যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ১৩

0
1346

#যদি_বলি_ভালোবাসি
#PART_13
#FABIYAH_MOMO

–চুপ পাকনি!!আমি তোর বড়! বাচ্চা হতে যাবো কেন!!
–দেখতে তো বাচ্চায়ায়ায়ায়া….
–বাচ্চাদের বিয়ে করতে নেই। রাফিন ভাই বড় আবার দেখতেও হ্যান্ডসাম। সিক্স প্যাক ওয়ালা বডিও আছে তোর জন্য অল পার্ফেক্ট!!
“ঠাসস” করে এক চড় মেরে ঠোট কুচকে উনার গাল টেনে বলে উঠলাম-

–আমি এই বাচ্চাকেই বিয়ে করবো! কুস্তিগিরির বডিওয়ালা পুরুষকে আমার দেখে লাভ নেই! শুনে রাখুন! আপনি ভালো হয়ে যান! এখনো সময় আছে বদলে যান…নাহলে আমি যে কান্ড ঘটাবো সেটা দেখলে আপনিসহ ওই রাফিনের বাচ্চাও ফিট!
–ইশশ গাল ছাড়! ব্যথা পাচ্ছি! গালের মাংস টেনে ছিড়ে ফেলবি নাকি!সিনু!

উনার গাল ছেড়ে আমি বাইরে চলে আসলাম। মনিরাও তার কাজ শেষে মেইন দরজা ধরে আমার অপেক্ষা করছে। আমি যেয়ে ওর পাশে দাড়ালে মনিরা আমার হাত ধরে বলে উঠে-

–কিরে কাজ হইসে? মুগ্ধ ভাই মানছে?
–ন আকার না! হয়নাই! বেটা ভেতুম ওইটা সোজা আঙ্গুলের ঘি নামানোর হুমকিতে ভয় পায় না!
–হ বুঝছি। থাক বাদ দে। ওই শালারে…থুক্কু থুক্কু দুলাভাইরে শায়েস্তা করা লাগবো। রাফিনরে মাথায় বারি দিয়া মরিচের গুড়া ঢুকায়া দিয়ে আসছি। বুঝুক শালা!

আমি ওর গালিভরা কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালে মনিরা কেশে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে-

–আমাল বানদুপিটাহ্ আমি কিচ্চু বলি নাই। মুই একখান ভালা মানুষ। গালি দিবার পারি? ওই শালা তো একটা খাম্বা খবিইশ্যা আমি কি গালি দেই? বলো? গালি দিছি?
–তুমি তো গালি ছুটাও নাই, চুম্মা দিছো! ফালতু মেয়ে কোথাকার! আরেকবার যদি গালিগালাজ করতে শুনছি! মুগ্ধের আগে তোর হাওয়া টাইট করে দিবো!চুপ!
মনিরা স্ট্রেট আর্মি কমান্ড পেয়ে সটান হয়ে দাড়িয়ে ঠোট আঙ্গুল দিয়ে বাইরের দিকে হাটা ধরলো। আমিও ওর পিছু পিছু চলে গেলাম।
.
.

আজ বুধবার। আব্বু অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে আর ভাইয়া তেরো দিনের। আম্মু বিয়ের নানা জিনিসের কেনা কাটায় মত্ত আর অপরদিকে আব্বু বিয়ের ওয়েডিং হল সহ যাবতীয় বাইরের কার্যাদি দেখতে ব্যস্ত। আব্বুকে আমি ভাইয়া সুযোগ মতো অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু উপায় হিসেবে ভালো ফল পাইনি। সেদিনের পর থেকে মুগ্ধ ভাইয়ার বাসায়ও যেতে পারছিনা আবার উনিও এখানে আসছেন না। কল করলে বলে “ভাবী ভালো আছেন???”। এজন্য কথা বলাই বন্ধ। মনিরা কিডন্যাপিংয়ের জন্য সবকিছু রেডি করছে। বিয়ের আগের দিন মুগ্ধকে তুলেই কিডন্যাপ। আবির ও মুগ্ধ ভাইয়ার গ্যাং মেম্বার সাফিন ভাই, ইতি, মনিরা, আমি-এ কজন আমরা কিডন্যাপিং টিম। ইতি আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড আর সাফিন ভাইয়ের বোন। সবগুলো একজোট হয়ে সব কাজ সামলাবো। আমার নিজের খুব উত্তেজনা কাজ করছে জীবনে প্রথম কিনা এমন ইতিহাস সিল মেরে গড়বো যেখানে মানুষ বলবে “মেয়ে ছেলেকে কিডন্যাপ করে বিয়ে”। বাড়িভর্তি মানুষ। খালামনি, মামা, চাচ্চু, ফুপ্পি, দাদু, দাদি সবাই প্রায় চলে এসেছে। এক খালামনি, এক মামা, দুই চাচ্চু, তিন ফুপ্পির বিশাল আকারে পরিবারবর্গ মিলে বিয়ের জমজমাট। সব খালাতো মামাতো ভাইবোনেরা বিয়েশাদি করে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এসেছে। বাড়ি পুরো হৈ হুল্লোড় অবস্থা। আমি আমার রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে আছি। মনিরা, ইতি, সাফিন ভাই,মিরা আপু সবাই নাকি এক এক করে কাজচুরি মেরে রুমে আসবে। আমি তাদের অপেক্ষায় আছি। হঠাৎ দরজা নক করে চোরের গলায় বলে উঠলো-

