চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-১৬

0
1086

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
১৬
.
.
.
.
.
অফিস শেষে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। কিন্ত আরহামের আসার কোনো নাম নেই, কিছুক্ষণ পর একজন এসে একটা পার্সেল রিয়াকে দিয়ে বলল,” আরহাম স্যার এটা আপনাকে দিতে বলেছেন।

বলেই লোকটা চলে গেল, রিয়া পার্সেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। হটাৎ ফোনে টেক্সটের শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল, আরহাম টেক্সট করেছে,” সন্ধ্যা সাতটায় চলে এসো, আই উইল ওয়েট ফর ইউ।

নিচে একটা লোকেশন টেক্সট করা! রিয়ার বুঝতে বাকি নেই, আরহাম আজ তাকে প্রোপোজ করতে চলেছে!! বাট পার্সেলে এটা কি!?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা সুমুর বাসায় চলে গেল রিয়া।
বাসায় গেলে আর বের হতে দেবে না তাকে। তারচেয়ে আজ সুমুর বাসায় থাকছে বলে দেবে আম্মুকে!
.
.
.
পার্সেল খুলে হা হয়ে গেছে সুমু আর আফসানা, রিয়াকে না দেখতে দিয়ে গোসলে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।

রিয়া চুল গুলো মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলো, আফসানা খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল, ” দোস্ত! আরহাম যে গাউন দিয়েছে, পরলে তোকে একদম সুলতানাদের মতো লাগবে!

রিয়া সলজ্জ হেসে বলল, ” উফফ! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা!!

সুমু গাউনটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ” নে, তাড়াতাড়ি পরে আয়।

রিয়া গাউন নিয়ে অন্যরুমে গেল, সুমু হেসে বলল, ” রিয়াকে এতো খুশি, আগে কখনও দেখিনি!

আফসানা মন খারাপ করে বলল, ” তোদের দুজনেরই রিলেশন হয়ে গেল! আর আমি!! আমার কি প্রেম হবেনা, দোস্ত!!?

সুমু ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” তোর প্রেম হবেনা!! কি বলছিস রে!? সেই ডক্টরের কি খবর!?

আফসা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” ডক্টর!? কোন ডক্টর!!? কার কথা বলছিস তুই!?

সুমু মুখ ভেংচি কেটে বলল,” এএহ! কচি খুকি!! কিচ্ছু জানেনা!!! ছেমরি দূর হ তুই!

রিয়া গাউন পরে সুমুদের সামনে এসে দাড়ালো, সুমু রিয়াকে ঘুরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে বলল,” আরহাম তো আজ পুরা ফিদা হয়ে যাবে রে!

আফসা রিয়ার চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল, ” দোস্ত, আমার না খুব দেখতে মন চাচ্ছে। আরহাম কত রোম্যান্টিকভাবে তোকে প্রোপোজ করবে!!

সুমু রিয়াকে সাজাতে সাজাতে বলল,” আমাদের আর দেখে কাজ নেই রে, দেখলে আরও কান্না পাবে। আই উইশ, আমাকে কেউ এভাবে প্রোপোজ করতো!!

রিয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বলল,” তোরা থামবি!? এদিকে টেনশনে আমার হাত পা কাপছে, আর তোরা আছিস প্রোপোজ নিয়ে।

আফসা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” এখন আবার কি নিয়ে টেনশন করছিস!?

রিয়া ফোন রেখে হাতে হাত ঘষতে ঘষতে বলল,” আম্মু কল দিচ্ছে, আমি বেরিয়ে গেলে তোরা প্লিজ কথা বলে আম্মুকে ম্যানেজ করে নিস।

সুমু আশ্বাস দিয়ে রিয়াকে বলল, ” উফফ! তুই এসব নিয়ে টেনশন করিস নাতো!! খালামনিকে ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।

আফসা ঘড়িতে তাকিয়ে বলল, ” দোস্ত এবার বেরিয়ে পড়, সাড়ে ছয়টা বাজে। যেতেই তো পনেরো বিশ মিনিট লেগে যাবে।

রিয়া উঠে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল, অফশোল্ডার গাউনটা ডার্ক রেড কালারের, চুল গুলো ওয়াটারফল ব্রেইড করে বাধা, ঠোঁটে ডার্ক রেড কালারের লিপস্টিক, হাতে ব্ল্যাক কালারের পার্স!

রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল রিয়া, দরজা লক করে সুমু কল দিল রিয়ার আম্মুকে।
মিসেস ইরা কল রিসিভ করতেই সুমু বলল,” খালামনি! রিয়া আমার বাসায়।

মিসেস ইরা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল, ” উফফ! এই মেয়েটা আমার শান্তি হারাম করে দেয় একদম। সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি রিসিভই করছেনা! কই ও! ফোনটা দে তো ওকে!!

সুমু হেসে বলল, ” ও তো দরজা লক করে ঘুমোচ্ছে! আজ সারাদিন নাকি অফিসে অনেক কাজের প্রেশার ছিল। আপনি টেনশন করবেন না, রাতে ডিনার করতে উঠলে আমি কল দিবনি।

মিসেস ইরা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” ঠিকাছে, মনে করে দিস কিন্ত।

সুমু আচ্ছা বলে কল কেটে দিল, আফসা বেডের ওপর উলটে পড়ে বলল,” দোস্ত, আমার না খুব খিদে পেয়েছে!

সুমুও বেডে শুয়ে পেটে হাত বুলিয়ে বলল, ” আমারও রে, চল ফুডপান্ডায় কিছু অর্ডার করি।

আফসা উঠে বলল,” আমি পিজ্জা খাবো!
সুমু বলল,” আর আমি চিকেন ফ্রাই!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিয়া একটা রিসোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আরহাম এই লোকেশনই সেন্ড করেছিলো তাকে।
ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে রিয়া, দারুণভাবে ডেকোরেট করা হয়েছে রিসোর্টটা।

গ্লাসের দরজা খুলে রিসোর্টের হোটেলের ভেতরে ঢুকল রিয়া।
আশেপাশে কেউ নেই, মনে হচ্ছে হোটেলটা বুক করা হয়েছে!

হলরুমের মাঝখান দিয়ে উঠে গেছে ওয়াই শেপের সিড়ি! চারিদিকে আলোর ঝলকানি!! ওপরে ঝুলছে বিশাল এক ঝাড়বাতি!!!

রিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখছে চারিদিক, সিড়ির একেবারে ওপরের ধাপে তাকাতেই চোখ আটকে গেল তার।

ব্ল্যাক কালারের স্যুট প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম!
মাথার ঝাকড়া চুল গুলো স্টাইল করে একসাইডে দেওয়া!!
ঠোঁটে মোহনীয় সেই হাসি, যা প্রতিনিয়ত রিয়াকে পাগল করে দেয়!!!

রিয়া দ্রুত পায়ে সিড়ির বেয়ে উঠে আরহামের মুখোমুখি গিয়ে দাড়ালো।
আরহাম মুগ্ধ হয়ে দেখছে রিয়াকে, অসম্ভব সুন্দর লাগছে রিয়াকে আজ!
যেন কোনো হুরপরী নেমে এসেছে তার কাছে!!
.
.
.
হটাৎ এক মেয়েলি কন্ঠঃ শুনে দুজনের ভাবনায় ছেদ পড়ল।
রিয়া তাকিয়ে দেখল, গোল্ডেন কালারের ক্ল্যারিস গাউন পরে হেটে আসছে ইকরা!!

আরহাম সেদিকে না তাকিয়ে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
রিয়াকে দেখে ইকরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” রিয়া! তুমি এখানে!?

আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি ভেবেছিলাম এটা আমাদের প্রাইভেট ডিনার!

আরহাম বাকা হেসে বলল, ” রিয়া আমাদের গেস্ট ইকরা! ও তোমাকে স্পেশালি কংগ্রাচুলেশন জানাতে চাচ্ছিলো, তাই ইনভাইট করেছি!!

