#চলো_ভিজি_বৃষ্টিতে
#Tanjima_Islam
২০
.
.
.
.
.
জানালা দিয়ে আসা সকালের নরম রোদ পড়েছে রিয়ার মুখে।
রিয়া পিটপিট করে চোখ মেলে দেখল আফসা তার পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে, ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে! সুমু বোধহয়!!
আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল রিয়া, চোখ ডলতে ডলতে বেড থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে দাড়ালো। সামনের নিম গাছের পাতা গুলো হালকা বাতাসে দুলছে! নাম না জানা এক ঝাক পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে নীল আকাশে!!
ঘড়িতে সকাল সাতটা বাজে, গত রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই রিয়ার।
ডক্টর ঘুমের মেডিসিন দিয়েছিলো বলেই একটু ঘুমাতে পেরেছে রিয়া।
নাহলে হয়তো সারারাত চাতক পাখির মতো বসে থাকতে হত।
আরহামকে ভোলার জন্য মেমোরি লসের মতো এতো সিরিয়াস ড্রামা করেছে রিয়া।
যদিও এতে শোভনের ক্রেডিট বেশি, সে না বললে হয়তো এসব কিছুই করতে পারতো না রিয়া।
কিন্ত এই মেমোরি লস হওয়ার ড্রামা ঠিক কতটা সাকসেসফুল হবে কে জানে!
তবে এটা নিশ্চিত আরহামের সাথে আর দেখা হবে না তার, এখান থেকে ফিরে গিয়ে আগে রিজাইন দেবে সে।
সুমুর ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল রিয়ার, সুমু বলল, ” উঠেছিস! যা ফ্রেশ হয়ে নে।
রিয়া আচ্ছা বলে ওয়াশরুমে গেল, আফসাকে ডেকে তুলল সুমু।
আফসা আড়মোড়া ভেঙে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখল তিনটা মিসডকল! ইরা আন্টি দুইবার দিয়েছে আর ফাইয়ায ভাইয়া!
আফসা কল দিল ইরা আন্টিকে, কয়েকবার রিং বাজতেই রিসিভ করল মিসেস ইরা।
.
.
.
সুমু ফোন হাতে নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এসেছে, এসব ঝামেলার মধ্যে সায়নের সাথে দুই-তিন দিন কথা হয়নি তার!
সায়ন কল রিসিভ করে বলল, ” বাব্বাহ! এতোদিনে এই অধমকে মনে পড়ল আপনার!?
সুমু করিডর ধরে হাটতে হাটতে বলল, ” এই কদিন যে কিসের মধ্যে দিয়ে গেছি! তা জানলে এসব বলতে না!
সায়ন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” কেন কি হয়েছে!? তুমি ঠিক আছো!?
সুমু একে একে সব খুলে বলল সায়নকে, সব শুনে সায়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” রিয়া যে সুস্থ আছে এটাই অনেক! আল্লাহ কত বড় বিপদ থেকে বাচিয়ে দিয়েছে!!
সুমু তাতে সায় দিয়ে বলল, ” হুম সেটাই! আচ্ছা শোনো আমার বোধহয় আজও সিয়ামকে পড়াতে যাওয়া হবেনা।
সায়ন বাধা দিয়ে বলল, ” না না। আসতে হবেনা, তুমি এখন রেস্ট নাও। আগে মেন্টালি প্রিপেয়ার হয়ে তারপর এসো।
সুমু হেসে বলল, “থ্যাংকস! বাট সিয়াম যেন পড়াশোনায় ফাকি না দেয়, ওকে বলো এ পর্যন্ত যা যা পড়িয়েছি সব ভালমতো পড়ে রাখতে। আমি এসে ওর এক্সাম নেবো!
সায়ন হেসে বলল, ” আচ্ছা ঠিকাছে ম্যাম!
.
.
.
রিয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখল আফসা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।
আফসা ফোন রেখে বলল,” আন্টি বলল, আংকেল আর ফাইয়ায ভাইয়া আসছে তোকে নিতে। আমাদের রেডি হয়ে নিতে বলল, ওরা এলেই বেরিয়ে পড়বো।
রিয়া ড্রেস চেঞ্জ করে রেডি হয়ে নিল, সুমু আর আফসাও রেডি হতে লাগল।
রিয়ার আব্বু আর ফাইয়ায এসেছে, হসপিটাল থেকে রিয়াকে রিলিজ নিয়ে বাসার দিকে চলল সবাই।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আরশির ঘুম ভেঙে গেল আরহামের ডাকে, আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল সে।
আরহাম জানালার পর্দা সরিয়ে বলল,” আপু ওঠ! উঠে রেডি হয়ে নে তাড়াতাড়ি!!
