#ভুলবশত♥
#PART_18
#FABIYAH_MOMO🍁
চোখ খুললাম। কেমন বীভৎস অন্ধকার! রূহ কাপিয়ে দেওয়ার মতো অন্ধকার!! কোথায় আছি আমি? কোথায়? অজস্র প্শ্নের ভীড়ে মাথা গুলিয়ে আসলে একটু পর, মনে পড়ে আমি গাড়িতে করে সাগ্রতের সাথে কোথাও যেনো যাচ্ছিলাম। জঙ্গলে ভেতরে হাইওয়ের রাস্তাতে স্পিড গাড়িতে ছিলাম। হঠাৎ ঝড়ের বেগে কোত্থেকে কি আসলো, সাগ্রত সহ আমি আঘাতে লিপ্ত হই।। হ্যাঁ! আমরা গাড়িতেই ছিলাম! আর পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিলো! সাগ্রতের মাথা ফেটে বামপাশ জুড়ে রক্ত ভেসে যাচ্ছিলো। ও মাথায় হাতচেপে ড্রাইভ করছিলো। খুব অস্থির দেখাচ্ছিলো! চেচাচ্ছিলো! মূহুর্ত্তের মধ্যে একটা গাড়ি ধাক্কা এসে আমাদের ওভারটেক করলো, তারপর সাগ্রতকে হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে পেটাতে নিয়ে যাচ্ছিলো।। আমি ঝাপসা দেখতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।। পুরো ঘটনা একবার ফ্ল্যাশব্যাক করলাম! সাগ্রত আমার সাথে নেই! ও কোথায় গেলো? বেহুশ হওয়ার পূর্ব মূহুর্তে দেখেছিলাম সাগ্রতকে লাঠি পেটা করছিলো! শার্ট চুবিয়ে রক্ত বেরুচ্ছিলো! আমাকে গাড়ির মধ্য থেকে বিশালদেহীর দুজন টেনে নামালো! উফফ ! মাথা ব্যথা করছে! কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে মাথা! চিনচিন করে ব্যথা করছে! আমার কপাল জুড়ে চোখের সামনে চুলের বাহার এসে পড়েছে। চুলের কারনে অন্ধকারের ঘনত্ব আরো বেশি লাগছে।আমি ঠিক করে সামনের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিনা। কোথায় আছি বুঝতে পারছিনা। প্রচুর অন্ধকার।। আমি নড়াচড়া করার তীব্র চেষ্টায় আছি। কিন্তু আমাকে শক্ত করে কিছুর সাথে বেধে রেখেছে। চুল সরানোর জন্য ডানে-বামে মাথা ঘোরালাম।। চুলগুলো সামনে থেকে সরে গেল। আমি পরিস্কার করে দেখলাম, একটা ছোট্ট ঘরে আমাকে চেয়ারের সাথে হাত-পা বেধে আটকে রেখেছে। রুমটায় প্রবেশ পথ একটা, জানালাও একটা। দরজাটা লোহার জং ধরানো পুরোনো আমলের। আর জানালাটা খুব ছোট। এতোই ছোট, একটা বিড়াল কেবল ঢুকতে পারবে ভেতরে। সেখান থেকে উজ্জ্বল আলো ইনিয়ে বিনিয়ে আসছে। আলোর পরিমাণ অন্ধকার ঘুচাতে পারছেনা। বাইরে থেকে শুধু আলোর নামে নিয়ন বাতির কৃত্রিম আলো আসছে।। ঝি ঝি পোকার তাক লাগানো শব্দ আসছে বারবার।। ঘুট্ঘুটে অন্ধকার থাকা ছোট রুমটায় ভুতুড়ে টাইপ আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফ্লোরে ধূলোবালির স্তুপ। রুমের চারকোণা জুড়ে মাকড়সার জাল। ভ্যাপসা গা গুলানো গন্ধ। রুমে অক্সিজেন লেভেল খুব কম, নিশ্বাস হয়ে আসছে বন্ধ। আমি শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য মুখ হা করে শ্বাস নিচ্ছি। এতোক্ষন কোনো সমস্যা ফেস করছিলাম না। হঠাৎই ব্রেন আমার অক্সিজেন ঘাটতির কথা খুব করে এনালাইসিস করলো। তার সুবাদে এখন আমার শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটছে।।
