প্রাপ্তির হাসি পর্ব-২

0
10640

#প্রাপ্তির_হাসি
#পর্ব_০২
DI YA

আমার মেয়েকে আপনি কোন সাহসে এখানে নিয়ে এসেছেন।বাচ্চাদের চুরি করার ধান্দা করেন নাকি।রিয়ান আহমেদের মেয়েকে আটকে রাখার জন্য আপনাকে কঠিনতম শাস্তি ভোগ করতে হবে। – রিয়ান

হঠাৎ এরকম কথা শুনে পিছনে তাকাতেই আমি দেখতে পাই অফিসিয়াল ড্রেস পরিধান করা একটা ছেলে আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই রিয়ানা বলে উঠে,

পাপা তুমি কেনো ভাল আন্টিকে বকা দিচ্ছো।আন্টি কিছু করেনি। আমিই ভুল করে আন্টির গাড়ির সামনে এসে পরে যাই।পরে আন্টি তো শুধু আমার হেল্প করে।জানো আমার হাতে কেটে গিয়েছিল।আন্টি বলছে আন্টি বলছে আন্টি ম্যাজিক পারে। তারপর কখন যে ব্যান্ডেজ করে দিলো আমি বুঝিইনি। তাই না আমি আন্টির নাম ভালো আন্টি দিয়েছি – রিয়ানা মিষ্টি করে হেসে কথাটা বললো।

রিয়ানার কথা শুনে উনি কপাল কুচকে বলে উঠলেন,

তুমি কেনো এখানে চলে আসলে একা একা রিয়ানা।মেইন রোডে এত গাড়ি। হঠাৎ যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যেত তখন কি হতো শুনি – রিয়ান

আমার তোমার উপর প্রচুর রাগ হয়েছিল।এমনিই তো তুমি আমাকে টাইম দাও না।যাও আজকে জোরাজোরি করতে ঘুরতে বের হলাম তাও তুমি ফোনে অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে।বলো এটা কি ঠিক ? আমার কি রাগ হয়না ? – দুই হাত ভাজ করে রাগি সাজার ভঙ্গিতে বললো রিয়ানা

রিয়ানার কথাগুলো বলার ধরণ দেখে আমি আর হাসি দমিয়ে রাখতে পারলাম না।হাহা করে হেসে দিলাম আমি।রিয়ানা ও হেসে দিল আমার সাথে। তারপর আমাকে ওর কাছে ডেকে আমার গালে একটা কিসি দিয়ে বললো,

তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর ভালো আন্টি – রিয়ানা

কিন্তু পাখি আমার হাসির থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর হচ্ছে তোমার হাসি – আমি

সত্যি – রিয়ানা

হুম – আমি

রিয়ানা অনেক হয়েছে এখন বাসায় চলো।কিছুক্ষণ পর আমার জরুরি একটা মিটিং আছে। তোমাকে বাসায় পৌছিয়ে দিয়ে আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে – রিয়ান

ঠিক আছে যাও তুমি গিয়ে এখানে গাড়ি নিয়ে আসে।আমি বরং ভালো আন্টির সাথে একটু কথা বলে আসি।- রিয়ানা

তারপর রিয়ান রিয়ানার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো গাড়ি নিয়ে আসতে।আর রিয়ানা বললো,

ভাল আন্টি – রিয়ানা

হুম আম্মু বলো – আমি

তোমার কাছে কাগজ আর কলম আছে ? – রিয়ানা

হুম কেনো ? – আমি

উফফ তুমি ও দেখি পাপার মত শুধু প্রশ্নই কর এত এত। আগে নিয়ে এসো ওইগুলো তারপর বলছি – রিয়ানা
আমি কাগজ কলম নিয়ে ওর সামনে যেতেই ও আমাকে বলে,

এখন জলদি এখানে তোমার নাম্বার লিখে আমাকে দাও। জলদি কর পাপা এখনি এসে পরবে পরে লেট হলে আমাদের দুজনকেই বকা দিবে।তুমি জানো আমার পাপা পুরো একটা এংরি বার্ড।হঠাৎ হঠাৎই রেগে বোম হয়ে ফেটে যায়।কিন্তু আমাকে অনেক ভালোবাসে – রিয়ানা

ওর কথা শুনে আমি খানিকটা হেসে ওকে আমার নাম্বার টা লিখে একটা কাগজে দিয়ে দিলাম।তারপর ও ওর পাপার সাথে চলে গেল। আমিও আবার হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম।

অন্য দিকে,

রিয়ানা পুরো রাস্তা ভরে শুধু তার ভালো আন্টির কথাই বলতে বলতে এসেছে।রিয়ান ওর কথা খুব একটা পাত্তা দেইনি।ওকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে সে অফিসে চলে যায়।আর রিয়ানা বাসায় এসে দৌড়ে ওর দাদুমনির রুমে চলে যায়।গিয়ে দেখে দাদুমনি বসে বসে গল্পের বই পরছে। ওকে দেখেিি ওর দাদুমনি ওকে কাছে ডাকে। ও যেতেই বলে,

কেমন কাটলো দিনটা আমার দাদুমনির ? – রিয়ানার দাদুমনি লিমা আহমেদ

উফফ কি আর বলবো তোমাকে ৫০% ভালো কেটেছে ৫০ % খারাপ কেটেছে – রিয়ানা

তা ভাল আর খারাপের কারণগুলো বলো তো আমাকে দেখি আমিও শুনি – লিমা আহমেদ

তুমি তো জানোই তোমার ছেলে সবসময় কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।আমরা পার্কে যেতেই তার অফিস থেকে একটা কল আসে।কথা বলতেই সে ব্যস্ত হয়ে যাই।তাই আমি রাগ করে পার্কে থেকে বেরিয়ে রাস্তায় চলে যাই। তারপর রিয়ানা একে একে সব ঘটনা খুলে বলে ওর দাদুমনিকে। সব শুনে তিনি বলেন,

