যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ১৪

0
1629

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_14_DHAMAKA
#FABIYAH_MOMO

ছোট্ট পাকনিটার গায়ে হলুদ চলছে পাশে পর্দা টেনে হলুদ দেওয়া হচ্ছে আমার বড় ভাই রাফিন আবরারকেও। গল্প হলেও সত্যি আমি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছি সেটা ভালোবাসা হোক, হোক সেটা ভ্রাতৃত্ববোধ। নিরানব্বইয়ে যেয়ে পথ উল্টে বাসায় ফেরার খারাপ দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা আছে আমার….হয়তো মুগ্ধের হাসির আড়ালে ঢাকা। আমি ডাক্তার, কান্না কোনোপ্রেক্ষিতেই মানায় না। আমার না হাসিখুশি মনভোলানো কথা দিয়ে মানুষ জয় করতে হয়। কিন্তু নিজের বেলায় আমি জিরো…

হসপিটাল থেকে কল এসেছে তার সুবাদে আমাকে দূরে যেয়ে স্পেস খুজতে হচ্ছে। হলুদের হট্টগোলে কথা বলা ব্যাপক সমস্যা। পাকনির হলুদ লাগানো শেষ, মিরা ওর সঙ্গে নিয়ে গোসলে যাচ্ছে, আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো খানিকটা সময়, টোটালি এ্যাভয়েড করেছি। আই হেভ টু স্ট্রং। কল রিসিভ করে স্টেজের পিছনে বাসার ব্যাকসাইডে দেয়ালের পাশে কথা বলছি। হঠাৎ কেউ হেচকা টানে দেয়ালে লাগিয়ে ধরলো। পরিস্থিতি বুঝতে না পেরে হাত থেকে ফোন পড়ে ব্যাক কভার আলাদা। হাত টান দিয়ে আমার পাকনি ছাড়া সেকেন্ড কেউ ধরেনি। ওর পাগলাটের মহিমা আবার স্টার্ট হয়ে গেছে ইটস ক্লিয়ার। গালে হাতে হলুদে মাখামাখি ও আমার দিকে কোমরে হাত দিয়ে ডেভিল লুকে তাকিয়ে আছে। সিনু আমার পান্জাবীর কলার টেনে তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বলে উঠলো-

–সমস্যা কি? আমায় ইগনোর করছেন? ফোনে কে ছিলো? গার্লফ্রেন্ড? লুতুপুতু?
–মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ সিনু! ইটস টু মাচ! তোকে আমি কিচ্ছু বলছিনা দ্যাটস ডাজেন্ট মিন আমি তোকে সোজা করতে ভুলে গেছি! জাস্ট লিভ মাই কলার!আই সেড লিভ!

ও আমার কলার ছেড়ে হাতের তুড়ি বাজিয়ে বললো-
–আমার গেম স্টেপ কি ভুলে গেছেন? মনে আছে, ছোটবেলায় আমি আপনাকে কারোর সাথে খেলার পার্টনার হিসেবে খেলতে দিতাম না? এখন তো আমার লাইফ ম্যাটার করছে আপনাকে ছাড়বো? ইম্পসিবল ম্যান!!
–আঙ্গুল নামিয়ে কথা বল! আমার সামনে দুই দিনের বাহাদুরি দেখাতে আসবিনা! আমি কি করতে জানি ইউ নো বেটার! সো লিভ!
–শুনে রাখুন! পারলে কানে তেল ঢুকিয়ে পরিস্কার করে শুনে রাখুন…সবসময় ছেলেরাই বাহাদুরি দেখাতে এক্সপার্ট হয়না! মেয়েরা চাইলে তার চেয়ে বেশি এলাহীকান্ড ঘটাতে পারে! মেয়েদের নিচ করে দেখার ভুল করবেননা ডক্টর মুগ্ধ। আমরা মেয়েরা সঠিক সময়ে কি করতে পারি একটু পরেই টের পাবেন।
–আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস? ওহ্ সিরিয়াসলি? রাদিফ মুগ্ধকে থ্রেট দেওয়ার টপিক পেলি না!!
–আমি থ্রেট না, সর্তক করলাম। আমি কি করতে জানি আর কি করতে পারি সময় হোক পাই পাই করে বুঝিয়ে দিবো।
–একসেস করার ট্রায় করবিনা। জাস্ট লিভ!
সিনু আমার দিকে আরেক কদম এগিয়ে আসলো। আমি না পারতে দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে খিচ মেরে দাড়িয়ে আছি। দেয়ালটা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে যেতে পারলে নির্বিঘ্নে ঢুকে যেতাম, এই সিনুর পাগলামি আমার অবস্থা কাহিল বানিয়ে ছাড়ে! ওহ্ গড! হেল্প!