–মম…মম দরজা খোল, আমি মনিরা…দরজা খোল মাইয়া!

আমি মনিরার গলা পেয়ে বিছানা ছেড়ে দৌড়ে দরজা খুলে দেই। মনিরা ফুরুৎ করে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে হাফ ছাড়লো। এক বুকভরা নিশ্বাস ছেড়ে কোমরে দুই হাত দিয়ে বলে উঠলো-
–নিচে জানোস আন্টি, মাজেদা ফুপ্পি শাড়ির কালেকশন নিয়ে বসছে। আমাকেই দেখলেই হইছে! আর তোর কাছে আসতে দিতো না। কাজ ঘাড়ের উপর ঠেলা বানিয়ে দিতো। বড় বাচা বেচে গেছি দোস্ত…
–পানি খাবি? বাকিগুলার কি খবর? কোথায় ওরা?
আমি মনিরাকে বিছানায় বসতে বলে টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ওর সামনে ধরতেই মনিরা ঢকঢক করে সব পানি গিলে খালি গ্লাস হাতে ধরিয়ে দিল। চন্ঞ্চলতার সুরে বলে উঠলো-
–শোন শোন আমি সবাইকে কল করে আসতে বলছি। এই ধর পাচ মিনিটের মধ্যেই সবাই কাজ ফেলে চলে আসবো। ইতি নিচে, আন্টির আটখানায় ফেসে গেছে। মিরা আপু কামলা খাটতেছে জিনিস আনা নেওয়া করতে…সাফিন ভাইরে কোক আনতে বলছি। চলে আসবো বস তুই,

মনিরা সব তড়িঘড়ি করে দেখেশুনে এসেছে। এখান সব আসলেই প্ল্যান শুরু। আমি বিছানায় বসে মনিরাকে জিজ্ঞেস করলাম-
–মুগ্ধ ভাইরে দেখছিস? উনার দেখা সাক্ষাৎ মিলছে?
–ইয়েস। মাত্র দেখে আসছি। রাফিনে এখনো আমাকে চিনে নাই!!! হি হি হা হা…ওইদিন যে মাথা বাইয়াড়া মরিচ ঢুকায়া আমি আসছি জানে না!!…আরেক কথা, উনার বাসায় ফুপির ফ্যামিলি আসছে। রুপা না টুপা নামের একটা ফকিন্নি দেখলাম মুগ্ধ ভাইয়ের রুমে বসে আড্ডা দিতেছে।
–রুপা চলে আসছে তাহলে? ধ্যাত! ভালোই লাগতেছে না। কবে সব ঝড় ঝন্ঞ্চাট শেষ হবে!
–বি চিল ইয়ার!সার্ভেন্ট রুপা আর দুলাভাইয়ের জন্য দুইগ্লাস জুস নিয়ে যাইতেছিলো আমি রুপার জুসে তেলাপোকা ডুবিয়ে দিয়ে আসছি।
–ম নি রা ! অতিরিক্ত !
আমি মনিরার কুটনামির কাজে না চাইতেও আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি। মেয়ে এটা করলো কি? বান্ধুবীর জন্য গোয়েন্দাগিরি করতে যেয়ে দাবাংগিরি দেখিয়ে আসছে!!মনিরা রাতের অন্ধকারের মতো মুখ করে অসহায় দৃষ্টিতে বলে উঠলো-

–মম আমি তোরে নিয়ে পসেসিভ ঠিকআছে। কিন্তু তুই যে জিনিস নিয়ে পসেসিভ ওইটা আমি তোর দ্বারপ্রান্তে এনে দিবোই! কজ ওইটা শুধুমাত্র তোর! কোনো রূপা বা রাফিনের জন্য আমি তোর সাথে অন্যায় হতে দিবো না….

