চলো ভিজি বৃষ্টিতে পর্ব-১৪

0
1076

#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
১৪
.
.
.
.
.
ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে শুনে কিছুটা অবাক হল আরহাম।
ছোট থেকেই আরশি তার মায়ের সাথে সুইডেনে ছিলো। আরহাম অবশ্য ছোট থেকে দেশেই বড় হয়েছে। এইচএসসি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া গেছিলো হায়ার স্টাডি করতে।
স্টাডি কমপ্লিট করে বছর দুয়েক আগে দেশে তার বাবার কাছে ফিরে এসেছিলো আরহাম।

তার একবছর পর বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মা আর ছোট বোন আরশি এসেছিলো দেশে।
একমাস পর মা ফিরে গেছে সুইডেনে, কিন্ত আরশি যায়নি।
সেই প্রথম আরশি দেশে এসেছে, জানামতে তার এখানে কোনো ফ্রেন্ড নেই।
তাহলে কার সাথে দেখা করতে গেছে আরশি!?
.
.
.
আরহামের ভাবনায় ছেদ পড়ল কলিংবেলের শব্দে। কেয়া যেতে গেলে, আরহাম বলল,” ওয়েট, আমি দেখছি।

দরজা খুলে দেখল আরশি দাঁড়িয়ে আছে, ফোলাফোলা চোখ জোড়া দেখে মনে হচ্ছে খুব কান্না করেছে সে!

আরশি ভেতরে ঢুকে মলিন হেসে জিজ্ঞেস করল, ” তুই কখন ফিরেছিস!?

আরহাম দরজা লক করে বলল, ” এই তো, কিছুক্ষণ আগে। তুই কোথায় গেছিলি!?

আরশি আমতাআমতা করে বলল, ” একটু বাইরে গেছিলাম।

আরহাম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে বোনকে, আরশির হাবভাবে স্পষ্ট যে, সে কিছু লুকাচ্ছে!

আরহাম কিছু একটা ভেবে বলল, ” আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয়, ডাইনিং এ ওয়েট করছি।

আরশি আচ্ছা বলে একরকম ছুটে চলে গেল নিজের রুমে।
আরহামের বেশ খটকা লাগলো, আরশি কি লুকানোর চেষ্টা করছে!!?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরশি রুমে ঢুকে দরজা লক করে সোজা ওয়াশরুমে গেল।
শাওয়ার ছেড়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

আজ বিকালে আয়ানের সাথে দেখা করতে গেছিলো সে।
ডিভোর্সের এতদিন পরে আবার কেন আয়ান দেখা করতে চাচ্ছে ভেবে পাচ্ছেনা আরশি।

লোকেশনে দেওয়া লেকের পাড়ে গিয়ে দেখল, সাদা শার্ট আর কালো ট্রাউজার্স পরে বসে আছে আয়ান! আরশি ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দাড়ালো আয়ানের সামনে।

মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল, গালভরা দাড়ি আর ক্লান্ত চাহনি নিয়ে লেকের জলের দিকে তাকিয়ে আছে আছে আয়ান।
আরশিকে দেখে এক গাল হেসে বলল, ” আরু!

আরশিকে ভালবেসে আরু ডাকতো আয়ান। এই ডাকটা শোনার জন্য একসময় অধীর অপেক্ষায় আয়ানের পথ চেয়ে থাকতো আরশি।
আজ সেসব দিন নেই, সবকিছু বদলে গেছে।

আরশি নিজেকে সংযত করে বলল, ” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।

আয়ান ইশারায় আরশিকে তার পাশে বসতে বলল, আরশি যথেষ্ট দূরত্ব রেখে বসে পড়ল।

আয়ান সামনে তাকিয়ে বলল, “কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা। সেদিনের পর শুধু তুমি না আরু, আমার লাইফ থেকে সব হাসি আনন্দও হারিয়ে গেছে। আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম তোমার সাথে কন্টাক্ট করার। কিন্ত আরহাম কোনো ওয়ে রাখেনি!

আরশি শুনে অবাক হল যে, আরহাম নাকি আয়ানকে তার সাথে কন্টাক্ট করতে দেয়নি! কিন্ত কেন!!?

আরশি জিজ্ঞেস করার আগেই আয়ান হতাশ গলায় বলল, ” রাখবেই বা কেন! যা করেছি তার সাজা তো আমাকে পেতেই হবে!!

