অজানা_আলোর_খোঁজে পর্ব-১৫ ১৬

0
2230

#অজানা_আলোর_খোঁজে
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১৫,১৬

ঘুম থেকে উঠে অবাক চোখে লক্ষ্য করল সবাই বেশ পরিপাটি হয়ে আছে সমুদ্র পাড়ে যাওয়ার জন্য। রুকু উঠতেই তিরা বলে উঠল

– রুকু তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও আমরা সবাই এখন সী বিচে যাব। সমুদ্রবিলাস করব। অনেক মজা করব।

তিরার সাথে সাথী আর শষী ও গলা মিলিয়ে বলে উঠল

– ইয়া… হো… খুব মজা হবে। রুকু তাড়াতাড়ি করো।

রুকু তাড়াহুড়ো করে উঠে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড়টা পাল্টে নিল। ওয়াশ রুম থকে বের হতেই তানভীরের চোখে চোখ পড়ল। তানভীর এসেছিল সবাইকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তানভীর রুকুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। লাল জামায় লাল মায়া পরী লাগছিল রুকুকে। রুকুকে যে খুব ফর্সা বা আহামরি সুন্দর তা না। তবে রুকুকে কেন জানিনা তানভীরের বেশ ভালো লাগে। বলা যায় সৌন্দর্য নিরুপণ করে মানুষের চোখ। মানুষের চোখের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের বর্ণনা গুলো বরাবরেই ভিন্ন হয়। কারও চোখে ফর্সা বেশ সুন্দর মনে হয়,কারো চোখে কালো,কারো চোখে শ্যামলা। বলা যায় বিচিত্র আকৃতির মানুষকে পছন্দ করার জন্য সৃষ্টিকর্তা বিচিত্র সব চোখ দিয়ে দিছেন। তানভীরকে রুকুর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিরা বেশ ছটফট করছিল। তবে এখন রাগ দেখাতে একদম ইচ্ছা করছে না তার। রুকুর প্রতিও কেন জানি না অসম্ভব মায়া তিরার জমে উঠেছে। যা চাইলেও সে নিবারণ করতে পারছে না। তিরা একটু চুপ থেকে রুকুর সামনে গিয়ে রুকু আর তানভীরের মধ্যে একটা দেয়াল তৈরী করে তানভীরকে বলল

– কি রে যাবি না সমুদ্র পাড়।

তানভীর আর রুকু দুজনেই লজ্জায় মাথা অবনত করে ফেলল।রুকু চুপ হয়ে মাথার চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকাতে লাগল। আর তানভীর স্থিত গলায় জবাব দিল

– হ্যাঁ যাব তো। তোরা সবাই তৈরী তো?

সবাই এক গলায় বলে উঠল

– একদম তৈরী।

সাথী এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল

– পটকা কোথায়?

বলতে বলতেই সাথীর চক্ষুগোচর হলো যে বিশালদেহী পটকা এসে দাঁড়িয়ে আছে সাথীর সামনে। এক হাতে কলা আরেক হাতে কেক নিয়ে। বড় বড় কামড় দিয়ে কলাটা পুরো মুখে নিয়ে আমলাতে আমলাতে বলল

– আমাকে খুঁজছিস কেন?

সাথী পটকার দিকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে পটকার পেটে একটা থাপা বসিয়ে বলল

– পেটটা তো কম বড় হয়নি৷ এখন খাওয়া তো বন্ধ করতে পারিস। এত খাস কেন? তুই তো খেতে খেতেই অক্কা পাবি।

সাথীর কথা শোনে সবাই হুহু করে হেসে দিল সেই সাথে রুকুও। রুকুর অট্ট হাসিটা তানভীরের চক্ষুগোচর হলো। যতই রুকুকে দেখছিল ততই যেন রুকুর মায়ায় পড়ে যাচ্ছিল। ভালোবাসাটা দ্বিতীয়বারের মতো তার মনে নাড়া দিচ্ছিল। কিন্তু প্রথমবার যে ভুল করেছে দ্বতীয়বার তা করতে তানভীর বেশ নারাজ। নিজেকে সামলে নিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে সবাইকে ক্ষীণ গলায় চুপ করতে বলল।তারপর বলল

