#তোমায় ঘিরে
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১০
কারণ ধরীতার মামী লাল বেনারসি শাড়ি পরেছে। কপালে লাল টিপ। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক। ধরীতার মামির অবস্থা দেখে সবাই হাবাগুবার মতো তাকিয়ে আছে। তারা বুঝতে পারছে না তিনি এমন কেন করেছেন। তার এ কর্মকান্ডের কারণ প্রথমে বুঝা না গেলেও পরে আন্দাজ করা গিয়েছে। তিনি সিয়ামের দিকে তাকিয়ে বাংলা সিনেমার হিরোইনের মতো লাজুক চেহারা টেনে হেসে হেসে বলল
“তুমি কী খাবে বলো। আর তুমি আমাকে আন্টি ডেকো না। চাইলে অপ্সরা ডেকো। আমার তো এখন রূপ খসে গেছে। আগে তো আমার জন্য পারার ছেলেরা কত পাগলামি করত।”
সিয়াম ধরীতার মামীর কথা শুনে বিভ্রান্ত গলায় উত্তর দিল
“ব্যাপার না আন্টি একটু বয়স হয়েছে তো তাই। তবুও আপনি যথেষ্ঠ সুন্দর।”
সিয়ামের কথা শুনে ধরীতার মামী তার শাড়ির আঁচল দু হাত দিয়ে কচলাতে কচলাতে বলল
“তোমাকে তো বললাম আন্টি বলো না। তুমি আমাকে অপ্সরা বলে ডেকো। আর কী বলছো আমার বয়স হয়েছে। আমার বয়স তো সবে ২৩ পার হয়ে ২৪ হলো।”
অধরা তার মায়ের কথা শুনে কোনো কিছুই বলতে পারছে না। এমন কেন করছে তার মোটা মথায় ঢুকছেও না। ধরীতার মা কথাটা শুনে ফিক করে হেসে দিল। ধরীতার বাবা ঘরে না থাকায় তার কোনো নির্দেশনা এখানে প্রকাশিত হয়নি। ধরীতার মায়ের হাসি শুনে ধরীতার মামী রেগে বলল
“আপা এখানে হাসাহাসি করার কী হলো? সারাদিন আমার পেছনে লাগা ছাড়া আপনার কী কোনো কাজ নেই। যান গিয়ে সিয়ামকে নাস্তা দিন। ফ্রিজে নাগেট,সেসস, আছে সেগুলো একটু ভেজে নিয়ে আসুন। আর বাইরে বেশ গরম। এত গরমে এসেছে ওকে দুই, তিন পদের শরবত বানিয়ে দিন। আর শুনেন রাতের সব খাবার গরম করে ওকে দিন।”
সিয়াম ইতস্তত গলায় জবাব দিল
“আন্টি কিছুই লাগবে না। আমার পেট ভরা। এখন এত খেতে পারব না। শুধু এক গ্লাস শরবত হলেই হবে। এর বাইরে কিছু না।”
ধরীতার মামী সিয়ামের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল
“আরে তা বললে হয় নাকি। আর দুষ্টমি করছো কেন দুষ্ট ছেলে। আমাকে তুমি অপ্সরা বলে ডেকো। আন্টি কেমন জানি শোনায়। আর আমার কী এত বয়স হয়েছে নাকি আন্টি ডাক শোনার। আমি তোমার ছোটই হব।”
ধরীতার মামীর কথা শুনে সিয়াম হুট করে কাশতে লাগল। হয়তো কথার মার প্যাচ বুঝতে গিয়ে গলায় ধলা পাকিয়ে কিছু আটকেছে। সিয়ামের অবস্থা দেখে অধরা কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে তার মাকে বলল
“মা হুট করে কী তোমার মাথাটা গিয়েছে? কখন থেকে কী বলছো। পাগলের মতো এমন বিলাপ কেন করছো? তোমার বয়স ২৪? আমার বয়সেই তো ২০। তাহলে কী তুমি আমার মাত্র ৪ বছরের বড়ো? আর আমি কী তোমার পেটে ৩ বছর বয়সে এসেছিলাম? তোমার সাথে কী বাবার বিয়ে দুই বছর বয়সে হয়েছিল? হাবিজাবি কী বলতেছো কখন থেকে।”
ধরীতা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে কারও মাথায় ঘটনার সারসংক্ষেপ এমতাবস্থায় পুরোপুরি না ঢুকলেও ধরীতা একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে ঘটনা কী। ধরীতার মামী অধরাকে আটকে দিয়ে বলল
“বেশি কথা বলিস একদম। যা ঘরে যা। সারাদিন তো মায়ের পিছে লাগা ছাড়া কোনো কাজ দেখিস না। বয়স যতই হোক আমার মনের বয়স এখন অনেক কম। ”
কথাগুলো অধরাকে বলে ধরীতার মায়ের দিকে তাকিয়ে রুষ্ঠ গলায় বলে উঠল
“আপা আপনি এখনও দাঁড়িয়ে আছেন হ্যাবলার মতো। বললাম তো সিয়ামের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করুন। আপনাদের দ্বারা কিছুই হবে না। শুধু বসে শুয়ে খাওয়া ছাড়া।”
