ধ করে তন্ময়ার রুমের দিকে এগিয়ে গেলো কি করছে দেখতে। রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে। হৃদয় একপা দুপা করে হেটে চলেছে। দূর থেকেই ও দুজনের হাসির শব্দ শুনছে। দুজন বেশ ভালো করেই আড্ডা জমিয়েছে। হৃদয় চুপ করে দরজায় গিয়ে দাড়ালো। তন্ময়া কথা বলছে আর হৃদীতা হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ওরা হৃদয়ের বিয়ের আগের দিনগুলো নিয়ে আলোচনা করছে। হঠাৎ হৃদীতার চোখ পড়লো দরজার দিকে। হৃদয় ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর ও তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। হৃদীতা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। হঠাৎ ওর কেমন জানি লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু কেনো এটা ওর জানা নেই। হৃদয় বুঝতে পেরে তন্ময়াকে বলল,
> কিরে ঘুমাবি না? অনেক তো রাত হলো।
> গল্প করছি তো।
> পরে গল্প হবে এখন ঘুমাতে হবে। হৃদীতা তুমি আসো আমার সাথে। ওর শরীর খারাপ হবে সারাদিন পথ পথে পথেই কেটেছে ওর।
> আচ্ছা আসছি।
অনিচ্ছা শর্তেও হৃদীতা তন্ময়ার থেকে বিদায় নিয়ে হৃদয়ের সারে চলে আসলো। তন্ময়াকে ওর ভীষন ভালোলেগেছে। অদ্ভুত মিষ্টি একটা মেয়ে কেমন এক মূহুর্ত্তের মধ্যেই ওকে আপন করে নিলো। ভাবতে ভাবতে ও রুমে চলে আসলো। হৃদয় বিছানা ঠিক করছে। হৃদীতা বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে। হৃদয় বিছানা ঠিক করে ওকে বলল,
> তোমাদের পরীদের বিষয়ে আমার কোনো ধারনা নেই। ঘুমা খাওয়া কিছু করো নাকি এসব কিছুই করতে হয়না? যদি ঘুমের প্রয়োজন হয় ঘুমাতে পারো।
> আমার সব কিছুর প্রয়োজন হয়। খাওয়া ঘুম সব কিছুর। আপনার বোনটা কিন্তু দারুন মেয়ে আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। (হাসি মুখে)
> ওকে নিয়ে না গিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে পারো।। এটা তো বলছো না। (বিরক্ত হয়ে)
> আপনি ও ভালো কিন্তু রাগ একটু বেশী। আপনাকে ও আমার পছন্দ হয়েছে তবে খুব একটা না। (হাসি মুখে)
> এই থামো তো তুমি।আমার জানা আছে, আমাকে তোমার কোনো কালেই পছন্দ হয়নি আজ নতুন নয়। আগেও জোর করে বিয়ে করতে হয়েছিল। সব কপাল আমার। মন্দ ভাগ্য না হলে কি আর বউ মানুষ না হয়ে পরী হয়ে যায় ।( রাগ করে)
> আপনি তবুও আমাকে আপনার স্ত্রী দাবি করছেন?
> তোমাকে একটা বই দেবার ছিল ওটা পড়ে দেখো সব বুঝবে। বাকীটা আমি তোমাকে মনে করতে সাহায্য করবো। (ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে )
> কিসের বই?
