মনের_অন্দরমহলে পর্ব ২০
#আনিশা_সাবিহা
–“অপারেশন করতে তো অনেক টাকা লাগে মা! কে দিল এতোগুলো টাকা?”
থেমে থেমে প্রশ্ন করলাম আমি। যদিও আমি আন্দাজ করতে পেরেছি এই কাজটা কার। তবুও মায়ের মুখ থেকে আমি জানতে চাই। মা মিনমিন করে বলে উঠল…..
–“টাকাগুলো জামাই দিয়েছে রে! কত করে মানা করলাম। সে জামাই মানুষ ওর থেকে টাকা নিয়ে কি করে অপারেশন করাবো? এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? কিন্তু জামাই যা জেদি মানুষ তুই জানিস। ও জোর করে…..”
–“উনি যা করতে বলবেন সেটাই সবসময় করতে হবে? উনি বললেন বলেই অপারেশন করিয়ে নিলে?”
কথাগুলো বেশ কঠিন গলায় বললাম আমি। আয়াশ সত্যিই এবার বেশি দয়া করে ফেলছেন আমায়। উনি বোঝেন না কেন আমি উনার দয়া চাই না? মা কিছু না বলতেই আয়াশ এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল…..
–“এভাবে বলছো কেন? তুষারের অপারেশন কতটা প্রয়োজন ছিল সেটা তুমিও জানো। তাহলে হঠাৎ এমন কথা কেন বলছো? তুমি খুশি হওনি?”
আমি আয়াশের হাত নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিলাম। কর্কশ গলায় বললাম…..
–“না হইনি আমি খুশি। আপনি কেন আমার পরিবারের জন্য এতো করছেন বলুন তো? আপনি বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তো? বিয়ে তো হয়েছে। তাহলে এতোকিছু করছেন কেন?”
–“এসব কি কথা বলছো তুমি? আমি কি তুষারের জন্য তোমার ফ্যামিলির জন্য কিছু করতে পারি না? ইটস মাই ফ্যামিলি অলসো! আর আমি তো ভেবেছিলাম তুমি খুশি হবে যে তোমার ভাই ঠিক হয়ে গেছে। ও আর সকল স্বাভাবিক বাচ্চার মতো লাইফ লিড করতে পারবে।”
–“আপনি হয়ত এখনো আমায় ভালো করে চেনেন নি। আনিশা কারো দানে খুশি হয় না। বুঝেছেন?”
চিল্লিয়ে বললাম আমি। আয়াশের বদলে মা আমায় ধমক দিয়ে বলে উঠল……
–“আনিশা? কি হচ্ছে? এসব কি কথা বলছিস? চেনেন নি, দান এসব কি কথা? আর এভাবে কেউ নিজের স্বামীর সঙ্গে কথা বলে? এই শিক্ষা পেয়েছিস তুই? এটা কিন্তু বেয়াদবি করছিস তুই।”
আমি মায়ের কথার জবাব দিলাম না। প্রচন্ড রাগ লাগছে আমার। মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে বারে বারে। কি ভাবেন উনি নিজেকে? দয়াবান ব্যাক্তি? তুষারের কন্ঠ কানে আসতেই আমার কুঁচকানো চোখমুখ স্বাভাবিক হয়ে এলো।
–“আপু?”
–“মা তুষার কোনদিকে?”
–“সামনে কয়েকধাপ এগিয়ে যা। ও বেডে শুয়ে আছে।”
আমি আর কিছু না বলে বেডের দিকে এগিয়ে গেলাম। সাবধানে বসে পড়লাম বেডের সাইডে। আমার হাতের ওপর হাত রাখল তুষার। আমিও অন্যহাত দিয়ে ওর হাত চেপে ধরে বললাম…..
–“কেমন আছিস এখন?”
–“ভালো আছি। কিন্তু যেখানে অপারেশন করেছে ওখানে ব্যাথা করছে।”
–“ব্যাথাটা কিছুক্ষণের। সারাজীবন ব্যাথা সইবার চেয়ে কিছুক্ষণ ব্যাথা সয়ে যাওয়া ভালো। এতে সারাজীবন কষ্ট পেতে হয় না।”
মলিন হয়ে বললাম আমি। তুষার নিচু সুরে বলল…..