ইকরা মুচকি হেসে রিয়াকে অনসাইড হাগ করে বলল,” থ্যাংক ইউ সো মাচ, রিয়া!

ইকরার ফোনে কল আসায়, ইকরা বলল,” এক্সকিউজ মি, ইটস আর্জেন্ট।

বলেই কল রিসিভ করে অন্যদিকে চলে গেল, রিয়া এখনও থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিছুই বুঝতে পারছেনা সে, এসব কি হচ্ছে তার সাথে!!?

ইকরা অন্যদিকে যেতেই আরহাম দু’হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রিয়ার একেবারে সামনে গিয়ে দাড়ালো।

রিয়ার টলমল চোখজোড়া লাল রক্তের মতো হয়ে গেছে।
আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল, ” কেন!? কেন আরহাম!!?

আরহাম বাকা হেসে বলল, ” সেদিনের সেই অপমানের কথা বোধহয় তুমি ভুলে গেছো রিয়া! কিন্ত আমি ভুলিনি!!

রিয়া বুঝতে পারছেনা আরহাম কোনদিনে কথা বলছে! সে কবে আরহামকে অপমান করল!?

আরহাম দাতে দাত পিষে বলল, ” খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা!? এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো, সেদিন আমার কেমন লেগেছিলো!

রিয়া এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে আরহাম কি নিয়ে কথা বলছে!
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, ” রিভেঞ্জ! রিভেঞ্জ নিলেন তাই না!!

বলে হাসতে লাগল রিয়া, আরহামের কেন জানি রিয়ার এই হাসি ভাল লাগল না।

রিয়া নিজেকে সংযত করে বলল, ” আমি কত বোকা তাই না আরহাম! আমি কতবড় বোকা!! আপনার মিথ্যে ভালবাসায় এমনই অন্ধ ছিলাম যে বুঝতেই পারিনি, আমাকে ছোট্ট একটা ভুলের এতবড় মাশুল দিতে হচ্ছে!!!

আরহাম রিয়ার বাহু চেপে বলল,” ছোট্ট একটা ভুল! এটাকে তুমি ভুল বলছো রিয়া!! তুমি সেদিন সবার সামনে আমাকে রিজেক্ট করে ইনসাল্ট করে চলে গেছিলে!!!

আরহামের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল রিয়া, আরহামের চোখজোড়া জ্বালা করছে।
চোখের জল আড়াল করে বলল, ” আরে তোমার তো ভাগ্য ভালো, সবার সামনে তোমাকে ইনসাল্ট করিনি। তবে যেটা করেছি, সেটা তোমার প্রাপ্য!

রিয়া হাসতে হাসতে চোখের জল মুছে বলল,” ব্রাভো! মি. আরহাম, ব্রাভো!! আপনি জিতে গেছেন, কংগ্রাচুলেশন!!!

রিয়ার প্রত্যেকটা কথা আরহামের বুকে যেন তীরের মতো ফুটছে!
কেন জানি মনে হচ্ছে সে অনেক বড় ভুল করছে!!

ইকরা ফোন রেখে এসে আরহামের এক হাত জড়িয়ে ধরল, রিয়াকে বলল, ” তো চলো, সবাই ডিনার জয়েন করি!

রিয়া অন্যদিকে ফিরে চোখ মুছে নিল, জোর করে হেসে ইকরাকে বলল,” না ইকরা ম্যাম! আমি জাস্ট আপনাদেরকে কংগ্রাচুলেশন জানাতে এসেছিলাম। প্লিজ এনজয় ইওর ডিনার!!