আরশি বুঝতে পারছেনা আয়ান কি করেছে এমন! যে আরহাম তাকে আরশির সাথে কন্টাক্টও করতে দেয়নি!!
আরশি জিজ্ঞেস করল,” মানে!?

আরশির কথা আয়ান শুনলো কি কি জানে! সে আনমনে বলে উঠল,” জানি আমাকে মাফ করবেনা, অন্তত একটাবার সুযোগ দেবে আরু!?

আয়ানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা আরশি।
শুধু মাথায় ঘুরছে সুস্থ হওয়ার পর যতবারই ভাইয়াকে সেদিন কি হয়েছিলো জানতে চেয়েছে, ততবারই কোনো না কোনো এক্সকিউজ দিয়ে কাটিয়ে গেছে ভাইয়া!

আরশির হাত দুটো ধরে আয়ান করুন স্বরে বলল,” শুধু একটাবার আরু! একটাবার সুযোগ দাও! প্রমিজ করছি,

আয়ান বাকিটা বলার আগেই আরশি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,” আমাকে এখন যেতে হবে।
উঠে চলে যেতে যেতে বলল,” এ ব্যাপারে পরে কথা হবে আয়ান।

আয়ান বুঝতে পারছেনা আরশির হটাৎ কি হল! জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির যাওয়ার পথে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরশি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে ডাইনিং এ গিয়ে বসল।
ডিনার শেষে কেয়া টেবিল গোছাচ্ছে, আরশি আরহামকে বলল,” তোর সাথে কিছু কথা আছে ভাইয়া, রুমে আয় তো।

বলেই দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেল আরশি, আরহামও চলল তার পিছুপিছু।
আরশি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে, আরহাম এসে দাড়াতেই আরশি জিজ্ঞেস করল,” সেদিন কি হয়েছিলো ভাইয়া!?

আরহাম ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে!? কোনদিন!?

আরশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,” যেদিনের পর আমি কোমায় চলে গেছিলাম।

আরহামের আর বুঝতে বাকি নেই আরশি আজ কার সাথে দেখা করতে গেছিলো।

আরহাম সামনে তাকিয়ে বলল,” তাহলে আজ আয়ানের সাথে দেখা করতে গেছিলি!?

আরশি থমথমে গলায় বলল, ” এটা কিন্ত আমার প্রশ্নের উত্তর না।

বোনের দিকে তাকিয়ে আরহাম বলল, ” সেদিন কি হয়েছিলো আয়ান তোকে বলেনি!? তাহলে কি বলতে ডেকেছিলো!?

আরশি দাতে দাত পিষে বলল,” কেন ডেকেছিলো! কি বলেছিলো!! আমি কিচ্ছু জানিনা!!! আমি শুধু জানতে চাই সেদিন কি হয়েছিলো!? আয়ান কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেল!!? আর তুইই বা কেন ওকে আমার সাথে কন্টাক্ট করতে দিসনি!!!?

আরহাম নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,” আয়ানকে ভালবেসে, তুই বিয়ে করেছিলি আপু। আয়ানকে তার আগে আমি চিনতামও না। শুধু তুই ওকে নিয়ে হ্যাপি থাকবি ভেবে, কোম্পানিতে তোর শেয়ারটা ওকে দিয়েছিলাম। তারপর কি হয়েছে কোনো আইডিয়া আছে তোর!?

আরশি টলমল চোখে তাকিয়ে আছে ভাইয়ের দিকে, আরহাম আবার বলল,” আয়ান তার পিএ নিলির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল, কোম্পানির শেয়ার নিয়েও আমার সাথে ঝামেলা করতে লাগল। তবুও আমি তোকে কিচ্ছু বলিনি কারণ তুই কষ্ট পাবি ভেবে।

আরশির চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে! আরহাম চেচিয়ে উঠলো, ” তুই জানতে চাস না! সেদিন কি হয়েছিলো!!? সেদিন আয়ানকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম। ওকে বুঝিয়ে বলতে চেয়েছিলাম, ও যেন নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে না আনে। ও যেন তোর সাথে প্রতারণা না করে, নাহলে আমি ওর এমন অবস্থা করবো যা ও আজীবন মনে রাখবে!!

আরশির চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগছে তার!

