যদি বলি ভালোবাসি🍁 পার্ট ১২

0
1288

#যদি_বলি_ভালোবাসি♥
#PART_12
#FABIYAH_MOMO

মনিরা আর আমি রওনা দিলাম মুগ্ধ ভাইয়ার বাসার দিকে, উনি সম্ভবত হসপিটালে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন, কেননা কেবল দশটা বাজে এসময় উনি হসপিটালে চলে যান। আম্মু বিয়ের কার্ডসহ অন্যান্য কাজ দেখতে ব্যস্ত তাই আমার বেগ পেতে হয়নি মুগ্ধ ভাইয়ার বাসায় যেতে। আমাদের গেট থেকে সোজা রাস্তা ধরে ডানদিকে উনাদের বাসার গেট। বেশিক্ষন লাগেনি এক চান্সে ভেতরে ঢুকে সিড়ি বেয়ে তিনতলায় দৌড়। বড় ফ্লাট বাসা, মেইন দরজা সর্বদা খোলাই থাকে অবশ্য বাড়িওয়ালা বলে কথা। মনিরা আমাকে কন্ঠ নিচু করে বলে উঠলো-
–শোন, তুই মুগ্ধ ভাইয়ার রুমে ঢোক। আমি রাফিনের রুমে যেয়ে টাংকি মারতেছি, এইদিকে যা বলছি ওইটা করিস। যা..
আমি হ্যা বোধকে মাথা নাড়িয়ে বামদিকের রুমে ঢুকলাম, মনিরা ঢুকলো ডানদিকের রুমে।

মনিরা রাফিনের রুমে ঢুকতেই লক্ষ করলো রাফিন এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। সে মনে মনে শয়তানি ভেটকি মেরে ওড়নার বাধন থেকে একটা পলিথিনের পোটলা বের করলো।বিছানায় রাফিন উপুড় হয়ে খালি গায়ে ঘুম। মনিরা ওড়নাটা কাধ থেকে কোমর বরাবর বাকা করে বেধে পলিথিনের গিট খুলে বের করলো লাল মরিচের গুড়া। এক খাবলা হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘুমন্ত রাফিনের নাকের ছিদ্রপথে সুড়সুড় করে ঢুকিয়ে পাশে থাকা ভাজ করা কাথা দিয়ে দিল সমস্ত মুখ ঢেকে। নাসাছিদ্র বেয়ে ডিরেক্ট যেয়ে পৌছালো শ্বাসনালির অন্ত্রসমূহে। এক চিৎকার মেরে কাথা সরাতেই মনিরা টেবিলে থাকা ফুলদানি তুলে মাথায় দিল ‘ধুমম’ বারি! রাফিন বেহুশ! মনিরা নিজেকে সুপার লেডি ভেবে হাত ঝাড়া দিয়ে ভাব মেরে দেখালো…যেন বিশ্বজয়ী রাজাকারকে হাতের মুঠোয় এনে খুন…