মনিরা কিছু বলার আগেই দরজা ধাক্কানো শুরু। কিন্তু এবার ধাক্কানোর আওয়াজ ধুমধাম করে হচ্ছে। মনিরা গেল দরজা খুলতে আমি বিছানায় বসে আন্দাজ করে ফেলেছি এইটা মিরা আপু। উনি এমন ধুমধাম করে ধাক্কানোর স্বভাব রাখে। মিরা আপু দ্রত ভেতরে ঢুকে দরজা লাগাতে নিলে আরেক চোট দরজা ধাক্কা মেরে বাতাসের মতো ভেতরে ঢুকলো ইতি আর সাফিন ভাই। সাফিন ভাই কোকের পাচটা বোতল নিয়ে আমার বিছানায় বসলো, ইতি দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিল। তিনজনের মুখের হাপানো অবস্থা ওই মনিরার মতোই। বাঘের আস্তানা পার করে আমার রুমে ঢু! সবাই এক সাথে বিছানায় বসে গোল হয়ে হাতে কোক নিয়ে শুরু করলাম প্ল্যান। সাফিন ভাই কোকের ছিপি খুলতে বলে উঠলো-

–আমি গাড়ি রেডি করে ফেলছি গার্লস।

গাড়ির টেনশন আউট। বাকিরা বল।
ইতি ওর ব্যাগ থেকে একটা কাগজ কলম বের করে বলে উঠলো-

–ওকে ডান। মেইন জিনিস সাফিন ভাই জোগাড় করছে। সেকেন্ড, রুমাল এবং ক্লোরোফর্ম। ওই…মনিরা এইটা তোর আনার কথা ছিলো না? জোগাড় হয়েছে?

মনিরা কোকের বোতলে মুখ লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বোঝালো-
-ডান!
মিরা আপু কোকের বোতলে আঙ্গুলের নখ দিয়ে টোকা মারার খেলায় বলে উঠলো-

–আমার হলুদের পেস্ট, মেহেদির টিউব ডান।
ইতি কাগজে দাগানো সব নাম্বারে পয়েন্ট আকারে টিকচিহ্ন দিয়ে দিল। মানে সবাই কিডন্যাপিংয়ের জিনিস রেডি করে ফেলেছে। ইতি কলমের ক্যাপ বন্ধ করে বলে উঠলো-

–সাফিন ভাইয়া, কোকের ছিপিটা খুলে দাও তো। আমার ভাগ্যে কাজি অফিসের ঠিকানা আর বুড়া বেটারে বিয়ে করানো কাজ পড়ছিলো, ইটস ডান। আমরা সবাই তাহলে কিডন্যাপ করার জন্য প্রিপেয়ার!!!!লেটস ডু দ্যা চিয়ারস!!

.
.

