চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-১৫

0
1079

বিঃদ্রঃ খুবই দুঃখীত গল্প দিতে পারিনি তাই। বাসায় গেস্ট ছিল এই দুদিন, সো লেখার টাইম পাইনি। আশা করি এবার থেকে রেগুলার গল্প পাবেন 🙂

চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
১৫
.
.
.
.
.
আফসানা অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে, বুটিক হাউজের সামনে ঘুরঘুর করছে শোভন।
আফসা বাইরে বের হতেই শোভন এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুজতে লাগল।

আফসাকে দেখে শোভন বলল,” আরে আপনি এখানে!
আফসা ভ্রু নাচিয়ে বলল,” এটা তো আমার আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ!

শোভন কিছুক্ষণ বলদের মতো তাকিয়ে বলল, ” হ্যাঁ তাই তো! আমি এখানে কি করছি!!

আফসা ঠোঁট চেপে হাসছে, শোভন মাথা চুলকে বলল,” ও হ্যাঁ। আমি এখানে পেশেন্ট দেখতে এসেছি।

আফসা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” এখানে! আমাদের এই বুটিক হাউজে? এখানে আবার কে অসুস্থ!?

শোভন এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা দোতলা বাড়ি দেখিয়ে বলল, ” না, না। ঐ যে, ঐ বাসায়।

আফসা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” ও আচ্ছা। তো চলুন, পেশেন্ট দেখতে হবে তো।

শোভন করুন চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আপনিও যাবেন!?

আফসা স্মিত হেসে বলল, ” হুম, যাই চলুন।
শোভন না চাইতেও হেসে বলল, ” হুম, চলুন।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঘড়িতে বেলা এগারোটা বাজে, আরশি ঘুমোচ্ছে। তার গায়ে ব্ল্যাংকেটটা ভালভাবে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো রিয়া।

আরহামের রুমের দরজায় নক করতেই আরহাম বলল,” ভেতরে এসো।

রিয়া ঢুকে দেখলো আরহাম সোফায় বসে ডকুমেন্টস গুলো চেক করছে।

ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে বেডে আরহামের মুখোমুখি হয়ে বসল রিয়া। মুগ্ধ হয়ে আরহামকে দেখছে সে, আরহাম ডকুমেন্টস গুলো রেখে রিয়ার সামনে গিয়ে রিয়ার দু’হাত ধরে উঠে দাড়ালো।

রিয়া লজ্জামাখা মুখে বলল, ” আমি কিন্ত আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি।

আরহাম স্মিত হেসে রিয়ার নাকে নাক ছুইয়ে বলল,” তোমার কি মনে হয়! এমন সাদামাটাভাবে উত্তরটা দিয়ে দেবো!!

রিয়া অবাক হয়ে আরহামের দিকে তাকালো, আরহাম রিয়ার কপালে চুমু খেয়ে বলল, ” কাল অফিস শেষে ওয়েট করবা। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

রিয়া যেন তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে! খুশিতে ডগমগ হয়ে নাচতে মন চাচ্ছে তার।
কোনোরকমে নিজেকে সংযত করে বলল, ” ঠিকাছে স্যার।

আরহাম দু’হাতে রিয়ার মুখ তুলে বলল,” অফিসের বাইরে আমি তোমার বস না, তুমি আমার এমপ্লয়ি না। সো, এখন থেকে শুধু আরহাম ডাকবে!

রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিল, আরহাম রিয়ার নাকে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে যেতেই কেয়ার ডাক পেয়ে দুজন দুজনের থেকে সরে দাড়ালো।

কেয়া ডেকে বলল,” স্যার, ম্যামের ঘুম ভেঙেছে। আপনাকে ডেকে দিতে বলল।

আরহাম গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” আচ্ছা যাও, আমি আসছি।

রিয়া আরহামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ” এবার আমাকেও যেতে হবে, অফিসে অনেক কাজ আছে।

আরহাম বলল,” চলো তোমাকে দরজা পর্যন্ত দিয়ে আসি।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সুমু কলেজ থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরে গোসল করে নিয়েছে।
ছুরি দিয়ে সবজি কাটতে কাটতে হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে রুমে গেল সুমু।

তার মা মিসেস সালেহা কল দিয়েছে, কল রিসিভ করতেই মিসেস সালেহা বলল,” কিরে! সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি রিসিভ করিসনা কেন!?