চেয়ারের দুপায়ের সাথে আমার দু’পা নাইনলের দড়ি দিয়ে বাধা। চেয়ারের হাতলের সাথে আমার দু হাত চিবিয়ে বাধা। শত চেষ্টা করলেও যে দড়ি ছিড়ে বেরুতে পারবো না… জানি! হাল ছেড়ে বেজার মনে মাথা চেয়ারের সাথে পিছনদিক করে হেলে দিলাম। হঠাৎ রুমের মধ্যে খুটখুট শব্দ হলো! শব্দটা হয়তো ইদুর বা বিড়ালের হবে। আমি চেক করার জন্য মাথা উঠিয়ে দেখলাম না। আবারো খুটখুট শব্দটা হলো! কিন্তু এবার শব্দটা বেশি জোরে হলো! টানা দ্বিতীয়বার কোনো শব্দ পেয়ে মাইন্ড আমার সেইদিকে ডাইভার্ট হয়ে গেছে। আমি মাথা তুলে অন্ধকার ভ্যাপসা গন্ধে পিটপিটে তাকালাম। আবছা আলোয় বুঝা যাচ্ছে রুমের এককোণায় কিছু নড়েচড়ে উঠছে।। ভয় করছে খুব। আমি একা। কেউ নেই। রুমে তাহলে জন্তু জানোয়ার? হিংস্র কোনো পশু? মাংস খুবলে খাওয়ার মতো জানোয়ার? জানি না কিন্তু খুব ভয় করছে। আমি হাসফাস করতে করতে একপর্যায়ে কাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
–ককে? ককে ওখখানে?
উত্তর দিলো না। এখনো নড়ছে। এবার আগের চেয়ে বেশি নড়ছে। অন্ধকার এতো! কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। আমি মনে মনে সাগ্রতকে চাচ্ছিলাম। প্লিজ আসো! একটা বার আসো! আমি ভয় পাচ্ছি! আমাকে ভয় কাবু করেছে! দম বন্ধ হচ্ছে, আমি মারা যাবো, প্লিজ আসো! সমস্যা বাধলো মনের কথা জানার সিস্টেম সামনের পক্ষের নেই। সাগ্রত জানতে পারলো না। জানতে পারলো না আজ আমি তাকে চাচ্ছি! বস্তুটা কি জানি না, নড়তে নড়তে আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অন্ধকার সেই বস্তুটাকে ঘিরে রেখেছে। সেই বস্তুটা যতই কাছে আসছে, অন্ধকার আরো ঘনিয়ে আসছে। আমার কামিজ ভিজে চুপচুপে হচ্ছে। আমি অস্বাভাবিক ঘামছি, অনেক বেশি ঘামছি। শরীরে ঠান্ডা বরফের মতো কাতরতা অনুভূতি হলো। বস্তুটা আমার খুব কাছে চলে এসেছে। আমি যে চিৎকার দিয়ে হাকডাক দেবো! আমার সেই জো নেই। আমি ভয়ে গলার স্বর পেচিয়ে ফেলেছি। চিল্লাচিল্লি করতে পারছিনা।। গোঙানির মতো দুটো আওয়াজ বের করা ছাড়া এক্সট্রা ওয়ার্ড বের হলো! বুকের উপর পাথর ফেলে কেউ দাড়িয়ে আছে বুঝি! খুব বেশি ব্যথায় ব্যথিত হয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।। কে সে? কি ওই বস্তুটা? কেন আমার দিকে আসছে? একটু পর বস্তুটা আমার পােয়র কাছ থেকে ধীরগতিতে উঠলো।। উঠার গতি দেখে বুঝতে পারলাম ওটা জন্তু না! একজন মানুষ! কে ও? সাগ্রত? সে উঠে বসলো। অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছেনা। চোখ বড়বড় করলেও কিচ্ছু বুঝার সক্ষমতা নেই। আমি হাত নাড়াচাড়া করতেই সে আমার কোলের উপর মাথা ছেড়ে দিলো। আমি বিদ্যূৎয়ের গতিতে চমকে উঠলাম। তার মাথা আমার কোলে। আমি থরথর করে কাপছিলাম। আমার সাথে কে বা কারা কি করছে? হঠাৎ আলতো স্বরে বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী….ইউ আর কিডন্যাপ্ড…. ইউ আর কিডন্যাপ্ড স্নেহময়ী, তোমাকে আমি শেষ পযর্ন্ত ওদের হাত থেকে বাচাতে পারলাম না….ওরা তোমায় খুন করে দেবে! আমি…আমি…বাচাতে পারলাম না..স্নেহময়ী…