আরশি থাই গ্লাস ভেদ করে আসা রোদ হাত দিয়ে আড়াল করে বলল, ” এই সাতসকালে রেডি হয়ে কোথায় যাবো!!?
আরহাম বোনকে টেনে বেড থেকে নামাতে নামাতে বলল,” কোথায় আবার!!? রিয়ার বাসায়!!!
আরশির চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেছে! তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলল, ” আল্লাহ! আমি তো ভুলেই গেছিলাম!! আমি এক্ষুনি রেডি হয়ে আসছি রে!!!
আরহাম স্মিত হেসে বোনের রুম থেকে বেরিয়ে এলো, কেয়া ডাইনিং এ খাবার সাজাতে ব্যস্ত।
আরহাম চেয়ার টেনে নিয়ে বসে খেতে লাগল।
আরশি পেস্ট কালারের থ্রিপিস পরেছে, সাথে ম্যাচিং হিজাব পরে পার্স নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। আরহামের খাওয়া শেষ, বেসিনে হাত ধুয়ে রুমে গেল সে রেডি হতে।
.
.
.
হোয়াইট কালারের প্যান্ট আর ডিপ ব্লু কালারের শার্ট পরে হাতা ফোল্ড করে নিল আরহাম।
ডান হাতে লেদারের ব্রেসলেট আর বাম হাতে ব্ল্যাক কালারের ওয়াচ পরে নিল। ফোন নিয়ে একহাতে চুল গুলো ওল্টাতে ওল্টাতে নিচে নেমে এলো সে।
আরশির খাওয়া শেষ! আরহাম রেডি হয়ে নামতেই আরশিও বেরিয়ে পড়ল তার সাথে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলল মিসেস ইরা, ফাইয়াযের আম্মু এসেছে!
মিসেস ইরা স্মিত হেসে বলল, ” আরে ভাবি! আসেন ভেতরে আসেন।
মিসেস ফাতেমা ভেতরে ঢুকে বলল, ” রিয়ামা এখনও আসেনি!?
মিসেস ইরা দরজা লক করে সোফায় বসে বলল, ” না, কল দিয়েছিলাম কিছুক্ষণ আগে। বলল হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে।
মিসেস ফাতেমা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ” আল্লাহ মেয়েটাকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দিয়েছে এই অনেক।
মিসেস ইরা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” হুম! আমি তো বাড়ি ফিরে আগে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়েছি! আল্লাহ আমার মেয়েকে সুস্থ রাখুক!!
মিসেস ফাতেমা সায় দিয়ে বলল, ” আমিন!
কলিংবেলের শব্দে দরজা খুলতে উঠল মিসেস ইরা তার পিছুপিছু মিসেস ফাতেমাও গেলো। দরজা খুলে দেখল রিয়ারা এসেছে!
দরজা খোলা মাত্রই রিয়া ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তার মাকে!
একে একে সিরাজ সাহেব, ফাইয়ায, আফসা আর সুমু এসে ঢুকল।
মিসেস ইরা মেয়েকে রুমে নিয়ে গেছে, আফসা আর সুমু রিয়ার রুম থেকে চলে আসতে গেলে মিসেস ইরা বাধা দিয়ে বলল, ” দাঁড়াও!
সাথেসাথে দাঁড়িয়ে গেল আফসা আর সুমু, মিসেস ইরা মেয়ের রুমের দরজা ভেজিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে কিচেনে ঢুকল।
.
.
.
আফসা আর সুমু অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
মিসেস ইরা ছুরি দিয়ে সবজি কাটতে কাটতে বলল, ” এবার প্রথম থেকে বলো দেখি, সেদিন আসলে কি হয়েছিলো!
সুমু তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করল, ” ককোনদিন খালামনি!?
মিসেস ইরা রাগী চাহনিতে তাকালো একবার, আফসা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল, ” আন্টি, আসলে সেসেদিন।
মিসেস ইরা ছুরি হাতে নিয়ে বলল, ” হুম সেদিন!?
আফসা একবার ছুরির দিকে তাকাচ্ছে আবার রিয়ার আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে!
সুমু বুঝল আফসার অবস্থা খারাপ, ওর দ্বারা আর বলা সম্ভব হবে না!!