আরহামকে বলল, ” কংগ্রাচুলেশন মি. আরহাম।
বলেই দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নেমে গেল রিয়া।

আরহামের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিচ্ছে! রিয়া হোটেল থেকে বেরিয়ে অঝোরে কাদতে লাগল!! অসম্ভব যন্ত্রণা হচ্ছে তার, চোখজোড়া জ্বলছে খুব, মাথাও ব্যাথা করছে!!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ধরে হাটছে রিয়া, সেদিনের একটা ভুলের এতবড় মাশুল দিতে হবে ভাবতে পারেনি সে।

লাইফে প্রথম কারো প্রেমে পড়েছে, যে কি না আরহাম! ভাবতেই নিজের ওপর রাগ হচ্ছে তার, এলোমেলো পা ফেলে হাটতে হাটতে হোচট খেয়ে পড়ল রিয়া।

হাটুতে হাত দিয়ে দেখল গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে, কিন্ত সে ব্যাথাও যেন ব্যাথা মনে হচ্ছে না তার।
পাশে একটা প্রাইভেট কার এসে দাড়ালো দেখে রিয়া কোনোরকমে উঠে আবার হাটতে লাগলো।

প্রাইভেট কারটা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, কার থেকে করিম বেরিয়ে আসতেই রিয়ার মনে পড়ল এটা তো আরহামের গাড়ি!

করিম হন্তদন্ত হয়ে রিয়ার কাছে গিয়ে বলল,” ম্যাম! আপনি এভাবে হেটে যাচ্ছেন কেন!!?

রিয়া কোনো কথা না বলে হাটতে লাগলো, করিম বাধা দিয়ে বলল, ” অনেক রাত হয়ে গেছে ম্যাম, এখন কোনো সিএনজিও পাবেন না। চলুন, আমি আপনাকে বাসায় পৌছে দিই।

রিয়া মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” না, না। বাসায় যাবোনা!

করিম জিজ্ঞেস করল, ” তাহলে এখন কোথায় যাবেন ম্যাম!?

রিয়া ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে, যে আরহাম তার সাথে এমন করল তার গাড়িতে কিভাবে উঠবে সে!!? দরকারে সারাপথ হাটতে হাটতে যাবে, তবুও আরহামের গাড়িতে উঠবেনা সে!

করিম তাড়া দিয়ে বলল, ” ম্যাম, আপনাকে রিসোর্ট থেকে বের হতে দেখেই আমি চলে এসেছি। এই টাইমে এদিকে কিছু পাওয়া যায়না। চলুন ম্যাম, আপনার বাসা আমি চিনি।

রিয়া মনেমনে ভাবছে, এতো রাতে এমন সুনসান রাস্তায় একা হেটে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে বোকামি ছাড়া কিছু না। তার চেয়ে করিমের সাথে যাওয়াই ভালো।

রিয়া গাড়িতে উঠতে উঠতে বলল,” ঠিকাছে চলুন, কিন্ত আমার বাসায় না। আমি ডিরেকশন বলে দিচ্ছি, আপনি নিয়ে চলুন।

করিম আচ্ছা বলে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগল।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সিরাজ সাহেব আর মিসেস ইরা ডিনার করতে বসেছে। সিরাজ সাহেবকে আগেই বলে দিয়েছে মিসেস ইরা যে, রিয়া আজ সুমুর বাসায় থাকবে।

খেতে খেতে সিরাজ সাহেব বলল,” মিসেস ফাতেমা কল দিয়েছিলো।

মিসেস ইরা জিজ্ঞেস করল, ” কি বলল!?

সিরাজ সাহেব বলল, ” ফাইয়ায আর রিয়া নাকি ঠিক করেছে, কানাডা যাওয়ার একমাস আগে বিয়ের প্রোগ্রাম করবে।

মিসেস ইরা বলল,” তারমানে এখনো দেড়মাস পর!? আমি বুঝিনা, বিয়েশাদির ব্যাপারে ছেলেমেয়েদের এতো সময় লাগে কেন! শুভ কাজে দেরি করতে নেই, এদেরকে কে বোঝাবে।

সিরাজ সাহেব মাথা নাড়িয়ে বলল, ” মিসেস ফাতেমাও এ ব্যাপারে খুব একটা খুশি নন। আমার মনে হয় রিয়াই বিয়েটা পেছাচ্ছে।

মিসেস ইরা একটু ভেবে বলল, ” আমার মনে হয় রিয়া অন্য কাউকে পছন্দ করে।

সিরাজ সাহেব সচকিত হয়ে বলল, ” মানে!? কিসব বলছো ইরা!? ওদের এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে!!