–“হ্যাপি বার্থডে আপু।”
আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
–“থ্যাংক ইউ রে।”
–“আই উইশ তুমি আর আয়াশ জিজু সবসময় একসাথে থাকো। তোমাদের দুজনকে একসাথে খুব ভালো লাগে। কি যেন বলে না? মেড ফর ইচ আদার!”
বলেই ফিক করে হেসে উঠল তুষার। আমার চোখজোড়া তখন কপালে উঠে গেছে। আমার কানের কাছে আসছে চাপা হাসির আওয়াজ। মুখটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গেল আমার। ছোট তাতে কি? পাকনামির শেষ নেই। আমি তাকে ধমকানোর চেষ্টা করে বললাম…..
–“এই চুপ! বেশি পাকনা ছেলে হয়ে গেছিস। মুখ বন্ধ করে থাক।”
–“ও আয়াশ জিজু দেখো না তোমার বউ আমাকে বকছে।”
–“তুষার? তোকে চুপ থাকতে বলেছি না?”
দ্বিগুন ধমকে উঠে বললাম আমি। তৎক্ষনাৎ বাবা বলে উঠল….
–“আহ আনিশা? ছেলেটাকে এভাবে বকছিস কেন? এমনিতে ওর শরীর ভালো নেই এখন জানিস।”
নাক ফুলিয়ে চুপ থাকলাম আমি। বাবা আবারও আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন…..
–“আয়াশ বাবা? তো তুমি আমাদের বাড়িতে চলো। বিয়ের পর এই প্রথম আমাদের এলাকায় এলে। আমাদের বাড়িতে যাবে না?”
–“না সেটা নয়। আসলে আমার অন্য একটা জায়গায় যাওয়ার আছে আনিশাকে বিয়ে। আমি আপনাদের বাড়িতে ওকে নিয়ে অবশ্যই আসব কিন্তু বিকেলের দিকে।”
বাবা আর জোর করলো না।। আমার কপাল কুঁচকে গেল। সন্দিহান হয়ে আয়াশকে জিজ্ঞেস করলাম…..
–“আবার কোথায় নিয়ে যাবেন? আমি আর কোথাও যাবো না।”
–“আনিশা? তুই এভাবে কথা বলিস কেন জামাইয়ের সাথে? ও কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে যা। সবসময় শুধু পেঁচিয়ে কথা বলিস!”
রাগ নিয়ে কথাগুলো বললো মা। এরই মাঝে আয়াশ তুষারের কাছে এগিয়ে এসে বললেন…..
–“তোমার তো অপারেশন হয়েছে। তাই চকলেট না খাওয়ায় বেটার। তবে ডার্ক চকলেট খেতে পারো। এখানে কিছু ডার্ক চকলেট আর জুস আছে।”
বলেই হয়ত তুষারের দিকে কোনো ব্যাগ এগিয়ে দিলেন আয়াশ। আমি ওদের কথার মাঝে বাগড়া দিয়ে বলে উঠলাম…..
–“না। লাগবে না এসব। আমার মনে হয় আপনি যথেষ্ট করেছেন। এখন খাবার জিনিসপত্র আমার মা-বাবাই কিনে নিতে পারবে। কি তোমরা পারবে না?” (বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে)
–“এখন তুমি কি ঠিক করে দেবে আমার শালাবাবুকে আমি কি দেব না দেব?”
আমার কপালে আরো দৃঢ় ভাঁজ পড়ল। উনি এমনভাবে বলছেন যেন আমি তুষারের কেউই নয়। কিছু বলার আগেই আয়াশ আবারও গাম্ভীর্যের সঙ্গে বলেন…..
