চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-৭

0
1319

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam

.
.
.
প্রায় আধঘন্টা ধরে একটা জুয়েলারি শপে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন।
দোকানী তার মাথা ছিড়ে খাচ্ছে, “স্যার এনগেজমেন্ট রিং!? নাকি বিয়ের রিং!? কোনটা নেবেন!?

সায়ন সেই তখন থেকে বলে চলেছে,” মেয়েদের রিং দেখান, সিম্পল ডিজাইনের।

কিন্ত ব্যাটা বুঝলে তো! তার এক কথা, এনগেজমেন্ট রিং নাকি বিয়ের রিং!!
সায়নের মাথা বিগড়ে যাচ্ছে, কোনোরকমে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, ” ভাই, বিয়ে এনগেজমেন্ট ছাড়া কোনো রিং নেই!?

দোকানী হাবলার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একগাল হেসে বলল,” গার্লফ্রেন্ডকে দেবেন বুঝি!?

এবার আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না সায়ন।
দাতে দাত চেপে বলল, ” গার্লফ্রেন্ডকে দেবো নাকি বউকে দেবো তাতে তোর কিরে!? লাগবেনা আমার রিং!!

বলেই হনহন করে বেরিয়ে চলে গেল সায়ন। দোকানি তখনও পেছন থেকে ডাকছে,” স্যার! ও স্যার!! ও ভাই, রিং নিয়ে যান!!!

সায়ন বিরক্ত হয়ে মনেমনে বলল, ” সালা বুইড়া বেটা! তোর কাছে রিং চাইছি, তুই আমার এনগেজমেন্ট না বিয়ে নিয়ে পড়ছিস!! তোর দোকান আমি বোম মেরে উড়িয়ে দেবো দেখে নিস!!!
.
.
.
.
.
বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে আফসানা, গতকাল বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো।
গায়ে শীতের কাপড় না থাকায় ঠান্ডা লেগেছে। সকালে তো বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছিলোনা আফসা, সুমু কপালে হাত দিয়ে দেখল, জ্বর এসেছে!

আফসানার বুটিক হাউজে কল করে আজকের জন্য ছুটি নিয়েছে সুমু।
আফসাকে এই অবস্থায় রেখে বাইরে যাওয়া উচিৎ হবেনা।
সুমু কল করে সিয়ামকে জানিয়ে দিল আজ সে পড়াতে যাবেনা।
.
.
.
ম্যাম আসবেনা শুনে সিয়াম তো বেজায় খুশি! কিন্ত সায়নের মন খারাপ হয়ে গেল।
সুমু কেন পড়াতে আসবেনা!? তাহলে কি সুমু তার উপর অভিমান করেছে!!?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সায়ন রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল।
যেভাবেই হোক আজ রিং সে কিনবেই!!!
.
.
.
.
.
সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে বসে ফটোশুট দেখছে রিয়া।
মাঝেমধ্যে পেছনে তাকিয়ে আরহাম আর ইকরা কি করছে তাই দেখছে।

রিয়া মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বলল, ” কি নিয়ে এতক্ষণ ডিসকাস করছে আল্লাহ মালুম!

ইকরা কি যেন বলছে আর ঢলে ঢলে আরহামের গায়ে পড়ছে।
তা দেখে রিয়া দাত কিড়মিড়িয়ে বলল, “আর এই ইকরা না বিকরার প্রব্লেমটা কি!?আরহামের গায়ে হাত না দিয়ে কি কথাই বলতে জানেনা!?

এদিকে আরহাম আড়চোখে রিয়াকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

মডেল ফটোশুট করে আরেকটা কস্টিউম পরে রেডি হতে গেছে। নেক্সট ফটোশুট সুইমিংপুলে হবে।
ফটোগ্রাফার ছেলেটা তার এসিস্ট্যান্টকে বলল,” পুলের পানি চেক করে রেডি করো।

বলে সুইমিংপুলে তাকিয়ে দেখল, সুইমিংপুলের অপজিটে গ্রিন কালারের লং ফ্রক পরে একটা মেয়ে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে!

