ঘাসেদের ফাগুন পর্ব ১২

0
300

ঘাসেদের ফাগুন পর্ব ১২
__________🖌️নাজনীন নাহার
২৬.০৩.২০২২

রাত এগারোটার উপরে বেজে গেছে। আমার স্বামী রাশেদ এখনও ঘরে ফিরছে না। আমার খুব অস্থির লাগছিল। রাশেদের খবর জানার জন্য আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে বড়ো জা এর রুমে যাচ্ছিলাম। তার রুমের কাছাকাছি পৌঁছাতেই শুনতে পেলাম আমার আর রাশেদের নাম নিয়ে নিয়ে কটাক্ষ মূলক হাসাহাসি করছেন আমার বড়ো ও মেজো জা।

——–আজকে আব্বা আর মা রাশেদকে একদম ধুয়ে দিছে। বাপ্রে! বিয়ে করছে দুইদিন হয় নাই। সে বাপ মায়েরে না বইলাই শ্বশুর বাড়ি গেলো!
——-হ বড়ো ভাবি আপনি ঠিকই বলছেন। সুন্দরী বউ পেয়ে আমাদের দেওরার মাথা আউলায়া গেছে। হা হা হা হা।
——- হ ঠিকই বলছ। বউয়ে ফাস্ট ডিভিশনে পাস করেছে। তো কী হইছে! এক গাদা মিষ্টি নিয়ে আসছে। তার বাপে মায়ে তো মিষ্টি ছুঁইয়াও দেখে নাই।
——তবে ভাবি আর যাই বলেন। আজকে কিন্তু আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির উচিত হয় নাই রাশেদ ভাইকে এতোগুলা কথা শুনানো। কী অপমানটাই না করল! আমার অনেক খারাপও লাগছে।
——-এতো খারাপ লাগার কী আছে মেজো! আমার বিয়ের পরে আমার সাথে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি যা করেছে তা কী বলব! আমার বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না থাকায় আমাকে তো মানুষই মনে করতো না। আমার তো মনে হয়েছে আমাকে তারা বউ কম এই বাড়ির কাজের লোক করে এনেছে। তার মধ্যে তোমার ভাশুরের তো রুজিরোজগার কম। তাই আমি আগাগোড়াই তাদের চাপের মধ্যে থাকি। রাত দিন পরিশ্রম করেও তাদের মন জোগাড় করতে পারি না।
————ভাবি! ইলোরা আর রাশেদ ভাই কিন্তু আজ রাতে এখনও খাবার খেতে আসেনি। আম্মা আমাকে বলে দিয়েছে তাদেরকে যেন আমি না ডাকি।
এটা কোনো কথা হলো ভাবি! একদিন না হয় ওনাদেরকে না বলে শ্বশুর বাড়ি গেছে।তাতে এতোগুলা অপমান করলো রাশেদ ভাইকে। ইলোরা তো শুনেই নাই এইসব কথা আর অপমান। বেচারি শুনলে কী আঘাতটাই না পাইত!
——-মেজো তোমার তো দেখি ইলোরার জন্য দরদ উথলায়া উঠতাছে। সুন্দরী জা’য়েরে দেইখা পইটা গেছো! আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি এই বউরেও কেমনে দমাইয়া রাখবো দেইখো।

আমার আর কিছু শোনা বা বলার ইচ্ছে হলো না।আমার খুব কান্না পাচ্ছিল।আমার রাশেদ কোথায়! আমি এক দৌড়ে আমার রুমে আসলাম। এসে দেখি রাশেদ ওর ড্রেস চেঞ্জ করছে। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে রাশেদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ফেললাম। রাশেদ আমাকে ওর বুকের মধ্যে খুব করে জড়িয়ে ধরল। আমি আমার সব দুঃখ ভুলে যেতে গিয়ে মনে হলো আমার কারণেই আমার রাশেদকে আজ অপমানিত করল আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি। আর তখনই মুখ তুলে বললাম।
——-আমি সরি রাশেদ। আমার কারণে তুমি আজ অপমানিত হলে।
রাশেদ আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল।
——দূর পাগলী! এসব কী বলো! বাবা-মা ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করবেই। এটা নিয়ে কষ্ট পেতে হয় না। মনে দুঃখ রাখতে হয় না। বাবা-মা আমাদের ভালোর জন্য শাসন বারণ করেন বুঝলে! চলো চলো খুব ক্ষুধা পেয়েছে খেতে চলো।
আমার কাছে মনে হলো রাশেদ ম্যাজিক জানে। ওর দু’টো কথাতেই আমার মন ভালো হয়ে গেল। আমি রাশেদ রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।
পরের দিন সকাল থেকে আমি আগের মতো স্বাভাবিক আচরণে শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য চা বানানো, নাস্তা বানানো সহ আমার জা’য়েদের সাথে রান্না ও ঘরের সব কাজ করলাম। আমি কাউকেই কিছু বুঝতে দিলাম না। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি।কী বলতে যাব তাই আমি! এভাবেই তিনটা দিন চলে গেল। রাশেদ তার বাবা-মায়ের সাথে নিজে থেকেই খুব স্বাভাবিক করে নিলো সব।