–“আমি কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এসো।”
আর এক মূহুর্ত থামলেন না লোকটা। সকলের কাছ থেকে সাময়িক বিদায় নিয়ে বাইরে চলে গেলেন। মা আমার কাছে এগিয়ে এলো। মায়ের শরীরের স্মেল ধরেই মাকে সেকেন্ডে চিনে নিতে অসুবিধা হয় না আমার। হুট করেই কোমল করে হাত ধরলেন আমার মা। বুঝতে পারলাম মা আমায় কিছু বলতে চায়।
–“শুভ জন্মদিন রে মা! এইদিনে তুই প্রথম আমার গর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখেছিলি। তুই ছিলি আমার মা হওয়ার প্রথম অনুভূতি। সেদিন খুশিতে আত্মহারা হয়েছিলাম। আমার যে একটা রাজকন্যা হয়েছিল। সারাজীবন সুখে থাক তুই। আর কিছু চাই না আমার। (একটু থেমে) আ…আর যত তাড়াতাড়ি পারিস জামাইকে মেনে নে।”
মায়ের কথায় কিছুটা থমকে গেলাম আমি। মাও আয়াশকে মেনে নিতে বলছে? আমি কোথায় যাব? মা হয়ত আমার অবস্থা বুঝল।
–“দেখ প্রথমে আমিও চেয়েছিলাম আয়াশের কবল থেকে তোকে ছাড়াতে। কিন্তু বিয়েটা তো হয়েই গেছে। আর সত্যি বলতে কি জানিস? আয়াশের সম্পর্কে যতটা খারাপ ধারণা হয়েছিল ততটা খারাপও সে নয়। হয়ত এখনো তার মাঝে ভালো বেঁচে আছে। মানিয়ে থাকতে পারিস। আমার মনে হয় ও তোকে ভালোবাসে।”
–“কোনটা ভালোবাসা মা? জোর করে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করাটা ভালোবাসা? বিয়ের পর যখন-তখন রুড ব্যবহার করাটা ভালোবাসা? দয়া করাটাও কি ভালোবাসা? যদি তাই হয় তাহলে দরকার নেই এসব ভালোবাসার।”
দৃঢ় কন্ঠে মায়ের কথার প্রতিত্তোরে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম আমি। এক সেকেন্ডও দাঁড়ালাম না। বাবার সঙ্গে কথা না বলেই আন্দাজমতো হেঁটে বাইরে চলে আসলাম।
বেশ কিছুক্ষণ হলো গাড়িতে বসে আছি। সকালের খাবার খাইয়ে আবার আয়াশ আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চলেছেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। উনাকে প্রশ্নও করছি না কারণ আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তরটাও আমি পাবো না।
–“এবার জিজ্ঞেস করবে না আমি কোথায় যাচ্ছি?”
আমি নিরব। আয়াশের সঙ্গে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।
–“তুষারের অপারেশন নিয়ে কি তুমি রাগ করেছো? মানে তুষার ছোট আর ওর এই বয়সে এতো বড় অপারেশন! এটা রিস্কি ছিল। সেকারণে কি আপসেট আছো?”
এবার উনার কথায় রাগের আঁচ পেলাম আমি। তবুও সাহস করে একটা উত্তরও দিলাম না। আয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই বললেন…..
–“একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পাচ্ছো?”
–“কীসের আওয়াজ?”
ফট করে উত্তর দিয়েই ফেললাম আমি।
–“তার মানে তুমি আমার কথা শুনছিলে!”
আমি বোকা বনে গেলাম। উনি আবারও বললেন….
–“আজ তোমার জন্মদিন বলে আমার রাগ আমি প্রকাশ করতে একদম চাইছি না নিশাপাখি। আমি চাইনা তোমার এই স্পেশাল দিন খারাপ হক আমার রাগের জন্য। তুমিও জানো আমার মাঝে রাগ কন্ট্রোল করার ক্ষমতাটুকু নেই। সো আমাকে না রাগালে তোমার পক্ষে ভালো।”
–“এই একটা কাজ আপনি খুব ভালো করতে পারেন। মানুষের দিন স্পয়েল করা আপনার পক্ষেই সম্ভব।”
কথাটুকু শেষ হতে না হতেই খুব জোরে ব্রেক কষলেন আয়াশ। গাড়ির সামনে আমার মাথা ঠুকতে গিয়েও ঠুকল না সিটবেল্টের কারণে।
–“আমরা এসে গেছি। সো তোমার কথা বন্ধ করে কি নিচে নামতে পারি?”
