#ভুলবশত♥
#PART_02
#FABIYAH_MOMO🍁
দুই.
লোকটার পকেট থেকে A-2J73 নামের কোনো বিদেশী প্রোডাক্টের পিস্তল বের হলোনা। সে পকেট থেকে বেনসনের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালো। লাইটার দিয়ে আগুন ধরাতেই নার্সের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়লো। সে বলিষ্ঠ কন্ঠে বলল-
–হসপিটালে স্মোক করছি ফাইন দিতে হবেনা তো?
নার্স বিরক্ত হলো। কিন্তু লোকটার স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাসিলিটিস অবর্জাব করে কঠিন কিছু বলতে পারলো না।ফাইনের নামে লাখ টাকা ধরিয়ে দিতেও প্রবলেম হবেনা। রুলস না মানলেও লোকটাকে কিছু শুনালো না। নার্স আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললো-
–স্নেহা মাহমুদ পেশেন্টের নাম বলুন। আমার আরো কাজ আছে আপনার পেশেন্টের ঝামেলা নিয়ে বসে থাকতে পারবো না।
লোকটা সিগারেটে টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বলল-
–তাশরীফ সাগ্রত। হিস নেম ইজ তাশরীফ সাগ্রত। প্লিজ রাইট ডাউন দ্যা নেম।
–পেশেন্ট আপনার কি হন?
–ভাই-ব্রাদার টাইপ। নাথিং মোর।
–ওকে থ্যাংক ইউ।
তিন.
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে সাফা। সারারাত জেগে জেগে প্রেমিকের সাথে প্রেমালাপ করেছে। তাই দুপুরে বেজায় ঘুম পেয়েছে। কিছুতেই সাফা উঠবেনা। দুনিয়া উল্টে গেলেও না। সে আজ ঘুমাবেই। ফ্ল্যাটের মেইন দরজা খোলা। স্নেহা বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হতে যেয়ে দরজায় লক করতে ভুলে গেছে।।কেউ একজন দরজা খোলা পেয়ে চুপিচুপি ঘরের ভেতর ঢুকলো। সে যেন এই মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো কখন ঘরের দরজা খোলা পাবে। আর সে সুযোগমতো ঘরে ঢুকবে।।সে হাতে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। হাতে নাইফ, লাইটার এবং ধারালো কাটার।কাধে ‘ম্যাক্স’ ব্র্যান্ডের কালো ব্যাগে। মুখে মাস্ক, চোখে কালো চশমা, পড়নে বডিগার্ডের মতো পোশাক। বড় বড় নেতা মন্ত্রীদের পাশে যেমন স্যূট-বুট পড়া লোক থাকে তাকে দেখতেও তেমনি লাগছে। সে কি গুপ্তচর? নাকি বেশভূষী সন্ত্রাসী? তার মেরুদন্ডের সাথে ভারী বুলেটভর্তি পিস্তল রাখা। পিস্তলটা কোমরের বেল্টের জোরে আটকে আছে। স্যূটের আড়ালে লুকানো পিস্তলটা ঢেকে গেছে। কি সাংঘাতিক ! লোকটা কে? জঙ্গিগোষ্ঠী “আইএস” থেকে বিলং করে নাকি? হতেও পারে দেশের যুবসমাজ পথভ্রষ্ট হয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীদের সাথে হাত মেলাচ্ছে এবং এতে ক্ষতি হচ্ছে সমাজ। ধ্বংস হচ্ছে পুরো দেশবাসী। সাফা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হুশ তার একদম নেই। লোকটা জুতা পায়ে ধীরে ধীরে প্রতিটা রুম এনালাইসিস করতে লাগল। আঙ্গুল দিয়ে গুণলো। এক, দুই, তিন, চার…টোটাল চারটা রুম এ ফ্ল্যাটে। দুইটা রুম পাশাপাশি উত্তর দিকে। অপর দুইটা রুম পাশাপাশি দক্ষিণ দিকে। এদের যেকোনো দুটো রুমে ওয়াশরুম এ্যাটাচ্ করা সম্ভবত, কেননা ড্রয়িংরুম ও ডাইনিং স্পেসে ওয়াশরুমের আলাদা ডোর নেই। লোকটা ড্রয়িং স্পেসে দাড়িয়ে আছে। হাতের বা-দিকে রান্নাঘর। ডান দিকে খাবারঘর অর্থাৎ ডাইনিং রুম। পকেট থেকে ছোট ডায়েরী বের করে কলমের মাথায় ক্লিক করে নোট করা শুরু করলো। ঘরে যা যা বিদ্যমান সবকিছুর নোট ডায়েরীতে তুলে নিলো। কলম বন্ধ করলো। উকি দিলো সাফার রুমের দিকে। খারাপ হাসি দিলো সে। হাসিটা কত খারাপ তা একটা মেয়ে দেখলে হাউমাউ করে চিৎকার করতো। নরমাল ভাষায় বলে “ডেভিল স্মাইল টাইপ”।বাংলায় বলে “শয়তানি হাসি”।। বিপদ বুঝি ঘিরে ধরলো! আর দেখি রক্ষে নেই!