– তোরা কি এখানেই সময় নষ্ট করবি নাকি বাহিরে যাবি।

তানভীরের কথায় সবাই একদম নিস্তব হয়ে গেল। নিস্তব হয়ে আস্তে গলায় বলল

– আমরা তৈরী চল যাওয়া যাক তাহলে। সাগরকন্যাকে দেখার জন্য। ঢাকা থেকে ৩২০ কি.মি দক্ষিণে এসেছি শুধু সাগরকন্যা দেখার জন্য। যাব না মানে অবশ্যই যাব।

তানভীর মুচকি হেসে সবাইকে বলল

– চল তাহলে বের হওয়া যাক। যার যা প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ঠিক করে নে।

সবাই সবার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো ঠিক করে নিয়ে বের হলো সাগরকন্যা দেখার জন্য। সেখানে সমুদ্রে গোসল করে মাঝখানে রিসোর্টে ফিরে কাপড় পাল্টে আবার বের হবে। তারপর হালকা ঘুরে সন্ধ্যা হলে সূর্য অস্ত দেখে পুনরায় রিসোর্টে ফিরবে সবাই।

সবাই আনন্দে নাচতে নাচতে বের হলো। রুকু তানভীরের পাশ ঘেষে হাঁটতে লাগল। তিরা তা দেখে দুজনের মাঝখানে ঢুকে তানভীরকে বলতে লাগল

– চল তাড়াতাড়ি পা চালা।

বলেই রুকুর হাতটা ধরে একটু সামনের দিকে এগুলো।

সাথী আর শষী বিষয়টা খেয়াল করে হাসতে লাগল। সাথী পটকাকে উদ্দেশ্য করে বলল

– কুয়াকাটা সম্পর্কে কিছু বল। তোর চেয়ে ভালো তো কেউ বলতে পারবে না। বেশ কয়েকবার এসেছিস।

পটকা খেতে খেতে বলল

– এখন খাওয়ার মধ্যে বিরক্ত করিস না। তানভীর এর আগে আমার সাথে এসেছে ওকে জিজ্ঞেস কর।

তিরা উদ্দীপনা নিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল

– কি রে বল তাড়াতাড়ি।

তানভীর হালকা পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল

– কুয়াকাটা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটা সমুদ্র সৈকত যা সাগরকন্যা নামে পরিচিত। এটি ১৮ কি.মি দৈর্ঘ্যের একটি সমুদ্র সৈকত যেখানে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। পটুয়াখালী জেলার মাহিপুর থানার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নে কুয়াকাটা অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব সড়ক পথে ৩৮০ কি.মি এবং বরিশাল থেকে এর দূরত্ব ১০৮ কি.মি।

কুয়া শব্দটি কূপ শব্দ থেকে এসেছে। আরকানদের আগমণকে কেন্দ্র করে মূলত এ নামটা রাখা হয়। ধারণা করা যায় যে আঠার শতকে মোঘল শাসক দ্বারা বার্মা থেকে বিতারিত হয়ে আরকানরা এ অঞ্চলে এসে বসবাস করে। এখানে সুপেয় জলের অভাব পুরণের জন্য তারা অনেক কুয়া খনন করে সেখান থেকে এর নাম হয় কুয়াকাটা।

কুয়াকাটা সমুদ্রের পশ্চিম দিকে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বনের নাম হলো ফাতরা বন। যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত।
কুয়াকাটার শুরুর দিকে রাখাইন পল্লী ও কেরানী পাড়ার শুরুতে শ্রি মঙ্গল বৌদ্ধ মন্দিরের নিকট রয়েছে প্রাচীন কূপ। যাকে কুয়াকাটার কুয়া বলা হয়।
কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৪ কি.মি উত্তরের রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় মৎস ব্যবস্যা কেন্দ্র আলীপুর।
কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৮ কি.মি পূর্বে রাখাইন আদিবাসীদের আবাসস্থল মিশ্রীয় পাড়া রয়েছে। সেখানের বৌদ্ধ মন্দিরে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি।
এছাড়াও রেয়েছে লাল কাকরা চর,শুটকি পল্লী,তিন নদীর মোহনা ইত্যাদি।

রুকু এসব শোনে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

– এত কিছু দেখার আছে। আমার তো এখনেই খুশিতে মন নাচছে। এখন কোথায় যাব আমরা।

তানভীর উত্তর দিতে গেলে পটকা কথাটা আটকে দিয়ে বলল

– আমরা এখন সী বীচে যাব। তারপর সবকিছু ঘুরব। তারপর সূর্যাস্ত দেখে একদম ফিরব।

সাথী আর শষী উৎফুল্ল গলায় বলল

– কি যে আনন্দ লাগছে। উফ…..