সুমু নিজেকে শান্ত করে বলল, ” খালামনি আমরা রাস্তা পার হচ্ছিলাম, আমি আগে আসি পরে আফসা আর সাথে রিয়া।
হটাৎ কোত্থেকে একটা প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা দিল! যদিওবা ব্রেক করেছিলো কিন্ত হটাৎ ধাক্কা সামলাতে না পেরে পড়ে গেছিলো রিয়া।
মিসেস ইরা চোখ পাকিয়ে বলল, ” এসব পাবলিক ড্রাইভ করতে জানেনা কিছুনা!! আবার প্রাইভেট নিয়ে বের হয়!!! আমার মেয়েটা তো ছোট মানুষ, ও তো ঠিকই রাস্তা পার হয়ে যাচ্ছিলো!! যত নষ্টের গোড়া ঐ ড্রাইভার!!! ওকে তো পুলিশে দেওয়া উচিৎ!!!!
সুমু হতাশ গলায় বলল, ” পুলিশেই দিতাম, বাট উনিই আবার আমাদের হেল্প করলো আন্টি। তাই আর!
মিসেস ইরা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” মানে!?
সুমু বলল, ” উনিইতো রিয়াকে আর আমাদের নিয়ে ওনার গাড়িতে করে হসপিটালে গেল।
আফসা এতক্ষণে স্বাভাবিক হয়ে বলল, ” ঐ যে ঐ লোকটা, কি যেন নাম! রিয়ার বসের ফ্রেন্ড!!
সুমু একটু ভেবে বলল, ” ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে! রাফাত!! ওনার নাম রাফাত!!!
মিসেস ইরা বলল, ” সে যাইহোক, মিথ্যে কেন বললে!? আল্লাহ না করুক যদি আমার মেয়ের কিছু হয়ে যেতো!!? তখন!!!
আফসা মাথা নিচু করে বলল, ” স্যরি আন্টি! আমরা আসলে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না!! আর আপনাদের আগে জানালে আল্লাহ না করুক যদি আপনাদের কিছু হয়ে যেতো!!!
মিসেস ইরা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” বুঝেছি! আচ্ছা ড্রয়িং এ গিয়ে বসো আমি আসছি।
সুমু বাধা দিয়ে বলল, ” না না, খালামনি! আমাদের যেতে হবে, অনেক কাজ আছে।
মিসেস ইরা বলল, ” ঠিকাছে, যা। আবার আসিস।
আচ্ছা বলে রিয়ার বাসা থেকে একরকম ছুটে বেরিয়ে পড়ল আফসা আর সুমু।
তারপর পরই রিয়ার বাসার সামনে এসে দাড়ালো ব্ল্যাক কালারের একটা প্রাইভেট কার।
কার থেকে নেমে দাড়ালো আরহাম আর আরশি।
আরশি তাকিয়ে দেখল, দোতলা বাসাটা ব্লু আর ডিপ পিংক কালারের পেইন্ট করা।
গেটের পাশেই বড় একটা নিম গাছ, গেট খুলে ভেতরে ঢুকল আরহাম আর আরশি।
বোনকে নিচতলার দুই ইউনিট দেখিয়ে আরহাম বলল,” রিয়াদের নিচের দুইটা ইউনিট রেন্ট দেওয়া, দুইটা ফ্যামিলি ভাড়া থাকে। রিয়ারা থাকে ওপরে ফুল ইউনিট নিয়ে।
আরশি ও আচ্ছা বলে সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল।
.
.
.
.
.
মিসেস ইরা কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে, সিরাজ সাহেবের সাথে ফাইয়ায আর রিয়ার বিয়ের ব্যাপারে ডিসকাস করছে মিসেস ফাতেমা।
ফাইয়ায পায়চারি করছে রিয়ার রুমের বাইরে। রিয়া আসা থেকে এখনও রুম থেকে বের হয়নি!!
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলল ফাইয়ায, আরশি সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় ক্ষনিকের জন্য দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকল।
আরশি তো চোখ সরাতে পারছেনা ফাইয়াযের থেকে, লম্বা চওড়া উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের ফাইয়ায।
ডান পাশের ভ্রুতে হালকা কাটা দাগ! ওটাই যেন পাগল করেছে আরশিকে!!
আরশির পেছনে আরহামকে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ফাইয়াযের।
না চাইতেও দরজা খুলে ভেতরে আসতে বলল সে।
আরহাম আর আরশি ভেতরে ঢুকে সালাম দিল সবাইকে।
সিরাজ সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বলল তাদেরকে।
আরহাম আর আরশি সোফায় গিয়ে বসতেই দেখল, মিসেস ইরা ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে এসেছে!