কিন্তু আবারও চতুর্থ দিনেই রাশেদের পরিবারে বিশাল ঝামেলা বাঁধলো আমাকে নিয়ে। কারণটা হলো আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া। রাশেদ রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে কথাটা বলল। আমি আমার শ্বাশুড়ির পাশে বসে শ্বাশুড়ির মাথা টিপে দিচ্ছিলাম।তার খুব মাথা ব্যথা করছিল।
—–আব্বা আমি এবার ইলোরাকে আমার সাথে করে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাই।
সাথে সাথে আমার শ্বাশুড়ি শোয়া থেকে সটান বসে পড়ল। তিনি যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন! আমার শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে কেঁদেই ফেললেন।
—-দেখেছেন ছেলে কী বলে! দুই দিন হইলো না বিয়ে হয়েছে। এখনই বউ নিয়ে ঢাকায় দৌড়াবে। ছেলের বউয়ের হাতের সেবাযত্ন আমাদের কপালে নাই।
বলতে বলতে আমার শ্বাশুড়ি মা আমার হাত ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। কেঁদেই চলেছেন তিনি।আমার শ্বশুর এবার মুখ খুললেন।
———এসব তুমি কী বলছো রাশেদ! আমাদের বয়স হয়েছে। আর তুমি আমাদেরকে ফেলে বউ নিয়ে ঢাকায় চলে যাবে। তোমাকে কী এজন্য বিয়ে করিয়েছি! এই জন্যই তোমার মা বলেছিলো ছেলের পছন্দে বিয়ে দিয়েন না।
আমি কথাগুলো শুনে রীতিমতো থ হয়ে রইলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো বলে ফেলি। আচ্ছা বাবা বিয়ে কী বাবা-মায়ের জন্য করে?
নাকি নিজের জন্য করে!
সাথে সাথে মায়ের কথা মনে পড়লো।
” শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে একদম মুখে মুখে তর্ক করবে না।সব মুখ বুজে সহ্য করবে।”
আমিও সহ্য করলাম। রাশেদ একবার আমার মুখের দিকে তাকাল। আমার চোখে টলটল করছে পানি।
রাশেদ এবার বলল।

—–আসলে কয়েক দিনের মধ্যেই ইলোরার মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা। আর পরীক্ষা হবে ঢাকাতে। ওর একটু নিরিবিলি লেখাপড়া করাও দরকার।
——–কী বললা! ইলোরা মেডিককেলে পরীক্ষা দিবে মানে!
——-ইলোরা ডাক্তারি পড়বে আব্বা। ও খুব ভালো স্টুডেন্ট। ও ডাক্তার হলে তো আমাদের জন্যই ভালো হবে।
——-বাঃ তুমি ডাক্তার বানানোর জন্য বিয়ে করছ! তা আগে বলবা না। তুমি তো তোমার বউকে নিয়ে তোমার শ্বশুর বাড়ি থেকেই ঢাকায় চলে যেতে পারতে। এখানে এনেছো কেন!
যাও যাও।যা খুশি তাই করো। আমাদের মতামত দিয়ে তুমি কী করবা! সিদ্ধান্ত তো নিজে নিয়েই নিয়েছ।
——-আমরা কী জন্য ছেলে পালছি গো! বিয়ে দিয়ে পুতেরে খোয়াইলাম গো। আমারা এখন মরলেই কী বাঁচলেই কী!
——– আহ্ মা! এসব কী অলুক্ষণে কথা বলছেন। বড়ো আর মেজো ভাবি আছেন না। তারা দু’জন আপনাদেরকে সবসময় যত্ন করবে। আমরাও এসে এসে আপনাদেরকে দেখব। আপনারাও ঢাকায় এসে থাকবেন।
——-আমাদেরকে আর দেখতে হবে না তোমাকে।ভাবতে হবে না আমাদের কথা। বউ পেয়েছো বউ নিয়ে থাকো। আমি তোমার বাবা বলছি। এবার বউ নিয়ে গিয়ে আর কোনোদিন বাড়ি আসবা না। আমরা মরে গেলেও আসবা না।

আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। এতো অপমান আর নিতে পারলাম না। আস্তে করে উঠে চলে এলাম আমার ঘরে।
কিছুক্ষণ পরে রাশেদ ঘরে এলো। আমি কাঁদছিলাম। রাশেদ কিছুই বললো না। আমার ওর দু’জনারই খুব মন খারাপ হয়ে রইল। আমাদের মন খারাপ নিয়েই দু’জনা কোনো কথা বলা ছাড়া রাত পার করলাম।
আমার আবারও খুব জ্বর উঠলো শরীরে। আমার ভীষণ মন খারাপ হলেই জ্বর হয়। সারাটা রাত আমি নিরবে কেঁদেছি। আমার কেবলি মনে হচ্ছে। একটা মেয়ের মেয়ে জন্মটা কেন হয়!
এতো কেনো সীমাবদ্ধতা আমার জীবনে! মনে হলো আমার শ্বাশুড়ির শ্বাশুড়িও হয়তো তার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করেছিলো। তার শ্বাশুড়ি তার সাথে। আর তাইতো বেশির ভাগ শ্বাশুড়িরা তাদের ছেলের বউদের সুখ শান্তি মন থেকে মেনে নিতে পারেন না।

রাশেদ আমার খুব যত্ন করলো জ্বরের দু’দিন। ওর যত্ন আর ভালোবাসায় আমার জ্বর ভালো হয়ে গেলো। রাশেদ আমাকে খুব করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওদের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে গেল। বলে গেল খুব শীঘ্রই আমাকে ঢাকায় নিয়ে যাব। আমি আবারও বিশ্বাস করলাম।

রাশেদ ঢাকায় যাওয়ার পাঁচদিন পরেই আমার ছোট দেবর মাসুদ বাড়িতে এলো। এসেই আমার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে জানালো যে রাশেদের অনেক বেশি শরীর খারাপ। ঢাকায় যাওয়ার দিন থেকেই ভীষণ জ্বর আর বমি। ডাক্তার ওষুধ এসবে তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ডাক্তার বলেছে গ্যাসটিক আলসার। বুয়ার হাতের রান্না খেয়ে খেয়ে তার এই অবস্থা। আলসারের ইনফেকশনের কারণেই জ্বর নামছে না। রাশেদ আমাকে ঢাকায় নেয়ার জন্য আমার দেবরকে পাঠিয়েছে। সাথে একটা ছোট্ট চিঠি লিখেছে আমার শ্বশুরকে।

আমি তো শুনেই বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করে দিয়েছি। এদিকে আমার শ্বশুর চিঠি পড়েই চিৎকার শুরু করলেন।।ছেলেদেরকে যা শিখিয়েছেন তা সবই রসাতলে গেলো। কীভাবে ভাইয়ের বউকে নিতে দেবরকে পাঠায়! দেবর তো মাহরাম পুরুষ না। এদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় জ্ঞানের বালাই নাই। একজন দেবরের সাথে ভাইয়ের বউ একা সফর করতে পারবে না। তাহলে সেখানে তার সাথে ইলোরা কীভাবে ঢাকায় যাবে ইত্যাদি। তারপর আবার শুরু হলো আমার শ্বাশুড়ির আজব কিছু কথা। যেমন তার ছেলে সুস্থ মানুষ ঢাকায় গেল। সে কীভাবে অসুস্থ হল! এই সবাই আমার কারণে হয়েছে। কারণ আমি নাকি অপয়া। বিয়ের পরপরই কেন তাদের ছেলের এতো বড়ো অসুখ করবে! কুফা একটা বউ বাড়িতে এনেছে।আরও কত কী!

এতো জটিলতার মধ্যে পড়ে আমার কেমন পাগল পাগল লাগছিল। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমার দেবরের সাথে ঢাকা যাবার জন্য সব গোছাতে লাগল। তারা ঢাকায় যাবে কিন্তু আমাকে পাঠাবে না। তাছাড়া আমার দেবর মাহরাম পুরুষ না। আমি এতোকিছু বুঝি না। তাই আমি বহু অনুনয় বিনয় করে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে ঢাকায় যাওয়া মঞ্জুর করতে না পেরে একটা মহা বেয়াদবি করে ফেললাম। তা হলো আমি তাদেরকে বললাম।
——–আমাকে আপনারা ঢাকায় না নিলে আমি আমার জীবন দিয়ে দিব। কারণ আমি রাশেদের কাছে যাবই যাব।

