আমার পুতুল বর লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম) পর্ব : ৫০

আমার পুতুল বর
লেখিকা: আরশি জান্নাত (ছদ্মনাম)
পর্ব : ৫০

বিগত আধাঘন্টা যাবৎ সুজানার ঘরের দরজার বাইরে আড়ি পেতে দাড়িয়ে আছে রিক, রোজ আর ন্যান্সি।
মাহির আর সুজানা ওর রুমে বসে কথা বলছে আর ওরা কি কথা বলছে তা জানার জন্যই এরা তিনজন এভাবে কান খাড়া করে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আরশি বেডে বসে ছটফট করছে ওর ও ভীষন জানতে ইচ্ছে করছে ওদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে। একবার যেতে চেয়েছিলো রিকদের সাথে কিন্তু সূর্যের রাম ধমক খেয়ে ওর ইচ্ছে কুতুবমিনার চলে গেছে। সূর্যের দেওয়া ধমকের কথা মনে পড়তেই একবার আড়চোখে পাশে তাকালো। বেডে আধশোয়া হয়ে মোবাইল টিপছে সূর্য। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে, কপাল কুঁচকে কিছু একটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে। সামনের বড়ো বড়ো চুল নাকের উপর এসে পড়ছে।
আরশির খুব ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুলগুলো ছুঁয়ে দেখতে। লজ্জা আর সংকোচের জন্য পারছে না। চোখ সরিয়ে নিয়েও আবার তাকালো। কাপা কাপা হাত এগিয়ে নিয়ে গেলো সূর্যের মাথার কাছে। যেই হাত দিয়ে চুল ধরতে যাবে তখনি সূর্য চট করে আরশির দিকে তাকালো। আরশির হাত শূন্যেই জমে গেছে। চোখ বড়ো বড়ো করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকালো। সাথে সাথে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললো। সূর্য ভ্রু কুঁচকে একবার আরশি কে দেখছে তো আরেকবার আরশির কাপা কাপা হাতকে দেখছে।
~ কি করছিলে? আমার চুল টানতে নিচ্ছিলে নাকি?
~ ন,,না না। আ,,আমি,,তো শুধু চু,,ল ধরে দ,,দেখতে চাচ্ছি,,লাম।।
~ চুল ধরে দেখতে চাইছিলে! কিন্তু চুল ধরে দেখার কি আছে বুঝলাম না। এই সত্যি করে বলোতো বদলা নিতে আমার চুল টানার কথা ভাবছিলে না তো?
~ ব,,বদলা কিসের বদলা?
~ ওদের সাথে আপুর দরজার বাইরে আড়ি পাততে দেইনি দেখে? ( চোখ ছোট ছোট করে )
~ না না কি বলছেন এসব! আমি সত্যিই শুধু একটু ধরে দেখতে চেয়েছিলাম আর কিছু না। সরি।( মাথা নিচু করে )
হঠাৎ সূর্য আরশি কে নিজের কোলে নিয়ে আসলো। তারপর মাথাটা নিচু করে আরশির দিকে এগিয়ে দিলো। আরশি ড্যাবড্যাব করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্য কি করতে চাইছে ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সূর্য ওভাবে থেকেই বললো,,
~ কি হলো? তুমি না বললে চুল ধরে দেখবে, তাহলে দেখছো না কেনো?
~ হ্যা?
~ হ্যা জলদি করো কতক্ষন এভাবে ঝুঁকে থাকবো ঘাড় ব্যাথা করবে তো!!
আরশি একরাশ বিস্ময় নিয়েই ওর কাপা কাপা ডান হাতটা সূর্যের চুলে রাখলো। ওমনিই সূর্য মাথা সোজা করে আরশির চোখে চোখ রাখলো। আরশি হাত সরাতে নিলে সূর্য বাঁধা দিলো।
~ এখনো এতো সংকোচ কিসের আরশি? কেনো আমার সাথে তুমি ফ্রি হতে পারছোনা। আমার সবটুকুই তো তোমার সেখানে আমার চুল ধরবে তারজন্য এতো ভাবতে হবে কেনো? আমাকে কি মেনে নিতে তোমার সমস্যা হচ্ছে?
~ কি বলছেন এসব সমস্যা কেনো হবে?
~ তাহলে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছো কেনো?
