হুজুরের বউ যখন ডক্টর
লেখকঃ রাকিবুল ইসলাম
পর্বঃ১৮
খাদিজার আম্মু দ্রুপবেগে কেবিনের দিকে যেতে লাগলো,।সেখানে গিয়ে দেখে মেহেদি কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে,।
– আসসালামু আলাইকুম প্রিয়,
– ওয়ালাইকুম সালাম। তুমি এসেছো?
এই বলে খাদিজার আম্মুকে জোরিয়ে ধরে মেহেদি।
– জি,আমার সতীন জাফরী কোথায়? আর তোমার এই অবস্থা কেন?না খেয়ে খেয়ে এই কয়দিন নিজের কি অবস্থা করেছো তুমি?
– জাফরী কেবিনের ভেতর।
– এখন ওর কি অবস্থা?
– অপারেশন চলছে,ডাক্তার রা না বের হওয়া অবদি কিছুই বলা যাচ্ছে না,
– তুমি চিন্তা করিওনা, ইনশাআল্লাহ, জাফরি সুস্থ হবেই।
– ডাক্তার বলেছেন এই অপারেশনে যদি সুস্থ না হয় তবে জাফরি কে আর বাচানো যাবে না,( কান্না করে)
– জাফরির কিচ্ছু হবে। তুমি ধর্য্য ধারন করো,সব ঠিক হয়ে যাবে।
কারন আল্লাহ বলেনঃ
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ ٪﴿۳﴾
কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে[১] এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়। [২] আর উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের। [৩] [১] তবে ক্ষতি হতে সেই ব্যক্তিরা নিরাপত্তা লাভ করবে, যারা ঈমান এনে নেক আমল করবে। কেননা, তার পার্থিব জীবন যেমনভাবেই অতিবাহিত হোক না কেন, মৃত্যুর পর সে চিরস্থায়ী নিয়ামত এবং জান্নাতের চিরসুখ লাভ করে ধন্য হবে। পরবর্তীতে মু’মিনদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হয়েছে। [২] অর্থাৎ, তারা একে অপরকে আল্লাহ তাআলার শরীয়তের আনুগত্য করার এবং নিষিদ্ধ বস্তু এবং পাপাচার হতে দূরে থাকার উপদেশ দেয়। [৩] অর্থাৎ, মসীবত ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য, শরীয়তের হুকুম-আহকাম ও ফরযসমূহ পালন করতে ধৈর্য, পাপাচার বর্জন করতে ধৈর্য, কামনা-বাসনা ও কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়। যদিও ধৈর্যধারণের উপদেশ সত্যের উপদেশেরই অন্তর্ভুক্ত, তবুও তা বিশেষ করে উল্লেখ করা হয়েছে। আর তাতে ধৈর্যধারণ ও তার উপদেশের মর্যাদা, মাহাত্ম্য এবং সুচরিত্রতায় তার পৃথক বৈশিষ্ট্য থাকার কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
————————-
– আচ্ছা এবার তোমার ছেলেটাকে তো দেখো? কেমন হয়েছে?
– ও তাই তো? আমার তো মনেই ছিল না,
-হুম এই নাও,
– মাশা আল্লাহ, কত্তসুন্দর হয়েছে আমার ছেলেটা। কি না রেখেছো তুমি?
– কেন, তুমি আর আমি মিলে যেই নামটা পছন্দ করে রেখেছিলাম ওটাই দিয়েছি।” আব্দুল্লাহ আবু সাইদ ”
-ও তাই তো। তা আমার ছেলের আকিকা পূরন করেছিলে কি?