এক পর্যায়ে তারা বাধ্য হয়ে আমাকে তাদের সাথে নিয়ে ঢাকায় এলো। রাশেদের শরীর আসলেই খুব খারাপ ছিল। রাশেদের শরীর খারাপ দেখে আমার লেখাপড়া ভর্তি পরীক্ষা কিছুই মাথায় আসল না। আমার মাথায় আর মনে একটাই সাবজেক্ট রাশেদ আর ওর সুস্থতা। এক সপ্তাহের মধ্যে রাশেদ অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল। আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি আমাকে তাদের সাথে বাড়ি নেয়ার কথা বলতেই পারলেন না আর। কারণ রাশেদ ওনাদেরকে বললেন আমাকে সহ তাদেরকে ঢাকায় থেকে যেতে। কিন্তু তারা ঢাকার বন্ধ ফ্ল্যাটে থাকতে পারেন না বেশিদিন। এরপর তারা একরকম বাধ্য হয়েই রাশেদের কাছে আমাকে রেখে বাড়ি চলে গেলেন।

রাশেদ মোটামুটি সুস্থ হয়ে ওর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে লাগল। আমি রাশেদকে বলে বাসায় সংবাদ পত্র রাখা শুরু করেছি। দু’দিন পরেই পত্রিকায় নিউজ দেখলাম মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা সহ সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। হাতে আছে দশদিন। আমি সংসারের কাজ সেরে আমাদের দু’জনার জন্য রান্না করে বাকি সময় পড়াশোনায় ডুব দিলাম।
একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম রাশেদ আগের মতো আমার লেখাপড়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখায় না। আমাকে পড়তে বসতে দেখলে ইচ্ছে করে ডেকে নিয়ে আসে। এটা সেটা গল্প জুড়ে দেয়। আমাকে নিয়ে প্রতিদিন বাইরে যায়।কখনও শপিং, কখনও সিনেমা, কখনও ঘুরতে, কখনও খেতে। আমি ওকে নিয়ে ভর্তি ফরম উঠাতে যেতে চাইলে আজকাল বলে বলে পাঁচদিন চলে গেল।
একদিন আমাকে বলে।
——সোনা বউ তুমি কী চাকরি করবে?
——-আগে ডাক্তার হই তারপর সিদ্ধান্ত নেব।চাকরি করব নাকি চেম্বার করব!
——আচ্ছা এসবের দরকার কি! আমি যদি ঠিকঠাক ভালো ইনকাম করি। আমাদের সংসার যদি ভালোভাবে চলে।তাহলে তোমার আবার এসবের দরকার কি বলো!
রাশেদের এমন সব কথায় আমার মন ও মস্তিষ্কের মধ্যে পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরতে লাগল।আমি রাশেদকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করতে লাগলাম। আমিও রাশেদের তালে তাল মিলিয়ে বললাম।
——–ঠিক আছে তুমি যদি মনে করো আমাদের সংসারে আমার টাকার প্রয়োজন নেই। তাহলে আমি বিনে পয়সায় মানুষের চিকিৎসা করব। তুমি এসব ভেবো না।
——–আচ্ছা আমি বাইরে থেকে টায়ার্ড হয়ে এসে যদি দেখি তুমিও টায়ার্ড তখন আমি সেবা যত্ন আর আদর পাবো কোথায় বলো!
আমার কেমন খটকা লাগতে লাগল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল রাশেদ চাচ্ছে না আমি আর লেখাপড়া করি। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। আমি কথা ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে গেলাম।
——-চলো খাবার ঠাণ্ডা হচ্ছে খেয়ে নেই।
সেদিন এভাবেই চলে গেল। পরেরদিন একরকমের জোর করেই রাশেদকে নিয়ে ভর্তি ফরম তুলে ফিলাপ করে জমা দিয়ে এলাম। সেদিন রাশেদকে খুব অস্থির লাগছিল। কিন্তু আমি বুঝে না বুঝার মতো খুব স্বাভাবিক থেকে রাশেদকে আরও আদর মায়া ভালোবাসায় মাতিয়ে রাখলাম।
তবে আমার মধ্যে কেমন একটা অপরাধ বোধ কাজ করতে লাগল। যেই মানুষটা আমায় ভালোবেসে এতোকিছু করছে। সেই মানুষটা মন খারাপ করে থাকে।মুখ কালো করে রাখে। পাশ ফিরে ঘুমিয়ে থাকে। কী হলো রাশেদের! এভাবে কেমন করে পড়াশোনা করব! আর কেমন করেইবা সংসার করব!