চেয়ারে বাধা অবস্থায় আমার কোলে মাথা রেখে কাদতে লাগলো সাগ্রত। হুহু করে না কাদলেও ফিসফিস করে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি। আমার মামা আমাকে তুলে নিয়ে খুন করতে এনেছে। সাগ্রত খামোখা আমার ঝন্ঞ্চালে ফেসে নিজের জীবনও বাজিতে রেখেছে। ও ডিল কমপ্লিট করেনি, আমাকে যথাসময়ে মারেনি। তার বদৌলতে হয়তো সাগ্রতকেও আস্তো রাখবেনা। টুকরো টুকরো করে মেরে ফেলবে। আমাকে সম্ভবত জ্যান্ত অবস্থায় কবর দিবে।। আমি ঢোক গিলে নরম গলায় বলে উঠলাম-
–আমাদের হাতে কতক্ষন সময় আছে সাগ্রত? কিছু কি এ বিষয়ে জানো?
সাগ্রত কোল থেকে মাথা তুলে বলে উঠলো-
–জানি না, খুব বেশি সময় নেই। অচিরেই খুন হতে চলছে আমাদের স্নেহময়ী।
আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। শ্বাস ফেলা ছাড়া কিচ্ছুটি দেখছিনা। সামনের রাস্তা সব বন্ধ দেখছি। সাগ্রত ভরা গলায় বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী? ভয় পাচ্ছো? আমি একটা রাস্তা বের করেছি স্নেহময়ী। তাতে হেল্প লাগবে! প্লিজ যা বলবো লাস্ট বারের রেখো!
আমি কপাল কুচকে কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–কি?
–আমার উপর বিশ্বাস আছে? প্লিজ উত্তরটা দাও!আমার জানা জরুরী!
–তোমার কি অসময়ে মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে! কি যা তা বলছো !
–প্লিজ ! আমি মোটেও ইয়ার্কি করছিনা স্নেহময়ী! উত্তর দাও!
–একটু পর মরতে যাচ্ছি! মামা আমাদের কবজা করে বন্দি করে রেখেছে! তুমি বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা তুলছো? আর ইউ ম্যাড?
–প্লিজ স্নেহময়ী! কাইন্ডলি অফ যাও! আমি ঠাট্টা করছিনা। ঠাট্টা করার মজলিশে নেই! কথাটা জিজ্ঞেস করেছি অবশ্যই কোনো না কোনো প্ল্যান করেই জিজ্ঞেস করেছি! প্লিজ।।
–কি প্ল্যান হ্যাঁ? কিসের ফালতু প্ল্যানের কথা বলছো? সিরিয়াল কিলারের মাথায় খুনাখুনি ছাড়া ভালো জিনিস আসে? বলো?
–লেট মি কারেক্ট! ইটস নট সিরিয়াল কিলার! আ’ম এ্যা কন্টাক্ট কিলার! টাকার জন্য মানুষ মারি! আমি কোনো সাইকো না, সিরিয়াল কিলিং করবো! আমি যা আস্ক করেছি কাইন্ডি দোহাই লাগি আন্সার দাও! ইয়েস অর নো তে বলো! বললে বলো নইলে আমার সঙ্গেই মরো! এই লাইফে আমার তো হতে পারলে না! শুনেছি দুনিয়ায় যাকে ভালোবাসবে পরের জীবনে তাকেই পাবে! তোহ? এভাবে না হোক ওভাবেই বেস্ট! কি বলো? এ্যাটলিস্ট তোমাকে তো পাবো! এনাফ! আর কিচ্ছু লাগবেনা!