– হুম করেছি। আর তখনি তো নামটা রেখেছিলাম কিন্তু তুমি তখন না থাকায় আমার ভালোলাগেনি।
আর আকিকা করা তো সুন্নাহ।
যেমন আমরা জানি
আকিকার আভিধানিক অর্থ: আল্লাহর দরবারে নজরানা পেশ করা, শুকরিয়া আদায় করা, জানের সদকা দেওয়া ও আল্লাহর নি‘আমতের মোকাবেলায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় আকিকা হচ্ছে, নবজাতকের পক্ষ থেকে পশু জবেহ করা। আলেমদের অনেকেই আকিকা করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ বলেছেন।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে একটি করে বকরি জবেহ করেছেন।[1]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় রয়েছে, দুটি বকরি জবেহ করেছেন। খায়সামি রহ. বলেছেন, আনাসের বর্ণনা শুদ্ধতার বিচারে বুখারী-মুসলিমের বর্ণনার সমমর্যাদা রাখে।
ইমাম মালেক রহ. তার মুআত্তায় বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার সন্তান হয় সে যদি সন্তানের পক্ষ থেকে আকীকা করতে চায়, তবে তা করা উচিত। তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক সন্তান তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক হিসেবে রক্ষিত। সপ্তম দিন তার পক্ষ থেকে আকিকা কর, নাম রাখ ও চুল কর্তন কর।[2]
ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, ছেলের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে দু’টি বকরি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। জন্মের সপ্তম দিন, সম্ভব না হলে ১৪তম দিন বা ২১তম দিন আকিকা করা সুন্নত। বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, সপ্তম দিন অথবা চতুর্দশ দিন অথবা একুশতম দিন আকিকা কর।[3]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ উভয়ের মাধ্যমেই আকিকার প্রমাণ পাওয়া যায়। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, বাচ্চার সঙ্গে আকিকার দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে আকিকা কর এবং তার শরীর থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূর করে দাও।[4]
উম্মে কুরয আল-কা‘বিয়া বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি পশু। নর-মাদি যে কোনো এক প্রকার হলেই চলে, এতে কোনো সমস্যা নেই।[5]
অধিকাংশ আলেম আকিকার গোস্ত পাকানো মুস্তাহাব বলেছেন, এমনকি সদকার অংশও। হ্যাঁ, পাকানো ব্যতীত বণ্টন করাও বৈধ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, ছেলের পক্ষ থেকে সমমানের দু’টি আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি জবেহ কর।[6]
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মেয়ের পক্ষ থেকে একটি এবং ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি বকরি জবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।[7]
আরো জ্ঞাতব্য যে, কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত রয়েছে আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। অর্থাৎ পশুর কোনো অংশ মজদুরি হিসেবে দেওয়া যাবে না এবং এর চামড়া বা গোশত বিক্রি করা যাবে না বরং এর গোশত খাবে, সদকা করবে ও যাকে ইচ্ছে উপহার হিসেবে প্রদান করবে।
একদল আলেম বলেছেন, কুরবানিতে যেমন অংশিদারিত্ব বৈধ এখানে সে অংশিদারিত্ব বৈধ নয়। যদি কেউ গরু বা উটের মাধ্যমে আকিকা করতে চায় তাকে একজনের পক্ষ থেকে পূর্ণ একটি পশু জবেহ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল ও বাণী থেকে এ মতই সঠিক মনে হয়।
ইবন হাযম রহ. বলেন, আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে কোনো অসুবিধা নেই। যেসব বর্ণনায় আকিকার পশুর হাড় ভাঙতে নিষেধ করা হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। অধিকন্তু তিনি আবু বকর ইবন আবু শায়বা রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ইমাম যুহরী রহ. বলেছেন, আকিকার পশুর হাড় ও মাথা ভাঙা যাবে; কিন্তু তার রক্তের কোনো অংশ বাচ্চার শরীরে মাখা যাবে না।[8]
[1] আবু দাউদ, সহীহ সূত্রে
[2] আহমদ ও সুনান গ্রন্থসমূহ, তিরমিযী হাদীসটি সহীহ বলেছেন।
[3] তিরমিযী
[4] সহীহ বুখারী
[5] আবু দাউদ, নাসাঈ
[6] আহমদ, তিরমিযী। ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি হাসান ও সহীহ।
[7] ইমাম তিরমিযীর নিকট হাদীসটি সহীহ ও হাসান।
[8] মুহাল্লা: ৭/৫২৩ আকিকার সময় : নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ার সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। হজরত রাসূল সা: নিজে সপ্তম দিনে আকিকা করেছেন। যদি কোনো কারণে সপ্তম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে চতুর্দশতম দিনে আকিকা করতে হয়। তাও সম্ভব না হলে, একবিংশতম দিনে আকিকা করতে হয়
—————————————–
– তা খাদিজা কোথায়?ওকে তো দেখছি না?
