#বেখায়ালি_ভালোবাসা,,
#পর্ব_২০
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
.
সৈকত খাওয়া শেষ করে এসে বেলকনিতে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকতে থাকে। আর ভেসে যাওয়া ধোয়ায় কাকে যেন খুঁজে ।
ভাল লাগছে না। হঠাৎ করে চারপাশটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে।
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে পা দিয়ে ঢলে নিভিয়ে দেয় সৈকত।
—ভাইয়া তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।
সৈকত ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিনুককে দেখে বলে ও তুই!!
—কেন তুই কাকে আসা করেছিলি??
—কাউকে না। তা হঠাৎ তুই আমার কাছে কি মনে করে?
—তুই ভাবিকে আনতে যাবি কবে?
—কেন !!কি হয়েছে?
—যেটা বলছি তার উত্তর দে।
—আমি কেন আনতে যাব?আমি কি রেখেআসছি নাকি?
—তুই যাবি না তো কে যাবে !!?তুই না গেলে ভাবি আসবে না।
—কে বলছে তোকে এসব!!?
—আমি জানি। দেখ ভাইয়া এই কয়েকদিনে আমি ভাবিকে যতটুকু কাছ থেকে দেখেছি যতটুকু বুঝেছি ভাবি খুব জেদী আর অভিমানী । ভাবী তোকে অনেক ভালবাসে যেটা তুই হয়তো বুঝতে পারিস না।
—থাক হয়েছে তোকে আর পাকামো করতে হবে না।
—আমি পাকামো করছি না। সত্যি বলছি। তুই কি জানিস তুই অফিসের কাজে বাইরে চলে যাওয়ার পর ভাবী খুব কান্নাকাটি করেছিল। কেন যে সে এত কান্না করেছিল তা আমি জানিনা।
পরে জিঙ্গাসা করতেই বললো বাড়ির সবার জন্য খারাপ লাগছে কিন্তু আমি জানি ভাবি সেদিন মিথ্যা বলেছিল।
—তাহলে সত্যিটা কি?
—সত্যিটা হচ্ছে ভাবী সেদিন তোর জন্য কান্না করেছিল। যখন দেখল তুই সুইটির মত একটা খারাপ মেয়ের সঙ্গে উঠাবসা করিস। আগের দিন তোকে সুইটি এখান থেকে পিক করলো ভাবি সেটা দেখেছিল।
আবার তুই যে সুইটিকে নিয়ে শপিংমলে গিয়েছিলি সেটাও কিন্তু ভাবি জানতো। আবার সেইদিন রাতেও সুইটি তোকে এখানে নামিয়ে দিয়েছিল সেটাও জানে।
—তো??
—দেখ ভাইয়া তুই হয়তো ভাল করে জানিস বাবা যেটা বলে যেটা ধারণা করে সেটা কখনও ভুল হয়না। ঐ মেয়েটা যে ভাল না সেটা কিন্তু বাবা তোকে আকার ইঙ্গিতে অনেক আগেই বুঝিয়ে দিয়েছে । কিন্তু তুই বাবার কথা না শুনে শুধুমাত্র তুই তোর জেদ বজায় রাখার জন্য ঐ মেয়েটাকে তুই তোর কোম্পানিতে চাকরি দিলি আবার তাকে তোর পি এ ও বানালি।
—এত কথা না বলে কি বলতে চাইছিস সেটা সোজাকরে বল।
—আমি তোকে এটাই বলতে চাইছি যে তোর জেদ বজায় রাখতে এবার অন্তত মেঘ ভাবীর জীবনটা নিয়ে কোন ছেলেখেলা করিস না। বাবা তাকে নিজে পচ্ছন্দ করে তোর বউ করে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে এখন তুই বাবার উপর রাগ দেখাতে গিয়ে এমন কাজ করিস না যাতে পরে তোকে আফসোস করতে হয় ।
—তোর কথা শেষ হলে তুই এখন যেতে পারিস।
—হ্যা যাচ্ছি বলেই
ঝিনুক রুম থেকে বেরিয়ে যায় ।
ঝিনুক রুম থেকে বের হতেই সিগারেটের প্যাকেট থেকে আর একটা সিগারেট বের করে দূরদৃষ্টি দিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় সৈকত।
আমি কাকে ঠকাচ্ছি !!?