সবাই আনন্দে উচ্ছাসে গেল কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্রের ঢেউ তখন আঁচড়ে পড়ছিল। রুকু দৌঁড়ে গিয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের কাছে যেতে নিলে তানভীর রুকুর হাত টা ধরে ফেলল। রুকুর হাতটা ধরার সাথে সাথে রুকু যেন একটা শীতল স্পর্শ অনুভব করল। চোখটা বন্ধ করে পুনরায় চোখটা খোলে ফেলল। তানভীরের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বলল

– কি হয়েছে?

– এখনেই দৌঁড়ে যাচ্ছ কেন একা একা। সবার সাথে যাও। জেয়ার ভাটা বিষয়টা ভালো করে জেনে যাও। ভাটার সময় সমুদ্রে না নামায় উচিত। এখন যদিও জোয়ারের সময়। তবে একা একা যাবে না। সাথী শষী ওদের সাথে থাকবে। সমুদ্রে নেমে খুশির জোয়ারে ভেসে একদম সমুদ্রের মাঝে যাওয়ার চেষ্টা করবে না। তাহলে ওপারে যেতে বেশি সময় লাগবে না। বয়স অল্প তাই এতগুলো কথা বললাম। এর মধ্যেই তিরা এসে…

পর্ব-১৬

এর মধ্যেই তিরা এসে তানভীরের হাত থেকে রুকুর হাতটা ছাড়িয়ে বলল

– তুই চিন্তা করিস না আমি সামলে নিব ওকে।

তানভীর তিরার কথা শোনে হাসতে লাগল। তানভীরের হাসি দেখে তিরা রাগী চোখে তাকিয়ে বলল

– আমি হাসার মতো কী বললাম? হাসছিস কেন?

তানভীর হাসতে হাসতে তিরাকে বলল

– তুই সামলাবি রুকুকে। আগে নিজেকে সামলা। নিজেকে সামলাতে শিখিসনি আবার এসেছিস আরেকজনকে সামলাতে।

– তুই কিন্তু বেশি অপমান করিস কথায় কথায়।

– আজিব অপমানের কি দেখলি শোনি?

– এই যে এখন যা করছিস এটা অপমান না?

– অপমান হতে যাবে কেন? এটা তো তোকে বুঝানো যে তুই কেয়ারলেস।

– এটাই অপমান।

রুকু তানভীর আর তিরার তর্ক শোনে তাদের থামিয়ে দিয়ে বলল

– আচ্ছা ঠিক আমিই আমাকে সামলে নিব। আপনারা থামেন। এভাবে এখানে এসে ঝগড়া করবেন না।

বাকি সবাই হাসতে হাসতে বলল

– আচ্ছা চল এবার সাবাই সমুদ্রের বিশালতায় নিজেদের ডুবিয়ে দেই।

সবাই হাসতে হাসতে সমুদ্রের কাছে যেতে লাগল। রুকু একটু এগুতেই একটা ঘোড়া দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল।রুকুকে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে তানভীর বলে উঠল

– কি ব্যাপার ওদিকে তাকিয়ে কি দেখছ?

– ঘোড়াটা দেখছিলাম। অনেকে উঠতেছে। আমি একটু উঠতে চাই।

তানভীর রুকুকে সামনে নিয়ে ঘোড়ায় বসিয়ে দিল। রুকু ঘোড়ার পিঠে উঠে একটু ভয় পেতে লাগল। তবে পাশের ঘোড়ায় তানভীরকে দেখে যেন তার ভয়টা একটু কাটল। তারপর সাথী, শষী, তিরাও ঘোড়ায় চড়ল। পটকার পালা এবার। পটকাকে ঘোড়ায় উঠতে যেতে দেখে সবাই হুহু করে হেসে দিল। সবার হাসি দেখে পটকা ভ্রুটা কুঁচকে বলল

– এখানে হাসির কী দেখলি?