সুমু ফোন কানে নিয়ে কিচেনে ঢুকল, সবজি কাটতে কাটতে বলল,” আম্মু আমি রান্না করছি, ফোন রুমে ছিলো এজন্য

মিসেস সালেহা মেয়েকে থামিয়ে বলল,” আচ্ছা সে যাইহোক, বাড়ি আসবি কবে!? কতদিন তোকে দেখিনা।

সুমু হেসে বলল, ” তো চলে এসো, আব্বু আর ভাইয়াকে নিয়ে। তোমাদের খুব মিস করছি।

মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” তোর আব্বু আর ভাইয়ার তো এক শুক্রবার ছাড়া ছুটিই নেই। যেতে হলে আমাকেই যেতে হবে, আমি গেলে এদের জন্য রান্নাবান্না কে করবে শুনি!!

সুমু মন খারাপ করে বলল, ” আচ্ছা ঠিকাছে, নেক্সট উইকে যাবো।

মায়ের সাথে কথা শেষে ফোন রেখে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল সুমু।
আজ বিকেলে সায়নের সাথে ঘুরতে যাবে সে, সুমু নিজ হাতে সায়নের জন্য খিচুড়ি আর গরুর মাংস ভুনা রান্না করে নিয়ে যাবে।
.
.
.
.
.
মিসেস সালেহা কল কেটে সুমুর আব্বুকে বলল,” মেয়ে নেক্সট উইকে আসবে বলল।

সুমুর আব্বু মি.গণি বলল,” বেশ, ওদের তাহলে নেক্সট উইকে আসতে বলবো।

মিসেস সালেহা স্মিত হেসে বলল, ” ছেলেকে তো আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ভাল জব করে, দেখতেও খারাপ না, মেইন কথা খুবই সৎ।

মি. গণি হেসে বলল, ” শুধু আমাদের পছন্দ হলে হবে!? ওদেরও তো পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে! দুজন দুজনকে পছন্দ করলে তারপর বিয়ের কথা এগোবে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আফসানা আর শোভন সেই দোতলা বাড়ির সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে দরজার সামনে গিয়ে দাড়ালো।
শোভন একবার আফসানার দিকে তাকাচ্ছে, আবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।

আফসা বলল,” কি হল! দাঁড়িয়ে আছেন যে!! কলিংবেলটা ট্যাপ করুন।

শোভন কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা, সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলল, ” বোধহয় পেশেন্ট সুস্থ হয়ে গেছে। চলুন আমরা ফিরে যাই।

বলেই সিড়ি বেয়ে নামতে গেল। আফসা শোভনের হাত ধরে বলল, ” আরে! কোথায় যাচ্ছেন!!? আর আপনি কিভাবে বুঝলেন যে, পেশেন্ট সুস্থ হয়ে গেছে!!!? আপনি তো এখনও পেশেন্টকে দেখলেনই না!!!!

শোভন আমতাআমতা করে বলল, ” আরে আমি ডক্টর! পেশেন্ট না দেখেও বুঝতে পারি সে অসুস্থ নাকি সুস্থ!!

আফসা ভ্রু নাচিয়ে বলল, ” বাহ! আপনি তো দেখছি যেমনতেমন ডক্টর না, একেবারে কবিরাজি ডক্টর!!

শোভন ক্যাবলার মতো হাসতে লাগল, কিন্ত তাতেও কাজ হল না।
আফসা তাকে ধরে দরজার সামনে এনে কলিংবেলটা ট্যাপ করল।

শোভন মনেমনে দোয়াদরুদ পড়ছে, আজ শিওর সে বাশ খাবে।

কলিংবেলের শব্দ পেয়ে এক মহিলা দরজা খুলে দেখল বাইরে দুজন অচেনা ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

মহিলা জিজ্ঞেস করল, ” জ্বি কাকে চাই!?
আফসা শোভনকে ইশারায় বলছে,” কি হল! চুপ করে আছেন কেন!! বলুন!!!

শোভন আমতাআমতা করে বলল, ” মানে হল আমি ডক্টর শোভন।

মহিলা মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” না, এখানে শোভন নামে কেউ নেই।

আফসা বলল, ” আরে আপনি ভুল বুঝছেন।
শোভনকে দেখিয়ে বলল, ” ইনিই হচ্ছেন, ডক্টর শোভন। আপনি যাকে কল করেছেন, বাই দ্যা ওয়ে পেশেন্ট কোথায়!?

মহিলা এদের কথাবার্তার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
শোভন জোর করে হেসে বলল, ” স্যরি কিছু মনে করবেন না, হয়তো ভুল ঠিকানায় এসে গেছি।

বলে যেইনা সিড়ি বেয়ে নামতে যাবে, মহিলার বাচ্চা ছেলেটা এসে বলল, ” না না। ডক্টর আংকেল, আপনি ঠিক ঠিকানায় এসেছেন। আমিই পেশেন্ট।

শোভন স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলল,” আরে! তুমি এটা আগে বলবানা!?