–এএই আর কত কাছে আসবি….দূরে যা…যা বলছি…তুই আমার ভাবি..

কাজ হচ্ছেনা ও আমার সন্নিকটে আসার সব রাস্তা ব্লক খুলে চলে আসছে। আমার মাথায় দুই হাত ঢুকিয়ে চুল আকড়ে ওর দিকে ঝুকিয়ে ধরেছে। হাত আমি মুঠো করে রেখেছি ও কিস করতে চাইলেই এক ধাক্কা মেরে দৌড়ে পালাবো। ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারবো! ও আমার নাকে নাক ঘষে বদমাইশি হাসি দিয়ে বলে উঠলো-

–বুকে বড় জ্বালারে পান্জাবীওয়ালা!!!!….

ধাক্কা দিবো আমি পুরো সেট হয়ে আছি ও আমাকে পাগল বানানোর থেরাপি প্রয়োগ করছে। থাপ্পর দিবো? দুটো মারলে টেনে আরো ছয়টা লাগাবে!আচ্ছা আমি ওর সামনে হাবলু হয়ে যাই কেন? আমি ধরে কয়েক ঘা বসিয়ে বিদায় করবো! নিজেই কোমল হয়ে যাই। আমি হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বাহ্যিক মুখে রাগান্বিত ভঙ্গি দেখিয়ে চলে আসি।

.
.
রুমের মধ্যে অলিম্পিক দৌড়ের গতিতে পায়চারি করছি। কারন, কিডন্যাপিং করতে আর মাত্র একঘন্টা থেকে দেড়ঘন্টা বাকি। ভাইয়া আমার জন্য জুয়েলারি জিনিস আনতে গিয়েছেন, আম্মু তীব্রভাবে ব্যস্ত। মনিরা, ইতি একটা ব্যাগের মধ্যে সব প্রয়োজনীয় সরন্জাম ভরে রাখছে। হাজারটা বাহানা দেখিয়ে সবার চোখে ধূলো লাগিয়ে ওরা দুইজন কাজচুরি করে রুমে এসেছে। আমি রুমের দরজা আটকে দিয়েছি, বাইরে থেকে এদের দুইজনকে দেখলেই হইছে কান ধরে কাজ করতে নিয়ে যাবে। বেচারী মিরা আপু এখনো রুমে আসতে পারেনি। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক করে কেউ বলে উঠলো-

–মম মা দরজা লাগিয়ে ভেতরে কি করিস!!আমি শাড়ি নিয়ে এসেছি, পার্লারের মেয়েরা সাজাবে তোকে। দরজাটা খুলে দে তো মা,

আমার মায়ের বড়জন রুমের দরজা ঠকানো শুরু করেছে…অর্থাৎ,খালামনি। উনার মোটা স্বরের আওয়াজ পেয়ে ইতি, মনিরা দুজনেই ভয়ে কাচুমাচু করে ব্যাগ খাবলে ওয়াশরুমে দরজা লাগিয়ে ছুট লাগালো । আমি যেয়ে দরজা খুলে দিলে খালামনি ভেতরে ঢুকে শাড়ি দিয়ে বলল-

–তুই রুমে একা মম? কেউ নেই সাথে? বাইরে থেকে মনে হলো রুমে ধপাস ধপাস দৌড় প্রতিযোগিতা খেলছে…

আমি কথার টপিক নব্বই ডিগ্রী এঙ্গেলে ঘুরাতে যেয়ে ভাবলেস সুরে বলে উঠলাম-

–খালামনি আমার জীবনে আমি একাই ছিলাম গো, বিয়ের আগপর্যন্ত আমি একাই আছি। আমার পাশে রাস্তার কুত্তা ছাড়া সাহায্য করতে আসেনি মনি…….আব্বু আম্মু ভাই তুমি সবাই বেহুদা কাজে ভুলে বসেছোওওও….আমার কেউ নেই গোওওও খালামনি, কেউউউউউ নেইইইইইই( হুহু করে কান্নার ঢঙ করে ওড়নায় মুখ লুকিয়ে )