~ এমন কিছুই না আপনি ভূল ভাবছেন!
~ ওকে তাহলে বলো আমায় ঠিকটা কি?
~ আ,,আ,,আমার ল,,লজ্জা করে।
সূর্য মুচকি হেসে আরশির কপালে চুমু দিয়ে বললো,,
~ ঠিক আছে তুমি এভাবেই লজ্জা পেতে থেকো আর আমি তোমার লজ্জা ভাঙ্গিয়ে দিতে থাকবো।
আরশি ও সূর্যের দিকে তাকিয়ে হাসলো। এর মধ্যেই একপ্রকার হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো রিক, রোজ আর ন্যান্সি। সূর্য আর আরশির দিকে তাকিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো। সূর্য আরশি অবাক হয়ে ওদের দেখছিলো কিন্তু ওদের এভাবে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। রিক হাসতে হাসতে বললো,,
~ ভাই আমি কয়জায়গাতে নজর রাখবো বল তো। বোনের দিকে নজর দিতে গেলে ভাই তার কাহিনি স্টার্ট করে দেয়। আবার ভাইয়ের দিকে নজর দিতে গেলে বোনের কাহিনী মিস হয়ে যাবে। কি একটা সমস্যায় পড়লাম তাইনা রোজি??
রোজ কিছু বললো না শুধু হেসেই যাচ্ছে। সূর্য আর আরশি রিকের কথার আগামাথা বুঝলো না। বোকার মতো তাকিয়ে আছে এটা দেখে ওরা আরো বেশি বেশি হাসছে। ন্যান্সি হাসতে হাসতেই বললো,,
~ ও গড আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। ( নিজেকে একটু শান্ত করে ) কি গো আরশি মনি আজ কি সূর্যের কোলেই থাকবে ? চাইলে থাকতেই পারো আমাদের কোনো প্রবলেম নেই আমরা বরং লাইভ রোম্যান্স ইনজয় করতে পারবো।
ন্যান্সি কথা শুনে আরশি তড়িৎগতিতে নিজের দিকে তাকালো। ও সূর্যের কোলে বসে আছে। জিভে কামড় দিয়ে দ্রুত সরতে নিলেই সূর্য আটকে দিলো। চোখ রাঙিয়ে আরশির দিকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে ওকে পাশে বসিয়ে দিলো। আর বাকিদের দিকে কটমট করে তাকালো।
~ তোরা বেশি কথা বলিস। এখানে কি করছিস? তোদের অতি জরুরি কাজ শেষ হয়েছে?
~ আর কাজ ধুর। (আরশির পাশে বসে ) এতো আস্তে কথা বলছে যে ছাতার মাথা কিছু শুনতেই পারলাম না ঠিক করে। শুধু এটুকু বুঝতে পারলাম যে আপু কান্না করছিলো আর ভাইয়া এটা ওটা বলে আপুকে থামানোর চেষ্টা করছিলো। ( রোজ )
~ মাহির ভাইয়ের এতো তাড়া কিসের ছিলো। আর কয়দিন অপেক্ষা করতে পারলোনা? বলেছিলাম আপুর থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে কিন্তু দেখ কি করেছেন উনি? এখানে এসে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। ধ্যাত!!
আরশি ভ্রু কুঁচকে সূর্যের দিকে তাকালো। তারপর রাগি গলায় বললো,,
~ এই আপনি আপ্পির আপন ভাইতো? আপনার বোন কান্না করছে, কষ্ট পাচ্ছে কোথায় আপনার নিজে গিয়ে মাহির ভাইয়ের সাথে আপ্পির দেখা করানোর কথা ছিলো সেখানে আপনি এসব কি বলছেন। পাষাণ লোক একটা!
~ আরে তুমি আমায় বকছো কেনো? আমি তো ওদের ভালোর জন্যই বলছি। আর কিছু সময়ের দূরত্বের জন্য যদি সারাজীবন একসাথে থাকা যায় তাহলে সেই সাময়িক দূরত্বটাই ব্যাটার নয় কি?