ঝুম বৃষ্টি। কালো মেঘ ডেকে ডেকে পরিবেশ অন্ধকার করে রেখেছে। আকাশে কালো মেঘের আস্তরনে আকাশ চমকিয়ে বজ্রপাত। দুপুর টাইম এখন, বৃষ্টির কবলে বোঝা যায়না। কাল গায়ে হলুদ। মিরা আপু, মনিরা, ইতি সবাই বিয়ের কাজে আম্মুর হুকুমে কাজে হাত লাগাচ্ছে। আমাকে রুমে বন্দি হয়ে থাকতে বলা হয়েছিলো আমি ছাদের এসে বৃষ্টির নিচে বজ্রপাতের হুংকার উপেক্ষণীয় ভাবে দাড়িয়ে আছি। সাফিন ভাই আবির ভাইয়ার সাথে ব্যস্ত। আমি একা। একদম একা। বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকলে একটাই মজা কান্না যত ইচ্ছা তত করা যায় চাইলেও দেখতে পারেনা। অদ্ভুত ভালো লগা কাজ করে। কেউ তো কারোর না…বিশেষ করে কান্নার সঙ্গীতে কেউই না। চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ঝাপটা উপভোগ করছি, শরীর হাত পা ভিজে একাকার। মুগ্ধ ভাইয়ার দেখা মেলল না আমার। উনি কেমন আছেন এক পলকের জন্য হলেও চোখের সামনে দেখার সৌভাগ্য পাইনি। উনি কি মন থেকেই বিয়ে করবেন না? মনিরার কিডন্যাপিং প্ল্যানে কি উনি আমায় ভুল বুঝবেন? মেয়েদের এগুলো করতে নেই লোকে কি বলবে সেসব কথাই ভাববেন? মানুষ কি আমার খারাপ সময়ে উৎসাহ দিতে আসবে? আসবে নাতো। উনারা অন্যের ভালো দেখতে আসে? মেয়েদের নানাভাবে মন্তব্য করে কুৎসাজনক সমালোচনা করতে তারা অভিজ্ঞ। একটু শুনতো আমার কথা!!আমাকে মাফ করে দিও আব্বু আম্মু….মানুষের কাজ মানুষ করবেই আমি মরে গেলেও কথা শুনাবে। আমি থাকতে মূল্য এভাবেও পাবো না ওভাবেও না। মেয়েদের কিছু বলতে নেই……..

ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে বলে উঠল-
— “পাকনি”

আমি কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি মুগ্ধ ভাইয়া বৃষ্টির মধ্যে আমার পিছনে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সাদা শার্ট, ডার্ক নেভি ব্লু রঙের প্যান্ট। হাতের ব্যান্ডেজ ঢিলে হয়ে ভিজে চুপচুপে। পুরো গা ভিজে শার্ট লেগে উনার বডি ভেসে উঠেছে। উনার চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। ঠোটজোড়া শিউরে কাপছে উনার। এখন তো হসপিটালে থাকার কথা! উনি আমার বাসায়! তাও আবার এতদিন পর আমার সামনে? উনি ধীরগতিতে আমার সামনে এসে কপালে কপাল লাগিয়ে দিলেন। বৃষ্টির ঝড়ো বাতাস…..উনার চুল লেপ্টে পানি গড়িয়ে আমার কপাল বেয়ে পড়ছে। চোখ উনার অফ। আমার কানে দুইহাত রেখে নরম গলায় বলে উঠলেন-
–শেষবারের মতো দেখতে এসেছি…

কথাটা শুনে ভেতরটা ধক করে উঠলো। ‘শেষবার’ কথাটা এতো আহত করার মতো কেন? ছোট্ট মনের অভিক্ষিপ্ত কোনে চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। উনি আমার মনোকল্পিত সব আশা চুরমার করতে এসে পড়লেন। উনার হাতদুটো ঠান্ডা….বৃষ্টির মধ্যে অনেকক্ষন ভিজেছেন এমন কিছুর বিহ্বল পাচ্ছি। আটকা গলায় আবার বলে উঠলেন-

–আমি আমার সব ভুল, সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি, সিনু। আমি তোর সামনে আসবো না, পাকনি। আমায় মাফ করে দিস….কয়টা দিন তোর সামনে আসিনি, ইগনোর করতে চেয়েছি আমি, মাথা থেকে তোর চিন্তা ছাড়তে চেয়েছি…কিন্তু জানিস আমি ব্যর্থ। আমি ব্যর্থ পাকনি, পারলাম না কিছু করতে। সবটুকু জুড়ে তুই আছিস ভুলে যাওয়া কঠিন।।। একটু বেশি কঠিন…

উনি কপাল উঠিয়ে আমার চোখের দিকে তাকালে স্পষ্ট বৃষ্টির হাতছানির মধ্যেও ভিন্ন পানির স্বচ্ছলতা দেখতে পাই। উনি বৃষ্টির পানির বেশে কান্না করছেন? চোখে কি পানি? বৃষ্টি পানি না? উনি বলে উঠলেন-
–মাই ডেভিল গার্ল….কান্না না। ছি কান্না করলে ভালো দেখায়? নো, লুকিং আগলি। বৃষ্টিতে এনাফ ভিজেছিস রুমে যা। কাপড় চেন্জ করে গরম কিছু খেয়ে নিস। আমি আবিরকে বলে তোর দিকে নজর রাখতে বলবো। কাল বিয়ে পাকনি, রাতে না ঘুমালে ডার্কসার্কেলে বাজে দেখাবে। রাফিন ভাইয়ের শেরওয়ানিটা আমি চুজ করেছি বুঝলি!! তোর পছন্দের কালার, কালো। হ্যান্ডসাম লাগবে। কাল দেখা হবে, ভাবী ওকে?বায়…

