বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-২২

0
2324

#বেখায়ালি_ভালোবাসা,
#পর্ব_২২
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ
.
সৈকত অফিসে আসার কিছুক্ষন পরই সুইটি সৈকতের অফিস রুমে আসে।
এমনিতে সকাল থেকে সৈকতের মন মেজাজ ভাল নেই । তার উপর সুইটি কে দেখে সৈকতের মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল। সৈকত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় ।
—এখানে কেন এসেছো তুমি??
—আমি তোমাকে সরি বলতে এসেছি।
—সরি!!?
—হ্যা সরি।
—তোমার কি মনে হয় সরি বললে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে??
—আমি জানি ঠিক হবে না। কিন্তু মনে তো একটু সাত্বনা পাব যে অন্তত তোমাকে সরি বলার সুযোগ টুকু পেয়েছি।
—তোমার লজ্জা করছে না এ কথা গুলো বলতে !!?নিজে এত কিছু করলে আর এখন বুক ফুলিয়ে আমার সামনে এসে ন্যাকামি করছো।
সুইটি একটু কান্না জড়িত কন্ঠে বলে
আসলে দোষ সব আমার । আমি যদি সেদিন তোমাকে জোর না করতাম তাহলে হয়তো এমন কিছু ঘটতো না। কোথা থেকে যে সেদিন কি হয়ে গেল —
আর তুমিও আমাকে এমন ভাবে —-
—শাট আপ সুইটি । আর একটা কথাও বলবে না তুমি। আচ্ছা ঠিক আছে মেনে নিলাম যে আমি মেঘ ভেবে তোমার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি কি করলে !!??
—কি করেছি আমি!??
—আবার জিঙ্গাসা করছো কি করেছো??
আসলে তোমরা মেয়েরা না সব পারো । ক্ষনে ক্ষনে রঙও পাল্টাতে পারো। সারা পৃথিবী ধ্বংস করে এসেও তোমরা এমন ভাবে বলো যে“ কি করেছি আমি ”মনে হয় যে এর মত নিষ্পাপ আর পবিত্র মেয়ে বুঝি আর দ্বিতীয়টি নেই।
—আচ্ছা সৈকত সেদিন রাতের ঘটনার পর কি একবারের জন্য তোমার মনে হয়নি যে, আমার মনের ভিতরেও কতটা খারাপ লাগছে ?একটা মেয়ে হয়ে আমি কিভাবে এই বিষয়টাকে নিজের ভিতরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি?ঐ রাতের ঘটনা যে আমাকে প্রতিনিয়ত দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
—দুঃস্বপ্ন!??ওহ রিয়েলি!!তুমি নিজে যেটা প্লান করে করলে সাকসেস ও হলে আর এখন বলছো দুঃস্বপ্ন!!?
হাউ ফানি!!
—কি বলছো তুমি সৈকত এসব??
—ও এখন আমি তোমাকে কি বলতে চাইছি সেটা তুমি বুঝতে পারছো না!?
নাকি বুঝতে চাইছো না??!তোমার কাছে সেদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা যদি অপ্রতাশিত হওয়ারই ছিল তাহলে এগুলো কি !!??বলে সৈকত ল্যাপটপ টা ঘুরিয়ে সুইটির সামনে ধরে সেদিন রাতের তাদের দুজনের ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি দেখায় যেটা অপরিচিত একটা ইমেল আইডি থেকে এসেছিল।
ছবি গুলো দেখে সুইটির চোখ বড় বড় হয়ে যায় ।
—এই ছবি গুলো!!এই ছবি গুলো তোমাকে কে দিল??
—ওয়াও গ্রেট সুইটি এই না হলে —–
—সৈকত তুমি আমাকে ভুল বুঝতেছ। দেখ আমি নিজেও জানিনা এ ছবিগুলো কে তুলেছে আর কখনই বা তুলেছে । আমি বাসায় আসার পর কে যেন এই একই ছবি গুলো আমারও ইমেল আইডি তে পাঠিয়েছে । এই দেখ বলে সুইটি নিজের ফোনটা বের করে সৈকত কে ইমেল থেকে ছবি গুলো দেখায় ।
সৈকত ছবি গুলো দেখে অবাক তার থেকে আরোও বেশী অবাক হয় দুটো লাইন লেখা দেখে
“এখন তো কেবল ছবি পাঠালাম,সময় মত টাকা না দিলে ভিডিও টা জায়গা মত ——–। যখন বলবো যতটাকা দিতে বলবো টাকা দেওয়ার জন্য রেডি থাকিস। ”
সৈকত অবাক হলো কারণ এরাকম কোন ডিমান্ড তার কাছে করা হয়নি।
সৈকতের কাছে কেবল ছবি গুলো পাঠিয়েছে।
সুইটি কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ।
সৈকত কি করবে বুঝতে পারে না।
রাগে আর বিস্ময়ে অধের্য্য হয়ে ওঠে।
ওহ শীট!!হাউ ইজ ইট পসিবল!??