মিসেস ইরা হতাশ গলায় বলল, ” এনগেজমেন্ট হয়েছে তো কি হয়েছে!? বিয়ে তো হয়নি! তখন কত করে বললাম, বিয়েটা করে তারপর ফাইয়ায যাক। কিন্ত না, তুমি আর মিসেস ফাতেমা তো রিয়ার কথায় নাচলে। ফাইয়ায দেশে ফিরুক তারপর বিয়ে!

সিরাজ সাহেব বলল, “কিন্ত আমাদের মেয়ে তো এমন না যে, কাউকে পছন্দ করলে আমাদের জানাবেনা। আমাকে না হোক, তোমাকে তো জানাবে!

মিসেস ইরা খেয়ে উঠে প্লেট গোছাতে গোছাতে বলল,” হয়তো এনগেজমেন্ট এর কথা ভেবে বলছেনা।আমাদের একবার রিয়ার সাথে বসে কথা বলা দরকার। কারণ এভাবে তো চলতে পারেনা, তাই না!

সিরাজ সাহেব মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” বেশ, কাল ও ফিরলে কথা হবে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
টেবিলের দুইপাশে আরহাম আর ইকরা বসে আছে, ইকরা খেতে খেতে খেয়াল করল আরহামকে বেশ অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে!
গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” আরহাম! আর ইউ ওকে!?

আরহাম স্মিত হেসে বলল, ” হুম, আমি ঠিকাছি।

ফোনের রিংটোন পেয়ে ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল করিম কল করেছে।
খাবার রেখে ফোন নিয়ে উঠে গেল আরহাম, করিম কিছু বলার আগেই জিজ্ঞেস করল, ” রিয়া কোথায়!? ওকে বাসায় পৌছে দিয়েছো তো!?

করিম আশ্বাস দিয়ে বলল, ” টেনশন করবেন না স্যার। রিয়া ম্যামকে সেইফলি বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি৷ এখন রিসোর্টে ফিরে আসলাম মাত্র। কিন্ত

আরহাম উত্তেজিত হয়ে বলল, ” কিন্ত কি!!!!?

করিম বলল,” ম্যাম নিজের বাসায় না, অন্য একটা অ্যাড্রেস দিয়ে বলল সেখানে নিয়ে যেতে।

আরহাম হাত দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল, ” হোয়াট দ্যা হেল করিম!? এতো রাতে বাসায় না নিয়ে কোথায় দিয়ে এসেছো ওকে!!? লিসেন, ওর যদি কিছু হয়, তো

আরহামকে বাকিটা বলতে না দিয়ে করিম ভয়ে ভয়ে বলল,” স্যার, আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যাই চলুন! আপনি নিজে গিয়ে দেখবেন, ম্যাম আমাকে ওখানেই নিয়ে যেতে বলেছিলো।

আরহাম চেচিয়ে উঠলো, ” আমি নামছি, গাড়ি বের করো। ফাস্ট!

করিম কল কেটে তাড়াতাড়ি পার্কিং লট থেকে গাড়ি আনতে গেল।

আরহাম ইকরাকে বলল,” ডিনার করে বাসায় চলে যেও।

বলেই ছুটে বেরিয়ে এলো, ইকরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আরহামের যাওয়ার পথে।
তাদের ফেব্রিকস এর প্রজেক্ট টা সাকসেসফুলি কমপ্লিট হওয়ায় আজকের এই প্রাইভেট পার্টি অ্যারেঞ্জ করেছে আরহাম।
কিন্ত ডিনার না করেই ইকরাকে রেখে চলে গেল সে!
.
.
.
আরহাম নিচে নেমে করিমের কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।
স্টার্ট দিতে দিতে বলল, ” আমাকে লোকেশন টেক্সট করে দাও।

করিম আচ্ছা বলে, লোকেশন টেক্সট করে দিল। আরহাম আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ল রিসোর্ট থেকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলল সুমু, মলিন মুখে রিয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে বলল, ” কি হয়েছে রে! তুই এখন এখানে!!?