আরহাম উঠে গিয়ে ট্রেটা নিজে নিয়ে টি-টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,” আপনি বসুন আম্মু!
মিসেস ইরা স্মিত হেসে বলল, ” আরে আমি ঠিকাছি বাবা, তুমি বসো।
আরহামের মুখে ‘আম্মু’ ডাক শুনে সবাই রীতিমতো অবাক!
আরশি ভেবে পাচ্ছেনা, ভাইয়া কেন রিয়ার আম্মুকে আম্মু ডাকছে!!?
ফাইয়ায ভ্রু কুচকে তাকালো আরহামের দিকে, সিরাজ সাহেব কিছু বলার আগেই মিসেস ফাতেমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” ভাবি! আরহাম আপনাকে আম্মু ডাকল!!!
মিসেস ইরা স্মিত হেসে বলল, ” আরহাম অনেক ছোট থাকতেই ওর মা মারা গেছে, আমাকে দেখলে নাকি ওর কেমন যেন আম্মু ডাকতে মন চায়। আর আমিও ওকে ছেলের মতোই স্নেহ করি।
ফাইয়ায একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আরহামকে বলল, ” তাহলে তো তুমি সম্পর্কে আমার “শালা” হও!!
আরহাম বাকা হেসে ফাইয়াযের একটু কাছে গিয়ে বলল, ” আমি তোর শালা নাকি রিয়া তোর ভাবি, সে তো সময় এলেই দেখা যাবে!!!
ফাইয়ায দাতে দাত পিষে কিছু বলতে গেলে আরহাম পাত্তা না দিয়ে মিসেস ইরাকে জিজ্ঞেস করল, ” আম্মু! রিয়া কোথায়!!?
মিসেস ইরা নাস্তা সার্ভ করতে করতে বলল, ” ও ওর রুমেই আছে।
আরহাম আর দেরি না করে সোজা রিয়ার রুমের দিকে গেল। ফাইয়ায হাত মুষ্টি করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে!
.
.
.
.
.
দোলনায় বসে আকাশ দেখছে রিয়া, কি বিশাল এই আকাশ!
তার নিচে কতশত গ্রহ উপগ্রহ!! তারমধ্যে কোটিকোটি শহর নিয়ে পৃথিবী!!!
সেই শহর গুলোর একটাতে আরহাম আর রিয়া!!!! একই শহরে তাদের বসবাস, অথচ আর দেখা হবে না!!!!!
ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে রিয়ার!
কিন্ত কিছুই করার নেই!! আরহামকে ভুলে যাবে সে, না চাইলেও পারতে হবে!!!
কারণ, একতরফা ভালবাসার কোনো পরিণতি নেই!!!!
হটাৎ খুব পরিচিত সুগন্ধ পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল রিয়ার।
সামনে তাকাতেই ব্যালকনির দরজায় সেই চিরপরিচিত মুখটা দেখতে পেলো সে।
যাকে একবার দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকে রিয়া!
আরহাম ধীর পায়ে হেঁটে রিয়ার সামনে হাটু গেড়ে বসল।
রিয়া এখনও ঘোরের মধ্যে আছে, আরহাম রিয়ার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কেমন আছো রিয়া!?
আরহামের কন্ঠঃ শুনে সম্বিৎ ফিরল রিয়ার, ইতস্ততভাবে বলল, ” এই তো ভালো। আপনি কেমন আছেন!!?
আরহাম স্মিত হেসে বলল, ” এতক্ষণ ভালো ছিলাম না, এখন ভালো আছি!
আরহামের হাত থেকে আলতোভাবে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল রিয়া।
আরহাম মলিন হেসে বলল, ” সেদিনের জন্য স্যরি!
রিয়া ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” কোনদিন!!?
আরহাম উঠে বলল,” কিছুনা!
রিয়া বুঝতে পারছেনা আরহাম কেন স্যরি বলছে, কখনও মনে হয় সে আরহামকে সবচেয়ে ভালো জানে। আবার মনে হয় সে কিছুই জানেনা!!
আরহামের দিকে তাকিয়ে রিয়া মনেমনে জিজ্ঞেস করছে,” কেন এমন করছো আরহাম!? যতই চেষ্টা করি তোমাকে ভুলে যেতে, তোমার থেকে পালিয়ে যেতে। ততই আরো তোমার কাছে চলে যাই!! এসব কি হচ্ছে আমার সাথে!!!
.
.
.
.
.