এরমধ্যেই একদিন আমার ছোট দেবর মাসুদ বাসায় এলো। বলল দু’দিন থাকবে। পরের দিন সকালে রাশেদ বেরিয়ে যাবার পরে মাসুদ আমার সাথে গল্প করছিল নাস্তা করতে করতে। হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করল।
——–ভাবি এতো বই খাতা কেন এখানে! এগুলো কার!
——- আমার।
—-আপনার কেন! আপনি তো পাশ করে ফেললেন।
——-মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিব তো তাই।
——কি! আপনি মেডিকেলে পড়বেন! কেন ভাবি!রাশেদ ভাইয়াতো বিএ পাস। আপনি তার স্ত্রী হয়ে কীভাবে ডাক্তার হবেন! মানুষ মন্দ বলবে না!
——-কেন ভাই! আমি তো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব। মানুষের উপকার করব। মন্দ কিছু তো করব না যে মানুষ মন্দ বলবে।
——-ভাবি ভাইয়াকে সবাই মন্দ বলবে। আপনার জন্যও তো সমস্যা হবে। আপনার ডাক্তার কলিগরা জানলে তো আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। বলবে আপনি ডাক্তার আর আপনার হাসবেন্ড বিএ পাস।
আমার খুব কান্না পেল। আমার খুব অপমান বোধ হলো। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে খুব শান্ত মেজাজে বললাম।
——আমি আর রাশেদ ভালো থাকলেই হলো। মানুষের কথা দিয়ে কী করব আমরা।
——-ভাবি আব্বা মা একদমই চায় না আপনি আর লেখাপড়া করেন। ভাইয়াও কিন্তু চায় না আপনাকে পড়াতে। ভাইয়ার বন্ধুরা শুনেও ভাইয়াকে উল্টো পাল্টা কথা বলতেছে। বলে বউ ডাক্তার হওয়ার পরে তোমাকে ছেড়ে ডাক্তার ছেলেকে বিয়ে করে চলে যাবে।
—— ছিঃ মাসুদ।ভাই আমার। আপনি কেমন করে এসব নোংরা কথা বলেন! আপনি না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। আপনি এতোটা হীন চিন্তা কীভাবে করেন!
——–ভাবি আপনি এখন ছিঃ ছিঃ করছেন।একদিন মানুষ আপনাদেরকে ছিঃ ছিঃ করবে।
——- ভাইয়া আপনাকে কি রাশেদ এখানে এনেছে।রাশেদ বলেছে আমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে!
——–না মানে!
ভাইয়া আনবে কেন! আমি আসলাম। আর আপনার কথা শুনে আপনার জন্য যা ভালো মনে হলো তা বললাম।
——-মাসুদ, ভাই আমার! আপনি আমার এতোটা ভালো না চাইলেও পারতেন। এতোটা ভালো না করলে আজকে আমাকে এতো কঠিন অবস্থায় পড়তে হতো না।আপনিই আমাকে প্রথম পছন্দ করলেন আপনার ভাইয়ের জন্য। একবারও আমার মতামত নেয়ার কথা মনে হয়নি আপনার। তখন যদি একবার আমার ভালোটা চাইতেন। তখন যদি আমার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেন। আমি কী আমার বিয়ে হওয়ার জন্য লেখাপড়া করেছি! নাকি ডাক্তারি পড়ার জন্য লেখাপড়া করছি! তাহলে আর আজকে এই অবস্থায় আমি আপনি রাশেদ ও আপনার পরিবার পড়ত না।
কারণ আমি তখন আপনাকে পরিষ্কার করে বলে দিতাম। ভাইরে! আমি লেখাপড়া করব।আমি ডাক্তারি পড়ব।আমি বিয়ে করব না। তাহলে আর আপনি ও আপনারা আমার বাবার কাছে যেতেন না। আমার বাবা বিয়ে দিতেন না। আমরাও সবাই এমন জটিলতায় মধ্যে পড়তাম না।তখন কেন আমার ভালোটা চিন্তা করলেন না ভাই!
——–আপনি অযথা তর্ক করছেন ভাবি। বিয়েটা আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া হয় না। আমরা আর ভাইয়া তো আপনাকে কম ভালো রাখিনি।
——- রাখেননি মানে! ও আচ্ছা ঠিক বলেছেন ভাই। একটা মেয়ে ভালো পোশাক পাবে।ভালো খাবার পাবে। ভালোবাসা পাবে। আর সে বাড়ির সকলের মনমতো চলবে। সকলের ইচ্ছেতে খুশি হবে। নিজের জন্য নিজের ভালোলাগার কিছু চাইতেই পারবে না। একটা কথা বলবেন মাসুদ ভাই! আপনারা আমাকে কতটুকু আপনাদের জন্য ভালোবাসেন! আর কতটুকু আমার জন্য ভালোবাসেন!
——-আপনি অযথাই তর্ক করছেন ভাবি। আসলে আমাদেরই আপনাকে বুঝতে ভুল হয়েছে।
আমি মাসুদের মুখে এমন কঠিন ভাবে অপমানিত হয়েও বেশ ঠাণ্ডা মাথায় নরম কণ্ঠেই বললাম।
——–খুব স্বাভাবিক ভাই। কারণ আমার চেহারা নকশা দেখেই আপনারা আমাকে ভালোবাসা শুরু করে দিয়েছিলেন। আমাকে আপনাদের বাড়ির বউ বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তখন কিন্তু আমাকে বুঝতে জাননি ভাই। তাই বুঝতে তো ভুল হওয়া স্বাভাবিক। ভুলটা আপনাদের আমার না। অথচ দেখেন আপনাদের ভুলের মাশুল আমার উপরে দিচ্ছেন।
আসলে আপনারা অধিকাংশ মানুষ মেয়েদেরকে আসবাবপত্র মনে করেন। মনে করেন চাবি দেয়া পুতুল। যেভাবে ঘুরাবেন সেভাবেই ঘুরবে।যেভাবে রাখবেন সেভাবেই থাকবে। এটা কী ভুল না ভাই!