ব্যস!!খালামনি আবেগাপ্লুত হয়ে শেষ। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে নাক টেনে বলে উঠলেন-
–কাদিস না মা…(হাওমাও করে কেদে দিয়ে) আমার ময়না পাখিটা একা না গো…আমি আছি…আমি আছি গো…আমি আছি….একলা নাআআআ………………

আমি ওড়নায় মুখ লুকিয়ে দাতে কটমট করে হাসছি। আমার খিলখিল হাসির আওয়াজে খালামনি ভেবে বসেছেন আমি আহা কি কান্নাই না করছি!! বুক ফাটিয়ে মুখ লুকিয়ে কান্নাকাটি করছি!!বাট ঘটনার তদন্ত করলে আমার অবস্থা পেটে হাসি জমিয়ে খিলখিলিয়ে ফিসফিস করার মতো!! খালামনি নাকানিচুবানি কান্না করতে করতে বাংলা সিনেমার ‘নাআআআ…….এ হতে পারে না’ সিনের মতো বাইরে হুরমুড়িয়ে চলে গেল। আমি দরজা লাগিয়ে হাসতে হাসতে পেটব্যথা, অন্যদিকে ইতি মনিরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একে অন্যের উপর লুটিয়ে হোহো হাসি!!পেট ধরে হাসতে যেয়ে ফ্লোরে বসে হাসি!! মিরা আপু দরজায় ধুমধাম আগের মতো ধাক্কিয়ে বলে উঠলেন-
–বান্দর দরজা খোল, আমি আসছি। খোল খোল…

যা বাবা!! সব এসে হাজির!!!

লাল রঙের জামদানী শাড়ি, তার উপর ভারী করে সোনালি সুতোর কারুশিল্প। শাড়ির আচলে শেষ কিনারায় একটা ময়ূর পাখা মেলে নৃত্য ভঙিমায় আছে এমন কারুকাজ করা। বেশ অবাক হয়েছি, এমন শাড়ির বিস্তারিত বর্ননা আমি ছোট থাকতে মুগ্ধ ভাইকে বলেছিলাম। মিরা আপুকে জিজ্ঞেস করলাম-

–আপু এই শাড়ি কি আম্মু কিনেছে? নাকি বরপক্ষ থেকে দেওয়া?
আপু নিজের শাড়ির দেখতে বলে উঠলেন-
–বরপক্ষ থেকে দেওয়া।

আসল জবাব পেয়ে গেছি। এটা মুগ্ধ ভাইয়ের কাজ। আমার ময়ূর দেখতে আলাদা রকম ভালো লাগা কাজ করে। কথাটা উনাকে ছোটবেলায় বলেছিলাম। শাড়ির আচলে ময়ূরের কারুশিল্প যেভাবে তোলা হয়েছে, শাড়ির চমকপ্রদ ব্যাখ্যা মুগ্ধ ভাই বর্ণিলভাবে দিয়েছেন। আপনি মারাত্মক অস্থিরর মিস্টার মুগ্ধ!!!

শাড়ি পড়ে বসে আছি। ভারী ভারী গহনা, তাও একখান বিয়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে আমার অবস্থা ‘হ-য-ব-র-ল’। মুখে সাজ নেই, আইলাইনার, কাজল, লাল লিপস্টিক ছাড়া কিচ্ছু দেইনি। পার্লারের দুটো মেয়েকে টাকা খাইয়ে বাসার পিছন রাস্তা দিয়ে ছাটাই করা হয়েছে। কাজটা করেছেন সাফিন ভাই। ইতি, মনিরা, মিরা আপু শাড়ির ভেতরে নিজেদের জামা পায়জামা, জিন্স পড়ে নিয়েছেন। মুগ্ধকে কিডন্যাপ করেই যার যার জোব্বা শাড়ি খুলে রেখে স্ব স্ব সালোয়ার কামিজে যুদ্ধ করতে বসবেন। সাফিন ভাই জানালা দিয়ে রুমে ঢুকে বলে উঠলো-

–চল চল চল এক এক করে রুম থেকে বের হ। তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি!! মুগ্ধকে গেটের সামনে এক ফকির দিয়ে কথার জাওড়ামিতে জব্দ করে আসছি। চল..