উনি উনার ‘শেষবার’ পালন করে ছাদ থেকে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় নজিরবিহীন চোখ লুকিয়ে চলে গেলেন। সম্ভবত চোখে জমা সাইন্সের ভাষায় সোডিয়াম ক্লোরাইড দেখতে দিতে চাননি, নোনাজল কি আমায় দেখাবেন? কপালে কপাল লাগিয়ে তখনো কাদছিলেন, আমি বুঝে গেছি। বৃষ্টির পানির সুনির্দিষ্ট বাহানায় চোখের পানি পালাতে পারেনি।

.
.

দুইপক্ষের “হলুদ অনুষ্ঠান” একসাথে স্টেজ আকারে সাজানো হয়েছে। একই স্টেজে একই গ্রাউন্ডে মাঝে একটা লম্বা পর্দা টানা হয়েছে। যতদূর শুনেছি রাফিন ভাইয়া তোষামোদে দুই পরিবার এক হয়ে হলুদ অনুষ্ঠান করেছে। লুইচ্চা অনুষ্ঠানের নাম করে ড্যাবড্যাবিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে আমরা কিডন্যাপিং টিম জানি। কিছু করার নেই এসবে। সকাল থেকে নাকে তেল দিয়ে সব সদস্য ব্যস্ত। আবির ভাইয়া কোথায় আছে কোন কাজের চিপায় ফেসেছে মিরা আপুও জানেনা। মিরা আপুর আব্বু আম্মু তথা বড় মা এবং জেঠু উনারা হৈচৈ করে বিয়ের ফয়সালাতে শামিল। সন্ধ্যায় সাতটায় বিয়ে পড়ানো হবে এখন হলুদের ঐতিহ্য পালনে ব্রত সবাই। মনিরা, মিরা আপু, ইতি, ফুপাতো বোন লামিয়া, মামাতো বোন মারিয়া আপু আমার রুমে নিজেরা সেজেগুজে আমাকে নিয়ে ঠেলাঠেলি করছে। আমি হলুদ শাড়ি পড়বো না। মানে পড়বো না। জিদ ধরে হাত পা গুটিয়ে বিছানায় বসে আছি। মনিরা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে পার্লারের সাজ মেখেছে। ইতি হালকা হলুদ রঙের নীল পারের শাড়ি সাথে হালকা সাজ। বাকি দুইজন লামিয়া, মারিয়া আপুকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মিরা আপু শপিং ব্যাগ থেকে আমার শাড়ি বের করে আমার পাশে রেখে বলল-
–শাড়িটা ঝটপট পড়ে নে মম। আমাদের খুব সর্তকতার সাথে কাজ দেখতে হবে। সাফিন ভাই পাচটা কি ছয়টা নাগাদ গাড়ি এনে হাজির হবে। প্লিজ জেদ ধরে বসে থাকিস না।

মনিরা কানে ঝুমকা পড়তেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-
–ছেমরি লেট করিস না। মুগ্ধ ভাই দেখিস কেমন চটাং সেজে লুক মেরে ফিদা করে ফেলে!!! বিদেশী বিলাই পান্জাবী!!!ভাবো ভাবো….মুগ্ধ যখন পান্জাবিতে!!! উহুম উহুমমম…..
ইতি মনিরার পিঠে চাট্টি লাগিয়ে বলে উঠলো-
–মনু শুনেছি ছেলেরা নাকি পান্জাবী পড়লে চুপিচুপি দেখতে ইচ্ছা করে। নাও দ্যা ম্যাটার ইজ মুগ্ধ ভাই!!!বাকিটা বুজিস মনিরা!!
–তোদের খাচ্চতের নজর দূরে রাখ ইতি মনিরা! আমি আবারো বললাম! আমি এসব পছন্দ করিনা!
–এ্যাহহ…এখন তোমার সোজাসাপ্টা পথ ধরতে মজা লাগে? কতক্ষণ ধরে ঘ্যানঘ্যান করতেছি কানে বাতাস ঢুকে না তোমার!উঠ, শাড়ি পড়। (মনিরা)
–ফকিন্নি! ভালো কথা বললে গায়ে লাগেনা!
–যাচ্ছি!