মহিলা তার ছেলেকে ধমক দিয়ে বলল, ” মাহিন! আবার তুই বাহানা বানাচ্ছিস!! কাল না তোর এক্সাম!! এক্সাম এলেই তোর বাহানা শুরু হয়ে যায় তাই না!!!

আফসার সামনে ভাব দেখিয়ে শোভন মহিলাকে বলল,” বাচ্চাদের সাথে এমন বিহেভ করবেন না, দেখুন সে আপনার ধমক খাওয়ার ভয়ে সে যে অসুস্থ এটাও বলেনি।

মহিলা মিনমিন করে বলল, ” হুম বুঝেছি। আচ্ছা ভেতরে আসুন।

শোভন আর আফসা ভেতরে ঢুকতেই সোফায় শুয়ে পেট মোচড়াতে লাগল মাহিন।
শোভন মাহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” মাহিন কি হয়েছে তোমার!?

মাহিন চোখমুখ খিচিয়ে বলল, ” আমার তিনদিন ধরে টয়লেট হয়না ডক্টর! কিছু একটা করুন!!

মাহিনের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল শোভনের।
মান ইজ্জত যা আছে, আফসার সামনে তা আজ এই পুচকি ইন্দুর শেষ করে দেবে মনে হচ্ছে!
পুচকে খাটাশ কোথাকার!! তোকে দেখেই বুঝেছিলাম এক্সামের জন্যই বাহানা বানাচ্ছিস!!
তাই বলে টয়লেট! আফসা সাথে আছে বলে কিছু বললাম না। নাহলে তোকে এমন মেডিসিন দিতাম যেন, খাবার তোর পেটে না দাঁড়ায়!

মাহিনকে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়াতে বলে আফসাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো শোভন।
আফসা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি তো বলেছিলেন, পেশেন্ট নাকি সুস্থ হয়ে গেছে!

শোভন জোর করে হেসে বলল, ” গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথা বোঝেন তো! হুটহাট ব্যাথা ওঠে!! সুস্থ থাকতে থাকতে হটাৎ অসুস্থ হয়ে যায়!!!

আফসানা আর কথা বাড়ালো না, মাহিন ছেলেটা যে পড়া থেকে বাচতে অসুস্থ হওয়ার ভান ধরেছিলো তা বুঝতে বাকি নেই আফসার।
তার তো পড়ায় ফাকি দেওয়ার ওপর পিএইচডি করা আছে!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ব্যালকনিতে বসে আছে রিয়া, নিস্তব্ধ আধারের বুক চিরে চাঁদের উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। ঘড়িতে রাত দেড়টা বাজে! এখনও ঘুম নেই তার চোখে।

আজকের দিনটা রিয়ার কাছে কোনো স্বপ্নের থেকে কম নয়।
যখন কেউ জানতে পারে যে, তার ভালবাসার মানুষটাও তাকেই ভালবাসে, তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়।

আজ রাতটা পেরোলেই রিয়ার জীবনে উঁকি দেবে এক নতুন সকাল, যা শুধু ভালবাসা দিয়ে ঘেরা!
.
.
.
.
.
হটাৎ ফোনের রিংটোন পেয়ে চমকে উঠল রিয়া, ফাইয়ায কল দিয়েছে।
রিয়া কল রিসিভ করে বলল, ” কেমন আছো ফাইয়ায!?

ফাইয়ায কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল, ” এটা তো আমার তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ।

রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে!?

ফাইয়ায হেসে বলল, ” মেসেঞ্জারে কিছু ছবি পাঠিয়েছি দেখো।

রিয়া কল কেটে মেসেঞ্জারে ঢুকে ছবি গুলোতে ট্যাপ করে দেখল, আরহাম আর ইকরা একটা রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসে আছে!
ছবি গুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে রেস্টুরেন্টটা সম্পূর্ণ খালি, শুধু আরহাম আর ইকরা বসে আছে!!