~ কোনো কিছুই বেশি বেশি ভালো না। যথেষ্ঠ দূরে থেকেছে ওরা এখন ওদের কাছাকাছি থেকেই নিজেদের মধ্যে সব ঠিক করে নিতে হবে।
~ হুম। আমি এক কাজ করি ওদের কাছে যেয়ে দেখি, কি হয়েছে তা ও তো জানতে হবে।
~ আপনি গেলে আমিও যাবো। আমাকে নিয়ে চলুন।
~ মানে কি? তোমার যে পা কাটা তা কি ভূলে গেছো? বেডের থেকে নামা নিষেধ তোমার। আমি একাই যাচ্ছি।
~ কক্ষনোই না আমিও যাবো। আমার এখন পায়ে ব্যাথা নেই এক পায়ে ভর দিয়ে হেঁটে যেতে পারবো। প্লিজ যাবো আমিও।
~ আরশি!!
~ সূর্য প্লিজ প্লিজ!!
সূর্য একটা শ্বাস ফেলে আরশির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। আরশি হকচকিয়ে সূর্যের গলা জড়িয়ে ধরলো।
~ আরে কোলে নেওয়ার কি দরকার ছিলো আমিতো হেঁটেই যেতে পারতাম।
~ যেতে হলে এভাবেই যেতে হবে নয়তো রুমে বসে থাকো।
আরশি আর কিছু বললো না। সূর্য আরশি কে নিয়ে সুজানার ঘরের দিকে গেলো। ওদের পিছু পিছু রিক, রোজ আর ন্যান্সি ও এলো।

~ হ্যা রে মিহি মাহির কে ফোন দিয়ে জানিয়েছিস তোর বাবার কথা?
~ ভাইয়ার মোবাইল নাকি বন্ধ!
~ এখন একবার দিয়ে দেখ। ছেলেটা পরে জানতে পারলে রাগ করবে কিন্তু।। বলবে আগে কেনো বললে না আমাকে।
~ আচ্ছা ঠিক আছে কল দিচ্ছি আমি।

অভ্র মিহির ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি সেই যে ঢুকেছে আর বের হচ্ছে না। উঠে যে একবার যাবে সেই উপায় নেই। সবাই এখানে উপস্থিত আছে।
~ তোমরা বসো বাবা বেলা অনেক হলো খেয়ে নাও। নিধি মামনি কোথায় গেলো?
অভ্র এমন একটা সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো তাই চটজলদি বললো,,
~ আন্টি আমি ডেকে আনছি।
অভ্র দ্রুত মিহির ঘরে চলে গেলো। মৃধা রহমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। রেহান হালকা কেশে বললো,,
~ আন্টি মাহির ভাই আসবে না?
~ হুম? ওহ মিহি কে বললাম ফোন করতে দেখি কি বলে । বাবার কথা শুনলে অবশ্যই ছুটে চলে আসবে।
~ তাহলে আমরা আর কিছুক্ষণ ওয়েট করতাম।
~ না না বাবা তোমাদের ওয়েট করতে হবে না তোমরা বসো। এমনি অনেকক্ষণ হয়ে গেছে কোন সকালে খেয়েছো ঠিক নেই। বসো বসো।

~ সুজি প্লিজ ইয়ার এবার অন্তত থাম আর কতো কাদবি? বেঁচে আছি আমি এখনো মরে যাইনি!!
সুজানা আরো জোরে কাদা শুরু করলো। সাথে এক হাত দিয়ে মাহির কে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে। মাহির সুজানার দুহাত ধরে বললো,,
~ আরে আরে কি হলো?
~ বেয়াদব, ফাজিল, শয়তান ছেলে। আমাকে কষ্ট দিতে তোর ভালো লাগে তাইনা? মরার কথা কেনো বলা লাগবে তোর। অসভ্য ছেলে। ( কান্না করতে করতে )
~ আ,,আচ্ছা সরি মাফ করে দে। আর কখনো বলবো না। এবার প্লিজ কান্না অফ কর।
সুজানা কান্না বন্ধ করলেও থেমে থেমে নাক টানছে।
মাহির অসহায় ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
~ আসতে পারি!
মাহির আর সুজানা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো সূর্য আরশি কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পিছনে রিক, রোজ আর ন্যান্সি।
~ হ্যা এসো কিন্তু আরশির কি হয়েছে কোলে নিয়ে হাটছো কেনো?