আমারো তো এখন দেখতে ইচ্ছে করছে সেই ভাল আন্টিকে। যাকে আমার মনির এত ভাল লেগেছে – লিমা আহমেদ

আরে টেনশন নিও না আমি ভালো আন্টির নাম্বার নিয়ে এসেছি – রিয়ানা

কই নাম্বার? – লিমা আহমেদ

রিয়ানা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত খালি।ও বুঝতে পারে ও হয়তো হারিয়ে ফেলেছে ওর ভালো আন্টির নাম্বার। তাই কান্না করতে শুরু করে। রিয়ানাকে হঠাৎ কান্না করতে দেখে লিমা আহমেদ বলে উঠেছে,

কি হয়েছে আমার দাদুমনিটার এভাবে কান্না করছে কেন সে ?- লিমা আহমেদ

আমি না ভালো আন্টির নাম্বার হারিয়ে ফেলেছি? এখন আমি তাকে কই পাব? – বলে আবার কান্না করতে লাগে রিয়ানা

দেখো দাদু কান্না কর না আল্লাহ যদি চায় তো তোমার সাথে তোমার ভাল আন্টির আবার দেখা হবে।এখন আল্লাহর কাছে চাও সে যেন তোমার সাথে তোমার ভাল আন্টির দেখা করিয়ে দেয় আবার – লিমা আহমেদ

আচ্ছা – রিয়ানা

~~~
রিয়ানা গাড়ি থেকে নামতেই রিয়ান দেখতে পাই একটা কাগজ পরে আছে রিয়ানার সিটে।সে এটা খুলে বুঝতে পারে এটা সেই মেয়েটির নাম্বার।কারণ নাম্বারের উপর লিখা ছিল ভাল আন্টি । তারপর সে কিছু একটা ভেবে গাড়ির জানালাটা খুলে কাগজটা বাইরে ফেলে দেয়।

______

নিজের কেভিনে বসে প্রাপ্তি রিয়ানার কথা চিন্তা করছে।মেয়েটা নাম্বার তো ঠিকই নিলো কিন্তু কল তো আর করলো না। আবার মন ভাবছে ওর কি আর আমার কথা আছে। কিন্তু প্রাপ্তি ভুলতে পারছে না রিয়ানাকে।এত কিউট একটা বাচ্চা। যে কাউকে হুটহাট নিজের মায়ায় জড়িতে ফেলতে পারবে, আর কথাগুলো ও বলে পুরো নিজের মত মিষ্টি মিষ্টি। রিয়ানার কথা ভাবছে আর আনমনেই সেদিনের ঘটনা মনে করে হাসছে প্রাপ্তি।

আজকে ওর তেমন কোনো রোগী নেই।তাই ঠিক করলো ঘুরে ঘুরে অন্য অন্য রুমের রোগীদের একটু দেখবে।কিন্তু তার আগে রিসেপশনে তার কিছু কাজ আছে। সেই জন্য সে রিসিপশনে চলে যায়।

কিন্তু সেখানে আসতেই সে দেখতে পায় বেডে শুইয়ে রিয়ানাকে একটা কেভিনে ঢুকানো হচ্ছে। রিয়ানে এখানে আবার এই অবস্থায়। তাই সে সেইদিকে এগিয়ে গেলো। নার্স সবাইকে কেভিনে ঢুকতে নিষেধ করেছে ভিতরে ডাক্তার রিয়ানাকে দেখছে।

মিস্টার রিয়ান কি হয়েছে রিয়ানার? – আমি

সেটা আমি আপনাকে কেনো বলবো ? আর আপনি কে? আমার মেয়ের কথাই বা জিজ্ঞেস করছেন কেন? – রিয়ান

আরে কিছুদিন আগে না আপনার আর রিয়ানার সাথে আমার দেখা হলো।আমি প্রাপ্তি ওর ভাল আন্টি – আমি

ও মা তুমিই সে। মামনির ভাল আন্টি। আমি হচ্ছি ওর দাদুমনি।জানো মেয়েটা রোজই তোমার কথা বলে।- লিমা

সব ঠিক আছে আন্টি কিন্তু ওর কি হয়েছে? – আমি

আসলে দুইদিন ধরে প্রচুর জ্বর ওর।ডাক্তার মেডিসিন দিয়ে গেছে। তাও ঠিক মত খাচ্ছে না।আজকে অতিরিক্ত জ্বরে অজ্ঞান হয়ে গেছে । তাই তো চটজলদি এখানে নিয়ে আসলাম।কি যে হলো মেয়েটার – বলতে বলতে কান্না করে দিল লিমা আহমেদ

নার্সের থেকে জানতে পারলাম ডাক্তার আকাশ রিয়ানার চেকআপ করছে।বাইরে বসে ওয়েট করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পরই ডাক্তার আকাশ বেরিয়ে আসলো।আমরা তিনজন তার দিকে এগিয়ে গেলাম।মিস্টার রিয়ান বললেন,

আমার মেয়ে কেমন আছে ডাক্তার? – রিয়ান

আসলে – ডাক্তার আকাশ

আসলে কি ডাক্তার আকাশ ? – আমি।

মনে মনে ভয়ের আবির্ভাব হতে শুরু করলো আমার। মাথায় আসতে শুরু করে দিল নানারকম দুশ্চিন্তা।

আসলে পেশেন্টের অবস্থা এখন ভাল নেই – ডাক্তার আকাশ

চলবে🥰

( গত পর্বে ভুলে রিশাদের জায়গায় রিফাত লিখে ফেলেছিলাম সরি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here