হৃদয় সেই বইটা ওর হাতে দিয়ে শুয়ে পড়লো। হৃদীতা বইটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে সোফায় বসে পড়তে শুরু করলো। হৃদয় ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু হৃদীতা জেগে আছে ও তন্ময় হয়ে একের পর এক পৃষ্টা উল্টে যাচ্ছে।ও মাঝরাত পযর্ন্ত বইটা পড়ে শেষ করলো। এই বইটাতে ওর জীবন কাহিনী লেখা আছে। এমন কি ওর নাম উল্লেখ পযর্ন্ত আছে। হৃদীতার সব কিছুই ধোয়াসা লাগছে। এই বইটা যদি মিথ্যা না হয় তাহলে ওর আগের কিছুই মনে নেই। কেমন করে ও সবটা মনে করবে বুঝতেই পারছে না। বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে হবে উনারা হয়তো সাহায্য করবেন কিন্তু করবেন কি তাও বলা যায় না। হৃদীতাকেই কিছু ভাবতে হবে। এই জন্যই ওর ছোট বেলার কিছুই মনে পড়ে না। হৃদীতা চোখ বন্ধ করে বইটা কোলের মধ্যে নিয়ে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ওর ঘুমানোর একটু পরেই হৃদয় জেগে উঠলো ও তাড়াতাড়ি উঠে পাশে দেখলো হৃদীতা নেই। ও বিছানা থেকে নামতেই হৃদীতাকে দেখতে পেয়ে শান্ত হলো। হৃদয় ওর কাছে গিয়ে বইটা পাশে রেখে হৃদীতাকে কোলে নিয়ে বিছানায় রেখে বাইরে বেরিয়ে আসলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মসজিদ থেকে আযানের সুর ভেসে আসবে হৃদয় এখন আর ঘুমাতে চাইনা আর ঘুম ও হবে না। টেনশন হচ্ছে অনেক, হৃদয় তাড়াতাড়ি নিচে এসে চায়ের পানি গরম করতে দিলো। এখন চা খাবার প্রয়োজন নয়তো মাথাটা কেমন ভারভার লাগছে। হৃদয় চা তৈরি শেষ করে সোফায় এসে বসলো। চা শেষ করতে করতেই মসজিদে আযান হয়ে গেলো। হৃদয় চায়ের কাপটা নামিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বাড়ি থেকে মসজিদের দুরুত্ব বেশি নয় যাই ও পায়ে হেটেই যাওয়া আসা করে। ওদের বাড়ি টা একটু নির্জন কারণ আশেপাশে তেমন ঘুরবাড়ি নেই। বিশবিঘা জমির উপর ওদের বাড়ি আর এমনিও তো এটা প্রপার শহরের মধ্যে নয়। যাইহোক হৃদয় হেটে চলেছে সামনের দিকে। চারদিকে এখনো অন্ধকার কাটেনি। কিছুই তেমন দেখা যাচ্ছে না। দূর থেকে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। ঝিঝিপোকা গুলো সারারাত ডেকে ডেকে হয়তো এখন তারা ক্লান্ত বিশ্রাম নিচ্ছে তাই তাদের ডাক আর শোনা যাচ্ছে না। রাস্তার পাশে বড় বড় তাল আর খেজুরের গাছের সারি।সেগুলো দানবের মতো মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে। হৃদয় হাটছে কিন্তু বারবার ওর মনে হচ্ছে কিছু একটা এর পিছু নিয়েছে। হৃদয়ের হাতে ফোনের টর্চ জ্বলছে। ওর একটা সমস্যা আছে হাটার সময় ও পেছনে তাকায় না। পেছনে কেউ আছে এটা ও বেশ কিছুক্ষণ আগেই বুঝতে পেরেছে কিন্তু ও দেখছে না। ভাবছে হয়তো কেউ ওর মতোই নামাজে যাচ্ছে। হৃদয় সাবলীল ভাবেই হাটছে আর হৃদীতার কথা ভাবছে। দূরে মসজিদ দেখা যাচ্ছে এমন সময় হঠাৎ কিছু একটা হৃদয়কে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলো দিলো আর হৃদয় মাটিতে ছিটকে পড়ে গেলো।