শষী হাসতে হাসতে বলল

– উঠিস না রে বাপ। বেচারা ঘোড়ার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। তার উপর যদি কিছু হয় জরিমানাও লাগতে পারে।

পটকা শষীর কথা শোনে হাতে থাকা পটেটো চিপসের প্যাকেটটা ফেলে দিয়ে ঘোড়ায় না চড়ে সামনের দিকে হনহন করে যেতে লাগল। সাথী অবাক হয়ে বলল

– পটকা খাবার ফেলে দিল। ব্যাপারাটা বেশ রহস্যজনক তো।

তিরা চিপসের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বলল

– আরে শুধু শুধু প্যারা নিস না দেখ খালি প্যাকেট। সব সাবাড় করে আমাদের বুঝিয়েছে সে চিপস না খেয়ে ফেলে দিছে।

তিরার কথা শোনে সবাই হুহু করে হেসে দিল। এর মধ্যে রুকু বাইকের দিকে ইশারা করে বলল

– ঐটাই উঠব উঠাবেন।

রুকুর এত সব আবদার দেখে তিরা কপট রেগে বলল

– আসার পর থেকে একটার পর একটা আবদার করছো। তানভীর কি তোমার চাকর নাকি যে সব আবদার পূরণ করবে। ওকে ওর মতো একটু ছাড়ো।

রুকু তিরার কথা শোনে মাথাটা নুইয়ে জবাব দিল

– সরি আমি বুঝতে পারিনি।

রুকুর অসহায় মুখটা দেখে তানভীর তিরাকে দমক দিয়ে বলল

– আরে শুধু শুধু ওকে দমকাচ্ছিস কেন? ও এসেছে ঘুরতে ঘুরবে না।

বলেই রুকুর হাতটা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেল বাইকে চড়ার জন্য। এদিকে তিরার ভেতরটা যেন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছিল। অপরদিকে তানভীর রুকুকে বাইকের সামনে নিয়ে বলল

– বাইকে উঠো। তবে তুমি চালাবে নাকি আমি?

রুকু স্থিত গলায় বলল

– আমি চালাতে পারব না আপনি চালান।

তানভীর রুকুকে পছনে বসিয়ে নিজে সামনে বসে বাইকটা চালাতে লাগল। তিরা শুধু অবাক নয়নে দেখছিল আর চোখের পানি ফেলছিল। তিরার কাছে এসে সাথী তিরার এ অবস্থা দেখে বলল

– তিরা মন খারাপ করিস না। ভালোবাসা খুব অদ্ভূত জিনিস। সব ভালোবাসার পূর্ণতা পায় না। তানভীর নিশাকে কত ভালোবাসত তবুও কিন্তু সে ভালোবাসার পূর্ণতা পায়নি। এখন যদি সে রুকুর মধ্যে নিশাকে খুঁজে পায় মন্দ কী। তুই তোর মতো করে ভালোবেসে যা। ভালোবাসা যে পেতে হবে এর কোনো মানে হয় না। বরং অপূর্ণতায় ভালেবাসা আরও বেশি দৃঢ় হয়। মন খারাপ করিস না। একটু আনন্দ কর, সবকিছু উপভোগ কর ঠিক হয়ে যাবে। তানভীর তোর কপালে থাকলে অবশ্যই পাবি।

সাথীর কথা শোনে রুকুর চোখের পানি যেন আরও গড়িয়ে পড়তে লাগল।কান্নাটাকে একটু প্রবল করে ভাঙ্গা গলায় বলল

– পাঁচ বছরের ভালোবাসা তানভীরের চোখে পড়ল না? একদিনের পরিচয়ে মেয়েটার কাছে সব হেরে গেল।

– জানি তিরা তোর কষ্টটা কেমন হচ্ছে। তবে ঐ যে বললাম ভালোবাসা বেশ বিচিত্র জিনিস। কখন কীভাবে আসে যায় সেটা শুধু মনেই বলতে পারে। মনের বিরুদ্ধে কেউ যেতে পারে না রে। একটু শান্ত হ। নিজেকে সামলে নে।