নিজেকে না অন্যেকে ??
কেন করছি এসব?
মেঘ কে চৌধুরী সাহেব পচ্ছন্দ করেছে বলে ??
নাকি সত্যি আমি মেঘ মন থেকে মানতে পারছি না?
নিজের মস্তিষ্কে একটার পর একটা প্রশ্ন আছড়ে পড়ছে সৈকতের ।
কিন্তু উত্তর !!
কে দেবে ??
সেটাও তো আমাকেই দিতে হবে ।
জীবনের সব হিসাব নিকাশ মেলাতে হবে।
সত্যি তো আমার কোন অধিকার নেই একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার।
আচ্ছা আমি কি সত্যিই মেঘ কে ভালবাসিনা??
যদি ভালই না বাসি তাহলে কেন পায়ের আওয়াজ টা শুনে মনে হয়েছিল এই বুঝি মেঘ রুমে ঢুকে সিগারেটের গন্ধ শুকে কেশে উঠবে ।
আর কেনই বা আমি তাহলে হাত থেকে সিগারেট টা শেষ হওয়ার আগেই ফেলে দিলাম?
আর কেনই বা ওর চলে যাওয়ার কথা শুনে বুকের ভিতরটায় কেমন জানি শূন্যতা অনুভব হচ্ছে।
কেন রুমটা আজ এত খালি খালি লাগছে ?
তাহলে কি আমি সত্যিই মেঘ কে——
না,না আমি যদি মেঘকে ভালবাসতাম তাহলে কেন এতদিন ওর প্রতি আমার কোন ভাললাগা কাজ করে নি ।কেন ওর প্রতি আমার কোন আবেগ অনুভূতি কাজ করেনি।
কেন শুধু মনে হয়েছে আমি ওকে মানবতা/ সহানুভূতি দেখাচ্ছি।
আর মানবতা/সহানুভূতি দিয়ে আর যাই হোক না কেন সংসার গড়া যায় না।
আর সংসার গড়লেও সেই সংসারে কোনদিন সুখ আসে না।
আচ্ছা ঐ মেয়েটা এমন কেন!!
আমি ওকে এত এভয়েড করেছি,অপমান করেছি প্রতিনিয়ত আর ও আমার ছোট বড় সব দোষ গুলো আড়াল করে শুধু নিজের মনের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ করেছে।
ওর জায়গাই অন্যেকোন মেয়ে হলে হয়তো এতদিনে ——-
আর ওর জায়গায় অন্যে কোন মেয়ে হলে বোধহয় সুইটির সাথে আমাকে দেখা নিয়ে আরো অনেক কিছু করে ফেলতো।
কিন্তু মেঘ,!??
কখনও কিছু বললো না। এমন কি কোন সন্দেহ করলো না।
একটার পর একটা সিগারেট শেষ হয়ে কখন যে পুরো প্যাকেট টাই শেষ হয়ে গেল সৈকত তা খেয়াল ও করলো না।
————**——**——**————
কিরে না খেয়ে বসে আছিস যে ??
আম্মুর কন্ঠ শুনে মেঘের ঘোর কাটে।
—এই তো খাচ্ছি বলে একবার মুখে দিতেই বলে না, খাবো না ভাল লাগছে না।
এইতোর কি হয়েছে সত্যি করে বলতো আমায় । শ্বশুরবাড়ি থেকে আসার পপ থেকে তুই কেমন যেন মনমরা হয়ে আছিস। না ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করিস আর না ঠিকমত মন খুলে কারো সঙ্গে কথা বলছিস।
সত্যি করে বলতো মা জামাই কি তোকে কিছু বলেছে?
—না আম্মু আমার কিছু হয়নি । তুমি শুধু শুধু দুঃশ্চিন্তা করছো ।
—মায়ের কাছে মিথ্যা বলছিস। তোর মুখ যা বলছে তোর চোখ কিন্তু সেটা বলছে না। তুই কিছু একটা আমার কাছ থেকে লুকোতে চাইছিস।
—না আম্মু তুমি বিশ্বাস করো তেমন কিছুই হয়নি। আর আমি কেনইবা তোমার থেকে কিছু লুকাবো বলো??
