অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:22

#অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)part:22
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤

.
.
🍁
.
রিয়া আর আয়ান দুজনেই জানালার বাইরে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।।তার প্রধান কারণ হলো ফাহিম কাজি অফিসের সামনে গাড়িটা দাঁড় করিয়েছে।ওদের রিয়েকশন দেখে ব্যাপারটা বুঝার জন্য অদিতিও বাম পাশে ঝুঁকে এলো।।”কাজি অফিস” লেখাটা দেখেই বিস্ময়ে আরো খানিকটা হেলে পড়ায় আয়ানের কাঁধের সাথে লেগে গেলো তার শরীর।।সাথে সাথেই চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো আয়ান….
.
হ্যা আসো…কোলে এসে বসো পড়ো না।
.
আজিব…আমি আপনার কোলে বসতে যাবো কেন শুনি?লুচু একটা।।
.
কোলে উঠার বাকিই কি রেখেছো??শরীরের সাথে তো চিপকে যাচ্ছো একদম।সরে বসতে পারো না??
.
হুহ।।আপনার সাথে চিপকে বসার কোনো শখ আমার নেই সো বি পুলাইট।।
.
আয়ান কিছু বলতে গিয়েও ফাহিমের ধমকে থেমে গেলো।।তারপর দুজনেই মুখ ভেঙিয়ে নেমে পড়লো গাড়ি থেকে।।কিন্তু রিয়া ঠাই বসে আছে।।সে কিছুতেই নামবে না এমনকি ভেতরেও যাবে না।।আর বিয়ে তো করবেই না।।আয়ানও ব্যাপারটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।।ফাহিম তো ওর বাবা মা নিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতেই এসেছে।। দুই ফ্যামিলিই রাজি তবু এমন উঠিয়ে এনে বিয়ে করার মানে কি??ফাহিম রিয়ার কানে কানে কিছু বলতেই চোখ বড় বড় তাকালো। ।ফাহিম একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলো-” রাজি?” সাথে সাথেই নেমে এলো রিয়া।।কোনো কথা না বলেই হাঁটা দিলো কাজী অফিসের দিকে।।কাজী অফিসের বারান্দার কাছে আসতেই একদল মেয়ে বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে।।এদেরকে হালকা পাতলা চেনা চেনা লাগছে ফাহিমের।।ব্যাপারটাকে পাত্তা না দিয়ে ওদের ক্রস করতে গেলেই ওরা ঘিরে ধরলো তাকে।।শুরু হলো সালামের বন্যা।।ফাহিম হাসিমুখে সালামের জবাব নিয়ে বলে উঠলো..” ভালো আছেন আপনারা??”
.
জি স্যার আমরা ভালো আছি।।আমাদের চিনতে পারছেন স্যার?আমরা লাস্ট ইয়ার গ্রেজুয়েশন কমপ্লেট করেছি।
.
হ্যা হ্যা চিনতে পেরেছি।।(ডাহা মিথ্যা কথা)তো তোমরা এখানে কেন?
.
এক্চুয়েলি স্যার আমরা এখানে ট্যুরে এসেছি।।এখানে একটা ফ্রেন্ডের বিয়ে হলো সে চট্টগ্রামেই থাকে।।তাই ভাবলাম আছিই যেহেতু বিয়েতে জয়েন করাই যায়।
.
ওহ আচ্ছা।
.
মুহূর্তেই মেয়েরা একটা মেয়েকে উদ্দেশ্য করে ঠেলাঠেলি শুরু করে দিলো।।তাদের মধ্যে ফিসফাসও চলছে প্রচুর।ফাহিম ভ্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকালো।।সাদামাটা চেহারার সরল সুন্দরী যাকে বলে ঠিক তেমন টাইপ মেয়ে।।মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগলেও চিনে উঠতে পারছে না ফাহিম।।আয়ান আর অদিতিও কৌতূহলী চোখে তাকালো,,,রিয়া তাকিয়ে আছে একরাশ বিরক্তি নিয়ে।।ফাহিম এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো…
.
তোমরা কি কিছু বলবে??
.
জি স্যার এক্চুয়েলি ও(মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে) লাবন্য।।মনে আছে স্যার?আমরা ফাইনাল ইয়ারে থাকতে ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আপনাকে প্রোপোজ করেছিলো।।আপনি ওকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছিলেন।।ও তাই করেছে বাট শী স্টিল ওয়েটিং ফর ইউ।।
.
