বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
2491

#বেখায়ালি_ভালোবাসা
#পাট_১৩
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
.
সকালে মেঘের ঘুম ভেঙ্গে তাকিয়ে দেখে ও সৈকতের বাম হাতে শুয়ে আছে । আর সৈকত তার ডান হাতটা দিয়ে তাকে জড়িয়ে রেখেছে।
রাতের নিজের পাগলামির কথা মনে করে নিজ মনে হেসে ওঠে মেঘ।
সবটা মনে নেই কিন্তু কিছু কিছু মনে আছে। আচ্ছা সবার কি এমন হয় এ্যালকোহাল খেলে ??নাকি প্রথম খেয়ে ছিলাম তাই নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারিনি।
কি কি বলেছি তা কিছুই তো মনে পড়ছে না।
মেঘ সৈকতের ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে আলতো করে নিজের বাম হাত টা মুখে বুলিয়ে দেয় ।
কি শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে সৈকত!!
ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখলেই কেমন যেন ভালবাসতে ইচ্ছা করে ।
এই শীতেও সৈকতের ঠোঁটের উপর একটু একটু ঘাম জমে আছে। অনেকের মুখে শুনেছি যে পুরুষদের ঠোঁটের উপরে ঘাম হয় তাদের বউ তাদের অনেক ভালবাসে ।
আমিও সৈকতকে অনেক ভালবাসি কিন্তু ও নিজ থেকে কেন সেটা উপলব্ধি করতে পারে না।
কেন বুঝতে চাইনা যে এ কয়দিনে ওকে কেন্দ্র করে আমি আমার জগৎ গড়ে ফেলেছি। ওকে ছাড়া যে আমার একটা মুহূর্ত ও চলে না।
কি করে বোঝাবো যে ও আমার ভালবাসার একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু ।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো ।
—ম্যাডাম চা নিয়ে এসেছি।
মতি চাচার মেয়ের কন্ঠ ।
মেঘ মনে মনে বিরক্ত হলো । চা আনার আর সময় পেলি না। চিৎকার করে বলতেও পারছেনা যে এখন চা খাবো না।
চিৎকার শুনে যদি সৈকতের ঘুম ভেঙ্গে যায় এ ভয়ে ।
কি সুন্দর করে বরটা আমাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে আর এখন—-
ধুর ।
আস্তে করে সৈকতের ডান হাতটা সরিয়ে মেঘ উঠে কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে ।
মেয়েটা মেঘলার মুখের দিকে একটু সময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললোঃ
—ম্যাডাম চা।
—এখন খাবো না। তুই নিয়ে যা—-
—সকালের খাবার কি রান্না হবে ?
মেঘ একটু ভেবে সৈকতের পচ্ছন্দের মেনু গুলো বলে রান্না করতে।
—আচ্ছা বলে মেয়েটা মুখ চেপে হাসতে হাসতে চলে যায়।
মেঘ মেয়ের শেষ রহস্যময় হাসিটা বুঝতে পারে না।
দরজা আটকে বেডের কাছে গিয়ে সৈকতের কপালে আলতোভাবে একটা চুমু খায় ।
আর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলেঃ
আই লাভ ইউ। আই লাভ উই মোর দ্যান আই ক্যান সে।
মেঘ ফ্রেশ হওয়ার সময় আয়নায় চোখ পড়তেই নিজেই লজ্জা পায় ।
ঠোঁটের লিপস্টিক এবড়ো থেবড়ো হয়ে আছে। চোখের কাজল ও চোখের নীচে লেপ্টে আছে।
চুল গুলো পাগলিদের মত এলোমেলো হয়ে গেছে।
নিজেকে আয়নায় দেখে এবার বুঝতে পারলো কেন তখন ঐ মেয়ে টা ওভাবে হেসে ছিল।
মেঘ গোসল করে বের হয়ে দেখে সংকত তখনও ঘুমাচ্ছে।
তোয়ালে দিয়ে চুল মোছার সময় মেঘের মাথায় একটু দুষ্টু বুদ্ধি খেলে।
মেঘ এগিয়ে গিয়ে নিজের ভেজা চুল বুলিয়ে দিতেই
—এই কি করছো(রেগে)
মেঘ একটু হেসে পিছন সরে আসে
মেঘ আবার এগিয়ে গিয়ে ভেজা চুলের স্পর্শ দিতেই
সৈকত তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে
—এই তোমার সমস্যা কি?তোমার জন্য কি শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবো না???
সৈকতের কন্ঠ শুনেই মেঘের হাসিখুশি মুখটা মুহূর্তের মধ্যে মলিন হয়ে যায় ।
মনে মনে কি ভাবলো, আর কি হলো!!?
মেঘ আস্তে করে বলে সরি।
—কিসের সরি??তোমাদের মেয়েদের এই কথায় কথায় সরি বলা আমার একদম পচ্ছন্দ না। সব কিছুতেই ন্যাকামি ।
—আপনি এভাবে কেন বলছেন??
—তো কি বলবো!??তুমি তো জীবন টাকে সিনেমা মনে করো। এই জন্য সবসময় মাথার মধ্য শুধু রোমান্টিক চিন্তা ভাবনা ।
এই যাও তো এখান থেকে। বলে কোম্বল টা নিয়ে অন্যদিক ফিরে শুইয়ে পড়লো।
আচ্ছা আমি এমন কি করলাম যার জন্য উনি এমন ভাবে রিএ্যাক্ট করলেন!!?
নিজের স্বামি কে ভালবেসে এতটুকু দুষ্টামি করার অধিকার ও কি আমার নেই!!?