—জানিনা,তাহলে বল তুই এখানে আসার পর থেকে সৈকত তোর কেন কোন খোজ নেয় নি। ও বাড়ি থেকে সবাই তোকে ফোন করেছে শুধু সৈকত বাদে ।
—আসলে ও কোন ফোন ব্যবহার করে না তাই হয়তো ।
মেঘ যে সৈকত কে একটা ফোন দিয়েছিল সেটা সে মায়ের কাছ থেকে গোপন করে রাখে । আর গোপন করবে নাই বা কেন সেদিন অফিস থেকে ফিরে এসে সৈকত তো ফোনটা মেঘের হাতে ধরিয়ে বলেছিল এসবের আমার কোন দরকার নেই।
মেঘ সেটা আসার আগে সৈকতের আলমারির ভিতর রেখে এসেছে । হয়তো সে সেটা কখনো খেয়াল ও করবে না। কিন্তু ডায়েরি টা !!?
সেটা কি সৈকত পাবে নাকি সেটাও পাবে না। যদি ডায়েরি টা না পায় তাহলে যে কোন কিছুই ঠিক হবে না।
—কি রে কি ভাবছিস আবার?
—না কিছু না।
—তুই বললি সৈকত ফোন ব্যবহার করে না তাই তোর খবর নিচ্ছে না। তাই বলে কি বাসায় টেলিফোন লাইনটাও নেই বা অন্যেদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে োন করা যায় না ।
—থাক এসব বাদ দাও ।
—কেন বাদ দিব বল??আচ্ছা আমি যদি ধরে নিই তুই রাগ করে এসেছিস তাহলে কেনই বা ও বাড়ি থেকে তোকে কেউ একজন নিতে আসছে না।
—আচ্ছা আমি কি এখন তোমাদের পর হয়ে গেছি আম্মু যে আমি দুদিন এসে থাকতে না থাকতেই তুমি আমাকে ঐবাড়িতে পাঠানোর জন্য এত উঠে পড়ে লেগেছো?
—কি বলছিস মেঘ তুই। আমি কি এ কথা বলছি??এখন বুঝতে পারবি না সন্তানদের জন্য মায়ের মনে কত চিন্তা হয় । যখন নিজে মা হবি তখন বুঝবি বলে মেঘের আম্মু ছলছল চোখে অভিমান করে মেঘের কাছ থেকে চলে যায়।
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । আর ভাবে জানিনা আমার এ পরীক্ষায় আমি আদেও উত্তীর্ণ হতে পারবো কিনা।
ও বাড়ির সবাই যে আমাকে কতটা ভালবাসে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আর এখানে আসার পর সেটা আরো ভাল ভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। সারাদিনে কয়েকবার ও বাড়ি থেকে একেক জন একেক সময় ফোন করছে কি করছি কি খাচ্ছি এগুলোই জিঙ্গাসা করছে শুধু। আর দিনের মধ্যে সবচেয়ে যে বেশী ফোন করছে সে হচ্ছে মেঘের শ্বশুর রায়হান চৌধুরী।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বার বার ফোন করছে আর বলছে তুই ছাড়া যে বাড়িটা আমার শূন্য শূন্য লাগছে ।
মেঘ যেদিন চলে এসেছিল তারপরের দিনই মানুষটা হয়তো চলে আসতো মেঘ কে নিয় যেতে ।
কিন্তু শুধু আসেনি একটা কারণে।
আর সেটা হলো মেঘ যেদিন চলে আসবে সেদিন আসার আগে শ্বশুরের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে বলে এসেছিল বাবা এটা আমার জীবনের সবচয়ে বড় পরীক্ষা আপনার ছেলে যদি আমাকে কখনো আনতে যায় তাহলে সেদিন আসবো আর নয়তো আসবো না।
মেঘের কথা শুনে চৌধুরী সাহেব সেদিন
কেঁদেছিল।
মেঘ বলেছিল বাবা আপনি কান্না করবেন না। আপনার দোয়া থাকলে আপনার মেয়ে ঠিক জিতবে ।
চৌধুরী সাহেব মেঘের মাথায় হাত রেখে বলেছিল আমি জানি তুই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবি আর এটা আমার বিশ্বাস ।
(চলবে )