কথাটা শুনেই ফাহিম অসহায় দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকালো।।এমনেই এই মাইয়া যে অবস্থা করছে এখন যে কি হবে আল্লাহ জানে।।ফাহিম একটু হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো…
.
এক এক এক্চুয়েলি….. আমি উনাকে…
.
ফাহিমকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই রিয়া রাগী গলায় বলে উঠলো…
.
উনি উনাকে খুব ভালোবাসেন।।আমাকে তো বলছিলেন সেদিন লাবন্য নামের মেয়েটা কি সুইট ছিলো।।।তাহলে আর দেরী কিসের কাজী অফিস সামনেই আছে,,,বিয়েটা পড়িয়ে দেন।। কি বলেন আয়ান ভাইয়া??
.
আয়ান মুচকি হাসলো শুধু।।সে বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছে যে রিয়া ব্যাপক পরিমান রেগে আছে।।কথাটা শেষ করেই উল্টো পথে হাঁটা দিলো রিয়া।।কিন্তু সাথে সাথেই দৌড়ে গিয়ে তার হাত ধরে ফেললো ফাহিম…
.
এই এই মেয়ে কোথায় যাও।
.
জাহান্নামে।। (দাঁতে দাঁত চেপে)
.
একদম না তুমি তো আমার সাথে জান্নাতে যাবে।।জাহান্নামে কেন??
.
হাত ছাড়ুন আমার।।ন্যাকামো করার বহুত মানুষ আছে আপনার তাদের সাথে করেন।।।আমার সাথে নয়।।লিভ মি।
.
এই পিচ্চি রাগ করছো কেন?আমি কিছু করেছি নাকি??তুমি কিন্তু শুধু শুধু রাগ করছো।(মন খারাপ করে)
.
শুধু শুধু না??এই ব্যাটা বল তো…তোর কয় মাইয়ার লগে ইটিশপিটিশ চলে।।টেইল মি।।(কলার চেপে)
.
পিচ্চি পিচ্চি কুল ডাউন সোনা।।স্টুডেন্টের সামনে মানসম্মানের বারটা না বাজিয়ে ভদ্রভাবে দাঁড়াও তো।।
.
কথাটা বলেই কলার থেকে হাত ছাড়িয়ে রিয়েকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো ফাহিম।।আয়ান অদিতি মুচকি মুচকি হেসে চলেছে।।আর মেয়েগুলো বিস্ফারিত চোখে দেখে চলেছে ওদের কাজকর্ম।। ফাহিমকে কখনোই এভাবে দেখে নি তারা।।ফাহিম ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়েই বলে উঠলো…
.
সরি গাইস।আমার বউ একটু বেশিই রাগী।।আমাকে নিয়ে কোনো কমেন্টই ওর সহ্য হয় না।।একটু বেশিই ভালোবাসে কি না তাই।
.
“আমার বউ” কথাটা শুনেই মেয়েদের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। স্যার বিয়ে করে নিয়েছেন??যদিও মেয়েটা ভারি মিষ্টি বাট বেশি পিচ্চি হয়ে গেলো না??তবে মেয়েদের মনে হালকা জ্বলনও হচ্ছে রিয়ার ভাগ্য দেখে।তাছাড়া লাবন্য মেয়েটার মুখটাও শুকিয়ে একাকার।ফাহিমের আচরণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে রিয়াকে কতোটা ভালবাসে।রিয়ারও ব্যাপক ভালে লাগছে ওর তো ইচ্ছে করছে সবার সামনেই ফাহিমকে একটা কিস করে দিতে।।উফফ….রিয়ার মনে বেশ প্রেম প্রেম ভাব আসছে।।মেয়েরা বিস্ময়মাখা কন্ঠে বলে উঠলো…
.
বউ??
.
হ্যা…বউ।
.
মুহূর্তেই মেয়েদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।।তার মধ্যে থেকে একটা মেয়ে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…
.
আচ্ছা উনি কি সিংগ্যাল??
.
ফাহিম মুচকি হেসে আয়ানের দিকে তাকাতেই আয়ান বলে উঠলো…
.
ইয়াহ্ আম অল অফ ইউরস্(চোখ টিপে)
.