আমার তর্কবিতর্ক করতে একদম ভালো লাগেনা! আমি আর কথার আগ না বারিয়ে একটু চুপ থেকে বলে উঠলাম-
–হ্যাঁ তোমায় বিশ্বাস করি। একটু আকটু করি। বেশি করি না। বেশি বিশ্বাস কাউকেই করিনা।
সাগ্রত হালকা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো-
–ওকে। একটুতেই চলবে।
সাগ্রত কোল থেকে মাথা তুলে আবার সেই আগের জায়গায় চলে গেল।ওর হাত উল্টো করে বাধা, পা শিকলে চাবি সিস্টেমে আটকানো। সাগ্রত দরজাটার কাছে যেয়ে পা দিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলো। ম্যাথের সমীকরণ না বোঝলে যেমন অবস্থায় পড়তে হয়, আমি সাগ্রতের প্ল্যানিংয়ের কাজ দেখে ওভাবে বসে আছি। কোনো সমীকরণ মিলাতে পারছিনা। ধাক্কাধাক্কি করতে করতেই ক্যাচচ করে দরজা খুলার আওয়াজ হলো। আমি জড়ো হয়ে ঠিক করে বসলাম। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো একজন মোটা লোক। সে হাত বারিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো। লাইট জ্বালাতেই দেখলাম লোকটা দেখতে পুরো কষাইয়ের মতো। পড়নে প্যান্ট, গায়ে গোল গলার গেন্জি, হাতে বন্দুক।। সাগ্রতকে দেখে লোকটা হুংকার দিয়ে বলে উঠলো-
–তোর সাহস তো দেহি কম না ! একটু পর জবাই করবো! শালা, তুই দরজা ধাক্কাস!
সাগ্রত মাই ডিয়ার টাইপ হাসি দিলো। হাসি রেখেই বলে উঠলো-
–ভাই? মেয়েটার দিকে তাকায়া দেখছেন? কি চিজ দেখছেন? ফিগার হট! লুকিং হট! ড্রেসআপ আগুন! ওফ! পুরাই আগুন ব্রো! টেস্ট করবেন না? মেরেই তো ফেলবেন! একবার চেখে দেখলে ঠিক হয়না?
কান টেনে ঠাটিয়ে চড় দেওয়া উচিত সাগ্রতকে!কি থার্ড গ্রেডেড বুদ্ধি করেছে! ছিঃ! থু! আমার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি? ছিঃ! নিজের গালেই চড় দিতে ইচ্ছে করছে! কাকে বিশ্বাসের কথা বললাম! সাগ্রতের কথা লোকটার মাথায় ফুড়ফুড় করে ঢুকে গেল। লোকটা সরু চোখে আমার দিকে আপাদমস্তক বুলিয়ে দেখছে। ঘিনঘিন করছে শরীর! কি বাজে দৃষ্টি! বিশ্রী ভাবে দাত বের করে মাথা হেলদুল করছে কষাইটা! আমার দিকে তাকিয়ে সাগ্রতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো-
–মালটা ধরলে কষ্ট পাইবো না? দেইখাই তো জিভে পানি আইসা পড়ছে।। বোম্বা মরিচের রসগোল্লা! কি রে? কস না কে? দরজা লাগায়া এইহানে কামডা করলে উচিত হইতো না?