তিরা আর কোনো কথা না বলে চোখটা মুছে সামনের দিকে গেল। এর মধ্যেই তানভীর আর রুকু চলে আসলো। তানভীর সবাইকে বলল

– সবাই মিলে এবার সমুদ্রে নামার পালা। রুকু সমুদ্রে পাড়ে যেতেই বেশ ভয় পেয়ে গেল। তানভীরের হাতটা এক হাত দিয়ে শক্ত করে ধরল। তারপর সমুদ্রের পানি অন্য হাত দিয়ে নিজের মুখে ঝাঁপটে দিতে লাগল। তানভীর রুকুকে অভয় দিয়ে বলল

– তুমি একা একা একটু পানিতে ধরার চেষ্টা করো। আমি আছি তোমার পাশে।

বলেই তানভীর রুকুকে ছেড়ে দিল। রুকু একটু সাহস করে সমুদ্রে নেমে গোসল করতে লাগল। হাত দিয়ে পানি উপরে তুলে ঝাঁপটা দিতে লাগল। তানভীর রুকুর সমুদ্র বিলাস অবাক চোখে দেখতে লাগল। মুখের মধ্যে বিন্দু বিন্দু সমুদ্রের পানি গাল বেয়ে পড়তে লাগল রুকুর।রুকু গোসল শেষে সমুদ্রের পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে উপরে তুলে পৃষ্ঠদেশে ঝাঁপটে দিল। তারপর তানভীরের দিকে তাকিয়ে রইল। তানভীরের ইচ্ছা করছে রুকুকে আষ্টে-পৃষ্ঠে ধরে বলতে বড্ড ভালোবাসি তোমাকে। তবে অজানা এক বাঁধা তাকে বারবার গ্রাস করছে। এর মধ্যেই সবাই গোসল শেষ করে আসলো। পটকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল

– এবার রিসোর্টে গিয়ে কাপড় পাল্টে খেয়ে নিব৷ তারপর বাইকে কিছু জায়গা আছে সগুলো ঘুরব।এরপর ঘোরা শেষে লেবুর চরে সূর্যাস্ত দেখব। সবাই চলো এবার।

পটকার কথায় তানভীর নিজেকে সামলে রুকুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর সবাই রিসোর্টে গিয়ে খাওয়ার পর্ব শেষ করল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ল। তানভীর সবাইকে গুণে নিল। তারপর সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে গেল। চারটা বাইক ভাড়া করল।একটাতে পটকা বসলো একটাতে তানভীর বসলো। এর মধ্যেই তিরা তানভীরের সাথে বসতে নিলে তানভীর বলে উঠল

– তুই শষীর সাথে বস।

তারপর রুকুর দিকে তাকিয়ে বলল

– তুমি সাথীর সাথে বসো।

তিরা মুখটা একটু বাঁকিয়ে শষীর সাথে বসলো। এরপর তারা আশপাশ ঘুরতে গেল। একে একে বৌদ্ধ মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া,মৎস কেন্দ্র ঝাউবন, লাল কাকড়া চর সব ঘুরল।

এবার লেবুর চরে এসে সবাই নামল।সূর্য অস্ত যাওয়ার পালা।সবাই খেয়াল করল সমুদ্রের ঢেউ হালকা ভাবে আঁচড়ে পড়ছে। তার মধ্যে আকাশটা লাল হয়ে সূর্যটা পশ্চিম গগণে নেমে পড়ছে। মনে হচ্ছে সূর্যটা সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে আস্তে আস্তে বিলিয়ে দিচ্ছে। কি এক মনোরম দৃশ্য সেটা হয়তো কাছ থেকে না দেখে বর্ণণা করা খুব দুষ্কর। কারণ সে বর্ণনার ভাষা নেই। কোন ভাষায় বর্ণণা করলে সেটা উপযুক্ত হবে সেটা সবার অজানা।