আরহাম একটু থেমে আবার বলল, “কিন্ত আয়ান বুঝল না, উল্টো চেচামেচি করতে লাগলো। একপর্যায়ে আমাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হল, কিন্ত কোত্থেকে যেন তুই এসে পড়লি। আমাদের দুজনকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলি। হটাৎ করে আয়ান কষিয়ে একটা চড় মারলো তোকে। এটা দেখে আর সহ্য হলনা আমার, রাগে ক্ষোভে এলোপাতাড়ি ঘুষি মারলাম আয়ানকে। মারতে মারতে খেয়াল করলাম তুই সেন্সলেস হয়ে টি-টেবিলের পাশে পড়ে আছিস! আয়ানকে রেখে ছুটে গেলাম তোর কাছে। তোর মাথা ধরে তুলতেই হাতে রক্তের দাগ চোখে পড়ল। আয়ানের চড় খেয়ে তুই টি-টেবিলে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছিস!! দ্রুত এম্বুলেন্স ডেকে তোদের দুজনকেই হসপিটালে এডমিট করালাম। তারপর আয়ানকে কোম্পানি থেকে বের করে তোর সাইন করা ডিভোর্স পেপার ওকে পাঠিয়ে দিলাম।

আরশি এবার অঝোরে কাদতে লাগল, আরহাম বোনের মুখটা দু’হাতে ধরে বলল,” আ’ম স্যরি আপু! তুই এসব সহ্য করতে পারবিনা বলেই এতদিন বলিনি তোকে।

আরশি কাদতে কাদতে জড়িয়ে ধরল আরহামকে, আরহাম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ” আয়ানের যা শাস্তি পাওয়ার তা সে পেয়েছে, তুই এখন আর এসব নিয়ে ভাবিস না আপু।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল রিয়ার, ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখল ঘড়িতে সকাল আটটা বাজে!
বেড থেকে নেমে ছুটে ওয়াশরুমে ঢুকল সে, গতরাতে ডকুমেন্টস গুলো চেক করতে করতে ঘুমাতে লেট হয়ে গেছে তার।

রেডি হয়ে অফিসে গিয়ে সোজা আরহামের রুমে গেল রিয়া, কিন্ত আরহাম অফিসে আসেনি।
কিন্ত আরহাম তো অফিসে আসতে কখনও লেট করেনা!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল রিয়া।

চিত্রা আজ বেশ সেজেগুজে এসেছে, ফ্রেঞ্চকাট দেওয়া চুলগুলো ছেড়ে রাখা, পরনে গোল্ডেন কালারের লেডিস শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স প্যান্ট, সাথে ম্যাচিং এয়ারিংস।

অফিসের স্টাফরাও চিত্রাকে আজ অবাক হয়ে দেখছে। চিত্রা সাধারণত এরকম টাইপ ড্রেসাপ করেনা।

চিত্রা কারো দিকে না তাকিয়ে হেলেদুলে আরহামের রুমের দিকে যাচ্ছে দেখে ডাক দিল রিয়া।

চিত্রা বিরক্ত হলেও জোর করে হেসে বলল, ” বলো, রিয়া।

রিয়া বলল,” আপনি মেবি বসের রুমে যাচ্ছেন, বাট বস তো এখনও আসেনি।

আরহাম এখনও আসেনি শুনে কিছুটা মন খারাপ হয়ে গেছে চিত্রার।
কিন্ত রিয়াকে সেটা বুঝতে না দিয়ে ভাব দেখিয়ে লাউডস্পিকার অন করে কল দিল আরহামকে।

কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ করল আরহাম।
চিত্রা বলল,” স্যার, আপনি আজ অফিস আসবেন না!?

আরহাম ক্লান্ত গলায় বলল, ” না চিত্রা, আজ আসবোনা। আজকে কোনো মিটিং থাকলে ক্যান্সেল করে দাও।

চিত্রা বলল,” ওকে স্যার, বাট প্রজেক্টের ডকুমেন্টস গুলো!? আপনি দেখতে চেয়েছিলেন, আমি কি তাহলে ওগুলো নিয়ে আপনার বাসায় আসবো!?

আরহাম একটু ভেবে বলল, ” ও আচ্ছা, ঐ ডকুমেন্টস গুলো! ওগুলো তো রিয়ার কাছে না!! এক কাজ করো, ওগুলো নিয়ে রিয়াকে পাঠিয়ে দাও।

চিত্রা মন খারাপ করে বলল, ” কিন্ত স্যার আমি..