–“কোথায় এসেছি?”
–“বলতেই হবে?”
দম ফেললাম। আয়াশ হাত ধরে আমায় বাইরে নিয়ে এলেন। কোথায় নিয়ে এলেন জানি না। তবে উনি হাত ধরে আমায় নিয়ে যাচ্ছেন। উনাকে অনুসরণ করেই হাঁটছি আমি। একটা বড় গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম মনে হলো। কানে এলো অনেক বাচ্চাদের আওয়াজ। এগোতে এগোতে তাদের আওয়াজ বাড়তে থাকল। আয়াশ কোথায় নিয়ে এলেন আমায়? আরো কিছুদূর যেতেই আয়াশ আমার হাত ছেড়ে দিলেন। আমায় না বলেই কোথাও চলে গেলেন।
আমি আশেপাশে হাতাতে শুরু করলাম। ভয় লাগতে লাগল একা একা। উনি একা রেখে কোথায় গেলেন?
–“আ…আয়াশ? কো….কোথায় আপনি?”
অনেক বাচ্চাদের গলা ভেসে এলো আমার কানে। সবার মুখে একই কথা।
–“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে মিসেস. আয়াশ! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।”
এতোসব কন্ঠের মাঝে একটা পুরুষালি কন্ঠ চিনতে ভুল হলো না আমার। এতো জনের মাঝে উনিও আমাকে উইশ করছেন। ‘মিসেস. আয়াশ’ শুনতেই সারা শরীরের শিহরণ বয়ে গেল। এই অনুভূতিটা নতুন আর অদ্ভুত! আগে কখনো এমন হয়নি আমার সাথে।
আমার কাঁধে হাত রাখতেই স্পর্শ চিনে ফেলি আমি। কাঁপা কাঁপা গলায় বলি…..
–“এ….এসব…”
–“তোমার জন্য। জানো তুমি এখন কোথায় আছো?”
আমি মাথা নাড়ালাম। উনি আবারও বললেন…..
–“এটা অনাথ আশ্রম। এখানে সেসব বাচ্চারা রয়েছে যাদের দৃষ্টিশক্তি নেই।”
মুখ থেকে আর কোনো শব্দ বের হলো না আমার। চোখজোড়াতে ছলছল করে উঠল পানি। আমার গাল সকলের সামনে ধরে অন্যহাত দিয়ে আলতো চোখ ছুঁইয়ে দিলেন আয়াশ। নরম সুরে বললেন…..
–“তোমরা মেয়েরা এতো ইমোশনাল হয়ে পড়ো কেন কথায় কথায় বুঝি না! এসময় কেউ কাঁদে? ডোন্ট ক্রাই ওকে?”
–“আপনি এসব কি আমার জন্য এরেঞ্জ করেছেন?”
–“তোর কার জন্য করব বলো? নিজের বলতে আর কে আছে আমার? তুমি বাচ্চা পছন্দ করো না? অবশ্য বাচ্চারা বাচ্চাদের পছন্দ করবে সেটাই স্বাভাবিক! বাচ্চা বউ পেয়েছি কিনা আমি!”
চোখজোড়া সরু হয়ে এলো আমার। উনার পেটে গুঁতো দিয়ে দূরে সরে এলাম। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে কেটে গেল আমার। এই প্রথম এইদিনটা আমার এতোটা সুন্দর কাটলো! এ যেন স্বপ্নের দিন! আমি বুঝতে পারছি না এইদিনটা কেন এতো সুন্দর? আয়াশের জন্য?