সূর্য অস্ত শেষে এবার তানভীর বেশ উচ্ছাসের সাথে বলে উঠল

– আমরা ক্যাম্প ফায়ার করব। বেশ মজা হবে।

তানভীরের কথা শোনে সবাই আনন্দ ভাসতে লাগল। ক্যাম্প ফায়ারের সকল ব্যাবস্থা পটকা করলো। অবশেষে দাউ দাউ করে সী বিচের পাশে আগুন জ্বলছে আর তার চার পাশে সবাই বসে আছে।শষী তার বি এফ এর সাথে ঝগড়ায় বেশ ব্যাস্ত। একের পর এক তর্ক করতে লাগল। সাথী ব্যাস্ত গুণ গুণ করে গান করায়। তিরা ব্যাস্ত তানভীরের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকায়। তানভীর এখানেও ইয়ারফোন কানে গুজে চোখ বন্ধ করে রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনায় ব্যস্ত। রুকু আগুনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। পটকা এ মুহুর্তে এখানে নেই। সব মেনেজ করে পটকা হয়তো কোথাও গিয়েছে। তবে পটকা এখানে থাকলে ব্যাপারটা বেশ জমে উঠত। এদিকে রুকুর আগুনের দিকে তাকাতেই তার জীবনে ঘটে যাওয়া কালো অধ্যায়ের কথাটা মনে পড়ে গেল। মনে পড়ে গেল তার মায়ের মাথা বিহীন লাশটা তার বাবা কীভাবে পুড়িয়েছিল।সেই সাথে মনে পড়ে গেল তার বাবার একের পর এক মৃত্যু খেলা। চোখ দিয়ে যেন এগুলোই ভাসতে লাগল। একটা সময় হালকা চেঁচিয়ে বলল

– আগুন নিভাও ভয় লাগছে খুব।

রুকুর চেঁচানোতে তানভীর ইয়ার ফোন খুলে রুকুর কাছে গিয়ে ঝাঁপটে ধরে বলল

– আরে বোকা মেয়ে ভয় পেও না আমরা সবাই তোমার পাশে আছি। কিছুই হবে না।

রুকু তানভীরকে শক্ত করে ধরে বলল

-জানি না এ আগুনটা দেখে কেন মায়ের কথা মনে হচ্ছে। মায়ের সাথে বাবা যা করেছিল সেটা ভেসে উঠছে। কোনোভাবেই চোখ থেকে এগুলো সরাতে পারছি না। আমি এখানে থাকতে পারব না আমার কষ্ট হচ্ছে খুব।

তিরা রুকুর কথায় হালকা রেগে কর্কশ গলায় বলল

– এসেছি মজা করতে আর তুমি কতক্ষণ পর পর নাটক করতেছ। সব মাটি করে দিচ্ছ।

শষী এর মধ্যে রুকুর চেঁচানো শোনে ঝগড়া থামিয়ে দিল। সাথী তিরাকে হালকা দমক দিয়ে বলল

– কারও দুর্বলতা নিয়ে এভাবে আঘাত করে কথা বলা ঠিক না।তানভীর চল রিসোর্টে যাই৷ কালকে আবার ঢাকায় ফিরতে হবে। তারপর রুকুর পরিবারের বিষয়েও ভাবতে হবে। পটকাটা আবার কোথায় গেল।

শষী সাথীর কথা শোনে বলে উঠল

– হ্যাঁ তাই তো পটকা কোথায়?

এর মধ্যে পটকা এসে হাজির৷ তবে সে হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে আঁচড়ে পড়ল। পটকাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে সবাই ভয়ে পটকার কাছে গিয়ে পটকাকে তুলে বলল

– আরে কি হয়েছে? এভাবে পড়ে গেলি কেন?

পটকা হাঁপাতে হাঁপাতে কষ্টের সুরে জবাব দিল…

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)

( কুয়াকাটা যায়নি তবুও বর্ণণা করার চেষ্টা করেছি। অনেকে পর্ব দেয় না বলে তাড়াহুড়ো করেন। তবে আমার এ পর্বগুলো লিখলে জায়গা সম্পর্কে জেনে লিখতে হয়। তার মধ্যে একটু ভুল ভ্রান্তি করলেই আপনাদের মধ্যেই অনেক পাঠক সমালোচনা করে বসবেন। তাই পর্ব নিয়ে তাড়াহুড়া করবেন না। আর ২ টা পর্ব বাকি। পরের পর্ব পরশুদিন দেওয়া হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here