চিত্রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আরহাম বলল, ” আর তুমি আজ অফিস সামলাও

বলে কল কেটে দিল আরহাম, লাউডস্পিকার অন থাকায় সব শুনে রিয়া মুচকি হেসে বলল, ” আমি তাহলে বসের বাসায় যাচ্ছি ম্যাম, আপনি অফিস সামলান।

বলে দ্রুত পায়ে চলে গেল রিয়া, চিত্রা মনেমনে ঝাড়ি দিয়ে রিয়ার গুষ্টি উদ্ধার করছে!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরহামের বাসায় ঢুকে দেখল কেয়া ট্রেতে ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছে।
কেয়াকে জিজ্ঞেস করল রিয়া, ” আরহাম স্যার কি রুমে আছেন!?

কেয়া স্মিত হেসে বলল, ” হ্যাঁ আছে, কিন্ত উনি এখন আরশি ম্যামের রুমে।

রিয়া বলল,” ও আচ্ছা, ম্যামের রুম কোনদিকে!?

কেয়া ইশারা করে বলল, ” করিডর ধরে গিয়ে একেবারে শেষের রুমটা।

রিয়া বলল, ” ওকে, ব্রেকফাস্ট আমি নিয়ে যাই।
বলেই ট্রেটা নিয়ে সিড়ি বেয়ে উঠে চলে গেল রিয়া।

কেয়া স্মিত হেসে বলল, ” মেয়েটা সত্যিই খুব লক্ষী, আরহাম স্যারের সাথে দারুন মানাবে।
.
.
.
.
.
আরশির রুমে গিয়ে নক করল রিয়া, আরহাম ভেতর থেকে বলল, ” ভেতরে এসো কেয়া।

রিয়াকে ট্রে নিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেখে কিছুটা অবাক হল আরহাম।

রিয়া ট্রেটা বেড টেবিলে রেখে সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল, ” ম্যাম কি অসুস্থ!?

আরশি বেডে শুয়ে আছে, আরহাম ব্ল্যাংকেট টেনে দিয়ে বলল,” হুম, এজন্যই আজ অফিসে যাইনি।

রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” ডক্টর দেখিয়েছেন!? কি হয়েছে ম্যামের!?

আরহাম ট্রেটা আরশির সাইডে এনে বলল,” মেবি প্রেশার লো। ডক্টরকে ডেকে পাঠিয়েছি, আসতেছে।

বোনকে ডেকে তুলল আরহাম, আরশি ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে বলল, “পানি খাবো।

আরহাম পানি খাইয়ে দিল বোনকে, আরশিকে খাওয়াতে খাওয়াতে ডক্টর এসে গেছে।

আরহাম রিয়াকে বলল, ” তুমি আমার রুমে গিয়ে বসো, আমি আসছি।
.
.
.
.
.
রিয়া মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আরহামের রুমে ঢুকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে সিংগেল সোফায় বসে পড়ল।

আরহামের বেডের দিকে তাকাতেই হটাৎ সেদিনের ঘটনা মনে পড়ল রিয়ার।
আরহাম অসুস্থ হওয়ায় সেদিন অফিসের ফাইল নিয়ে এসেছিলো সে।

বেডের দিকে তাকালেই সেসব মনে পড়ছে। তাই রুম থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো রিয়া।

আরহামকে এতো কাছে দেখেও ছুতে পারেনা সে। কিন্ত সে খুব করে চায় আরহামের হাতে হাত রেখে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে।
আরহামের ঐ গভীর কালো চোখে হারিয়ে ফেলতে চায় সে নিজেকে!

ব্যালকনির গ্রিলে ধরে রাখা হাতের পাশে অন্য কারো হাত দেখে চমকে পেছনে ফিরল রিয়া।
আরহাম পেছনে দাঁড়িয়ে রিয়ার দু’হাতের পাশে দুহাত রেখে দাঁড়িয়েছে।

পেছন ফিরে আরহামকে দেখে শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে গেছে রিয়ার, আরহাম নেশাভরা চোখে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে।

রিয়া একটা ঢোক গিলে বলল,” আ’আমি আপনার জন্যই ওয়েট করছিলাম।

আরহাম এক হাত দিয়ে রিয়ার সামনে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিতে দিতে বলল,” এই তো আমি এসে গেছি।

রিয়ার কেমন যেন ঘোর লেগে যাচ্ছে, আরহামের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠছে বারবার।

আরহাম রিয়ার খুলে রাখা চুল গুলো ওল্টাতে ওল্টাতে বলল,” তোমার চুল গুলো খুব সুন্দর রিয়া! ঘনকালো, ঠিক তোমার চোখের মতো!!