ইতি ও মনিরা শাড়ির আচলে ব্যাগ লুকিয়ে বলে উঠলো-

–সাফিন ভাই, আমি আর মনু মিলে ব্যাগের জিনিস গাড়িতে তুলি। তুমি ব্যাগ খুলে ক্লোরোফর্ম রুমাল বের করে নিও।

মনির বলে উঠলো-
–হ ইতালি ঠিক বলছে। ভাই, ওই গান্জাখুইট্টা রাইফেলের কি খবর? শালায় কই?
সাফিন ভাই মনিরার কথায় হাসি মেরে বলে উঠলো-
–হালা ল্যাংড়া গলদে গোসল করতাছে। আমি দেখে আসছি। তোরা বের হ। কথা পড়ে বলিস।

মিরা আপু আমার শাড়ির ঘোমটা, কুচি, আচল সব ঠিকআছে কিনা চেক করে দিচ্ছেন, দৌড়ের সময় শাড়ি ধরে পা চালাতে হবে, তখন যদি ভুলবশত ঢিলে হয়ে যায় আমি শেষ, উস্টা খেয়ে….ইতিহাস।। ওই দুইটা বের হয়ে গেছে। সাফিন ভাই একটা টিস্যুর মধ্যে প্যাকেট থেকে মরিচের গুড়া ভরে আমার হাতে দিয়ে বলল-
–মম এই মরিচের গুড়া তোর হাতের মুঠিতে রাখ। তোর সেইফটি এইটা। বিপদজ্জনক মিসাইল দেখলে মারবি খুলে এক খাবলা! এরপর…..দৌড়। ঠিকআছে। আমি গাড়ি নিয়া নিচে আছি।
–বড় ভাই, জানালা দিয়ে পালানো যাবে না?
–নাহ্, বহুত ঝামেলা। এমনেই তুই শাড়ি পড়ছোস, ব্যালেন্স রেখে নামতে পারবি না।সোজা রাস্তা দিয়ে আয়…, সবাই মেহমান দেখতে প্যান্ডেলে ব্যস্ত, নাই কেউ…পারবি পারবি।

সাফিন ভাই, বেরিয়ে যাওয়ার পাচ মিনিট পর মিরা আপু বের হওয়ার প্রস্তুতি সারলো। আমাকে পিছু পিছু আসতে বলে উনি বাইরে চলে গেলেন। ভয়ে আমার কলিজার অবস্থা ভালোনা…ধুকপুক করেই চলছে। নার্ভাসনেসে আমার হাতও কাপছে। বুকে ফু দিয়ে মাথার ঘোমটা একটু টেনে মিরা আপুর পিছু নিয়ে হাটতে লাগলাম। আমার রুম, এরপর মিরা আপুর রুম, এরপর স্টোররুম, এরপর গেস্টরুম, এরপর সদরররররর দরজা !বাসা খালি! কেউ নেই। তবুও সাবধানতার সাথে পা ফেলে এগোচ্ছি। মিরা আপু স্টোর রুম কভার করে গেস্টরুমের ওখানে চুপাচুপি করছে কেউ আসছে কিনা। পিছনে আমি ভারী শাড়ির টালবাহানা ধরে ধরে হাটছি। মিরা আপু চোরাই দৌড় দিয়ে সদর দরজার বাইরে দাড়ালো। আমার দিকে ঘুরে মুখ নাড়িয়ে হাত নাড়িয়ে বললো-

–ওই তাড়াতাড়ি কর! তাড়াতাড়ি ! কেউ এসে পড়বে!!!

আমি একটা দৌড় দিতে যাব ওমনে দেখি আবির ভাইয়া ফোন কানে বাসায় ঢুকছেন, দৌড় দেওয়া থামিয়ে দিলে মিরা আপু উনাকে না দেখেই আমাকে আসতে বলার তাগাদা দিচ্ছেন। ভাইয়া কথার ধান্দায় আমাকে দেখেননি। আমিও উপায়হীন হয়ে গেস্টরুমে লুকাই।। গেস্টরুমে লুকিয়ে দরজা লাগিয়ে ভয়ে হাফাচ্ছি হঠাৎ কেউ আমার মুখ চেপে রুমের দরজার পেছনে নিয়ে গেল। আমি ছোটাছুটি শুরু করছি! মুখ থেকে হাত সরানোর জন্য কনুই মেরে ঘুষাচ্ছি কিন্তু কে আমার মুখ চেপে ধরলো….কে আটকালো আমি কোনোভাবেই ঘুরে দেখতে পারছিনা। সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চুলের মুঠি ধরে পিছনে ঘুরিয়ে সজোরে চড় মারলো….চড়ের আঘাত, শরীরের নির্ঘুম ক্লান্তি, সকাল থেকে না খাওয়া সব মিলে আমি বেহুশ……ঝাপসা হয়ে আসছে সব, মাথা ঘুরে উঠছে, বারবার মুগ্ধের চেহারা ভেসে উঠছে….আমি সফল হতে…. সফল হতে পারলাম না………….