সুইমিংপুলের পানি! পাড়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকা মেয়ে!! রোদের ঝলমলে আলো পড়েছে মেয়েটার মুখে!!!

দারুন এই মুহুর্ত দ্রুত ফ্রেমে বন্দী করে নিল ছেলেটা।
বিভিন্ন অ্যাংগেলে মেয়েটার ছবি তুলতে তুলতে ছেলেটা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
কাছাকাছি আসতেই, রিয়ার হটাৎ মনে হল কেউ তার দিকে আসছে! সচকিত হয়ে তাকালো রিয়া, ইয়োলো কালারের টিশার্ট আর ব্ল্যাক কালারের প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে লম্বাচওড়া হ্যান্ডসাম একটা ছেলে!!

হাতে ডিএসএলআর ক্যামেরা! রিয়া ভ্রু কুচকে তাকালো তার দিকে।
ছেলেটা স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করল, ” এক্সকিউজ মি মিস! আপনি কি মডেল!?

ছেলেটার কথা শুনে রিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ” না তো! কেন!?

ছেলেটা এক হাতে চুল গুলো ওল্টাতে ওল্টাতে বলল, ” আপনাকে দেখে মনে হল, তাই বললাম। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কিন্ত কোনো মডেলের থেকে কম নন!

রিয়া বুঝল ব্যাটা ফ্লার্ট করছে তার সাথে।
রিয়া পানি থেকে পা তুলে উঠে বলল,” আপনি একটু বাড়িয়েই বলছেন। আমি হয়তো সুন্দর, বাট এতটাও নই যেমনটা আপনি বলছেন!

ছেলেটা হেসে বলল, ” সবার দেখার চোখ তো এক না মিস, সৌন্দর্য্য দেখার জন্যও দেখার মতো চোখ থাকা লাগে।
.
.
.
আরহাম খেয়াল করল একটা ছেলে বেশকিছুক্ষণ ধরে রিয়ার সাথে কথা বলছে! তাও হেসে হেসে!! আরহামের দিকে পেছন ফিরে থাকায় ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছেনা আরহাম।

ইকরা তখন থেকে বকবক করেই চলেছে, আরহামের সেসব শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।
আরহাম চেয়ার ছেড়ে উঠে এগিয়ে গেল রিয়ার দিকে।

ইকরা বকবক করতে করতে আরহাম কিছু না বলে উঠে যাওয়ায় অবাক হয়ে গেল।

আরহাম বেশ মুড নিয়ে যেয়ে রিয়াকে ডেকে বলল, ” রিয়া! এখানে কাজ কম্পলিট!! চলো আমাদের ফিরতে হবে!!!

আরহামের কন্ঠঃ পেয়ে পেছনে ফিরল রিয়া আর সেই ছেলেটা।
আরহাম দেখল, ছেলেটা অন্য কেউ নয়। তার বেস্টফ্রেন্ড রাফাত!
রাফাত হেসে বলল, ” আরে দোস্ত কি খবর!? কেমন আছিস!?

আরহাম রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রাফাতকে বলল,” এই তো আলহামদুলিল্লাহ! তোর কি খবর!?
.
.
.
আরহাম আর রাফাত গল্পে মেতেছে, রিয়া পায়ে জুতা পরতে ব্যস্ত।
রাফাত রিয়াকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল , ” মেয়েটা কে রে!? সেই দেখতে!!!

রাফাতের মুখে রিয়ার কথা শুনে আরহামের মেজাজ বিগড়ে গেল।
হালকা রেগে বলল, ” কই কত সুন্দর দেখতে ও!? জীবনে মেয়ে দেখিস নি নাকি!?

আরহামের এমন বিহেভে ভড়কে গেল রাফাত, ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে!?