আমার ছোটো দেবর এবার তার তেজ দেখিয়ে আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় চেয়ারটা জোরে শব্দ করে টেনে আর একটা ধাক্কা দিয়ে গেলেন। অপমানের কোনো অংশভাগ বাকি রাখতে চাচ্ছেন না। আমি অবাক তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। মনে পড়ল মায়ের বচন। বাবা শ্বশুর বাড়িতে কোনো তর্ক করবা না। মেনে মানিয়ে নিতে পারলেই তুমি ভালো বউ হতে পারবে।
আমি আসলে বউ হিসেবে কেমন হবো জানি না। তবে আমার এই বয়সেই মানুষের যে সকল রূপগুলো দেখছি।আল্লাহ বিশেষ রহমতে না রাখলে হয়তোবা আমি উল্টো পাল্টা কিছু করেও ফেলতে পারি।

আমার দেবর আমাকে কিছু না বলে বাইরের দরজাটা ঠাস শব্দ করে বাড়ি মেরে চলে গেল। আমি বুঝতে পেরে দরজা বন্ধ করে আসলাম। সারাদিন আমার মনটা ভীষণ অস্থির থাকল। আমার নিজের খুব অসহায় লাগতে লাগল। আমার নিজের বাবা আমার ইচ্ছে ও স্বপ্নের মূল্যায়ন করেনি। আমার স্বামী রাশেদ কিছুটা সাপোর্ট দিতে গিয়ে তার বাবা-মা ও পরিবারের কাছ থেকে নানান রকম চাপে আছে।নানান রকম কথা শুনতেছে।রাশেদের বন্ধুরা আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ করে আজেবাজে কথা বলতেছে। আমি বুঝতে পারছি না আমার এখন কী করা উচিত! কেন সকলে আমার একটুকু চাওয়ার বিরুদ্ধে! আমি নারী বলে!

রাতে বাসায় ফিরে রাশেদ খুব মুখ গোমড়া করে রাখল। আমি দরজা খুলে টেবিলে সব খাবার দিয়ে ওকে খেতে ডাকলাম। রাশেদ আমার কথায় কোনো সাড়া দেয় না। কাছে গিয়ে আবারও বললাম।
——খাবার দিয়েছি। চলো খাবে।
——তুমি গিয়ে খাও। আমার খিদে নেই।
আমি ঠাণ্ডা গলায়ই বললাম।
——-কেন! কোথাও দাওয়াত ছিলো!
——-তা দিয়ে তোমার দরকার কী! তুমি তোমার লেখাপড়া নিয়ে থাকো। আমার কোনোকিছুর খবর নেয়ার আর দরকার নেই।
——-কীসের মধ্যে তুমি কী নিয়ে আসতেছ রাশেদ! আমার লেখাপড়ার সাথে খাবারের কী সম্পর্ক!
—- তোমার লেখাপড়ার সাথে সবকিছুর সম্পর্ক ইলোরা। তুমি আজকে মাসুদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছ কেন! কেন তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছ!

আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে হলো না। কথা বললেই অযথা তর্ক হবে। আমি ইলেরা সংসার করতে এসেছি।স্বামীকে ভালেবাসতে এসেছি। আমরা দু’জন দু’জনার জন্য সহযোগী হব। কেন আমরা এক একটা সাধারণ বিষয়কে নিয়ে এতো বেশি ঝামেলায় যাব! কেন ঝগড়া করব! কেন প্রিয় মানুষটার সাথে কথা বন্ধ করে রাখব! কেন যখন তখন ঝগড়া ও তর্ক করে সম্পর্ক ও জীবনটাকে বিষিয়ে তুলব!আমার কেমন শূন্য শূন্য লাগছে সব। বাবা-মা ও রাশেদ কেউ যেন আমার আপন না।

আমার মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগল।পেট গুলিয়ে বমি আসল। আমি দৌড়ে বাথরুমে চলে গেলাম। গলগল করে বমি করে দিলাম। তারপর মুখে হাতে পানি দিয়ে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় মাথা রেখে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলাম। রাশেদ একবারও আমার কাছে এলো না। আমি কিছুক্ষণ পরে উঠে গিয়ে টেবিলের খাবার গুছিয়ে রেখে রাশেদের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। রাশেদ সারারাতে আমার দিকে একবার ফিরেও দেখল না। আমার অতিরিক্ত মন খারাপ হলেই জ্বর হয়।এবারও তাই হলো। সারারাত মন আর শরীরের কষ্টে ঘুমাতে পারিনি। সকালে রাশেদ আমাকে কিছু না বলে বাইরে চলে গেল। আমি দরজা বন্ধ করে খুব কাঁদলাম। আমার হাতে পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছিলাম না। কী ভীষণ ভয়ঙ্কর অসহায় লাগতে লাগল। বুঝতেই পারছিলাম না আমার কী করা উচিত! কেন আমার জীবনটা আমার বাবা-মা এমন একটা অসহায়ত্বের মধ্যে ফেলে দিলেন! কার কাছে যাব! কাকে জিজ্ঞেস করব!কী হতো আমার বাবার আমাকে এভাবে বিয়েটা না দিলে!জ্বর আরও বাড়তে থাকলে আমি বাথরুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো মাথায় পানি ঢেলে গোসল করলাম। আমি আবারও একটা শক্ত সিদ্ধান্ত নিলাম মনে মনে। যেভাবেই হোক আমি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষাটা দেব। আমি ডাক্তারি পড়বই।