মনিরা রাফিনের কি দশা করছে খোদা মালুম। কি এক কিডন্যাপের ফাউল প্ল্যান বানালো আমার কোনোদিক দিয়েই ঠিক মনে হচ্ছেনা। এইটা কোনো প্ল্যান হলো? জলজ্যান্ত তরতাজা এক লম্বা ভেতুমকে কোলে করে কিডন্যাপ করবে? ডোন্ট নো! মুগ্ধ ভাইয়ার রুমের সামনে উকি দিয়ে দাড়িয়ে আছি, উনি শার্ট গায়ে বোতাম না লাগিয়ে পুরো ঘরে এটা ওটা খুজে চলছে। শরীরে স্নিগ্ধতা দেখে মনে হচ্ছে মাত্র গোসল করেই প্যান্ট শার্ট গায়ে দিয়েছেন, চুল ভিজে ঝরঝরে হয়ে আছে, আবার ফোটা ফোটা পানির কনাও ফ্লোরে ছিটে পড়ছে। বদ লোক একটা! চুল না মুছে শার্ট গায়ে প্যান্ট পড়ে কেউ এভাবে ঘরময় ঘুরে! রেজিস্টেড বর হলে কলার টেনে চুল মুছে আদর করে দিতাম। উনি হাতে ঘড়ি পড়ে পকেটে ওয়ালেট, আরেক পকেটে রুমাল ঢুকাচ্ছেন। এখনো শার্টের বোতাম লাগাতে ধ্যান নেই। বুকের দিকে তাকালে আমি শেষষ!! চোখ আটকে যায়! বেহায়ার মতো চোখ আটকে যায় উফ জ্বালা! উনি ড্রেসিংয়ে সামনে দাড়িয়ে বোতামে হাত দিলে আমি চুপ করে ভেতরে ঢুকে বুক শেল্ফের সাথে হাত ভাজ করে দাড়াই। উনি আয়নায় আমার ছবি দেখে থতমত হয়ে গেলেন। লাগাতার চোখের পলক ঝাপটাচ্ছেন। এবার তো চোখ কচলানো শুরু…আমি উনার কীর্তিকান্ড দেখে খিলখিল করে হাসছি। উনি বোতাম লাগানো বন্ধ করে আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন-
–আমি কি দিন দুপুরে ইমেজিন করা শুরু করলাম? কাকে দেখতেছি? ওই পাকনি আমার রুমে আসবে? মুগ্ধ মুগ্ধ ভালো হ ভালো হ…নাও সি ইজ ইউর ভাবি, ইয়েস ভাবি.. ও এখানে আসবেনা। জাস্ট ভুল দেখছি, ইয়েস ভুল!
‘ভাবি’? আমি উনার কোন জনমের ভাবি লাগি? চড়ায়া দাত ফেলে দিতে ইচ্ছে করে নাকি! বদ ফালতু ভেতুম লোক! আমি বুক শেল্ফ থেকে সোজা হয়ে দাড়িয়ে উনার সামনে যেয়ে দাড়ালাম, উনি আমার দিকে ঘুরে দাড়িয়ে লোমহর্ষক চাহনিতে তাকিয়ে আছেন। আমার দিকে তোতলানো ভঙ্গিতে বলে উঠলেন-
–তুতুতুইই ? তুতুতুই সিসিরিয়াসসলি আআমার রুমে?
আমি শার্টের বোতাম গুলো লাগিয়ে দিতে বলে উঠলাম-
–চড় লাগাবো! এটা আমার হবু রুম। আপনার রুম কিসের? শুনুন, যখন তখন শার্টের বোতাম খুলে জিনিস খোজাখুজি করবেন না, ছেচ্চর গুলো গিলে খাওয়া শুরু করবে।
উনি আমার কথায় নিজের দিকে তাকালেন। পুরো রেডি হয়েও সর্বশেষ শার্টের বোতাম না লাগিয়ে তুরতুর করে যা যা করলেন সব একবার ফ্ল্যাশব্যাক মারলেন। উনি মুখে ফুলস্টপ লাগিয়ে হ্যাংলা মেরে হা করে আছেন। আমি শেষ বোতামটা সুন্দর করে লাগিয়ে বলে উঠলাম-
–এমনেই আপনি বাচ্চা লুক মেরে ঘায়েল করে ফেলেন আবার শার্টের বোতাম খুলে ফিগার দেখিয়ে পুরো মেরেই ফেলবেন। সাবধান! কোনো মেয়ে যদি পিছে পড়ে গলা উচিয়ে বলবেন ‘আমার বউ আছে’। নাহলে বায় পাস ডায় পাস বানিয়ে মাটিতে পুতে ছাড়ব!বৃষ্টিতে ভিজবেন না একদম! ফিগার ভেসে মেয়েদের আহত করে ফেলবেন! মনে থাকে যেনো!