ওয়াও গ্রেট!! বিয়ে করবেন আমায়??কাজি অফিস এখানেই চলুন না বিয়ে করে ফেলি।।
.
মেয়েটার কথা শুনে কাঁশতে শুরু করলো আয়ান।ফ্লার্টিং ড্যাটিং সব ঠিক বাট বিয়ে আয়ানের জন্য একটু বেশিই বেঠিক।।মেয়েটা যে প্রচুর ফাস্ট তা দেখেই বুঝা যায়।আর কিছু বললে না জানি সত্যিই জোড় করে বিয়ে করে ফেলে কে জানে??ঠিক তখনই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ে বলে উঠলো…
.
তাহলে আপনার পাশের জন কে??
.
ও?? ও হহলো আমার বাচ্চার মা সরি হবু মা হে হে হে(জোড় পূর্বক হাসি দিয়ে)
.
অদিতি রাগী চোখে তাকাতেই চোখের ইশারায় চুপ থাকতে বললো আয়ান।।মেয়েরা চলে যাওয়ার পর মুহূর্তেই সিংহী রূপ নিয়ে বলে উঠলো…
.
সমস্যা কি আপনার??কথায় কথায় আমাকে আপনার বউ,,বাচ্চার মা বানিয়ে দেন কেন??ইডিয়ট।।
.
কি করার বলো??তুমি যখন পাশে থাকো তখনই এমন সিচুয়েশন ক্রিয়েট হয়।।তাছাড়া তোমার তো খুশি হওয়া উচিত।।দি আয়ান চৌধুরী তোমাকে তার বউয়ের পরিচয় দিয়েছে।।হুহ
.
.
🍁
.
ফাহিমের ধমক টমক খেয়ে অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন করে বেরিয়ে এলো তারা।।ফাহিমের ধারনা মতো রিয়ার এখন পা ছড়িয়ে কাঁদার কথা।।কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে রিয়া মিষ্টি হেসে বলে উঠলো…
.
আইসক্রিম খাবো।
.
এই তুমি না মাত্রই কান্না করছিলে।।এখন এতো খুশি কেন??বিয়ে হয়ে গেলো তোমার কান্না পাচ্ছে না?(ভ্রু কুচঁকে)
.
কান্না পাবে কেন শুনি??আমাকে কি রাস্তার গোন্ডায় বিয়ে করেছে নাকি।।যাকে ভালোবাসি সেই বিয়ে করেছে তাতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে??
.
তাহলে এতোক্ষণ এতো ঢং করলা কেন??(রাগী গলায়)
.
ওটা তো ইচ্চে করেই করেছি।।আমি চেয়েছিলাম আপনিই আমায় জোড় করে বিয়ে করেন।।আমি আপনাকে জোড় করে বিয়ে করেছি এই কাহিনী আমি নাতি নাতনীকে কিভাবে শুনাবো??আমার প্রেসটিস আছে না??তাই এতো নাটক।।আর কিছুই না।
.
হোয়াটট??
.
ইয়াপপ,,এখন যান না আইসক্রিম কিনে আনুন।।ক্ষুধা লাগছে তো।
.
উফফ গড আই কান্ট হেল্ডেল হার।।
.
কথাটা বলেই গাড়িতে উঠে গেলো ফাহিম।।রিয়া আড়চোখে আয়ানের দিকে তাকাতেই দুজনেই হুহা করে হেসে উঠলো।।অদিতি অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আয়ানকে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…
.
আপনি সব জানতেন??
.
হালকা পাতলা(মুচকি হেসে)
.
.
🍁
.
.
সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে।।চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।।এই ফাহিমটা রিয়াকে ওভাবে কোথায় নিয়ে গেলো কে জানে??ঠিক তখনই বাড়িতে ঢুকলো ফাহিমরা।।রিয়ার হাতে একগাদা আইসক্রিম।। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।।কেউ কোনো কথা বলছে না।।সবার নীরবতা ভেঙে রিয়াদই বলে উঠলো…
.
ফাহিম ভাই?ওকে আইসক্রিম খাওয়ানোর জন্য ওভাবে নিয়ে গেলেন??সেটা তো মুখে বললেই হতো তাহলে ধরে বেঁধে নিতে হতো না ও নাচতে নাচতে নিজে নিজেই চলে যেতো….
.
না মানে আসলে…
.
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here