সাফা সাদার মধ্যে নরমাল কামিজ পড়ে ঘুমিয়েছে। সাদা ঢোলা পায়জামা। উপুড় হয়ে বালিশ আকড়ে গভীর ঘুমে লিপ্ত সাফা। কেমন বিপদের সাইরেন বাজিয়ে তার দিকে ঝুঁকে আছে সাফা তা জানে না। শীতল ঠান্ডা কোমল মেয়ের মতো ঘুমিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখ ঢেকে দিয়েছে, পিঠেও তাই হয়ে আছে। মেয়েটার চুল ঘন ও লম্বা। ডানপায়ে পায়েল। লোকটা পায়েলের দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ফর্সা চামড়ার উপর পায়েলের ঝুনঝুন বোটা অপরূপ সুন্দর লাগছিলো। ইচ্ছে করছিলো সাফাকে বিছানায় বসিয়ে ওই পায়েলটা নিজের হাতে পড়িয়ে দিতে। ফ্লোরে হাটুগুজে ফর্সা নরম পা-টা হাটুতে বসিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখতে। কিন্তু ইচ্ছা, ইচ্ছা হিসেবেই রইলো। প্রকাশ পেলো না, ছুয়ে দেখা হলো না। মনের বাসনা বাস্তবায়িত হলো না। লোকটা গভীর শ্বাস ছেড়ে বিছানায় আস্তে করে কাধের ব্যাগটা রাখলো। ব্যাগের সবচেয়ে উপরের ও বড় চেইনটা খুলে একটা শিশির বোতল এবং একটা রুমাল বের করলো। শিশির মুখ দাত দিয়ে খুলে ঝপাঝপ তরল কিছু রুমালে ভরিয়ে নিলো। ব্যস কাজ শেষ। শিশি ফেলে রুমাল হাতে সাফার দিকে এগুলো। সাফা অবুঝ মেয়ের মতো ঘুমিয়ে আছে। নাকে ছোট্ট হীরের চিকচিক তারার নথ। শখ করে বানানো। নথ সবাইকে না মানালেও সাফার উপর কলমের কালিও যেন অদ্ভুত সুন্দর লাগে। জগতের সবকিছুই তার জন্য সুন্দর এবং সে অপ্সরী। লোকটা বিছানার উপর হাটুতে ভর দিয়ে সাফার মুখের দিকে ঝুকলো। হুট করেই রুমালটা মুখ বরাবর চেপে ধরলো। সাফা ঘুমের ঘোরে তাকিয়ে কিছু দেখবে তার আগেই দাপাদাপি করে বেহুশি হালে ঢলে পড়লো। উপস্থিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সাফা। কেটে কুচিকুচি করলেও হুশ-তাল কোনোটাই থাকবেনা। থাকবেনা সাফা নামের শেষ কোনো চিহ্ন।
“পছন্দের জিনিস আমাকে ইগনোর করে অন্যকে কেয়ার করলে কষ্ট আমার হবেই। পছন্দের জিনিস আমার, কেবল একমাত্র আমার। কথা মানলে জীবিত, না মানলে মৃত। খুজঁতে চেষ্টা করবেনা, পরিণাম ভালো হবেনা। ভালো না আমি। চ্যালেঞ্জ করবেনা।”
নীল কাগজে চিরকুট ছেড়ে দিলো। সাফার দিকে খারাপ হাসিতে তাকালো। সেই তথাকথিত “ডেভিল হাসি”, “শয়তানি হাসি”।কি করবে সাফার? বস্তাবন্দি কুটিকুটি? খুন? সাফার মতো একগুঁয়ে মেয়ে কখনো তার আরিফকে ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরবে না। আরিফ তার ভালোবাসা তার প্রেম। কিছুতেই সাফা মানবেনা!