হলুদ শাড়ি লাল পাড়। মাথার চুলে মাঝে সিথিতুলে ফুলের গহনা পড়িয়ে অনুষ্ঠানের জন্য তৈরী করা হয়েছে। চোখের সাজ ধাচ অনেকটা মিরা আপু দেখেছেন, শাড়ি পড়াতে মনিরা বান্দরনী। আয়নায় নিজেকে দেখে ভালো লাগলেও আমার কাছে শ্রীহীন। মনিরা, মিরা আপু, ইতি সবাই মিলে স্টেজে চলে গেলাম।

মুগ্ধ স্টেজে এক কোনায় ফোন নিয়ে কাজ করছে। শতশত মেয়ে ছেলের ভিড়ে নিজেকে একা বানিয়ে দাড়িয়ে আছে। ভিড়ের নজর কেড়ে এক জনই চলছে রাফিয়া সেটা মেয়েদের কানাকানিতে বুঝে গেছে। রাফিয়া মুগ্ধের পাশে গিয়ে আলতো একা কনুই মেরে বলল-

–মুগ্ধ ভাইয়া তুমি একা দাড়িয়ে আছো কেন?
–কেন? একা দাড়াতে ট্যাক্স দিতে হবে নাকি? আমাকে জ্বালাইস না যা।
–চোখ ঘুরিয়ে সব জায়গায় দেখো, মেয়েরা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই এখন তোমার বোন হিসেবে আমার কর্তব্য তোমাকে হেফাজত করা। এখন আমি হেফাজত রাখবো…হুম।।

মুগ্ধ ফোন থেকে মাথা সরিয়ে ডানে বামে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। ঠিকই, মেয়েরা দলেদলে দুই তিনজন গুচ্ছাকারে মুগ্ধের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। মুগ্ধ বিরক্তি নিয়ে কানে ফোন লাগিয়ে মেয়েগুলোকে শুনিয়ে বলল-

–ইয়েপ জানু, হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?? ইউ নো, আমি বিয়ের হলুদ প্রোগ্রামে কিছু থার্ড ক্লাস মেয়ে দ্বারা রেপ হচ্ছি। ওরা তাকিয়ে আছে বেব!! ইটস টোটালি ডিসগাস্টিং!

রাফিয়া মুগ্ধের অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে হা করে একবার মুগ্ধের দিকে তাল মেলায় আরেকবার মেয়েগুলোর হাবভাব দেখতে চোখ ফেরায়।

–নো, প্লিজ তোমার এখানে আসা লাগবে না বেব। স্টে এসাইড। যার তাকিয়ে থেকে লুচুমি করার শখ তাকিয়ে থাকুক! ওকে? লাভ ইউ!!

আই হোপ এই ট্রিক্স কাজে লাগবে। অন্তত আমার গার্লফ্রেন্ড আছে ভেবে মেয়েদের নজর দূর হবে। রাফিয়াকে কিভাবে সরাই? ও এখানে থাকলে আমি পাকনিকে ঠিকমতো দেখতে পাবোনা। হলুদ পরী সেজে আমার ছোট্ট পাকনি স্টেজে যাবে!! ভাবলেই এক্সাইটেড হয়ে যাই, ওহ্ গড!!!আচ্ছা ও কি আজো পাগলামি করবে!! “মুগ্ধ ভাই আপনি কিউট” গলায় পাগল করা হাসি দিয়ে বলবে? পাকনিটা বড় হহয়ে পাজি হয়ে গেছে!! আমি আমার কল্প দুনিয়ায় ওকে নিয়ে ভাবতেই পাকনি আমার সবার সাথে হাজির। হলুদ শাড়িতে হলুদ পরীটা!!! আমি ফোন দিয়ে আড়চোখে টুকটুকিকে দেখে চলছি। ও আমার দিকে মাথা টু পা স্ক্যানিং করছে। ভয় পাচ্ছি আবার পাগলামো শুরু করে কিনা। না না কন্ট্রোল মুগ্ধ। জাস্ট কাম!!

-চলবে

-Fabiyah_Momo

#বি_দ্র আগামী পর্ব ধামাকা🔥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here