রিয়া কিছু না বলে এলোমেলো পা ফেলে ভেতরে ঢুকল। পার্সটা বেডে ছুড়ে মেরে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ল সে।

আফসা কিচেনে প্লেট ধুচ্ছিলো, রিয়া এসেছে শুনে ছুটে এলো সেও।

রিয়া একে একে সব খুলে বলল, বলতে বলতে রিয়ার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে!
রিয়ার কান্না দেখে আফসাও কেদে ফেলবে এমন ভাব।

সুমুর তো রাগে মাথা বিগড়ে যাচ্ছে, পায়চারি করতে করতে বলল, ” আমি আগেই বলেছিলাম, এইসব রিচ বাবামায়ের বিগড়ে যাওয়া ছেলে! এর পাল্লায় পড়িস না, কিন্ত তুই তো আমার কথা শুনলিনা!!

আফসা ধমক দিয়ে সুমুকে বলল,” উফফ, তুই চুপ করবি!?

রিয়াকে বলল,” ওঠ, উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। এসব নিয়ে আর ভাবিস না তো, আরহামকে একদম ভুলে যা। ভেবে নে, ওর সাথে কোনোদিন তোর দেখাই হয়নি।

রিয়া চোখমুখ মুছে উঠে দাড়ালো, লং লেডিস টিশার্ট আর শর্ট প্লাজো নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকল।

সুমু দাতে দাত পিষে বলল, ” আরহামকে সামনে পেলে, যে কি করতাম! কত্তবড় সাহস, রিয়াকে কষ্ট দেয়!!

আফসা বেডে বসে বলল, ” ও খুব এক্সাইটেড ছিল আরহামকে নিয়ে। লাইফে প্রথম কাউকে ভালবেসেছে রিয়া! আর সেই কিনা!

সুমু পায়চারি করছে আর বলছে,” রিভেঞ্জ না! রিভেঞ্জ!! রিভেঞ্জ কাকে বলে কতপ্রকার সব হাড়েহাড়ে বুঝিয়ে দেবো ঐ আরহাম রহমানকে!!!
.
.
.
.
.
রিয়া ওয়াসরুমের আয়নায় নিজেকে দেখছে, কি থেকে কি হয়ে গেল আজ!?
এমনটা তো হওয়ার ছিলনা!! জোরে জোরে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে বলল, ” নাহ! এভাবে ভেঙে পড়লে চলবেনা!! আমাকে কষ্ট পেতে দেখলে আরহাম শান্তি পাবে! তা আমি কিছুতেই হতে দেবোনা!!!

আবারও কয়েক ঝাপটা পানি মুখে মেরে বলল,” ভুলে যাবো আরহামকে, আমার লাইফে আরহাম নামে আর কেউ থাকবেনা।

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে প্রশস্ত একটা হাসি দিল রিয়া, ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল আফসা আর সুমু মুখ গোমড়া করে বসে আছে!

রিয়া ফ্লোরে হাতপা ছড়িয়ে বসে বলল, ” হোয়াট হ্যাপেন্ড গায়েজ!?

আফসা আর সুমু ভ্রু কুচকে তাকালো রিয়ার দিকে। পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি রিয়া!

রিয়া হেসে বলল, ” কাম অন গায়েজ, যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। এখন সেসব পাস্ট, সব ভুলে এখন এনজয় করতে হবে!!

আফসা ফিসফিস করে সুমুকে বলল, ” রিয়া মেবি অধিক শোকে কাতর হয়ে গেছে!

সুমু দাতমুখ খিচিয়ে বলল, ” ছাগল! ওটা অধিক শোকে কাতর না, অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর!!