আরশি কে বেডে বসিয়ে জবাব দিলো,,
~ ম্যাডাম তার রান্নার কামাল দেখাতে গিয়ে পা কেটে ফেলেছেন।
~ রান্না করতে গেলে তো হাত কাটার কথা কিন্তু ওর পা কাটলো কি করে? ( অবাক হয়ে )

সুজানা মাহির কে সব বললো। মাহির আরশির দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। এটা দেখে আরশি মুখ ফুলিয়ে সূর্য আর সুজানার দিকে তাকালো। ওরাও হাসছে।
~ যাক এতক্ষনে মহারানী একটু হাসলেন।। আপনার হাসি মুখখানা দেখতে পেয়ে এই গরিব প্রজার জীবন ধন্য হলো রানিমা।
মাহিরের নাটকীয় ভঙ্গিমায় কথা বলা শুনে সবাই হেসে দিল। সূর্য আরশির পাশে বসে মাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,,
~ ভাইয়া কথাতো এটা ছিলোনা! আপনি হুট করে এভাবে আপুর সাথে দেখা করতে চলে এলেন কেনো?
~ কি আর করতাম বলো! তোমার বোন যেই হারে কান্নাকাটি করা শুরু করেছিলো নির্ঘাত ওর চোখের পানিতে বন্যা হয়ে যেতো যার জন্য তোমাদের বাড়ি-ঘর সব ভেসে যেতো সাথে তোমরাও তাই তো দ্রুত ওর কান্না বন্ধ করতে চলে আসলাম।

সবাই ওর কথা শুনে হেসে দিলো। সুজানা চোখ পাকিয়ে মাহিরের দিকে তাকিয়ে ওর চুল টেনে ধরলো।

~ কি বললি তুই? আমি তোর সাথে কথা বলতে না পেরে কতোটা কষ্টে ছিলাম জানিস? কোনোদিন কারো জন্য এতো কান্না করিনাই যতটা তোর জন্য এই কয়দিনে করছি। রাতে ঘুমোতে পারিনি, খেতে ইচ্ছে করতো না, কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগতো না। আর তুই এখন মজা করছিস আমাকে নিয়ে। বেয়াদব, অসভ্য, ফাজিল, লাফাঙ্গা , বদ ছেলে কোথাকার। দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে!
~ আরে সুজি কি করছিস ব্যাথা পাচ্ছি তো। আহহ! সরি সরি আমি আর মজা করবো না। ছেড়ে দে..
আহহ! বইন মাফ কর চাইলে হাতে মার, পায়ে মার নাহয় পিঠে মার তাও চুল টানিস না।
~ ঐইইইই! কি বললি তুই? বইন লাগি আমি তোর? হ্যা বইন লাগি? একটা বোনে হয় না তোর? না হলে দুনিয়ার সবাইরে বইন ভাববি, যার সাথে বিয়ে ঠিক করছে তারে ও বোন ভাববি কিন্তু আমি বাদে। আমি তোর ফ্রেণ্ড লাগি বইন না বুঝছিস? আরেকবার বইন ডাকলে তোরে টাক বানাবো আমি। (আরো জোরে চুল টেনে )

সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। মাহিরের মতো টাফ এন্ড অ্যাংরি ম্যান এর কিনা শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ের হাতের মার খেতে হচ্ছে। একটা মেয়ে তার চুল ধরে টানছে আর মাহির হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছে এর থেকে ফানি আর কি হতে পারে।
আরশি অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে সুজানার হাত টেনে ধরলো।
~ আপ্পি হয়েছে ছেড়ে দাও। ভাইয়া ব্যাথা পাচ্ছে।
~ পাক ওর ও বুঝতে হবে আমার কষ্টটা।
~ আমি বুঝেছি তো আর তাই তো ছুটে এসেছি তোর কাছে। ( হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে )
সুজানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহিরের ফোন বেজে উঠলো। মাহির ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মিহি কল করেছে রিসিভ করলো।
~ হ্যালো ভাইয়া কোথায় তুই?
~ কেনো কি হয়েছে?
~ সকালে তোর ফোন অফ ছিলো কেনো?
~ মিটিংয়ে ছিলাম তাই ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিলাম।
~ তোকে ওসমান ( মাহিদ রহমান এর ড্রাইভার ) ভাই কতবার ফোন করেছিলো জানিস।
~ ওসমান! কিন্তু কেনো? কি হয়েছে ঠিক করে বল!