তার মানে এটা তৃতীয় কারো কাজ?
কিন্তু কি করে এটা সম্ভব??
সুইটি চোখ মুছতে মুছতে বলে এটা আমিও তো সেদিন থেকে ভেবেই চলেছি ।
আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণ ওর কাজ!!।
—এই ওটা কে!!?
—আমার এক্স হাজবেন্ড।
—সেটা কি করে সম্ভব??আর সেই বা কেন এগুলো করবে??
—ওকে তুমি চেনোনা সৈকত ও খুব খারাপ মানুষ। আমি ছেড়ে চলে আসার পর থেকেই ও সবসময় আমার
ক্ষতি করার সুযোগে থাকে ।
২৪ ঘন্টা আমার উপর নজরদারি করে । কোথায় যায় কি করি ,কি খায় —–সব।
এমন কি আমি কোথায় কার আন্ডারে চাকরি করি সবটাই জানে।
—কিন্তু তার এগুলো করে লাভটা কি সেটাই তো বুঝলাম না!!।
—কেন টাকা। এটাই তো তার দরকার ।
তুমি জানোনা প্রতি মাসে আমার বেতন থেকে অর্ধেক টাকা ওকে দিতে হয় ।
—কেন!!?
—জানো সৈকত আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা কোথায় ??
ওর মত মানুষকে ভালবেসে বিয়ে করা। আর ও আমার ভালবাসার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে ব্লাকমেইল করে যায়।
ও এতোটাই নীচ যে আমাদের দুজনের কিছু বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও করে প্রতিনিয়ত ভয় দেখায় । আর তার জন্য আমাকে টাকা দিতে হয় ।
—সে কি করে জানলো যে তুমি আমার সঙ্গে আউটে যাচ্ছো??
—ঐ যে বললাম সবসময় আমার উপর নজরদারি করে । কিন্তু সৈকত তুমি বলো আমার দোষটা কোথায় ??
—এত দিন তুমি আমাকে এ কথা গুলো জানাওনি কেন?
—কি করে জানাতাম সৈকত!!এমনিতে আঙ্কেলের বিনা অনুমতিতে তুমি আমাকে তোমার কোম্পানিতে একটা চাকরী দিয়ে ছিলে । তারপর আবার প্রায় আমার পরিবারের সব ভার তুমি বহন করো ।
তাই আর এসব বলে তোমাকে নতুন করে আর দুশ্চিনায় ফেলতে চাইনি।
—এখন কি করবে?কিন্তু আমার একটা কনফিউশন ——
সে যদি তোমার থেকেই টাকা গুলো ডিমান্ড করবে তাহলে আমাকে ই-মেইল করার কি দরকার ??
আমার কাছে তো তার কোন ডিমান্ড নেই তাহলে এই পিক গুলোই বা কেন দিল???
—আমিও তো সেটা বুঝতে পারছিনা।
হঠাৎ সুইটির ফোনে ম্যাসেজ রিংটোন বাজে । সুইটি ভয়ে ভয়ে ফোনটা দেখতেই দেখে নতুন একটা ই-মেইল সেই আইডি থেকে।
সৈকত এই দেখ “আজ বিকাল চারটায় ৫০হাজার টাকা নিয়ে রেডি থেক। যেকোন সময় টাকা গুলো চেয়ে নিব। ”
সৈকত ই-মেইল টা দেখে বলে এতো রীতিমত বড় রকমের একটা ক্রাইম।
—সৈকত চলো আমার সাথে ।
—কোথায়?
—পুলিশ স্টেশনে।
—হোয়াট!!?
—হ্যা। এ ছাড়া আর কোন উপায় নেই আমাদের হাতে ।
—তুমি কি পাগল হয়ে গেছ!!?
—কেন??সৈকত তুমি বুঝতে পারছো না দিন দিন ওর ডিমান্ড টা বেড়েই চলছে। আর আমার মনে হয় এখন যদি আমি ওকে না থামায় তাহলে হয়তো ও আরো বেশী —–
—তুমি জানো পুলিশের কাছে গেলে এখন কি হবে??সবাই সবটা জেনে যাবে । পুলিশ এসে তোমাকে আমাকে একের পর এক জিঙ্গাসা করবে। আমার অফিসের সবাইকে জিঙ্গাসা করবে দুজনের মধ্য সম্পর্ক কেমন সেটা জানার চেষ্টা করবে। তারপর আমাদের বাড়িতে ।
—সৈকত আমি জানি। কিন্তু এ ছাড়া আর তো কোন অপশন আমি পাচ্ছি না।
আচ্ছা পুলিশ তো জানে যে তুমি স্বনামধন্য ও সুপরিচিত রাজনৈতিক নেতা রায়হান চৌধুরীর ছেলে তারা নিশ্চয় তোমার কোন সুনাম নষ্ট হতে দিবে না।
—তুমি ভাল করেই জানো যে আমি তার পরিচয় বহন করে কোন কিছু করতে চাইনা। নিজের চেষ্টায় নিজের যতটুকু পরিচয় আছে তা দিয়েই কাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
আমি কোন নেতার পরিচয় নিয়ে বেশী সুযোগ সুবিধা পেতে চাইনা। আমি এদেশের একজন সাধারণ নাগরিকের মত নিজের জীবনটাকে সাধারণ ভাবে উপভোগ করতে চাই।
—কিন্তু এখন আমি —
—চিন্তা করো না। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আর হ্যা আমি যে তোমাকে লেটার টা টাইপ করে আনতে বলেছিলাম সেটা এনেছো?