জ্বরের তীব্রতাটা কমল। কিন্তু একটু একটু জ্বর লেগেই রইল সারাদিন। কিচ্ছু খেতে ইচ্ছে করছিল না। তারপরও জোর করে করে খেলাম। আমার শুধু বমি বমি লাগছে। আগে জ্বর হলে তো এরকম বমি ভাব হতো না।
যথারীতি রাশেদ রাতে বাড়ি ফিরলে সে আমার সাথে কথা বলল না। আগের মতোই মুখ কালো করে আমার থেকে আলাদা হয়ে রইল। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া আমার ভর্তি পরীক্ষা।সবমিলিয়ে আমি নিজে থেকে গিয়ে রাশেদকে জড়িয়ে ধরলাম। সে আলগা হতে চাইলে আমি তাকে জোর করে ধরে রাখলাম। একসময় সে নমনীয় হতে থাকল।আমাকে আবারও আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে তার বুকের মধ্যে আগলে নিল। আমার যে রাশেদ ছাড়া কেউ নেই। বেশির ভাগ মেয়েরা বিয়ের পরে তার স্বামীক নিজের একমাত্র প্রেম, একমাত্র ভালোবাসা ও আশ্রয় করে নেয়। তাইতো স্বামীর মুখটা কালো দেখলে বুকের মধ্যে হু হু করে কান্নার বৃষ্টি নামে। আমার কাছেও রাশেদ সবকিছু।
সেদিন আমরা কেউ আর কোনো প্রশ্ন করলাম না কাউকে। স্বাভাবিক ভাবে চলছে সব। আমার একটু একটু শরীরটা খারাপ লাগছে। কিন্তু রাশেদকে ইচ্ছে করেই কিছু বলছি না। কারণ তাহলে ও আমাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে দেবে না আমার শরীর খারাপের উছিলায়। আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া নেগেটিভ সবকিছু ভুলে খুব মনোযোগে পড়ছি। আগামীকাল আমার পরীক্ষা। সকালে বাইরে যাবার আগে আজ আবারও রাশেদকে মনে করিয়ে দিয়েছি আগামীকাল সকালে আমার পরীক্ষা। আমাকে হলে নিয়ে যেতে হবে ইত্যাদি। রাশেদ বেশ সাবলীল ভাবে আমার সাথে কথা বলল। আরও বলল আগামীকালের জন্য আমি যাতে কোনো রান্নার ঝামেলা না করি। আজকে যেন ভালোভাবে পড়ি। আগামীকাল পরীক্ষা শেষ করে আমকে নিয়ে ও বাইরে খাবে ইত্যাদি।
আমিও সেভাবেই সবকিছু গুছিয়ে রাখলাম। বুকের ভেতর একটা ধুকপুক। কেমন হবে প্রশ্নপত্র কেমন হবে পরীক্ষা।
এদিকে রাত এগারোটা বেজে ঘড়ির কাঁটায় বারোটা।রাশেদ বাসায় আসছে না। আমি ঢাকায় আসার পর থেকে কখনোই এমনটি হয়নি। বেশির ভাগ রাতে নয়টা দশটার মধ্যে ফিরে আসে রাশেদ। যতই রাত বাড়ছে ততই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি এখন কোথায় যাব! কাকে ডাকব! মাত্র পনেরো বিশ দিনের মতো হলো আমি ঢাকায় এসেছি। ছোটোবেলায় আব্বা মায়ের সাথে আসতাম। এবার রাশেদের সাথে এসেও আমি সেভাবে কিছুই চিনি না জানি না। রাশেদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও আমি জানি না এখনো। এতো রাতে একা দরজা খুলতেও ভয় লাগছে। সারাটা রাত আমি জায়নামাজে বসে আল্লাহকে ডাকলাম আর কেঁদে কাটালাম।
ঘড়িতে সকাল নয়টা রাশেদের কোনো খবর নেই। দশটায় আমার পরীক্ষা। কিন্তু আমার ভর্তি পরীক্ষার চাইতেও বড়ো পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তা হলো আমার স্বামী রাশেদের কোনো সন্ধান নেই। আমি বাড়িওয়ালার বাসায় গেলাম। সব জানালাম। তারা জানালেন তারাও রাশেদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সেভাবে জানেন না। শুধু এলাকার নাম জানেন।
এদিকে সকাল থেকে আমার তিনবার বমি হলো। সারে দশটা বেজে গেছে। আমার আর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা দেয়া হলো না। তবুও আমার মাথায় তার চেয়ে বড়ো দুঃখ আমার রাশেদের কী হলো! আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নটা হারিয়ে গেল। তার দহন শূন্যতা ছাপিয়ে আমার দহন শুধু আমার রাশেদের জন্য। মানুষের জীবনে বুঝি এমনই হয়। প্রিয় মা মারা গেছেন কিংবা প্রিয় সন্তান মারা গেছেন।দু’দিন না খেয়ে থাকতে পারবেন।কিন্তু আপনার টয়লেট পেলে না গিয়ে পারবেন না। পানির তৃষ্ণাটা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেলে পানি না খেয়ে পারবেন না এক পর্যায়ে। আমার কাছে আমার স্বপ্ন হারানোর শূন্যতা ছাপিয়ে ঠিক তেমনি এখন রাশেদের দুশ্চিন্তা মূখ্য হয়ে গেছে। আমি আর থাকতে না পেরে রাশেদকে খোঁজার জন্য বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভাবলাম বাসায় তালা দিয়ে রাশেদের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে সেই এলাকায় গিয়ে খুঁজব তার নাম করে করে। কেউ যদি বলতে পারে। ততক্ষণে এগারোর উপরে বেজে গেছে। আমি মেইন গেইটে তালা দিয়ে দুই কদম এগুতেই দেখি আমার খালাতো দেবর জাভেদ রিকশা ভাড়া দিচ্ছে। জাভেদকে দেখে আমার কান্নাটা যেন উছলে উঠল। একরকম দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম তোমার রাশেদ ভাই কোথায় জাভেদ!
জাভেদ বলল।
—–চলেন বাসায় গিয়ে বলি।
——আগে বলো ভাই তোমার ভাই সুস্থ আছে তো!
আমার হাত থেকে নিজের হাতে চাবিটা নিয়ে বাসার গেইটের তালা খুলতে খুলতে জাভেদ বলল।
——-ভাইয়া সুস্থ আছে। কিন্তু খালা অসুস্থ। গতকাল রাতে বাসার আসার আগে খবর পেয়ে রাশেদ ভাই আর মাসুদ বাড়ি চলে গেছে।
——কী হয়েছে আম্মার! আপনি কিছু জানেন!
—–খালার নাকি ডায়রিয়া নাকি হইছে। ভাইয়া শুধু বলছে কালকে সকালে বাসায় গিয়ে তোর ভাবিকে খবরটা দিবি। আমারই আসতে আসতে একটু দেরি হয়ে গেলো ভাবি।

আমি কথাগুলো শুনে ধপাস করে বসে পড়লাম ড্রইং রুমের সোফায়। আমার কাছে মনে হলো………..

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here