~ ভাই বাবার মাইনর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে সকালে অফিস যাওয়ার পথে। তারপর ওসমান ভাই আর নিধি আপু মিলে বাবাকে হসপিটাল নিয়ে গেছিলো আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
মাহির বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে শুনেই দাড়িয়ে গেলো। চিৎকার করে বললো,,
~ হোয়াট হার্ট অ্যাটাক!! কি করে হলো হঠাৎ কেনো হার্ট অ্যাটাক হলো? এই মিহি বাবা ঠিক আছে তো? আমি এক্ষুনি আসছি।
~ আরে ভাইয়া শান্ত হো! বাবা ঠিক আছে।
~ আমি আসছি এক্ষুনি। রাখছি।
মিহি কে আর কিছু না বলতে দিয়ে ফোন কেটে দিলো। বাকিরাও দাড়িয়ে পরেছে মাহিরের কথা শুনে।
~ মাহির আঙ্কেলের কী হয়েছে? হার্ট অ্যাটাক ?
~ হ্যা সুজি মিহি বললো অফিস যাওয়ার পথে নাকি বাবার মাইনর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। হসপিটালে নিয়ে গেছিলো এখন বাড়িতেই আছে। আই হ্যাভ টু গো। পরে কথা হবে তোর সাথে।
মাহির চলে যেতে নিলেই সুজানা হাত ধরে থামিয়ে দিলো।
~ আঙ্কেলকে একবার দেখে আসা উচিৎ। তাই আমিও যাবো তোর সাথে।
~ বাট সুজি বাবার অবস্থা সিরিয়াস নয়।
~ তাতে কি হয়েছে এর জন্য কি দেখতে যাবো না নাকি? তুই দু মিনিট দাড়া আমি আসছি।
~ মাহির ভাই আমরা ও যাবো। ( সূর্য )
~ হ্যাঁ আমরাও আঙ্কেলকে দেখতে যাবো। এখন আঙ্কেল অসুস্থ আর এখনই যদি দেখতে না যাই তাহলে পরে গিয়ে তো আর লাভ নেই। ( আরশি )
~ তুমি যেতে পারবে আরশি? তোমার পা তো কাটা!
~ সমস্যা নেই ভাইয়া আমি যেতে পারবো আর তাছাড়া সবাই তো আছেই, কোনো প্রবলেম হবে না।
~ ঠিক আছে তাহলে।

~ নিধি…
নিধি খাটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো অভ্রর গলা শুনে চোখ খুলে তাকালো।
~ হু?
~ আন্টি খেতে ডাকছেন। এসো।
~ আপনি যান আমি আসছি। ( ভাঙ্গা গলায় )
~ তোমার গলা ভাঙ্গলো কি করে? করছিলে কাঁদছিলে তুমি?
~ ন,,না তো ঠান্ডা লেগেছে বোধয় তাই গলাটা এমন শোনা যাচ্ছে।
~ মিথ্যে বলছো! আমি জানি তুমি এতক্ষন কান্না করছিলে। কেনো করছিলে? কিসের জন্যে কাদতে হবে তোমার?
~ আমি কান্না করছিলাম না।
~ ওহ প্লিজ নিধি। আমার কাছে অন্তত মিথ্যে বলো না। এবার বলো কান্না কেনো করছিলে? কান্না করার মতো তো কিছু হয়নি।
~ আপনি বুঝবেন না অভ্র।
~ রাইট আমি বুঝবো না। ইউ নো হোয়াট আমি কিছু বুঝতে ও চাই না।আমার সাথে কি হচ্ছে, কেনো হচ্ছে আমি এগুলো কিছু ভাবতে চাইনা। যা হচ্ছে হতে থাকুক। আমি চাই না তুমিও এসব নিয়ে কিছু ভাবো। কেনো এগুলো ভেবে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ। সব সময়ের উপর ছেড়ে দাও।আমি তোমার কান্নার কারণ হতে চাই না নিধি। আমি সেই পুরোনো চঞ্চল, দুষ্টু, সবসময় হাসি-খুশি থাকা নিধি কে ফেরত চাই। তোমার পাশে থাকতে চাই। তোমার করা পাগলামি গুলোতে আগের মতো বিরক্ত হতে চাই। রোজ রাতে তোমার সাথে কথা বলে ঘুমোতে যেতে চাই। মাঝে আমাদের মধ্যে কি হয়েছে না হয়েছে সব ভুলে যাও। এসবের আগে যেমন ছিলে তেমন হয়ে যাও প্লিজ।
~ আমি আর আপনার সাথে নিজেকে জড়াতে চাই না অভ্র। আমি আপনার থেকে দূরে থাকবো এটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।
নিধির দিকে এগিয়ে গিয়ে,,
~ পারবোনা আমি নিধি, আমি জানি তুমিও পারবে না। তো কেনো শুধু শুধু নিজেকে ফোর্স করছো?