উনি আমার কথায় কি বুঝলেন, আমাকে এক ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিলেন। আমি কিছুটা দূরে যেয়ে থেমে দাড়ালাম। উনি আমার থেকে আরেকটু দূরে সরে হাতা ফোল্ড করতে লেগে পড়লেন। গম্ভীর ভাবুক মুখ বানিয়ে আমাকে একপ্রকার না দেখার ভান করছেন, যেনো আমি রুমে নেই। উনার রুমটা খুব গোছালো। উনি ছেলে…রুম গোছালো, ভাবা যায় এগ্লা? বেড থেকে শুরু সবকিছু গোছানো। কিন্তু ভাই, বিশ্বাস করেন উনার বিছানা দেখলে মনে হয় পুরো দুনিয়া নিয়ে পাশে ঘুমান। ল্যাপটপ, ওয়াটার বোতল, চশমার বক্স, নিউরো সেকশনের গাদা গাদা ছয়টা বই, মোবাইল, কোনায় তাজা ফুলের টব, টেবিল ক্যালেন্ডার…সব! সবই যেন বিছানায় স্থান পেয়েছে কিন্তু একটা বউ হলেই সংসার শুরু, আহা!! কালো ও ডার্ক রেডের কম্বিনেশনের শার্টটা গায়ে চরম মানিয়েছে।বিছানায় বসে উনার দিকে মিটিমিটি হাসছি… কারন, উনার রাগী গম্ভীর ভেতুম ওয়ালা ফেসটা সেই কিউট। গালদুটো টেনে ধরতে ইচ্ছে করে। আমি তাকিয়ে থাকলে উনি এটিটিউড নিয়ে বলে উঠেন-
–তুই আমার হবু ভাবী। আগামী শুক্রবার রাফিন আর তোর বিয়ে। প্লিজ কোনো সিনক্রিয়েট করিস না চলে যা। কেউ আমার রুমে দেখে ফেললে গোলমেল বেজে যাবে। প্লিজ রিকুয়েস্ট!
–আমি হবু ভাবী? তো কোন সাহসে ভাবীকে আপনি তুই করে ডাকছেন! আমি অধিকার দিয়েছি? ন্যারো মাইন্ডের মেন্টালিটির মতো তুই তোকাড়ি করতে লজ্জাবোধ হয়না?
–ওহ সরি। আমাকে মাফ করবেন প্লিজ। আপনি আমার ভাবী হিসেবে মায়ের সমান,সরি আপনাকে রিসপেক্ট করতে ভুলে গিয়েছিলাম। সরি।
–ভালো ভালো। আমি ভাবী না!! ভাবীর মর্যাদা বোঝানো দরকার! এইযে, মুগ্ধ আমার পাশে বসো! কথা আছে!
উনি আমার দিকে ঘাপটি চাহনিতে তাকিয়ে আছেন। কোনো উপায় না পেয়ে বেচারা আমার পাশে এসে চোখ নামিয়ে বললো-
–বলুন ভাবী, কি কথা শোনার জন্য আমি ধন্য হতে পারি…
–প্লিজ আমাকে আপনি বা ভাবী বলে ডাকবেন না। আমি এখনো আপনার ভাইয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইনি। আমি আপনাকে শেষবারের মতো অনুরোধ করতে এসেছি প্লিজ আপনি আমায় বিয়ে করার মত পোষন করুন। নতুবা আমি স্বেচ্ছায় খারাপ কিছু করে ফেলবো! তার জন্য শুধু আপনি দ্বায়ী থাকবেন!
মুগ্ধ মর্মাহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। চোখ দুটোতে প্রচুর না বলা লুকোচুরি কথা। উনি কিছু বলতে যেয়েও আমার নিকট কথা চাপাচ্ছেন। বিগলিত ভাবভঙ্গিতে বলে উঠলেন-
–আম্মু, আন্টি আমাদের বিয়ে মানবে না পাকনি। উনি ছোট থাকতেই তোর কথা রাফিন ভাইয়ের জন্য বলে রেখেছেন। আমি তোর আর রাফিন ভাইয়ের পথের কাটা হয়েছি। আর কিচ্ছু না। “ওয়াদা” জিনিসটা সবচেয়ে বড় কিছু, যেটা এই যুগের পরিবার বা জেনারেশনের কাছে তুচ্ছ ব্যাপার। তুই প্লিজ বুঝ!
–লাস্ট কথা বলবো! আপনি বিয়ে করবেন কি করবেন না!
–আমি বিয়ে করতে চাইলেও করতে পারবো না….
–আপনি অনেক কিউট জানেন!! যেভাবে মুখ কালো করে বিয়ে করবেন না বলছেন উল্টো আরো বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছে করছে!!
উনি হাসলেন। পাপড়ি ভরা চোখ দুটোতে মুচকি হাসির রেশ ফোটালেন। বৃদ্ধাঙ্গুলে ঠোটের প্রান্ত মুছে আমার দিকে নিরব দৃষ্টিতে তাকালেন,
–আমি সুন্দর?
–মারাত্মক কিউট বাচ্চা।
–চুপ পাকনি!! আমি তোর বড়! বাচ্চা হতে যাবো কেন!!
–দেখতে তো বাচ্চায়ায়ায়ায়া……

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here