রিয়া মাতাল হয়ে যাচ্ছে, ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,” আমার কেমন জানি লাগছে আরহাম, আপনার সামনে এলেই কেন এমন হয় আমার!?দেখুন আমার হাত পা কাপছে!! নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে!!!

আরহাম বাকা হেসে বলল, ” প্রেমে পড়ে গেছো রিয়া! ভালবেসে ফেলেছো আমায়!!

আরহামের বলা কথাটা রিয়ার কানে যেন মধুর মতো বর্ষিত হচ্ছে!
রিয়া লজ্জায় আরক্তিম হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” আর আপনি!?

আরহাম একবার রিয়ার চোখে আবার রিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকাচ্ছে।
দু’হাতে রিয়ার মুখ তুলে রিয়ার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল আরহাম!

রিয়া যেন আর নিজের মধ্যে নেই, আরহামকে বাধা দিতে গিয়েও দিচ্ছেনা সে।
চোখ বুজে ফেলল সাথেসাথে, আরহাম তাকিয়ে দেখল রিয়া লজ্জায় চোখ বুজে রেখেছে!!

আরহাম স্মিত হেসে বলল, ” আপু তোমাকে ডাকছে।

রিয়া দ্রুত চোখ মেলে দেখল আরহামের চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে! তা দেখে লজ্জায় মরে যাচ্ছে রিয়া!!
কি করবে ভেবে না পেয়ে দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে আরশির রুমে গেল সে।
.
.
.
.
.
আরশি ফোনে কথা বলছে,” হ্যাঁ মম, আমি ঠিক আছি। তুমি টেনশন নিওনা।

রুমে ঢুকে আরশির মুখে “মম” ডাক শুনে বেশ অবাক হল রিয়া।
আরশি রিয়াকে দেখে বলল,” আচ্ছা মম রাখছি, পরে কথা হবে।

ফোন রেখে মিষ্টি হেসে বলল, ” এসো রিয়া, আমার পাশে বসো।

রিয়া গিয়ে আরশির পাশে বসল, আরশি বেডে হেলান দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কেমন আছো!?

রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন ম্যাম!?
আরশি চোখ পাকিয়ে বলল,” ম্যাম কিসের হ্যাঁ!? আমাকে আপু ডাকবা, বুঝছো!?

রিয়া হেসে বলল, ” ঠিকাছে আপু। আচ্ছা আপু, কিছু মনে না করলে একটা কথা জানার ছিলো!

আরশি মাথা নাড়িয়ে বলল,” হুম বলো, কি জানতে চাও!

রিয়া ইতস্ততভাবে বলল, ” আপনি ফোনে কার সাথে কথা বলছিলেন!?

আরশি বলল,” আম্মুর সাথে! কেন!!?

রিয়া আমতাআমতা করে বলল, ” না মানে, আমি শুনেছিলাম, আরহাম স্যার ছোট থাকতেই ওনার মা মারা গেছে। তাই,

আরশি স্মিত হেসে বলল, ” হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো।

রিয়া জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। আরশি পাশ থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে বলল, ” আরহাম ভাইয়ার যখন একবছর বয়স, তখন ওর মা মারা যায়। পরে আব্বু বিয়ে করে আনে আমার আম্মুকে, আমি হওয়ার প্রায় দেড় বছর পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। তারপর আমি চলে যাই আম্মুর সাথে সুইডেনে আর ভাইয়া দেশেই থেকে যায় আব্বুর কাছে।

রিয়া বলল, ” ও আচ্ছা। তারপর!?

আরশি বলল,” তারপর আমাদের আর দেখা হতনা তেমন। শুধু ভ্যাকেশন কাটাতে প্রতিবছর আব্বু আমাকে আর ভাইয়াকে নিয়ে যেকোনো একটা কান্ট্রিতে ট্যুরে যেতো। আর সেই সময় টুকুই ছিলো ভাইয়া আর আমার একসাথে কাটানোর স্মৃতি।
.
.
.
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here