ধরীতার মা আর কোনো কথা বাড়াল না। সিয়ামের সামনে এমন কথা তার আত্মসম্মানে লাগলেও সেটা তিনি প্রকাশ করলেন না। কথায় আছে হাতি কাদায় পড়লে পিঁপড়েও লাথি দেয়। উনার অবস্থা এখন এমন।তিনি দ্রূত জায়গা পরিবর্তন করলেন। অধরা রাগে তার রুমে গেল। ধরীতা এখনও নির্বাক। কিছুই বলছে না। বলতে গেলে সব কিছুই হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই তেমন কিছুই সে বলছে না। এদিকে সিয়ামের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সিয়াম সোফার পাশে বসে ঢুক গিলতে লাগল। কী এক মসিবতে পড়ল সেটা সে ভালোভাবে টের পাচ্ছে না। ধরীতার মামী সিয়ামের পাশে বসে হালকা হালকা হেসে সিয়ামের দিকে তাকাচ্ছে আর কতক্ষণ পরপর মাথা নীচু করছে। সিয়ামের গলা শুকিয়ে যেন খরা পড়তে লাগল ধরীতার মামীর কান্ড দেখে। ধরীতা পাশেই চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সিয়ামের এ অবস্থা দেখে একটু বেশি হাসি পাওয়া সত্ত্বেও মুচকি মুচকি হাসছে। ধরীতা বুঝতে পারছে তার মামীকে সিরিয়ালের ভূত ধরেছে। হয়তো তিনি সিয়ামকে হিরো কল্পনা করে নিজেকে হিরোইন ভাবছে। কুান্দলতা নামে একটা সিরিয়াল তার মামী বেশ পছন্দ করে। সেখানের কাহিনিটা ছিল এমন মেয়ের টিচারের প্রেমে মা পড়ে। মেয়েটার বাবা থাকে না। তারপর টিচারের সাথে মায়ের বিয়ে হয়। সেটা নিয়ে খিচুরি, বিরিয়ানি,তবলা মার্কা কাহিনি এগুতে থাকে। এ মুহুর্তে যে তার মামী সে সিরিয়ালে আটকে আছে বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। তার মামী মুখছুটা বা মানুষটা খারাপ হলেও চরিত্র খারাপ না সেটা ধরীতা জানে। তবে মাঝে মাঝে এমন সিরিয়ালের ভূত উনার মাথায় চেপে বসে। কেউ বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে না পারলেও ধরীতা বেশ ভালোই টের পায়। এ মুহুর্তে সিয়ামের অবস্থাকাতর অবস্থা ধরীতাকে বেশ আনন্দ দিচ্ছে। ধরীতার মামী সিয়ামের আরেকটু কাছে গিয়ে বসে লজ্জা কণ্ঠে বলল
“শুনো প্রেমে বয়স কোনো ফ্যাক্ট না। আমি তোমার বেশি বড়ো হব না। তুমি আমাকে আন্টি বলবে না। অপ্সরী বলে ডাকবে।”
সিয়ামের মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগল। ঘামটা হাতে মুছে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল
“জি আন্টি ঠিক আছে।”
ধরীতার মামী মুখটা বাঁকিয়ে হেসে জবাব দিল
“ধুর দুষ্ট আবারও আন্টি বলছো। ব্যাপার না আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে এ শাড়িতে?”
সিয়াম লম্বা লম্বা শ্বাস ফেলে উত্তর দিল
“অনেক সুন্দর লাগছে। আমি এবার আসি। আমার বাসার সবাই চিন্তা করবে। তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আর আমার জরুরি কাজও আছে। পরে একদিন এসে জমিয়ে আড্ডা দিব।”
“আরে এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? একদম খেয়ে তারপর যাবে। আপা তোমার জন্য নাস্তা আর রাতের খাবার তৈরী করছে। আর তুমি না খেয়ে গেলে আমার পরাণে কষ্ট লাগবে। তুমি কী চাও আমি কষ্ট পাই?”
সিয়াম শুধু আমতা আমতা করে যাচ্ছে। কী থেকে কী হচ্ছে তার বোধগম্য হচ্ছে না৷ পাগলের পাল্লায় পড়ল নাকি সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে সে। সিয়ামের নীরবতা দেখে ধরীতার মামী অভিমানী গলায় বলল
“কী ব্যাপার তুমি এভাবে চুপ হয়ে আছো কেন? তুমি জানো না তুমি চুপ থাকলে আমার দিলে কষ্ট হয়। তুমি আমাকে কিন্তু কষ্ট দিচ্ছ।”
সিয়াম ধরীতার মামীর কথা যতই শুনছে ততই তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। সে কোনোরকম গলার সুর বের করে বলল
“আমি গেলাম আন্টি পরে কথা হবে।”
বলেই উঠতে নিল। ধরীতার মামী সিয়ামের হাতটা খপ করে ধরে বলল
” না খেয়ে যাওয়া যাবে না। ”
সিয়ামের অবস্থার অবনতি ক্রমান্বয় হারে হতে লাগল। ধরীতা শুধু হেসেই যাচ্ছে। সিয়ামের অবস্থা দেখে আরেকটু মজা নেওরয়ার জন্য ঘটনাস্থলে প্রবেশ করল নতুন চরিত্র নিয়ে। আর তার সাথে সাথে ঘটল বিস্ফোরণ।
চলবে?