চার.
দুপুর গড়িয়ে সূর্য ডুবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো।ফুপি আমার সাথে পাশের সিটে বসে আছে। সোহেল ভাই আড্ডা দিতে চলে গেছে। উনি আর আসবেনা। বিপরীত দিকের সিটে বসে আছে লোকটা। পা তুলে মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। নার্সের ফর্ম ফিলাপের পর থেকে টু শব্দ করিনি। সে-ও নিজে থেকে কিছু বলতে আসেনি। নাম স্বাধীন। পুরো নাম জানিনা। সাগ্রত নামের ছেলেটার সাথে এলাকার ভাই-ব্রাদার সম্পর্কে তার। সে একজন বিজনেসম্যান, কাপড়ের ব্যবসা করে। এইটুকু তথ্য আমি ফুপির তদন্ত কমিটির মাধ্যমে জেনেছি। ফুপি হাসপাতালে এসেই লোকটাকে নানা প্রশ্নে পাকড়াও করেছে। সেই থেকে জানা আরকি। সাদা এফ্রনের নার্সটা এসে আমাকে বলল-
–স্নেহা মাহমুদ আমার সাথে আসুন। কিছু জরুরি কথা আছে।
–কি জরুরি কথা? সবার সামনে বলা যাবেনা?
–বুঝার চেষ্টা করুন। চলুন আমার সাথে।
লোকটা এতোক্ষন আমাদের কথোপকথন শুনলেও কোনো কিছু বলেনি। কিন্তু এখন সে উঠে দাড়ালো। নার্সকে বলল-
–পেশেন্টকে নিয়ে কিছু বলার থাকলে আমায় বলুন। অযথা বাইরের মানুষকে নিয়ে টানাটানি করবেন না।
“বাইরের মানুষ” কথাটা শুনেই ফুপি হুংকার দিয়ে উঠলো। ফুপির মতে তার বিল্ডিংয়ে যারা বসবাস করবে সবাই সবার সাথে মিলেমিশে থাকবে। প্রতিবেশী ভাব কম। পরিবারের ভাবটা বেশি থাকবে। ঠিক পুরোনো আমলের মতো। ফুপি বললেন-
–তুমি বাইরের মানুষ বলে কাকে ইঙ্গিত করছো? আমরা বাইরের মানুষ? শোনো! তুমি ছেলেটার কি হও না হও তোমার মধ্যে থাকুক। ছেলেটা আমার বিল্ডিংয়ে খালা নিয়ে ফ্ল্যাটে থাকে এটাই বেশি। বাইরের মানুষ বলবে না।
–সরি আন্টি। আমি কষ্ট দিতে চাইনি। কাইন্ডলি আপনার মেয়েকে বলুন দূরে থাকতে।
–ও দূরে থাকতে যাবে কেন? সমস্যা কোথায়?
–আন্টি প্লিজ বাড়াবাড়ি করতে চাচ্ছি না। আমি ঝগড়া করতে প্রস্তুত নই।
–ঝগড়া কে করছে ? নার্স এসে জরুরি কথা বলতে চাচ্ছে, তুমি আমাদের বাইরের মানুষ বলছো! এই তোমার শিক্ষা?