সাথেসাথেই ফাইয়াযের কল এলো ফোনে, রিয়া কল রিসিভ করে বলল, ” মেয়েটা আরহামের বিজনেস পার্টনার, সো তাদের একসাথে বসে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু না।

কথা গুলো রিয়া খুব শান্ত ভাবে বললেও, মনের ভেতর খুচখুচ করছে তার।

ফাইয়ায মাথা নাড়িয়ে বলল, ” হুম বিজনেস পার্টনার! বাট গার্লফ্রেন্ড থাকা সত্ত্বেও এমন সুন্দরী বিজনেস পার্টনারের সাথে কেউ প্রাইভেট ডিনারে যায়, জানা ছিলোনা। বাই দ্যা ওয়ে, গুড নাইট রিয়া! হ্যাভ এ সুইট ড্রিম!!

বলেই কল কেটে দিল ফাইয়ায, রিয়া ছবি গুলো আবার দেখে ফোন সুইচ অফ করে দিল।
ভিষণ রাগ হচ্ছে তার, সেইসাথে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরশি ব্লু কালারের লেডিস শার্ট আর হোয়াইট কালারের স্কিনি প্যান্ট পরেছে।
চুল গুলো পোনিটেল করে বেধে ভাইয়ের সাথে গাড়িতে উঠে বসল সে।

অফিসে ঢুকে আরহাম এনাউন্সমেন্ট করল যে, আজ থেকে আরশি অফিসে জয়েন করেছে।
নিজের কেবিনে যাওয়ার আগে রিয়ার ডেস্কের সামনে গিয়ে দাড়ালো আরহাম।
রিয়া দেখেও না দেখার ভান করে ফাইলে মুখ গুজে আছে।

আরহাম ডেস্কের দুপাশে হাত রেখে রিয়ার সামনে ঝুকে বলল,” কফি নিয়ে আমার কেবিনে এসো।

রিয়ার মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর ঘটল না, আরহাম চলে যেতেই গটগট করে কিচেনে গেল সে।
এক বোয়েম কফির গুড়ো সব ঢেলে দিল রিয়া। আজ আরহামকে কফি খাওয়ার স্বাদ মিটিয়ে দেবে সে।

দরজায় নক করতেই আরহাম বলল, ” ভেতরে এসো।

রিয়া ভেতরে ঢুকে দেখল শার্টের হাতা ফোল্ড করে টেবিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম।
মুখে সেই পাগল করা হাসি!

কিন্ত না! এই হাসিতে পাগল হওয়া চলবেনা রিয়ার, কোনোদিকে না তাকিয়ে টেবিলে মগ রেখে চলে আসতে লাগল রিয়া।

আরহাম রিয়ার হাত ধরে একঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিল।
টাল সামলাতে না পেরে আরহামের বুকে গিয়ে পড়ল রিয়া!

আরহাম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল রিয়াকে, রিয়া নিজেকে ছাড়াতে হাতপা ছোটাছুটি করছে।
কিন্ত আরহামকে একচুলও নড়াতে পারছেনা সে।

আরহাম ফু দিয়ে রিয়ার কপালে আসা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বলল, ” কি ব্যাপার বলো তো! এমন পালাই পালাই করছো কেন!?

রিয়া অভিমানী সুরে বলল,” আমি পালিয়ে গেলে আপনার কি যায় আসে!!? আমি গেলে অন্য কেউ আসবে, আপনার তো গার্লফ্রেন্ডের অভাব নেই!

আরহাম বুঝতে পারছেনা রিয়া কি বলতে চাচ্ছে। হালকা রেগে জিজ্ঞেস করল, ” এসবের মানে কি রিয়া! তুমি আমার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলছো!! দেখো, যা বলার ক্লিয়ারলি বলো।

রিয়া আরহামের চোখে তাকাতে পারছেনা, তার মন বলছে আরহাম শুধু তাকেই ভালবাসে আর কাউকে না। কিন্ত ইকরা! সে তো আরহামের গার্লফ্রেন্ড!!

আরহাম ধৈর্য্য হারিয়ে রিয়াকে দু’হাতে চেপে ধরে বলল, ” কি হল! কিছু বলছো না কেন!!

রিয়া আমতাআমতা করে বলল, ” ইইকরা

রিয়া বাকিটা বলার আগেই আরশি নক করল দরজায়, সাথেসাথেই দুজন দুজনের থেকে সরে দাড়ালো।
রিয়া বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে, তাড়াতাড়ি শেলফে রাখা ফাইল গুলোর মধ্যে কিছু খোজার ভান করতে লাগল সে।

আরহাম চেয়ারে বসতে বসতে বলল, ” কাম ইন।
আরশি ভেতরে ঢুকে রিয়াকে দেখে মুচকি হেসে বলল, ” কি খুজছো রিয়া!?