~ কেনো পারবেন না অভ্র? এখানে তো না পারার মতো কিছু নেই। আপনার সাথে তো আমার কোনো গভীর সম্পর্ক নেই যার জন্য আপনি আমার থেকে দূরে যেতে পারবেন না। আমি আপনার ভালোবাসা বা ভালোলাগা কোনোটাই নই। তাহলে কেনো শুধু শুধু এসব কথা বলছেন!
~ তুমি আমার কাছে ঠিক কি সেটা আমি এখনো বুঝতে পারছি না কিন্তু এতোটুকু খুব ভালো করে জানি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। শুনতে পেরেছো! তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। আমার সবটা বুঝার জন্য একটু সময় দরকার কিন্তু সেটা তোমার থেকে দূরত্ব মেনে নয় তোমার পাশে থেকেই। তাই তুমি আমার থেকে ভুলেও দূরে থাকার চেষ্টা করবে না। আর এখন তো রেহান ও সবটা জানে। সো লুকিয়ে কিছু করার প্রয়োজন নেই।
~ কেনো আপনার পাশে থাকতে যাবো আমি? আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেটা কি ভুলে গেছেন? আপনার এসব কথা এখন ভিত্তিহীন।
অভ্র এগিয়ে এসে নিধির দু বাহু শক্ত করে ধরে বললো,,
~ কিসের বিয়ে? কোন বিয়ের কথা বলছো তুমি? শুনে রাখো এই বিয়ে কক্ষনো হবেনা। মাহির ভাই সুজানা আপুকে ভালোবাসে আর…
~ আর কি?
~ তুমি আমাকে ভালোবাসো।
~ কে বললো আপনাকে? আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
~ তুমি আমাকে ভালোবাসো কি বাসো না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি ।
~ ভূল জানেন।
~ কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা বুঝার মতো বয়স আমার হয়েছে। তোমার আমাকে বলে দিতে হবে না। (নিধি কিছু বলার জন্য মুখ খুলছিলো ) চুপ! আর একটাও কথা বলবে না তুমি। ছোট আছো ছোটর মতো থাকো সব কিছু এক লাইন বেশি বুঝতে যেয়ো না।
~ আ…
~ চুপ! বিয়ে করার শখ জেগেছে তোমার? আজকাল একটু বেশিই বিয়ে নিয়ে ভাবছো না তুমি? এইসব ভাবনা নিজের মাথা থেকে সরিয়ে ফেলো। তোমার বিয়ে তো হচ্ছে না হলেও সেটা মাহির ভাইয়ের সাথে তো কোনদিনও না। কার সাথে হবে সেটা নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই তোমার। এখন খেতে চলো। তোমার বাজে কথা শুনতে গিয়ে লেট হয়ে গেছে।
নিধির হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো। নিধি অভ্রর দিকে রাগি চোখে তাঁকিয়ে আছে। নিজেই এতক্ষণ বকবক করলো অথচ আমাকে বললো আমি নাকি বাজে কথা বলছিলাম। গিরগিটি একটা!!

সবার খাওয়ার মাঝখানে মাহিররা এসে পড়লো। মৃধা রহমান মাহির কে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলো। মাহির হন্তদন্ত হয়ে বাবার ঘরে যাচ্ছিলো মৃধা রহমান ওকে আটকে দিলো।
~ মাহির কি হয়েছে এমন অস্থির হয়ে আছিস কেনো?
~ মা, বাবা কোথায় ঘরে তাইনা? আমি দেখা করে আসি আগে।
~ দাড়া! তোর বাবা ঘুমোচ্ছেন। তুই এখানে বস। পরে দেখা করে নিস।
~ বাবার হঠাৎ করে অ্যাটাক কেনো হলো মা?