আবির মিরাকে দেখে কিছুটা অবাক হলো। মিরা মাথায় হাত দিয়ে হায়হুতাশ করছে। আবির ফোনের কল কেটে মিরার কাধে হাত রাখতেই মিরা চমকে উঠলো। চোখ বড় করে এক ঢোক গিলে ধীরে ধীরে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো আবির দাড়িয়ে। আবির মিরার অস্বাচ্ছন্দ্য চেহারা দেখে বলে উঠলো-
–মিরা তুই চোরের মতো এখানে কি করছিস? আমাকে দেখে ভয় পেলি কেন বলতো? কি গোলমাল বাধাচ্ছিস!

মিরা শাড়ির আচলে হাত মুচলেকা করে বলে উঠলো-
–কই কি বলছো তুমি….না তো…আমি লামিয়া আপু আর ইতির জন্য অপেক্ষা করছি।
–তোর আবার ওদের দিয়ে কি কাজ!

মিরা ঠান্ডা মাথায় বুদ্ধি করে বললো-
–শোনো, আমরা সব বোনরা মিলে বরের জুতা চুরি করবো। এজন্য আমি ওদের উছিলায় দাড়িয়ে আছি, বুঝছো….
–ও তাহলে ঠিকআছে। জুতা চুরি করবি কর,টাকা শেয়ার দিস কিন্তু। তোকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাব…
–আচ্ছা যেও…..না করিনি। আমার কাজ আছে। পরে আসো, যাও।
–মিরা? তোকে জলপাই আচারের লাল মরিচের মতো লাগছে!!
–লুচুমি করো না আবির। কেউ শুনে ফেলবে!! যাওওওওওও…
–ওকে বাবা যাচ্ছি!!আসি।।।

মিরা আবিরকে বিদায় করে পুনরায় বাসার ভেতরে ঢুকলো। মমকে খুজতে খুজতে গেস্টরুমের সামনে দাড়ালে খেয়াল করলো এ রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। একটু আগে খোলা ছিলো আর এখন বন্ধ দেখে ওর খটকা লাগলো। ভেতরে কি মম নাকি? মিরা দরজায় নক করে বলে উঠলো, ‘মম ভেতরে থাকলে বের হ, আমি মিরা!!’।কিন্তু দরজা খুললো না। মিরা আরো জোরে জোরে দরজা ধাক্কানো শুরু করলে হুটকরে দরজা খুলে গেল। মিরা নক করা বন্ধ করে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলে কেউ মাথায় “ঠাসস” করে আঘাত করে। মিনিটেই মিরা মাটিতে লুটিয়ে জ্ঞানহীন।