সাগ্রত গদগদ হয়ে বলে উঠলো-
–যেখানে ইচ্ছা কাজ করেন। আমি দেখার কেউ না। আমাকে খালি উদ্ধার করেন ভাই। আমি এই মেয়ের সাথে এক সেকেন্ডও থাকতে চাইনা। উদ্ধার করে উপকার করেন, আরে হাতে মেয়ে ধরেন।।।
লোকটা মারাত্মক বোকা! ব ও-আকার বো, ক আকার কা, ইজুকেল টু বোকা! ভোটকা বোকা কোথাকার সাগ্রতের চালবাজি এক চুলও বুঝলো না, উল্টো সাগ্রতের সব বাধন খুলে সাগ্রতকে রুমের দরজা লাগিয়ে চিপা রাস্তা ধরে পালিয়ে যেতে বললো। লোকটা আমার কাছে এসে নাক দিয়ে গায়ের গন্ধ নিচ্চে। সাগ্রত দরজার দিকে ধীর পায়ে এক পা করে এগুচ্ছে। লোকটার গা থেকে মদের গন্ধ পাচ্ছি। আমি ঠোটে ঠোট চেপে সাগ্রতের পানে আকুতি দৃষ্টিতে আকিয়ে আছি।। বিশ্বাস কি অবিশ্বাসী হলো? ও যে চলে যাচ্ছে!! আমার দিকে ফিরেই তাকাচ্ছেনা! লোকটা তার হাত দিয়ে আমার ঘাড়ের পেছনে চুল সরাতেই চোখ খিচে বসে রইলাম। সাগ্রতের পায়ের গতি হঠাৎ থমকে গেল। লোকটার হাতও আমার ঘাড়ের উপর স্পর্শ হলো না! নিরবতা শূন্য পরিবেশ লাগলো। আমি চোখ খুলে দেখি সাগ্রতের হাতে খুব ছোট্ট পিস্তল! পিস্তল থেকে ধোয়া উড়ছে।। আমি তৎক্ষণাৎ মারা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি লোকটা ফ্লোরে গুলি খেয়ে পড়ে আছে। একদম স্ট্রেট নিশানা মাথার ভেতর কপালের মাঝ বরাবর! লোকটা দুহাত মেলে ফ্লোরে পড়ে আছে, চোখের পাতা খোলা স্থির রয়ে গেছে। আমার হাতের দড়ি খুলার টের পেলাম। আমি মাথা ঘুরাতেই সাগ্রত দড়ি খুলে বলে উঠলো-
–স্নেহময়ী বেটা একটা গাধা! এমন গাধা দলে থাকলে জেলের ভাত খুব শীঘ্রই খাওয়া লাগবে! এজন্য মেরেই দিলাম। তোমার মামার একটু উপকার করলাম। কি ঠিক করেছি না?
আমি ঘাপটি মেরে বসে আছি। সাগ্রত হাতের বাধন খুলে নিচে ঝুকে পায়ের বাধন খুলছে। আমার চুপ থাকা দেখে বলে উঠলো-
–তোমার মামা নিজেই গাধামির কাজ করেছে জানো? আমাকে রেখে গেছে তাও আমার বডি চেক করেনি! কি গাধার গাধা দেখছো! কোমরের সাইডটা চেক করলেই বাশঁ খেতাম, বাট লাক! চেক করেনি।
আমার পায়ের বাধন খুলে উঠে দাড়ালো সাগ্রত। আমার দিকে হাত বারিয়ে হাতে হাত রেখে ধরতে বললো। আমি দৃষ্টিগোচর করে হাত দিলাম না, চেয়ারে ভর দিয়ে উঠে দাড়াতেই ধপ করে বসে পড়লাম। আমার শরীরে হাড়ে হাড়ে ব্যথা করছে। আমি চেয়ার লাগাতার ভর দিচ্ছি কিন্তু উঠতেপারছিনা। সাগ্রত হাতে তুড়ি বাজিয়ে আমাকে থামতে বললো-
–বেশি বুঝতে যাও কেন? হাত দিলাম ভালো লাগেনা? দেখি, তোমার হাত ধরতে হবেনা। দাড়াও!