—হ্যা এই যে আমার রেজিগনেশন লেটার ।
—সৈকত লেটার টা হাতে নিয়ে ছিড়ে ফেলে বলে সরি সুইটি। আমি জানতাম না যে তুমি এতোটা প্রবলেমের মধ্যে আছো। আর এগুলো দেখে আর আর সেদিনকার রাতের ঘটনার কথা মনে করেই রাগে আমি তোমাকে চাকরি থেকে ইস্তাফা দিতে বলি।
—ইটস ওকে সৈকত। আমি তোমার জায়গায় হলে হয়তো এটাই করতাম । আর নয়তো এর থেকেও বেশী রিএ্যাক্ট করতাম। আর তুমি তো শুধু চাকরি ছাড়তে বলে ছিলে । আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তুমি যে আমার কথা গুলো শুনে আমাকে বুঝে আমাকে মেন্টালি সার্পোট দিচ্ছ এটাই অনেক।
এখন কার সময় এতটা কেউ কারো জন্য করে না।
—থাক হইছে এখন তুমি যাও। কাজ শুরু করো ।
—সুইটি চোখ মুছে বলে ওকে।
আর শোন—
—হ্যা বলো।
—অফিস শেষ করে টাকাটা ম্যানেজারের
কাছ থেকে নিয় নিও। আমি বলে রাখবো।
—সৈকত কি বলে যে তোমাকে—
—থাক হইছে এবার যেতে পারো।
সুইটি মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আর সৈকত সুইটির বিছানো জালে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে পড়ে।
————**——**——**————
মেঘের মনের ভিতর কেমন যেন সকাল থেকেই অস্থিরতা কাজ করছে । কিন্তু কেন এমন হচ্ছে সেটা মেঘ বুঝে উঠতে পারে না।
বার বার মনে সৈকতের জন্য ভয় হতে থাকে ওর কোন বিপদ হলো নাতো??
মেঘ বার বার ওর মোবাইল টা হাতে নিয়ে সৈকতের অফিসের টেলিফোন নম্বরটা ডায়াল করে আবার কল ঢোকার আগেই কেটে দেয়।
মন চাইছে একটা ফোন করে কথা না বললেও তার কন্ঠস্বর টা একটু শুনতে । কিন্তু কোথায় যেন একটা বাধা কাজ করছে ।
আচ্ছা আমি যে তার জন্য এতটা ভাবছি তার জন্য এতো চিন্তা করছি ,তার কি একটি মুহূর্তের জন্য আমার কথা মনে পড়ে না??
একটা মিনিট ও কি আমার অনুপস্থিতি তাকে কষ্ট দেয় না??
আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য তার কি একটুও ইচ্ছা হয় না??
মেঘ পানি খাওয়ার জন্য পানির গ্লাসে পানি নিয়ে তুলে মুখে দেওয়ার আগেই গ্লাস টা হাত থেকে পড়ে চুর মার হয়ে গেল।
এবার মেঘের মনের মধ্যে কেন জানি অশনি সংকেত বেজে উঠলো। বুকের ভীতরটা কেমন ব্যথায় মোচড় দিয় উঠলো।
তাহলে সত্যিই কি কারো কোন বিপদ আসতে চলেছে!??
মেঘের আম্মু কাচ ভাঙ্গা শব্দে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসে।
—কিরে কিসের শব্দ হলো?
—কিছুনা আম্মু।পানি খেতে গিয়ে হঠাৎ পানির গ্লাস টা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে।
—ওও। তোর কোথাও লাগেনি তো ।
—না আম্মু। বলে মেঘ নিচু হয়ে কাচের টুকরা গুলো তুলতেই খচ করে একটা কাচের টুকরো মেঘের হাতে ফুটে গেল।
মেঘ ব্যথায় উুহ করে ওঠতেই মেঘৈর
আম্মু তাকিয়ে দেখে মেঘের হাত থেকে রক্ত পড়ছে।
—তুই না ইদানিং অনেকটাই আনমনা হয়ে গেছিস।
হঠাৎ করে মেঘদের বাসার টেলিফোন টা বেজে ওঠে ।
মেঘ দৌড়ে গিয়ে টেলিফোন তুলতেই———–
(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here