আরহাম আমতাআমতা করে বলল, ” মানে, রিয়া আমার অফিসের এমপ্লয়ি।

রাফাত মাথা নাড়িয়ে বলল, ” ও আচ্ছা।
বলেই রিয়াকে ডেকে বলল, ” আরে তোমার সাথে তো পরিচিত হলাম না।

হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলল,” আমি রাফাত। আরহামের বেস্টফ্রেন্ড, আবার এ.আর কোম্পানির ফ্যাশন ডিজাইনিং ডিপার্টমেন্টের হেড।

রিয়া মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল, ” আমি রিয়া, আরহাম স্যারের এসিস্ট্যান্টের এসিস্ট্যান্ট।

রাফাত একটু ভেবে বলল, ” ওহ আচ্ছা, চিত্রার এসিস্ট্যান্ট! কোম্পানিতে মেবি নতুন এসেছো!!
.
.
.
রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিল, এদিকে আরহাম রাগে ফুসছে! দুজনে হাত ধরেছে তো ধরেছে!! ছাড়ার নামই নিচ্ছেনা!!!

আরহাম তাড়া লাগিয়ে বলল,” রাফাত! ওদিকে তোর মডেল রেডি!! যা গিয়ে ফটোশুট কর, আমাদেরও এবার যেতে হবে।

রাফাত হেসে বলল, ” ওকে ওকে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ রিয়া! অফিসে দেখা হবে, বাই।
.
.
.
.
.
করিমকে চলে যেতে বলে নিজে কার ড্রাইভ করছে আরহাম, পাশের সিটে রিয়া বসে আছে। আরহামকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে সে।

কিন্ত হটাৎ তার রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারছেনা রিয়া।
কিন্ত আরহামের রাগটা যে রিয়াকে ঘিরে, তা বুঝতে বাকি নেই রিয়ার।

রিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, ” এটা তো অফিসের রোড না।

আরহাম থমথমে গলায় বলল, ” জানি।

রিয়ার বেশ ভয় পেয়ে গেল, আরহাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে! খুন করে গুম করে দেবে নাতো!! রিয়া এবার ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল!!!

হটাৎ রিয়ার এমন মরা কান্না শুনে ভড়কে গেল আরহাম।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” ঐ! তুমি কাদছো কেন!?

রিয়া কিছু বলছেনা, শুধু ফোপাচ্ছে! আরহাম গাড়ি একসাইডে দাড় করিয়ে রিয়াকে নিজের দিকে ফেরালো।
রিয়া বাচ্চাদের মতো করে কাদছে!

রিয়ার ছলছল চোখ দেখে আরহামের ভেতরটা কেমন মোচড় দিচ্ছে!
আরহাম দু’হাতে রিয়ার মুখ ধরে বলল, ” রিল্যাক্স রিয়া! রিল্যাক্স হও!! কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো!!!

রিয়া কাদোকাদো হয়ে বলল, ” আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন!?

রিয়ার কথা শুনে থ হয়ে গেল আরহাম, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” এটা জানার জন্য কাদছো!?

রিয়া চোখ পিটপিট করে দ্রুত মাথা নাড়ালো। আরহাম হাসবে কি কাদবে বুঝতে পারছেনা, রিয়ার নাক টেনে বলল,” এক্কেবারে বাচ্চা!!!

রিয়া নাক মুছে বলল, ” বললেন নাতো, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন!!?

আরহাম বাকা হেসে বলল, ” আমার শ্বশুরবাড়ি!

কথাটা শোনা মাত্রই রিয়ার মুখটা মলিন হয়ে গেল!!
শান্ত গলায় বলল, ” আপনার যেতে হলে যান, আমাকে এখানে নামায় দেন। আমি বাসায় যাবো।

আরহাম হেসে বলল,” আচ্ছা।

রিয়ার বাসার সামনে এসে দাড়ালো আরহামের গাড়ি।
রিয়া গাড়ি থেকে নেমে থমথমে গলায় বলল,” আমাকে বাসায় আনতে গিয়ে আপনার শ্বশুরবাড়ি যেতে মেবি লেট হয়ে যাচ্ছে!

আরহাম সামনে তাকিয়ে বলল, ” যেখানে আসার সেখানেই এসেছি।

রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে!?

রিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে আরহাম বলল, “কাল অফিসে দেখা হবে।

বলেই গাড়ি নিয়ে চলে গেল, রিয়া কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে বাসায় ঢুকল।
.
.
.
.
.
আরহাম বাসায় ঢুকে শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে বোনের রুমে গেল।
সেদিন আরশিকে ওভাবে ধমক দেওয়ার পর তার সাথে ভালো করে কথা বলেনি আরশি।

আরশির রুমের দরজায় নক করল আরহাম, ভেতর থেকে আরশি বলল, ” কেয়া আমি একটু একা থাকতে চাই।

আরহাম বুঝল আরশির মন খারাপ, দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকল আরহাম।
রুমের লাইট অফ করা, দরজা খোলার শব্দে চেচিয়ে উঠল আরশি,” কথা কানে যায় না!!? বললাম না, আমি একা থাকতে চাই!!?

আরহাম রুমের লাইট জালাতেই চুপ হয়ে গেল আরশি।
বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে সে, আরহাম ধীর পায়ে বেডে উঠে বোনের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল।

অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো আরশি, আরহাম চোখ বন্ধ করে বলল, ” তোর মনে আছে আপু! ছোটবেলায় যখনই আমার মন খারাপ হতো, তুই আমাকে এভাবে তোর কোলে মাথা রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতি!!

আরশি নিরবে চোখের পানি ফেলছে, আরহাম বোনের হাত ধরে বলল, ” আয়ানকে ভালোবেসে বিয়ে করলি তুই, তোর খুশি দেখে আমিও খুব খুশি ছিলাম। কিন্ত! আয়ান তোর ভালোবাসার মূল্য বুঝলো না!! সেদিন তোর অসহায় মুখ দেখে ভেবেছিলাম ভালবাসার সত্যিই কোনও মূল্য নেই!!!

আরশির চোখের জল গড়িয়ে আরহামের কপালে পড়ল!
আরহাম দ্রুত চোখ খুলে কপালে হাত দিয়ে বলল, ” তুই কাদছিস আপু!? জানিস আমিও খুব কেদেছিলাম সেদিন!! যেদিন রিয়া আমাকে সবার সামনে ইনসাল্ট করল!!!

আরশি চোখ মুছে বলল, ” রিয়া আয়ানের মতো না ভাইয়া।

আরহাম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, ” সেদিনের ঘটনার পরও তুই এটাই বলবি!?

আরশির গলা ধরে এসেছে, ধরা গলায় বলল, ” তুই রিয়ার দিকটা একটু ভেবে দ্যাখ। হুট করে সবার সামনে

আরহাম বুঝল আরশি রিয়ার ব্যাপারে নেগেটিভ কিছু ভাবতেও পারেনা।
কিন্ত সে জানে রিয়া কেমন, সেদিন রিয়ার চোখে তার জন্য ভালোবাসা না রাগ দেখতে পাচ্ছিলো সে।

আরহাম উঠে বসল, দু’হাতে বোনের মুখ ধরে বলল, ” আচ্ছা, রিয়ার কথা বাদ দে। আ’ম স্যরি আপু, তোকে সেদিন ইচ্ছে করে ধমক দেইনি। তুই তো চিনিস আমাকে, রেগে গেলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।

আরশি স্মিত হেসে বলল, ” রিয়াকে তাহলে কাল বাসায় নিয়ে আয়।

আরহাম ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” তাহলে আর মন খারাপ করে থাকবি নাতো!?

আরশি মাথা নাড়িয়ে না করল, আরহাম বোনের কপালে চুমু খেয়ে বলল, ” ওকে, এখন চল। খুব খিদে পেয়েছে!

আরশি চোখমুখ মুছে বলল, ” তুই যা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
.
.
.
.
.
আফসানা ঘুম, সুমু বসে বসে টিভি দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে।
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে চমকে উঠল সুমু। ফোন হাতে নিয়ে দেখল সায়ন কল করেছে!

সুমু রিসিভ করতেই সায়ন হাপাতে হাপাতে বলল,” সুমু! শিগগিরই তোমার বাসার সামনে আসো!! প্লিজ!!!