সাগ্রত আমাকে কোলে তুলে রুমের ভেতরের পথে হাটা ধরলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। সাগ্রত রুমের বাইরে যেয়ে উকি দিয়ে রাস্তার মতিগতি বুঝলো। তারপর আবার হাটা ধরলো।
ওর ডিরেকশন দেখে মুগ্ধ হতে হয়! কোন কোন দিক দিয়ে রাস্তা ধরে বেরিয়েছে! শেষ গন্তব্য সেই আস্তানা থেকে বের করে আমাকে জঙ্গলের রাস্তা ধরে হাইওয়েতে এনেছে। হাইওয়ের রাস্তায় সুনশান নিরবতা। দূর দূরান্তে কুকুর ডাকার চিৎকার শোনা যাচ্ছে। হরর ফিল্মের মতো অন্ধকার পরিবেশ। গা ছমছম করে উঠবে মাঝেসাঝে। সাগ্রত আমাকে কোল থেকে নামিয়ে রাস্তার পাশে থাকা গাছের গুড়ির উপর বসিয়ে দিয়েছে। নিজে একহাতে ছোট পিস্তল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। প্যান্ট থেকে কোমরের বেল্টটা খুলে একটা মিনি সাইজের ডিভাইস বের করলো। বেল্ট হাতে ডিভাইসটা নিয়ে আমার কাছে বেল্টটা আমার হাতে দিয়ে বললো-
–স্নেহময়ী বেল্টটা ধরো তো! কাজটা করছি একটু হাতে রাখো, ওয়েট করো!
ডিভাইসের বোতামে ক্লিক করতেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো। সবুজ বাতি জ্বলতেই ডিভাইস থেকে আওয়াজ আসলো,
‘স্যার আপনি শুনতে পাচ্ছেন? স্যার! স্যার আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? হ্যালো, হ্যালো..’
সাগ্রত বলে উঠলো,
–আর্জেন্ট হাইওয়ের ফরেস্ট ট্রেকে গাড়ি পাঠাও! আর্জেন্ট! আরেকটা কথা আমার ইনফরমেশন বস কিভাবে পেলো, রিপোর্ট রেডি করো! এভ্রি কালেকশন আমার চাই! আমার সাথে ধোকাবাজির কলিজা কার হলো! দেখতে চাই! তার কলিজা যদি টেনে খুবলে না ছিড়ি!! কুইক হারি আপ!
–ওকে বস!
সাগ্রত বড় মাপের কিলার আজ প্রতিটা কর্মে প্রমান পাচ্ছি। প্রথমে ব্রেন দিয়ে কাজ, দ্বিতীয় কোমরে গুজা পিস্তল, গুলির শব্দ না শোনার জন্য সাইলেন্সার বসানো ছোটখাট পিস্তল, তৃতীয় কোমরের বেল্টে মিনি ওকিটকি সিস্টেম! হি ইজ এ্যা ধামাকা! প্রতি স্টেপে ফায়ার! সাথে আরো কি কি নিয়ে থাকে কে জানে? গোটা দুনিয়া নিয়ে বেড়ায় বুঝি! আধ ঘন্টার মাথায় একটা গাড়ি আসলো! তাও আবার এম্বুলেন্সের সাদা ‘Emergency’ গাড়ি। উপরের লাল নীল বাতি জ্বালানো প্যা পু শব্দ করা সাইরেনটা বন্ধ। গাড়িটা এসেই পেছনের দরজা খুলে দিলো। সাগ্রতকে একটা কমান্ড স্টাইলে স্যালুট দিলো! আমার দিকে আসতে নিলে সাগ্রত হাত প্রসার করে থামিয়ে দিলো, আমার দিকে আসতে বারন করে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো-
–আমি হ্যান্ডেল করতে জানি! দূরে থাকো! শোনো? কালকের মধ্যে আমার হোল রিপোর্ট ডেস্কে দেখতে চাই। আমার নেক্সট ঠিকানা কেউ যেনো না জানে! বুঝা গেছে? কথাগুলো রিপিট যেনো ফার্দার করতে না হয়! মাইন্ডে ঢুকাও!
তাশরীফ সাগ্রত! আমার সাথে এক রকম! বাইরের দুনিয়ায় আরেকরকম! আমার সাথে নরম! বাইরের দুনিয়ায় চরমতম! ভুলবশত প্রেমে পড়ে মানুষগুলা কি প্রিয়জনের কাছে এমন??? প্রিয়জনের কাছে কোমলতা ! সবার কাছে অন্যরকম??
-চলবে
-Fabiyah_Momo
#বিদ্র : রহস্যজট এবার পুরোই খুলবে। জাস্ট করুন অপেক্ষা ♥কে এই সাগ্রত? কিলার নাকি দেশওয়ালা? (দুঃখিত অনলাইন এক্সাম চলছে তাই গল্প দিতে লেট করেছি)