রিয়া একটা ফাইল নিয়ে বলল,” এইতো এটা নিতে এসেছিলাম ম্যাম।

বলেই একরকম ছুটে পালালো রিয়া। আরহামের কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল সে।
.
.
.
.
.
আরশি বিজনেস নিয়ে ডিসকাস শেষে ভাইয়ের কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা রিয়ার ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল।

রিয়া অনবরত কলমের মুখ কামড়াচ্ছে, আরহামের প্রতি যেমন রাগ হচ্ছে আরশির সামনে পড়ায় লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। না জানি আরশি তাকে কিনা কি ভাবছে।

আরশি রিয়ার সামনে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল,” কলমটার ওপরে এভাবে টর্চার করোনা রিয়া! খিদে লাগলে চলো আজ একসাথে লাঞ্চ করি!!

রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” ঠিকাছে ম্যাম।
.
.
.
অফিসের কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে এসেছে আরশি আর রিয়া।
আরশি খেয়াল করল রিয়া বেশ অন্যমনস্ক হয়ে খাচ্ছে। যেন নামমাত্র খাওয়া, মন তার অন্য কোথাও!

আরশি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ” রিয়া! ঠিকাছো!?

রিয়া সচকিত হয়ে বলল, ” হ্যাঁ হ্যাঁ ম্যাম। আমি ঠিকাছি।

আরশি খেতে খেতে বলল,” কিন্ত দেখে তো মনে হচ্ছে, তুমি কিছু নিয়ে টেনশন করছো। চাও তো আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।

রিয়া মনেমনে ভাবছে,” আরশি আপুকে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়! যে আরহাম আর ইকরা এখনও রিলেশনে আছে কিনা!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বলল, ” না তেমন কিছু না। আচ্ছা, ইকরা ম্যাম তো আপনাদের বিজনেস পার্টনার, তাই না!

আরশি মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল,” ইকরার আব্বু আমাদের বিজনেস পার্টনার, ইকরা ওদের কোম্পানির ম্যানেজার।

রিয়া কিছুটা মন খারাপ করে বলল, ” ও আচ্ছা!
মনেমনে বলল,” উফফ! এটা কি জিজ্ঞেস করলাম আমি! কোথায় জিজ্ঞেস করবো ওদের রিলেশনের ব্যাপারে, তা না!!

আরশি একটু থেমে আবার বলল, ” বাট রিসেন্ট প্রজেক্টটা শেষ হলেই ভাইয়া শেয়ার ফিরিয়ে নেবে। কজ ইকরা খুব জালাচ্ছে ভাইয়াকে, সেই প্রথম দিন থেকে ভাইয়ার পেছনে পড়েছে ইকরা।

রিয়া খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,” ও! আমি ভাবলাম, মানে অফিসে বলাবলি হয় আর কি। স্যার আর ইকরা ম্যাম নাকি রিলেশনে আছেন।

আরশি বুঝতে পেরেছে রিয়া আসলে কি নিয়ে টেনশন করছে! মুচকি হেসে বলল, ” ইকরার সাথে ভাইয়া করবে রিলেশন!! নো ওয়ে!! ভাইয়া তো তোমাকে

বলতে গিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরল আরশি, রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” আমাকে মানে!?

আরশি আমতাআমতা করে বলল, ” ভাইয়া তোমাকে আর আমাকে তাড়াতাড়ি অফিসে ফিরতে বলেছে।

বলেই ওয়েটারকে ডাকল আরশি, বিল পে করে তাড়াতাড়ি রিয়াকে নিয়ে অফিসে চলে গেল।
.
.
.
.
.
অফিস শেষে অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়া। কিন্ত আরহামের আসার কোনো নাম নেই, কিছুক্ষণ পর একজন এসে একটা পার্সেল রিয়াকে দিয়ে বলল,” আরহাম স্যার এটা আপনাকে দিতে বলেছেন।

বলেই লোকটা চলে গেল, রিয়া পার্সেল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
হটাৎ ফোনে টেক্সটের শব্দ পেয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখল, আরহাম টেক্সট করেছে,” সন্ধ্যা সাতটায় চলে এসো, আই উইল ওয়েট ফর ইউ।

নিচে একটা লোকেশন টেক্সট করা! রিয়ার বুঝতে বাকি নেই, আরহাম আজ তাকে প্রোপোজ করতে চলেছে!! বাট পার্সেলে এটা কি!?

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা সুমুর বাসায় চলে গেল রিয়া।
বাসায় গেলে আর বের হতে দেবে না তাকে। তারচেয়ে আজ সুমুর বাসায় থাকছে বলে দেবে আম্মুকে!

.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here