– ওকে খালাম্মার কাছে রেখে এসেছি,।
– ওই দেখো,আবার কান্না শুরু করে দিছে।
– আচ্ছা আমার কাছে দাওতো ওকে একটু বাহির থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
– আচ্ছা নাও।
– আর তুমি?
– নাহ,আমি এখানেই থাকবো,অপারেশন শেষ না হওয়া অবদি।
– আচ্ছা।
————————-
– খাদিজার আম্মু তার ছেলেকে নিয়ে একটু বাহিরে দিকে গেল,।ছেলে যে পরিমান কান্না করছে তাতে মনে হয় বাহিরে না গেলেই নয়।
এদিকে নয়ন ও তার সাংগো পাংগো রা সবাই সারা হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে,আর মেহেদির উপর নজর রাখছে।
নয়ন আবার বৃদ্ধের বেশ নিয়ে জাফরির কেবিনের দিকে যাচ্ছে আর অন্য দিক থেকে খাদিজার আম্মু তার ছেলের কান্না থামানোর জন্য,
– না না কাদে না বাবা, কাদে না,দেখো আব্বু তোমাকে পরে নিবো,কেমন, না সোনা কাদে না বাবু
এসব বলতে বলতে খাদিজার আম্মু আর নয়ন দু-জন বিপরিত দিক থেকে হেটে আসায় হঠাৎ দুজনের ধাক্কা লেগে জায়,ফলে নয়ন পড়ে জায় আর খাদিজার আম্মুও পড়ে জায়।
দুজনে একসাথে পড়ে জাওয়ায় আব্দুল্লাহ( মেহেদির ছেলে) একটু ব্যাথা পায় আর আরো কান্না করতে থাকে।
নয়ন- মাফ করো মা, বুড়ো মানুষ তো,ঠিক মতন দেখতে পাইনি,তাই ধাক্কা লেগে গেছে।
খাদিজার আম্মু- সমস্যা নেই চাচা,আমিও না দেখেই ধাক্কা দিয়েছি আপনাকে, যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে ক্ষমা করে দিয়েন প্লিজ।
নয়ন- আচ্ছা মা, আমার লাগেনি,আমি তাহলে এখন আসি হ্যা,।
হঠাৎ খাদিজার আম্মু লক্ষ করলো বৃদ্ধমানুষটার দাড়ি খুলে যাচ্ছে, আরে,এই তো সেই লোক টা যে মেহেদিকে মেরে মাটিচাপা দিয়েছিল,ইনি এখানে কি করছেন? আর বয়স্কো মানুষের রূপ ধারন করেছেন কেন?
লোকটা চলে গেল আর খাদিজার আম্মুও বাইরে চলে গেল।
—————————————–
অপারেশন থিয়েটার থেকে একে একে সব ডাক্তার বের হতে থাকলো,মেহেদি তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালো। মেহেদী বলল,
– এখন কি অবস্থা জাফরীর?
কেউ কিছু না বলে শুধু পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
সব শেষে নাসরীন বের হলো,
– নাসরীন আপু, আমার জাফরীর এখন কি অবস্থা?
– আসলে…….?
বার বার চাচ্ছি এখানেই শেষ করে দেই,কিন্তু কেন জানি শেষ ই হতে চাচ্ছে না,ইনশাআল্লাহ আগামী পর্ব অবদী অপেক্ষা করুন, ফি আমানিল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম প্রিয়।