ও মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই সেটা ওর বুকের উপরে উঠে ওর গলা চেপে ধরলো। হৃদয় কিছুতেই উঠতে পারছে না। অদৃশ্য শক্তির সাথে ও পারবে কেমন করে যদি মানুষ হতো তাহলে হয়তো চড় থাপ্পড় লাগিয়ে হলেও উঠে বসতো কিন্তু এখন কি করবে? হৃদয়ের নিশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছে। ওর মনে হচ্ছে ও মারা যাবে এই মূহুর্তে। কিন্তু এমন কিছুই হলো না হঠাৎ কিছু একটা দ্রুতগতিতে এসে ওর বুকের উপরে থাকা অদৃশ্য ওটাকে নিয়ে চলে গেলো।হৃদয় তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ওর থেকে একটু দূরে গাছপালা ভাঙার শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ধস্তাধস্তি করছে আর তার জন্য গাছ গুলো এমন ভেঙে পড়ছে। হৃদয় কৌতূহলী হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। হাতের ফোনটা একটু দূরে পড়ে আছে ওটাযে তুলতে হবে হৃদয়ের এটা খেয়াল নেই। মূলত আযানের কিছুক্ষণ পর থেকেই চারদিকে আলো ফুটে অন্ধকার কেটে যায় কিন্তু আজ কেনো সূর্য উঠতে দেরী করছে হৃদয়ের জানা নেই। নামাজে সময় পার হতে চলেছে হয়তো। হৃদয় তাড়াতাড়ি গিয়ে ফোনটা তুলল। সময় দেখতে গিয়ে হৃদয়ের চোখ কপালে, কারণ আযানের এখনো সময় হয়নাই তাহলে যে তখন ও শুনেছিল আযান দিচ্ছে ওটা কি ভুল ছিল? কিন্তু এমন ভূল কেমন করে হলো? হৃদয়ের মাথায় কাজ করছে না। ও দাঁড়িয়ে ভেবেই চলেছে। এর মধ্যেই হঠাৎ পেছনে থেকে কেউ একজন ওর হাত টা ধরলো। হৃদয় চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা মুখ গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বলল,
> তুমি এখানে কেনো? কি হচ্ছে এসব কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
> আপনার বুঝে কাজ নেই। দ্রুত এখান থেকে চলুন। তারপর বলছি।
> হুম চলো।
হৃদয় আর কথা না বাড়িয়ে হৃদীতাকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসলো। রুমে এসে হৃদীতা সোফায় গিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো। হৃদয় জিঙ্গাসু চোখে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। হৃদীতা চোখ বন্ধ করেই বলল,
> বলেছিলাম ও আপনার পেছনে পড়েছে তবুও আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না। আর
টাইম না দেখে বাইরে কেনো গেছেন?
> আযান শুনেই গেছি।
> ওটা আপনার মনের ভুল ছিল। এখনো সময় হয়নি আযানের।
> আচ্ছা ও আমার পেছনে কেনো লেগেছে বুঝলাম না। আমি তো ওর কোনো ক্ষতি করিনি তাহলে?
> আরে বাবা ওতো দুষ্ট আনেক।তাই ওর কারণ লাগে না কোনো মানুষের ক্ষতি করতে। ওই বাড়িতে আপনার সাথে ওর দেখা হয়েছিল আপনি একটু ভয় পেয়েছিলেন তাই আরও বেশি করে চাইছে।
> যাইহোক তোমাকে ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।
> ধন্যবাদ কেনো দিচ্ছেন। আপনি আমাকে সাহায্য করবেন আমার সব কিছু মনে করানোর জন্য?
> অবশ্যই করবো। আচ্ছা তুমি কি মেনে নিচ্ছ যে তুমি আমার চেনা হৃদীতা?
> না মেনে তো উপাই নেই।
> হুম হাতে প্রচণ্ড লেগেছে। একটু বিশ্রাম নিতে চাই।।
> আচ্ছা।
(চলবে)
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। এটা একটি ভৌতিক কাল্পনিক গল্প। ভালো না লাগলে বাজে মন্তব্য না করে ইগনোর করুন।