মিরাকে মাথায় আঘাত করে পা ধরে টেনে হেচড়ে নাইনলের দড়ি দিয়ে হাত-পা বেধে বিছানায় পাশে শুয়িয়ে দিল। মম থাপ্পড়ের আঘাতে এখনো সেন্সলেস। মমকে একটা চেয়ারের সাথে বেধে দিয়েছে। মুখে কাপড় লাগিয়ে বন্ধ, গোঙানোর শব্দ পযর্ন্ত বাইরে যাবেনা। এতকিছুর নীল-নকশা একেছে “রাফিন”। রাফিন আগেই সবার প্ল্যানিংয়ের ব্যাপারে জেনে যায়। তাই ওদের প্ল্যান থেকে চার কদম এগিয়ে চিন্তা করেছে সে। ও নিজেই মমকে নিজের আস্তানায় ধরে রেখেছে। অপরদিকে গাড়ি নিয়ে সাফিন মুগ্ধকে রুমাল চেপে অজ্ঞান করে মম ও মিরার জন্য অপেক্ষা করছে। গাড়িটা একটু আড়াল করে পরিত্যক্ত জায়গায় পার্ক করা হয়েছে, ওরা দুজন আসলেই পালাবে। ইতি বারবার মিরার ফোন ট্রায় করছে, বন্ধ। মনিরা হাতের ঘড়ি দেখছে কখন আসবে ওরা!! কিন্তু কেউ আসছেনা।। রাফিন পৈশাচিক হাসিতে বিছানায় বসে আছে। চেয়ারে বসে বেহুশ এখনো মম। তার সাথে রাফিন দুই ধাপ বেশি চাল চেলেছে জানা নেই। একটুপর নড়েচড়ে মাথা উঠিয়ে মম চোখ খুলল। চোখ খুলে নিজের দিকে ও চারপাশে তাকাতেই ছোটাছুটি শুরু! মুখ দিয়ে অজস্র চেচামেচি করছে কিন্তু অবাধ হয়ে কিচ্ছু সহায় হচ্ছেনা।কোনো শব্দই রুমের বাইরে পৌছাচ্ছে না। রাফিন মমর কাছে এসে গলায় নাক এনে ঘ্রাণশক্তি নেওয়ার ভঙ্গিমায় বলে উঠলো-
–আহহহহহহ……শান্তি….গায়ের সেই মিষ্টি মেয়ের ঘ্রাণটা নাকে আসলে চেখে নিতে ইচ্ছে করে….ওফফ…

মমর রাফিনের অস্বস্তিকর শুকে নেওয়া অবস্থায় ক্ষণিকের জন্য কান্না শুরো করে স্থির হলে রাফিন মমর গালে আঙ্গুল বুলিয়ে বলে উঠে-
–ইউ আর এ্যাহানি চিজ বার্গার ফ্লেভার সুইটহার্ট….জাস্ট আর কয়েকটা ঘন্টা….দ্যান সব কিছু পুষিয়ে ছাড়বো!!!

মম রাফিনের কথা শুনে ফুপিয়ে কেদে দিলো। ওদের সব পরিকল্পনা, সব কারসাজি, সব প্রস্তুতিপর্ব তীরে এসে তরী ডুবালো। চোখের সামনে সব স্বপ্ন, আশা, ইচ্ছা ভেঙ্গে অতল গর্তে তলিয়ে যাচ্ছে। চোখ ভরা অশ্রুতে মিরার বেহুশি চেহেরায় তাকালো সে…. আরো কান্নায় ডুকরে উঠে মনে মনে বললো, মিরা আপু, ইতি, মনিরা, সাফিন ভাই, আমরা সবাই হেরে গেলাম ভাই….আমরা সফল হতে পারলাম না মুগ্ধ ভাই, সব মাটি হয়ে গেল… সব মাটি হয়ে গেল।…আমার ভাগ্যে আপনি নেই…প্লিজ কেউ আসো….প্লিজ…

রাফিন মম’র কান্নার দিকে দৃষ্টিপাত না দিয়ে ফোনে ভিডিও গেমস খেলতে লাগলো।ওর মনে বেজায় খুশিইই!!! মম চোখ বন্ধ করে একমনে সাহায্যের জন্য মহড়া ডাকছে…কেউ তো আসো প্লিজ, কেউ তো একটা বার আসো, প্লিজ আমরা হারতে পারিনা….আমরা হারলে আমি শেষ…প্লিজজ..

রাফিন ভিডিও গেমসে বোরিং ফিল করছে।। তাই সে মমর দিকে তাকালো। মম চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে কাদছে। মাথার ঘোমটা পড়ে গেছে, গলায় একটা ছোট তিল দেখে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাফিন। জিহবা দিয়ে ঠোটটা ভিজিয়ে যেই মমর গলার দিকে আসতে নিবে হঠাৎ কেউ দরজার নব্ খুলে ভেতরে ঢুকলো! “ধুমম” করে রাফিনের মাথায় আঘাত করে দমালো! মম দরজা খোলার শব্দে এবং কোনোকিছুতে বারি দেওয়ার দাপটে চোখ মেলে তাকালো….চোখভর্তি অশ্রুজলগুলো গাল গড়িয়ে ছেড়ে দিলো….”ভাইয়ু তুমি”

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here