~ তোর বাবার নিজের শরীরের প্রতি কোনো খেয়াল আছে? আমার কথা তো শুনবে না বছরের বারো মাসের মধ্যে দশমাস ই তো বাইরে থাকেন। এই বয়সে একা হাতে বিজনেস সামলায়। এবার আর তার অনিয়ম করা চলবে না। ডক্টর বলে দিয়েছে রেস্টে থাকতে।
কথা বলতে বলতে মাহিরের পিছনে তাকিয়ে সুজানা, সূর্য-আরশি, রিক,রোজ আর ন্যান্সি কে দেখতে পেলেন। দ্রুত ওদের দিকে এগিয়ে গেলেন।
~ একি দেখেছো কারবার। আমিতো তোমাদের খেয়ালই করি নি। এসো এসো ভিতরে এসো তোমরা।
সুজানা মা কেমন আছিস তুই?
সুজানা টেবিলে বসে থাকা নিধি, অভ্র, রেহান, নাহিদ ওদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো মৃধা রহমান এর কথা শুনে ওনার দিকে তাকালো। একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,,
~ হ্যা আন্টি ভালো আছি।
~ আরশি তোর পায়ে কি হলো?
~ ও কিছু না আন্টি একটু কেটে গেছে।
~ আয় আয় ভেতরে আয়। দেখে যা কারা এসছে। আজকে আমার বাড়িটাটা ভরা ভরা লাগছে।
মাহির রেহানদের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে বললো,,
~ তোমরা?
ওরা কিছু বলার আগে মিহি উত্তর দিলো,,
~ তোকে বলেছিলাম না নিধি আপু যে বাবাকে হসপিটালে নিয়ে গেছিলো আবার বাড়িতে ও নিয়ে এসেছে? তারপর সব কিছু খুলে বললো।
~ আমি তখন খেয়াল করি নি। নিধি তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার বাবাকে হেল্প করার জন্য।
~ ধন্যবাদ এর কি আছে ভাইয়া। মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সাহায্য করা তো আমার কর্তব্য।
~ তারপরেও তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার বাবা আমার কাছে ভীষণ ইম্পর্টেন্ট। তোমার উপকারের জন্য আমি তোমাকে একদিন ডিনারে নিয়ে যাবো তোমার কোনো পছন্দের জায়গায়। যাবে তো?
নিধি কিছুটা ইতস্তত করছে। ওর আর মাহিরের বিয়ের ব্যাপারে ও জানলেও মাহির তো আর জানে না। তাই এতোটা স্বাভাবিকভাবে ডিনারে যাওয়ার জন্য ইনভাইট করলো। এখন সবার সামনে মানা ও তো করতে পারবো না। মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
~ অবশ্যই যাবো। ( মাহিরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে )
মাহির ও ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সুজানা ছলছল চোখে মাহির আর নিধি কে দেখছে। ওদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ সবটাই স্বাভাবিক। আর মাহির ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য সিম্পলি ডিনারে যাওয়ার কথা বলেছে কিন্তু এই সিম্পল কথাটাই সুজানা সিম্পলি নিতে পারছে না । মাহির নিধির সাথে ডিনারে যাবে ভাবতেই ওর কষ্ট হচ্ছে। ওদের তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তার মানে নিধি মাহিরের হবু বউ। এই কথাটা ভাবতেই সুজানার বুকে অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে।
অভ্র মাথা নিচু করে প্লেটে খাবার নাড়া চারা করছে। এসব ওর সহ্য হচ্ছে না। মাহির ভাই কেনো নিধিকে ওর পছন্দের জায়গায় ডিনার করাতে নিয়ে যাবে? আর নিধি! ও কেনো রাজি হলো যেতে? ও কি তবে এই বিয়েটা করতে চায়? না না এটা হতে পারে না। নিধি এটা করতে পারে না। নিধি কি করবে না করবে জানি না কিন্তু আমি এই বিয়েটা কিছুতেই হতে দিতে পারবো না। বিয়ে হলেতো নিধি আমার থেকে দূরে চলে যাবে সেটা আমি কি করে হতে দেই?
কোনো বিয়ে হবে না। কিছুতেই না। টেবিলের নিচে রাখা হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here