রাতে……
আকাশে হয়ত তাঁরার সমাহার বসেছে। আন্দাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। কবে দেখব আবার সেই আকাশ? সমুদ্রের পাড়ে বালির ওপর বসে আছি আমি। এই জায়গাটা আমার চিরচেনা। সন্ধ্যের দিকে আমার বাড়িতে ফিরেছিলাম আয়াশের সঙ্গে। রাতে আয়াশ খাওয়াদাওয়া করতেই আমার পাড়ার একজনের হেল্প নিয়ে এখানে চলে এসেছি। সমুদ্রের ঢেউের শব্দ কতদিন শুনিনি। একা একা বসে থেকে মনে করছি এক কঠিন বাস্তবতা! আমি আয়াশের ভালোবাসা নই দায়িত্ব…! দয়া! এসব ভাবতেই চোখ ভিজে এলো আমার। কিন্তু আমি কেন কাঁদছি সেটাই জানি না। যেই মানুষটার প্রতি অনুভূতি নেই তার জন্য কাঁদা কি বোকামো নয়?
–“এখানে আমায় না বলে আসার সাহসটা কি করে পেলে নিশাপাখি?”
গম্ভীর কন্ঠ শুনে একটু আঁতকে গিয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম আমি।
–“কি হলো বলো? আমাকে রাগিয়ে না দিলে তোমার পেটের ভাত হজম হয় না?”
–“আসলে তেমন কিছুই না। এখানে অনেকদিন আসিনি। তাই ভাবলাম চলে আসি।”।
–“আমায় বলতে পারতে আমি নিয়ে আসতাম!”
–“আপনি ডিনার করছিলেন তাই….!
বলেই থেমে গেলাম। আমার পাশ ঘেঁষে বসলেন আয়াশ। আমার দিকে আইসক্রিম বাড়িয়ে বললেন….
–“আইসক্রিম তোমার ফেবারিট না? চলো শেয়ার করে আইসক্রিম খাওয়া যাক কি বলো?”
জবাবে কিছু না বলায় উনি বললেন….
–“শুনেছি, হাজবেন্ড আর ওয়াইফ শেয়ার করে কিছু খেলে ভালোবাসা বাড়ে। তোমার মনে তো আমার জন্য ভালোবাসা নেই তাহলে শেয়ার করে খেলে যদি ভালোবাসা হয়?”
–“কেন করছেন এসব আপনি?”
থমথমে গলায় প্রশ্ন ছুঁড়লাম আমি। আয়াশ চুপ থেকে একটু পর বললেন….
–“কোন সব?”
–“তুষারের অপারেশন, আমার জন্মদিনের জন্য এতোকিছু, আপনি আমায় ভালোবাসেন এই কথাটা বিশ্বাস করাতে চাচ্ছেন। কি লাভ এসব করে?”
–“বিশ্বাস করাতে চাইছি মানে?”
প্রচন্ড রাগ উঠল। লোকটা সব জেনেও না জানার ভান কি করে করতে পারেন? একটু জোরেই বললাম….
–“তুষারের অপারেশনে যত টাকা খরচ হয়েছে সব ফেরত দেব আমি আপনাকে। আপনার দয়া আমি চাই না বুঝেছেন? আনিশা দয়া ছাড়াই বাঁচতে পারেন।”
আয়াশ অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠেন…..
–“এসব তুমি কি বলছো? আমার ভালোবাসাকে দয়া মনে হলো তোমার? কেন? আমার ভালোবাসাকে দয়া বলে অপমান করছো কেন? তুমি ভালো না-ই বাসতে পারো আমায়। কিন্তু এসব আজেবাজে কথা আমি সহ্য করব না। শাট ইউর মাউথ!”
–“ধরা পড়েও সত্যি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন? আমাদের দেখা হওয়া থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আপনি দয়া করে যাচ্ছেন। সেটা আপনি স্বীকারও করেছেন। তবে আমার অগোচরে।”
আচমকা আমার গাল চেপে ধরেন আয়াশ। আমাকে নিচে কাছে টেনে এনে রাগে গজগজ করতে করতে বলেন…..
–“আই লাভ ইউ….!”
চলবে……
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]