–আন্টি শিক্ষার কোয়ালিফিকেশনের টপিক না উঠালে ভালো হয়। আমি না শিক্ষাটা অন্যভাবে প্রকাশ করি যেটা সবার ক্ষেত্রে ভালো লাগে না। আশাকরি আমাকে ওইদিকটা বোঝাতে বাধ্য করবেননা।
নার্স খামোখা ফ্যাসাদে ফেসে গেল। একবার স্বাধীনের দিকে একবার ফুপির দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলছে। আমি ঝগড়ার মাঝখান থেকে সরে এসে নার্সকে নিয়ে চলে এলাম। নার্স ডক্টরের কেবিনে ঢুকিয়ে বাইরে চলে গেল। ডক্টর আমার সামনের চেয়ারে বসে আছে। চোখে সিলভার রঙের চশমা আটা। মাথায় চুল কম। তালু খালি। টেবিলের নেমপ্লেটে দেখে বুঝলাম সিনিয়র সার্জন। সে আমাকে চোখ বুলিয়ে বললো-
–পেশেন্ট যে নরমাল না জানেন? জানলে কি বলবেন?
–আঙ্কেল ‘নরমাল না’ বলতে কি বুঝাচ্ছেন আমি বুঝিনি। আপনিই তো ডিক্লেয়ার করলেন ছেলেটা আশঙ্কামুক্ত।
–অফ কোর্স,বলেছিলাম। আমি যে কথাটা বলবো তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার। ধাক্কা খাবেন।
–মানে? কিসের ধাক্কা? কি বলতে চাচ্ছেন?
–পেশেন্টের নাম তাশরীফ সাগ্রত। এ্যাজ টুয়েন্টি ফাইভ এরাউন্ড হবে। বডি ফিচার অল পার্ফেক্ট। হি ইজ এ্যাহ্যান্ডসাম গায়, গুড লুকিং ফেস এন্ড হোল বডি শেপ। বাট….
–সাগ্রত আমার কিছুই না। তার সাথে কোনো আত্মীয়তা নেই। আমায় এসব কেন বলছেন?
চোখের চশমা ধীরেসুস্থে খুলে রাখলেন আঙ্কেল। দুইহাতের কনুই টেবিলের উপর রেখে জোরে শ্বাস ছেড়ে দিলেন। মনে হলো ঝামেলাগুলো নিশ্বাসের সাথে বের হলো। ঝড়ের প্রথম ধাক্কা কেমন হবে ঠাওরাতে পারছিনা। ভালো কিছু বোধহয় আঙ্কেলটা বলবেন না।
–ছেলেটার বডিতে তিনটা জায়গায় স্টিচের চিহ্ন আছে। শরীরের বিভিন্ন পার্টে স্টিচের চিহ্ন। কিছু বলতে পারবেন এ বিষয়ে ?
হা মেরে অবাক হবো নাকি ধাক্কা সামলাতে নিজেকে ঠান্ডা রাখবো? ডক্টর যা বললো কানের পর্দায় ঝি ঝি শব্দ শুনছি। তিনটা জায়গায় সেলাই মানে কতো ভয়ঙ্কর অবস্থা তা কেউ বুঝবেনা! সাগ্রত নামের নতুন ভাড়াটিয়া ছেলের শরীরে স্টিচ! ছেলে কি দৌড়ঝাঁপ বেশি করে?খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে? শরীরে তিন অংশে সেলাই কিভাবে পড়লো? খুটিনাটি সব প্রশ্ন এসে আমার মাথায় জমাট বাধলো। আঙ্কেল আমার ভাবনার চাদরে ফুটো করে বললেন-
–মাথার রাইট সাইড। কানের ওখানে টানা চারটা স্টিচের দাগ আছে মিস স্নেহা মাহমুদ। ডিপলি কাটার সেলাই। ক্যান ইউ এক্সপ্লেন?
-চলবে
-Fabiyah_Momo