এসব ভাবতে ভাবতে কোন রকম একটু সাজগোজ করে মেঘ রুম থেকে বের হয়ে বাগানে হাটতে থাকে।
কিছুক্ষন পর ঝিনুক আর মিতু দৌড়ে আসে ।
—কি হয়েছে ?
—ভাবি একটা খারাপ খবর আছে।
—কি হয়েছে!!?
—অনির সিড়ি থেকে পড়ে পা ভেঙ্গে গেছে।
—কি বলছো তুমি!!?কখন হয়েছে এমন?
—গত কাল সন্ধ্যায় ।
আচ্ছা বেশি চিন্তা করো না । আমরা আজই ঢাকাই ফিরবো।
তোমার ফোনটা দাও । আমার ফোনটা রুমে রেখে চলে এসেছি।
রাতে ঘন কুয়াশার জন্য এখানে সিগন্যাল পাওয়া যায় না।
সকালে একটু সিগন্যাল পাওয়া যায়।
মেঘ ফোনটা হাতে নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে রোজির নম্বরে ফোন দেয়।
একবার রিং বাজতেই ফোনটা রিসিভ করে রোজি।
একটু কথা বলে মেঘ ফোন টা রেখে দেয়।
—কি বললো ভাবি?
—শুধু পা না। মাথায় ও চোট লেগেছে। অনেক রক্তক্ষরন হয়েছে। এখন ক্লিনিকে আছে।
তুমি এক কাজ করো ।
—কি?
তোমার ভাইয়া কে ঘুম থেকে ডেকে তোল।
আমি এদের সকালের খাবার দিতে বলি। তারপর সব গুছিয়ে আমরা বেরিয়ে যাব।
—আচ্ছা।
————**——**——**————
মেঘ দের ঢাকা পৌছাতে বেশি সময় লাগলো না। এয়ারপোর্ট যেয়ে শুধু টিকিট পাওয়ার যতটুকু সময় নষ্ট হলো।
এক সাথে চারটা সিট পাওয়া কষ্টকর হলেও মেঘের শ্বশুরের নাম শোনামাত্র টিকিট হাজির হয়ে গেল।
সবাই এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ক্লিনিকে ছুটে গেল।
কেবিনে ঢুকতেই রোজি মেঘ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
মেঘ রোজিকে কোন রকম শান্ত করে অনির কাছে গেল।
দুষ্ট টা শুইয়ে শুইয়ে ফোনে গেমস খেলছে।
দেখে মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি ওর ।
মেঘ কে দেখেই খুশি হয়ে বললো ছোট মা তুমি এসেছ??
মেঘ কাছে গিয়ে অনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
জানো ছোটমা তোমাকে অনেক মিস করেছি।
মেঘ মুচকি হেসে বললো আমিও আমার ছোট্ট বাবাই কে খুব মিস করেছি।
সৈকত আর ঝিনুক কাছে এসে অনির সঙ্গে একটু কথা বলে রোজির কাছে জিঙ্গাসা করলো কিভাবে কি হলো?
—উপর থেকে দৌড়ে সিড়িঁ দিয়ে নামতে গিয়ে এ অবস্থা। ডাক্তার বলেছে এক সপ্তাহ পর বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু পুরো একমাস বেড রেস্ট নিতে হবে।
কিছুক্ষন পর রোজি সবাইকে বাসায় গিয়ে রেস্ট করতে বললো।
হঠাৎ অনি বললো না,ছোট মা কোথাও যাবে না। আমার কাছে থাকবে।
রোজি এসে অনিকে বোঝাচ্ছে কিন্তু অনির একই কথা।
অবশেষে মেঘ নিজেই বললো সমস্যা নেই ভাবি।আমি আজ থেকে যায় এখানে।
ওরা বরং বাসায় চলে যাক।
মেঘ কথা গুলো বলে সৈকতের দিকে তাকাল কিছু বলে কিনা সেটা দেখার আশায় ।
কিন্তু সৈকত কিছুই বললো না।
ঝিনুক কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল।
মেঘ আশা করেছিল সৈকত হয়তো বলবে ঠিক আছে তুমি থাকো আমি বিকালে একবার আসবো। কিন্তু——
————**——**——**—————
আজ এক সপ্তাহ পরে আজ অনিকে নিয়ে বাসায় ফিরলো মেঘ।
এই একসপ্তাহ অনি মেঘ কে একবারের জন্যেও বাসায় আসতে দেয় নি।
এই এক সপ্তাহে সৈকত মাত্র দুদিন ক্লিনিকে গিয়ে অনির সাথে দেখা করে এসেছিল । তাও খুব অল্প সময়ের জন্য।
মেঘের সাথে তেমন কথা হয় নি। জাস্ট ভাল মন্দ ছাড়া।
বাসায় ফিরেই মেঘ ছুটে গিয়েছিল সৈকতের রুমে । কিন্তু সৈকত বাসায় নেই।
মেঘ এ কদিন ক্লিনিকে থাকলেও ওর মনটা পড়েছিল সৈকতের কাছে। কি করছে? কি খাচ্ছে?ঠিকমত ঘুমাচ্ছে কি না!!?
এসব নিয়ে ভাবতো বেশি।
বাসায় এসে ভেবেছিল প্রিয় মানুষটার মুখ দেখতে পাবে কিন্তু কাজের লোক বললো সৈকত নাকি দুদিন বাসায় আসে নি।
সৈকত দুদিন ধরে বাসায় আসেনি শুনে মেঘের মনের ভিতরটা কেমন যেন শুন্য শুন্য অনুভব হলো।
কোথায় গেল সৈকত তাহলে!!?
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here