সিরাজ সাহেব বাজারে গেছে, মিসেস ইরাকে রান্নায় হেল্প করছে মিসেস ফাতেমা আর খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আরশিকে।
গোলগাল, ফর্সা গায়ের রঙ, লম্বা চওড়া, দেখতেও খারাপ না!
ফাইয়াযের পাশের সিংগেল সোফায় বসে আছে আরশি।
আড়চোখে বারবার ফাইয়াযকে দেখতেই ব্যস্ত সে। এদিকে ফাইয়ায যেন স্বস্তি পাচ্ছে না, এতক্ষণ ধরে রিয়ার রুমে কি করছে আরহাম!!
সেই যে ঢুকেছে, এখনও বের হওয়ার নামই নিচ্ছে না!!!
মিসেস ফাতেমা শেষমেশ রিয়ার আম্মুকে জিজ্ঞেস করে বসল,” মেয়েটা কে ভাবি!?
মিসেস ইরা আরশির দিকে তাকিয়ে বলল, ” ওহ আরশি! আরহামের বোন।
মিসেস ফাতেমা মাথা নাড়িয়ে বলল, ” বাহ! নামটাও বেশ সুন্দর!!
মিসেস ইরা ভ্রু কুচকে তাকালো, মিসেস ফাতেমা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমতা-আমতা করে হেসে বলল, ” না মানে, আগে কখনও এখানে দেখিনি তো! তাই আর কি!!
.
.
.
আরশি একমনে দেখছে ফাইয়াযকে, আর কোনো দিকে হুস নেই তার।
ফাইয়ায এদিক ওদিক তাকাতেই আরশিকে দেখে বেশ অবাক হল। মেয়েটা এমন ড্যাবড্যাব করে কি দেখছে!?
ফাইয়ায একবার ভালো করে দেখে নিল নিজেকে, তাকে কি আজ দেখতে খারাপ লাগছে!!?
আরশি স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করল, ” আপনার নাম কি!?
ফাইয়ায কিছুটা থতমত খেয়ে বলল, ” ফাফাইয়ায!
আরশি ভ্রু কুচকে বলল, ” ফাফাইয়ায! নামটা কেমন যেন উইয়ার্ড!!
একটু ঢং করে আবার বলল,” বাট ইটস ওকে, আমি ম্যানেজ করে নেবো!!!
আরশির কথা শুনে বেশ ভড়কে গেল ফাইয়ায! এ মেয়ের হাবভাব খুব একটা সুবিধার লাগছে না তার!!
তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করল, ” কিকি ম্যানেজ ককরে নেবেন! হ্যাঁ হ্যাঁ!!?
ফাইয়াযের তোতলানো শুনে খিলখিল করে হেসে দিল আরশি, এতবড় একটা ছেলে কেমন বাচ্চাদের মতো তোতলাচ্ছে!!
ফাইয়ায কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা, তবে মেয়েটার হাসি খুব সুন্দর মানতে হবে!
একেবারে বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ কণ্ঠের হাসি!! অবশ্য মেয়েটা দেখতেই তো একেবারে বাচ্চাবাচ্চা টাইপ!!!
.
.
.
হটাৎ রিয়ার কন্ঠঃ শুনে চমকে উঠল ফাইয়ায, আরহাম আর রিয়া এসে দাড়ালো ড্রয়িং রুমে।
আরশিকে হাসতে দেখে রিয়া জিজ্ঞেস করল, ” কি ব্যাপার!? এতো হাসাহাসি কি নিয়ে!! আমাকেও বলো আমিও একটু হাসি!!
আরশি হাসি থামিয়ে রিয়ার কাছে গেল।
রিয়াকে তার পাশে বসিয়ে বলল,” ও কিছুনা, তুমি কেমন আছো তাই বলো।
রিয়া স্মিত হেসে বলল, ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন আপু!?
আরশি বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো!?
রিয়া সাথেসাথে থ হয়ে গেল, কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা সে। আরহাম আর ফাইয়াযও তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে।
রিয়া আমতাআমতা করে বলল, ” না মানে। কে যেন বলছিলো আপনি আরহাম, স্যরি আরহাম স্যারের বোন। তাহলে আমার তো আপু হন, তাই আর কি!
আরহাম ক্ষনিকের জন্য খুব আশা করছিলো রিয়ার বোধহয় সব মনে পড়েছে।
এদিকে ফাইয়ায তো ভয় পেয়ে গেছিলো রিয়ার যদি আরহামকে মনে পড়ে যায়!!
কিন্ত আরশির কেন জানি মনে হচ্ছে, ডাল মে কুছ তো কালা হে!!!
.
.
.
.
.
(চলবে)