আফসা বলদের মতো হেসে বলল, ” হ্যাঁ হ্যা, সেই!! রিয়ার অবস্থা এখন তাই মনে হচ্ছে রে!!!

রিয়া উঠে বলল,” ওয়েট, ঐ বালমার্কা ড্রেসটা কই!?

সুমু জিজ্ঞেস করল, ” কোন ড্রেস রে!?

আফসা বুঝতে পারছেনা রিয়া হটাৎ কোন ড্রেস খুজছে!
ভয়ে ভয়ে বলল,” আমার সব ড্রেস আজ ধুয়ে দিয়েছি দোস্ত। ছাদ থেকে আনতে ভুলে গেছি, এখন এতো রাতে ছাদে যাওয়া যাবেনা!

রিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, ” ধুর! তোর ড্রেস নিয়ে কি আমি ধুয়ে খাবো!? শয়তান আরহাম যেটা দিয়েছে সেটা কই!?

সুমু হেসে বলল, ” ওহ ওটা! ওটাতো তুই ওয়াসরুমে রেখে এসেছিস।

রিয়ার মনে পড়ল সে ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াসরুমে রেখে এসেছে।
হন্তদন্ত হয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ড্রেসটা বের করে আনল রিয়া।

কিচেনে গিয়ে গ্যাসলাইট নিয়ে সুমুকে বলল, ” ছাদের চাবি দে!

আফসা লাফিয়ে উঠে বলল, ” দোস্ত আমার কাপড় গুলো এখনও ভেজা!

রিয়া বিরক্ত হয়ে বলল, ” ছেমরি! তোর কাপড়ে আজ আমি আগুন লাগিয়ে তোকে বারবিকিউ করবো!!

বলেই দ্রুত পায়ে ছাদে চলে গেল রিয়া, আফসা আর সুমুও ছুটল পিছুপিছু।
ছাদের রেলিঙের পাশে দাঁড়িয়ে গাউনটাতে গ্যাসলাইট জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল রিয়া!

আফসা আর সুমু তা দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল, ” এক্কেবারে ঠিক কাজ করেছিস দোস্ত!

রিয়া জয়ের হাসি দিয়ে বলল, ” আজ থেকে আরহাম নামে আমার লাইফে কেউ থাকবেনা! আর না থাকবে তার দেওয়া কোনোকিছু!!

আফসা আর সুমু জড়িয়ে ধরল রিয়াকে, এদিকে ড্রেসটা পুড়তে পুড়তে নিভে গেছে।

সুমু বলল,” এক কাজ করি চল, ড্রেসটাকে দলা পাকিয়ে আগুন ধরিয়ে নিচে ফেলে দেই।

তিনজনে মিলে ড্রেসটা পাকিয়ে দলা বানিয়ে আগুন ধরিয়ে ছুড়ে মারল নিচে! ড্রেসটা নিচে ফেলে দিয়ে নাচতে নাচতে ছাদ থেকে নেমে গেল তিনজন।
.
.
.
.
.
আরহাম মাত্র গাড়িটা নিয়ে করিমের টেক্সট করা লোকেশনে এসে দাঁড়িয়েছে।

জায়গাটায় সে আগেও একবার এসেছিলো রিয়াকে নিয়ে। তখন ভেবেছিলো এটাই রিয়ার বাড়ি।

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বাড়ির গেটের সামনে একটা কিছু জ্বলতে দেখে এগিয়ে গেল আরহাম।

পা দিয়ে আগুন নিভিয়ে ড্রেসটা তুলে ধরতেই বুঝতে বাকি থাকল না যে, রিয়া এখানেই আছে!

তার দেওয়া ড্রেসটাতে আগুন ধরিয়ে ফেলে দিয়েছে রিয়া!!

কিন্ত ড্রেসটা খুব একটা পোড়েনি, ধূলোয় মাখামাখি হয়েছে এই যা!!!

আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রেসটা তুলে গাড়িতে উঠে বসল।
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here