সুমু ভ্রু কুচকে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল রাত নয়টা বাজে!
এতো রাতে বাসার সামনে কেন যাবে সে!!
সুমু মেইন দরজা খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে বলুন তো!?

সায়ন হাপাতে হাপাতে বলল, ” ওরে! আগে এসো তারপর বলছি।
.
.
.
সুমু ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে বাসার সামনে এসে দেখল, বাসার কুকুরটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করছে!

সুমুকে দেখে ডাক দিল সায়ন, সুমু এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল, বাসার পাশে এক কদমফুল গাছে উঠে বসে আছে সায়ন!

কুকুরটা সেদিকে তাকিয়েই ঘেউঘেউ করছে! সুমু তাড়াতাড়ি কদমগাছের নিচে চেচিয়ে বলল, ” আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন!?

সায়ন কাপা কাপা গলায় বলল, ” আগে এই কুকুরটাকে ভাগাও, পরে বলছি।

সুমু কুকুরটাকে শান্ত করে বাসার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল।
কদমগাছ এর নিচে এসে বলল, ” নিন, নেমে পড়ুন। টমকে ওর ঘরে দিয়ে এসেছি।

সায়ন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে গাছ থেকে নেমে বলল,” টম!? টম তো বিড়ালের নাম!! কুকুর ক্যামনে টম হয়!?
.
.
.
সুমু কটমট করে তাকালো সায়নের দিকে।
দাতে দাত চেপে বলল, ” এতো রাতে কুকুরের নাম কেন টম, তাই জানতে এসেছেন!?

সায়ন ক্যাবলার মতো হেসে বলল, ” আরে না! আমি তো তোমাকে

সুমু ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” আমাকে কি!?
সায়ন মাথা চুল্কাতে চুল্কাতে বলল,” পানি খাবো।

সুমু বিরক্তি মাখা মুখ করে বলল, ” আচ্ছা, চলুন ভেতরে!
.
.
.
.
.
সায়ন বাসায় ঢুকে ঘুরে ফিরে দেখছে, দুটো বেডরুম, একটা ওয়াশরুম, একটা কিচেন আর ছোট্ট ডাইনিং নিয়ে ফ্ল্যাটটা।

সায়নকে ডাইনিং এ বসিয়ে সুমু এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল সায়নকে।
সায়ন নিমিষেই এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলল।

সুমু তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সায়নের দিকে, এতো রাতে কুকুরের তাড়া খেয়েও এখানে কি করছে সায়ন!?

সায়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,” রুমে উনি কে!?
সুমু ভ্রু উঁচিয়ে বলল, ” আমার কাজিনের ফ্রেন্ড! কেন!?

সায়ন হেসে বলল, ” না কিছু না। বলছিলাম যে
সুমু জোর করে হেসে বলল, ” যা বলার বলে, দ্রুত বিদায় হউন। আফসা উঠে আপনাকে দেখলে নানান প্রশ্ন করবে।

সায়ন জিজ্ঞেস করল, ” আফসা কে!?
সুমু দাতে দাত চেপে বলল, ” পানি খেতে এসেছিলেন, খেয়েছেন, এবার বিদায় হন।

সায়ন অসহায় মুখ করে উঠে দাড়ালো দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে সুমুকে একটা ব্ল্যাক কালারের মখমলি বক্স দিয়ে বলল, ” এটা তোমার।

বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল, সুমু বলদের মতো তাকিয়ে আছে সায়নের যাওয়ার পথে। দরজা লক করে দ্রুত বক্সটা খুলল সে, গোল্ডের ফিংগার রিং!

বক্সের কোনায় ছোট্ট একটা কাগজ ভাজ করে রাখা, কাগজটা খুলে দেখল লেখা আছে, ” সেদিনের অপরিপূর্ণতা হয়তো আজ তোমার হাতে পূর্ণতা পাবে।

অজান্তেই ঠোঁটের কোনায় হাসির রেখা ফুটল সুমুর।
দ্রুত রিং টা বাম হাতের আঙুলে পরে নিল। রিং টা তার হাতে বেশ মানিয়েছে!
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here